তুমি আমার প্রাণ পর্ব -১৬

#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ১৬
#Mitu-মিতু

আগেকার মতো এখন গ্রাম আর শহরের মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখা যায় না। সময়ের সাথে সাথে আসে সবকিছুতে পরিবর্তন। রসুলপুর গ্রামে এখন দেখা যায় উন্নয়নের জোয়ার। মাঠের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাটির রাস্তা আর মাটির নেই। মাটির ওপর এখন ইট,,বালির পুরু স্তর। চোখের পলকে কেটে গেলো সময়। দেখতে দেখতে তানিয়ার বিয়ের সময় ঘনিয়ে এলো। আর দশদিন পর বিয়ে। চেয়ারম্যান সাহেবের একমাত্র মেয়ের বিয়ে।সেখানে তিনি কোনো কার্পন্যতা রাখতে চান না। চেয়ারম্যান হওয়ার সুবিধার্থে অনেক উচ্চমানের লোকজনের সাথে উঠ-বস। এমপি সাহেবকে তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে দাওয়াত করেছেন।চেয়ারম্যান বাড়িতে বিয়ের ধুম পরে গেছে। মুর্শিদার বাবার বাড়িতে সকল আত্মীয়-স্বজন আমন্ত্রিত। অতি কাছের মানুষ গুলো পুটলি বেধে চলে এসেছে রসুলপুর। বিয়ের বাড়িতে কত কাজ।তানিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবী আজ বিকেলে চলে আসবে।বান্ধবীর বিয়ে তারা জমজমাট ভাবে কাটাতে চায়। রিশার তেমন কোনো প্যারা নাই। সে শুধু জুইকে ধরেছে আচ্ছা মতো। তারা দুজন জানের জান। জুই আর দুইদিন পর আসবে রসুলপুর। তাসরিফ দূর থেকেই সবকিছুতে সামিল হচ্ছে। তার ছুটি তো আর মুখের কথা না। বোনের বিয়ের দায়িত্বটা সাধারণত বড়ভাই পরিচালনা করে থাকে কিন্তু তাসরিফ তা করতে পারছে না। সে আসবে বিয়ের দুদিন আগে। চেয়ারম্যান বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। সৌন্দর্যতা বৃদ্ধির জন্য আশেপাশের গাছগুলোর গোড়ায় চুন দেওয়া হয়েছে। পুরো বাড়ি ডেকোরেশন সম্পন্ন না হলেও প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। বাড়ির মেয়ে সদস্যরা বিয়ের কস্টিউম নিয়ে ব্যস্ত। বিয়ের সকল জিনিসপত্র তারা শহর থেকে আনবে। সবগুলো কক্ষ গোছানোর দায়িত্ব পরেছে বাড়ির মেয়েদের ওপর। রিশা তার আর সাহেরা বানুর কক্ষ গোছানো শেষ করে গোসলখানায় ঢুকেছে। দুপুর পেরিয়ে গেছে,, তানিয়ার বান্ধবীরা আসার পর মেয়েদের পোশাক কেনার জন্য তারা শহরের উদ্দেশ্যে বের হবে।

“কিরে পুতুল!কোথায় তুই? ”

রিশাকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকলো তানিয়া। রিশার সাড়াশব্দ না পেয়ে বাথরুমের কাছে দাড়ালো।পানির পড়ার শব্দ পেয়ে সে রিশার বিছানায় বসলো।

“আপু! কিছু বলবে?”

রিশা বের হয়ে তানিয়াকে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো। তানিয়া রিশাকে বললো

“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে পুতুল।ওরা কাছাকাছি চলে এসেছে। ওরা এখানে এসে একটু নাস্তা করেই বের হবে।”

“আচ্ছা আমি রেডি হচ্ছি তুমিও রেডি হয়ে নেও”

তানিয়া চলে গেলো। রিশা বারান্দায় জামা বিছিয়ে দিয়ে দোতলা থেকে নিচে নামলো।সকালে সাহেরা বানুর সাথে তেমন কথাই। হয়নি ব্যস্ততায়। সে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো সেখানে সাহেরা বানু সবার জন্য নাস্তা তৈরি করছে।

“মা!”

“পুতুল! এখানে সেই গরম তুই যা এখান থেকে। রেডি হোসনি কেনো এখনো? তাড়াতাড়ি যা।”

“মা আমার যেতে ইচ্ছে করছে ন। কাউকে তেমন চিনি না। আমি গিয়ে কি করবো।”

মুর্শিদা রান্নাঘরে প্রবেশ করার সময় রিশার কথাটা শুনতে পেলেন।

“সে কি কথা পুতুল! তানিয়া তো যাচ্ছে সাথে। দুবোন একসাথে থাকবে তাহলেই হয়ে যাবে।এখন তুমি যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে না-ও। তাছারা দেরি হয়ে যাবে।”

সাহেরা বানু মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। রিশা তার দিকে তাকালে তিনি বলেন

“যা মা! বাড়িতে একা একা আরো ভালো লাগবে না। প্রায় সবাই তো যাবে।”

