আমি আর তোকে বিরক্ত করবো না রোহান ভাইয়া। আমি বুঝেছি তুই আমাকে কখনোই ভালোবাসবি না।কারন তোর মনে তো সাদিয়া আপু। আজকে ওকে বাইকে করে নিয়ে এসেছিস।যেখানে কোনো মেয়ে এমনকি আমাকেও কখনো বাইকে নিস না। তাহলে আজ সাদিয়া আপুকে কেনো নিয়েছিস।ভালোবাসিস জন্যই হয়তো নিয়েছিস।
কথাগুলো একা একা ভেবে রুহি নিজের কাপর গুছিয়ে নিচ্ছে।
আমি আজকেই হোস্টেল এ চলে যাবো। আর আসবো না। কার জন্য আসবো। এতো দিন তো রোহান ভাইয়ার জন্যই আসতাম। ওই আমাকে বুঝলো না আমি এখানে থেকে কি করবো।
কি রে মহারানি কাপর গুছিয়ে কি করবি,আবার কি হোস্টেল এ যাওয়ার ইচ্ছা হইছে নাকি,সেই তো যাবার সময় জরিয়ে ধরে বলবি, আমি যাবো না রোহান ভাই আমাকে আটকাও আমি ওখানে গেলে ম*রে যাবো।
কথাটা বলতে বলতে রোহান রুহির ঘরে ঢুকলো।
রুহি রেগে গিয়ে বললো,,
তোকে কতোবার বলছি নক না করে আমার ঘরে আসবি না। আর আমি এবার যাবোই যাবো।
ও বাবা কি রাগ, ভয় পাইছি তো। তা এত রেগে যাওয়ার কারন টা কি। কেউ কিছু বলছে নাকি।
আমাকে কে কি বলবে, আর তাছাড়া আমি কারো কথা শুনে কেনো যাবো। আমি তো,,,, এই বলে থেমে গেলো রুহি
রোহান ভ্রু কুঁচকে বললো আমি তো কি,,,
তোকে কেনো বলবো, বেরো এখান থেকে। আমার রুমে আসবি না।
এটা তোর রুম বুঝি,
একদম মজা করবি না বলে দিলাম যা এখান থেকে, এই বলে রোহানকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল রুহি।
তুই এমন কেন রোহান ভাই,কখনো মনে হয় তুই আমার সব কথা বুঝিস তারমানে তুই আমায় ভালোবাসিস। আবার কখনো মনে হয় তুই আমাকে সহ্যই করতে পারিস না।
রোহান মনে মনে ভাবছে, আজ আবার কি হলো মহারানির। ও তো কারো কথা শুনে রেগে যাবে না। একমাত্র আমি ছাড়া। আর আমিও তো আজ কিছু বলি,,, এই ভেবে থেমে যায় রোহান। তারপর মুচকি হেসে বলে, আচ্ছা মহারানির রাগের কারন তাহলে এটাই। তাহলে তো আরো একটু উস্কিয়ে দিতে হবে। যাতে এবার হোস্টেল এ যায়।তারপর জোরে জোরে সাদিয়াকে ডাকতে থাকে,
এএএএএইইই সাদিয়া ,, আমার রুমে আয় তো তারা তারি
এদিকে রোহানের মুখে সাদিয়ার নাম শুনে রুহি ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। আর মনে মনে ভাবে কি করে এই রোহানকে শা*স্তি দেওয়া যায়। আমি থাকতে ওই সাদিয়া আপুকে কেনো ডাকছে, আমাকে কি চোখে দেখে না
আসুন এদের পরিচয় জেনে নেই,,
গল্পের নায়ক রোহান চৌধুরী, দেখতে শুনতে মাশাআল্লাহ রাজপুত্রের চেয়ে কম না। দুই ভাই বোন রোহান আর রিপা। রোহান অনার্স কমপ্লিট করে একটা পার্টটাইম জব করে। ওর বাবা রাসেদ চৌধুরী সরকারি কলেজের প্রিনসিপাল।আর মা(সাহেদা) গৃহিণী। রিপা এবার ক্লাস টেনে পরে।
আর নায়িকা রুহি,তবে নাইকা বদলাতেও পারে।আবার নাও বদলাতে পারে।রুহিরাও দুই ভাই বোন। রুহি দেখতে উজ্জ্বল শ্যাম, চুলগুলো বেশি বড় না ঘার পর্যন্ত, সবসময় দুই ঝুটি করে ছোটদের মতো ঘুরে বেরায়। পরাশুনায় মোটিমুটি ভালো। রোল সবসময় এক থেকে পাঁচের মধ্যে থাকে।রিপা আর রুহি সমবয়সি,দুইজনেই ক্লাস টেনে একি স্কুল এ পরে।রুহির ছোট ভাই (তৌকির) ক্লাস সেভেনে পরে। রুহির বাবা ব্যবসা করে। রুহি আর তৌকিরের নামে একটা শপিংমল আছে।যেটা ওর নানু দিয়েছে।
রুহি আর রোহান চাচাতো ভাই বোন। রুহির বাবারা দুই ভাই এক বোন। সাদিয়া হলো রুহির ফুপাতো বোন।এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।এখানে রোহানের বাবার কলেজ কাছাকাছি হওয়ায় এই কলেজে ভর্তি হয়। নানুবাড়ি থেকে পড়াশুনা করবে। সাদিয়ার বড়ো ভাই রোহানের থেকে তিনবছরের বড়ো।ও একজন ডাক্তার। সাদিয়ার বাবা বিদেশে থাকে।
আসলে আজ যখন রিপা আর রুহি স্কুল থেকে ফিরছিল তখন হঠাৎ রোহানকে দেখে সাদিয়াকে বাইকে নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। রিপা আর রুহি রিকশায় ছিলো রোহান ওদের দেখে নি। রুহি রোহানকে দেখে রিপাকে বলে,
রিপু আমি যা দেখছি তুই ও কি তাই দেখছিস,
