#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্বঃ ৬
ধরণী জুড়ে রোদের নরম আলোয় ছেয়ে গেছে, রাত পোহালো ঘন্টা পার হয়ে গেছে, শহরের যানযট,কোলাহল আবারও নিয়ম করে শুরু হয়েছে। ঘুম ভেঙ্গেছে বেশ অনেকক্ষন আগে,কিন্তু বিছানা ছাড়ার নূন্যতম ইচ্ছে করছে নাহ। রাতভর ঝমঝম বৃষ্টি আর বাতাসের দাপটে প্রকৃতি যেনো সদ্য স্নান করা যুবতী। গাছের সবুজ পাতায় জমে থাকা পানি বিন্দুতে সূর্যের কিরণ পরায় মুক্তার ন্যায় চকচক করছে। জানালা দিয়ে সকালের নরম রোদ আর সচ্ছ রঙের আকাশ টা দেখতে মন্দ লাগছে না।
ঢং ঢং শব্দে দেওয়ার ঘড়িটা জানান দিলো সকাল সাতটা বাজে। আজ আবারও সকাল ৮ টাই মাহফুইজ্জা স্যারের ক্লাস। কিন্তু যাওয়ার ইচ্ছে নেই ছিটাফোঁটা। সটান হয়ে উপুর হয়ে পরে আছি বিছানায়। কাল সন্ধ্যায় লম্বা ঘুম আর রাতে বেহালার সঙ্গ পেয়ে ঘুম আর আসেনি,ভোরে চোখ দু’টো এক করেছি। সারা শরীর কেমন জমে আছে, এভাবে সারাদিন পরে থাকলে মন্দ হবে না হয়তো
-পালক? অলরেডি ৭ টা বাজে তুই উঠবি কখন ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে বেরোতে হবে তো
শিমুর ডাকে আড়মোড়া ভেঙে বসলাম
-উমম,উঠবো
-উঠবো নাহ,এক্ষুনি ওঠ,পরে না খেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে যাবি,আর সারা ক্লাস ক্ষুধা লেগেছে করে করে পাগল করে দিবি
-উফফ চুপ কর তো,কি সকাল সকাল জ্ঞান দেওয়া শুরু করলি,মুখ টা বন্ধ কর আর আমায় টেনে তোল
বলেই থপ করে আবারও শুয়ে পরলাম
-পালকক ওঠ শিগগির
বলেই আমায় হাত ধরে টানতে লাগলো শিমু
-উফফ এই মাহফুইজ্জারে কবেই খু’ন করতাম আমি,কিন্তু জেলের ভাত আমি খেতে পারবো না বলেই চুপ করে আছি।
বলেই গজগজ করতে করতে টাওয়াল টা হাতে নিয়েই ওয়াসরুমে ঢুকলাম,সকাল বেলা শাওয়ার না নিলে আমার একদম ই ফ্রেশ লাগে না।
____________
সকালের নরম রোদ চোখে মুখে পরাই ভ্রু কুচকে এলো মেঘের, পিঠের দিকে কেমন টান ধরে আছে, নড়াচড়া করতেও যেনো ব্যাথা হচ্ছে। কিন্তু চোখ খুলে তাকানোর ইচ্ছে করছে নাহ
-মেঘ, কই তুই? মেঘ
রুচিতার ডাকে চোখ খুলে তাকালো মেঘ,নিজেকে আবিস্কার করলো বারান্দায় কাউচের উপর। এখানে কি করে আসলো সে? তৎক্ষনাৎ মনে পরলো তার কাল রাতের কথা, ঝড়ো হাওয়ায় মৃদু বৃষ্টি আর বেহালার সুরে মাতোয়ারা হয়ে সে কখন কাউচের উপরেই ঘুমিয়ে গেছে মনে নায়। যেই মেঘ প্রপারলি বিছানা না গুছিয়ে ঘুমায় না সে কি না বারান্দার কাউচে বসে বসেই ঘুমিয়ে গেছে, মানা যায়!
-মেঘ তুই এখানে কি করছিস?
