তুমিময় বসন্ত পর্ব -৩৯+৪০+৪১

#তুমিময়_বসন্ত
৩৯.
#writer_Mousumi_Akter

চোখ খুলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম ভিন্ন এক জায়গায়।ঝাপসা চোখ দুটো পুরাপুরি স্পষ্ট হতেই কিছুটা বোধগম্য হলো সব কিছু।এটা হসপিটালের কেবিন রুম দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আমার হাতে স্যালাইন ধরানো, পাশে অক্সিজেন মাস্ক।মাথাটা ভীষণ ভারী হয়ে আছে আমার।আম্মু আর বাবা দুজনে আমার দুই হাত ধরে রেখেছে তাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অঝরে।খালামনি আর খালু ও পাশে আছে।আয়াসের আম্মা আর বাবা আমার মাথার কাছে বসে আছে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আয়াসের আম্মার চোখে বৃষ্টির ঢ্ল নেমেছে।অয়ন আর আরহী দাঁড়িয়ে আছে স্রুতির হাত ধরে।মামা বাড়ি থেকে মামা মামি ও এসছে।আয়াস নিথর হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। উস্কো খুসকো চুল,শার্টের বোতাম খোলা,লাল চোখের মনি।আয়াসের দৃষ্টি নড়ছে না, পলকহীন ভাবে মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি চোখ খুলতেই সব থেকে বেশী কাঁদলো বাবা আর আম্মু সাথে আয়াসের আম্মা।আম্মু আর বাবার কাঁন্না থামানোই যাচ্ছে না।এমন কাঁন্না আমার বয়সে আমি দেখি নি। আম্মু কিছুই বলতে পারছে না শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।তাদের কাঁন্না দেখে আমি চিৎকার করে কাঁদতে পারছি না।তবে ভেতর টা জ্বলে যাচ্ছে।সবাই ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।আম্মু,আয়াসের আম্মা,খালামনি বাবা সবাই আমাকে নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।আমার মাথায় হাত বুলোচ্ছে কেউ,হাত মালিস করে দিচ্ছে আর নিজেরা বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে।আমার কেমন লাগছে,ভালো লাগছে কিনা।এসব কোনো কিছুই যেনো আমার বোধগম্য হচ্ছে না।আরহীর কথা গুলো সবার কথা ভেদ করে মস্তিষ্কের নিউরণে নিউরণে ছুটে বেড়াচ্ছে।শিরা উপশিরায় যেনো র**ক্তে** সাথে ছুটছে সেই বিষাক্ত কথা গুলো।মানুষের জীবনের অতীত এমন ও ভয়ংকর হতে পারে।

বাবা আমার হাত ধরে বললো,

‘মা আমার হৃদয়ে সব থেকে বেশী স্নেহের জায়গা জুড়ে শুধু তুমি আছো।তোমার কিছু হলে তোমার আম্মু আর আমিও শে*ষ হয়ে যাবো।এই তিনদিন তোমার কোনো জ্ঞান ছিলো না।তোমার আম্মু একভাবে কেঁদেছে তোমার আম্মু কতবার সেন্সলেস হয়েছে ঠিক নেই।তোমার আম্মু আর আমার জন্য হলেও তোমাকে শক্ত হতে হবে।তুমি যদি ভুলে যাও আমরা তোমার মা বাবা নই আমাদের কি হবে তুমি বুঝতে পারছো।তোমাকে আগলে রাখতে অনেক যুদ্ধ করেছি।তুমি আমাদের ই মেয়ে মা।’

