#তুমিময়_বসন্ত
৩৫.
#writer_Mousumi_Akter
বিভৎস চেহারার মানুষ টা ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসছে। মানুষ টা কে চিনতে আমার একটুও ভুল হলো না।ভয়,কেঁপে উঠা হৃদপিন্ড নিয়ে জড়ানো কন্ঠে বললাম,
‘আ–আ আপনি?’
ছেলেটি ইমোশনাল কন্ঠে বললো,
‘আপনি কেনো?তুমি আমাকে আপনি করে কেনো বলছো মুগ্ধ।আমি, আমাকে চিনতেছো না তুমি।আমি অভি।’
‘চিৎকার করে বললাম,না চিনছি না।আমি কাউকে চিনতে চাইনা।বেরিয়ে যান এখান থেকে। ‘
‘তুমি আমাকে না চিনলে কে চিনবে মুগ্ধ।’
‘আপনি বেরয়ে যান বলছি।আপনি বেরিয়ে যান।আমি চিনিনা আপনাকে।’
‘কিসের ভয় মুগ্ধ।কেনো মুগ্ধ এসব।’
‘আপনার শরীরের র/ক্ত বন্ধ করুণ প্লিজ।আর এখান থেকে যান।’
‘এই র/ক্ত সামান্য কিছু। তুমি শরীরের বাইরের আঘাত দেখছো।ভেতরের আঘাত কেনো দেখছো না মুগ্ধ।আমি ভালো নেই।তোমার অভি ভালো নেই তোমায় ছাড়া।’
‘কোনো বেঈমান ঠক,প্রতারক কে আমি চিনতে চাইনা। আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান এখান থেকে।’
‘অভি চিৎকার দিয়ে বললো,আমি?আমি বেঈমান।তুমি এই কথা বলছো।বেঈমান কথাটা কি আমার সাথে যায়।’
‘তাহলে কার সাথে যায়,বলুন কার সাথে যায়।আমার জাস্ট ঘেন্না লাগছে আপনার মুখ দেখতে।আর কি চান আপনি?এখানে কেনো এসেছেন।আমার জীবনের অনেক ক্ষতি আপনি করেছেন কিন্তু আর নয়।আমার বিবাহিত জীবনে আপনার প্রভাব আমি পড়তে দিবো না।’
অভি তাচ্ছিল্যর সুরে হেসে বললো,
‘বিবাহিত জীবন।কিসের বিবাহিত জীবন।যেখানে বিয়েটা তোমাকে জোর করে করানো হয়েছে।তোমার জীবন আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে কাটাতে পারোনা মুগ্ধ।’
‘জোর করে হলেও সেটা আমার সৌভাগ্য।’
অভি আস্তে আস্তে রুমের মাঝে প্রবেশ করলো।সোফায় ধাক্কা খেয়ে উহ শব্দ করে উঠলো যন্ত্রণায়।ফ্লোরে র/ক্তের ছাপ লেগে আছে।আমার কাছে এসে জোর পূর্বক আমার হাত খুব শক্ত ভাবে চেপে ধরে বললো,
‘দেখো মুগ্ধ আমার শরীরের আঘাত দেখো।তুমি ছাড়া ভালো নেই আমি।যন্ত্রনায় ছটফট করছে তোমার অভি।’
‘আপনার এ অবস্থা কেনো?’