রুচির ডাকে ফিরে তাকালো মেঘ। মিষ্টি কে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। বাচ্চা টা তাকে দেখলেই কেমন টিপটিপ করে তাকিয়ে থাকে,প্রথম প্রথম তার কাছে না আসলেও এখন তার সাথে বেশ ভাব হয়েছে। তার জন্য অবশ্য মেঘ কে তার সাথে অনেক গল্প, খেলা করতে হয়েছে আর অনেক গুলো চকলেট ও দিতে হয়েছে রূচির থেকে লুকিয়ে।
-আপু,তুই কখন এলি?
-আমিতো অনেক আগেই এসেছি, মামুর সাথে গল্প করছিলাম,আমি ভেবেছি তুই হয়তো জগিং করতে বেরিয়েছিস,কিন্তু মামনী বললো তুই এখনো উঠিস নি।
আসলেই তো,সে তো রোজ সকাল ছয়টায় জগিংয়ে বেরিয়ে যায়,আজ টের অবদি পেলো নাহ। মেঘের ভাবনার মাঝে রুচিতা আবারও বললো
-মেঘ তুই সারারাত কাউচেই ঘুমিয়ে ছিলি?
-হ্যাঁ মানে ওই আসলে এখানে বসে ছিলাম তো কখন ঘুমিয়ে গেলাম টের পাইনি
মেঘের কথা শুনে মিষ্টি কোল থেকে বলে উঠলো
-মেঘ পতা ছেলে,মাম্মাম বলেতে যারা বিছানায় ঘুমাই না তালা বেদ বয় (ব্যাড বয়)
মিষ্টির এমন ভাঙা ভাঙা তোতলানো কথা শুনে মেঘ গাল প্রসারিত করে হেসে দেয়। কাছে গিয়ে মিষ্টির গাল টেনে বলে
-তাই?
-হুম
-তাইলে তো সবাই বলবে মিস্টির আংকেল পচা
-না না মিততির আংকেল ভালো, তুমিও ভালো
ঠোঁট উল্টে বললো মিষ্টি। মিষ্টির এমন কথায় মেঘ আর রুচি হেসে উঠলো।
-ভাই তুই যা ফ্রেস হয়ে আই শিগগির, আমি নাস্তা দিচ্ছি।
মেঘ স্মিত হেসে ফ্রেস হতে যায়
______________
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি সাতটা বেজে বিশ মিনিট, শিটট আজও দেরি হলে নিস্তার নেই,ফটাফট চুল থেকে তোয়ালে ছেড়ে এলোমেলো চুলে যেমন তেমন চিরুনি লাগিয়ে ব্যাগ টা কাধে নিয়েই দৌড়। আমি ওয়াসরুমে ঢুকলেই আরশি এসেছিলো, আজ নাকি ওর বাইরে নাস্তা করার ইচ্ছে করেছে, বাইরে থেকে বেশ কয়েকবার ডেকেছে আমায়, বাথরুমের দরজায় দুমদাম কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করার পর ও আমি খুলিনি তাই শিমুকে ধরে বেধে নিয়ে গেছে নিজের সাথে, যাক গে। ও আর ওর আবাল মার্কা ইচ্ছায় আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। কোনো রকম একটা পাউরুটি তে জ্যাম লাগিয়ে ধুপধাপ দৌড় লাগালাম। এই রাফাইততা টা উঠেছে কি না আল্লাহ জানে,ওর ঢিলামির জন্য যদি আজ দেরি হইছে তাইলে আজ ওকে ধাক্কা দিয়ে ড্রেনে ফেলবো। দরাজা ধাক্কা দিয়ে খুলতেই আঞ্জু আন্টিকে দেখলাম,টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে।
-গুড মর্নিং আন্টি
-গুড মর্নিং, কিরে তুই রেডি?
-হ্যাঁ তো,রাফাত কই? উঠেছে?
-কে ও? ওরে সাতটা থেকে ডাকছি, কুমিরের মতো বিছানাতে মোড়ামুড়ি করে,ঠেলে ঠুলে বাথরুমে ঢুকিয়ে আসলাম, গিয়ে দেখ কি করছে।
আন্টির কথা শুনে এক ছুটে ঘরে গেলাম,বাথরুমের দরজা এখনো বন্ধ ভেতর থেকে ভীষণ বাজে সুরে ভেসে আসছে
-হাম তুম,এক কামরে মে বন্ধ হো,ওর চাবি খো যায়ে
-রাফাইততা দুই মিনিটের মধ্যে না বেরোলে তোরে আমি বাথরুমে লক করে চাবি ভাগাড়ে ফেলে আসবো
আমার কথা শুনে গাম থামিয়ে উত্তর দিলো
-আফু? কয়টা বাজে রে?
