#তুমিই _আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:22
#Suraiya_Aayat
গাড়িটা হঠাৎ একটা নির্জন এলাকার মধ্যে ঢুকতেই নূর চমকে গেল , আয়াশের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো, এতো রাতে লোকটা ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটাও বললো না, আচ্ছা ওকে মেরে ফেলার কি কোনরকম প্ল্যান করছে ? নাকি অন্য কোন কুমতলবে ওকে অজানা এক পথে নিয়ে যাচ্ছে আয়াশ নূর বুঝতে পারছে না তাই মনের মাঝে হাজারো কল্পনা জল্পনা করেই চলেছে ৷ নূর চোখ খিঁচে বন্ধ করে রাখলো , ভয় লাগছে ওর ৷ হঠাৎ আয়াশ একটা কটেজের পাশে এনে গাড়িটা থামালো , মধ্য রাত তাই আশে পাশে শেয়াল কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে, ঝোপের পাশ থেকে ঝিঁঝি পোকার চি চি আওয়াজ নির্জনতা বাড়াচ্ছে ৷ আয়াশ গাড়ির দরজা খুলতেই খট করে আওয়াজ হলো তাতে নূর একপ্রকার কেঁপে উঠলো ৷ ভয়ে ভয়ে আয়াশের দিকে তাকালো, আয়াশ গাড়ি থেকে নামছে ৷ নূর ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বসে আছে, হাতের তালু ঘামছে ৷ আয়াশ এসে চাবি দিয়ে নূরের দিকের দরজার লক খুলতেই নূর একটু নড়ে চড়ে বসলো ৷ আয়াশ দরজাটা খুলে গাড়ির ভিতর মুখ ঢুকিয়ে নূরের দিকে তাকালো, গাড়ির ভিতরকার গরম আর. ভ্যাপসা অনুভূতির সাথে আয়াশের গরম নিশ্বাসের সংমিশ্রনে নূরের শরীর উষ্ন ছোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে ৷ আয়াশ ওর হাতটা নুরের ঠোঁটের ওপর রেখে আলতো করে স্লাইড করে বলল
” এতো ঘামছো কেন আফুসোনা ? ভয় পাচ্ছো ?”
নূর আয়াশের হাতটা শক্ত করে মুঠোবদ্ধ করে চেপে ধরে নামিয়ে নিলো, কি বলবে বুঝতে পারছে না ৷ আয়াশ মুখের হাসিটা প্রশস্থ করে নূরের গলায় ঠোঁট ছোঁয়াতেই নূর আয়াশের হাতটা ছেড়ে দিলো৷ আয়াশকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দেওয়ার সাহসটুকু ওর মাঝে নেই , কেমন যেন এক নেশাময় অনুভূতির আগমন ঘটছে ওর মাঝে, শরীরের হরমোনের ক্রমান্বয়ে হ্রাস-বৃদ্ধি ক্ষনে ক্ষনে ওর মনের অনুভূতিকে জাগ্রত করে তুলছে ৷ আয়াশ ওর হাতটা নূরের গলায় আলতো করে ছুঁয়ে নূরকে কাছে টেনে আনলো ,নূরের নিশ্বাসের শব্দের বেগ বাড়ছে এ এক আবেগঘন মুহূর্ত যা নিতান্তই অনাকাঙ্খিত ৷ নূর ওর হাতটা সিট বেল্টটাকে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে চোখটা বন্ধ ৷আয়াশের ঠোঁটের স্পর্শগুলো আরও বেশী মাত্রায় নূরের শরীরে প্রভাব ফেলতে লাগলো, এ কোন নেশার ঘোরের মাঝে আছে আয়াশ ?
নূর হঠাৎই আচমকায় আয়াশের শার্টটা খামচি মেরে ধরতেই আয়াশ নূরের থেকে সরে এলো, এই অন্ধকার রাতে নূরের নেশা কাটানো খুবই কঠিন আয়াশ পারেনি কোনক্রমেই এই নেশা থেকে মুক্তি পেতে ৷
নূরের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে, চোখ বন্ধ ,হাপাচ্ছে নূর, শরীর আর মন উভয়ের মাঝেই এক দমকা হাওয়া বয়ে গেল কিছুখনের জন্য ৷ আয়াশ নূরকে কোলে তুলে গাড়ি থেকে বার করে আনলো আর পা দিয়ে দরজাটা ঠেলে দিলো ৷ ওকে যেতে দেখেই অন্ধকারের মধ্যে থেকে আচমকা একটা দারোয়ান এসে বললেন
” স্যার আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো স্যার ?”