বাবার দিকে বেদনাদায়ক দৃষ্টিতে তাকালাম উত্তর দিলাম না।

মুহুর্তের মাঝে আমার মনের মাঝে শুরু হলো বেদনার মহাপ্রলয়।আমার অস্তিত্ব সব যেনো বিলিয়ে গেলো।নিজের কল্পনায় চলে গেলাম সেই অতীতে।মারুফ আনান আর রুহানা আনান এর কবরের কথা বারবার মনে পড়ছে।আমার মা বাবা ওখানে সুয়ে আছি।আমি কোনদিন বুঝতেও পারলাম না যে আমার সব থেকে প্রিয় দুইটা মানুষ আমাকে ছেড়ে বহুদুর চলে গিয়েছে।স্বাভাবিকভাবে যদি তাদের মৃ*ত্যু হতো আমি মেনে নিতাম।কিন্তু আমি এটা মেনে নিতে পারছি আমার মা বাবাকে ভীষণ কষ্ট দিয়ে সময় হওয়ার আগেই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে।চারদিকে যে সবাই এত কাঁন্নাকাটি করছে আমার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।আমার মন, চিন্তা,ভাবনা সবটা ই আমার অতীতে প্রবেশ করেছে।আয়াসের আম্মা আমাকে ডাকছে,খালামনি,আম্মু সবাই ডাকছে কোনোকিছুতে কোনো খেয়াল নেই।কেমন ছিলো আমার আম্মু কেমন ছিলো আমার বাবা।চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে আমার।

অনেক সময় পর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে জোরে কেঁদে দিয়ে বললাম,

‘আম্মু,আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আম্মু।তুমি ই তো আমার আম্মু আমি তো কোনদিন মায়ের অভাব বোধ করতে পারিনি তাহলে কেনো আমাকে এত ভয়ানক সত্য জানালে।যারা আমাকে জন্ম দিয়েছিলো তারা নেই, এটা আমি মেনে নিতে পারছি না।আজ মনে হচ্ছে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই।আমার নিজের মা কি দেখতে তোমার মতোই ছিলো নাকি খালামনির মতো ছিলো।আমি মনে হয় দমবন্ধ হয়েই মা*রা যাবো। আমার একটুও সহ্য হচ্ছেনা এই কষ্ট।’

‘আমি তোমার খালামনি কেউ ভালো নেই।সে তো আমাদের ই বোন ছিলো। বোন হারাবোর কষ্ট আজ ঊনিশ টা বছর আমাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।তুই চোখের সামনে থাকলে সেকেন্ডে সেকেন্ডে মনে করিয়ে দেয় তোর মায়ের কথা।তুই দেখতে অবিকল তোর মায়ের মতো।নিজের বোনকে হারিয়ে তুই ছিলি আমাদের আর আয়াসদের ফ্যামিলির একমাত্র সেতুবন্ধন।’

আয়াসের আম্মার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে বললাম,

‘আপনি আমার ফুপ্পি হন।আগে বলেন নি কেনো?’

‘আজ ঊনিশ টা বছর একমাত্র ভাইকে হারিয়ে সেই সাথে মা বাবা সব হারিয়ে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করেছি তোমার বড় হওয়ার জন্য।কবে তুমি বড় হবে আমার কাছে নিয়ে আসবো।তোমাকে কাছে পেয়ে একটু হলেও ভাই কে কাছে পাই আমি।তুমি এভাবে ভেঙে পড়ো না মা।তুমি ছাড়া আমাদের কেউ নেই।’

অতীত টা অনেক বেশী ভয়ংকর হলেও বর্তমান টা অনেক সুন্দর আমার।আমার আম্মু আর বাবা যে নিজের মা বাবা না সেটা কখনোই ফিল হয়নি আমার।কিন্তু আজ সবটা জানার পরে ভালো নেই আমি।শুধু আমি নয় আমার মতো আমার পরিবারের প্রতিটা মানুষ ই আমার মা -বাবাকে হারিয়ে কেউ ভালো নেই।

সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলে আয়াস আমার পাশে এসে বসলো।

আমার হাত দুটো শক্তভাবে চেপে ধরে বললো,

‘নিজেকে কখনো একা ভেবোনা মুগ্ধপরী।অতীতের সত্য তোমার জানা প্র‍য়োজন ছিলো।তার মানে এইনা তুমি সেটা ভেবে কষ্টে থাকবে।আমার আম্মা তোমার ফুপ্পি হয়। আমি নিজে দেখেছি রাতের পর রাত তোমার বাবার শোকে ঘুমোয় নি।ছটফট করেছে,কেঁদেছে।আমার আম্মা তোমার ফুপ্পি হলেও তোমার মা।চারপাশে আমরা সবাই আছি।তুমি কি জানো তুমি এখন কোথায় আছো।ঢাকায় মেডিকেল হসপিটাল এ।তিনদিন চোখ খোলোনি তুমি।পরিবারের সবাই তোমাকে কতটা ভালবাসে আমি এইবার প্রুভ পেয়েছি।তবে আমার ও ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু ভয় পাচ্ছিলাম না।আমি জানতাম তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।আমার জন্য হলেও সুস্থ হবে।পরিবারের সবার জন্য হলেও সুস্থ হবে।তোমার একটা মিনি স্ট্রোক হয়েছিলো ব্রেইনে।এই তিনদিন আমি বুঝেছি তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি হয়ে যায়।তুমি আমার শক্তি মুগ্ধতা।প্লিজ ভেঙে পড়োনা আর।’

