তুই শুধু আমার ভালোবাসা পর্ব -০৩+৪

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_৩

বর্ষণের এমন ব্যাবহার বর্ষা মোটেও আশা করেনি।মন খারাপ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো বর্ষা।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বর্ষা হিজাব পরছে আর ভাবছে- নিজেই রেডি হতে বললো আবার নিজেই রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। এই ছেলেটার মতি গতি আমি কিছু বুঝিনা।নিপু এসে বললো আপু ঝটপট নিচে যাও তা না হলে ভাইয়া তো আবার…

নিপুকে থামিয়ে দিয়ে বর্ষা বললো থাক আর বলতে হবেনা। ভাইয়ার কথা যতো কম বলবি ততোই ভালো। আমার হিজাব পরা হয়ে গেছে আমি নিচে যাচ্ছি বলেই বর্ষা চলে গেলো। নিপু মিটিমিটি হাসলো বর্ষার এভাবে যাওয়া দেখে।

বর্ষা গাড়ির কাছে এসে দেখে বর্ষণ ড্রাইভিং সিটে বসে স্টিয়ারিং এ হাত রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।তাই বর্ষা আর কিছু না ভেবেই পেছনের গেট খুলে বসতে যাবে তখনি বর্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে বলে, আমায় কি তোর ড্রাইভার বলে মনে হয়? বর্ষণের এমন কথায় বর্ষা সামনের দিকে তাকাতেই দেখে বর্ষণ লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে।

বর্ষা কিছু না বলে চুপচাপ সামনে গিয়ে বসে পরে।বর্ষণ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে বর্ষার দিকে আড়চোখে দেখছে। বর্ষা মুখ ভার করে মাথা নিচু করে বসে আছে। কোথায় যাচ্ছে কেন যাচ্ছে এসব শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে বর্ষার নেই।কারণ বর্ষা খুব ভালো করে জানে বর্ষণকে যতোই জিজ্ঞেস করা হোক সে বলবেনা কোথায় যাচ্ছে উল্টে মেজাজ দেখাবে। শুধু শুধু বর্ষণের ঝারি শোনার থেকে চুপচাপ বসে থাকাটাই শ্রেয়।

কিছুক্ষণ পরে গাড়ি এসে থামলো।বর্ষণ গাড়ি থেকে বর্ষাকে নামতে বলে। বর্ষা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমেই বাচ্চাদের মতো লাফালাফি শুরু করে দেয়।বর্ষণ ধমক দিয়ে বলে কি করছিস! এমন লাফালাফি শুরু করেছিস কেন? তুই কি ভুলে গেছিস এটা স্কুল নয় ভার্সিটি।তোর এমন অবস্থা দেখলে লেকচারারগণ তোকে ভার্সিটিতে পড়াতে নয় প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির পরামর্শ দেবে।

বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে আমি এতো খুশি কেন হয়েছি তা তুমি বুঝবেনা ভাইয়া।মন খারাপের ভীরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আজ আমার ভার্সিটির প্রথম দিন। কিন্তু তুমি ঠিক মনে রেখেছো।এই জন্যই তো তোমায় এতো ভালোলাগে। আমার মন খারাপের কারণ তুমি, আমার মন ভালো করার কারণটাও তুমি। ভাবতে ভাবতেই ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে ওঠে বর্ষার।সেটা বর্ষণের নজর এড়ায়নি। বর্ষার সামনে তুরি দিয়ে বলে এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে, ব্যাকসিটে ব্যাগ রাখা আছে ক্লাসে যা আর লাফালাফি করবিনা আমি ১ টার মধ্যে এসে তোকে নিয়ে যাবো। বর্ষা হুম বলে পা বাড়াতেই বর্ষণ আবার পিছু ডেকে বললো শোন, সবসময় মাথায় রাখবি এখানে পড়তে এসেছিস আড্ডা দিতে নয়।কোন ছেলের সাথে তো নয় ই বলেই বর্ষার উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে যায়।