-এখন বলছিস কয়টা বাজে? রাফাইততা শিগগির বেরো না তো আমি দরজা ভাঙবো
-একবার বলছিস লক করে চাবি ভাগাড়ে দিবি আর এখন বলছিস দরজা ভাঙবি,তুই আগে ঠিক কর কোনটা করবি
রাফাতের কথায় মাথাটা গরম হয়ে গেলো। ধুপধাপ ধাক্কা দিতে লাগলাম দরজায়
-আফুউ, আফু থাম আমি এক্ষুনি বেরোচ্ছি
উত্তর দেওয়ার দুই মিনিটের মাথায় বেরিয়ে আসলো রাফাত,পারাপারিতে চুলগুলো ও মুছতে পারেনি, পরনের টি-শার্ট টা পানিতে ভিজে গেছে অনেকটা। তোয়ালে দিয়ে এলোমেলো মুছতে মুছতে বললো
-ছি আফু,তুই কি না শেষে একজন নিরীহ ছেলের বাথরুমের দরজা ভাঙবি, দ্যাট মিনস মান হানি? আজ আমি নিরীহ বলে আমার সম্মান নিয়ে টানাটানি করবি
রাফাতের এই ওভারঅ্যাক্টিং দেখে আমার ভীষণ হাসি পেলেও তা দমিয়ে কড়া দৃষ্টিতে তাকালাম।আমার এমন চাহনি দেখে রাফাত বোকা বোকা মুখ করে বললো।
-এই না না,তুই তো খুব ভালো, এমন জঘন্য কাজ তুই করতেই পারিস নাহ।তুই তো সাক্ষাৎ দেবি।আম আমি এক্ষুনি বেরোচ্ছি
বলেই কোনো রকমে রেডি হয়ে ব্যাগ কাধে নিয়ে বেরোলো, ডাইনিং এ আসতেই আন্টি বললেন
-রাফাত না খেয়ে যাস না
রাফাত প্লেট থেকে দুটো রোল তুলে নিয়ে একটা আমার হাতে দিয়ে আরেকটা মুখে পুরেই দৌড়,তার পেছনে আমি,পেছন থেকে আন্টির গলা শুনা গেলো
-আস্তে যা তোরা পরে যাবি তো,এই দুটো সবসময়ই এমন করে
আন্টির কথায় কান না দিয়ে ধপধপ করে নিচে নেমে এলাম, পার্কিং থেকে বাইকা বের করে উঠে স্টার্ট করতেই রাফাত বলে উঠলো
-শিট,,আফু?
-কি হলো?
-হেলমেট টা আনতেই ভুলে গেছি।
-উফ রাফাইততা,মাঝে মাঝে তোরে মন চাই কিমা বানিয়ে ফেলি। বলেই আবারও দৌড় লাগালাম উপরের দিকে। এক ছুটে উপরে এসে টেবিলের উপর থেকে হেলমেট টা নিয়ে আবারও ছুট,দরজা থেকে বেরিয়ে সিড়ির দিকে যেতেই ভীষণ জোরে ধাক্কা লাগলো কিছুর সাথে তাল সামলাতে না পেরে পা পিছলে পরতে নিলাম।
ইয়া আল্লাহ আজ মনে হয় কোমড় টা গেলো খোদা,চার তালার সিড়ি থেকে পরে কোমড়ের হাড় একটাও অবশিষ্ট নেই হয়তো
আকস্মিক ভাবে হোচট খাওয়ায় ভয়ে এখনো চোখ বন্ধ। হঠাৎ মনে হলো আমি পরে যায়নি,ভেসে আছি। মুখের উপর উষ্ণ শ্বাস পরতেই চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে কারো শক্ত বাহুবন্ধনে আবদ্ধ পেলাম
শান্ত, স্নিগ্ধ চেহারাটা, ভীষণ ফর্সা গালটাই খোচা খোচা কালো বাদামী মিশ্রণের দাড়ি, ঠোঁট দুটো গাঢ় খয়েরি রঙের। নীলাভ চোখ জোড়া সূর্যের আলোয় যেনো নীলকান্ত মনির মতো চকচক করছে,সদ্য গোসল করায় চুল গুলো এখনো ভেজা ভেজা। এক কথায় সুন্দর,ভীষণ সুন্দর চেহারা টা। সুদর্শন শঙ্খচিল বললেও ভুল হবে নাহ। গভীর চোখদুটো সমুদ্রের ন্যায় শান্ত আর স্থির, চোখ ফেরানো সম্ভব নাহ। মমন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে আছি অপলক। কপালে লেপ্টে থাকা ভেজা চুল থেকে টপ করে একফোঁটা পানি পরলো চোখের উপর, টিপটিপ করে বারকয়েক পলক ফেললাম, হুস ফিরতে সোজা হয়ে দাড়ালাম। হতভম্বের মতো তাকিয়ে আছি
-আর ইউ ওকে?