‘আমার এ অবস্থা হবেনাতো কার এ অবস্থা হবে।দুইদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। সেদিন আমাদের বিয়ের দিন ছিলো মুগ্ধ।অথচ তুমি এলে না।আমার পরিবর্তে এই আয়াস তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে চলে আসলো।কি কম ছিলো আমার মাঝে মুগ্ধ।আমি কি কেয়ারিং ছিলাম না।তোমাকে কম ভালবাসতাম।নাকি তোমার হাসি মুখের কারণ হতে পারিনি।কোনটা মুগ্ধ কোনটা?আমাকে জাস্ট এটুকু বলো কিসের কমতি ছিলো আমার মাঝে যার জন্য আমার জীবন টা এইভাবে ছারখার করে দিলে তুমি।তুমি কি জানো তুমি ছেড়ে আসার পর প্রতিটা দিন রাত পা;গ/লের মতো খুজেছি তোমায়।কোনো ফ্রেন্ড সার্কাল কেউ বলতে পারেনা তোমার কথা।প্রতিটা দিন কষ্ট পেয়েছি আজ ও কষ্ট পাচ্ছি।ঘুমহীন ছিলো আমার প্রতিটা রাত।রোজ নিজেকে একটু করে আঘাত করতে করতে আজ আমার এই অবস্থা। অনেক কষ্টে তোমার শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা যোগাড় করে সেখান থেকে কোনরকম আয়াসের ঠিকানা যোগাড় করে এ পর্যন্ত এসেছি।আর আজ আমি তোমায় খুজে পেয়েছি।চলো মুগ্ধ তুমি আমার সাথে।আমার পৃথিবীতে। তোমার বিয়ে হয়েছে তাতে কি।আমি এক্সেপ্ট করতে রাজি তোমায়।আমার কিছুই যায় আসেনা তোমার বিয়ে হয়েছে নাকি হয়নি।’
অভির হাত ঝাড়ি মেরে ফেলে দিয়ে বললাম,
‘গো টু হেল অভি।আমার বিয়ে নিয়ে আপনার কিছু যায় আসুক আর না আসুক আমার অনেক কিছুই যায় আসে।আমি আমার বিবাহিত জীবনে অনেক হ্যাপি আর অনেক সিরিয়াস।’
অভির স্পর্শ আমার এতটায় বিরক্তি লেগেছে যেনো কেউ আমায় স্পর্শ করেই অপবিত্র করে দিয়েছে।অভির স্পর্শ আজ প্রমান করেছে আমার শরীরে আয়াসের স্পর্শ ছাড়া অন্য কারো স্পর্শ কত বেশী নিষিদ্ধ। অভি আমার হাত স্পর্শ করার সাথে ঘেন্নায় ঝাড়ি মারলাম ওর হাত
আমি জাস্ট নিতে পারিনি ওর স্পর্শ। এই হাত কেনো একটা পশম ও আয়াস ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারবেনা।
অভি যন্ত্রণাদায়ক কন্ঠে বললো,
‘আমাকে অসুখি রেখে আমার ভালবাসা কেড়ে নিয়ে আয়াস সুখ করবে আমি সেটা হতে দিবো না। আমার তোমাকে লাগবে মুগ্ধ।’
‘আমাকে লাগবে?আমাকে ঠকিয়ে শান্তি পান নি আপনি।’
‘আমি তোমাকে কিভাবে ঠকিয়েছি বলো।ঠকালে কি খুজতাম এভাবে।’
‘আপনি একজন বিবাহিত মানুষ হয়ে আমার সাথে ভালবাসার অভিনয় করেন নি।এক নিজের ওয়াইফ কে ঠকিয়েছেন দুই আমাকে ঠকিয়েছেন।না জানি আর কাকে কাকে ঠকিয়েছেন।ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন।কষ্টে ভেঙে পড়েছিলাম আমি।কিন্তু আমার স্বামি আমার জীবনের সব অতীত জেনে আমাকে ভালবাসা আর পূর্ণতা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলেছে।’
