তুমিময় বসন্ত পর্ব -৩৭+৩৮

#তুমিময়_বসন্ত
৩৭+৩৮
#writer_Mousumi_Akter

সারারাত ঘুম হয়নি আমার।সারারাত ফোন এর টাইম দেখেছি।আর আরহী কতদূর এসছে খোজ নিয়েছি।কি ভীষণ অস্হিরতা নিজের ভেতর কাউকে বোঝাতে পারবোনা।ভালবাসাটা আজ হয়তো নেই তবুও খারাপ লাগছে অভির জন্য।আমার জন্য আজ অভি কতটা কষ্ট পাচ্ছে।সেদিন আমিও এতটায় কষ্ট পেয়েছিলাম।আজ অভির কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও অভিকে কষ্ট পেতে হচ্ছে।কিন্তু আমার যে কিছুই আর করার নেই।অভি বললো আরহী আর আয়াস দুজনে মিলে প্লানফুলি আমাদের আলাদা করেছে।এটা কি অভি সত্য বললো।অভি কাল রাতে অনেক গুলা মেসেজ করেছে।কাল রাতে বাধ্য হয়ে অভিকে হোয়াটস এপ্স নাম্বার দিয়েছিলাম
সেখানে অভি আরহীর কিছু মেসেজের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছে।যেখানে স্পষ্ট ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে সব কিছু আরহী প্লান করেই করেছে।কিন্তু কেনো?কি উদ্দেশ্য ছিলো আরহীর।আরহী কেনো এমন করলো।কেনো অভির থেকে আমাকে আলাদা করলো।কিছু না কিছু কারণ তো আছে।একটা স্কিনশট এ দেখলাম আরহীর মেসেজ,’কি অভি বলেছিলাম না আমি বেঁচে থাকতে মুগ্ধতা তোমার হবেনা।’
আরহী আমার বিয়ের প্রথম থেকে কেমন সন্দেহের।অনেক কিছুই লুকিয়ে গিয়েছে,এড়িয়ে গিয়েছে।এমন অনেক কিছুও আছে যা সন্দেহজনক।সব কিছু আরহী জানে।মা বাবা আর আমার জন্ম নিয়েও কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে।কেউ কি কিছুই আমাকে বলবে না।হয় আমাকে এবার সব টা বলবে না হলে সবাই ছেড়ে যেদিকে মন চাই সেদিকে চলে যাবো।

ভোর পাঁচ টায় আরহী আমাদের গেটে এসে কল করলো।আমি আরহীর কল পেয়েই ছুটে গেলাম গেটের কাছে।হাতে ছোট একটা কাপড়ের ব্যাগ, চোখে চশমা,জিন্স, টপ্স পরে দাঁড়িয়ে আছে আরহী।আমাকে উন্মা* দের মতো ছুটে আসতে দেখে আরহী হাতের ব্যাগ টা ছেড়ে দিলো।ব্যাগ টা নিচে পড়ে গেলো।আমি আরহীকে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।আরহী খানিক টা অবাক হয়ে গেলো।আমাকে শান্ত হতে বলে বললো,

‘আচ্ছা কাঁদিস না বাবু।আমি এসছি তো তাইনা।সব ঠিক হয়ে যাবে।’

‘তুই অনেক বড় মিথ্যুক আরহী অনেক বড় মিথ্যুক।’

‘কি করলাম আমি মুগ্ধ।’

আরহী কে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে বললাম,

‘প্লিজ হেল্প মি!’

‘হেল্প করতেই তো এসছি।ভয় পাচ্ছিস কেনো?’

‘ভয় পাবোনা।যার চারদিকে সব কিছু মিথ্যা তাকে তো সারাক্ষণ ভয়েই থাকতে হয়। ‘

‘কি হয়েছে মুগ্ধ।’

‘আমাকে অভির থেকে আলাদা করেছিস কেনো?’