আগত প্রশ্নে সম্ভিত পেলাম,কোনো মতে আমতাআমতা করে বললাম
-এ,হ্যাঁ মানে হ্যাঁ
আমার কথা যেনো উনার বোধগম্য হলো নাহ,ভ্রু কুচকে কৌতুহলী হয়ে তাকালেন। আমি এখনো বাকরুদ্ধ, কিছু বলতে পারছি নাহ,তাই আগ পাচ না বলে আবারও দৌড় লাগালাম সিড়ি বেয়ে
-আর আস্তে
মেয়েটা কি পাগল নাকি, আপন মনে বিড়বিড়িয়ে বললো মেঘ
-আরে একটা হেলমেট আনতে গিয়ে কি তুই চান্দের দেশে পাড়ি দিয়েছিলি
ছুটে এসে হেলমেট টা রাফাতের হাতে ধরিয়ে উঠে বসলাম পেছনে
-তুই চুপ কর,আরেকদিন হেলমেট ফেলে আসলে তোরেই ফেলে দিম, মরতে মরতে বাচলাম। আমি যদি সিড়ি দিয়ে পরে গিয়ে মরে যেতাম তখন আমার হবু জামাই এর বউ কি তুই হতিস
-আস্তাগফিরুল্লাহ,আমিতো ছেলে বউ ক্যান বর হবো আমি
-ইহহ,বউ ক্যান বর হবো,ঢঙ দেখে বাচি নাহ,তোর মতো আজাইরা রে রিপনা পাগলি মেয়ে ছাড়া কেও বিয়াইবো নাহ
-দেখ আফু প্লিজ আমারে প্রয়োজনে বিয়াই দিস না,তাও ওই ছেমড়ির নামডা নিস নাহ
-কেনো রে,বেচারি তোরে দেখার জন্য রোজ সেজে গুজে দাড়িয়ে থাকে,আর তুই এমন হেলাফেলা করিস, ওর টুরু লাভ কি তোমার চোখে পরে নাহ নিষ্ঠুর রাফাত!
রাফাতকে বিরক্ত করতে করতে ভার্সিটি পৌঁছে গেলাম,যাক বেচে গেছি,এখনো পাচঁ মিনিট বাকি আটটা বাজতে,ওই খাড়ুস মাহফুইজ্জার বকা শুনান লাগবো নাহ। রাফাত বাইকটা পার্ক করতে গেছে,আমি ধুপধাপ করে সিড়ি বেয়ে উঠছি,হঠাৎ কারো সাথে ধাপ করে ধাক্কা লেগে তার হাতের বই গুলো পরে গেলো
-আম সরি সরি সরি! আমি সত্যিই খেয়াল করিনি। বলেই দ্রুত বইগুলো উঠাতে লাগলাম
-তুমি পালক রাইট?