অভি সোফায় লাথি মেরে বললো,
‘আমি বিবাহিত কোন কু***বাচ্চা বলেছে আমি বিবাহিত।কে বলেছে বলো আমাকে।’
‘ভাষা সংযত করে এখান থেকে বেরিয়ে যান প্লিজ।আপনার কালো ছায়া আমার জীবনে আর না পড়ুক।অনেক কষ্টের পরে সুখ খুজে পেয়েছি আমি।’
‘আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।তুমি সেই মেয়ে।যে মেয়ে আমি ছাড়া পৃথিবীর কাউকে চিনতো না।আমি ভেবেছিলাম আমাকে দেখলে তোমার রিয়্যাকশন সম্পূর্ণ অন্যরকম হবে।কিন্তু এমন হবে আমার কল্পনাতেও ছিলোনা।মানুষ এতটা চেঞ্জ কিভাবে হতে পারে।মানুষ চেঞ্জ হয় তাই বলে এতটা চেঞ্জ।’
‘আমি সেই মেয়ে যে আর আজ আপনার মিথ্যা অভিনয়ে ভুলছে না।আমি অতীত নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাইনা। আপনি যান প্লিজ।’
‘আমি তোমার অতীত হয়ে গেলাম অথচ তুমি আমার বর্তমান হয়েই রয়ে গেলে
।’
আমি আপনার ব্যাপারে মুখ খুলতে চাইছিনা।আমি এখন বিবাহিত। আমার জীবন থেকে বিদায় হন প্লিজ।
‘আমাকে এত সহযে তুমি বিদায় করতে পারবে না।আমি আমার জীবনের থেকে তোমাকে বেশী ভালবেসেছি আর তুমি আমাকে ছেড়ে সংসার করছো?কোথায় আছো?কেমন আছো?একটা বার তো জানাতে পারতে।’
‘আমি জানায়নি আপনাকে।আমার বিয়ের পরে আপনাকে মেসেজ করেছিলাম।আর আপনি কি করেছিলেন। আপনি নিজে বলতে না পেরে আপনার ওয়াইফ কে দিয়ে বলিয়েছেন যে আপনি বিবাহিত।আমি সেসব ব্যাপারে আর কথা বলতে চাইছিনা।’
‘ ওয়াইফ!রিয়েলি।আমার ওয়াইফ কোথা থেকে আসলো।এক্ষুনি আমার বাড়িতে চলো।আমার এলাকায় শুনবে চলো আমি বিবাহিত কিনা জানতে পারবে তুমি।’
‘এখন আর কিছুই জানতে চাইনা আমি।আমার জানার কোনো আগ্রহ নেই।’
‘কিন্তু আমার আগ্রহ আছে।কে তোমাকে বলেছে আমি বিবাহিত।প্লিজ মুগ্ধ অন্তত এটুকু তো বলো।’
‘আপনার গ্রামিন নাম্বারে মেসেজ করে জানিয়েছিলাম।তারপর অন্য একটা নাম্বার থেকে কল আসে।আর আমাকে সে তুমিসহ তার সমস্ত ছবি দেখিয়েছে।আই জাস্ট হেট ইউ।’
‘আমার সে সিম টা আজ ৫ মাস নিঁখোজ।ফোন চুরি হওয়ার পর সিম টা আর পাওয়া যায়নি।এক ফ্রেন্ডের স্মার্ট কার্ড দিয়ে সিম কেনা ছিলো।ফ্রেন্ড টার সাথে আর দেখা হয়নি তাই সিম টাও আর তোলা হয়নি।কেউ তোমার সাথে চালাকি করেছে মুগ্ধ।আমার কাছ থেকে আলাদা করতে কেউ এটা করেছে।কসম আমি তোমাকে ভাল বাসি আমি বিবাহিত নই।’
‘আমি এই মুহুর্তে সেসব বিষয়ে আর কিছুই জানতে চাইছি না।আমাকে ক্ষমা করুণ।’
‘আমি কোথাও যাচ্ছিনা এখান থেকে।আমি তোমাকে নিয়ে যাবো এখান থেকে।’
‘আমার জাস্ট বিরক্ত লাগছে অভি।এখনি আয়াস চলে আসবে।যান আপনি দোহাই লাগে।আমি আয়াস কে ভীষণ ভালবাসি।’
‘আর আমাকে?’
