তুই হৃদহরণী পর্ব ৯

#তুই_হৃদহরণী
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ৯

আহরার কিছু একটা চিন্তা করে চুপচাপ উঠে তুরফার ডেস্কে গেল। সে তখন কাজ করছিল। নিজের সিটে বসে এদিক ওদিক করছিল ফিরাত কে দেখার জন্যে। মুখ গম্ভীর করে আহরার কে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে মুখ নিচের দিকে নিয়ে কাজ করার ভান ধরতে লাগল। যেন আহরার কে? তাকে তার পাত্তা দেওয়ার কোনো দরকারই নেই।

আহরার এগিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ায়। তুরফা মাথা নিচু করে রাখলেও দৃষ্টি অস্থির, এদিক ওদিক করছে চোখ। আহরার সরাসরি বলল,
“তুরফা রুমে আসেন।”
“….
“তুরফা।”
এত জোরে ধমক শুনে তুরফা নিজেও ভয় পেল। কেঁপে উঠে দাঁড়িয়ে পরল।
“তোমাকে আমি আমার রুমে যেতে বলেছি। নাও ফাস্ট।”
প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে বলল কথাটা। তুরফা ভয়ে এবার কাঁপতে শুরু করল। আহরার গটগট পায়ে নিজের কেবিনে চলে গেল। অফিসে কানাঘুষা শুরু হলো। এত কোলাহল শুনে ফিরাত তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে এলো। তুরফা তখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অনেক কথা বলছে।
“মেয়ে টা এমন কেন? এত দেমাগ।”
“ঢং দেখলে বাঁচা যায় না। কি অহংকার।”
“মনে হয় উনি বসের কাছে কাজ করে না বস ওর কাছে কাজ করে। ভাব কত দেখছেন?”
“মেয়েটার সাথে স্যারের কি কিছু আছে? এমনি তো মনে হয়।”
“থাকলে থাকতেও পারে বসের যে স্বভাব দেখো গিয়ে বিছানায় নিয়ে শুয়েছে হয়তো। এসব নিয়ে কোনো কারণেই হয়তো মন কালাকালি হচ্ছে।”
এসব কথা শুনে তুরফার কান জ্বালাফালা হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কানে গরম লাভা ঢেলে দিচ্ছে তার। শরীর ঘৃণায় রিরি করছে। দাঁড়াতে পারছে না। শরীর কাঁপছে তার। চোখ পানি তে টলমল। রাগে আহরার তখন নিজের কেবিনে বসে এসব দেখছিল আর ফুঁসছিল। তুরফার দিকে এক নজরে তাকিয়ে দেখে দেখে রাগে টগবগ করছে।

দু একটা কথা ফিরাতের কানের গিয়েছে। রাগে সে জোরে ধমক দিল সবাই কে।
“শাট আপ। সবাই চুপ করেন একদম। আর একটাও যেন বাজে কথা না শুনি আমি। যান গিয়ে নিজের কাজ করেন গিয়ে সবাই।”
সবাই তবুও ফুটুর ফুটুর করে করে কাজ করতে গেল। তবুও টুকটাক অসহ্য, মিথ্যা কিছু কথা শুনতে হচ্ছে তুরফা কে। ফিরাত এগিয়ে গেল তুরফার দিকে। বলল,
“তুরফা বোন আমার কষ্ট পেও না বাজে লোকদের বাজে কথায়। আহরার কি বলে শুনে এসো। প্লিজ বোন আমার আহরারের অবাধ্য হইও না। কি বলে একটু শুনে এসো।”
তুরফা কোনো জবাব না দিয়ে লম্বা পায়ে ছুটে চলল আহরারের রুমের দিকে।