———————————————————–
হসপিটাল থেকে ফেরার সাতদিন পর।আমি আম্মুর কাছেই আছি।এখন সম্পূর্ণ সুস্থ লাগছে।আরহী আমার সাথেই আছে সারাক্ষণ আমাকে মেন্টাল সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।আয়াস যশোর গেছিলো আজ আবার নাইট পাশে আসবে।আয়াস কে নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই আজ আমার। সন্ধ্যায় আয়াস আম্মুদের বাসায় এসছে।আমি তখন রেডি হচ্ছিলাম।খুব সাজগোজ করেছি আজ।এত বেশী আগে কখনোই সাজিনি আমি।

আয়াস এসে আমাকে রেডি হতে দেখে বললো,

‘এত গরজিয়াস ভাবে সেজেছো আজ।এমনিতেই সুন্দরী তার উপর এত সেজে কি আমাকে পা*গ*ল টাগল বানাতে চাও।’

‘মৃদু হেসে বললাম, এ বড় ভয়ংকর সাজ।’

‘তাই।’

‘হুম একজায়গা যাচ্ছি।’

‘আচ্ছা তাই কোথায়?’

‘আমার প্রাক্তন এর সাথে দেখা করতে।’

‘মজা করোনা।সত্যি বলো।’

‘সত্যি অভির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।তুমি রেস্ট নাও আমি যাবো আর আসবো।’

‘কি ব্যাপার বলোতো।তোমাকে অনেক ম্যাচুরট লাগছে হঠাত।আমাকে তুমি করে ডাকছো, আবার স্ট্রেইট বলে দিচ্ছো তুমি তোমার প্রাক্তণ এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছো।কাহিনী কি বেবিডল।’

‘কোনো কাহিনী নেই যাচ্ছি তাই সত্য কথা বলছি।’

‘আমি ও যাবো।তুমি একা ওর সাথে যাবা।’

‘আমি পালিয়ে যাচ্ছিনা কোথাও আয়াস।আর পালিয়ে গেলে তোমাকে এইভাবে বলে যেতাম না।মুগ্ধতা ফিরে আসবে তোমার কাছে।তুমি শুধু ওয়েট করো।’

‘আচ্ছা কতক্ষণ পরে আসবে।’

‘দুই ঘন্টা।’

‘এই রাত তুমি একা যাবে।আমার মন সায় দিচ্ছে না।’

‘আরহী যাচ্ছে সাথে।তুমি কিন্তু একটুও চিন্তা করবা না আয়াস বাবু।তোমার বউ ফিরে আসবে।কাছে এসো তো কপাল টা এগোও।’

আয়াস কপালে এগিয়ে দিলো।

‘কপালে এক নিঃশ্বাসে কতগুলো চুমু দিয়ে বললাম রেস্ট করো আমি আসছি।’

পাশের এলাকার ই একটা রেস্টুরেন্টে অভি অপেক্ষা করছে আমার জন্য।আমি আরহী কে সাথে নিয়ে অভির সাথে দেখা করতে গেলাম।
#তুমিময়_বসন্ত
৪০+৪১
#writer_Mousumi_Akter

