তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৬

#তুমিই আমার প্রিয় নেশা
#পর্ব:6
#Suraiya_Aayat

সারাদিন নূর আর বেশি কিছু ভাবেনি , কালকে ওরা আয়াশের বাসায় ফিরে যাবে সেই জন্য রাত্রে বেলা খাওয়ার শেষে নূর ওর বাবার ঘরে গেল ৷ উনি ফোনে উচ্চস্বরে কারোর সাথে কথা বলছিলেন তখনই আচমকাই নূর ঘরে ঢুকতেই উনি একটু ভড়কে যান ৷ ফোনটা অত্যন্ত ব্যাস্তাতার সাথে কেটে দিয়ে নূরকে জিজ্ঞাসা করেন
” কি রে মা এতো রাতে তুই এখানে যে ৷”
নূর ঘরে ঢুকে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
” একটা প্রশ্ন করবো তোমাকে উত্তর দেবে?”
উনি ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললেন
” হ্যাঁ বল না ৷”
” আমার যে নানুর বাসা আছে তুমি তা আগে কখনো সে বিষয়ে কিছু বলোনি তো ? এমনকি আমার মামা আছে সে কথাও কখনো জানাওনি কিন্তু কেন?”
নূরের বাবা বেশ কিছুখন গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন তারপর গলা পরিষ্কার করে বললেন
” শুনবি কেন বলিনি ?”
নূরের এবার খানিকটা হলেও খারাপ লাগলো যে তার বাবা তার থেকে কথাগুলো লুকিয়েছে তাই খানিকটা অভিমানী সুরে বলল ” হমম বলো ৷”
উনি রকিং চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লেন আর দুলতে লাগলেন নূরকে বসতে বললেও নূর বসলোনা ৷
” তোর মা আর আমি ভালোবেসে বিয়ে করি, তোর নানু বাসার সবাই ছিলেন সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষ, সহজ ভাষায় বললে খানদানী পরিবার ৷ তখনকার দিনে এমনকি এখনো এই রিতী মানা হয় তে খানদানী বংশের মাঝেই আত্মীয়তা গড়ে উঠবে, মানে খানদানী বংশের ছেলের সাথে খানদানী বংশের মেয়ের বিয়ে হবে ৷ কিন্তু আমি সাধারন পরিবারের ছেলে ছিলাম তাই তারা আমাকে মেনে নেয়নি ৷ তোর মা আমাকে ভালোবেসেছিলো শুধু, কোন জাতপাত বিচার করেনি তাই হয়তো 30টা বছর আমরা একসাথে থাকতে পেরেছিলাম ৷ যাই হোক আমরা পালিয়ে বিয়ে করি নয়তো তারা আমাদেরকে মেনে নিতো না, আর এই খবরটা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তেই তোর নানুর বাসার সকলের আত্মসম্মানে লাগে তাই তারা তোর মাকে নিজেদের মেয়ে বলে অস্বীকার করে এবং সবাই তেমনই ব্যাবহার করতে থাকে ৷ এই কথা শুনে তোর মা খুব কষ্ট পেয়েছিলো তাই আর কখনো তাদের কাছে ফিরতে চাইনি ৷ তাই আমিও তোর মা কে আর জোর করিনি ৷ কয়েক বছর পর আমাদের মনে হলো যে আমাদের সব অগোছালো সম্পর্কগুলো ঠিক করা উচিত, কোন মনোমালিন্য না রাখায় শ্রেয় তাই আমরা ঠিক করি তাদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবো ৷ তোর মা তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে গেলে তারা পুনরায় অস্বীকার করে ৷ রাস্তায় ফিরতে ফিরতে আ্যক্সিডেন্ট হয়,তোর মামার বাড়ির লোকজন তোর মায়ের মৃতদেহ আমাদের কাছে দিয়ে নিষ্ঠুরের মতো চলে যাই, তাই আমি তোদেরকে একথা কখনো জানাতে চাইনি ৷

কথাগুলো শুনে নূরের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়ালো ৷মানুষ কি করে এতোটা নিষ্ঠুরের মতো আচরন করতে পারে তাও আবার জাতপাত বিচার করে ৷ নুর চোখের জল মুখে কঠিন সুরে বলল
” তাদের ঠিকানা কোথায় বাবা ? কোথায় গেলে তাদের মতো মানুষের দেখা মিলবে ?”