আয়াশ ওনার দিকে তাকিয়ে বললেন ” নাহ আমরা ঠিকটাক পৌছেছি ৷”
উনি বেশ আনন্দিত সুরে বললেন
” আপনাদের রুমটা রেডি আছে স্যার ৷”
” ওকে ৷”
কথাটা বলে আয়াশ এক পা বাড়াতেই হঠাৎ করে চারিদিকে আলো জ্বলে উঠলো ৷ নূর একপ্রকার চমকে গেল ৷ আশেপাশের ছোট গাছ গুলোতে নানা রঙের মরিচ বাতি জ্বলছে , কতো ফুলের ছোট ছোট গাছ লাগানো আছে ৷ নূর আয়াশের গলা জড়িয়ে আছে ভালো করে যাতে পড়ে না যায় ৷
আয়াশ নূরের দিকে একবার তাকালো, মুখটা কেমন ভয়ে শুকিয়ে গেছে , আয়াশ চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকালো ৷ নূর আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে কি সুন্দর করে ডেকেরেট করে বাড়িটা সাজানো হয়েছে ৷ নূর মনে মনে হাজারো কল্পনা জল্পনা করতে শুরু করে দিলো ৷ আয়াশ রুমে ঢুকতেই নূর একটু কেঁপে উঠলো, পরো রুম অন্ধকার আর একটা সুগন্ধ ভেসে আসছে যা নূরের শরীরে শিহরন জাগাচ্ছে ৷ আয়াশ নূরকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ো কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল , অন্ধকারে নূর আয়াশের অনুপস্থিতি ঠিকই বুঝতে পারছে, নূর খানিকখন চুপ করে বসে রইলো তবুও আয়াশ আসলো না দেখে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো
” এই যে শুনছেন?”
কোন উত্তর আসলো না দেখে নূর ভয়ে বিছানার চাদর আকড়ে ধরে খানিকটা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল
” কোথায় আপনি ? চলে গেলেন কোথায় আমাকে একা রেখে ?”
আবারো কোন উত্তর এলো না দেখে নূর বিছানা থেকে ভয়ে ভয়ে পা নামালো তারপর আর এক পা নামিয়ে হাটতে গেলেই কেউ যেন ওর পা দুটো হাত দিয়ে টেনে ধরতেই নূর চমকে গেল আর নূর ভয়ে আআআআ করে চেচিয়ে উঠলো ৷ আয়াশ ওর পা টা ধরে পায়ে ঠোঁট ছোঁয়াতেই নূর বুঝলো সেটা আয়াশ , ভয় পেয়ে গিয়েছিলো ও তাই একটা সুরা পরে শরীরে ফুক দিয়ে নিলো ৷ যখন বুঝলো যে আয়াশ ওর পায়ে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে তখন ভয়ে আর লজ্জায় পা টা টেনে নিলো নুর ৷ আয়াশ সেখান থেকে উঠে লাইট জ্বালাতেই নূর চোখ বন্ধ করে নিলো ৷পিটপিট করে চোখটা খুলে তাকিয়ে অবাক হলো নূর,পুরো ঘরের দেওয়ালের রঙ ব্লু বেরি কালার আর মোমবাতি সাজানো ঘরটাতে, এমন অদ্ভুত রঙের ঘর নূর আগে কখনো দেখেনি ৷ আয়াশের শরীরের ব্লু শার্টের সাথে ঘরের রঙ মিলে মিশে একাকার ৷ আয়াশ নূরের অছে গিয়ে বসে নূরকে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিতেই নূরের কলিজা কাঁপানোর মতো অনুভূতি হলো ৷আয়াশ নূরের ওপর ঝুকে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল
” তুমি কি জানো তোমাকে আমি এখানে কেন এনেছি? এখানে আনার উদ্দেশ্য কি?”
নূর কম্পিত কন্ঠে জবাব দিলো
” কিইইই?”