গিয়ে কোনো রকম পারমিশন চাইল না। সোজা গিয়ে ঢুকল সেই রুমে। কাঁদো অথচ জোর গলায় চেঁচিয়ে বলল,
“কি? কি সমস্যা আপনার? কি হয়েছে কি? কি চান আমার কাছে? কেন এমন করছেন? আমি বলেছি তো আমি চাকরি টা করব না। আপনি আমায় লিগাল পেপার দেখালেন। আমি আপনায় বলেছিলাম আপনি বার বার দরকার ছাড়া আমায় ডাকবেন না। আপনি তাও সেটা করেন। মানুষ কি ঘাসে মুখ দিয়ে চলে? কিছু বুঝে না? আপনি কেন এমন করেন? বাহিরে যে এত বাজে কথা হচ্ছে তার কি করবেন আপনি? ওখানে যে লোকে হাজার টা বাজে কথা শুনাচ্ছে আমাকে তার দায় কি আপনি নিবেন? আপনার চরিত্র আর কি নষ্ট হবে? নষ্ট হবার কি বাকি রেখেছেন? আপনি কেমন তা সবাই জানে। কিন্তু আপনি আমার মতো মেয়ের চরিত্রে কেন দাগ দিচ্ছেন? যেখানে আমার এক বিন্দু দোষ নেই। আপনি কেন আমার পিছনে পরে আছেন? আমায় রেহায় দিন। বাহিরের কথা গুলি আমার সহ্য হচ্ছে না। আমার শরীর টা জ্বলে যাচ্ছে। ঘৃনা হচ্ছে। আল্লাহ ভালো জানে আমার ভেতরে কেমন লাগছে। আমার শরীর টা পুড়ে যাচ্ছে ওই বাজে কথা গুলি। আমার ইচ্ছা হচ্ছে মরে যাই।”

আহরার ধপ করে জ্বলে উঠল। রাগে ফুলে ফেটে যাচ্ছে। রাগে ফট করে তুরফার কাছে গেল তুফানের মতো। হঠাৎ করেই তুরফার ঘাড়ের পেছনে হাত নিয়ে মুখটা কাছে নিয়ে এলো। দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলতে লাগল,
“তুই আমার সম্পদ, আমার আমানত। তোর উপর ভবিষ্যতে আমার রাজত্ব চলবে। তোকে কথা শুনালে আমি শুনাব, মারলে আমি মারব, আর ভা…”
কথাটা শেষ না করেই মৃদু ধাক্কা দিল তুরফা কে। সে গিয়ে এক হাত দূরে পরল। চোখ দিয়ে টলটল করে পানি চলে এলো। আল্লাহ তাকে কোন বিপদে ফেলল।

আহরার দরজা ঠেলে বাহিরে এলো।
“কাম হেয়ার এবরিওয়ান। কাম।”
আহরারের চিৎকারে সবাই তাড়াতাড়ি করে যার যার ডেস্ক থেকে ভয়ে এক জায়গায় এসে জড়সড় হলো। ফিরাত এসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকল আহরারের দিকে। আহরার রাগে ঘামছে। কোটের বোতাম টা খুলে জোরে নিশ্বাস ফেলল।
“হো ইজ টকিং ননসেন্স? জাস্ট টেলমি নাও ফাস্ট।”
আহরারের চিৎকারে সব থমথমে হয়ে গেল। সবাই ভয়ে এক ঘাটে পানি খাচ্ছে এমন।
“তুরফা কে নিয়ে কি কি বাজে কথা হয়েছে? আমি শুনতে চাই এগুলি। বলুন কে কে বলেছে?”
সবাই চুপ। ফিরাতও একটু ভয় পাচ্ছে আহরারের রাগ দেখে। কারণ চোখ তার অত্যধিক পরিমাণ লাল। তবুও সাহস করে গিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,
“আহরার ভাই তুই একটু থা…”
“থামব? আমি? বেশি বাড় বেড়ে এরা। কিছু বলা হচ্ছে না বলে এমন করছে। একেক টা কে ঘাড় ধরে সেক করে বের করলেই হবে।”
আহরার একটু থেমে বলল,
“তুরফা কে নিয়ে বাজে কথা বলার সাহস যেন আর কেউ না দেখায়। কসম আমি তার জিহ্ব টেনে ছিঁড়ে ফেলব। উনি পবিত্র। একটা কলি থেকে যেমন ফুল টা ফুটে উঠে ঠিক তার মতো পবিত্র উনি। যেটা কেউ স্পর্শ করে নি। দেখে নি। গুপ্ত ধনের মতো উনি লুকানো। একটা ঝিনুকের ভেতর মুক্তার মতো পবিত্র ও দামি তুরফা। আর তাকে নিয়ে বাজে সমালোচনা করার সাহস কে দেখায়? ফারদার এমন কেউ খারাপ কটু কথা বললে আমি তার জিহ্ব টেনে ছিঁড়ে কুত্তা কে দিয়ে খাওয়াব। কে বলে ওর সাথে আমার বাজে কিছু আছে? কার এত সাহস। আমার অফিসের কোনো মেয়ে কে আমি বিছানায় নিয়েছি? আন্সার মি। চুপ কেন সবাই। কোনো মেয়ে এখানে সামনে এসে বলতে পারবে এ কথা? আমি লেভেল দেখে করি। আমার অফিসের কেউ যোগ্য নয়। আর তুরফা? আগেই বলেছি তুরফা পবিত্র ফুলের অঙ্কুরের মতো। আর উনি আমার ভবিষ্যৎ। আর কারো কিছু জানার আছে? এ বিষয়ে কেউ কোনো কথা যেন না বলে। আর যদি বলে তবে তার জন্যে আহরার চৌধুরীর চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