বর্ষা ফিক করে হেঁসে নিজের মাথায় নিজেই টোকা দিয়ে বলে বর্ষা.. তুই ও না.. যখন তখন যেখানে সেখানে ভাবনায় ডুবে যাস। ভাগ্যিস ভাইয়া কিছু বুঝতে পারেনি 😇

বর্ষা ক্লাসে বসে আছে অনেকেই এসে পরিচিত হয়েছে।যদি ও বর্ষা স্বেচ্ছায় কারও সাথে পরিচিত হতে যায়নি।আজ প্রথম দিন, এজন্য ক্লাস হলোনা। শুধু পরিচয় পর্বই চলতে থাকলো।স্যার বললো ক্লাস হবেনা তোমরা সবাই সবার সাথে পরিচিত হয়ে নাও।

১২:১৫ টা ক্লাস হবেনা শুনে কেউ কেউ বাসায় চলে গেছে। কেউ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখছে। আবার কয়েকজন বন্ধু একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।

বর্ষা ক্যাম্পাসের একপাশে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।বর্ষণের জন্য ওয়েট করছে আর চারপাশে তাকিয়ে দেখছে সবাইকে। বর্ষণের গাড়ি চেখে পরতেই এগিয়ে আসে বর্ষা। গাড়িতে বসতে বসতে বললো ভাইয়া তুমিতো বলেছিলে ১টায় আসবে তাহলে এতো আগে চলে আসলে যে?

বর্ষণ হুম বলে মাথা নেড়ে বললো ভাবলাম আজ প্রথম দিন ক্লাস হবেনা তাই আগেই চলে আসলাম, আর ১ টায় আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং এটেন্ড করতে হবে তাই।

বর্ষাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ অফিসে চলে যায়।বর্ষাকে বাসায় ঢুকতে দেখে রমা খান হাসিমুখে বললো তোর প্রথম ক্লাস কেমন হলো? কথাটা শুনে বর্ষা অবাক না হয়ে পারলোনা। চোখ বড় বড় করে বর্ষা বললো তারমানে তুমি সবটাই জানতে মামনী?রমা খান হাসতে বললো যাহ্ ফ্রেশ হয়ে আয়। বর্ষা রুমে গিয়ে ব্যাগ, হিজাব রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হয় বর্ষা।নামাজ পড়ে নিচে যায় রমা খান নিপু আর বর্ষা একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়।বর্ষা রেস্ট নেওয়ার জন্য নিজের রুমে চলে যায়।তারপর লম্বা এক ঘুম দেয়।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসরের নামাজ পড়ে ব্যালকনিতে বসে আছে বর্ষা। তখন নিপু এসে চা দেয় বর্ষার হাতে।
নিপুর হাত থেকে চা নিতে নিতে বর্ষা জিজ্ঞেস করলো মামনী কি করছে।নিপু বললো আম্মা নিচে চা খায় আর পাশের বাসার আন্টির সাথে গল্প করে।
তারপর শুরু হয় নিপু আর বর্ষার গল্প। ট্রপিক বর্ষার ভার্সিটি।

রাতে একসাথে সবাই ডিনার করে যে যার রুমে চলে যায়। বর্ষা তার রুমে বসে আছে হঠাৎ বর্ষণ এসে বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলে তোর ফোন কোথায়?বর্ষা কিছু বুঝতে না পেরে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষাকে এভাবে তাকাতে দেখে বর্ষণ বলে তাকিয়ে আছিস কেন? ফোনটা দে। বর্ষা ওর ফোন বর্ষণের হাতে দেয়। বর্ষণ ফোন নিয়ে কিছু একটা করে ফোন বর্ষাকে ফেরত দিয়ে রুম থেকে চলে আসে।

কেটে গেছে কয়েকদিন,বর্ষণ বর্ষাকে ভার্সিটিতে নিয়ে যায় নিয়ে আসে। এর মধ্যে কয়েকজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে বর্ষার।তবে শুধু হাই হ্যালোর বন্ধুত্ব। কারো সাথেই তেমন আলাপ করা হয়নি বর্ষার। সেকেন্ড বেঞ্চে বসে আছে বর্ষা।হঠাৎ একটা মেয়ে এসে বর্ষার পাশে এসে বলে হাই, আমি নদী তুমি? বর্ষা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে আমি বর্ষা।নদী তখন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ফ্রেন্ড! বর্ষাও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। সময়টা ভালোই কেটে যাচ্ছে বর্ষা আর নদীর। বর্ষা নদীর বন্ধুত্ব তুমি থেকে তুই এ পরিণত হয়েছে।দুজনের মধ্যে ঝগড়া খুনশুটির ও কমতি নেই। এ ওর কান ধরে টানে তো ও এর চুল ধরে টানে।
আজও এর ব্যতিক্রম হলো না দুজন ঝগড়া করছে এমন সময় স্যার প্রবেশ করলো ক্লাসে। সাথে ভার্সিটির সিনিয়র ভাইয়ারা। বর্ষা নদীর দিকে তাকাতেই নদী ও অবাক হয়ে দুজনেই সামনের দিকে তাকায়। একটু পরে স্যারের কথা শুনে তারা বুঝতে পারে সিনিয়র ভাইয়ারা কেন এসেছে।

সামনেই নবীনবরণ অনুষ্ঠান। সেটা জানাতেই ভাইয়ারা এসেছে আর কে কি পারফর্ম করবে সেটা জানতে।স্যার সবাইকে বললো তোমরা যে যে পারফর্ম করতে চাও তারা লিস্ট করে তোমাদের বড় ভাই শাফিনের কাছে জমা দিও।
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_৪

স্যারের কথা শেষ হতেই শাফিন ভাইয়া পরিচয় দিয়ে বললো, হাই আমি শাফিন। এই ভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
তোমাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলতে চাই, সেটা হলো সবার মধ্যেই একটা সুপ্ত প্রতিভা থাকে যেটা হয়তো আমরা কখনো প্রকাশ করি আবার হয়তোবা কখনো প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনা।তোমরা চাইলে সেই প্রতিভার প্রকাশ করতে পারো,তাহলে সকলের সহযোগিতায় অনুষ্ঠান টা আরও সুন্দর মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠবে। তোমাদের উপর কোনো চাপ নেই যে তোমাদের পারফর্ম করতেই হবে।এটা জাস্ট মনের ইচ্ছে। তোমাদের ভালো লাগলে পার্টিসিপেট করবে না হলে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে হ্যা ঐ অনুষ্ঠানে সবাইকে এটেন্ড থাকতে হবে। আর তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন লিস্টের দায়িত্ব নাও। লিস্ট শেষে আমার হাতে সেটা দিতে হবে। আর যে এই দায়িত্বটা নেবে তাকে আমাদের সাথে অনুষ্ঠানের কাজে থাকতে হবে। এ কথা শুনে সবাই সবার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কেউ দায়িত্ব টা নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছে না।

এমন অবস্থা দেখে স্যার সবাইকে বললো ওকে ফাইন, তোমরা যেহেতু ডিসিশান নিতে পারছোনা তাহলে আমি কি সিলেক্ট করে দিবো? সবাই স্যারের কথায় রাজি হয়ে গেলো।
স্যার একবার সবার দিকে তাকিয়ে বর্ষাকে দাঁড় করায়। বর্ষার যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো সবকিছু। বর্ষা কিছু বলবে তার আগেই স্যার সবার উদ্দেশ্যে বললো তোমাদের কারও কোনো আপত্তি আছে ? সবাই সবার মতামত জানালো তাদের কোনো আপত্তি নেই বরং তারা সবাই খুশি।