আয়াশ নুরের পেটে আলতো করে স্লাইড করতে করতে বলল
” আজকের দিনে তোমাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম ঠিক 5বছর আগে আর সেদিনই ভেবেছিলাম আমার ডেভিলনেসটাকে কাজে লাগানোর সবচেয়ে ভালো এক প্রশস্থ আর সুদীর্ঘ পথ হলে তুমি যার ওপর আমার সব রাগ ঢেলে দিতে পারবো আর যার ওপর থাকবে কেবল আমার অধিকার শুধুই আমার ৷”
নূর আয়াশের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
” কি বলছেন টা কি? আপনি আমাকে 5 বছর ধরে চেনেন? কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি কেবল কয়েক মাস হলো তাহলে কীভাবে কি ?”
আয়াশ এবার ওর হাতটা নূরের গলার কাছে নিয়ে গিয়ে হালকা করে স্লাইড করতে লাগলো কিন্তু নূর অধীর আগ্রহে আয়াশের পানে চেয়ে আছে যে কখন আয়াশ ওর সব প্রশ্নের উত্তর দেবে সেই আশায় ৷ আয়াশ নূরের গলায় একটা হার পরিয়ে বলল
” এটা সবসময় পরে থাকবে ৷ ওকে?”
নূর আয়াশের কথায় অবাক হয়ে বলল
” কি ?”
আয়াশ হারটা উঁচু করে নূরকে দেখিয়ে বলল
” এই যে এটা ৷”
নূরের চোখ ছানাবড়া, লেকেটের সেই ইউনিক আর আদ্ভুত নাম দেখে ” ডেভিল “লেখা আছে ৷ খুবই অদ্ভুত যাকে বলে !
নূর খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
” এটা কি ?”
আয়াশ বলে উঠলো
” তোমার শরীরে আমার চিন্থ ৷ বলেছিলাম না তোমার শরীরে আমার অনেক চিন্থ থাকবে আর এটা হলো দ্বিতীয় চিন্থ আর শেষ যে চিন্থটা তুমি বহন করবে সেটার জন্য তোমাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে আফু সোনা ৷”
নূর অবাক কন্ঠে বলল
” শেষ চিন্হটা কি?”
” বুঝে নাও ৷”
নূর অনেক ভাবার চেষ্টা করে বলল
” বুঝলাম না ৷”
আয়াশ হো হো করে হেসে বলল
” আচ্ছা এখন এতো বুঝে লাভ নেই যেদিন থেকে সেই চিন্থ বহন করবে সেদিন থেকে বুঝলেই হলো , বুঝলে আফু সোনা ?”
নুর চুপ করে রইলো ৷
আয়াশ ওকে বিছানা থেকে তুলে কোলে করে ঘরের সামনের দিকে যে বিরাট এক ব্যালকনি আছে সেখানে নিয়ে গেল তারপর ব্যালকনিতে পেতে রাখা নরম চাদরের ওপর বসিয়ে নূরকে নিজের কাছে টেনে বলল
” ডু ইউ নো আফু সোনা আই লাভ টু প্লে গেম সেটা যেকোনো রকম হতে পারে, কারোর জীবন নিয়ে হোক বা এমনিই হোক ৷”
নূর কথাটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রইলো ,মানুষটা আদতেও মানুষ নাকি এলিয়েন তা নূরের বুঝতে কষ্ট হয় ৷
” কিসের গেমের কথা বলছেন আপনি ?”
আয়াশ হো হো করে হাসলো তারপর বলল
” তোমার কি মনে হয় ?”
” জানি না ৷”
” মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে খেলতে আমি ক্লান্ত তাই আপাতত আমি এখন ট্রুথ আর ডেয়ার খেলবো , বাট একটা কান্ডিশন নিয়ে হবে সেটা হলো তোমার কাছে একটা সুযোগ থাকবে আর আমার কাছেও একটা সুযোগ থাকবে , তোমা যদি ট্রুথ পড়ে তো সেটাই প্রথম আর সেটাই লাস্ট আর আমার ডেয়ার পড়লেও তাই , আর সেম রুলস আমার ক্ষেত্রেও বিকজ টিচিং করে কিছু পাওয়া আমার রক্তে লেখা নেই ৷”
আয়াশের এই কথাটা শুনে নূর বলল
” আমাকেও তো চিটিং করে পেয়েছেন আপনি , তাহলে ?”