‘আমি কি করেছি।’

‘আজ ও মিথ্যা বলবি।আমাকে সব সত্য না বললে আমি এইবার সুই* সাইড করে নিবো।আমি আর পারছি না আরহী।আর কত নাটক করবি আমার সাথে।কেনো এমন করছিস।কেনো অভির থেকে আলাদা করলি।’

‘আচ্ছা অভির কাছে ফিরে যেতে চাস।যা তাহলে আজ কেউ তোকে আটকাবে না।’

‘আমি অভির কাছে যেতে চাইনা।কিন্তু এটা জানতে চাচ্ছি এসবের কি কারণ ছিলো।’

‘অভি তোর জন্য পারফেক্ট ছিলোনা তাই।’

‘কিন্তু কেনো?’

‘অভি তোর পাস্ট এই ব্যাপারে ভেবে আর কি হবে।’

‘আমি অভিকে ভয় পাচ্ছি আরহী।
ভয় পাচ্ছি রিলেশন এর সময় কত ছবি তুলেছি এক সাথে সেসব আয়াস কে দেখালে আমার খারাপ লাগবে।তাছাড়া আয়াস যদি অন্য কিছু ভাবে।তাই আমাকে জানতে হবে কেনো এসব করলি তুই।’

‘কিছুই ভাববে না ট্রাস্ট মি!’

‘তাহলে অভিকে এখন কি বলবো আমি।’

‘অভিকে যা বলার আমি বলবো।আমি তো এসছি অভির সাথেই দেখা করতে।’

‘অভি কারো কথা শুনবে না।অভি শেষ হয়ে যাবে।নিজেকে আঘাতের উপর আঘাত দিচ্ছে।’

‘অভিকে নিয়ে ভাবলে আয়াস শেষ হবে।সেটা সহ্য করতে পারবি।’

‘কিন্তু অভির জন্য খারাপ লাগছে আমার আরহী?’

‘হুয়াই?’

‘অভি বিবাহিত নয় আরহী।আমি অকারণ ভুল বুঝেছিলাম অভিকে।’

‘এখনো ভালবাসিস অভিকে? ‘

‘না আরহী একটুও না।’

‘তাহলে খারাপ লাগছে কেনো?’

‘ছেলেটাকে কিন্তু আমি ই ঠকিয়েছি।সারারত বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো।নিজেকে আঘাতে আঘাতে শে*ষ করে ফেলেছে।এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে কারো জীবন নষ্টের কারণ আমি।’

‘এর মানে এটাই দাঁড়ায় তোর পূরণো প্রেম জেগে উঠছে আবার।বাই দ্যা ওয়ে হয়তো অভি ও কারো জীবন নষ্টের কারণ।’

‘না জাগছে না।তবে এটা তো সত্য একদিন আমি অভিকে ভালাবেসেছিলাম।ওর ক্ষতি হোক সেটাও চাইছি না আমি।তাছাড়া অভির তো কোনো দোষ ছিলো না।কেউ বা কারা অভির বিরুদ্ধে আমার কাছে ষড়যন্ত্র করেছে।অভিকে অকারণ ভুল বুঝেছি আমি।অভি কারো জীবন নষ্টের কারণ কিভাবে হবে।আমি অভির প্রথম ভালবাসা।’

‘ওভার কনফিডেন্স সামটাইমস কিল আস মুগ্ধ।এনি ওয়ে তুই এখন কি চাইছিস মুগ্ধ।’

‘অভি দেখা করতে চাইছে আমার সাথে।আমি ওর সাথে দেখা করে বুঝিয়ে বলতে চাই ও যা চাইছে সেটা আর সম্ভব নয়।ও যেনো আর কষ্ট না পায়।’

‘তাহলে আমাকে এখানে ডেকেছিস কেনো?’

‘তুই আমার সাথে যাবি তাই।একা যেতে সাহস পাচ্ছিনা। ‘

‘ওকে ফাইন অভিকে মেসেজ টাইম জানিয়ে দে।আমরা আজ মিট করছি অভির সাথে।’

