#তুই_হৃদহরণী
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১০
আহরারের রুমেই তুরফার বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তুরফার অনেক অনুনয়ে মাঝে একটা হাল্কা পর্দার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পর্দা লাগানোর সময় আহরার শুধু মনে মনে বলেছিল,
“সামান্য এই পর্দা কি আমার থেকে তোমায় দূরে রাখতে পারবে হৃদহরণী?”
মোনতাহ্ সেই কখন থেকে তুরফা কে কল করে যাচ্ছে পাচ্ছে না। মেজাজ তার খারাপ হচ্ছে। তুরফা ফোনের আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি করে কল রিসিভ করল।
“হ্যালো।”
“তোকে আমি..”
“পরে মারিস আগে বল কল কেন দিচ্ছিলি?”
“কখন থেকে কল দিচ্ছিলাম তোকে।”
“হ্যাঁ। কেন কল দিয়েছিলি? আমি অফিসে ছিলাম।”
“শপিংয়ে যেতে হবে আমার খুব দরকার আছে। তুই ১ ঘন্টার জন্যে আয় প্লিজ। জানিসই তো একা যেতে ভয় লাগে।”
“আমি..”
“প্লিজ আয়।”
“দেখি অফিসে বলে। যে বস দেয় কি না সন্দেহ।”
“শিওর।”
“ওকে দেখছি।”
“তাড়াতাড়ি।”
“ওকে রাখ তুই।”
তুরফা কল কেটে আহরারের কাছে গেল। ফিরাতের সাথে মিটিং নিয়ে কথা বলছিল হয়তো। তুরফা গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। আহরার একাবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিল। ফিরাতের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেল। তুরফা বুঝতে পারছে না কিভাবে শুরু করবে। ওখানে যাওয়া টা দরকার। মোনতাহ্ একা গেলে সমস্যা হবে হয়তো। এলাকার বাজে ছেলেদের নজর আছে তাদের উপর। একা দুই টা মেয়ে থাকলে এমন হবেই। তুরফা থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। ফিরাত তুরফার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুরফা কিছু বলবে?”
“….
“কি হলো?”
“আ আমার ছুটি চাই।”
এ কথায় দুজনই ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাল। আহরার কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল,
“কি?”
“…..
“কি বললে?”
ফিরাত আহরারের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা দিল। বুঝাল, “আমি দেখছি।”
ফিরাত নরম গলায় বলল,
“কেন তুরফা?”
“….
“বলো।”
“আ আসলে মোনতাহ্….”
ফিরাত যেন ধক করে ঘুম থেকে উঠল। ব্যাকুল মন নিয়ে তুরফার দিকে তাকিয়ে আছে কথাহীন। তুরফা কে চুপ থাকতে দেখে ফিরাত স্থির থাকতে পারছে না। অস্থির হয়ে বলল,
“হ্যাঁ বলো। মোনতাহ্ কি?”
“….
“তুরফা বলো না।”
“মোনতাহ্ শপিংয়ে যাবে তাই।”
এহেন কথায় আহরার মেজাজ খারাপ করে দিয়ে বলল,
“শপিংয়ে যাবে বিদেশ নয়। চুপচাপ নিজের কাজ করেন গিয়ে।”
“….
“আসলে এলাকার বাজে ছেলেরা বিরক্ত করে খুব। ও একা গেলে..”
মাঝখান থেকে ফিরাত বলল,
“আমি যাচ্ছি।”
অবাক করা বড়বড় চোখ নিয়ে আহরার ফিরাতের দিকে তাকাল। এই যেন আহরারের চোখ কুটির থেকে বের হয়ে আসবে আসবে। বিস্মিত একটু বেশিই হয়েছে আহরার। যে ফিরাত মেয়ের কথা শুনলে মাথা ঝেড়ে ফেলে দেয় সে ছেলে কি না এক মেয়ের কথা বলাতে পাগল প্রায় হয়ে ছুটতে চলছে।
আহরার বেশ জোরেই বলল,
“হোয়াট?”