হ্য রে রুহি, তোর কপাল এবার পুড়লো বুঝি। এই সাদিয়া আপু তো দুইমাস হয় এসেই ভাইয়াকে হাত করে নিয়েছে রে।
তোর ভাইয়ের চরিত্র খারাপ আগে তো জানতাম না।
আমরা আজকেই হোস্টেল এ চলে যাবো রিপু। থাকবো না এখানে।
তাই নাকি, তুই যাবি হোস্টেলে। ছোট আম্মু এতো বকেও তোকে হোস্টেলে পাঠাতে পারে না আর আজ নিজে থেকেই বলছিস।
রুহি ভাবে যার জন্য বাইরে থাকতাম না তাকে অন্যকারো সাথে বাড়িতে দেখতে পারবো না।
রুহি আর রিপা কে হোস্টেলে রাখা হয়েছিলো যাতে স্কুল করে প্রাইভেট পরতে কোনো অসুবিধা না হয়। বাড়ি থেকে আলাদা আলাদা সময় পরতে যেতে একটু সমস্যা হয় তাই। কিন্তু রুহি থাকতে চাইতো না। রেডি হয়েও রোহানের কাছে গিয়ে কেদে কেদে বলতো আমি যাবো না রোহান ভাই।
আর রোহান তার প্রেয়সীর কান্না সহ্য করতে না পেরে বলতো থাক যেতে হবে না।
,,
এই হলো ঘটনা। তারপর কি হলো তা তো দেখলেন। এখন রুহি মনে মনে ভাবছে কি করে সাদিয়ার সামনে রোহানকে শায়েস্তা করা যায়।
আমি তো আজ চলে যাবো, কিন্তু তোমাদের মাঝেও ঝগড়া লাগিয়ে দিয়ে যাবো। তখন বুঝবে রুহি কি জিনিস।
রোহান নিজে থেকে সাদিয়াকে ডাকছে ভেবে সাদিয়া তো মহা খুশি, ও তারাতাড়ি করে চুলগুলো একটু আচড়িয়ে ঠোঁটে আর লিপস্টিক দিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে নিলো।
আচ্ছা আমি কি অনেক সুন্দর, না হলে একটু বলার সাথে রোহান ভাই,না না রোহান,আমাকে বাইকে নিলো আর এখন নিজের ঘরে ডাকছে।যাই শুনে আসি কি বলে।
রুহি এতোক্ষণ সাদিয়ার আসার অপেক্ষায় ছিলো। সাদিয়া যেই রুম থেকে বের হয়েছে তখনি রুহি রোহানের রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো।
সাদিয়া এসে দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, রোহান ভাই আমাকে ডেকছো।
কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। থাকবে কেমনে রুহি রোহানের মুখে টেপ মেরে রেখেছে। হাত বাধা থাকার কারনে বেচারা খুলতেও পারছে না।
আসলে রুহি রোহানের রুমে এসে দেখে রোহান উল্টো হয়ে হাত দুটো দুই দিকে দিয়ে শুয়ে আছে। ওকে এই অবস্থায় দেখে রুহির মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। রুহি নিজের একটা ওড়না দিয়ে রোহানের হাত দুটো বেঁধে দেয়। রোহানের চোখ লেগে আসছিলো তাই কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুহি ওর মুখে টেপ লাগিয়ে দেয়। এখন শুধু উমম উমমমম করতেছে। আর রুহি হাসতেছে।
সাদিয়া কয়েকবার ডাকার পর ভেতর থেকে কেমন যেনো একটা আওয়াজ পায়। তাই ভালো করে শোনার জন্য দরজায় কান লাগিয়ে দেয়। তখনি রুহি বলে সাদিয়া আপু তুমি পরে আসিও। এখন ভাইয়া বিজি আছে। সাদিয়া বলে ওঠে ,
ভাইয়া বিজি আছে না কি ভাইয়াকে বলতে বল তুই কেনো বলিস। তুই কি ভাইয়ার এসিস্টেন।
এই রুহি আর সাদিয়া দুজনের এক দন্ড মিশতে পারে না। দুজনের মধ্যে সাপ নেউলের সম্পর্ক সেটা অবশ্য রোহানের জন্যই।
রুহি : বললাম তো ভাইয়া ব্যস্ত আছে। তাই আমাকে বলতে বললো। এখন তুমি যদি মনে কর আমি ভাইয়ার এসিস্টেন তাহলে তাই
সাদিয়া মুখ বেকিয়ে চলে গেলো
এদিকে রুহির কর্মকাণ্ড দেখে রোহান অবাক। কিন্তু ও তো এটাই চায় রুহি যেনো সবসময় ওর ওপর অধিকার ফলায়। কিন্তু সেটা রুহি কে বুঝতে দেওয়া যাবে না।
রুহি রোহানের হাত খুলে দিয়ে সাথে সাথে পালানোর বৃথা চেষ্টা করে কারন ও পালানোর আগেই রোহান ওর হাত ধরে ফেলে।
ভাইয়া আ আসলে,,,
আসলে কি রুহি বেবি,, চোখ রাঙ্গিয়ে
রুহি মনে মনে ভাবে আজ আর রক্ষা নেই। এই এনাকন্ডাকে বেধে রাখার অপরাধে না জানি আমাকে কত কি সহ্য করতে হবে,,
চলবে,
নিয়ে আসলাম নতুন গল্প, বাস্তবের সাথে যুক্ত করতে আসবেন না। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।
#তুমি_আমার_অধিকার
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম