#তুমিময়_বসন্ত
৩৩.
#writer_Mousumi_Akter
“মারুফ আনান কটেজ “বেশ বড় বড় অক্ষরে সুন্দর করে ঝালাই দিয়ে লেখা বাড়ির গেটে।গেট খুলেই মুগ্ধ হলাম বাড়িটা দেখে।একদম পার্কের মতো সাজানো গোছানো যেনো সবকিছু।বাড়ির উপরে বিশাল বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ।বকুল গাছের তলায় ফুল পড়ে শুকিয়ে আছে। গাছের দিকে তাকিয়ে দেখি গাছে সাদা সাদা বকুল ফুলে ছেয়ে আছে।গেটের ভেতরে বঁধানো পুকুর,আমগাছ,জামগাছ,সুপারিগাছ,নারকেল গাছ,জামরুল গাছ,লিচু গাছে,সফেদা গাছ,আমড়া গাছ,জলপাই গাছ,কাঠ বাদাম গাছ বিভিন্ন ফলের গাছে ভরপুর। এ বাড়িটা বিশাল বড় জায়গা জুড়ে আছে।ডুপ্লেক্স বাড়িটা জনমানব শুণ্য হয়ে পড়ে আছে।ইস ভাবতেই খুব কষ্ট লাগছে আয়াসের মামা আর মামি এত কম বয়সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন।আজ উনাদের মৃত্যুবার্ষিকী।আজ ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী।এ দিনে এ গ্রামের সব মানুষ কে খাওয়ানো হয় আর দোয়া অনুষ্টান করা হয়।সবার ই মন খারাপ সবাই মন খারাপ করে বসে আছে।আর আমি চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি।হঠাত করে আম্মুর ভয়ানক কাঁন্নার আওয়াজ এ কেঁপে উঠলো আমার অন্তরআত্মা।আম্মু এইভাবে হাউমাউ করে কাঁদছে কেনো?একটায় আওয়াজ ভেষে আসছে তুমি কেনো আমাদের ছেড়ে চলে গেলে।আম্মু এসব বলে কাঁদছে কেনো?বাবার কি কিছু হয়েছে।আমি পা/গ/লের মতো ছুটতে ছুটতে গেলাম।আম্মু লেবু গাছের নিচে থাকা দুটো কবরের কাছে গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে।আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছি বাবা আম্মুকে সামলানোর চেষ্টা করছে।আম্মুর কাঁন্না আমি কখনোই সহ্য করতে পারিনা।আম্মুর এই হৃদয়বিদারক কাঁন্না দেখে আমার ও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কিছুক্ষণের মাঝেই বাবা আম্মুকে জোর করে নিয়ে গেলো।আম্মুকে কোনোভাবে সামলানো যাচ্ছেনা।আমি নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাত এক অজানা যন্ত্রণায় বুকে ব্যাথা করছে।আম্মু কেনো এটা বললো তুমি কেনো আমাদের ছেড়ে চলে গেলে।আম্মুর কি ঘনিষ্ট কেউ এখানে সায়িত আছে।একে একে সবাই আসছে কবরের কাছে।মামা মামি, মামাতো ভাই,খালা,খালু সবাই এসে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।কারো কাঁন্না যেনো থামবার মতো নয়।আয়াসের আম্মা তো কেঁদেই যাচ্ছেন,আরহী, অয়ন,আয়াস সবাই কাঁদছে। এমন দৃশ্য আমি হতবাক।আয়াসের ফ্যামিলি কাঁদছে এটা নরমাল ব্যাপার।কিন্তু আমার ফ্যামিলি এত বেশী কাঁদছে কেনো?একে একে সবাই জায়গা ত্যাগ করলে আমি আনমনে হেঁটে গেলাম কবরের কাছে।সেখানে লেখা মরহুম মারুফ আনান এবং মরহুম রুহানা আনান।একরাশ মন খারাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি কবর দুইটা।আম্মুর কাঁন্না স্বাভাবিক ছিলো না একটুও ছিলো না।আম্মুর কি পরিচিত কেউ। আমি এতটা বেখেয়াল হয়ে পড়েছি গায়ের ওড়না এক পাশের থেকে পড়ে গিয়েছে আমার সে খেয়াল ই নেই।চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছে আমার।
এরই মাঝে আয়াস এসে আমার পড়ে যাওয়া ওড়না কাধে তুলে দিয়ে বললো,
“–কি হয়েছে মুগ্ধতা?তুমি এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
আয়াসের দিকে করূণ চোখে তাকিয়ে বললাম,
“–আচ্ছা আপনি কি কিছু জানেন।”
“-কোন ব্যাপারে?”