আরহীকে সাইডে দাঁড়াতে বলে আমি একাই সাক্ষাত করতে গেলাম অভির সাথে।অভি ক্লান্ত শরীরে বসে আছে আমার জন্য।কৃত্তিম আলোতে অভির চোখ মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।কি অস্হিরতা,আকুলতা অভির চোখে আমার জন্য।এই ছেলে নিশ্চিত আমার জন্য পুরা পৃথিবী ওলট পালট করে ফেলতে পারবে।অভির ঠিক সামনের চেয়ার টাতে আমি বসেছি।বিগত সাতদিন প্রচুর ফোনে কথা বলেছি অভির সাথে।আয়াসের সাথে বিগত সাতদিনে ৫ মিনিট ও কথা হয় নি আমার।রাত দিন চব্বিসঘন্টার বাইশ ঘন্টায় প্রায় অভির সাথে কথা বলেছি।আমি এখন অভির সামনা সামনি বসে আছি।অভির পছন্দের ড্রেস আর অভির পছন্দে সাজ গোজ করেছি।অভি একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে নিয়ে বসে আছে আমার জন্য।আমাকে দেখেই দু’চোখ আনন্দে সিক্ত হলো অভির।আমাকে দেখেই গোলাপ গুলো আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো।আমি গোলাপ গুলো গ্রহন করে ফিঁকে হাসলাম।কিছুক্ষণ দুজন -দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি।এর ই মাঝে কফি চলে এসেছে।আমি অভির হাতের উপর হাত রেখে অভির চোখে চোখ রেখে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।আমি বুঝতে পারছি অস্হিরতায় কাঁপছে অভি।এই মুহুর্ত টা ওর জীবনের বেষ্ট মুহুর্ত।

অভি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললো,’তুমি যে সত্যি সত্যি আসবে আমি ভাবতে পারিনি মুগ্ধ।’

আমিও বেশ ইমোশনাল ভাবে বললাম,

‘তুমি ডাকলে কি আমি না এসে থাকতে পারি অভি।তুমি তো জানতে তোমাকে কত বেশী ভালবাসতাম আমি।আয়াস আমাকে ভুল বুঝিয়ে তোমার থেকে আলাদা করেছিলো।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।’

‘তুমি তাহলে আয়াস কে ডিভোর্স দিয়ে দাও মুগ্ধ।’

‘ডিভোর্স এর কার্যক্রম অলরেডি শুরু হয়েছে।আমাদের ডিভোর্স হলেই আমি তোমার কাছে চলে আসবো।আর এটা ফাইনাল ডিসিশন।’

‘আজ ই তুমি আমার সাথে যাবে মুগ্ধ।তোমাকে আর ফিরে যেতে হবেনা।গেলে যদি আর না আসো।’

‘আজ গিয়ে কি হবে।ডিভোর্স এর আগে গেলে আয়াস মামলা দিবে।তুমি আর আমি দুজন কেই জেলে থাকতে হবে।আমি আয়াসের ঝামেলা মিটিয়ে তোমার সাথে থাকতে চাই অভি।তোমাকে একটা নতুন হাসিখুশি জীবন দিতে চাই।এই নতুন জীবনে কোনো ঝামেলা চাইছি না আমি।আমি খুব চেষ্টা করছি তোমাকে বেটার একটা লাইফ দেওয়ার।যেটা তুমি ডিজার্ভ করো।’

‘খুব দ্রুত এসো মুগ্ধ।তোমাকে ছাড়া একটা সেকেন্ড থাকাও আমার জন্য কষ্টের।’

‘আমাকে খুব ভালবাসো তুমি তাইনা অভি।’

‘এত কিছুর পরেও তোমার সন্দেহ হয়।বলো কি প্রুভ চাও তুমি।’

‘সন্দেহ নেই, তবে একটা কঠিন কাজ যদি তুমি করতে পারো তাহলে আমি বিলিভ করবো।’

‘কি কাজ বলো।তোমার জন্য আমি মানুষ ও খু/ *ন করতে পারবো।’

‘খু*/ ন করতে হবে না।আরে তুমি তো দারুণ জিনিস মনে করালে।জানো অভি বরাবর ই আমার ভিলেন টাইপ ছেলে খুব পছন্দ।যেমন ধরো খুব সহসী টাইপ ছেলে হবে।ছোট বেলায় ড্রিম দেখতাম আমার শ্বশুর কিলার,হাজবেন্ড কিলার,মোট কথা পলিটিশিয়ান ফ্যামিলি আমার খুব পছন্দের। ।আমার তো খুব ইচ্ছা ছিলো কোনো খু*/নি ফ্যামিলিতে বিয়ে করার।কেননা নিঃসন্দেহে তারা অনেক সাহসী।জানি একটা মেয়ের মুখে এটা জঘন্য পছন্দের কথা কিন্তু কি করার।আমার পছন্দ তো এমন ই অভি কি করার বলো। বাট তুমি তো একেবারেই ভেজা বেড়াল।আই থিংক তোমার ফ্যামিলির সবাই ই এমন।একটুও রক্ত গরম না তাদের।কেউ মারলেও প্রতিবাদ করেনা।তোমার থেকে তোমার চাচাতো ভাই রা বেশী সাহসী তাইনা?ইস ওদের কারো সাথে বিয়ে হলে আরো বেশী খুশি হতাম।আমিও লেডি কিলার হতে পারতাম।’