আয়াশ নূরের চিবুক ধরে বলল
” নিজের হক নিজেই আদায় করে নেওয়া উত্তম আর তাকে হাতছাড়া করে দেওয়া বোকামি ৷ তুমি আমার হক আর আমার সেই প্রিয় নেশা ,তাই এ নিয়ে কোন প্রশ্ন হবে না বুঝলে আফু সোনা?”
নূর একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো, মানুষটার সাথে কথায় আর কাজে দুক্ষেত্রেই পেরে ওঠা মুশকিল ৷ আয়াশ ওর পাশে থাকা একটা কাঁচের বোতল হাতে নিয়ে বলল
” রেডি?”
নূর কিছু বলল না , আয়াশ বোতলটা ঘোরালো ৷ বোতলের অবস্হান দেখে খেলার নিয়ম অনুসারে আয়াশের ট্রুথ অথবা ডেয়ার নেওয়ার পালা ৷ নূর উত্তেজিত হয়ে বললো
” আপনাকে ট্রুথ নিতে হবে , রুলস ইজ রুলস ৷ আমি যা দেবো তাই নেবেন আপনি ৷”
আয়াশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” ডান , আর যাক হোক সত্যর পিছনে ছুটতে কখনো ভয় পাইনি ৷ বাই দা ওয়ে যেকোনো একটাই প্রশ্ন করতে পারবে কজ ইউ নো রুলস ইজ রুলস ৷”
” ইয়াহ ৷”
” লেটস স্টার্ট ৷”
নূর একটু চুপ করে রইলো ,মনের মাঝে আছে হাজারো প্রশ্ন কিন্তু যেকোনো একটাই জিজ্ঞাসা করতে পারবে তাই কোনটা ফেলে কোনটা বলবে বুঝছে না !”
আয়াশ নূরকে চুপ করে থাকতে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে আর নূর মাঝে মধ্যেই আয়াশের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাওয়াতে ও ভড়কে যাচ্ছে ৷ অবশেষে নূর এমনভাবে একটা প্রশ্ন ভাবলো যাতে করে আয়াশের দুটো প্রশ্নের উত্তর একেবারেই দিতে হবে ৷নূর খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বলল
” আপনি যখন থেকে আমাকে চিনতেন তখন আপনি কোন কোথায় পড়াশোনা করতেন ?”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” দুটো উত্তর জানার জন্য এমন বললে তাইনা ! আই লাইক ইট ৷”
নূর জবাব দিলো না , আয়াশের উত্তরের অপেক্ষায় রইলো ৷
” আমি তখন বাংলাদেশ ছিলাম ,তখন আমি সবে পড়াশোনা শেষ করেছি আর তোমার খুব কাছের একজনের থেকে তোমাকে চিনেছি 5 বছর আগে ৷ বাট বাট বাট তুমি কিন্তু একবার ও জিজ্ঞাসা করোনি যে সে কে তাই আশা করি উত্তর জানতে চাইবে না ৷”
আয়াশের উত্তর শুনে নূরের কৌতুহল বেড়ে গেল, কে সেই মানুষ যার মাধ্যমে আয়াশ নুরকে চিনেছে ৷
আয়াশ নূরের ঘোর ভাঙিয়ে বোতল ঘোরালো,
নুরের পালা এবার
” তোমাকে আমি ডেয়ার দিলাম ৷”
নূর আমতা আমতা করে বলল ” কি?”
আয়াশ নূরের দিকে ঝুকে গিয়ে নুরের কানে কানে বলল
” আজকে রাতটা আমার জন্য অনেক স্পেশাল তাই তোমার আমাকে নিজের কাছে টেনে নিতে হবে, তোমার ভালোবাসায় রাঙিয়ে দিতে হবে আমাকে ৷ এটাই তোমার ডেয়ার ৷”
নুর পিছু সরে গিয়ে বলল
” এটা আমি পারবো না অন্য কিছু বলুন ৷”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” ইউ হ্যাভ টু ডু ইট ৷”
নূরকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে বলল
“শুরূ করো ,এখনো অনেক সময় ধরে চলবে কজ রোমান্স ইজ আ লং প্রসেস ,বুঝলে ?