“–আম্মু কেনো এখানে এসে হাউমাউ করে কাঁদছিলো।আম্মুর কি কিছু হয়।”
আয়াস মৃদু হাসলো আমার দুই হাতের কব্জি ধরে বললো,
“মামা আর মামির জীবনের দূর্ঘটনা শুনে তোমার আম্মু সহ্য করতে পারে নি।আয়াস একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বললো পৃথিবীর কেউ ই সহ্য করতে পারে না সেই ইতিহাস শুনে।”
সন্দিহান ভাবে জিজ্ঞেস করলাম,
“সত্যি কি তাই।”
“তোমাকে কি মিথ্যা বলবো নাকি।”
“সবার মতো আমার ও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে।সবাই কাঁদছে কিন্তু আমি কাঁদতে পারছি না।”
“নো মন খারাপ প্লিজ,এদিকে এসো। চোখ বন্ধ করো একটা জিনিস দেখায় তোমাকে।”
বাঁধানো ঘাটের সিঁড়িতে গিয়ে চোখ বন্ধ করে বসলাম।আয়াস আমার গলায় একটা কিছু পরিয়ে দিলো।চোখ খুলে দেখি বকুল ফুলের মালা।একদম তাজা আর সাদা ধবধবে ফুল।দেখেই মন ভালো হয়ে গেলো আমার।
“আমি হেসে দিয়ে বললাম, কোথায় পেলেন।”
“আসার সময় দেখছিলাম বকুল গাছের দিকে তাকাচ্ছিলে।বুঝতে পারছিলাম এটা পেলে তুমি অত্যান্ত খুশি হবে।অয়নের হেল্প নিয়ে গাছ থেকে খুটে খুটে ফুল পেড়েছি।জানো কিভাবে পেড়েছি।পাশের বাড়ি থেকে মই এনেছি।গাছে মই দিয়েছি আর অয়নকে বলেছি মই এর গোড়া ভালো ভাবে চেপে ধরে রাখ।অয়ন মই এর গোড়া চেপে ধরে রেখেছিলো আর আমি মই বেয়ে বেয়ে উপরে উঠলাম।একটা ব্যাগ নিয়ে উঠেছিলাম।গাছ ঝাঁকি দিয়ছিলাম কিছু ফুল পড়েছিলো আর কিছু হাত দিয়ে ছিড়ে এনেছি।শুধু মাত্র তোমার খুশির জন্য।”
আয়াসের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে বললাম,
“আমার খুশি নিয়ে খুব ভাবেন তাইনা?”
“হুম ভাবতেই তো হবে।সাত জন্মের একটা মাত্র বউ আমার।আর বউ কে খুশি রাখতে না জানা পুরুষ হলো অধম পুরুষ। এইবার আমাকে একটু খুশি করে দাও তো।”
“কিভাবে খুশি করবো।আমি তো ফুল পাড়তে পারিনা।”
“পুরুষ মানুষের কাছে ফুল হলো তার বউ।”
আমি হাসলাম তার কথা শুনে।চোখে মুখে আমার ভীষণ লাজুকতা।
আয়াস ঠোঁট এগিয়ে এনে বললো,
” গিভ মি কিস বউ।”
খানিক টা লজ্জা পেয়ে বললাম,
“পারবো না।”
“আরে আরে লজ্জা পেও না। আমিই তো তোমার একমাত্র বর।এখানে কেউ আসবে না।দাও দ্রুত দাও।কি হলো লেট করছো কেনো।না দিলে কিন্তু ছাড়বো না।এইভাবে চুপ আছো কেনো?এখন আমাকে কিস না দিলে আমি কিন্তু সবার সামনে কিস করে দিবো।বাই দ্যা ওয়ে আমার কিন্তু লজ্জা নেই।”
“এক নিঃশ্বাসে আর কত বকবক করবেন শুনি?”
