তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২৪+২৫

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:24+25
#Suraiya_Aayat

” তুমি কি আমার সাথে ফিরবে নাকি নিজের বাসায় ফিরে যাবে কোনটা ?”

গাড়ির দরজার লক খুলতে খুলতে প্রশ্ন করে উঠলো আয়াশ ৷ নূর অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
” স্টুপিডের মতো প্রশ্নের কোন উত্তর হয় বলে আমার মনে হয়না ৷ ”
কথাটা বলে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো নূর, যদিও আয়াশ কখনোই নূরকে এ প্রশ্নটা করতো না, তবে নূরকে বিরক্ত করতে ওর বেশ লাগে আর সকাল সকাল নূরের বিরক্তিতে ঠাসা মুখটা দেখতে কেমন হবে সেটা দেখার জন্যই আয়াশ প্রশ্নটা করেছে ৷

আয়াশ গাড়ির দরজাটার লক খুলে নূরের পাশে গিয়ে দাঁড়াল ৷ নূরকে আরো রাগানোর জন্য বলল
” নিজের বাসায় যেতে চাও সেটা বললেই তো হয় এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা না বলে ৷”

নূর আগের থেকে বেশি বিরক্ত নিয়ে আয়াশকে বলল
” আমি নিজের বাসাতেই যাবো তাতেও আপনার সমস্যা নাকি আপনি চাননা আমি বসাতে যাই কোনটা ?”

” আমি তোমার বাবার বাসার কথা বলছি ৷ তুমি তো আবার আমার সাথে সুখী নও ৷”

” আমি নিজে যেতে চাইনি, আমি আপনাকে বারন করেছিলাম যে আমি সেখানে যাবো না যদিও আপনি জোর করে আমাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছিলেন ৷ তাই আশা করি আপনার বোঝার অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ৷ আর বাই দা ওয়ে একটা কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন যে বিয়ের পর মেয়েদের শ্বশুর বাড়ি তার কাছে সবচেয়ে বেশি আপন হয়ে যাই তেমনি আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে, তাই সেটা যেমন আপনার বাসা তেমনি আমারো বাসা ৷ বুঝেছেন?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” একটা বসার প্রতি তোমার এতো ভালোবাসা ! ভালোবাসা গুলো যদি কখনো আমার নামে,,,,,”
কথাটা বলে আয়াশ থেমে গেল তারপর হঠাৎ কি একটা ভেবে বলল
” আমি তো তোমাকে জোর করে তুলে আনলাম মাঝ রাতে ,তাই যেখানকার আর যাদের আমানত তাদের কাছেই ফিরিয়ে দিয়ে আসা ভালো তারপর তাদের যেদিন ইচ্ছা হয় সেদিন না হয় ফিরে এসো কেমন !”

নূর রেগে গিয়ে তীব্র ঝাঝ নিয়ে নিজেই নিজেকে বলল
” যাওয়ার রাস্তাটা যেন কোনদিকে ? এদিকেই মনে হয়,এই দিক দিয়েই তো এসেছিলাম৷”
কথাটা বলে ধীরে ধীরে দু পা বাড়াতেই আয়াশ হাতটা ধরে নিলো তারপর একটু জোরেই বলল
” ওদিকে যেওনা আফুসোনা, ওদিকে জঙ্গল আছে আর সেখানে অনেক পশু আছে আর তোমার বিপরীতে ডেভিল আছে, পশুরা শিকার পেলে তাকে ছাড়েনা আর তুমি সেই ডেভিলের হাতে ধরা দিলেও সে তোমাকে মারবে বকবে আদর করবে আর ভালোও বাসবে তাই এই ডেভিলটাই তোমার জন্য বেস্ট অপশনের থেকেও বেশি কিছু ৷”
কথাটা শুনে নূরের কাছে গিয়ে নূরের দু হাত ধরে বলল
” একবার বলেছিলাম না আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করবেনা ৷ তুমি যতো পালাবে আমি তত কাছে এগিয়ে যাবো ৷”

নূর হাতটা ছাড়াতে গেলেই আয়াশ বলল
” বেশি ছটফট না করে এটা বলো যে আত্মনীর্ভরশীল হবে না কি পরনীর্ভরশীল হবে কোনটা?”

নূর ভ্রু কোঁচকালো যার অর্থ আয়াশের কথার আগা মাথা ও কিছুই বোঝেনি ৷”

আয়াশ নুরের চেহারার ভাব গতি দেখে নূরের দিকে ঝুকে বলল
” আমি বলতে চাইছি যে আমার পায়ে পা দিয়ে হেটে যাবে নাকি আমি কোলে তুলে নেবো কোনটা !”

নূর আয়াশের এমন কথা শুনে বলল
” আপনি মেয়েদের মতো কথা এতো পেঁচিয়ে বলেন কেন বলুন তো সহজ ভাবে বললেই হয় ৷”

নূরের কথা শেষ আর আয়াশের কোলে তুলে নেওয়াও সারা ৷ নূর অবাক হয়নি, এই কদিনে আয়াশের এই সমস্ত অভ্যাসের সাথে খুব ভালো রকম পরিচিত হয়ে গেছে নূর তাই আয়াশের হুঠহাঠ কোলে নেওয়াটাও যেন একপ্রকার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে ‌৷ আয়াশের কোলে উঠে আপাতত যাতে পড়ে না যাই তাই আয়াশের গলাটা শক্ত করে ধরলো , নয়তো ওর বেখেয়ালিপনায় নিজেরই আবার কোমর ভাঙবে ৷
আয়াশ নূরকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দিলো তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো ৷ আয়াশ গাড়ি স্টার্ট দিতেই নূর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
” লক করলেন যে আমি কি পালিয়ে যেতাম নাকি ?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” তোমার শতীন যদি আবার গাড়িতে ঢুকে পড়ে সেই জন্যই আরকি ৷”

নূর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো, আয়াশের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো বাইরের দিকে ৷ সকাল 6.30টা মতো বাজে আর ওরা সকাল সকাল ই বেরিয়েছে ৷ বাইরের প্রকৃতিটাকে কতোটা সুন্দর দেখাচ্ছে ৷ এটা ওদের ফার্ম হাউজ মানে আয়াশের কথায় যেটাকে ডেভিল ভিলা বলে সেটা ছিলো না, এটা একটা অন্য বাড়ি যেটা আয়াশ বুক করে ডেকোরেট করিয়েছে , পাশেই একটা বিরাট বড়ো ফরেস্ট আছে, রাতে যখন ওরা ঘুমাতে যাচ্ছিলো তখন নূর অনেক বন্য পশুর আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলো তাই কটেজটার আশেপাশের এলাকাটা ঘুরে না দেখলেও তা কেমন হবে সেটুকুর আন্দাজ নূর করে ফেলেছে ৷ ঘুম ঘুম ও পাচ্ছে খুব এতো সকালে ঘুম থেকে উঠেছে তাই সিটে মাথা এলিয়ে দিতেই কিছুখনের মধ্যেই ঘুম ধরে এলো চোখে ৷ নূর ঘুমিয়ে রয়েছে আর আয়াশ ড্রাইভ করছে মাঝে মাঝে আবার নুরের দিকে তাকাচ্ছে ৷