সকালে আরহী কে সাথে নিয়ে রুমে প্রবেশ করার সময় আশ্চর্যজনক একটা জিনিস দেখতে পেলাম।কুসুম ভাবিদের ফ্ল্যাট টা আমাদের পাশেই।ভাইয়ার ঘর থেকে হাসাহাসির শব্দ আসছে।তাও একটা মেয়ের কন্ঠ শোনা যাচ্ছে।কুসুম ভাবি তো বাসায় নেই তাহলে কে।আরহী কে বললাম ভেতরে যা গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নে আমি আসছি।আরহী ভেতরে গেলে আমি কুসুম ভাবিদের বেড রুমে উঁকি দিলাম।উঁকি দিয়ে বেশ অবাক হলাম নতুন সে কাজের মহিলা আর কুসুম ভাবির হাজবেন্ড আপত্তিকর অবস্থায় ঘরের মাঝে আছে।দেখে পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠলো।এটাও সম্ভব।কুসুম ভাবিকে যে মানুষ চোখে হারায় সে কিনা একটা কাজের মহিলার সাথে এমন আপত্তিকর অবস্থায় ভাবতেই শরীর শিউরে উঠলো।মানুষ এমন কিভাবে হতে পারে।ছিঃতাই বলে কাজের মহিলার সাথে এসব করবে।আমার কি প্রতিবাদ করা উচিত।এক্ষুনি আমি কুসুম ভাবিকে ফোন করে জানাবো।কিন্তু ভাবি তো অসুস্থ মানুষ এটা কি জানানো ঠিক হবে।যদি প্রেসার বেড়ে যদি ভাবির কিছু হয়।তাহলে কি হবে।কিন্তু আমি এটা সহ্য করতে পারছি না।এসব অন্যায় তো দেখেও চুপ থাকা আরেকটা বড় অন্যায়।এই কাজের মহিলা আজ বের হ আমি আজ তোকে দেখে নিচ্ছি।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমের মধ্য প্রবেশ করলাম।কাল রাতে আয়াস আলু ভর্তা আর মাছ ভাজি করতে গিয়ে তেলের ছেটা লেগে হাত পুড়ে গিয়েছে।পোড়া মলম রুমেই ছিলো নিয়ে আয়াসের হাতে আস্তে করে লাগিয়ে দিয়ে আয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।এই মানুষ টা সত্যি আমাকে অনেক ভালবাসে বরং একটু বেশী ভালবাসে।আয়াসের কপালে চুমু দিয়ে উঠে যেতেই আয়াস আমার হাত টেনে ধরে কাছে নিয়ে বললো,

‘সকাল সকাল বউ এর এত মিষ্টি আদর। দিন টা ই সুন্দর যাবে আজ।’

‘আপনি জেগে আছেন।’

‘হ্যাঁ মাত্র ঘুম ভাঙলো কারো ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ায়।’

‘ধ্যাত।’

‘এসেছে তোমার বোন।’

‘আপনি কি জানতেন বোন আসবে।’

‘হ্যাঁ তোমার খালামনি ফোন দিয়ে বললো,আরহী যাচ্ছে।’

‘আমাকে তো বললেন না। ‘

‘বললাম না বিকজ না জানার ভান ধরছিলাম।আমি অনেক কিছুই জানি বাট না জানার ভান ধরি।’

‘মানে।’

‘কাছে এসো না,তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে।’

‘কথা ঘোরাচ্ছেন কেনো?’