“যতক্ষণ না চুমু খেতে পারছি।আমার খুদা পেয়েছে সেটা চুমুর খুদা।দাও বলছি।এমন করো কেনো?অন্য কারো কাছে কি চেয়েছে।ওই বউ দাওনা প্লিজ।”
জাস্ট একটা চুমু যে মানুষ এইভাবে চাইতে পারে আগে জানতাম বা।আয়াস কে বললাম,
“চোখ বন্ধ করেন আগে।”
আয়াস চোখ বন্ধ করলে আমিও চোখ বন্ধ করে আয়াসের গালে চুমু দিলাম।
চুমু পেয়েও সে বলে উঠলো,
“তুমি কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গায় দাও নি।”
আমি আবার ও লজ্জা পেয়ে তাকালাম।
আয়াস পুকুরে পাথর ছুড়তে ছুড়তে বললো,
“দেখো তুমি কেমন দোল খাচ্ছো।”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কই কোথায় দোল খাচ্ছি আমি।”
“ওই যে পানিতে তোমাকে দেখা যাচ্ছে।পাথর ছুড়ে মারলে পানি দোল খাচ্ছে সে সাথে তুমিও দোল খাচ্ছো।আমি বার বার এটাই দেখছি।”
এরই মাঝে আয়াসের আম্মার ডাক শোনা যাচ্ছে।আমাকে মিষ্টি সুরে ডাকছে।
“আয়াস কে বললাম,আমি খুব ভাগ্যবতী দেখেন মা বাবার ভীষণ ভালবাসা পেয়েছি,এখন শ্বশুরবাড়ি সহ স্বামির ভীষণ ভালবাসা পাচ্ছি।”
এটুকু বলে আমি মন খুলে হাসছি।
আয়াস আমার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি হাসলেও বিশ্বসুন্দরী লাগে জানো।”
“না জানিনা।সব মিথ্যা।আপনার বানানো কথা।”
“আচ্ছা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না।তাহলে কাকে জিজ্ঞেস করি বলোতো।আচ্ছা তাহলে আমাদের সামনে থাকা এই কাঠবাদাম গাছ টাকে জিজ্ঞেস করি কি বলো।”
আমি দু’সিঁড়ি নিচে নেমে পুকুরের পানি হাতে নিয়ে আয়াসের দিকে ছেটাতে ছেটাতে বললাম,
“কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবেনা।আমি নিজেই জানি আমার বরের চোখে আমি কত সুন্দরী। তাইনা মিষ্টার আয়াস। ”
“আয়াস হাত দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টায় আছে।আর বারবার বলছে আহা!মুগ্ধতা আমি ভিজে যাচ্ছি কিন্তু।সত্যি ভিজে যাচ্ছি।”
“আমার খুশির জন্য না হয় একটু ভিজলেন ই তো ক্ষতি কি।ভিজুন না।”
হঠাত করে পুকুরের পাড়ে চোখ গেলো।অয়ন আর আরহী দুজন দু’গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অয়ন আরহীকে বলছে হাতটা একটু বাড়াবে প্লিজ।আরহী হাতটা বাড়িয়ে ধরলো অয়নের দিকে।অয়ন এক মুঠো বকুল ফুল আরহীর হাতে দিয়ে বললো এই নাও।ভাইয়া ভাবির জন্য ফুল পাড়ছিলো।আমি কুড়ানোর সময় এক মুঠো প্যান্টের পকেটে চুরি করে রেখেদিয়েছিয়ালাম।আরহী ফুল গুলো নাকের কাছে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণ নিলো।অয়নের হাতে একটা ফুল দিয়ে বলো এটা আপনার জন্য।অয়ন হেসে দিলো।সাথে সাথে অয়নের গেজ দাঁত চিক চিক করে উঠলো।এরা দুই ভাই ই কিন্তু মেয়ে পটাতে ওস্তাত যা বুঝলাম।এর ভাই আমাকে বশিকরণ করার মতো মন কেড়ে নিয়েছে।আর এই ছেলে এখন আরহীর মন কেড়ে নিবে।ভাবতে ভাবতে পিচ্ছিল সিঁড়িতে পা পিছলে পানিতে পড়ে গেলাম।পানিতে ঝপ করে শব্দ হওয়ায় আয়াস সাথে সাথে পানিতে নেমে আমাকে কোলে তুলে উপরে তুলে আনলো।আয়াস ভয় পেয়ে অয়ন কে জোরে চিৎকার দিয়ে ডাকলো।অয়ন বাড়ির সবাই কে ডাকলো।একে একে সবাই হাজির হয়ে গেলো।হঠাত পড়ে সামলাতে না পেরে খানিক টা পানি খেয়ে ফেলেছি আমি।মুহুর্তের মাঝে আয়াস আমাকে তুলে এনেছে বলে খুব বেশী অসুবিধা হয় নি।