____

” বাবা আপনার ছেলেকে এবার অন্তত বলুন যেন বিয়েটা করে ফেলে এভাবে আর কতোদিন ? তাছাড়া আমার নিজের ও একটা সম্মান বলে কিছু আছে ৷ সবাই জানে আমাদের বিয়ে হবে কিন্তু বিয়েটা যেন হয়েও হচ্ছে না , এখন তো আত্মীয় স্বজনরাও ফোন করে খোঁচা দিয়ে বলে কি রে বিয়ে করছিস না যে কোন সমস্যা ? তখন আমার যে ঠিক কি পরিমান লজ্জিত হতে হয় তা কেবল আমিই জানি ৷ তাছাড়া আমার বাবা নেই , আম্মুর সাথে আমাকে থাকতে হয় সে সবসময় আমাকে নিয়ে চিন্তা করে কখন কোন বিপদ আপদ হয় ৷ সে ই বা আভাবে এতো টেনশনে দিন পার করবে কিভাবে বলতে পারেন?”
বেশ গলা উচিয়ে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে ফেলল মায়া ৷ ডান হাতটা ভেঙে গেছে তাই বাম হাত নাড়িয়ে কথা বলছে ও ৷ আরাফাত সাহেব বেশ উৎকন্ঠা নিয়ে বললেন
” আরে মায়া রেগে যাচ্ছো কেন এতো ! তাছাড়া রেদোয়ান তোমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার তো আর করেনি ৷ সে তো তোমাকে ভালোবাসে আর তোমাকেই বিয়ে করবে ৷ তাছাড়া তুমিও এখন অসুস্থ আর নূরের ও শরীর ভালো নেই ৷ তাই হয়তো রেদোয়ান দেরি করছে নাহলে নূরের বিয়ের পরপর ই তো তোমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো তা তো তুমি জানো তাইনা !”

রেদোয়ান সোফাতে গালে হাত রেখে বসে আছে , মায়ার আর ওর বাবার সব কথায় ওর কানে যাচ্ছে তবুও কিছু বলছে না হয়তো ওদের বিয়ের থেকে আরো গভীর ভাবনা চিন্ত রেদোয়ানের মাথায় খেলছে ৷ মায়া খানিকটা রাগী চোখে রেদোয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
” বিয়ের সাথে নূরের অঃসুস্থতার কি সম্পর্ক আমি বুঝলাম না ৷ সে তো আছে দিব্বি তার জামাইয়ের সাথে , তার তো কোন অসুবিধা হচ্ছে না তাহলে তার জন্য আমাদের বিয়েটা কেন পিছিয়ে থাকবে ?”

মায়ার কথা শুনে আরাফার সাহেব বলে উঠলেন
” আহা আবার রেগে যাচ্ছো ! শুধু কি নূর অসুস্থ ? তুমিও তো অসুস্থ , ডাক্টর তো বলেছে 2 মাসের আগে এই হাত ঠিক হওয়ার নয় তাছাড়া তোমার এই হাত ঠিক হতে এখনো দেড় মাস মতো সময় লাগবে তার আগে তুমি বিয়ে করবে কিভাবে সেটা ভেবে দেখেছো ? রেদোয়ান যথেষ্ট বিচক্ষন তার প্রতি ভরসাটা রাখতে শেখো মায়া ৷”

মায়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” চিরকালই আপনাদের নূরের প্রতি ভালোবাসাটা বরাবরই বেশি ৷ না জানি আমাকে কেন আলাদা চোখে দেখেন আপনারা … সব কাজেই নূরকে টানেন ৷”

কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই রেদোয়ান সোফা থেকে উঠে মায়ার হাতটা ধরে টেনে গালে সপাটে একটা চড় মারলো , এতো জোরে আওয়াজ হলো যে আরাফাত সাহেব চমকে উঠলেন ৷ মায়ার গালে রেদোয়ানের হাতের ছাপ পড়ে গেছে ৷ ও রেদোয়ানের দিকে থমথমে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর আরাফাত সাহেব হা হয়ে গেছেন আচমকায় এমন ঘটনাতে ৷ উনি এবার রেদোয়ানকে ধমকে বললেন
” তুই কি মানুষ যে মেয়েটাকে এভাবে মারলি ? এটা একজন মানুষের ব্যাবহার ৷”

রেদোয়ান ওনার থেকেও বেশি জোরালো কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল
” একদম চুপ , আর একটাও কথা না ৷ ওর হয়ে একদম কথা বলতে আসবে না , কিছু না বলে বলে মাথায় চেপে বসেছে একেবারে , সকলের মাথা খাওয়াটা যেন ওর অভ্যাসে পরিনত হয়েছে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তার হিতাহিত জ্ঞান টুকু ওর মাঝে নেই ৷ ”

মায়ার চোখ দিয়ে জল পড়ছে , থমথমে মুখে রেদোয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
” তুমি আমাকে মারলে রেদোয়ান তাও নূরের জন্য ?”