‘অভি মৃদু হেসে বললো,আমার চাচাতো ভাইয়েরা সাহসী।ওরা চলেই তো আমার বাবার সাহসে।মেয়েরা এসব মারামারি খু*/ন খারাপি পছন্দ করেনা বলে আমি তোমাকে কখনো কিছুই বলিনি।আমার বাবার হাতে সব সময় র*ক্তে;র দাগ লেগে থাকে।তার ছেলে আমি, আমাকে কি কম সাহসী মনে হয়।আমার বাবা জাস্ট একটানে গলা আলাদা করে ফেলে।ভাবো তাহলে কেমন পলিটিশিয়ান।মন খারাপ করোনা।তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে আমার সাথে বিয়ে হলে।’

অভি কথা গুলো বেশ প্রাউডের সাথেই বললো।আসলে জানতাম অন্য কারো প্রশংসা করলে আপণ ইচ্ছাতেই সব সত্য বের করবে।তাদের কাজের ক্রেডিট অন্য কেউ নিবে এটা কিভাবে হতে দিবে।

বেশ তাচ্ছিল্যর স্বরে হেসে বললাম,

‘এমন বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলো ক্যান।তোমার বাবা তো ভীতুর ডিম।উনার কাউকে চড় থাপ্পড় মারার সাহস নেই।আমি চোখে দেখলেও বিলিভ করবোনা।আর তুমি কিনা মুখে বলছো তাই আমি মেনে নিবো।আমার কাছে হিরো সাজতে চাইছো তাইনা।’

‘মুগ্ধ তুমি হয়তো জানোনা আমি কার ছেলে তাই এমন কথা বলছো।আসলে কখনো বলতে চাইনি যদি ছেড়ে চলে যাও।প্রতিবছর ইলেকশন এ বাবা কত মানুষ এর গ/ লা আলাদা করে তার ঠিক নেই।’

‘আচ্ছা ইলেকশনে।কোন কোন ইলেকশনে মানুষ মা/র*লো।কই শোনা যায়না তো।’

‘আরে প্রুভ রাখেনিতো।’

‘আমি তো শুনেছি আরো কত বছর আগে তোমার চাচাতো ভাইয়েরা ফখরুল আনান চেয়ারম্যান এর ছেলে বউমাকে মেরেছিলো।শোনার পর থেকেই আমি ক্রাশড।বাট তোমার বাবার ব্যাপারে তো কিছুই শুনিনি।’

‘বারবার চাচাতো ভাইদের কথা বলছো কেনো?ওটা আমার বাবা মে/ রে/ছি/ লো।’অভি আশে পাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে কথাটা বললো।

‘বিলিভ হয়না আমার।ওটা তোমার চাচাতো ভাইয়েরা মে/রে/ছিলো।’

‘আমার বাবা ই মে/রে/ছি/লো।’

‘প্রুভ দেখাতে পারবে।’

‘পারবো?কি প্রুভ চাও।’

‘তোমার বাবার মুখে গল্প শুনে আমাকে ভিডিও করে সেটা পাঠাবে।আমি নিজ চোখে দেখবো তবেই মানবো।’

‘সরি এটা পারবো না। বাই এনি চান্স ভিডিও অন্য কারো হাতে পড়লে সমস্যা আছে।’

‘তার মানে তুমি আমায় সন্দেহ করলে।এর মানে কি আমি কাউকে দেখাবো আশ্চর্য ।’

‘সরি আমি সন্দেহ করিনি।’

‘সন্দেহ না করলে মিথ্যা বলেছো।তুমি জানোনা আমি মিথ্যা কথা কোনদিন পছন্দ করিনা।তোমাকে আমি দুইটা কারণে আজ ছেড়ে গেলাম।এক আমাকে মিথ্যা বলেছো নাহলে আমাকে সন্দেহ করেছো।সব ছেড়েছুড়ে আমি তোমার কাছে এসছিলাম।তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম আমি বাট তুমি ফেইল।আয়াস হলে আমি মুখে যা বলতাম তাই করতো। আরে আয়াস তো নিজে খু*/ন করেও আমার কাছে স্বীকার করে এতটায় ট্রাস্ট করে।সেখানে তুমি কিনা তোমার বাবার ব্যাপারে আমাকে সন্দেহ করছো।’আমি গেলাম অভি,আর জীবনে ফোন বা কল করবা না।’

