#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২
হা হা স্যারের বউ। হাউ ফানি। প্রতিদিন এমন অনেক মেয়েই ফোন দেয় স্যারের বউ সেজে।
কণার রাগটা তরতর করে বাড়ছে। রেগে মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই এলিনা কল কেটে দেয়। এতে যেনো কণার রাগটা আকাশসম হয়ে গেলো। রেগে হাতের ফোনটা ছুঁড়ে মারে। মুহুর্তের মাঝেই ফোনটা ভেঙে দুই খন্ড হয়ে যায়। রাগে কণার শরীর থরথর করে কাঁপছে। দুই হাত দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরে। কণার এতো রাগ লাগছে যে এই মুহুর্তে ঐ এলিনা টেলিনা বা আদিয়াতকে পেলে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিতো।
৭৪
এখন প্রায় রাত ৮ টা বাঁজে। আদিয়াত নিজের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তার বেলি ফুলের মালা আর চকলেট। সে জানে কণা আজকে তার ওপর ভীষণ রেগে আছে। রেগে থাকারই কথা সে কথা দিয়েও কথা রাখতে পারেনি। এখন তার রাগিণীর রাগ ভাঙাতে হবে। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আদিয়াত নিজের হাতে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খুলে। চুপিচুপি ড্রয়িংরুমে পা রাখে। ড্রয়িংরুম জুরে অন্ধকার দেখে আদিয়াত একটু অবাক হয়। চারদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে সবগুলো রুমের লাইট অফ। এতে আদিয়াত আরো বেশি অবাক হয়।
কণা সাধারণত অন্ধকারে থাকে না। অন্ধকারে ভয় পায় না তবে তার মনে হয় তার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদিয়াত বুঝতে পারছে কণা বেশ রেগে গেছে। আদিয়াত দ্রুত পা চালিয়ে নিজের রুমের দিকে যায়।
রুমের লাইট অন করে দেখে রুমে কেউ নেই। বেলকনি, ওয়াশরুম চেক করে কিন্তু কণা কোথাও নেই। আদিয়াতের আর বুঝতে বাকি থাকে না কণা কোথায় আছে। আদিয়াত দৌড়ে ছাদের দিকে যায়। তার ধারণাই একদম ঠিক কণা ছাদেই আছে। কণা ছাদের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। আদিয়াত নিঃশব্দে হাসে। কণার কোমড় অব্দি চুলগুলো বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে উড়ছে। আদিয়াত নিঃশব্দে গিয়ে কণার পিছনে দাঁড়ায়।
কণা আদিয়াতের উপস্থিতি বুঝতে পেরেও চুপ করে আছে। এক ধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আদিয়াত কণার চুলে বেলি ফুলের মালাটা গুজে দেয়। কণাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কণা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আদিয়াত কণার দিকে একটু এগিয়ে আসতেই কণা আদিয়াতকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। আদিয়াত বিস্ফোরিত নয়নে কণার দিকে তাকিয়ে আছে।
একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। আজকে আপনার এসব কথায় কোনো কাজ হবে না। আপনার এসব আলগা পিরিতে আমার মন গলবে না।
আদিয়াত কণার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। কণার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চোখ দুটো ফোলাফোলা ছলছল করছে। আদিয়াতের বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। আদিয়াতের মনে একটা প্রশ্নই ঘুরছে কণা কেনো কাঁদছিল? তার কাজের জন্য কী কণা কাঁদছে? সে তো ভেবেছিল কণা শুধু রেগে থাকবে কান্না-কাটি করবে এটা বুঝতে পারেনি। আদিয়াত দুই পা এগিয়ে গিয়ে কণাকে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
কী হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেনো? আমি তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেও রাখতে পারিনি তার জন্য সরি। প্লিজ কেঁদো না। তুমি জানো না আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারিনি। তোমার চোখের এক ফোটা অশ্রু দেখলে আমার…….
আদিয়াতের ফোন বেঁজে ওঠে। ইম্পর্টেন্ট কল দেখে আদিয়াত রিসিভ করে।
হ্যালো।
অপর পাশের কথা আদিয়াত শোনার আগেই আদিয়াতের হাত থেকে কণা ফোনটা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে মারে। কণার প্রত্যেকটা কর্মকাণ্ডে শুধু আদিয়াত অবাক হচ্ছে। কণার এবারের কাজে যেনো আদিয়াত চোখ কোঠর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। কণাকে সে রাগতে দেখেছে কিন্তু এতোটা রাগতে কখনোই দেখেনি। কণা রেগে কখনোই জিনিস ভাঙচুর করে না। হঠাৎ কণা ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ে। আদিয়াত কণার কান্ডে অনেকটা ভড়কে যায়। আদিয়াত দ্রুত এগিয়ে এসে কণার পাশে বসে পড়ে। আদিয়াত কণার গালে হাত রেখে বলে,
কী হয়েছে ধূলিকণা? তুমি কাঁদছো কেনো? বল না আমাকে? তোমাকে কেউ কিছু বলেছে? প্লিজ বল না আমাকে।
কণা আদিয়াতের হাতটা নিজের গাল থেকে এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়।
একদম আমাকে ছুঁবেন নাহ। চাই আপনার দয়া। আমাকে আর আপনার ভালো লাগে না তাই না? আমি তো পুরোনো হয়ে গেছি। তাই না? দেখতেও তো ভালো না। আমি কুৎসিত একটা মেয়ে। আমাকে কেনো ভালোবাসতে যাবেন। সবাই তো আমাকে দয়া করে। আপনিও তো আমাকে দয়া করছেন। দয়া করেই তো আমাকে বিয়ে করেছেন। আমার মতো মেয়েকে তো আর কেউ ভালোবেসে বিয়ে করতে পারে না। এটা আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল।
আদিয়াত কণাকে ধমকের সুরে বলে,
চুপ করো। একদম চুপ করো। একটা কথাও বলবে না। সব সময় সবকিছুতেই তোমার এক লাইন বেশি বুঝতে হয় তাই না? এক লাইন বেশি না বুঝলে তোমার ভালো লাগে না। কে বলেছে আমি তোমাকে দয়া করে বিয়ে করেছি। তুমি বুঝতে পারো না আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আমার ভালোবাসা তুমি অনুভব করতে পারো না।
আপনাকে আর অভিনয় করতে হবে না। আপনি তো আমাকে আর আমার সাথে সংসার করতে করতে হাঁপিয়ে গেছেন তাই না? আপনাকে আর আমাকে দয়া করতে হবে না। দয়া করে আর আমার সাথে জোর করে সংসার করতে হবে না। আমি আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিলাম। আজ থেকে আপনি মুক্ত স্বাধীন।আপনার চলার পথে আর কণা নামে কোনো বাধা থাকবে না। আজকেই আমি এই বাড়ি থেকে চলে যাব। খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে ডিবোর্স ও দিয়ে দিব।
ডিবোর্সের কথা বলতেই আদিয়াত কণার গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারে। দুই হাতে কণার গাল চেপে ধরে।
আমি তোকে মুক্তি দিতে বলেছি। আমি একবারও জন্য বলেছি যে, আমি তোর সাথে সংসার করতে করতে হাঁপিয়ে গেছি। বলেছি তোকে আমি ভালোবাসি না। বলেছি তুই আমার কাছে পুরোনো হয়ে গেছিস।তোকে আমি দয়া করে বিয়ে করেছি। আমি তোকে ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তুই বুঝতে পারিস না আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি? নাকি তোর আর আমাকে ভালো লাগে না। তুই মুক্তি চাস আমার কাছ থেকে মুক্তি। এই মুক্তি তুই কোনোদিন আমার কাছ থেকে পাবি না। আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোর মুক্তি অসম্ভব। এই জীবন থাকতে তোকে আমি মুক্তি দিব না। তাই তুই মুক্তির কথা ভুলে যা।
আদিয়াত একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। অন্যদিকে তাকিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নেয়। আদিয়াত কণার দিকে তাকায়। আদিয়াত চোখ দুটো ছলছল করছে। আদিয়াত রুক্ষ কন্ঠ বলে। যেই কন্ঠে নেই কোনো রাগ আছে শুধু অভিমান।
তুমি কেনো আমাকে এতো জ্বালাও। আমাকে জ্বালিয়ে তুমি কী সুখ পাও? আমাকে জ্বলতে দেখলে তোমার অনেক ভালো লাগে তাই না? জন্মের পর থেকে আমাকে জ্বালিয়ে যাচ্ছো? কেনো এমন করছো? কখনো দুরে সরে গিয়ে আমাকে জ্বালাচ্ছো তো কখনো কাছে এসে জ্বালাচ্ছো। এতো কেনো জ্বালাও আমাকে? ইচ্ছে করে তোমাকে কেটে কুচি কুচি করে বোতলে ভরে রাখি। এটলিস্ট সব সময় তো আমার সামনে থাকবে। যখন ইচ্ছে তোমাকে দেখতে পারবো। এটলিস্ট কখনো দুরে সরে যাওয়ার কথা তো বলতে পারবে না।
চলবে……..
(গল্পটা মনে হয় আপনাদের কাছে ভালো লাগছে না। তাই না? ভালো না লাগলে ফটাফট বলে ফেলুন।)