কথাটা শোনা মাত্রই রেদোয়ান আর এক গালে সপাটে চড় মারলো,আরাফাত সাহেব এবার যেন কেঁপে উঠলেন ৷ উনি স‌হ্য করতে না পেরে রেদোয়ানের দিকে হাত ওঠালেন চড় মারবেন বলে কিন্তু কিছু ভেবে হাত নামিয়ে নিলেন, চোখের চশমার আড়ালে লুকনো জলটা মুছে উনি সেখান থেকে চলে গেলেন ৷

মায়া মাথা নীচু করে আছে , আর চোখ থেকে অনবরণ জল পড়ছে ৷ রেদোয়ান এবার মায়ার হাত ধরে টানতে টানতে দরজার বাইরে বার করে দিয়ে বলল
” যেদিন নিজের মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে সেদিন এই বাড়ির বউ হওয়ার দাবী নিয়ে আসবে তার আগে নয় ৷”

কথাটা বলে রেদোয়ান দরজা বন্ধ করতে গেলেই মায়া কাঁদতে কাঁদতে বললো
” আমার অপরাধটা কি সেটা কি আমি অন্তত জানতে পারি ?”

রেদোয়ান একটা তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বলল
” অপরাধ ! কোন অপরাধের কথা বলছো তুমি ? কোনটা শুনতে চাইছো আসলে ? তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য নিজের বোনের কাছে মুখ দেখানোর ও যোগ্য না আমি, তোমার কথায় নেচে তার সংসার ভাঙতে উদ্যত হয়েছিলাম আমি আর তুমি বলছো কোন অপরাধ ? তুমি যে নূরকে হিংসা করো তা আমার বুঝতে বাকি নেই , তবে নূর তা কখনো ওর ব্যাবহারে বুঝতে দেইনি যে তুমি ঠিক কি প্রকার মনসিক অত্যাচার করো ওর ওপর তা হয়তো নূরের ডায়েরি না পড়লে আমি কখনো জানতেও পারতাম না ৷ তুমি মানুষ? একটা মানুষের মনে এতো হিংসা আসে কোথা থেকে ? তাছাড়া ও তো তোমার ছোট বোনের মতো তার ওপর তুমি হিংসা করো ! ছিহহ ! আর তুমি একটু আগেই না বলছিলে যে আমরা নুরকে বেশি ভলোবাসি কেন কারন নূর আমার বোন আর এই বাড়ির মেয়ে ৷ একটা পরের বাড়ির মেয়ে হয়েও আমি আমার বোন আর আমার বাবা তোমাকে যে পরিমান ভলোবেসেছি আর কোন পরিবারে গেলে তুমি সেই পরিমন ভালোবাসা পাবে কি তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে ৷ আর তাছাড়া তুমি নূরের সাথে নিজের তুলনা করছো? কোন অধিকারটা আমার বাবা তোমাকে দেয়নি বলতে পারো ? এমনিকি তার নিজের মেয়ের বিয়ের মতো এতো বড়ো সিদ্ধান্তটাও সে তোমার কথা শুনে নিয়েছে আর তুমি অধিকারের কথা বলো ! আমার তো ভাবলেও ঘৃনা হয় যে আমি তোমার মতো একটা কুৎসিত মনের মানুষকে ভালোবেসেছি আর তাকে আমার সারা জীবনের সঙ্গী করার কথা ভেবেছি ৷ যাই হোক কখনো যদি নিজের ভুলটা বুঝতে পারো তাহলে ফিরে এসো আর দয়া করে তোমার এই কুৎসিত মন নিয়ে ভলোবাসি কথাটা আমাকে অন্তত আর বলতে এসো না ৷ সুন্দর মনের অধীকারী হতে শেখো নুরের মতো ৷ তোমার এতেও যদি মনে হয় এখানেও আমি নূরকে প্রাধান্য দিচ্ছি তো তাই , কারন ওর মনটা তোমার মতো আবর্জনায় দূষিত নয় , যথেষ্ট স্বচ্ছ মনের অধিকারী সে ৷”
ছলছল চোখে শেষের কথাগুলো বলল রেদোয়ান , মায়ার চোখ দিয়েও জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ রেদোয়ান মাথাটা নীচু করে বেশ শব্দ করেই মায়ার মুখের ওপর দরজাটা বন্ধ করে দিলো ৷
বেশ কিছু বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো মায়া , তবে কি ওর যাত্রাটা এই অবধিই সমাপ্ত !

____

” ইফা তোমাকে একটা কথা বলবো রাখবে আমার কথাটা ?”

ইফা বেশ উৎকন্ঠার সাথে বলল
” আরে ভাবী তুমি শুধু একবার বলেই দেখো না তারপর বাকিটুকু আমার ওপর ছেড়ে দাও ৷”

নূর একটু গলা ছেড়ে ভারী মনে বলল
” আগে বলো তুমি কিছু মনে করবে না ?”

ইফা এবার রাগী চোখে তাকিয়ে বলল
” ভাবী এবার কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি আমি, তোমাকে বলছি বলতে আর তুমি বলছোনা ৷ তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে , আমি গোসলে যাবো ৷”

নূর কাচুমাচু মুখ করে একনাগাড়ে বলল
” তোমার ফোনটা একটু দেবে ? না মানে আমি একটু ভাইয়ার কাছে কল করবো তাই আরকি ৷ ভাইয়াকে বলা হয়নি যে পৌছে গেছি ৷”

ইফা কিছুখন নূরের মুখের দিকে তাকালো , এটুকু কথা বলতেই নূরের মুখে কতো অপরাধ বোধ কাজ করছে তা দেখে ইফা অবাক হলো আর কিছুখন নূরের দিকে ফ্যালফ্য৷ল করে চেয়ে রইলো , ইফা কিছু বলছে না দেখে নূর ইফার দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে বলল
” কি দেবে না ? তোমার সমস্যা থাকলে দিও না ৷”

ইফা কপাল চাপড়ে বলল
” ওরে আমার ভাবী রে , এটুকু বলতে গিয়ে এতো হেজিটেশন , বাপ রে বাপ ৷ এই নাও কথা বলো , বাট ভাবী একটা কথা বলি ?”

নূর ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বার ডায়াল করতে করতে বলল
” তোমার হাতে পরশু একটা নতুন ফোন দেখলাম ওটা কি হারিয়ে ফেলেছো ? ওটা কই ?”

নূর শুকনো ঢোক গিলে বললো
” ওটা না আমি ভেঙে ফেলেছি ৷”

ইফা অবাক হয়ে বলল
” কিন্তু কেন?”

” তোমার ভাইয়ার ওপর রাগ করে ‌৷”

” ওটা অনেক দামী সেট ছিলো , আর তুমি রেগে ভেঙে ফেললে ? ভাইয়া বকেছে নাকি?”

নূর চোখ মুখ খিচে বলল
” নাহ সে জানে তবে এই বিষয়ে কিছু বলেনি আমাকে এখনো তবে আমার মনে হয় উনি আমাকে আর কিনে দেবেন না ৷”

ইফা মথায় হাত রেখে বলল
” যাই হো, যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন কথা বলো তোমার ভাইয়ার সাথে ৷”

নূর শুকনো হাসি হেসে বলল
” থ্যাঙ্ক ইউ ইফা, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ ৷”

ইফা নূরের গাল টেনে বলল
“হয়েছে হয়েছে এখন কথা বলো আমি বাইরে অপেক্ষা করছি ৷”
কথাটা বলে ইফা বেরিয়ে গেল ৷ নুর ফোন করলো, ফোন সুইচ অফ তাই আর একবার চেষ্টা করলো , এখনো তাই ,নূর আর চেষ্টা করলো না, ইফাকে ডাকলো ফোন নেওয়ার জন্য ৷ ইফা এসে বললো
” কি হলো কথা বললে না যে !”

