#তুমিময়_বসন্ত
২৯.
#writer_Mousumi_Akter
আয়াস আমার মুখের সামনে ছোট আয়না ধরে রেখেছে কিন্তু ওর দু’চোখ স্হির হয়ে তাকিয়ে আছে আমার মুখপানে।কাজল পরতে পরতে বারবার খেয়াল করছি আয়াসের গভীর চাহনির দিকে।আয়াস মুগ্ধ হয়ে দেখছে আমাকে।ওর বোধহয় পৃথিবীর আর কোনো কিছুর হুঁশ নেই।ওর দৃষ্টিতে সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।আয়াস আনমনে বলে উঠলো, আমার দিবস ও রজনী কাটে তোমার চোখে চেয়ে।আমি ও তাকিয়ে আছি আয়াসের মুখের দিকে। ও আমার দিকে তাকালেই আমি বার বার হাজার বার ওর প্রেমে পড়ে যায়।এই মুহুর্তে পৃথিবীর কোনো সৌন্দর্য আর আমাকে মুগ্ধ করতে পারেনা।কেননা নির্দিষ্ট কারো মুগ্ধতায় আটকে গেলে আর কাউকে ভালো লাগেনা।আয়াস আমার সেই মুগ্ধতা যার প্রতি ভাললাগা,ভালোবাসা সমুদ্রের মতো গভীর আর আকাশের মতো বিশাল।
আয়াস এর হাতে একটা চিমটি দিয়ে বললাম,
!হুজুরের বাসা কোথায় ঠিকানা দিন।”
আয়াস উহ বলে চিমটি দেওয়া জায়গা হাত বোলাতে বোলাতে বেশ অবাকের সুরে বললো,
“কোন হুজুর?”
“বুঝতেছেন না তাইনা?”
“নাতো।”
“যে হুজুরের কাছে গিয়ে আমায় তাবিজ করেছেন।”
আয়াস ভ্রু উচিয়ে সন্দিহান ভাবে বললো,
“কোন হুজুর আর কিসের তাবিজ বুঝলাম না।”
“তাবিজ টাবিজ না করলে এত ভালবাসলাম কিভাবে?এক বিন্দুও যাকে পছন্দ ছিলোনা তার জন্য সারাক্ষণ আমার মন উতালা থাকে কেনো?এর একটায় কারণ তাবিজ।আপনি আমায় তাবিজ করেছেন। ”
আয়াস এবার নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে দিয়ে বললো,
“করেছি তো তাবিজ।আর সেটা হলো ভালবাসার তাবিজ।এই তাবিজে নিঁখুত ভালবাসা প্রয়োগ করা হয়েছে।”
আমি লাজুক ভাবে হেসে দিলাম।আসলে বিবাহিত জীবনের মতো সুন্দর জীবন আর নেই শ্বশুর বাড়ি যদি মনের মতো হয়।আমাকে হাসতে দেখে আয়াস আমার গাল টেনে বললো,
“শোনো চিরল দাঁতের মেয়ে তোমার হাসির শব্দে আমার অন্তরআত্মা কেঁপে ওঠে।এত সুন্দর কেনো তোমার হাসি।”
আমি এবার লজ্জা পেয়ে আবার ও হাসলাম।
বাইরে থেকে আয়াসের বাবা ডাকছে,
” মুগ্ধতা তুমি রেডি হয়েছো মা।”
মাথার ঘোমটা টেনে বাইরে বেরিয়ে বিনয়ের সাথে বললাম,
“জ্বী বাবা।”
“হাত টা একটু বাড়াও তো মা।”
বাবার দিকে হাত টা বাড়াতেই বাবা চুপি চুপি আমার হাতে একহাজার টাকার দুইটা নোট গুজে দিলেন।আমি রিতীমত অবাক হলাম।
“বাবাকে বললাম, না বাবা আমার টাকা লাগবে না।”
বাবা আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
“রাখো মা।বাবার বাড়িতে যাবে তোমার চাচাতো ভাই বোনেরা এসে ধরবে তোমাকে নিয়ে দোকানে যাওয়ার জন্য বায়না ধরবে।তখন তোমার লাগবে।”
আয়াসের আম্মা এগিয়ে এসে বড় বড় দুইটা ব্যাগ আয়াসের হাতে ধরিয়ে দিলো আর সাথে দুইটা টিফিন বক্স।দেখে মনে হচ্ছে তারাই যেনো মেয়ে বিয়ে দিয়েছে ও বাড়িতে।এ বাড়ির যত ফল আছে সব ব্যাগে ভরে দিয়েছে।আয়াসের বাবা সকালে দুপুরে বাজার থেকে ফল, মিষ্টি,মাছ,মাংস কিনে এনেছে ও বাড়িতে পাঠাবে বলে।এই পরিবার টা এত ভালো কেনো?তাদের ব্যবহার এ মনে হচ্ছে ও বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে যত্নের ত্রুটি করা যাবেনা।
