তুমি আমার প্রেয়সী ৩ পর্ব -০৩

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩

তুমি কেনো আমাকে এতো জ্বালাও। আমাকে জ্বালিয়ে তুমি কী সুখ পাও? আমাকে জ্বলতে দেখলে তোমার অনেক ভালো লাগে তাই না? জন্মের পর থেকে আমাকে জ্বালিয়ে যাচ্ছো? কেনো এমন করছো? কখনো দুরে সরে গিয়ে আমাকে জ্বালাচ্ছো তো কখনো কাছে এসে জ্বালাচ্ছো। এতো কেনো জ্বালাও আমাকে? ইচ্ছে করে তোমাকে কেটে কুচি কুচি করে বোতলে ভরে রাখি। এটলিস্ট সব সময় তো আমার সামনে থাকবে। যখন ইচ্ছে তোমাকে দেখতে পারবো। এটলিস্ট কখনো দুরে সরে যাওয়ার কথা তো বলতে পারবে না।

কণা দরজা দিকে একবার তাকিয়ে হুট করেই আদিয়াতকে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াত প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে নিজেও কণাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কণা আদিয়াতকে ছেড়ে দেয়। আদিয়াত কণার চোখের পানিটা মুছে দিতে গেলেই কণা হাত সরিয়ে দেয়। আদিয়াতের কলার টেনে ধরে। তারপর কণা কাঠ কাঠ গলায় বলে,

জড়িয়ে ধরেছি বলে ভাববেন নাহ আমার রাগ কমে গেছে। এই এলিনাটা কে? হ্যাঁ? ঐ এলিনা টেলিনার কাছে আপনার ফোন থাকে কেনো?

কণার রাগ দেখে আদিয়াত ভয়ে চুপসে যায়। আদিয়াত মিন মিন করে বলে,

ও আমার পিএ। তখন একটা ইম্পর্টেন্ট মিটিং ছিল আর মিটিংয়ে ফোন নেওয়ার রুলস নেই তাই ওর কাছে ফোনটা রেখে গিয়েছিলাম।

আদিয়াতের কথা শুনে কণা আরো রেগে যায়। কণা আদিয়াতের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলে,

এলিনাকে এখন ‘ও’ বলা হচ্ছে। আরেক বার এই মেয়ের নাম মুখে নিলে ঘুষি মেরে নাক ভেঙে দিব। আর আপনার পিএ একজন মেয়ে কেনো হবে? বাংলাদেশে কী ছেলের অভাব হয়েছে।

আদিয়াত বাঁকা হেসে কণার কোমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলে,

মিসেস কণা কী জেলাস? আপনি কী আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করছেন?

হ্যাঁ হ্যাঁ জেলাস ফিল করছি। আমি জেলাস ফিল করবো না তো ঐ এলিনা জেলাস ফিল করবে।

এলিনা জেলাস ফিল করলে তো আমি ধন্য হয়ে যাবো।

হওয়াচ্ছি আপনাকে ধন্য। আপনি যেমন মেয়ে নিয়ে ঘুরেন কালকে থেকে আমিও ছেলে নিয়ে ঘুরবো। হাতে হাত রেখে রাস্তা দিয়ে হাঁটবো।

কণা চুপ করো।

কেনো চুপ করবো? আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো? আমার সবটা কথা শুনুন তো। দুইজন একটা আইসক্রিম ভাগাভাগি করে খাবো। আইসক্রিম খাওয়ার বাহনায় তার ঠোঁট আমার ঠোঁট ছুঁ……

স্টপিড কণা। চুর একদম চুপ।

চুপ করবো না আমি। আপনার রাগ হয় আমার রাগ হয় না বুঝি। আপনার ফোন অন্য একটা মেয়ে রিসিভ করে আমার যা নয় তা বলবে তখনও আমি রাগ করবো না। আমি আপনার নকল বউ সেজে আপনাকে ফোন দিয়েছি। এটা শুনেও আমি রাগ করতে পারবো না? নাকি আমার রাগ করার অধিকার নেই? নাকি আমার রাগ নেই শুধু আপনারই রাগ আছে। নাকি রাগ করার অধিকার শুধু আপনার আছে আর কারোর নেই।

এসব কী বলছো তুমি?

