তুই যে শুধুই আমার পর্ব ২০

#তুই_যে_শুধুই_আমার [ ❤You are only mine❤ ]
#সিজন_2
#Part_20
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

🏥 In Hospital 🏥
প্রায় ২ ঘন্টা আগেই আমিনুল সাহেবকে ওটিতে ঢুকানো হয়েছে। বাইরেই সায়রা, ইমা বেগম, জান্নাত আর রিসাব দাড়িয়ে আছে। সায়রা আর ইমা বেগম কেঁদেই চলেছে। জান্নাত আর রিসাব তাদের দুইজনকে সামলাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পরেই ওটির লাল বাতিটি নিভে গেল বেড়িয়ে আসল ডাক্তার। চেহারায় তার এক রাশ হতাশা। ডাক্তারকে আসতে দেখে সায়রা দৌড়ে তার সামনে যায়।

সায়রাঃ আমার বাবা কেমন আছে ডাক্তার?? তিনি ঠিক আছেন তহ!!

ডাক্তারঃ ইউ আর সরি।

এই কথা শুনে সকলেই কেঁপে উঠে। সকলের মুখে এক রাশ আতংক। সায়রা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে।।

সায়রাঃ মা,,,মানে!!

ডাক্তার এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে।

ডাক্তারঃ তিনি কোমায় চলে গিয়েছেন৷ মাথার আঘাতটা বেশ গভীরই ছিল তার। যার ফলে ব্রেইনের ওই সাইডের কিছু অংশ তার সক্রিয়তা হারিয়ে ফেলে আর কোমায় চলে যান। তার জ্ঞান ফিরানোর অনেক চেষ্টা করি আমরা কিন্তু প্রতিবারই আমাদের চেষ্টা বিফলে যেতে থাকে। তারউপর তিনি হার্টের পেশেন্ট। যার ফলে তাকে কড়া মেডেসিনের ডোস দিতে পারি নি আমরা।

সায়রা এই কথা শুনার সাথে সাথে দুই কদম পিছিয়ে যায়। জান্নাত এসে সায়রাকে ধরে। তখম রিসাব সামনে এসে বলে।

রিসাবঃ তিনি এখন কেমন আছেন??

ডাক্তারঃ আপাতত তাকে এখন লাইফ সাপোর্টের সাহায্যে জীবত রাখা হয়েছে।

রিসাবঃ তিনি কি কখনো সুস্থ হবে না? তার কি কখনো জ্ঞান ফিরবে না??

ডাক্তারঃ আমরা এখন কিছুই বলতে পারছি না। তার কি আদো জ্ঞান ফিরবে কিনা জানি। কিন্তু এখন তাকে বেঁচে থাকার এক মাত্র অবলম্বন হলো লাইফ সাপোর্টার। তাকে এখন আমাদের অবজারভেশনই রাখতে হবে।

সায়রাঃ বাবাকে ভালো রাখতে আপনাদের যা প্রয়োজন তা করুন। কিন্তু তাও যাতে বাবার কিছু না হয়।


🍁

দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ কেটে যায়। আমিনুল সাহেবকে সেই হসপিটালেই রাখা হয়েছে। তার অবস্থাতে কোন উন্নতি নেই।
কিন্তু এইদিকে সায়রা এখন আর আগের মত নেই। একদম চুপ হয়ে গিয়েছে সে। সারাদিন বাবার কাছে বসে থাকে আর তার সাথে কি যেন বিরবির করে। আর দেখে ইমা বেগম শুধু চোখের জল ফেলে। রিসাবই এখন তাদের সামলে রেখেছে।
হসপিটালের বিলও রিসাবই পে করছে। কেন না সায়রাদের কাছে যে টাকা ছিল তা এই কয়েকদিনে ফুড়িয়ে এসেছে। মধ্যপরিবার হলে যা হয়। তাদের সবসময় অভাবন্টনে পড়তেই হয়। সময় সবসময় তাদের সাথে খেফালতি করেই।
এইদিকে,
আরুশ অনেকবার সায়রার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু তা সবই বিফলে গিয়েছে। সে সায়রার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল কিন্তু জান্নাত ওকে মানা করে। কেন না সায়রার মনের অবস্থা এখন ভালো নেই। আরুশকে দেখে সে কিনা কি করে বসে তাই জান্নাত তাকে মানা করে দেয়।
আরুশ প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছে। তাকে যে করেই হোক সায়রার সাথে দেখা করতেই হবে সব কিছু ক্লিয়ার করতেই হবে।