আমি আয়াসের আগেই বাড়ির গেটে আসলাম।বাড়ির গেটে এসে দেখি অয়ন সেল্ফি নিচ্ছে আরহীর সাথে।কি অবাক করা ব্যাপার। অয়ন আরহীর কাধে হাত রেখে রেল্ফি নিচ্ছে। দুজনের মুখে ই মিষ্টি হাসি।অথচ দু’দিন আগেও তারা ছিলো বিরোধী পক্ষ।অয়ন এর মতো লাজুক ছেলেও চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।রাগী,বদমেজাজী,শান্ত সব ধরনের ছেলেরাই একবার হলেও কারো প্রেমে পড়ে।প্রকৃতির নিয়মে হলেও তারা কারো না কারো প্রেমে পড়েই।পুরুষ মানুষ নারীর প্রেমে পড়বেই।এটা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে।পুরুষের ধ্বং/ সের পেছনেও কোনো নারীর খারাপ ভূমিকা থাকে। আবার পুরুষের উন্নতির জন্য কোনো নারীর ভালো ভূমিকা থাকে।অয়ন আরহীকে আরহীদের বাড়িতে পৌছে দিতে যাচ্ছে।আরহীদের বাড়ি এখান থেকে বেশী দূর না।দুজনে একটা রিক্সাতে উঠে গেলো।অয়ন এর টিউশনি নাকি আরহী দের বাড়ির দিকেই আছে।
এরই মাঝে আয়াস বেশ ব্যাস্ততার সাথে এসে বললো,
“মুগ্ধতা প্রাইভেট কার আসতে পাঁচ মিনিট লেট হবে। ”
আমি আয়াসের দিকে তাকিয়ে আবার ও চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সোজা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমি প্রাইভেট কার এ যাবো না।”
“প্রাইভেট কার এ নতুন জামাই না গেলে শ্বশুর বাড়ি থেকে সবাই কিপ্টা বলবে।”
“কিপ্টা কে কিপ্টা ছাড়া আর কি বলবে।”
আয়াস কপাল কুচকে রিতীমত অবাক হয়ে বললো,
“আমি কিপ্টা। এই হ্যালো ম্যাডাম আমি কোন দিক দিয়ে কিপ্টা।বউ এর হাতে আমার মানিব্যাগ থাকে তবুও আমি কিপ্টা।”
“কিপ্টা ছাড়া কি।আমাদের বেবি হয়না কেনো?আপনি কিপ্টা বলেই হয়না।ভাবছেন বেবি হলে আপনার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।”
আয়াস ছোট ছোট কাশি দিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আচ্ছা এই ব্যাপার।কথা এত ঘুরিয়ে না বলে সরাসরি বললেই তো পারতে ফুলসজ্জার রাতে তোমার মাথায় গ্যাস্ট্রিক চেপেছিলো।তাই হাজবেন্ড এর থেকে দূরে ছিলে।এখন কাছে চাইছো।নিড ফুলসজ্জা তাইনা বেবিডল।”
“রাস্তায় যেনো সিনক্রিয়েট করা লাগেনা কিপ্টা লোক।সব সময় বাজে কথা।”
“ইস!প্রিয়তমা।কি কিউট করে কিপ্টা বলছো আমায়।এটা আমার জন্য বিশাল বড় খুশির কারণ।আজ ই আমি আমার নামের সাথে জুড়ে দেওয়া কিপ্টা পদবী মুছে দিবো।”
“কিভাবে।”
“আবার ও ফুলসজ্জার খাট সাজিয়ে।এবার শুধু খাট সাজাবো না ফুলসজ্জা ও হবে।তাও আজ ই হবে।রেডি থেকো।”
“আম্মুদের বাসায় যাচ্ছি,ওখানে গিয়ে কিন্তু আমি আম্মুর পাশে ঘুমোবো।ওখানে গিয়ে কিন্তু হুট হাট আমাকে জড়িয়ে ধরবেন না।”
“আম্মুর পাশে ঘুমোবে মানে।আমার কি হবে তাহলে।”
“কি হবে আপনার,একা একা বড় বিছানায় আরামে ঘুম দিবেন। ”
“শ্বাশুড়ি সিওর তোমাকে তার পাশে নিবেনা।বুঝবে জামাই অনেক বছর পরে বউ পেয়েছে।”
“ওখানে গেলে কিন্তু আমার সাথে বেশী কথা বলবেন না।বাবার সামনে আমার খুব লজ্জা করবে।এক ঘরে ঘুমোলে সকালে উঠে আরো বেশী লজ্জা করবে।বাবা কি না কি ভাববে।”
“বাবারা এসব ভাবে না পা* গ *লি।”
আয়াসের দিকে একটু বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বললাম,
“শুনুন প্রাইভেট কার কে ফোন দিয়ে বলুন না আসতে।”
“তাহলে কিসে যাবো?”