নূর মন খারাপ করে বলল
” না আসলে ভাইয়ার ফোন অফ আছে তাই ৷ তুমি নিয়ে যাও ফোন , আমার এখন দরকার নেই ‌৷
ইফা ফোনটা হাতে নিয়ে বলল
” ভাবী আমি গোসল করে পরে আসছি ওকে ৷”

নূর মুচকি হেসে বলল
” আচ্ছা ৷”

ইফা চলে যেতেই নূর বিছানা থেকে নামতে গেলেই আয়াশ রুমে ঢুকলো ৷নূরকে উঠতে দেখে বললো
” কোথায় যাচ্ছো ?”

” ওয়াশরুমে , কেন কিছু বলবেন?”

আয়াশ নূরের দিকে একটা কিউট স্মাইল(☺) দিলো যা দেখে নূর অবাক হলো তবুও ভাবসাব বোঝার চেষ্টা চালাতে লাগলো, আয়াশ তো এভাবে হাসে না তাহলে !

” তোমার জন্য একটা গিফট আছে আফু সোনা ৷”

নূর বাকা চোখে তাকিয়ে বলল
” কি গিফট ৷”

” তোমার জন্য একটা নতুন মোবাইল কিনে এনেছি ৷”

নূর অবাক হলো একপ্রকার তবুও উত্তেজনায় বলে ফেলল
” সত্যি !”

আয়াশ বলল
” হমম, ওয়েট ৷”

কথাটা বলে হাতে থাকা ব্যাগ থেকে ফোনের একটা বাক্স বার করলো, নূর অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে, আয়াশ বাক্স খুলে একটা নোকেয়ার কি প্যাড ফোন নূরের হাতে ধরিয়ে বলল
” এই নাও আফু সোনা তোমার জন্য গিফট, তোমার নতুন ফোন ৷”
নূর অবাক হলো তারপর একপ্রকার অবাক হয়ে বলল
“এটা কি ফোন ! আর এই ফোন কেউ চালায় নাকি এখনকার যুগে ?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” আরে অনেক ভালো, এতে সাপ খেলা আছে, সারাদিন ওই গেমটা খেলবে দেখবা ভালো লাগবে, আর চার্জ ও থাকে অনেকখন ৷ ”

নূর ফোনটার দিকে চেয়ে রইলো ৷ আয়াশ নূরের দিকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” এটা যদি ভেঙেছে তো তোমার খবর আছে ৷”

কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে গেল ৷
আয়াশ চলে যেতেই নূর রেগে গিয়ে হাত থেকে ফোনটা আবার ছুড়ে মারলো, তারপর মনে হলো যে এটা ভাঙলে আয়াশ ওকে শেষ করে ফেলবে একদম ৷ নূরের কলিজা কেঁপে উঠলো ভাবতেই, তাহলে এটাও কি গেলো ? ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো ৷ হঠাৎ আয়াশের কন্ঠ ভেসে এলো ওয়াশরুম থেকে
” আফু সোনা তোমার অবস্থা খারাপের জন্য রেডি?”

নূর ভয়ে চোখ খুলে ফোনটার দিকে দেখলো, নাহ যেমন ফোন তেমনই আছে দেখে নূর যেন মরুভুমিতে জল খুঁজে পেল, তাড়াতাড়ি করে ফোনটা তুলে বোকার মতো হাসতে হাসতে বলল
” আরে কি যে বলেন না, আপনি দিয়েছেন আর আমি সেই গিফট অবহেলা করতে পারি ! কখনোই না !যতই হোক আপনি আমার….”
কথাটা বলে থেমে গেল,অতঃপর আয়াশ বলে উঠলো
” আমি তোমার কি আফু সোনা ?”

নূর দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” ডেভিল👿৷”

#চলবে,,

2232 শব্দের , এতো বড়ো করে লিখতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল ৷ ভালো মন্তব্য করবেন ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here