🍁

সায়রা আমিনুল সাহেবের পাশেই বসে আছে। তার এক হাত নিজের মুঠির মধ্যে নিয়ে এক ধ্যানে বাবার মলিন মুখটির দিকে তাকিয়ে আছে। সায়রার পাশেই ইমা বেগম বসা। জান্নাত দুপুরে এসে একবার দেখে গিয়েছিল। রিসাব আমিনুল সাহেবের রিপোর্ট গুলো নিয়ে দৌড়া দৌড়ি করছে। তার কখন কি প্রয়োজন সব দিকেই খেয়াল রাখছে।

সায়রাঃ আচ্ছা আমার না কিছু জানার ছিল।

ইমা বেগমঃ হ্যাঁ বল।

সায়রাঃ বাবাকে কে মেরিছিল? এইসব কিভাবে হলো?

ইমা বেগমঃ আমি নিজেও জানি নারে মা। তোরা রুমে যাওয়ার পর আমিও রান্নাঘরে চলে গিয়েছিলাম। তখন তোর বাবা আর আরুশ দুইজনই নিজেরদের মধ্যে কথা বলা শুরু করে। কিছুক্ষণ পর বাইরে কিছু চিল্লা পাল্লা শুনি। আমি তখন ভাত নামাচ্ছিলাম তাই যেয়ে বিষয়টা বুঝতে পারি নি। কিছুক্ষণ পরেই একটা ভারি আওয়াজ কানে ভেসে আসে আর তার সাথে কাউরো চাপা আওয়াজও। আমি হাতটা মুছে বের হয়ে ডাইনিং রুমের দিকে পা দিতেই দেখি তোর বাবা নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে আর সামনেই ওই ছেলেটা হাতে ভ্যাস নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তা দেখে আমি এক চিল্লান দেই আর পরে তুইও সেখানে আসিস।

সায়রা কিছু না বলে আমিনুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকে। তা দেখে ইমা বেগম বলে উঠে।

ইমা বেগমঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করি ?

সায়রা হ্যাঁ করো। আমিনুল সাহেবের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে।

ইমা বেগমঃ তুই কি ওই ছেলেকে ভালবাসিস? কি যেন নাম অহ হ্যাঁ আরুশ!! ভালবাসিস ওকে?

সায়রা এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে।
সায়রাঃ না। আমি তাকে ভালবাসি না আমি শুধুই মাত্র তাকে ঘৃণা করি।

ইমা বেগমঃ তাহলে মা রিসাবকে বিয়ে করে নে। দেখছিসই তহ ও আমাদের কতটা না খেয়াল রাখছে। তোর বাবার সব কিছুই ওই সামলাচ্ছে। এই হসপিটালের খরচটাও ওই দিচ্ছে। ছেলেটা নিসস্বার্থে আমাদের উপকার করেই চলেছে। তার প্রতিদানে আমরা ওকে কিছুই দিতে পারছি না। তাই বলছিলাম কি তুই ওকে বিয়ে করে নে মা। ছেলেটা খুব ভালো আর এমনেও এইটাই তোর বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল তাই না।

সায়রাঃ বিয়ের ব্যবস্থা করো। আমি পরশুই রিসাবকে বিয়ে করছি। বাবার শেষ ইচ্ছেটা আমি যত তারাতারি সম্ভব পূরণ করতে চাই।

ইমা বেগমঃ আচ্ছা মা ঠিক আছে। আমি রিসাবকে এখনোই বলছি।
এই বলে তিনি বেড়িয়ে গেলেন আর সায়রা এইবার মুখ উঠিয়ে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।


