#তুমিই আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:26
#Suraiya_Aayat
আয়াশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো নূর রূমে নেই, ফোনটা বিছানার ওপর রেখে কোথায় যেন চলে গেছে ৷ আয়াশ টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আয়ানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ,তখনই নূর রুমে আসলো খোড়াতে খোড়াতে ৷
আয়াশ আয়ানায় নূরকে ইশারারে বলল
” এই অবস্থায় কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”
নূর বিছানায় বসে অবাক হয়ে বলল
” এই অবস্থায় মানে ? আমার আবার কি হবে !”
আয়াশ মজা করে বলল
” না মানে প্রেগনেন্ট তো তুমি আর না তাই আমি সেই হিসাবে বলিনি বাট তুমি তো দেখি সেই হিসাবে কথাটাকে নিয়েছো ৷”
নূর লজ্জা পেয়ে গেল তারপর আয়াশকে লুকিয়ে এক ফালি হাসি দিয়ে নিজেকে সংযত করে বলল
” ইফার ঘরে গিয়েছিলাম ৷”
আয়াশ একটা বডি স্প্রে দিয়ে বিছানার ওপর রাখা হোয়াইট কালারের শার্ট পরে নিয়ে হাতে ঘড়িটা পরলো তারপর ড্রয়ার থেকে লেন্স বার করলো একটা যেটা অনেকটা হালকা নীল রঙের ৷ নূর শুধু আয়াশের এমন কাজকর্ম দেখে যাচ্ছে, ও আসলেই বুঝতে পারে না এই লেন্সটার ঠিক প্রয়োজনীয়তা কোথায় , এমনিতেই আয়াশের হালকা বাদমী রঙের চোখটা যথেষ্ট ইমপ্রেসিভ একটা লুক দেয় সবসময় তরপরও আয়াশ লেন্স পরে, আয়াশ একজন সুদর্শন পুরুষ আর লেন্স পরলে তাকে আরো বেশি সুদর্শন লাগে তাই জন্যই কি আয়াশ লেন্স পরে? কথাটা নূর মনে মনে ভাবলো ৷ কথাটা ভাবতেই মনে পড়লো যে আয়াশ তো বিবাহিত তাহলে তার আবার অন্য কাউকে সৌন্দর্য দেখানোর কি প্রয়োজন ! তাহলে কি আয়াশের কোন অন্য মেয়ের সাথে চক্কর বক্কর চলছে নাকি ?
কথাটা ভাবতেই নূর এবার ঝাঁঝিয়ে বলল
” এই আপনি লেন্স পরছেন কেন হ্যাঁ?”
কথাটা শুনে আয়াশ একটু চমকে গেল কারন নূরের কন্ঠের জোরটা এটু বেশিই ছিলো ৷ আয়াশ নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” কি হয়েছে আফু সোনা এভাবে চেচাচ্ছো কেন?”
নূর ওর জিভ কামড়ে বলল
” সরি সরি , আসলে বলছিলাম কি ! বলছিলাম কি !”
কথাটা ওর মনে পড়ছে না যে আয়াশকে ও কি বলতে চাই ৷
তাই অনেক ভাবার চেষ্টা করে বলল
” কি যেন বলতে চাইছিলাম ৷”
আয়াশ ওর চুলটা না আচড়ে হালকা হাত দিয়ে ঝাকিয়ে নিলো ৷
নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” কি আমতা আমতা করছো ? কি বলেছিলে বলো !”
আয়াশের হালকা ধমকের সুরে বকুনি শুনে নূরের মনে পড়ে গেল তাই হঠাৎ জোরে বলল
” লেন্স পরেছেন কেন শুনি ? এমনিতে তো চোখগুলো ঠিকঠাক ই , না ব্যাকা আর না ট্যারা , তাহলে !”
আয়াশ নূরের কাছে এসে বলল
” তো কি হয়েছে আফু সোনা ! ”
নূর রেগে বলল
” নাহ আপনি পরবেন না ওটা পরলে আপনাকে মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগে , আর সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে খালি ৷😤”
একনাগাড়ে কথাটা বলে ফেলল, আয়াশ মুচকি হেসে নুরের কানের কাছে গিয়ে বলল
” তারপর !”
নূরের যেন রাগের ঘোরটা কাটলো, বুঝলো যে ও আসলে কি বলে ফেলেছে তারপর চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো৷”
আয়াশ এবার হো হো করে হেসে নূরকে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো, নূর ও গুটিগুটি হয়ে আয়াশের বুকের মাঝে এটা সুরক্ষিত স্থান তৈরি করে নিলো ৷”
আয়াশ নূরের মাথায় চুমু দিয়ে বলল
” সারাদিন বাসায় থাকবো না,নিজের খেয়াল রেখো, কোনরকম কোন অসুবিধা হলে ইফাকে বলো আমাকে ফোনে না ও পেতে পারো আমার ফোন বন্ধ থাকবে ৷”
কথাটা শুনে নূর ছিটকে আয়াশের থেকে সরে গেল তারপর অবাক হয়ে বলল
” কোথায় যাচ্ছেন আপনি ?”
আয়াশ নূরের দিকে চোখ মেরে বলল
” বউ খুঁজতে , যাবে?”
কথাটা বলতেই নূর কয়েক পা পিছু সরে গিয়ে বলল
” ডিভোর্স কবে দিবেন আমাকে ? দিয়ে দেন না ডিভোর্স আমিও মুক্তি পাই আর আপনিও ৷”
আয়াশ তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
” ভাবছি তোমাকে মেরে কেমিক্যাল মিশিয়ে শো পিচ করে আমার ঘরের মধ্যে রেখে দিবো , তুমি সবসময় আমার চোখের সামনেই থাকবে ৷ জোশ না প্ল্যানটা?”
কথাটা শুনে নূর চুপ করে গেল, ও জানে যে আয়াশ কখনো ওকে ছাড়বে না তবুও বলে মাঝে মাঝে কিছু একটা ভেবে , আর সেই কিছু একটা জিনিসটা কি তা নূর এখনো জানে না ৷ আয়াশ নূরের কোমর ধরে কাছে টেনে এনে বলল
” বাসায় কখন ফিরবো জানিনা,হয়তো নাও ফিরতে পারি , তাই চুপচাপ ভদ্র হয়ে থাকবে ৷ কথাটা বলে নূরের দৃষ্টির অগোচরে একটা ফোন হাতে দিলো তারপর বলল
” এটা তোমার ৷ ইচ্ছা হলে ভেঙো সমস্যা নাই, যতগুলো ভাঙবে ততগুলো কিনে দিবো ৷”
কথাটা শুনে নূর একটু লজ্জিত বোধ করলো , মাথা নীচু করে ফোনটা আয়াশের হাতে দিয়ে বলল
” নাহ আমি নেবো না, এটা আপনিই রাখুন ৷ ”
আয়াশ ধমক দিয়ে বলল
” বলেছি না তোমার জন্য, কথা কানে যায় না!আর ভাঙলে ভাঙবে , ভাঙলে আবার কিনে দিবো , আর এটুকু দম আমার নিজের আছে ৷”
কথাটা শুনে নূর আয়াশের মুখের দিকে তাকালো, কান দুটো রাগে লাল হয়ে আছে ৷ নূর ফোনটা নিয়ে বলল
” একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? সত্যি বলবেন?”
আয়াশ নূরের গালে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল
” আপনি কি করেন?”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” ভবঘুরে , লাইক হিমুর ৷”
নূর আয়াশকে ধাক্কা মেরে বলল
” এটাই বুঝি আপনার সত্য কথা ! কথা পেঁচাচ্ছেন কেন? সত্যি বলুন আপনি কি করেন ৷”
আয়াশ ঘড়ির দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিয়ে বলল
” ওষুধ তৈরি করি, যে ওষুধ খেলে মানুষ বাঁচে না ৷খাবে সেই ওষুধ?”