রিশা আর কিছু বললো না। সে ভাবলো জুই থাকলে ভালো হতো।দুজন গল্প করে,,ঘুরেফিরে সময় পার করে দিতো।তানিয়ার ভালো লেখাপড়ার জন্য সে শহরে হোস্টেলে থেকে ইউনিভার্সিটিতে পরতো।ছেলে-মেয়ে কয়েকজন মিলে তার একটা বড় ফ্রেন্ড সার্কেল আছে। সব মিলিয়ে পনেরো জনের মতো হবে।এরমধ্যে ছয়জন ছেলে বন্ধু। শিক্ষিত ব্যক্তি মতিন সাহেব। তিনি জানেন লেখাপড়া করতে গেলে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব হওয়া স্বাভাবিক। তিনি মেয়ের ছেলে বন্ধু নিয়ে তেমন মাথা ঘামাননি। তানিয়ার বন্ধু-বান্ধবীরা পৌছে গেছে চেয়ারম্যান বাড়ি। মেয়েদের জন্য তানিয়ার ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে আর ছেলে ছয়জনের জন্য অন্য একটা ঘর। তানিয়ার বন্ধু -বান্ধবী সবাই ওদের মতোই উচ্চ পরিবারের। ছেলেদের মধ্যে দুজন আছে বিত্তশালী বাবার ছেলে। রিশা ঘরে এসে দেখে ওর ফোন বেজে যাচ্ছে অনবরত। তাসরিফ ফোন দিয়েছে। ফোন না ধরলে বেয়াদবি হবে তাই রিশা ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে আছে। ফোনের ওপাশ থেকে কোনো কথা নেই রিশাও চুপচাপ আছে। একমিনিট,, দুইমিনিট করে পাঁচমিনিট হয়ে গেলো দু’প্রান্তের কারো কোনো কথা নেই। নিরবতা ভেঙ্গে তাসরিফ জিজ্ঞেস করলো

“তানিয়ার বন্ধু -বান্ধবী পৌছেছে?”

“হুম ”

“ছেলে আছে কয়জন?”

“আপু বলেছে ছয়জন আসবে,, আমি দেখিনি।”

তাসরিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।সে দূরে থাকে। তার পুতুলকে নিয়ে ভয়ে থাকে। আবেগের বয়সে কাউকে আবার মন না দিয়ে বসে। সেও কাছে থাকতে পারে না। ছোটকালের স্বপ্ন সে দায়িত্ব সহকারে পালন করছে।

“বিয়ের জন্য কেনাকাটা করেছিস?”

“এখন যাবো আপুদের সাথে। ”

তাসরিফ গাম্ভীর্যতা ধারন করলো। তানিয়ার সাথে তো ছেলেরাও যাবে। রিশা আগুন সুন্দরী না হলেও ছেলেদের প্রেমে পরার মতো সৌন্দর্যতা ওর মাঝে আছে।

“পুতুল? ”

“কি ভাইয়া”

“যাই হোকনা কেনো তুমি সবসময় এটা মনে রেখো তোমার জন্য কেউ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কারো প্রাণ ভোমরা তুমি। ছেলেদের সঙ্গ থেকে দূরে থাকবে। ”

সবসময় যার থেকে “তুই ” বলে সম্মোধন পেয়েছে তার শীতল কন্ঠে তুমি ডাক শুনে রিশার দম আটকে আসলো। আর এগুলো বলার মানে কি?

“ভাইয়া! পরে কথা হবে।এখন আমি রেডি হবো। দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”

“সাধারণ একটা সালোয়ার-কামিজ পরবি। সাজ-গোজ যেনো না হয়। আর ওরনাটা ঠিক মতো রাখিস। গল্পে মত্ত হলে তো কোনোদিকে খেয়াল থাকেনা। নারীরা সকল সৌন্দর্যতা তার স্বামীর জন্য। সবকিছু দেখার অধিকার সবার থাকে না। একান্ত একজন ব্যক্তির জন্য বরাদ্দ থাকে।

তাসরিফের থেকে এমন কথা শুনে রিশা হতভম্ব হয়ে গেলো। এ কার মুখে কেমন কথা শুনছে? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো এখানো তার ওড়না ঠিক নেই। একপাশে পড়ে আছে অবহেলায়। ওরনা চেপে ধরে সে।তাসরিফ ফোন রেখে দিয়েছে। রিশার আশেপাশে ছেলে থাকবে এটা নিয়ে স্বাভাবিক হতে পারছে না সে। ভালোবাসা বুঝি এমনি। যাকে ভালোবাসা হয় তার পাশে একটা পাখিকেও যে সহ্য হয় না প্রেমিক-প্রেমিকার। রিশা আর তাসরিফ এর মাঝের এ দূরত্ব তাসরিফ কে বেশ পিড়া দেয়। ছোট থেকেই গাম্ভীর্যপূর্ন তাসরিফ কখন এতো দিওয়ানা হলো তার পুতুলের জন্য।

_________________

পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে শহর অভিমুখে চলছে দুটো বড় হাইজ। একটাতে তানিয়ার বন্ধু-বান্ধন সহ রিশা।অন্যটাতে তানিয়ার মামাতো বোন-ভাইয়ারা।আড়াই ঘন্টার পথ অতিক্রম করে সবাই পৌছালো শহরে। সবাই প্রথমেই গেলো কনেকে নিয়ে পার্লারে। তানিয়া এমনিতেও অনেক সুন্দরী তারপর ও বিয়ে উপলক্ষে আর একটু প্রচেষ্টা গ্লো করার জন্য।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here