নূর আমতা আমতা করে বলল
” আমি এই সব লুচ্ছামি করতে পারি না, আমি আপনার মতো না ৷”
আয়াশ চোখ টিপ মেরে বলো
” এই সব লুচ্ছামি গুলো আমি করলে কই তখন তো বেশ,,,,,”
আরো কিছু বলতে যাবে নূর আয়াশের মুখ চেপে ধরলো
” দোহায় লাগে আর কিছু বলিয়েন না ৷”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” লজ্জা পাচ্ছো ? ওকে বলবো না বাট ডেয়ারটা কমপ্লিট করতে হবে ৷”
” প্লিজ একটু বুঝুন !”
আয়াশ নূরের কথা উপেক্ষা করে বলল
” নাও কিস মি ৷”
নূর চমকে বলল
” কিহহহ !”
#তুমিই আমার প্রিয় নেশা
#পর্ব:23
#Suraiya_Aayat
” হোয়াট ফোয়াট না , যা বললাম তাই করো এর আগেও একবার পানিশমেন্ট হিসাবে বলেছিলাম বাট তুমি পূরন করোনি, হোয়াটএভার নাও ইটস ইউর ডেয়ার এন্ড ইউ হ্যাভ টু কমপ্লিট ইট ৷”
নূর বিছানা ঘেষড়ে খানিকটা পিছনে সরে গিয়ে বলল ” আপনি পুরুষটা ভারি নিলজ্জ আর বেহায়া একজন যার লজ্জার কোন ধারপার নেয় তাই বলে সবাইকে নিজের মতো করে ভাবেন কেন? আমি পারবো না এতসব ৷”
আয়াশ নূরের দিকে বেশ কিছুখন চুপচাপ রইলো তারপর কিছু একটা ভেবে সরে এলো ৷ শার্টের ওপরের দিকের বোতামটা লাগিয়ে নূরের দিকে ইশারা করে বলল
” তোমার না ঘুম পেয়েছে ! ঘুমিয়ে পড়ো ৷”
কথাটা বলে আয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ আয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই নূর একপ্রকার কেঁপে উঠলো , মনে মনে ভাবতে লাগলো
” আমি কি খুব বেশি কিছু বলে ফেললাম ! না মানে আমার কি কথাগুলো এভাবে না বললেও চলতো ? উনি এতো সহজে আমার কথা মেনে
নিলেন ?”
কথাগুলো ভাবছে নূর,আয়াশের হঠাৎ এমন ব্যাবহার ওর কাছে ভালো ঠেকলো না ৷ চুপটি করে বসে রইলো ৷ নূরের ভাবনার মাঝে রুমের লাইট অফ হয়ে যেতেই নূর চমকে গিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াতেই কোমরে অসহ্য ব্যাথা শুরু হয়ে গেল ৷ খানিকটা ফুপিয়ে উঠতেই পুনরায় বিছানায় বসে পড়লো, অন্ধকার বিদঘুটে ঘরে ও একা, আয়াশ ওকে কোথায় রেখে চলে গেল ভাবলেই কান্না পাচ্ছে ভীষন ৷ নূর ওর কোমরে শক্ত করে চেপে ধরতেই চাঁপা স্বরে কেঁদে উঠলো ৷
হঠাৎ কোথা থেকে আয়াশ মোমবাতি এনে টেবিলের ওপর রেখে নুরের কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে বলল
” এইইই আফুসোনা কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন? কোমরে আবার ব্যাথা পেয়েছো?”