সামনে একটা ভ্যান পেয়ে ভ্যান ওয়ালাকে ডাকলাম ভাই যাবেন।ভ্যানচালক এগিয়ে এসে বললো,জ্বী যাবো।আমি আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমি এই ভ্যানে যাবো।ভ্যানের পেছনে খোলা হওয়ায় আপনার হাত ধরে বসে যেতে ভীষণ ভালো লাগবে।প্রকৃতি দেখা যাবে।ভ্যানে বসে যা উপভোগ করা যায় তা আর কোনো কিছুতে দেখা যায় না।”
“আয়াস সম্মতি জানিয়ে বললো,ইস বউটা কি রোমান্টিক হয়ে গিয়েছে।তবে তোমার চুল খোলা রাখবে।খোলা চুলে বাতাসে চুল উড়বে আমার চোখে মুখে পড়বে।তোমার ঘ্রাণ নিতে পারবো।”
“আয়াস কে চিমটি কেটে বললাম,ভ্যান চালক আছে এখানে।নির্লজ্জ ভাববে আমাদের। আর এই গরমে চুল খোলা।এত রোমান্টিক হতে পারবো না আমি।পারলে টাক হয়ে যেতাম।গরমে অসহ্য লাগে চুল।”
টাক হওয়ার কথা শুনে আয়াস খুব জোরে হেসে দিলো আর বললো,
“এত গরম তোমার। আগামি মাসের স্যালারি আর ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এসি লাগিয়ে দিবো।”
“আবার ও বললাম যে কিপ্টা আপনি।”
“আয়াস আবার ও হেসে বললো,তাইনা?আজ রাত হোক দেন প্রুভ হবে কে কিপ্টা।”
নিজের বি* প*দ কি নিজেই ডাকলাম বুঝলাম না।
জিনিস পত্র ভ্যানে তুলে আমাকে উঠতে বললো।
ভ্যানের পেছনে দুজনে বসলাম।পা দুলাতে দুলাতে চারদিক দেখতে দেখতে যাচ্ছি।এর ই মাঝে হঠাত এক ঝাঁক বাতাস এলো কোথা থেকে।আমি নিজের খোপা করা চুল খুলে দিলাম আয়াসের ইচ্ছা পূরণের জন্য।সাথে সাথে এলোমেলো বাতাসে চুল উড়ে আয়াসের চোখ মুখ ছেয়ে গেলো।আয়াস মৃদু হাসলো।তৃপ্তির হাসি ওর মুখে।আমার গরম লাগছে ভেবে আয়াস আমার চুল গুলো গুছিয়ে খোপা করে দিলো আবার।ভ্যানের পেছনে প্রিয় মানুষের আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে পথ চলার মতো চমৎকার অনুভূতি আর কিছুতে নেই।আয়াস আমার কাঁধের উপর দিয়ে হাত দিয়ে আমার হাত ধরে রেখেছে।
সন্ধ্যার আগে আগেই আমাদের বাড়িতে পৌছে গেলাম।আমার প্রিয় ভীষণ প্রিয় এই বাড়িটা।এ বাড়িকে ঘিরে আমার অনেক অনুভূতি। ভ্যান বাড়ির সামনে থামলেই শ্রুতি এগিয়ে এলো।আয়াস এর হাত ধরে শ্রুতি বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো।আম্মু বাবা এগিয়ে এলো।আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
#তুমিময়_বসন্ত
৩০.