নূর রেগে গিয়ে আয়াশের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ওয়াশরুমমে চলে গেল,বারবার মনে সন্দেহ হচ্ছে আয়াশকে নিয়ে ,মানুষটার সমন্ধে যতোই ও জানার চেষ্টা করছে ততবারই মানুষটা ওর ভাবনাকে ঘোলা করে দিচ্ছে ৷ আয়াশ আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল ৷
❤
“তুই কি মেয়েটাকে মেরে ঠিক করেছিস? একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলে নিজেকে সুপুরুষ হিসাবে প্রমান করতে চেয়েছিস ? যদি তাই ভেবে রাখিস তাহলে জেনে রাখ কোন নারীকে আঘাত করে কেউ আজ অবধি সুপুরুষ হয়নি বরং কাপুরষ হয়েছে আর আজ তুই নিজেকে কাপুরুষ হিসাবে প্রমান করলি ৷ ছিহ! আমার তো ভাবলেই ঘৃনা হয় যে তুই আমার ছেলে ৷”
রেদোয়ান শুনছে চুপচাপ , কোন কথা বলছে না দেখে আরাফাত সাহেব আবার বলে উঠলেন
” চুপ করে আছিস কেন কিছু বল, নাকি বোবা হয়ে গেলি চিরতরে ?”
রেদোয়ান রেগে বলল
” আমার কিছু বলার ইচ্ছা নেই , আর প্লিজ তুমিও না জেনে আমাকে কাপুরুষের তকমা লাগিওনা, আমি যা করেছি ঠিক করেছি বলেই মনে করি ৷”
আরাফাত সাহেব চিৎকার করে বললেন
” রেদোয়ান ! অন্যায় করে সেটাকে বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলা একটা কাপুরুষের নির্দশন আর তুমি তা বারবার প্রমান করে চলেছো ৷তাই মুখ সামলে কথা বলো ৷”
রেদোয়ানের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল, ও রেগে গিয়ে বলল
” কই একবার ও তো তুমি জিজ্ঞাসা করলে না তো যে আমি এমন ব্যাবহার মায়ার সাথে কেন করেছি আর আমি একজন কাপুরুষ নয় যে একটা মেয়েকে এভাবে মারবো কোন কারন ছাড়াই ৷”
” কি এমন কারন আছে হ্যাঁ ! কি এমন কারন ?”
রেগে গিয়ে বললেন ৷
রেদোয়ান এবার সবকিছু ওর বাবকে বলতে শুধু করলো ৷ আরাফাত সাহেব শুনে ভীষনরকম অবাক হলেন, মায়াকে উনি নিজের মেয়ের চোখেই দেখতেন আর তার এমন কাজকর্মে উনি ভীষনরকম লজ্জিত বোধ করছেন ৷মাথা নীচু করে সোফাতে বসলেন,রেদোয়ান ও তার কথা শেষ করে বসে বলল
” আমি কারন ছাড়া কোন কাজ করিনা বাবা ! একবার হলে মানা যায় তাই বলে বারবার নূরকে হ্যারাস করাটা কি ঠিক !”
উনি একটু ফিকে কন্ঠে বললেন
” মেয়েটা তোমাকে ভালোবাসে রেদোয়ান আর ভালোবাসার মানুষের সব ভুল চাইলেই ক্ষমা করে দেওয়া যায় , তাই আমি বলি কি!”
ওনার কথা শেষ হতে না হতেই রেদোয়ান ওনাকে থামিয়ে বললেন
” তুমি আমকে আর কিছু বোঝাতে এসো না বাবা, আমি জানি আমার কি করা উচিত আর কি উচিত ৷মায়াকে আমি আগেও ভালোবাসতাম আর এখনো ভালোবাসি শুধু ওর করা এই কাজ গুলোকে আমি মেনে নিতে পারছি না, কষ্ট হচ্ছে ভীষনরকম ৷ কিসের অভাব ছিলো ওর যে ও এমন করলো তুমি বলতে পারো?”
উনি রেদোয়ানের কাঁধে হাত রেখে বললেন
” সেসব কথা বাদ দিয়ে সব ভুলে গিয়ে নতুন করে সবটা শুরু কর, মেয়েটাও তোকে বড্ড ভালোবাসে ৷ তোরা বিয়ে করবি কবে?”