আয়াস আমাকে ওর কাছে টেনে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,

‘এইযে সারারাত চিন্তায় ঘুমোও নি আমি সেটা জানি।অশান্তিতে রাতে ঘুমোও নি দেখে আমিও ঘুমোয় নি।আমি তো সব ই জানি।শুধু দেখছিলাম তুমি নিজ থেকে কিছু বলো কিনা।আরহীকে সেই গাজিপুর থেকে নিয়ে এলে অথচ আমাকে কিছুই বললে না।আচ্ছা আমি কি শুধুই তোমার স্বামি নাকি একজন ভালো বন্ধু ও।কিছুই কি শেয়ার করতে পারো না।আমাকে কি বন্ধু ভাবতে পারোনা।তোমার বিপদে সবার আগে কি আমাকে স্মারন করতে পারোনা।তোমার এক্স অভি আমার ফ্ল্যাটে এসছিলো আর এটা আমি জানবো না তাই কখনো হয়।এটা একটা অফিসারের বাসা এখানে সিসি ক্যামেরা আছে গেট থেকে পুরা বাড়ি পর্যন্ত।তাছাড়া এ বাসায় কারো প্রবেশের অনুমতি নেই আমার পারমিশন ছাড়া।অভি কিভাবে প্রবেশ করলো।আমি দাঁরোয়ান চাচাকে বলেছিলাম ফোন করে অভিকে ঢুকতে দিতে।আমার জীবন আমি আর পাঁচজনের মতো হতে দিবোনা মুগ্ধতা।বউ এর এক্স বিএফ বউকে ভয় দেখাবে আর আমি সেটা মাথা পেতে মেনে নিবো এটা কি সম্ভব।রিলেশন ছিলো তো কি হইছে।তুমি কেনো ভয় পাও বলোতো।এক্স বিএফ এর সাথে অনেক কিছুই থাকতে পারে কারণ তখন তাকে ভালবাসতে তাকে ট্রাস্ট করতে। তার সাথে বিয়ে হবে এমন ই ভাবতে।আমি আরহীর থেকে সব জেনেই তোমাকে বিয়ে করেছি।প্রাক্তণ এর সাথে কি হয়েছিলো সেটা খুব ক্লোজ কিছু হলেও আই ডোন্ট মাইন্ড।তুমি বিয়ের পর কিছু করলে আমি ক্ষমা করবো না এটা কিন্তু ঠিক।তাছাড়া তোমার অতিত আরো খারাপ হলেও আমার তোমাকেই বিয়ে করতে হতো। ‘

আয়াস এর কথা শুনে আমি ভীষণ অবাক হয়ে আয়াসের দিকে তাকালাম।আমার মুখে কোনো কথা নেই।কেমন যেন মূর্তির ন্যায় হয়ে গেলাম আমি।যার ভ*য়ে সব লুকানোর চেষ্টা করছি সে আসলে সব ই জানে।

আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘অবাক হবার কিচ্ছুই নেই।আমি চাইলেই অভিকে কাল হাতে নাতে ধরে মা*রতে পারতাম।কিন্তু মা*রিনি।কেননা তোমার এখনো জানার অনেক কিছু বাকি আছে।তোমাকে স্ট্রং হতে হবে।তোমার জীবনের ভয়ংকর এক অতীতের মুখোমুখি তোমাকে হতে হবে। ‘

আয়াসের কথা শুনে হৃদপিন্ড আজান ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।আমি আয়াস এর৷ কাছ থেকে খানিক টা দূরে এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম।আয়াস ও বিছানা ছেড়ে উঠে এলো।টেনশনে গলা শুকিয়ে আসছে আমার।কি অতীত আছে আমার।তা কি খুব খারাপ।আরহী চেঞ্জ করে আমার কাছে এসে বললো,

‘তোর সাথে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি মুগ্ধতা।কথা গুলো অনেক কঠিন তোকে কিন্তু সহ্য করতে হবে।’

‘কি কথা।’

‘ আয়াস ভাইয়ার সামনেই বলি।ভাইয়া আসলে সব টায় জানেন।’

আরহী এবার ওর ফোন থেকে কিছু ছবি বের করে দেখালো আর বললো,

‘তুই কি এই ছবি গুলো দেখেছিলি।’

ছবিগুলো দেখে সত্যি অবাক হলাম।অভির ওয়াইফ বলে পরিচয় দেওয়া মেয়েটি এই ছবি গুলো ই দেখিয়েছিলো।এইতো সেই ছবি পাশে অভি বাট মেয়েটির মুখে স্টিকার মারা।আমি এক নজরে তাকিয়ে আছি ছবি গুলোর দিকে।আরহী ক্রামগত দেখিয়ে যাচ্ছে ছবি।আমি তাকিয়ে আছি আরহীর দিকে।আরহী আমাকে বললো,সেদিন যদি ছবির মেয়েটার ড্রেসগুলা ভালোভাবে দেখতি তাহলে অন্তত কিছুটা বুঝতে পারতি।ওয়েটা ক্লিয়ার করে দেখায় তোকে পুরা ব্যাপার টা।আরহী এবার স্টিকার ছাড়া ছবি দেখালো।এবার আমি অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলাম।

‘আরহীর দিকে তাকিয়ে বললাম,তুই,তুই অভির সাথে? ‘

‘সেদিনের স্টিকার মুখে মারা মেয়েটা আমি ছিলাম।’

‘তুই ছিলি মানে আরহী।আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।’

মুগ্ধতা তুই জানতে চাইছিলি না আমি কিসের রিভেঞ্জ নিয়েছিলাম তোর বিয়ে দিয়ে।আমি তোকে অনেক মিথ্যা বলে এড়িয়ে গিয়েছিলাম।তুই অনেকবার ভেবেছিস আমার রিলেশন আয়াসের সাথে।আমি আয়াসের বিরুদ্ধে বা অন্য কোনো রিভেঞ্জ নিতে তোর বিয়ে দিয়েছি।আসলে সেসব কিছুই না।আমার রিলেশন ছিলো অভির সাথে।অভি নামক অমানুষ কে আমি ভালবেসেছিলাম মুগ্ধ।নিজের থেকে বেশী ভালবাসতাম আমি অভিকে।আমিও ভাবতাম অভি ও আমাকে ঠিক ততটায় ভালবাসে।সব কিছু ঠিকঠাক চলছিলো একদিন অভি হোয়াটস এপ্স এ তোর ছবি দেখে আর জিজ্ঞেস করে মেয়েটা কে?আমি হাসি মুখে বলেছিলাম আমার কাজিন।অভি আর কিছুই জিজ্ঞেস করে নি।আমার ফোন থেকেই নাম্বার নিয়েছিলো আমি বুঝতে পারিনি।ধীরে ধীরে অভি আমাকে ইগনোর শুরু করেছিলো।ভীষণ কষ্ট হতো মুগ্ধ।তুই তো জানিস অভি কতটা এক্সপার্ট মেয়ে পটাতে।ওর মিষ্টি মধুর কথা গুলো আমি ভুলতে পারতাম না।দিনের পর দিন অভি আমাকে ইগনোর শুরু করলো।আমি নিতে পারছিলাম না।কেনো ইগনোর করে কি জন্য ইগনোর করে কিছুই বুঝতাম না।এরপর ছয়মাস কেটে গেলো।হঠাত তুই পরিচয় করালি তোর বিএফ এর সাথে।তোর বিএফ এর জায়গা অভিকে দেখে পায়ের নিচের মাটি সরে গেছিলো আমার।তোর মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ছিলো। তুই সারাক্ষণ আমার কানের কাছে অভির গুনগান করতিস।আমার দম বন্ধ কষ্ট হতো কিন্তু আমি কিছুই বলতাম না।কেননা আমি চাইনি কখনো তোর কষ্ট হোক।তোর মুখের হাসি নষ্ট হোক।ভালবাসার যে কষ্ট টা আমি পাচ্ছিলাম তোকে দিতে চাইনি আমি।অভি আমার মুখের উপর বলে দিলো সে আমি নই তোকে ভালবাসে।কষ্ট হয়েছিলো কিন্তু আমি তখন ও কোনো রিভেঞ্জ নেই নি।তোর সুখের থেকে বড় আর কি হতে পারে আমার কাছে মুগ্ধ।এর পর ই জানতে পারি অভি এর আগেও অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন করেছে।ঠিক আমার মতো একটু বেশী ক্লোজ ভাবে মিশে সবার ক্ষতি করেছে।আমি তখন ভেবেছিলাম অভির সাথে তোর বিয়ে হতে দিবোনা।আমার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট কি ছিলো জানিস।অভি যে নাম্বার দিয়ে তোর সাথে যোগাযোগ করতো সেই সিম টা আমার স্মার্ট কার্ড দিয়ে কেনা।আর আমি অভির সাথে দেখা করে কৌশলে ওর ফোনটা চু*রি করে নিয়ে আসি।আমি জানতাম তুই যোগাযোগ করবি অভির সাথে।আর তোর যোগাযোগ অফ করতেই এত কিছু করতে হয়েছে।তুই অভিকে মেসেজ করলে আমি আমার বান্ধবীকে দিয়ে তোকে ফোন করাই।আর তোকে এ মিথ্যা গুলো বলি।কেননা আমি চেয়েছিয়াম তোর জীবনের সুখ। আমি চেয়েছিলাম আয়াস ভাইয়ার সাথে সুখি হ তুই।আমি যা৷ করেছি তোর সুখের জন্য।শুধু এটাই কারণ ছিলো তাইনা।অভির কথা যখন বাড়িতে জানালি তুই তখন খোজ নিয়ে অভি সম্পর্কে ভয়ংকর এক সত্য বেরিয়ে আসে।