🍁

বাসার ছাদের এক কোনারে দাড়িয়ে আছে সায়রা। রেলিং এর উপর হাত রেখে খানিকটা ভর ছেড়ে দিয়েছে। আনমনেই তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশটা আজ বেশ কালো মেঘ জমে আছে ঠিক সায়রার মনের মত। সায়রার এখন শুধু আরুশের একটা কথায় কানে বারি খাচ্ছে আর তা হলো-
.
— যদি তোমার বাবা মা আমায় না মানে আর আমাদের আলাদা করার চেষ্টা করে তাহলে তাদেরকেও আমি ছাড়বো না। সব শেষ করে দিব আমি।
.
হঠাৎ এই সায়রার চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে থাকলো। সে আকাশের পানে তাকিয়েই বিরবির করতে লাগলো।

সায়রাঃ কেন আমি সেই কথাটা সিরিয়াসলি নিলাম না!! কেন!! কেন এমন করলেন আরুশ!! কেন?? এমনটা করার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল!! আপনি যা করেছেন তার জন্য আপনাকে আমি কোন দিন ক্ষমা করতে পারবো। হত্যাকারী আপনি আমার বাবার!!

তখনই পিছন থেকে একজন বলে উঠে।
.
— আমি হত্যাকারী নই।
.
হঠাৎ কাউরো আওয়াজে সায়রা চমকে উঠে। সে পিছে ঘুরে দেখে আরুশ। সায়রা আরুশকে দেখে রেগে যায়। কিন্তু নিজেকে সংযত রেখে বলে।

সায়রাঃ কেন এসেছেন এইখানে??

আরুশঃ তোমায় সত্যিটা জানাতে।

সায়রাঃ কি সত্যি!! হ্যাঁ সত্যি!! এইটাই যে আপনি আমার বাবার হত্যাকারী!! চেঁচিয়ে।

আরুশঃ তুমি আমায় ভুল বুঝছো। আমি হত্যাকারী নই। আমি তোমার বাবাকে আঘাত করি নি। বিশ্বাস করো।

সায়রাঃ হাহ!! বিশ্বাস তাও আপনাকে। কোনদিনও না। একবার বিশ্বাস করে দেখেছি এর পরিনাম কি হয়েছে। এর পরে দ্বিতীয় বার আপনাকে বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না।

আরুশঃ তুমি মানো আর নাই মানো আমি এইসব করি নি।

সায়রাঃ নিজের চোখের দেখাকে কিভাবে অবিশ্বাস করবো শুনি!! নিজ চোখে দেখেছি আপনার হাতেই সেই ফ্লাওয়ার ভ্যাসটা ছিল। আর তখন আপনি বাদে বাবার পাশে কেউ ছিলও না।

আরুশঃ সব সময় চোখের দেখা সত্যি হয় না। এর পিছেও অনেক সময় অনেক অপ্রকাশিত তথ্য লুকিয়ে থাকে!!

সায়রাঃ তাহলে বলুন কে করেছে আমার বাবা এই অবস্থা বলুন!

আরুশঃ আমি জানি না বাট আমি এইটা করি নি!!

সায়রাঃ বাহ!! কি নিখুঁত মিথ্যা বলেন আপনি!! এতটা নিখুঁতভাবে মিথ্যা কিভাবে বলেন আপনি।

আরুশঃ আমি মিথ্যা বলছি না।

সায়রাঃ ব্যাস অনেক হয়েছে। আপনার আর কোন কথা আমি শুনতে চাই না। সেই তহ আপনি বলেই দিয়েছিলেন যে।
.
— যদি তোমার বাবা মা আমায় না মানে আর আমাদের আলাদা করার চেষ্টা করে তাহলে তাদেরকেও আমি ছাড়বো না। সব শেষ করে দিব আমি।
.
আর সেটা প্রমাণ করলেনও। ছিনিয়ে নিলেন আমার বাবাকে আমার কাছ থেকে। আরেহ আমি যদি বাবাকে বুঝিয়ে বলতাম তাহলে এমনেই মেনে যেতেন উনি। কিন্তু আপনি তহ সব শেষ করতে ইচ্ছুক ছিলেন তাই তহ এমন করলেন। কিন্তু আফসোস আপনি যাকে পাওয়ার জন্য এইসব করলেন সে আপনার হবে না কোন দিনও না। তাকে হারিয়েই বুঝবেন আপনজনকে হারানোর কষ্ট।

আরুশঃ মানে!!