#writer_Mousumi_Akter
দীর্ঘদিন পরে নিজের রুমে প্রবেশ করলাম।আলাদা একটা প্রশান্তি ফিরে পেলাম এ রুমে প্রবেশ করে।সব কিছু আগের মতোই গোছানো আছে।আমার পড়ার টেবিল আগের মতোই গোছানো আছে।আমার একুরিয়াম এর মাছ গুলোর অনেক গুলা বাচ্চা হয়েছে।একুরিয়াম ভরে গিয়েছে মাছে।আমি চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি।এলোভেরার যে চারা গাছ টা লাগিয়েছিলাম তার থেকে আরো সাত টা চারা গজিয়েছে।গোলাপ গাছে কড়ি এসেছে।বেলি গাছেও ফুল ফুটেছে।বরং আগের থেকে সব আরো ভালোই হয়েছে।আশে পাশের বাড়ি থেকে অনেক মানুষ এসে ভীড় করেছে আয়াস কে দেখার জন্য।সবাই আমার সাথে দুই এক মিনিট কথা বলে আয়াস কে ঘিরে দাঁড়িয়েছে।বেচারা উঠানে দাঁড়িয়ে ভালো আছি বলতে বলতে গাল ব্যাথা করে ফেললো।স্রুতি তো আয়াসের হাত ই ছাড়ছে না।যে আসছে সে এসে বলছে জামাই এর মিষ্টি খাবো।আম্মু সবাইকে প্যাকেট খুলে খুলে মিষ্টি দিয়ে যাচ্ছে।শুধু যে নতুন বউ এর ই অস্বস্তিতে পড়তে হয় তা নয় নতুন জামাই কেও দেখছি ভালোই অস্বস্তিতে পড়তে হয়।আজ বুঝুক আয়াস কেমন লাগে।বাড়িতে মানুষ গিজ গিজ করছে।আমাদের বংশের যত মানুষ আছে সব এসে ভীড় করেছে।আমার বিয়ে যেহেতু খালামনিদের বাসায় হয়েছিলো তাই আমার বংশের কেউ বিয়েতে উপস্হিত হতে পেরেছিলো না।কিন্তু আজ এ বাড়ি দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি।রঙিন কাগজ দিয়ে বাড়ি সাজানো হয়েছে।বাইরে বাবুর্চি রান্না করছে।আজ বাবা সবাই কে খাওয়াবেন।ও পাশে চাচাতো ভাইয়েরা খাসি জ/বা/ই করছে।গরুর মাংস এক মণ কিনে এনেছে।রোস্ট,পোলাও,ডিম,ডাল,ভাজি সব ই হচ্ছে।বাড়িতে সবার মাঝে ভীষন আনন্দ আর ছোটাছুটি দেখছি।আম্মু আয়াসের গলায় একটা চেইন পরিয়ে দিলো।এটা কি তার জামাই বরণ হলো।দীর্ঘদিন পরে বাড়িতে এসেও দেখছি আমার থেকে আয়াসের গুরুত্ব বেশী এ বাড়িতে।সবাই আমার থেকে বেশী আয়াসের আপ্যায়ন করছে।পাড়া থেকে যে আসছে সে ও আয়াস কে ঘিরে রেখেছে।আম্মু আর বাবা জামাই অন্ত প্রাণ।শুধু জামাই জামাই করছে।যে আসছে তাকে পরিচয় করাচ্ছে।আম্মু আর বাবার মুখে এত আনন্দ আমি আগে কখনো দেখিনি।এত সুখ অনুভব করছেন তারা যা দেখে আমিও ভীষণ মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছি।কিছুক্ষণের মাঝে আরহী আর অয়ন খালামনি আর খালুর সাথে হাজির।মামাদের বাড়ি থেকে ও লোকজন এসেছে।আজ বোধহয় সবাই ই ভীষণ খুশী।
আম্মুকে পাশের বাসার এক দাদী বলছে,
” বউমা এবার তো একটা বাচ্চা নাও।একটা মাত্র মেয়ে তোমার।আর একটা সন্তান না হলে কি হয়।ছেলে না হলে কে দেখবে তোমাদের।”