‘কি সত্য।’

‘অভির বাবা ই তোর মা বাবার খু*নি।’

‘মানে?আমার মা বাবা তো জীবীত।’

‘আমাদের নানা নানুর দুইটা মেয়ে নয় তিনটা মেয়ে ছিলো।তুই মারুফ আনান আর রুহানা আনান এর মেয়ে আহিয়্যাত আনান মুগ্ধতা।’

‘হোয়াট?’

‘আয়াস ভাইয়ার আম্মু তোকে যে বিভৎস খু*নের বর্ণনা দিয়েছিলো ওটা আর কেউ নয় আমাদের মেঝ খালামনি আর খালু।ওরাই তোর মা বাবা ছিলো।
খালামনি কখনো তার শ্বশুর বাড়িতে যায় নি।কারণ তাদের লাভ ম্যারেজ ছিলো।আয়াস ভাইয়ার আম্মা তো তোকে সব টায় বলেছে।সে রাত ছিলো কাল রাত্রী আমাদের পরিবারের জন্য।যেদিন ছোট্ট তোকে রেখে খালামনি আর খালু সবাইকে ছেড়ে চলে যান।ছোট খালামনি অবিবাহিত অবস্থায় মা হিসাবে তোকে কোলে তুলে নিয়েছিলো।খালু তোকে সহ বিয়ে করেছিলো।অভির বাবা তোকেও খু*ন করার জন্য খুজছিলো।তাই আয়াস ভাইয়ার আম্মা তোকে তাদের কাছে রাখেনি।তোকে ছোট খালামনি আর খালুর হাতে তুলে দেন।খালু যেখানে জব করতো সেখানেই তোকে নিয়ে মানুষ করেছে।অনেকে বলতো তুই ছোট খালামনি আর খালুর অবৈধ সন্তান।বাবার বাড়ি থেকে সন্তান সহ কারো সংসারে যাওয়া কম কথা নয়।মা বাবার অভাব তোকে বুঝতে দিবেনা বলে তোকে নিজের সন্তান হিসাবে মানুষ করেছেন। তুই আয়াস ভাইয়ার মামাতো বোন।একমাত্র মামার একমাত্র মেয়ে।আয়াস ভাইয়ার আম্মা একমাত্র ভাইকে হারিয়ে সব সময় চেয়েছে ভাই এর মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করতে।তোর জীবনের এই ভয়ংকর অতিতের জন্য সবাই তোকে সব সময় আগলে রেখেছে।আমি অবাক হই ছোট খালামনি আর খালুকে দেখে।কি নিঁখুত ভালবাসা তাদের তোর প্রতি।এখন তুই বল মুগ্ধ যে পরিবারের জন্য তোকে এত গুলো বছর পালিয়ে মানুষ করতে হয়েছে সেই পরিবারে তোকে কিভাবে বউ করে পাঠাতো ফ্যামিলির মানুষ জন।তোর মা-বাবার খু*নি পরিবার ওরা।তুই আজ সব সত্য জেনে কি বলবি আমরা কেউ কোনো ভুল করেছি।দুটো পরিবারের মানুষের দুজন প্রিয়জন কেড়ে নিয়েছিলো ওরা।উপযূক্ত প্রমানের অভাবে আজ ও ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা।মুগ্ধ তোর মা -বাবার ঘাতক আজ ও ঘুরে বেড়াচ্ছে।কোনো শাস্তি হয়নি ওদের।’

মাথাটা ভয়ানক চক্কর দিয়ে উঠলো।চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো আমার।চারদিক ভো ভো করে ঘুরছে। আচমকা মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে গেলাম আমি।

চলবে?..

()

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here