আয়াস আস্তে করে পেটে চাপ দিয়ে দিয়ে পানি বের করে ফেললো।ভয়ে বুক কাঁপছে আমার।আয়াসের আম্মা,বাবা,অয়ন,আরহী,আম্মু বাবা,খালামনি খালু সবাই আমাকে ঘিরে ধরে আমাকে ডাকছে।আমার আসলে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি।তবুও সবাই কেমন অস্হির হয়ে গিয়েছে।আয়াসের আম্মা বললো এ বাড়িতে আর মুগ্ধতাকে আনবোনা।জীবনের অনেক কিছু এ বাড়ি থেকে হারিয়েছে।এ বাড়িটায় অলুক্ষূণে।আয়াস আমার হাত শক্তভাবে চেপে ধরে রেখেছে।আর এক নজরে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ও যে খুব ভয় পেয়ে গেছিলো সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আমি স্বাভাবিক আছি তবুও আয়াস আমাকে কোলে তুলে নিয়ে এলো।আমি আয়াসের গলা জড়িয়ে ধরে আছি।আয়াস হঠাত থেমে আমার দিকে তকিয়ে বললো,
“তুমি ঠিক আছো তো।জানো আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
আমি মৃদু হেসে বললাম,আমাকে নামিয়ে দিন আপনার কষ্ট হবে।আমি ঠিক আছি।যার সাথে আপনই আছেন তার কি হবে বলুন তো।
#তুমিময়_বসন্ত
৩৪.
#writer_Mousumi_Akter
হালকা হালকা শীত পড়েছে।সময় টা বাংলা আশ্বিন মাস।বিদ্যুৎ নেই,ঘর অন্ধকার দেখাচ্ছে।জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে দিলাম।জানালা দিয়ে সাথে সাথে আলো ভরে গেলো রুমে।বিয়ের পাঁচ মাস হয়ে গিয়েছে।বিভিন্ন ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়েও কোথাও চান্স হয়নি।ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি যশোর এম.এম.কলেজ এ।অনেক দিন বাড়ি থেকে এসেছি বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি।এখানে কলেজ, কোচিং সব খোলা।আয়াস অফিসে আছে রাত দশটায় ফিরবে।আয়াসের মামা-মামির ঘটনা টা সারাক্ষণ যেনো চোখের সামনে ভাষতে থাকে আমার।আম্মুর ওই কাঁন্না ভুলতে পারিনা আমি।অনেক কিছুই রহস্য থেকে গিয়েছে আমার কাছে।রুমে বসে নিজে নিজে এসব ভাবছি আমি।এরই মাঝে কুসুম ভাবি আমাকে ডাকলেন।কুসুম ভাবি প্রেগন্যান্ট। আমি ভাবির ডাকে ছুটে গেলাম।ভাবি আমাকে ডেকে বললো,
“তোমার ভাইয়াকে মাঝে মধ্য একটু তরকারী দিও মুগ্ধতা।কাল আমি মায়ের কাছে চলে যাচ্ছি।আর পনেরো দিন পরে আমার ডেলিভারি ডেট।এখানে তোমার ভাইয়া ছেলে মানুষ সে তো কিছুই বুঝবে না এসব ব্যাপারে।তাই যেতে হচ্ছে।আমি যেতাম না যেতেই চাচ্ছি না।কিন্তু তোমার ভাইয়া শুনছেই না।আমাকে পাঠাবেই এটা কেমন কথা বলোতো।”
“আমি হেসে বললাম,আসলে ভাবি ভাইয়ার মতো এত ভালবাসতে আমি কাউকে দেখিনি।আপনার কপাল সত্যি অনেক ভালো জানেন।ভাইয়ার এত ভালোবাসা পেয়েছেন।”
“এইজন্য খুব ভয় হয় মুগ্ধতা জানো।কারো নজর না লাগে।”
“আরে না না ভাবি।কারোর নজর লাগবে না।ভালবাসা সত্য হলে এসব নজরে আরো ভালবাসা বাড়ে।”
“আয়াস ভাই ও তোমাকে ভীষণ ভালবাসে কিন্তু।”
“তা বাসে। ”
“তার নাম শুনেই এত লজ্জা পাচ্ছো।এবার একটা বেবি নিয়ে নিবা।নাকি লেখাপড়া শেষ করতে চাও।”
“সত্যি বলতে ভাবি আমার কিন্তু এক্ষুনি বেবির শখ।কিন্তু আয়াস উনি তো বলে দু’বছর দেরি করতে।বাচ্চা নিয়ে নাকি পড়তে পারবো না।”
“তোমার ভাইয়া ও এসব বলে বলে লেট করেছেন এতদিন।”