সায়রাঃ মানে পরশুই আমি রিসাবকে বিয়ে করছি। আর আপনার থেকে আজীবনের জন্য দূরে চলে যাচ্ছি।

আরুশঃ তুমি চাইলেও তা পারবে না। ভুলে যেও কেন না তুমি আমার বউ।

সায়রাঃ হাহ!! তার প্রমাণ কি??

আরুশঃ আমাদের কাবিননামা।

সায়রাঃ আর সেটা কই?

আরুশঃ ওইটা তহ…..

সায়রাঃ আমার কাছে ছিল। আর সেটা আমি কয়েকদিন আগেই নষ্ট করে ফেলেছি। তার মানে এখন আপনার কাছে কোন প্রমাণ নেই আমি আপনার বউ। সমাজের চোখে আমি এখনো অবিবাহিত। তাই আমি যার সাথে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারি।

[[ আরুশ আর সায়রার কাবিননামাতে কিছু একটা ভুল ছিল। তাই আরুশ তা ঠিক করতে দিয়েছিল আর বলেছিল ঠিক করে যেন ওর বাসায় পাঠিয়ে দেয়। ভাগ্যবসত যেইদিন কাবিননামাটা আসে সেইদিন সায়রা ওর বাসায় ছিল। তাই কাবিননামাটা সে পায়। সায়রা কি মনে করে যেন ওইটা নিজের কাছে রেখেছিল। ভেবেছিল পড়ে আরুশকে বিয়ে দিবে কিন্তু আর দিয়ে হওয়া উঠে নি।
আর কিছুদিন আগেই সায়রা যখন বেগ গুছাচ্ছিল তখন তা সামনে এসে পড়ে আর তা দেখে সায়রা রাগ উঠে যায় আর সে তা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ডাস্টবিনে ফালিয়ে দেয়😥]]

আরুশঃ ভুলে যেও না কোন্ট্রেক পেপার কিন্তু আছেই। তুমি আমি বাদে আর কাউরো হতে পারো না।

সায়রাঃ যা ইচ্ছা তা করুন। আমি অন্যের না হলেও আপনার হবো না। আমি নিজের জান দিয়ে দিব তাও আপনার সাথে থাকবো না।

আরুশ এগিয়ে এসে কিছু বলতে নিলে সায়রা পিছিয়ে একদম রেলিং এর সাথে লেগে যায়। আর চিল্লিয়ে বলে।

সায়রাঃ আরেক কদম সামনে আসলে আমি এখন এইখান থেকে লাফ দিব।

আরুশ সেইখানেই থেমে যায়।
আরুশঃ সায়রা কিসব পাগলামি করছো??

সায়রাঃ চলে যান এইখান থেকে। আপনাকে আপনার সহ্য হয় না। আই জাস্ট হেট ইউ।। চলে যান এইখান থেকে।

আরুশ একটু এগুতে নিলেই সায়রা আরও পিছিয়ে যায়। তা দেখে আরুশ থেমে যায় আর দু কদম পিছিয়ে বলে।

আরুশঃ আচ্ছা চলে যাচ্ছি। কিন্তু এ ভেব না আমি তোমার লাইফ থেকেও চলে যাচ্ছি। সেটা কোন দিন হচ্ছে না। একটা কথা মাথায় গেধে রাখো #You_are_only_mine. আর সারাজীবন আমারই থাকবে।

এই বলে আরুশ সেখান চলে যায় আর সায়রা সেখানেই মাটিতে বসে পড়ে।



#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here