বর্ষা তখন নদীর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে আর নদী মিটিমিটি হাসছে। নদীর হাসি দেখে বর্ষা ক্ষেপে আগুন হয়ে যায়।আর ভাবে কিভাবে নদী বদমাইশটাকে শায়েস্তা করা যায়।বর্ষা হুট করে স্যারকে বলে স্যার আমার সাথে আরও কাউকে লাগবে। স্যার সম্মতি দিয়ে নাম জানতে চাইলে বর্ষা নদীকে দেখায়। স্যার নদী আর বর্ষাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলতেই শাফিন নদী আর বর্ষার নাম লিস্ট করে নেয়।

সিনিয়র ভাইয়ারা ক্লাস-রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সারা রুম গুন গুন শব্দে ভরে ওঠে। টপিক নবীন বরণ।
কে কি পারফর্ম করবে, কার ফ্রেন্ড কি পারফর্ম করবে সেটা জানতে আর জানাতে ব্যস্ত সবাই।আর নদী বর্ষা ঝগড়া করতে ব্যস্ত।টপিকঃ বর্ষা নদীর নাম স্যারকে কেনো বলতে গেলো।

বর্ষা সবাইকে বললো তোমরা সবাই আজ ভেবে দেখো কে কে পার্টিসিপেট করতে চাও আর কে কি পারফরম্যান্স করবে।আগামিকাল লিস্ট করা হবে।বর্ষার কথায় সবাই একমত পোষণ করলো।

রাতে বর্ষা নিপু আর রমা বেগম একসাথে বসে চা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। বর্ষা রমা বেগমকে ভার্সিটির নবিন বরণের কথা বললো । রমা বেগম এটা শুনে বর্ষা কি পারফর্ম করবে তা জানতে চাইলো।বর্ষা রমা বেগমকে বললো তোমার ছেলেকে চিনোনা?এই বর্ষা পারফর্ম করলে বর্ষণ তো তাকে পুরোই চিবিয়ে খেয়ে নেবে। বলেই তিনজনই শব্দ করে হেসে ওঠে।সেই সময় বর্ষণের গাড়ির শব্দ পেয়ে নিপু উঠে দরজা খুলে দেয়। বর্ষণ কাউকে কিছু না বলে হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। রায়হান খান ভেতরে ঢুকতেই রমা বেগম বর্ষণের মুড অফের কারণ জানতে চাইলেন।
রায়হান খান বললো ওয়েট করো জানতে পারবে বলেই রুমে চলে যায়।

বর্ষণ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখে বর্ষা কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

বর্ষার হাত থেকে কফি নিতে নিতে বর্ষণ কপাল কুচকে বললো কি বলবি বলে ফেল। বর্ষণের কথায় বর্ষা মাথা নিচু করে বললো তেমন কিছু না, ঐ তোমার মুড অফের কারণ টা জানতে…. বলেই বর্ষা জিভ কাটে।

বর্ষাঃ হায় হায়! গর গর করে তো সব বলে দিচ্ছিস বর্ষা। তোর মাথায় কি কিছুই নাই! বোধ বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে? বর্ষা তখন কথা ঘুরিয়ে বলে নাহ ভাইয়া কিছু বলবোনা এই তোমার কফি দিতে এসেছিলাম।

বর্ষণ ভ্রু নাচিয়ে বললো সত্যি কি তাই?

বর্ষাঃ হুম তাই তো। তা নয়তো কি আমি এটা জানতে এসেছি যে তোমার মুড অফ কেনো? কখনোই না। আমার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই নাকি! বলেই বর্ষা মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে বর্ষণের দিকে।

বর্ষণ কিছু না বলে শুধু ঠোঁটের কোনায় হাসি টেনে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে।

বর্ষা আর কিছু না বলে দিলো এক ভোঁ দৌড়। বর্ষাকে দৌড়াতে দেখে বর্ষণ শব্দ করে হেসে ওঠে আর বলে পুরোই পাগলি একটা।