“”সব পুরুষ ই এমন।তবে একটা কথা বলি আপনার কানে কানে কুসুম ভাবি।কাউকে বলবেন না কিন্তু।আমি কিন্তু গত দু’মাস কোনো ফ্যামিলি প্লানিং এর আশ্রয় নিচ্ছি না।কিন্তু আয়াস এসব জানেনা।সে ভাবে তার বউ এসব কম বোঝে।এসবে তার বউ এর মাথা ব্যাথা নেই।কিন্তু আমি নিজে নিজে ওসব প্লানিং টিলানিং বাদ দিয়েছি।আমার এত লেখাপড়া ভালো লাগেনা।মনে চায় দু’চারটা বেবি নিয়ে মন দিয়ে সংসার করি।”
“তুমি তো খুব দুষ্টু। আমি সত্যি অবাক হচ্ছি।তুমি আয়াস ভাই কে ফাঁকি দিয়ে এসব করছো।তবে শোনো লেখাপড়া ও করতে হবে কিন্তু।কোনো ফাঁকি দেওয়া যাবেনা।তবে একটা কথা কি জানো সংসার জিনিস টা মেয়েদের রক্তে মিশে আছে।”
“হ্যাঁ সিওর লেখাপড়া করবো ভাবি।নাহলে আয়াস আমাকে পিটানি দিবে।”
“কোনো গুড নিউজ হলে আমাকে জানাবে কিন্তু।”
“জানাবো ভাবি।”
পরেরদিন কুসুম ভাবিকে সব গুছিয়ে দিলাম।ভাবি প্রাইভেট কারে করে চলে গেলো।ভাবির হাজবেন্ড ভাবিকে বিদায় দেওয়ার সময় বুকে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিলেন।ভালবাসা সত্যি সুন্দর।বাসাটা কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেলো।সেদিন সন্ধ্যায় আয়াস একটু দ্রুত বাসায় ফিরে এলো।একভাবে কলিংবেল চেপে যাচ্ছে।আমি দরজা খুলতেই কপালের ঘাম মুছতে মুছতে একটা প্যাকেট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“দ্রুত খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাবে বেবিডল।”
আমার জন্য গরম গরম সিঙ্গারা আর পুরি নিয়ে এসেছে সেটা আর বুঝতে বাকি নেই।কেননা বেরোনোর সময় বলে দিয়েছিলাম সিঙ্গারা আর পুরি আনতে।প্যাকেট টা রেখে বললাম,
“যখন নিজের বেবি হবে তখন ও কি আমাকে বেবিডল ডাকবেন।”
“ডাকবো।”
“ছিঃবাচ্চারা কি বলবে তাহলে?”
“বাচ্চারা মানে?এত বাচ্চা কই পাচ্ছো।”
“আল্লাহ যতগুলো বাচ্চা দিবে আমাদের তত গুলো ই হবে।”
আয়াস কপাল টানটান করে আমার দিকে রইলো।আর বললো,
“সমস্যা নেই হোক আমাদের বেবি।তার মেয়ের যত গুলো সন্তানের মুখে মা ডাক শুনতে ইচ্ছা করে ততগুলো ই সন্তান হবে।আমার আর কিসের কষ্ট।তুমি যদি পারো আমার কাছে কোনো ব্যাপার ই নাহ।”
“ফাজিল কোথাকার,অসভ্য লোক।আমি সত্যি বলছি কিন্তু।”
“আমি কি মিথ্যা বলছি।যতদিন মা হওয়ার ক্ষমতা থাকে তুমি মা হতে থাকবে।শুধু সন্তান লালন পালনের উছিলায় আমাকে সময় কম দিবে তা কিন্তু হবেনা।আমার জন্য বরাদ্দকৃত ভালবাসা রোজ আমাকে বাসতে হবে।”
আয়াসের কথা শুনে আমি হাসলাম।আয়াস আমার নাক টেনে বললো,
“একটা চা খাওয়াবে।বউ স্পেশাল একটা চ খেতে চাই।”
“আপনি আসবেন বলে আমি চা বানিয়ে ফ্লাক্সে করে রেখে দিয়েছি।”
আয়াস কপাল টান টান করে বললো,
“ভাবতেই অবাক লাগে এত কেয়ার একটা বউ আমার।”
“ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিয়ে বললাম,শার্ট আয়রণ করে রেখেছি। এটা কেমন ঘেমে বিশ্রি গন্ধ হয়ে গিয়েছে।চেঞ্জ করে যান।”
“আমি তো চা খাচ্ছি।এই শার্ট টা খুলে অন্য একটা পরিয়ে দাও প্লিজ।”
আয়াসের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম,
“সত্যি সত্যি বেবি নিলে কেমন হয় বলুন তো।”
“বেবি যখন হবে এমনি হবে।এটা নিয়ে ভাবা লাগবে না একটুও।”
গায়ের শার্ট টা খুলে ওয়াশরুমে নিয়ে হুইল পাউডারে ভিজিয়ে রেখে এসে আয়াস কে আয়রণ করা শার্ট টা পরিয়ে দিলাম।বোতাম লাগাতে লাগাতে বললাম একটু আদুরে কন্ঠে বললাম,
“এই কখন ফিরবেন?