‘আপনি আমার অতীত ছাড়া আর কিছুই না।’
‘মুগ্ধ আমি তোমার অতীত হতে চাইনা।আমি তোমার ছিলাম আর আছি।তুমি কি যাবে নাকি আয়াস আসলে আমি আয়াস কে বলে সব টা ক্লিয়ার করে নিয়ে যাবো।’
‘হোয়াট আপনি আয়াস এর জন্য অপেক্ষা করবেন।আমি আপনার সাথে পরে দেখা করবো যান এখান থেকে।’
‘পরে কখন।’
‘পরশু আয়াস বাসায় থাকবে না।এখন আপনি যান প্লিজ।’
অভি চলে গেলে ফ্লোর মুছে পরিষ্কার করে ফ্লোরে বসে রইলাম।আমি কিছুতেই অভির সাথে দেখা করতে চাইনা।কিছুতেই না।অভি বিবাহিত হোক আর না হোক তাতে আজ আর আমার কিছুই যায় আসেনা।আয়াস আর অভি মুখোমুখি হলে আয়াস যদি আমাকে ভুল বোঝে।নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে।জীবনের এমন এক টা সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি এর থেকে খারাপ সময় আর বিপদ বোধহয় কোনো মেয়ের জীবনে আর নেই।কিন্তু অভি ও যদি বিবাহিত না হয় তাহলে ওইসব ছবি কি মিথ্যা ছিলো।অভির বিরুদ্ধে কে মিথ্যা বললো।কে আমাকে অভির বিরুদ্ধে দাঁড় করালো।ওই মেয়েটা কে ছিলো।কে আছে এর পেছনে।আজ আমি আয়াস কে ভালবাসি তবুও অভির কাছে অপরাধী আমি।অভির কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিকে বোঝাতে হবে আমার জীবন থেকে সরে যেতে।
#তুমিময়_বসন্ত
৩৬.
#writer_Mousumi_Akter
ঘরের মধ্য গুটিসুটি মেরে বসে আছি আমি।রান্না ও করিনি কিছুই।দুঃচিন্তায় হাত পা বরফ হয়ে এসছে আমার।রান্না করার কথা খেয়াল ও নেই।আমি কিভাবে এই বিপদ থেকে বের হবো জানিনা।ফোন থেকে অহনার নাম্বার ডায়াল করে আরহী কে কল করলাম।দুবার রিং হবার পর আরহী হেলে দুলে এসে ফোন রিসিভ করে বললো,
‘হাই মুগ্ধ কি অবস্থা। ‘
খুব ঘাবড়ানো কন্ঠে চাপা উত্তেজনা নিয়ে বললাম,
‘প্লিজ হেল্প মি!আমাকে বাঁবা আরহী।’
আরহী আমার এমন কন্ঠ শুনে সিরিয়াস হলে বললো,
‘এই মুগ্ধ কি হয়েছে।এত ভয় পেয়ে আছিস কেনো?’
‘ও এসেছে। ‘
‘ও কে’?