রেদোয়ান মাথা নীচু করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
” জানিনা ৷”
” জানিনা মানে ! এটা আবার কেমন কথা ? তুই কি ওকে আর বিয়ে করবি না বলে ঠিক করেছিস?তোদের সম্পর্কটা এক দুই বছরের নয়, টানা ছয় বছরের এটা ভুলে যাস না ৷”
” আমি ওকে বিয়ে করবো না তেমনটা তো বলিনি , যেদিন ও নিজের ভুলটা কে বুঝতে পারবে সেদিনই ওকে বিয়ে করবো তার আগে নয় কারন আমি চাইনা আমাদের বিয়ের পর ও একইরকম থাকুক আর আমার বোনটাকে গোপনে ঈর্ষা করুক, তেমনটা হলে আমি সহ্য করবো না ৷”
কথাটা বলে রেদোয়ান সেখান থেকে উঠে চলে গেল ৷
আরাফাত সাহেব গালে হাত দিয়ে বসে রইলেন,রেদোয়ানের দিক থেকে রেদোয়ান ঠিক তবুও সবকিছুর মাঝে একটা কিন্তু নামক শব্দ থেকেই যায় ৷
❤
” আহান ভাইয়া কেমন আছো তুমি? তুমি তো দেখছি বিদেশ গিয়ে আমাদেরকে ভুলেই গোছো ৷”
অনেকটা উত্তেজিত কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠলো ইফা ৷
আহান বরাবরের মতোই মুচকি হেসে বলল
” ভুলবো কেন, কাওকেই ভুলিনি ৷”
” তা কি করছো ভাইয়া তুমি ?”
আহান শান্ত কন্ঠে বলল
” তেমন কিছুই না , একটু পড়াশোনা করছিলাম ৷ তুমি কি করছিলে?”
ইফা চোখ মুখ কুঁচকে বলল
” তুমি আমাকে তুমি করে বলছো কেন?তুই করে বলো, আমি না তোমার থেকে ছোট ৷”
ইফার এমন কথা শুনে আহান মুচকি হেসে বলল
” তুই বললে কি তুমি খুশি হবে ?”
ইফা একগাল হেসে বলল
” একদম ৷”
আহান ধীমে কন্ঠে বলল
” কিন্তু আমি যে এতো সহজে কাউকে তুই ডাকতে পারি না ,আয়াশকে ছাড়া কাউকেই আমি তুই বলে ডাকিনা ৷”
ইফা অবাক হয়ে বলল
“নিজের ফ্রেন্ডদের কেও না ?”
” নাহ !”
ইফা অবাক হলো , কিন্তু ওর এমন ভাবভঙ্গির রেশ কাটিয়ে আহান বলল
” তোমাকে যে কারনে ফোন করেছিলাম সেটাই তো বলা হলোনা, দেখেছো তোমার সাথে গল্প করতে গিয়ে বলায় হলো না ৷”
ইফা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” আরে ভাইয়া শোনো মাঝে মাঝে একটু কথা বললে তো আর কোন বিরাট ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে না তাইনা !”
” হমম তা ঠিক ৷ তবে তুমি আমাকে ভাইয়া বলছো কেন? নাম ধরে তো ডাকতে পারো ৷”
” বলো কি ! তওবা তওবা, তুমি বয়সে বড়ো আর তোমার নাম ধরে ডাকার কথা আমি ভাবতেও পারি না ৷”
আহান ও মুচকি হেসে বলল
” তাহলে ! তেমনি আমিও সহজে কাউকে তুই বলতে পারিনা, ওটা আমার কাছে বড্ড কঠিন লাগে ৷যাই হোক যে জন্য ফোন করেছিলাম, আয়াশ বাড়িতে আছে কি জানো?সকাল থেকে ট্রাই করছি ফোনে পাচ্ছি না ৷”
ইফা ভাবুক সুরে বলল
” কই তা তো জানিনা ৷”
তখনই রুমের মধ্যে নূর এসে ইফাকে বলল
” ইফা ব্যাস্ত ?”