সবাই ডাইনিংয়ে বসে আছে বর্ষনের অপেক্ষায়।সে আসলে একসাথে ডিনার করবে।নিপু খাবার এনে রাখছে টেবিলে।বর্ষণ এসে বসতেই খাবার সার্ভ করে দিলো।

খাওয়ার মাঝেই বর্ষণ বললো তোমাদের সবাইকে আমার কিছু বলার আছে। যদি ও তোমাদের বলাটা ততোটা ইম্পর্ট্যান্ট না, তবুও। আমি সামনের সপ্তাহে ব্যাবসায় এর কাজে বাইরে যাচ্ছি, আই মিন মালায়শিয়ায় আমাদের যে কোম্পানি টা আছে সেখানে একটু ঝামেলা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার একটা মিটিং এটেন্ড করা হয়েছে। আমাকে সেখানে থাকতে হবে। আর ঐ কোম্পানির ফাইলগুলো ও চেক করতে হবে। তাই আগামী শনিবারের ফ্লাইটে আমি মালয়েশিয়ায় যাচ্ছি।

রায়হান খানঃ কি বলছিস এসব তুই? আমায় তুই আগে কেনো বলিসনি ঝামেলা হয়েছে? তোকে যেতে হবে না। আমি যাবো।তুই এদিকটা সামলা।

বর্ষণঃ তুমি গেলে হবেনা পাপা। আমায় যেতে হবে। এটা আমার কাজ তোমার নয়।

রায়হান খান বুঝতে পেরে আর কিছু বললোনা।

ডিনার শেষ করে বর্ষণ উঠে হাত ধুয়ে রুমে চলে যায়।

বাকি সবাই যে যার রুমে চলে যায়। বর্ষা ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পরে।সকালে আবার ক্লাসে যেতে হবে।বিছানায় গা দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করে বর্ষার চোখে।

ফোন বাজতেই ঘুম ঘুম চোখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন তুলে বর্ষা। স্ক্রিনে নদীর নাম দেখে ফোনটা রিসিভ করেই ঝারি দিতে শুরু করে বর্ষা।

বর্ষাঃঐ পেতনী, ডায়নি, রাক্ষসী, পিশাচিনী সারাদিন আমার পিছনে পরে থেকেও তোর শান্তি হয়নি? এখন আবার এই মাঝ রাতে ঘুমের মধ্যেও জ্বালাতে আসছিস😡?

নদীঃবইন তোর ঝাড়ফুঁক দেওয়া হইলে এবার থাম। আমার কথাটা শোন। আমি কি তোরে সাধে ফোন করেছি? প্রয়োজন যদি না থাকতো না! তাহলে আমি মাঝরাতে গাছে উইঠা বইসা থাকতাম তবুও তোরে ফোন দিতাম না হুহ্😏

বর্ষাঃ আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে! বল কেনো ফোন দিয়েছিস?

নদীঃশোন আমার না টেনশন হচ্ছে। তুই আমার নামটা বাদ দিয়ে দিস বইন। আমি এসব দায়িত্বে ফায়িত্বে থাকতে পারবো না।

বর্ষাঃ আরে মেরি পেতনী, চিন্তা মাত কার ম্যায় হু না!। এখন ফোন রাখ নিশ্চিন্তে ঘুম দে। কাল ক্যাম্পাসে কথা হবে বাই।
বলেই ফোন রেখে ঘুমিয়ে পরে বর্ষা।

রাত ১ টা কিছুতেই ঘুম আসছেনা বর্ষণের। বিছানা ছেড়ে উঠে ডায়েরি টা নিয়ে বসে পরে সে।লিখতে শুরু করে তার মনের কথাগুলো আর তার প্রেয়সীর পাগলামিগুলো।
ডায়েরি লেখা শেষে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় বর্ষণ। আজ বর্ষণের মনটা খুব অস্থির। তার কারণটা কি অফিসিয়াল নাকি ব্যাক্তিগত সেটাও বুঝতে পারছে না সে।

তবে কি বর্ষণ তার দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পারছে না?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here