‘অ”অভি।অভি এসছিলো আরহী।আমার বাসায় এসছিলো ও।কি বিভৎস চেহারা নিয়ে এসছিলো।’
আরহী কন্ঠে বেশ রাগ নিয়ে বললো,
‘জা*নো*য়া*র টা ওখানে চলে গেছিলো।কি বলেছে ও।’
‘আ”আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে চাইছে।অভি কোনো কথা শুনতে চাইনা।সে চাইছে আমাকে তার সাথে করে নিয়ে যেতে।আমি অভিনামক ঝামেলায় আর জড়াতে চাইছি না।’
‘ডোন্ট ওরি!আমি আসছি রাতের বাসেই।অভির সাথে এবার ফাইনাল খেলা খেলবো মুগ্ধ।’
‘ আচ্ছা সব সময় সব অশান্তি কি আমার সাথেই হয়।যখন অভিকে চাইছিলাম তখন পাইনি।এখন অভিকে চাইছি না সে এসে হাজির।’
‘অভি থেকে তুই দূরে থাক মুগ্ধ।আমি আসচি জাস্ট রাত টুকু অপেক্ষা কর।’
অহনা ফোন কেটে দিলে আমি নিশ্চুপ কিশোরীর মতো বসে রইলাম।চোখ দিয়ে পানি ঝরছে ক্রামগত।আবার ও কলিং বেল চাপার শাব্দ হচ্ছে।যদি অভি হয় সেই ভয় আর দরজা খুলছি না।এরই মাঝে আয়াস আমার ফোন নাম্বারে কল করলো।ফোন রিসিভ করতেই বললো,
‘ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি মুগ্ধতা।কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।’
আয়াসের ফোন কেটে বেসিং এ গিয়ে চোখে মুখে পানি লাগিয়ে আবার কিছুটা স্বাভাবিক ভাবে দরজা খুললাম।দরজা খুলে আয়াসের দিক তাকালাম না।অন্য দিন দরজা খুলে আয়াসের সাথেই ঘরের ভেতরে প্রবেশ করি।কিন্তু আজ তার ব্যাতিক্রম ঘটলো।আয়াস দরজায় রেখে আমি রুমের ভেতরে প্রবেশ করলাম।ভেতরে এসে আয়াস আমার হাত টেনে ধরে বললো,
‘দাঁড়াও মুগ্ধতা।তাকাও তো আমার দিকে।’
আমি আয়াসের দিকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাকানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু আমরা কেউ ই মনের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা।ভেতরে যা আছে তা বাইরে প্রকাশিত হবেই।আমি যতই বাইরে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করিনা কেনো কিন্তু আমার চোখে মুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমি ঠিক নেই।
‘আয়াস আমাকে বললো, কি হয়েছে রাগ করেছো?’
‘অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর দিলাম,রাগ করবো কেনো?’
‘তুমি রাগ করেছো সিওর।না হলে আমার বউতো এমন মুখ করে থাকে না।আমার বউ এর মুখে সব সময় মিষ্টি হাসি লেগে থাকে।’
‘সত্যি রাগ করিনি।’
‘তখন বাইরে গিয়েছি বলে তোমার রাগ হয়েছে তাইনা।যাও তিন দিনের ছুটি নিলাম তোমার জন্য।’
‘আমি বৈদ্যুতিক গতিতে বলে উঠলাম না না ছুটি নিতে হবেনা।ছুটি নিতে হবে কেনো?’
‘কি ব্যাপার ছুটি নিয়েছি শুনেও খুশি হও নি।আমি ছুটি নিয়েছি শুনলে তো তুমি অনেক খুশি হও।’
‘না খুশি হয়েছি,হয়েছি।’
‘অনিচ্ছায় বললে খুশি হয়েছো।’
আয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখে চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।মুখটা কালো হয়ে গিয়েছে চিন্তায়। আয়াস কে জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে।কেনো জানি আমার খুব ভয় করছে।আয়াস কে নিজের সবটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,