নূর ওর হাতটা কোমরে আরো শক্ত করে চেপে ধরে রইলো, আয়াশ নূরকে শুইয়ে দিয়ে কোথাও যেন আবার উধাও হয়ে গেল ৷ নূরের চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে, অন্ধকারে তা বোঝার অবস্থা নেই ৷ হঠাৎ কোমরে ঠান্ডা স্প্রে জাতীয় কিছু অনুভব করায় নূর সহ্য করতে না পেরে কোমরে হাত রাখতেই আয়াশ দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো
” হাত সরাও আফু সোনা ৷”
নূর ধমকে হাত সরিয়ে নিলো, আয়াশ স্প্রেটা দিয়ে নূরের পাশে বসতে গেলেই হঠাৎ কারেন্ট চলে এলো ৷ নূর আয়াশের দিকে কোনরকম ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো, আয়াশের চোখজোড়া ভেজা ভেজা ৷ নূর অবাক হলো বেশ তবুও চুপটি করে রইলো ৷ নূর পাশ ফিরে শুয়ে আছে আয়াশের দিকে উল্টো মুখ করে , আয়াশ ওর হাত থেকে স্প্রের বোতলটা দূরে ছুড়ে ফেলে গম্ভীর মুখে বলল
” বলেছিলাম তো কোথাও যবে না তার পর ও গেছো ৷ তোমার হেল্থের কথা মাথায় আসতেই আমি দূরে সরে এলাম আর তুমি আমার কথা শুনলেনা, এমন করলে আফু সোনা পরের বার থেকে খুব খারাপ হবে বলেদিলাম, আজকের দিনে অন্তত আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা , এন্ড ইউ নো হোয়াই ৷”
নূর ওর চোখের জলটা মুছে ওর বাম হাতের ওপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো, ও তো আয়াশকে অন্ধকারের মাঝে খুজতেই যাচ্ছিল সেটা আয়াশকে ও আর বোঝাতে চাইনা ৷ আয়াশ নূর পাশে শুয়ে নূরকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে নূরের ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলল
” ডোন্ট লাভ মি, তুমি আমাকে ঘৃনা করো শুধু, ভালোবাসা নামক জিনিসটা সবার জন্য হলেও তা আমার জন্য বরাদ্দ না ৷ আর যদি কখনো দেখো যে আমি হারিয়ে গেছি তো কখনো আমাকে খোঁজার চেষ্টা করবে না, এটা ভাববে যে তোমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো শক্রু তোমার জীবন থেকে চলে গেছে কজ আই এম ইউর ডেভিল হাজবেন্ড ৷”
কথাটা বলে আয়াশ চোখ বন্ধ করে রইলো ,আয়াশের কথা শুনে নূর ওর শাড়ির আচল শক্ত করে চেপে ধরলো ৷ মানুষটা হঠাৎ এই সব কথা বলছে কেন ?কই উনি তো আগে কখনো এমন কথা বলেন নি তাহলে ?
নূরের মনটা উশখুশ করছে আয়শকে জিজ্ঞাসা করার জন্য হঠাৎ আয়াশ এমন কথা বলছে কেন ৷ মনের চঞ্চলতা বাড়িয়ে 2 মিনিট পর নূর একটু নড়েচড়ে উঠলো , সামান্য পাশ ফিরে আয়াশের দিকে ঘোরার চেষ্টা করতেই কোমরে ব্যাথা পেল তবুও ঠোঁট চেপে ব্যাথাটা সহ্য করে নিলো ৷ আয়াশ ওর শরীরের সাথে লেপ্টে আছে , নূর কিছুখন নিষ্পলক ভাবে ওর দিকে তাকালো , মানুষটা অভিমান থেকে এই কথাগুলো বলেছে কি তা নূরকে ভীষন ভাবে ভাবাচ্ছে ৷ মনে পড়ে গেল আয়াশের বলা কথাটা
” আমাকে তোমার নিজের মতো করে ভালোবাসতে হবে যেমনটা আমি সবসময় বাসি ৷”
নূর কথাটা ভেবে চোখমুখ খিচে নিলো, এটা একটা মেয়ের পক্ষে খুবই কঠিন একটা কাজ তা আয়াশ কেন বোঝেনা তা ভেবে নূর পাগলপ্রায় ৷