ফোনের ওপাশ থেকে নূরের কন্ঠস্বর শুনে আহানের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো, ও ইউকে গেছেই নূরকে ভোলার জন্য , তার ই প্রচেষ্টা ৷নুরকে দেখে ইফা বলল
” এই তো ভাবী এসেছে , আহান ভাইয়া ওয়েট ভাবীকে জিজ্ঞাসা করি ভাইয়া কোথায়৷”
আহান একরোখা মুখ করে বলল
” হমম ৷”
আহানের নাম শুনে নূর একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল, তাই বললো
” আমি মনে হয় ভুল সময়ে এলাম, তোমার কথা বলো আমি পরে আসছি ৷”
” আরে ভাবী না না, আহান ভাইয়া তো জিজ্ঞাসা করছিলো যে আয়াশ ভাইয়া কোথায় ৷”
নূর শুকনো মুখ করে বলল
” ওনাকে বলো যে উনি বাসাতে নেই আর ফোন বন্ধ করে রেখেছেন ৷”
কথাটা আহানের কানে গেল, তাই ইফাকে বলল
” আচ্ছা বুঝেছি ,ওকে ইফা রাখছি পরে কথা হবে আমার কাজ আছে , আর আয়াশকে আমি পরে ফোন করে নেবো ৷”
আচ্ছা ভাইয়া ৷”
কথাটা বলে ফোন কেটে দিলো ৷
নুর খানিকটা বিব্রত হয়ে বলল
” কি বলছিলেন উনি ইফা ?”
” তেমন কিছু নাহ ভাবী আয়াশ ভাইয়ার কথা বলছিলো , কিন্তু তোমার কি দরকার আগে বলো ৷”
নূর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইফার দিকে ফোনটা ধরে বলল
” দেখ তোমার ভাইয়া দিয়েছে আজকে সকালে ৷”
ইফা অবাক হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল
“ওয়াশ, ভাইয়া তোমাকে কতো ভালোবাসে ৷”
কথাটা শুনে নূর হাসলো তারপর ইফাকে বলল
” ইফা আমার সাথে একটু আমার বাসায় যাবে ?”
” কেন ভাবী”
” আসলে ওখানে আমার কিছু দরকারি জিনিস আছে তাই অনতে যাবো ৷”
“ভাইয়া পারমিশন দিয়েছে?”
” নাহ ! ”
” তো তুমি যাবে কোন সাহসে🙂৷”
” উনি আজ সারদিন বাসায় ফিরবে নাহ আর ফোন ও বন্ধ তাই কেল্লাফতে ৷”
ইফা আবাক হয়ে বলল
” সত্যি !”
” জ্বি ননদিনী ৷”
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:27
#Suraiya_Aayat
” তোমার আম্মু মনে খালামনি কোথায় ইফা ? ওনার সাথে দেখা করে গেলে ভালো হতো নাহলে ডেভিলটা বাসায় আসলেও আমাকে বকা ঝকা করার সাহস পেতো না ৷”
ইফা অবাক হয়ে বলল
” ভাবী তুমি এটা কি নামে ডাকলে ! ডেভিল ?”
নূর নিজের মাথায় একটা চাপট মেরে চোখ মুখ কোঁচকালো , বুঝলো যে এই মুহূর্তে ইফার সামনে কথাটা বলা ওর একদম উচিত হয়নি ৷ তারপর কিছু ভাবলো আর বলল
” আরে কথায় কথায় বলে ফেলেছি , আমি বলতে চাইলাম যে উনি জানতে পারলে অনেক বকাঝকা করবে তাই আরকি ৷”
ইফা নূরের সেই কথা বিশ্বাস করে বলল
” ওহহ আচ্ছা কিন্তু আম্মু তো বাসাতে নাই ৷আম্মু একটু খালামনির বাসায় গেছে উত্তরা তে ৷”
নূর একটু অবাক হয়ে বলল
” তোমার খালামনি মানে ? তোমার অলমনি মানে তো আয়াশের আম্মু মানে আমার শাশুড়ি আম্মু , উনি তো আর বেঁচে নেই তাহলে আবার একটা বোন এলো কোথা থেকে?”
ইফা এবার খানিকটা ঘাবড়ে গেল নূরের প্রশ্ন শুনে তারপর আমতা আমতা করে বলল
” আরেহ,,, আরেহ ভাবী তুমিও যে কি বলোনা !আম্মুর আর একটা বোন আসবে কোথা থেকে আম্মুর তো একটাই বোন তা হলো আয়াশ ভাইয়ার আম্মু ৷ আর আম্মু তার চাচতো বোনের বাসায় গেছে তার ছেলে নাকি অসুস্থ সেই কারনে ৷”
নূর ইফার মুখের ভাবভঙ্গি ভালো করে চেয়ে বলল
” তোমাকে একটু অস্থির অস্থির লাগছে ইফা , তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?”
ইফা কথাটা শুনে খানিকটা কেঁপে উঠলো,বিরাট কোন সত্যি টাকে আড়াল করার যেন প্রানপনে চেষ্টা চালাচ্ছে ৷ নিজেকে তুলনামূলক স্বাভাবিক করে বলল
” তোমার থেকে আমি কখনো কিছু লুকিয়েছি বলো ? আর বিশ্বাস করো আম্মু তার চাচাতো বোনের বাড়িতেই গেছে ৷”
ইফার বলার ধরন দেখে নূর ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলল
” আরে ইফা আমি কি একবার ও বলেছি যে তুমি মিথ্যা বলেছো বা আমি অস্বীকার করেছি, বলিনি তো? তাহলে এতো ঘাবড়াচ্ছো কেন আর আমাকেই বা এতো বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছো কেন?”
ইফা কথা কাটানোর জন্য বলল
” আরে ভাবী আমি তো এমনিই বললাম, বাদ দাও যাই হোক এখন চলো নাহলে আয়াশ ভাইয়া বাসায় চলে আসলে আর তোমাকে না দেখতে পেলে ভয়ংকর এক কান্ড হয়ে যাবে ৷”
নূর বিছানা থেকে ছোট ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে বলল
” হমম চলো নাহলে উনি বাসায় এসে না দেখলে আরেক প্যাচাল ৷”
কথাটা বলে ওরা বেরিয়ে গেল ৷ বাসার গাড়িতেই যাবে নাহলে রিকশা বা ট্যাক্সি করে গেলে আর রক্ষে নেই, আয়াশ আর আস্ত রাখবে না ৷
____
” নাম কি ?”
” বলবো না ৷”
অচেনা মানুষটা তার তীক্ষ কন্ঠে জবাব দিলো ৷
কথাটা শোনামাত্রই আয়াশ অ্যাসিডের জার থেকে এক ড্রপ অ্যাসিড লোকটার হাতের ওপর ফেলতেই নিমেষে জায়গাটা পুড়ে গিয়ে মাংস ভেদ করে হাড় দেখা যেতে লাগলো,,তার সাথে শুরু হলো লোকটার তারস্বরে চিৎকার ৷ আয়াশ চোখ বন্ধ করে রেখেছে হয়তো লোকটার চিৎকারে একপ্রকার পৌশাচিক আনন্দ অনুভব করছে ও ৷
তারপর নিজের চেয়ার থেকে উঠে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলো
” কে বলেছিলো আমার আফু সোনাকে আঘাত দিতে ? বল কে বলেছিলো ?”
লোকটা ওনার চিৎকার বন্ধ করে বলল
” বলবো না কে বলেছিলো যা খুশি করে নে ৷”
আয়াশ মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো
” কত টাকা পেয়েছিস কাজটা করার জন্য ?”
