তুই_তারারে_ভিনদেশী পর্ব ৬

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী(সিজন-২)

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:06

ভার্সিটিতে প্রবেশ করতেই আফরিন সামনে তাকিয়ে দেখে আদিত্য আল্লাহ বাঁচাও আমাকে। অন্যা, আর অহনাও আছে সাথে৷ এখনতো কিছু বলতে পারবে না। তাও মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা তুলে নিলাম। কোনো ভাবেই যেন না দেখে।

কিন্তু যেটা ভেবেছিলাম সেটা আর হলো কোথায়। আহান ভাইয়া অহনাকে ডাক দিয়ে বলে

” অহু একটুখানি এখানে আসো তো। আমি তো ভুলেও যাবো না। অহনা অন্যাকে নিয়ে সেখানে যায়। আমাকে বললে আমি বলি

” আমি ক্লাসে যাই বরং তোরা দেখা করে আয়।

এই বলে আমি আর দাড়ালাম না। হঠাৎই মনে হয় পিছনে কেউ হাটছে। হাঁটতেই পারে স্বাভাবিক। হাজারো স্টুডেন্টের আনাগোনা। কিন্তু হঠাৎ করেই কেউ এসে আমার পাশে হাটতে লাগলো। তাকিয়ে দেখি আদিত্য। এখন কি করব? একটু আগাতেই আমাদের ক্লাস। এইটুকু গেলেই হলো।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে

” তুমি অহনা, অন্যার সাথে ঐখানে গেলে না কেন?

নিজের ভালে পাগলেও বুঝে, মুরগী হয়ে শিয়ালের কাছে টিংটিং করতে যাবো। বললেই হলো?! আদিত্য আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ক্লাসে চলে আসি।
এই যাত্রায় বেঁচেগিয়েছি।

আদিত্য আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে চলে যায়। একটু পর অন্যা আর অহনাও চলে আসে। ক্লাস চলছে। আর আমি কলম কামড়াচ্ছি। আসল কথা আমার মনযোগ নেই পড়াতে। একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, এক রাতে এই এনাকন্ডা কি ভাবে ভালো হলো?? জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি। গাছের নিচে বসে বসে তিন বন্ধু আড্ডা দিচ্ছে!? এদের কি ক্লাস নেই নাকি?? হঠাৎ করেই টিচার বলে

” আফরিন বাইরে কি তোমার? বোর্ডে আসো আর এই প্রশ্নের উত্তর সোলভ কর।

এইরে কালকে রাতে তো বই ধরেও দেখেনি। আর এখন কোন সাবজেক্ট হচ্ছে সেটাও মনে ছিল না। বোর্ডে গেলেও উত্তর আর পেলাম কই ফল স্বরূপ ক্লাস থেকে টিচার আমাকে বের করে দিল। অহনা আর অন্যার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বেরিয় গেলাম। ওরা আসতে চাইলে চোখের ইশারায় বলি ক্লাসে মনযোগদে।

____________

একটু পরই আদিত্য আহান ভাইয়ারা আসে। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। এখন কি হবে। আমাকে দেখে কৌশাল আর আহান ভাইয়া আগে চলে যায়। আদিত্য আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে

” ক্লাসে টিচার এখানে কি কর?

কি বলবো?! এখন। তারপর সত্যিটা বলে দিলাম। আদিত্য একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে

” দাড়াও। বলেই টিচারকে বলে

” স্যার, আফরিনকে একটু সাথী মেম ডাকছে। স্যার আমাকে বলে আদিত্যর সাথে যেতে। মানে মাঠে সাথী মেম কি ভাবে??

বাধ্য হয়ে আমিও যেতে লাগলাম তার সাথে। একটু যেতেই সে সোজা আমাকে নিয়ে ঢুকে পরে বায়োলজির ল্যাবে। কেউ তো নেই তাকে বললাম

“কই সাথী মেম তো এখানে নেই !? আর আপনি তো মাঠে থেকে আসলেন। আপনার সাথে সাথী মেমের দেখা হলো কখন।

সে এইসব বাদ দিয়ে চেয়ারে বসে পরে আর বলে

” তুমি তখন আমার প্রশ্নের জবাব দিতে প্রয়োজন মনে করনি এখন আমি করছি না।

এবার সত্যি আমার রাগ লাগছে। তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলি

” তাহলে এখানে আমি কি করব?? ডান্স করতে আমাকে এখানে নিয়ে আসছেন? আদিত্য হাসি দিয়ে বলে

” মন্দ হয়না দেখি কেমন নাচতে পারো?! অসহ্য একটা। আমি যেই না ল্যাব থেকে বেরুতে যাবো তখনই সেও আমার সাথে সাথে। মানে কি ভাই? আদিত্য বলে

” তুমি হিজাব করতে পারো না? অহনা আর অন্যার মতো হিজাব করবা। আমি দাঁড়িয়ে যাই আর বলি

” সমস্যা কি আপনার? আমার পিছনে এভাবে লেগে আছেন কেন?