বুড়ির কথা শুনে রাগ আমার চরম পর্যায়ে চলে গেলো।আম্মু এখন জামাই এর সামনে বাচ্চা নিবে।আর একটা মাত্র মেয়ে মানে।আমি কি বানের জলে ভেষে এসেছি।একটা মাত্র মেয়ে উনি কাকে বোঝালেন।আমি নাকি শ্রুতি।আম্মুর যদি বাচ্চার শখ হয় নিতেই পারে।তাই বলে ছেলে নেই কে দেখবে এই কথার উপর ভিত্তি করে কেনো নিবে।আমি দেখবো আমার আম্মু আর বাবাকে।
আম্মু বললো,
“আস্তে চাচীআম্মা।জামাই শুনতে পাবে।আমার বাচ্চার দরকার নেই।আমার দুই মেয়েই আমার সব।”
আম্মু কে খালামনি ডাকলো আর আম্মু চলে গেলো।
আর দুইজন মহিলা বলাবলি করছে এই মেয়েকে বিয়ের দিন সাথে করে নিয়ে এসেছিলো।সেই মেয়ের জন্য দেখো কত কি করছে।মানুষ জানাজানি হবে বলে সারাজীবন বাসায় বাসায় বেড়িয়েছে।একবারে মেয়ে বড় হলে বাড়িতে এসেছে।মেয়েকে এখানে রেখে মানুষ করেনি মেয়ে যাতে কিছু জানতে না পারে।
কথাগুলো শুনেই ভীষণ খারাপ লাগলো আমার।আমার আম্মু আমাকে তার বিয়ের দিন সাথে করে নিয়ে এসেছিলো।এমন কিছু কথা আগেও শুনেছি।আচ্ছা এই কথা যদি সত্যি হয়েও থাকে তাহলে আয়াসদের এলাকার মানুষ কিভাবে জানে।আয়াসদের বাসার পাশের ওই মহিলা কিভাবে জানলো।আমাকে খুজে বের করতেই হবে কি সেই ঘটনা।বাসার পাশের এক চাচীআম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম গল্পে গল্পে। চাচীআম্মা আম্মু আর বাবার বিয়ে হয়েছিলো কত সাথে তুমি জানো।খুব কৌশলে জিজ্ঞেস করলাম। চাচীআম্মা বললো ২০০৪ সালে।আমি আমার শিশুকার্ড আমার নানুর বাক্সে একদিন দেখেছিলাম আমার জন্ম ২০০৩ সাথে।কিন্তু জন্মনিবন্ধনে ২০০৪ সাল ই আছে।শুনেছি বাবা -মায়ের লাভ ম্যারেজ ছিলো।হতেই পারে তারা গোপনে বিয়ে করেছিলো পরে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।নাকি তাদের কোনো ভুলে আমার জন্ম হয়েছিলো।ছিঃছি এসব কি ভাবছি আমি।যে কোনো সন্তানের কাছে মা-বাবার অতীতের এমন ঘটনা কষ্ট দিবে,ভাবাবে। কিন্তু আমি এসব ভাবতেই চাই না।আর কিছু জানতেও চাই না। আমি যে এসব জেনেছি আম্মু আর বাবাকে কখনো বুঝতে দেওয়া যাবেনা।আমি চাইনা মা বাবার অতীত ঘেটে তাদের কোনো লজ্জা দিতে।কিন্তু আয়াস যদি কখনো জানতে পারে ও কিভাবে নিবে ব্যাপার টা।আয়াসের কথা ভেবে দুঃচিন্তা হচ্ছে।না,না আয়াস খুব ভালো ছেলে। আয়াস সব জানলেও আমাকে ভুল বুঝবে না।মাথাটা কয়েকবার ঝাঁকিয়ে নিয়ে মাথা থেকে এসব আজে বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিলাম।
নিজের রুমে চুপচাপ বসে আছি কি ভাবছি জানিনা।এমন সময় বাবা এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন।বাবার দিকে অসহায় চোখে তাকালাম।বাবা আমাকে বললেন,
“মা তুমি কি আয়াসের সাথে ভালো আছো।তোমার বিয়ে আসলে ওভাবে দেওয়া আমাদের উচিত ছিলো না।এই আড়াই টা মাস আমি আর তোমার আম্মু ঠিকভাবে ঘুমোতে পারিনি।তুমি ভালো আছো কিনা এটা ভেবে।’