“যাবো আর আসবো।”
“আজ থেকে গেলে হয়না বাসায়।রোজ ই তো বাইরে যান।আজ না গেলে হয়না।”
আয়াস আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“এভাবে বলোনা, আমি তাহলে আজন্ম এখানে আটকে যাবো।কোনো কাজে মন বসবে না।”
“আচ্ছা এভাবে বলবো না।আজ একটু দ্রুত আসবেন কিন্তু।”
“আমি একটু সময়ের জন্য যাচ্ছি একটা কাজ আছে।কিছুক্ষণ পরে ফিরবো বেবিডল।ওপ্স সরি বেবিদের আম্মু বেবিডল।সাবধানে থেকো কিন্তু বেবিডল।”
আমি হাসি মুখে আয়াস কে বিদায় জানিয়ে কিচেনে প্রবেশ করলাম।রান্নার জিনিস গোছাচ্ছি।কম বয়সী একটা মেয়ে আছে প্রায় আমার বয়সী ই হবে।সে এসে আমাকে একটু হেল্প করে দিয়ে যায়।তবে সকালের দিকেই আসে।কিছুক্ষণ পরে দেখলাম,আধাবয়সী একজন মহিলা কুসুম ভাবির ফ্ল্যাটে প্রবেশ করছে।দেখে মনে হচ্ছে ভাবি চলে গিয়েছে তাই নতুন কাজের বুয়া রেখেছে।
আধাঘন্টা পরে কলিং বেল বেজে উঠলো।আয়াস এসছে ভেবে দরজা খুলতে খুলতে বললাম তুমি চলে এসেছো।কিন্তু দরজা খুলেই চমকে গেলাম আমি।দরজায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা ফর্সা একটি ছেলে।যার হাত এ ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কুচি কুচি করে কাটা। ফ্লোর র;/ ক্তে ভিজে আছে।হাত দিয়ে র/ক্ত পড়েই যাচ্ছে।আমি দেখেই রিতীমত ভয় পেয়ে গেলাম।ছেলেটির মাথার সামনের লম্বা চুল মুখের উপর পড়েছে।আমি দরজা খুলতেই চুল সরিয়ে আমার দিকে তাকালো।ছেলের চোখ দুটো রক্তজবার মতো হয়ে আছে।ছেলেটি এক নয়নে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।শার্টের বোতাম খোলা,খালি গায়ে অজস্র আঘাতের চিহ্ন।এই আঘাত গুলো ও ব্লেড বা ছুরির।ভূমিকম্পণের মতো আমার পুরা দুনিয়া কাঁপছে।আমি একটা চিৎকার দিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকলাম।এমন দৃশ্য দেখে ভ*য় পেয়ে গেলাম।হাত পা সমস্ত শরীর থর থর করে কাঁপছে।মাথার মাঝে চক্কর মেরে উঠলো আমার।ছেলেটির তীক্ষ্ণ নজর আমার দিকে।দেখে মনে হচ্ছে নেশা করেছে এমন মাতাল দেখাচ্ছে।নিজেকে নিজে এত আঘাত করে কিভাবে স্বাভাবিক হয়ে আছে সে।
চলবে?
চলবে?
(রেসপন্স করবেন সবাই)