কণা আদিয়াতকে সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। সবটা শুনে আদিয়াত রাগে কটমট করছে। আদিয়াত ভাবতেই অবাক লাগছে একটা সাধারণ পিএ হয়ে এলিনার এতো সাহস হয় কী করে? তার ধূলিকণাকে অপমান করেছে সে এটা মানতে পারছে না। আদিয়াত মনে মনে বলে,

তোমাকে এর দাম দিতেই হবে। আমার ধূলিকণার চোখের অশ্রুর মূল্য তোমাকে দিতেই হবে। মিস এলিনা তোমার জন্য কী অপেক্ষা করছে সেটা তুমি নিজেও জানো না।

৭৫

অহি ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে তার ভ্রু জোড়া কুচকে যায় অপরিচিত একটা ছেলেকে তাদের ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে থাকতে দেখে। অহির ভ্রু জোড়া আরও কুচকে যায় তার মাকে এই ছেলেকে এতো আপ্যায়ন করতে দেখে। এই ছেলেকে সে আগে দেখেছে বলে তার মনে পড়ছে না। তার মামাতো, ফুফাতো, জেঠাতো ভাইয়ের মাঝে কেউ না। সে তার সব মামাতো, ফুফাতো, জেঠাতো ভাইকে চিনে। অহি আরেকটু এগিয়ে যায়।

অমিত বাবা তুমি তো দেখছি কিছুই খাচ্ছো না।

অমিত নামটা শুনে অহি দাঁড়িয়ে যায়। তার মানে এই ছেলেটার নাম অমিত। অহির মনে হচ্ছে অমিত নামটা সে আগেও কোথাও শুনেছে। কিন্তু কোথায় শুনেছে সেটা মনে করতে পারছে না। অহিকে দেখেই অহির মা বলে,

এই তো বাবা অহি চলে এসেছে। অহি এদিকে আয়। দেখ কে এসেছে।

অমিত এবার অহির দিকে তাকায়। অমিত অনেকটা অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছে। অহির অস্বস্তি হচ্ছে এমন তাকানো দেখে। অহি মনে মনে অমিতকে লুচ্চা বলে কয়েকশ গালি দিয়ে নিল। অমিত পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ দিয়ে অহিকে স্ক্যান করছে। অহির ইচ্ছে করছে অমিতকে লাথি মেরে বাসা থেকে বের করে দিতে।

কে এসেছে?

অমিত এসেছে। আয় এদিকে বস।

অহির তার মার কথা শুনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে। তার মা এমন বলছে, অমিত এসেছে। অহি যেনো কত বছর ধরে অমিতকে চিনে। অহি না হেসে চোখ মুখ গম্ভীর করে বলে,

আম্মু তোমার মনে হচ্ছে না তুমি অনেক হাস্যকর কথা বলছো। তুমি যেভাবে বলছো আমি মনে হয় উনাকে জন্মের পর থেকে চিনি।

আরে বাবা রাগ করিস না। এখানে অমিতের পাশে বস।

অহি ভ্রু কুচকে বলে,
আমি উনার পাশে বসতে যাব কেনো? আম্মু তোমার মনে হচ্ছে না তুমি অদ্ভুদ বিহেইভ করছো। আর আমার এখন বসার সময় নেই। আমার ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
আমি আসছি।

অহি কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বড় বড় পা ফেলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। অমিতের দৃষ্টি সে আর সহ্য করতে পারছে না। তার মা সামনে দেখে কিছু বলতেও পারছে না।

তুমি কিছু মনে করো না। ও একটু এরকমই। মাথাটা একটু গরম কিন্তু মনটা অনেক ভালো। হঠাৎ তোমাকে দেখেছে তো তাই এমন ব্যবহার করছে।

অমিত অহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে, এর জন্যই তো ওকে আমার এতো ভালো লাগে।

অমিতের কথা অহির মার বোধগম্য হলো না। তাই তিনি অমিতকে জিঙ্গেস করেন,

তুমি কী কিছু বললে?

না কিছু না।

৭৬

আদিয়াত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। তখনি কণা এসে আদিয়াতের সামনে দাঁড়ায়। আদিয়াতের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরে। আদিয়াত ভ্রু নাচিয়ে বলে,

কী?

কিছু না।

কণা আদিয়াতের খোলা রাখা কয়েকটা বোতাম আটকে দেয়। টাই বেধে দেয়। টেনে টুনে কলার ঠিক করে দেয়। হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দেয়।

কী ব্যাপার মিসেস? আপনার ভাব সাব তো আমার কাছে ভালো ঠেকছে না। মতলবটা কী?

কিসের মতলব? কোনো মতলব নেই। আমি কী আমার স্বামীর সেবা করতে পারি না?

করতেই পারেন। কিন্তু এমনিতে তো আপনাকে ডেকেও পাওয়া যায় না। আজকে এই অধমের প্রতি এতো ভালোবাসা। আহ এতোদিনে আমার কপাল খুললো।

আদিয়াত কণার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। কণা আদিয়াতের কলার নড়াচড়া করতে করতে বলে,

শুনুন নাহ।

হ্যাঁ বলো।

আমি আজকে আপনার সাথে অফিসে যাব।

আদিয়াত কণার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। কণার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। কণার পরনে একটা গোলাপী রঙের শাড়ি। কোমড় অব্দি চুলগুলো ছাড়া। ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here