‘মুগ্ধ যেওনা আমি আজ ই প্রুভ দেখাবো তোমাকে সন্দেহ করিনা।তোমার জন্য এ রকম হাজার টা ভিডিও আমি মেক করতে পারবো।তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব পারবো।’

বেশ ভাব আর মুড নিয়ে অভির কাছ থেকে এলাম।খুব টেনশন হচ্ছে অভি কি কোনো প্রুভ দেখাবে।একমাত্র অভি আছে যাকে ইউজ করে কোনো প্রুভ আমি বের করতে পারি।যতক্ষণ না মা বাবার খু*/নির শাস্তি দিতে পারছি আমার মনে শান্তি নেই।র*ক্ত সেকেন্ডে সেকেন্ডে গর্জন দিয়ে উঠছে।নিজ হাতে শাস্তি দিতে পারলে বেশী শান্তি পেতাম।কিন্তু আমি নিজেও অপরাধী হয়ে যাবো। আমার পরিবারের মানুষ আবার ও অশান্তিতে ভুগবে এটা আমি চাইনা।

বাসায় ফিরে দেখি আয়াস আর শ্রুতি দুজনে বসে গল্প করছে।আমি রুমে প্রবেশ করতেই শ্রুতি বেরিয়ে গেলো।আয়াস আমার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বললো,

‘আমি জানি তুমি যায় করবে ভুল কিছু করবে না।তোমাকে অনেক চিন্তিত লাগছে। কি হয়েছে মুগ্ধতা।’

আসলেই আমি চিন্তা করছি তবে সেটা অভিকে নিয়ে।অভি কি পারবে আমাকে কোনো প্রুভ দেখাতে।আয়াস কে কিছুই বললাম না।আয়াসের বুকে মাথা রেখে বললাম,

‘খুব ক্লান্ত লাগছে আমার।তোমার বুকে কিছুক্ষণ মাথা রেখে ঘুমোতে চাই।’

‘আমার বুক কি কিছুক্ষণের জন্য।তোমার জন্য সারাজীবনের মতো রেজিস্ট্রি করে দেওয়া।সারাজীবন নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারো।’

এরই মাঝে আম্মু আর বাবা ডাকলো খাবার খাওয়ার জন্য।রাতে আয়াসের সাথে সুয়ে আছি।ঘুম নেই চোখে একটুও।আয়াস কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানিনা।নিদ্রাহীন দুটো চোখ সারাক্ষণ ভেবে চলেছে কতটা কষ্ট হয়েছিলো মা-বাবার।নিশ্চয়ই আমাকে খুব মনে পড়ছিলো তাদের।আমাকে দেখার জন্য ছটফট করেছিলো নিশ্চয়ই। তারা ওই সময়ে যে ব্যাথা যে কষ্ট অনুভব করেছি সেইম কষ্ট আজ আমি অনুভব করছি।মধ্য রাতে হোয়াটস এপ্স এ অভি নক দিছে।মেসেজ সিন করতেই অভি আমার মেসেজ করেছে বাবার সাথে অনেকদিন পর আজ আবার ম*দ খেয়েছি।খেতে খেতে সব শুনেছি আর গোপনে ভিডিও করেছি।এইবার তো ট্রাস্ট করো।বলেই ভিডিও সেন্ড করলো।আমার মনের মাঝে চাপা উত্তেজনা কাজ করছে।আর কিছুক্ষণের মাঝে আমার হাতে প্রমান আসবে।আমি সোয়া থেকে উঠে বসলাম। এরপর ই ভিডিও আসলো ফোনে।দেখার আগে সেভ করে রাখলাম।আর আয়াসের নাম্বারে ফরওয়ার্ড করে রাখলাম।কিছুক্ষণের মাঝে অভি ডিলিট করে দিলো।অভি ভেবেছে ডিলিট করে দিয়েছে ভিডিও আর আমার কাছে নেই।

কথায় আছে নারীর জন্য পুরুষের উন্নতি আবার নারীর ফাঁদে পুরুষের সর্বনাশ।আমি জানতাম অভি আমার প্রতি মারাত্মক দূর্বল।সেই দূর্বলতায় অভি আমার কথা শুনতে বাধ্য।আমি জানতাম অভি শুনবেই আমার কথা।কিন্তু এত সহজ ভাবে কাজ টা হবে আমি বুঝতেই পারিনি।অভির বাবা কি জানতো শেষ বয়সে নিজের পাপের মোচন ছেলের করা একটা ভুলের জন্য পাবে।কথায় আছে পাপ বাপ কেও ছাড়ে না।আসলেই উনার পাপ মোচনের সময় হয়ে এসছিলো।ভীষণ খুশিতে আয়াস কে ডেকে তুললাম।সেই রাতেই আয়াস আমি বাবা মা থানায় গেলাম।প্রমান সহ অভিযোগ করে আসলাম।পরেরদিন ই অভির বাবা সহ বাকিদের গ্রেফতার করা হলো।মা বাবার কথা মনে নেই তবে তাদের আত্নার শান্তি আমি দিতে পেরেছি হয়তো।।দুটো পরিবারের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি।সবাই যেনো ভীষণ মানসিক তৃপ্তি পেলো।আর আমি পেলাম এই পৃথিবীর সব থেকে বড় প্রাপ্তি।একটুও খারাপ লাগছে না আজ আর আমার।চারদিকে নিউজে নিউজে ভরে গিয়েছে।হেড লাইনে বড় বড় করে লেখা মারুফ আনান ও তার স্ত্রীর খু*নের ঊনিশ বছর পর তাদের মেয়ে সেই খু*নিদের খুজে প্রমান সহ আইনের আওতায় এনেছে।সারা দেশে এখন এই একটায় নিউজ।উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়ায় আর পুলিশের রিমান্ডের অত্যাচারে পুরো সত্য স্বীকার করে নিলো অভির বাবা সহ বাকিরা।কেটে গেছে আরো দুই মাস। আজ সবাই আমরা আদালতে উপস্হিত।আমাদের একটায় দাবি উপযুক্ত বিচার চাই।জজ সাহেব অভির বাবার ফাঁসির রায় দিলেন এবং সেটা খুব দ্রুত কার্যক্রম হবে বলে জানালেন।আদালতে অভি আর আমি আজ মুখোমুখি।গত দুইমাসে অভি হাজার বার জানতে চেয়েছে আমি কেনো এমন করেছি।কেনো এমন করলাম।আমি কিছুই বলিনি শুধু বলেছি যেদিন তোমার বাবার উপযুক্ত বিচার হবে সেদিন আদালতে দেখা হবে সেদিন বলবো কেনো করেছি এমন।অভি অনেকবার মেসেজ করে জিজ্ঞেস করেছে নিউজের লেখা গুলো কি সত্য।উনারা তোমার মা বাবা কিভাবে হন।আমি কোনো উত্তর দেই নি।আজ দেখা হয়েছে অভির সাথে অভি আর ওর ফ্যামিলির চোখ ভরা পানি।আমি আর আমার ফ্যামিলির মুখে হাসি।এই প্রথম বোধহয় কারো মৃ/ত্যু সংবাদে আমি এতটা খুশি।অভির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি আমি।অভি অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।অভির মনে হাজার ও প্রশ্ন।আমার পাশে আয়াস ও আছে।আমি দুই হাতের তালু ঝাড়তে ঝাড়তে ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,

‘অভি সো সরি প্রাক্তণ।বাপ আর বেটা দুজন কেই শাস্তি দিতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।কেমন লাগছে অভি।কষ্ট কি খুব বেশী হচ্ছে।’

‘তুমি আমার বাবার সাথে এমন কেনো করলে।আমি অনেকবার মেসেজ করেছি কল করেছি তুমি উত্তর দাওনি।আজ অন্তত আমি জানতে চাই।’

‘বাবার জন্য খুব দরদ হচ্ছে বুঝি।কষ্ট হচ্ছে খুব।তোর বাবার জন্য আমি আর আমার ফ্যামিলির মানুষের এর থেকে হাজারগুন বেশী কষ্ট।তোর বাবার জন্য আজ আমি এতিম।আমার মা বাবার ঘাতক তোর বাবা।’