উনি কাঁদোকাঁদো হয়ে বললেন
” সেটা তুই জানতে চাস না মা, আমি তোকে বলতে পারবো না, আমি চাইনা তাদের মতো মানুষের ছায়া তোর ওপর পড়ুক ৷ আমাকে ক্ষমা কর ৷”
নূর বেরিয়ে গেল রুম থেকে ৷ ওর মায়ের কথাগুলো বারবার কানে বাজছে ৷ কতোটা খারাপ ওর মায়ের বাসার লোকজন ৷
নূর রুমে যেতেই দেখলো আয়াশ হাতের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে, নুরের চোখটা আয়াশের ওপর আটকে গেল ৷ কতোটা নিষ্পাপ লাগছে দেখতে, সারাদিনে আয়াশ কোন খারাপ ব্যাবহার করেনি ৷ নূর গিয়ে চুপিসারে আয়াশের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো , আয়াশের দিকে ফিরে ঘুমায় না নূর, আয়াশের দিকে তাকালেই ওর কেমন একটা অসস্তিমাখা অনুভূতি হয় ৷চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতেই পিঠে আয়াশের ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে চেপে ধরলো নূর, চোখ মুখ খিচে শুয়ে আছে , ও এখন কোনরকম বিরক্তি প্রকাশ করলেই আয়াশ আরো পেয়ে বসবে তাই কোন রেসপন্স না করায় ভালো ভেবে চুপ করে রইলো ৷ ধীরে ধীরে আয়াশের ঠোঁটের ছোঁয়া নুরের সমগ্র পিঠ ছাড়িয়ে গলায় নেমে আসলো,,নুর চুপ করে আছে কোন সাড়া শব্দ নেই ওর ৷ আয়াশ নূরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
” এতোটা সহ্য ক্ষমতা তুমি কোথা থেকে পেলে আফুসোনা ? এমন করলে যে আমারো তোমাকে ভালোবাসার ইচ্ছাটা দ্বিগুন হয়ে যাবে তা কি তুমি জানো ?”
কথাটা শুনতেই নূর চোখ খুলে ফেলল, আয়াশের এই পরিমান লাভ টর্চার ও সহ্য করতে পারে না সেখানে দ্বিগুন ভালোবাসা কিভাবে সহ্য করবে ও ?
কথাটা ভাবতেই ভয়ে চোখ খুলে ফেলল ৷ আয়াশ নূরের কান্ড দেখে হাসতে লাগলো, নূর ভাবছে যে চোখটা খুলে কি ও নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারলো?
আয়াশ নূরের নাকটা টেনে দিয়ে বলল ” কি ভয় পেয়ে গেলে আফু সোনা ?”
নূর উঠতে যেতে নিলেই আয়াশ নূরকে বিছানার সাথে চেপে ধরে বলল ” শুয়ে শুয়ে রিল্য৷ক্সে কথা বলো, এতো ব্যাস্ত হচ্ছো কেন আমি তো আছি তাইনা! ”

নুর ওর কাঁপাকাঁপা ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে বলল
” মানেইইই ৷”
আয়াশ অনীহা নিয়ে বলল
” আগে বলো এতখন আমাকে ছেড়ে কোথায় ছিলে ? বলেছি না আমার সাথে ছায়ার মতো হয়ে থাকবে ৷কি বলিনি ?”
নুর ভয়ার্ত কন্ঠে বলল
” জ্বি , বাবার ঘরে গিয়েছিলাম ৷”
আয়াশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল ” কেন?”
“কেন আবার এমনিই ৷”
” ওহ আচ্ছা বুজেছি তুমি বলবেনা, যাই হোক তাহলে চলো তোমাকে ভালোবাসি ৷”
” এইইই না না, বলছি বলছি ৷” ভয়ে ভয়ে বলল নুর ‌৷
আয়াশ মুচকি হেসে বলল ” হ্যাঁ বলো ৷”
নুর ভয়ে ভয়ে আয়াশকে সব বলে দিলো ৷ আয়াশ নূরের সব কথা শুনে ক্লান্ত ভঙ্গি নিয়ে নূরের পেটের ওপর মাথা রাখতেই নূর বলে উঠলো ” সরে জান, আমার কাতুকুতু লাগছে ৷”
হুঠ করে আয়াশ সরে গিয়ে নুরের মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল ” তুমি ওনার কথা বিশ্বাস করেছো ?”
নূর অবাক হয়ে বলল
” হমম, না বিশ্বাস করার কি আছে ?”
আয়াশ নূরের গালে ছোঁট ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে বলল
” ভালোবাসতে মন চাই আফু সোনা,বিরক্ত করোনা ‌৷”

🌼

” কিছুখন আগেই তো বাসায় এলেন, এখন আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
আয়াশ হেসে বলল ” বউকে ভালো না বেসে তাকে কিভাবে শুধু টর্চার করা যাই সেই ট্রেনিং নিতে যাচ্ছি ৷”

আয়াশের কথা শুনে নূর শুকনো ঢোক গিললো,মানুষটা সব কাজেই এতো ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলে কেন! নূর বিরক্ত হয়ে বলল ” আচ্ছা যান, আমি আর কখনো জিজ্ঞাসা করবো না ৷”
আয়াশ নূরের দিকে চোখ মেরে বলল
” বাই আফুসোনা ৷”
নূর হাফ ছেড়ে বাঁচলো ৷ মানুষটা সামনে থাকলে ওর শরীরের মাঝে অদ্ভুত পতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায় ৷ নূর ঠিক করলো আজকে ও আয়াশের বাবার সাথে দেখা করতে যাবে ৷ ওনার সাথে এখনো অবধি নূর দেখা করেনি ৷ নূর কথাটা ভেবে আয়াশের বাবার ঘরের দিকে পা বাড়ালো ৷

#চলবে,,,,,

ছোট করে লিখেছি সরি ৷ মাথা ব্যাথা এখনো কমেনি🙂 তবুও লিখলাম, কেমন হলো জানাবেন ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here