নূর চোখটা খুলে দেখলো আয়াশ ঘুমাচ্ছে , অনেকটা সাহস নিয়ে নিজের মুখটা আয়াশের মুখের কাছে নিয়ে গেল, কিছু পারুক আর না পারুক আয়াশের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ানোটা তো ওর সাধ্যের মধ্যে ৷ তাছাড়া আয়াশ তো এখন ঘুমাচ্ছে তাই লজ্জাটাও কম লাগবে ভেবে কাছে এগোতেই নূর লজ্জা পেয়ে সরে এলো ৷ নুর বুঝতে পারছে না একটু একটু করে নিজের মনের মধ্যে যে সাহসটুকু সঞ্চয় করছে তা নিমেষেই কিভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ৷ বড়ো বড়ো কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আয়াশের ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে গিয়ে দ্রুত আয়াশের ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে বিদ্যুৎগতিতে সরে এলো ৷ হৃদস্পন্দন বাড়ছে , মনের মাঝের আবহাওয়াটা মাতাল করা আর নেশা ধরানো ৷ আয়াশের ঠোঁটের স্পর্শ শরীরে শিহরন জাগানো ৷ খানিকখন চোখ বন্ধ রেখে বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলতেই হঠাৎ আয়াশের কন্ঠস্বর শুনে নূর চমকে উঠলো
” চিনি ছাড়া চা যেমন হয় যেখানে মিষ্টতা কম তিক্ততা বেশি তেমন চুমু আমি চাইনি আফু সোনা, ইমরান হাসমি ওয়ালা চেয়েছি ৷ ”
নূর জেনে আর শুনে অবাক , একটা মানুষ এতোটা সেনসিটিভ বিষয়কে কতোটা সহজ বাক্যে বলে দিতে পারে তা আয়াশকে না দেখলে নূর বুঝতেই পারতো না ৷ তাছাড়া আয়াশ যে জেগে আছে তা জানলে নূর কখনোই এমন কাজ করতো না ভুলেও , ওর নিজের বোঝা উচিত ছিলো যে আয়াশের অন্তত 2 মিনিটের মধ্যে ঘুম আসবে না সে আদতেই একজন লুচু প্রকৃতির ৷ কথাটা ভেবে নিজেকেই অধম, গাধা থেকে শুরু করে কোন কিছুই বাদ রাখছে না শোনাতে ৷
আয়াশ নূরের মুখে এমন ভীরুতার ছাপ দেখে বলল
” কি অবাক হলে ? ভেবেছিলে আমি ঘুমিয়ে গেছি? আরে আফু সোনা নাহ, আমি তো কল্পনা করছিলাম যে তোমার আর আমার 8 কি 10 টা বেবি থাকলে কেমন হতো, জোশ ব্যাপার স্য৷পার হতো তাহলে ৷ কিন্তু তুমি তো ভাবলে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি ৷ চমৎকার , তুমি তো জানো আমার স্বপ্ন গুলো বড়ো বড়ো তাই ভাবতে গিয়ে আর ঘুম আসে না সহজে ৷”
নূর একেই একটা ঝটকা কাটিয়ে উঠতে পারছে না তার ওপর আয়াশের 10 টা বেবি নেওয়ার পরিকল্পনা ওর মস্তিষ্ক কে বিক্রিতি ঘটানোর জন্য যথেষ্ট ৷ কোনরকম ঝোঁক সামলে বলল
” যা দিয়েছি তাতেই খুশি থাকুন আমি এর বেশি আর কিছু পারবো না ৷”
আয়াশ নূরের হাত ধরে কাছে টেনে এনে বলল
” বললেই হলো ! নেশা দিয়েই নেশা কাটাতে হয়, হালকা নেশা ধরেছে তা তীব্র নেশা দিয়েই কাটবে ৷ আর পারবেই না যখন তখন করতে গেলে কেন?আমি কিছু শুনবো না আর ৷”
নূর কাঁপা কন্ঠে বলল
” আমি পারবো না,আমার ঘুম পাচ্ছে ৷”
কথাটা শেষ হতেই আয়াশ নূরকে আরো কাছে টেনে বলল
” সমস্যা নাই , তুমি না পারলে কি হবে আমি তো পারি !”
কথাটা বলে নূরের ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালো, নূর আয়াশের গলার বেশ কয়েক জায়গায় নখের আঁচড় বসালো ৷ আর যাই হোক আয়াশ পরিস্থিতি বোঝে তাই এতোকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে নূরকে কাছে আসতে বাধ্য করলো, মাঝে মাঝে পরিকল্পনা মাফিক কিছু পেলে নিজেকে বিজয়ী মনে হয় সে ভালো হোক বা খারাপ ৷
#চলবে,,,,