‘সত্যিই তোমার বাবা-মা ছিলেন।’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।আমার ভাবতেও ঘৃনা লাগে আমার বাবার খু*নির ছেলেকে আমি ভালবেসেছিলাম।’

‘আমার বাবার শাস্তি আমাকে কেনো দিচ্ছো।বাবার অপরাধের শাস্তি দিলে বাবাকে সেটা নিয়ে আমি কিছুই বলবো না।কিন্তু আমাকে কেনো ছেড়ে যাচ্ছো।’

আমি আয়াসের হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম।অভির কথার কোনো উত্তর দিলাম না।

‘অভি ভীষণ ভাবে কাঁদতে কাঁদতে আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়লো।অসহায় এর মতো আমাকে চাইছে।করূণ আকুতিতে চাইছে আমাকে।ভালবাসা বুঝি এভাবেই পোড়ায় মানুষ কে।অভি বুক ফাটা আর্তনাদ নিয়ে বলছে প্লিজ মুগ্ধ একটা সুযোগ দাও আমাকে।আমি আমার বাবার মতো না।আমি তোমার মতো করে নিজেকে গুছিয়ে নিবো।’

আরহী দুইহাত বুকে ভাজ করে দাঁড়ালো।আরহীর মুখে বিশ্বজয় করা হাসি।ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললো,

‘আজ কেমন লাগছে।খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি।মুগ্ধ কে হারিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা।তোকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম রিভেঞ্জ আমি নিবো অভি।মুগ্ধকে আমি তোর হতে দিবোনা।তোর থেকে মুগ্ধকে আলাদা করে আমি রিভেঞ্জ নিয়েছি।কাউকে ঠকালে নিজের ও ঠকতে হয়।ঠিক এমন ই কষ্ট সেদিন আমার হয়েছিলো।আমি ছটফট করেছিলাম কষ্টে।কিন্তু তুই আমাকে নির্লজ্জ বেহায়া কতকিছু বলে গালি দিয়েছিলি মনে আছে।কি দারুণ না আমাকে ছেড়ে যার কাছে গেলি তার হাত ধরে তোর পুরা পরিবার ধ্বংস হয়ে গেলো।এটাকে কি বলে জানিস রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার।আমরা ভালো আছি অভি।আর ভালো থাকবো।কিন্তু বেঈমান প্রতারক রা ভালো থাকেনা।ভালো থাকাটা এত সহজ নয়।আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না।তোর বাবার জন্য আমাদের সবার প্রিয় খালামনি কে হারিয়েছিলাম।তোর বাবা কি ভেবেছিলো কোনদিন কেউ তাকে শাস্তি দিতে পারবেনা।পাপের শাস্তি ঠিক ই একদিন না একদিন পাওয়া যায়।সেটা গল্পে হোক আর বাস্তবে হোক।’

‘আরহী প্লিজ আমার ক্ষমা করে দাও।আমি জানিনা আমাকে হারিয়ে তুমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলে।তার থেকে হাজারগুন বেশী কষ্ট আজ আমি পাচ্ছি।ভালবাসা বড্ড সর্বনাশা।প্রেমের মরন ফাঁদে আমি ফেঁসে গিয়েছি।’

সেদিন আদালত থেকে সোজা আমার দাদূর বাড়িতে গেলাম।মারুফ কটেজ লেখাটা কি সুন্দর চকচক করছে।আমার পিতৃভূমিতে দাঁড়িয়ে শান্তিতে নিঃশ্বাস নিলাম।মা বাবার কবরের কাছে গিয়ে খুব কাঁদলাম।বাবা-মা আমি পেরেছি তোমাদের খু*নিকে শাস্তি দিতে।আমি পেরেছি সেই নরপিশাচ দের শাস্তি দিতে।খুব মিস করছি তোমাদের।খুব বেশী মিস করছি।তোমরা ও তোমাদের মেয়েকে খুব মিস করো তাইনা।

আয়াসের আম্মাকে বলে বাবার নামের এক টা জমিতে এতিমখানা করে দিলাম।দাদুর অনেক সম্পত্তি ছিলো।তা এখনো আছে শুধু পড়ে আছে।কিছু জায়গা বিক্রি করে এতিমখানা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করলাম।

দিন গেলো,রাত ফুরালো সময় এগিয়ে গেলো আরো খানিক টা।

চলবে..?
চলবে?…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here