‘আমাকে নিয়ে একটু বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবেন।’
আয়াস বুঝতে পারলো আমার কিছু একটা হয়েছে।আমার মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
‘অবশ্যই যাবো,অফিস থেকে এবার লং ছুটি নিয়ে আমরা সাজেক যাবো খুশি।’
‘আমি কাল ই যেতে চাই কোথাও ঘুরতে।’
‘রাগ করোনা প্লিজ।কাল অফিসের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে বেবিডল।’
ভেবেছিলাম এখান থেকে কোথাও ঘুরতে গিয়ে অভির হাত থেকে বাঁচবো কিন্তু সেটাও হলোনা।খুব ভয় করছে অভি যদি আমাদের দুজনের এক সাথে তোলা কোনো ছবি দেখায় আয়াস কে তাহলে কি করবো আমি।আয়াসের খারাপ লাগবে।আমাকে ভুল ও বুঝতে পারে।আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।বারবার ভেতরের কষ্ট কাঁন্না হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে।
খানিক টা রাত হয়েছে আমি আজ আগেই সুয়ে পড়েছি কিন্তু ঘুম আসছে না।কিন্তু ঘুমের ভান ধরে পাতলা কাঁথা মুড়িয়ে সুয়ে আছি।আয়াস আমার গায়ে হাত দিয়ে ডাকছে,মুগ্ধতা রাত এগারোটা বাজে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে নাকি।আমাকে ও কি খেতে দিবেনা।
আয়াসের অনেক্ষণ ডাকাডাকিতে বিছানায় উঠে বসলাম।আয়াসের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।কি খেতে দিবো এখন তাকে।আজ দুপুরে তো রাতের জন্য রান্না করেছিলাম না।ভেবেছিলাম রাতে রান্না করবো কিন্তু করতে খেয়াল ই নেই।কি বলবো এখন আয়াস কে আমি।আয়াস আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু নাচালো আর বললো কি ভাবছো।
গায়ের কাঁথা ফেলে দিয়ে তডিঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে নেমে বললাম,
‘একটু অপেক্ষা করুণ প্লিজ।:
‘আয়াস আমার হাত টেনে ধরে বললো,কি হয়েছে বলবে তো।’
‘কিছুই হয়নি জাস্ট একটু ওয়েট করুণ।’
‘আয়াস নাছোড়বান্দা ছাড়লো না।বললো,চলো আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে।’
‘এবার মাথা নিচু করে মিহি কন্ঠে বললাম,আমার আসলে রান্নার কথা খেয়াল ই নেই।ভেবেছিলাম দুপুরের টা আছে।কিন্তু দুপুরের কোনো অবশিষ্ট খাবার নেই।’
ভেবেছিলাম আয়াস অন্য হাজবেন্ডদের মতো ভীষন রেগে গিয়ে কিছু একটা বলবে।কিন্তু না আয়াস মৃদু হেসে বললো,
‘আচ্ছা কোনো ব্যাপার না।আমি তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো।কি খাবে বলো?’
‘ছিঃছি আপনি রান্না করবেন কেনো?’
‘আমাকে এই আপনি বলা কি আর অফ হবেনা।’
‘হবে।’
‘কবে,কখন?’
‘হুট করেই আপনি থেকেই তুমি হয়ে যাবেন।’
‘এখন হলে কি কোনো প্রব্লেম আছে। ‘
‘না নেই,।’
‘এইবার বলো, কি খাবে তুমি।’
‘আলুভর্তা খাবো।’
‘আর কিছু খাবেনা? ‘
‘নাহ।’
‘তাই বললে কি হয়।ইলিশ মাছ বের করো ভাজি করি।’
‘আপনাকে করতে হবে না,আমি করছি।’
‘উফফ এই মেয়েটা এত পাকা কেনো।আমি করছি বললাম না।’
আয়াস থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে কিচেনে মাছ ভাজিতে বিজি আছে।প্রেসার কুকারে চাল দিয়েছে।আমি এদিক সেদিক উকি দিচ্ছি অভি আবার কোথাও লুকিয়ে থাকেনিতো।জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই চমকে