“হুম। তুরফা তোমার যেতে হবে না আমি যাচ্ছি। চিন্তা করতে হবে না।”
তুরফা মনে মনে স্বস্তি পেল। মুচকি হাসলও বিষয়টা ভেবে। ফোঁড়ন কাটা কথা বলল আহরার।
“তুই যাবি মানে?”
“হুম। তুই থাক, তুরফার সাথে মিটিং নিয়ে কথা বল। আমি কিছুক্ষণের মাঝেই আসছি।”
এই বলে ফিরাত হুড়মুড়িয়ে চলে গেল। আহরার অবাক হয়ে শুধু দেখল। তুরফা মিটমিট হাসছে। রাগে আহরার চেঁচিয়ে উঠল,
“হোয়াট দ্যা..”
তুরফা আরো মুচকি হাসতে লাগল। আহরার তার দিকে তাকিয়ে দেখল,
“এত হাসি পাচ্ছে কেন আপনার?”
“….
“হাসি বন্ধ করুন তুরফা।”
“আপনি কি করে বুঝলেন আমি হাসছি?”
“….
“কি হলো?”
“মোনতাহ্ কে তুরফা?”
“….
“কি জিজ্ঞেস করছি আমি?”
“ও আমার বান্ধবী।”
“ফিরাতের কে?”
তুরফা ভয় মিশ্রিত নয়নে চমকে তাকাল আহরারের দিকে।
“আমার জবাব দিন হৃদহরণী।”
“….
“উ উনার কে কেউ নয়।”
“তবে লেগে আসছে কেন আপনার কথা।”
“….
তুরফা মনে মনে বলল,
“কোন বাঘের পাল্লায় পরলাম। হায় মাবুদ।”
“কি হলো তুরফা? কি জিজ্ঞেস করছি আমি তোমায়? উত্তর দিবে।”
“ব বললামই তো আমি জানি না।”
ঝটপট জবাব দিল তুরফা। আহরার ভ্রুকুঞ্চন করে পরখ করল তুরফা কে। আর বলল,
“সত্যিই আপনি কিছু জানেন না তুরফা? নাকি বলছেন না?”
“কাজ আছে আমার যাই।”
তুরফা তাড়াতাড়ি পায়ে পর্দার ওপারে চলে গেল। আহরারও হন্তদন্ত হয়ে ছুটল সেখানে।
“আমি আপনায় আসতে বলেছি?”
“….
“তুরফা তোমার সাহস কত তা ভেবে পায় না আমি। এত সাহস নিয়ে থাকো কি করে তুমি? আমি বলিনি আসতে আর তুমি..”
“….
“আমার টেবিলে আসো। দরকার আছে।”
তুরফা আহরারের সামনাসামনি বসল।
“তুরফা কি সমস্যা তোমার?”
তুরফা চোখ মুখ এক করে কুঁচকাল।
“অফিসে থাকতে চাও না তুমি?”
“…..
“তুরফা আমার খারাপ রূপ কিন্তু তুমি দেখো নি। দেখার আশা করো না। তবে ভালো হবে না তোমার জন্যে। আমার কথা মতো চলো। অবাধ্য হবে কি আমার খারাপ রূপ টা দেখবে। ইউ নো নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখতে আমি কি কি করতে পারি? তোমার মতো একটা মেয়ের জন্যে আমি আজ ১০ দিনের মতো কোনো মেয়ের কাছে পর্যন্ত যাই না। যে আমি কি না..”
“যে আপনি কি না মেয়ে ছাড়া চলতে পারেন না। যো আপনি সবাই কে বিছানায় চান। তাই তো?”
“হ্যাঁ তাই। কারণ নিজেকে ঠিক রাখতে, নিজের ভেতরের দাবানল কে একটু প্রশমিত করার জন্যে। এমন টা করতেই হয়েছে আমাকে। মনে রাখবে প্রত্যেক টা মানুষের কালো একটা অতীত থাকে। আর কালো অতীত সবসময় ভালো কিছু শিক্ষা দেয় না। কিছু কালো অতীত আলোর বদলে অন্ধকারের অতলে ডুবিয়ে দেয়।”
চলবে….
(কপি করা থেকে বিরত থাকুন। অন্য কোথাও পোস্ট করবেন না। কোথাও নয়।)