” বলেছি তো বলবো না ,তোর কি লজ্জা নেই বে*র ছেলে ৷”
আয়াশ চোখটা বন্ধ করে নিলো, নিজের রাগটাকে সংযত করে বলল
” শেষ বারের মতো বলছি বল কে করতছ বলেছে এটা ৷”
” সাহস থাকলে হাতটা খুলে দেখা তারপর তোরে আমি দেখে নিবো শালার পোলা ৷”
আয়াশ ছুরিটা হাতে নিয়ে বলল
” পাঁচ কোটি দিবো ৷ বল কে বলেছে ৷”
কথাটা শুনে লোকটা হো হো করে হেসে বলল
” আমরা অমন নামকহারাম না যে টাকা পেয়ে সব বলে দেবো , আমাদের মাস্টার আমাদেরকে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে শেখায় নি,,,,”
আয়াশের রাগটা আর সহ্য হলো না লোকটা ওকে আরো কিছু অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিতে যাবে তার আগেই আয়াশ বলে উঠলো আজ তুই শেষ ! নিজে মরবি নাকি আমি করবো বাকি টুকু ৷
লোকটা অত্যন্ত দাম্ভিকতার সাথে বলে উঠলো
” মরার ভয় দেখাচ্ছিস ? একবার শুধু হাতটা খোল তারপর তোকে আর জিন্দা রা,,,,”
আর বলতে পারলো না, আয়াশ চাকুটা ওনার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেই ফিচকানি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো, নিমেষেই ওনার চোখমুখ উল্টে এলো ৷
আয়াশ চাকুটা দূরে ছুড়ে ফেলে দিলো ৷ মাথায় হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, এরপর কি করা যায় ভাবছে, নূর কোনভাবেই সুরক্ষিত না, কেউ তো আছে যে আড়ালে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে , এই লোকটা ছিলো তার একমাত্র সম্বল ৷ আয়াশ চাকুটা তুলে একটা প্যকেটে মুড়িয়ে ফোন করলো
” আমি একটা জিনিস পাঠাচ্ছি, সেটা ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠাও আর যে যে টেস্ট গুলো করতে বলবো সেগুলো করে আমাকে যেন তাড়াতাড়ি রিপোর্টটা পাঠানো হয় ৷”
আয়াশ কলটা কাটলো তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো ৷
_____
” নূর মনি যে, কেমন আছো তুমি ? তোমার শরীর কেমন আছে? বাসার সবাই ভালো আছে? আর এই মাইয়াডা কে?”
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে উঠলেন নূর দের বাসার কাজের বুয়া রহিমা খালা ৷
নূর ওনার প্রশ্নের মাত্রা শুনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
” আচ্ছা হয়েছে এবার থামো, তুমি এতো সব প্রশ্ন একসাথে করলে যে আমি কোনটা ফেলে কোনটার জবাব দিবো বুঝতে পারছি না ৷”
নূলের কথা শুনে ইফা আর রহিমা খালা দুজনেই হেসে ফেললেন, নূর নিজেও হেসে বলে উঠলো
” তুমি কেমন আছো তাই বলো ৷”
” এই তো ভলোই আছি ৷ তা তুমি আজকে এলে যে আজ তো রেদোয়ান বা আরাফাত ভাইজান কেউ তো বাসায় নাই ৷”
কথাটা শুনে নূরের মুখটা শুকিয়ে গেল তারপর জিজ্ঞাসা করে উঠলো
” বাসায় নাই মানে কোথায় ওরা ?”
” রেদোয়ান আর মায়া ভাবির মধ্যে সকালে রাগারাগি হইছে তারপর ভাইজানের সাথেও রাগারগি করে ভাইয়া বাসাতে নাই , কোথায় গেছে বলতে পারি না, আর ভাইজান তো বলে গেল যে আজ শুক্রবার তাই ভাবির কবর জিয়ারতে গেছেন ৷”
কথাটা শুনে নুর মাথা নীচু কলে নিলো, এতদূর ভয়ে ভয়ে অনেক রিস্ক নিয়ে এলো তবুও প্রিয়জনদের সাথে দেখা হলোনা ভেবে মন খারাপ লাগছে ৷ আর রেদোয়ান আর মায়ার হঠাৎ ঝমেলা হয়েছে শুনে নূর অবাক হলো ৷ ইফা নূরের মুখের অবস্থা দেখে নূরের গালদুটো টেনে দিয়ে বলল
” আরে ভাবীজান মন খারাপ করছো কেন? মন খারাপ করো না ৷ আমরা না হয় আঙ্কেলের ফেরার জন্য ওয়েট করি ?”
নূর মন খরাপ করে বলল
” নাহ তা হয়না ইফা ,আমরা বাসা থেকে কাউকে বলে আসেনি আর উনি বসায় ফিরে না দেখতে পেলে কি কান্ড করবে নিজেও জানি না ৷”
ইফাও নূরের কথাতে সম্মতি জানিয়ে বলল
” তাও ঠিক ,যাই হোক তাহলে কেউ যখন বাসাতে নেই তখন আর বেশিখন ওয়েট করে লাভ নেই ৷ তোমার যে যে জিনিসগুলো দরকার সেগুলো নিয়ে নাও আমি ওয়েট করছি ৷”
” তুমিও চলো আমার সাথে রুমে, এখানে একা একা বসে কি করবে ! আসো ৷”
ইফা নূরের সাথে যেতে গেলেই রহিমা খালা বলল
” নূর মনি আমিও যাই তোমার সাথে ! গোছগাছ করে দিই তুমি কি কি নিবা !”