আমি যে আয়াসের সাথে ভীষণ ভালো আছি সেটা বলতে আমার একটু বাঁধলো না।সাথে সাথে হেসে দিয়ে বললাম,
“বাবা আমি ভীষণ ভালো আছি।কতটা ভালো আছি তোমার কল্পনার বাইরে।”
“সত্যি তো মা।”
“হ্যাঁ বাবা সত্যি।আমি ভীষণ ভালো আছি।সেদিনের জন্য সারাজীবন কৃতজ্ঞ বাবা।আসলে মা বাবার থেকে বেশী ভালো কেউ সন্তান কে বাসতে পারেনা।”
বাবা আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
“আয়তো আমি তোর চুলে বিলি কেটে দেই।”
“বাবা আমার চুলে অনেকদিন তুমি তেল লাগিয়ে দাও না।আজ আমার চুলে তেল লাগিয়ে বেঁধে দাও। ” @
বাবা আমার চুলে তেল লাগিয়ে দিতে দিতে অনেক গল্প করছেন।
ছোট বেলা থেকে বাবা আমাকে ভীষণ আদর করেন।চুল বেঁধে দেন,তেল লাগিয়ে দিতেন।আমি ভীষণ তৃপ্তি পায় বাবার এ যত্ন গুলাতে।
বাইরে খাওয়া দাওয়া শেষ।সবাই শাড়ি হাতে নিয়ে খেতে এসেছে।অনেক গুলা শাড়ি হয়ে গেলো এক সন্ধ্যায়।কেউ কেউ রাইস কুকার বা প্রেসার কুকার ও নিয়ে এসেছেন।আস্তে আস্তে বাড়িটা ফাঁকা হয়ে গেলো।সবাই খেয়ে যে যার বাড়িতে চলে গেলো।
হঠাত আমার মনে পড়লো আমার ঘরে অভি আর আমার কিছু ছবি আর চিঠি আছে।আয়াস যদি দেখে ফেলে অন্য কারো সাথে আমার ছবি আছে ও ভীষণ কষ্ট পাবে।আমি রুমে গিয়ে ড্রেসিন টেবিল খুলে কাপড়ের ভাজ থেকে ছবি গুলো বের করলাম।শরীরের মাঝে ঘিনঘিন করছে অভির সাথে নিজের ছবি দেখে।এমন সময় আয়াস এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।সাথে সাথে কেঁপে উঠলাম আমি ভ*য়ে।আয়াস যদি আমার হাতের ছবি গুলো দেখে ফেলে। আমি চাইনা আয়াস দেখুক সেগুলা।আয়াস দূর থেকে শুনেছে আমার রিলেশন এর কথা কিন্তু সেটা আমার অতীত আর সেই অতিত আমি আয়াসের সামনে এনে কষ্ট দিতে চাইনা।কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।আয়াস আমার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে মৃদু মৃদু কন্ঠে বলছে,
“আমার বউটা এখানে বসে কি করছে।এ বাড়িতে আসার পর আর বউ এর মুখ টা একটা বার ও দেখতে পেলাম।আহা!কি সুগন্ধি তেল লাগিয়েছো চুলে।ঘ্রাণে সারা শরীর ময় ময় করছে।”
আমি জানি আয়াস ইজিলি আমাকে ছাড়বে না।সহযে যাবে ও না।টেনশনে খুব জোরে রিয়্যাক্ত করে ফেললাম।আয়াস কে খুব জোরে ঝাড়ি মেরে ফেলে দিলাম।ভীষণ রেগে আর বিরক্ত হয়ে বললাম,
“সব সময় এসব ভালো লাগেনা।আপনাকেও বুঝতে হবে আমার সব সময় এসব রোমান্টিকতা পছন্দ নয়।”
আয়াস কিছুই না বলে মন খারাপ করে চুপচপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আয়াস রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি সমস্ত ছবি আর চিঠিগুলো পু* ড়িয়ে ফেললাম।মনে হলো অনেক বড় একটা ঝামেলা থেকে মুক্তি পেলাম।তবে আয়াস এর সাথে কি খুব বেশী রিয়্যাক্ট করে ফেললাম।
চলবে,,
(
(