এক নাগাড়ে কথা গুলি বলে দম নিল আহরার। ফিরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আর তুই ফিরাত। আমার কেবিনেই তুরফার বসার ব্যবস্থা কর। ও আজ থেকে আমার রুমেই কাজ করবে। ব্যবস্থা কর তুই।”
ফিরাতের থেকে কিছু শুনার আগেই আহরার গেল নিজের রুমে। ভেতরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনেছে তুরফা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল আহরারের মুখের দিকে।

ফিরাত কিছু বুঝতে পারল না। আহরার করছে টা কি? কি চাইছে ও? ফিরাতের মাথা কাজ করছে না। তবে আহরারের কথা মতো কাজ টা করতে হবে এটা সে খুব ভালোই বুঝতে পারছে।

আহরার রুমে গিয়ে তুরফা কে বলল,
“আজ থেকে তুমি আমার কেবিনে কাজ করবে। এখানেই। কোনো কথা যেন না হয়। কারো সামনে যেতে হবে না। কারো কথাও সহ্য করতে হবে না। আমি চাই না আমার তুর কারো বিন্দু সমতুল্য কারো কথা শুনুক। গিয়ে ওখানে বসো।”
“….
তুরফা কি যেন খুঁচ্ছে আহরারের মুখের দিকে তাকিয়ে।
“কি হলো? ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে কি দেখছো? রূপ বেড়েছে নাকি আমার? অবশ্য আমি ওমনি। আহরারের দিকে সব মেয়েদের নজর যায়ই।”
তুরফা লজ্জায় মাথা নোয়াল। মনে মনে বলল,
“রূপের কি ঢং। তাও এত গর্ব। ও আমার ঢং রে।”
তুরফা ঠোঁট উল্টাল।
“কি ভাবছো? নিশ্চয় আহরারের কথা।”
এই কথা শুনে তুরফা বিরক্তি নিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসল। আহরার হাসল। হেসে গিয়ে নিজের জায়গায় বসল।
“চকলেট না স্টবেরি?”
তুরফা চোখ বড় বড় করে তাকাল আহরারের দিকে। আহরার খানিক দুষ্টুমির সহিত হেসে বলল,
“আমি আইসক্রিমের কথা বললাম। কোন টা খাবেন হৃদহরণী। চকলেট ফ্লেভারের নাকি স্টবেরি ফ্লেভারের।”
আহরারের এহেন কথায় তুরফা খুবই লজ্জা পেল। মাথা নিচু করে রেখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মনে মনে বলল,
“আল্লাহ লোকটার মতো এত নিলজ্জ্ব বেহায়া মানুষ বোধহয় খুব কম আছে। উনার চরিত্র, কথার ধরণ হয়তো জীবনেও পাল্টাবে না। কি বেহায়াপনা। কত নিলজ্জ্ব।”
তুরফার অবস্থা দেখে আহরার যেন হাসি থামাতে পারছে না। ঠোঁট দুই আঙ্গুল চেঁপে আছে। তার খুব হাসি পাচ্ছে। বেচারা হৃদহরণী।

চলবে….
(ইডিট করার সময় হয়নি। ২/১ টা ভুল বানান নিজ দায়িত্বে একটু বুঝে নিয়েন। কপি করা থেকে বিরত থাকুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here