আদিত্য কিছু না বলেই আগে হাটতে লাগে। মানে কিছু না বলেই অপমান করে গেলো!? খবিশ বউ জুটবে না কপালে তোর।

______________

ক্লাসে এসে সিটে চুপচাপ বসে পরি। এখন কোনো ক্লাস নেই৷ সবাই যার যার মতো।৷ একটু সময় যেতেই আবার দেখি আদিত্য দরজার পাশে। আহান ভাইয়া অহনার সাথে কথা বলছে। অন্যা আমার পাশেই বসা। ফোনে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে।।
আদিত্য কে দেখা মাত্র বই দিয়ে নিজের মুখ ঢাকি। মিনিট পাঁচ যেতেই বইটা সরিয়ে দেখি ফাজিলটা গিয়েছে কি না। আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে একটা হাসি দিয়ে ভ্রু উচু করে জিজ্ঞেস করে

“কি? আমি আবার বই দিয়ে মুখ ঢাকি। এখন তো চলে যাওয়ার কথা। তাকিয়ে দেখি না এখনো যায়নি। আমাকে আবার তাকাতে দেখে একটা ফ্লাইং কিস করে। সালা ফাউল। আমিও কমনা হাত দিয়ে দেখেলাম পিটাবো। সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আহান ভাইয়ার সাথে চলে যায়।

__________

রাতে টং দোকানে বসে আড্ডায় মেতেছে আদিত্যরা। কৌশাল বলে

” ভাই একরাতেই তুই এতে চেন্ঞ্জ!? আদিত্য বলে

” ওর জন্য সব করতে রাজি। জানিস যেদিন প্রথম ভাবিকে দেখতে যাই। আফরিন আসে জুস নিয়ে। ভাবি তখনো রেডি হচ্ছে । আমিতো ছিলাম ফোন নিয়ে ব্যস্ত। আমাকে জুস দিতে গিয়ে ভুলবসত জুসটা আমার উপর ফেলে দেয়। মুহূর্তেই মেজাজটা বিগরে যায় । কিন্তু সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখেই মনে হচ্ছিল সব রাগ শেষ। একটা সাদা পরি দাড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি টিস্যু দিয়ে বলেছিল খুব কিউট করে সরি। আর সেটাই ছিল ম্যাডামের বলা প্রথম আর শেষ সরি। ও বরাবরই আমাকে এড়িয়ে চলতো। যার জন্য ওর প্রতি রাগহতো। ভাবতাম এমন ইগনোর করে কেন।

আহান বলে

” পরে। আদিত্য হাসি দিয়ে বলে

” তার জন্যই ওর সাথে ঝগড়া করতাম। গায়েহলুদের দিন যখন আফরিন কে দেখি, ওকে দেখে একটা কথাই বলেছিলাম পিচ্চিটাকে শাড়িতে কত বড় লাগে। নিজের অজান্তেই ওর বেশ কয়েকটা পিক তুলে নেই। আর আস্তে আস্তে আমি দূর্বল হয়ে পরি। আসলে জানি না কখন কি হয়েছে। আর বলিস চেন্ঞ্জ হয়েছি? তা না আছিতো আগের আদিত্য । কিন্তু যখন থেকে বুঝতে পেরেছি ওকে আমি লাভ করি, তখন থেকে ওর কাছে আশেপাশে থাকলে রোম্যান্টিক মুড অটো হয়ে যায়।

কৌশাল চা খাচ্ছিল, আদিত্যর কথা শুনে হাসি পায় খুব সেটা কন্ট্রোল করতে পারে না। ফল স্বরুপ সব চা গিয়ে পরে আহানের মুখে। আহান বলে

” হারামি, আম্মু বলছিল আজকে গোসল করতে করি নাই। তুই করায় দিলি গোসল তাও চা দিয়ে। আদিত্য বলে

” ছিঃ তাইতো বলি এমন পঁচা মাছের গন্ধ আসে কোথায় থেকে। কৌশাল বলে

” আহান তোর জন্য এই প্রবাদটা ঠিক। উপর দিয়ে ফিটফাট নিচ দিয়ে সদরঘাট।

আহান বলে

“চুপ সালা।

________________

রাত সাড়ে ১২টা আফরিন ঘুমে। হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠে। তাকিয়ে দেখার আগেই কেটে যায় । তাই ঘুমিয়ে পরে। আবার কল আসলে অন্যা কল রিসিভ করে বলে

” কোন আহাম্মক রে এতো রাতে কল দিয়েছিস মা বোন নাই বাসায়? কৌশাল বলে

” মা বোন ভাবি আছে বউ নাই। কন্ঠ শুনা মাত্র অন্যা লাফিয়ে ওঠে বসে। আর বলে

” আপনি এতো রাতে? কৌশাল বলে

” কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি? কৌশাল বলে

” আজিব তো! আর আপনার কি হয়েছে? যাকে খুশি আশা করব।

কৌশাল বলে

” আমি গিরগিটি তুৃমি কি!? শাঁকচুন্নি। অন্যা রেগে বলে

” আপনি হলেন এনাকন্ডা। নাক ছাড়া গরু। পা ছাড়া বিড়াল।

কৌশাল বলে

” তুমি হলা এনাকন্ডী। নাক ছাড়া গাভী। পা ছাড়া বিড়াল মাশি। অন্যা বলে

” এই ফাজিল আমাকে কপি করা বন্ধ করুন। আদিত্য বলে

” ঐ শাঁকচুন্নি কপি কই করলাম? অন্যা বলে

” হতচ্ছাড়া , আমাকেই তো কপি করছেন শুধু লিঙ্গ পরিবর্তন।

_____________

অপরদিকে আদিত্য ভাবছে আফরিনকে এতো রাতে কল দিবে কি না!? সারাদিন তো আর কম জ্বালায় না বেচারিকে এখন না হয় একটু ঘুমাক শান্তিতে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here