” না না খালামনি, বেশি কিছু না, অল্প কিছু নিবো, আমিই পারবো, তুমি বরং ইফার জন্য একটা কিছু বানিয়ে দাও ততখনে ৷”
” আচ্ছা ৷”
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন ৷
নূর ওর রুমে গিয়ে ওর দরকারি কিছু জিনিস নিলো তার মধ্যে যেটা সবচেয়ে দরকারী তা হলো ওর ডায়েরি ৷ ওর ধারনাতেও নেই যে ওর ভাইয়া ওর ডায়েরি পড়বে ৷
____
অনেকখন ধরে আয়াশ পাশ ফিরে শুয়ে আছে, আজকে আর নূরকে কোনরকম কোন বিরক্ত করেনি, বাসায় এসে ঠিকভাবে কথাও বলেনি , নূরের বুকের ভিতর এক চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে ৷ ভীষনরকম বলতে ইচ্ছে করছে আমাকে বিরক্ত করুন প্লিজ আপনাকে এভাবে মানতে পারছি না ৷
নূর বিছানা থেকে নামলো, রাত 1 টা বাজে ৷ আয়াশ বাড়ি ফিরেছে 10টায় তারপর আহানের সাথে কথা বলে গোসলে গেছিলো আর নূরের সাথে কথা বলেনি তেমন শুধু ঘুমানোর আগে নুরকে বলেছিলো
” লাইটটা অফ করে দাও, নাহলে ঘুম আসবে না আমার ৷”
কথাটা শুনে নূরের চোখে জল চলে এসেছিলো , সারাদিন পর মানুষটার হঠাৎ এমন ব্যাবহারটা বড়োই অদ্ভুত ৷অনেকখন ধরে বসে থাকার পরও ঘুম আসছে না ,মনের মাঝে নানান ভাবনা আসছে ওর যেমন
” উনি আজকে সারাদিন জন্য কোন মেয়ের সাথে ছিলেন না তো? আচ্ছা উনি কি অন্য কাউকে ভালোবাসেন ? আমার সাথে এমন ব্যাবহার করছেন কেন? আমার অপরাধ কি ? উনি কি আমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন?”
কথাগুলো ভাবলো, মনের মাঝের দোটানা দূর করতে বিছানা থেকে নেমে ওর ব্যাগ থেকে একটা মেহেন্দির টিউব বার করে আনলো তারপর আয়াশের সামনে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো আয়াশ আদেও ঘুমিয়েছে নাকি জেগে আছে ৷ অনেকখন ধরে পর্যবেক্ষন করালো তারপর প্রমানিত করলো যে আয়াশ ঘুমাচ্ছে ৷ নূর খাটের ওপর আয়াশের পাশে বসে আয়াশের বাম হাতটা ধরলো তারপর ফোনের ফ্ল্যাশ জালিয়ে হাতে লিখলো
” আমার বউ আছে, আমি বিবাহিত, তাকে আমি ভালোবাসি , আমার দিকে কেউ ঘুরেও তাকাবেন না প্লিজ নাহলে আমার বউ আমাকে ছেড়ে ছলে যাবে ৷”
মেহেন্দি দিয়ে আয়াশের হাতে কথাগুলো লিখে দিলো নুর,সারারাতে নিশ্চয় এটার একটা সুন্দর গাঢ় রঙ আসবে আর যা সহজে উঠবে না ৷ কথাটা ভেবে নূর ফিক করে হেসে ফেলল আর মনে মনে বলল
” এরপর আপনার সেই গালফ্রেন্ড আপনার হাতটা দেখলে নির্ঘাত আপনার ব্রেকআপ হবে হু ৷ নূর ইউ আর জিনিয়াস😎৷”
#চলবে,,,
লাইক অনেক কমে গেছে, এমন করলে কিন্তু এবার থেকে দেরি করে গল্প দিবো তখন আমাকে দোষারোপ করতে পারবেন না ৷
#চলবে,,, Suraiya Aayat