উঠলাম।বিল্ডিং এর পাশের যে ফাঁকা জায়গা টা আছে অভি তার বন্ধুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক দৃষ্টিতে আমাদের ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়ে।অভি কেনো যায় নি এখনো।দ্রুত জানালা লাগিয়ে দিলাম।এর ই মাঝে আমার ফোন বেজে উঠলো।আননাউন নাম্বার ভেষে উঠেছে ফোনের স্ক্রিণে।ফোন টা রিসিভ করতে ভয় করছে।ফোন স্পর্শ করতে হাত কাঁপছে।আয়াস কিচেন থেকে চিল্লায় বলছে মুগ্ধতা ফোন বাজছে তোমার।দ্রুত ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাস থেকে অভি কাঁন্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো,
‘আমি থাকতে পারছিনা মুগ্ধ।আমি পারছিনা তোমাকে ছেড়ে থাকতে।’
‘প্লিজ এভাবে ফোন করবেন না আমার সমস্যা হবে।’
‘আমার অপরাধ কি মুগ্ধ।বলো আমার অপরাধ টা কি।অন্তত একটা অপরাধ দেখিয়ে সেই অপরাধের শাস্তি দাও আমি মেনে নিবো।’
‘এখন এসব বলে কি লাভ অভি।আমাদের জীবন আলাদা দিকে চলে গিয়েছে অনেক আগেই।’
‘আমি আর তুমি তো আলাদা ইচ্ছা করে হইনি।তোমার কি একটা বার ও মনে হচ্ছেনা যে প্লানফুলি তোমাকে আর আমাকে আলাদা করেছে অপরাধি সে।তোমাকে আর আমাকে ইচ্ছাকৃত আলাদা করা হয়েছে মুগ্ধ।যে এই কাজ টা করেছে শাস্তিটা তার পাওয়া উচিত।’
‘দেখুন সত্যি সত্যি আমার এসব ভাবতে ইচ্ছা করছে না,জানতে ইচ্ছা করছে না প্লানফুলি নাকি আল্লাহ চেয়েছিলো তাই।কিন্তু এটাই হয়তো হওয়ার ছিলো।’
‘আয়াস কে পেয়ে তুমি এইভাবে আমাকে ভুলে গেলে।আয়াস কি তোমাকে আমার থেকেও বেশী ভালবাসে।’
‘হ্যাঁ বাসে,আয়াস আমাকে আপনার থেকে বেশী ভালবাসে।আর আমি আয়াসের ভালবাসার কম্পেয়ার করতে চাইনা।’
‘বাহ মুগ্ধ!আয়াস আর আরহী দুজনে প্লান করে এসব করেছে। যে ছলনার আশ্রয় নিয়ে তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলো তুমি তার সাথে থাকতে রাজি অথচ যে তোমাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে হয়ে গিয়েছে তার কাছে ফিরতে পারবে না।হুয়াই মুগ্ধ।তোমাকে ছাড়া আমি কিছুতেই বাঁচবো না।যদি আয়াসের মতো ঠকবাজের সাথে থাকতে পারো আমার সাথে কেনো নয়।’
‘দেখুন,যা হয়েছে সবটাই ভুল বোঝাবুঝি।এটাই হয়তো নিয়তির লিখন ছিলো।আমাদের পথ চলা ওইটুকুই ছিলো।’
‘তুমি কি চাও আমি ম★রে যায়।’
‘প্লিজ অভি নিজের আর ক্ষতি করবেন না।’
‘মুগ্ধ বিনাঅপরাধে আমি কষ্ট পাচ্ছি।এটা কি এক প্রকার আমাকে চরম ভাবে ঠকানো হলো না।’
অভি বেসামাল ভাবে কাঁদছে।অভি আবার ও বললো,
‘আমি কি করবো এখন তুমি বলে দাও।তোমার কি আমার জন্য একটুও খারাপ লাগছে না।’
‘এরই মাঝে আয়াস এসে বললো,কার সাথে ফোনে কথা বলছো মুগ্ধতা।’
দ্রুত ফোন কেটে দিয়ে ভ*য় ভ*য় চোখে আয়াসের দিকে তাকালাম।আয়াস আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বিছানায় রেখে বললো,
‘খেতে হবে এসো।মাছ টা বেশী কড়া ভাজি হয়ে গিয়েছে আমি বুঝতে পারিনি মোটেও।তোমার অসুবিধা হবেনাতো।’
‘মাথা নাড়িয়ে বললাম না।’
যাক আয়াস হয়তো কিছুই শোনেনি।নাকি শুনেও এড়িয়ে গেলো।
চলবে..?
চলবে..?