পুরুষালি কন্ঠস্বরে চোখ তুলে তাকালাম।
সাদা রঙের টি-শার্ট এর উপর কালো রঙের শার্ট পরে হাতা দুটো কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা, ফর্সা চেহারায় ঝাকড়া চুল,বেশ সুদর্শন ছেলেটা,আমি বইগুলো তুলে তার হাতে দিয়ে ছোট্ট জবাব দিলাম
-জ্বী
আমায় উত্তরে গাল প্রসারিত করে হেসে হাত বারিয়ে বললো
-হাই আমি আরাব, আরাব এহসান,এই ভার্সিটির ই, ফাইনাল ইয়ার
আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে দ্বিধা দন্দ করে হাত বাড়িয়ে বললাম
-আফারা নূর পালক
প্রতুত্তরে আমার হাতটি আগলে ধরে বললো,চিনি তোমায়। তোমরা ছয়জন বেস্ট ফ্রেন্ড সবসময় একসাথেই থাকো রাইট?
কোনো পুরুষ এভাবে হাত ধরায় বেশ অসস্থি বোধ হচ্ছিলো,হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম
-জ্বী
-কোন ডিপার্টমেন্ট?
-ইংরেজি
-আচ্ছা,তা এখন তো মেইবি মাহফুজ স্যারের ক্লাস
তাই তো,স্যারের নাম শুনেই টনক নড়লো,হাতঘড়িতে দেখি ঠিক সাতটা বেজে উনষাট।
-হ্যাহহ আমি আসছি
বলেই এক ছুটে ক্লাসে আসলাম।যাক বাচা গেলো। খাড়ুস টা এখনো আসেনি।আমি ঢুকার পরপরই রাফাত ঢুকলো, তৃতীয় লাইনের ঠিক মাঝের সাড়ির বেঞ্চ গুলো আমাদের ছয়জনের জন্য বরাদ্দ। আদ্রিশ আর নিবিড় শিমুর খাতা দেখে নোট তুলছে,আর আরশি মুখটা বাংলার পাচের মত করে অন্যদিকে ফিরয়ে রেখেছে,শিমু বার কয়েক জিগাসা করাই তাকে ধমক দিয়ে আবারও মুখে কুলুপ এটেছে। আমি গিয়ে ধপ করে ব্যগটা বেঞ্চের উপর রেখে দুজনের মাঝে বসে বললাম
-কিরে লম্বু,মুখটা এমন আটি ছাড়া আমের মতো চুপসে রেখেছিস কেনো
আমার কথা শুনে আরশি আমার দিকে ফিরে কিছু বলতে নিলেই সামনে তাকিয়ে চুপ হয়ে যায়, ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া, আজ মাহফুজ স্যার আসেনি৷? মানা যায়! যে কি না পারলে ক্লাস শুরুর দু মিনিট আগেই উপস্থিত হয়ে যায় সে আজ তিন মিনিট লেইটেও আসেনি। বরং তার পরিবর্তে এসেছে জন পাচেক ছেলে, এদের চেহারা গুলো তো চেনা,অনেক বার দেখেছি,এবার নিউ ফাইনাল ইয়ারের ব্যাচের এরা। তাদের মাঝখান থেকে একটা ছেলে এসে ঠিক পাশ বরাবর দাড়ালো চোখ তুলে তাকাতেই দেখি,চোখ জোড়া আমার দিকেই স্থির
.
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্বঃ৭
হাস্যজ্বল চেহারায় আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কিছুক্ষণ আগেই পরিচিত হওয়া আরাব নামের ব্যাক্তিটি, আমায় এভাবে বোকা বোকা চাহনি তে তাকিয়ে থাকতে দেখে,কিছুটা ঝুকে প্রশ্ন করলেন
-ভয় পেয়ে গেলে নাকি?
আমি কোনো রকম অপ্রস্তুত ভাবে ঘাড় নারালাম,যুবক স্মিত হেসে দুহাত পকেটে গুজে পিছিয়ে গেলেন তারপর বেশ দাম্ভিকতার সহিত গলা উচিয়ে বললেন
-গুড মর্নিং গাইস
সবাই একসাথে সউচ্ছাসে উত্তর দিলো
-গুড মর্নিং
-কি খবর সবার,নিউ সেকেন্ড ইয়ার কেমন লাগছে
সবাই আবারও তাল মিলিয়ে বললো
-খুব ভালো
পকেট থেকে এক হাত বের করে কপালে ঘষে আবারও আগের মতো দাড়ালেন। এবার বেশ গম্ভীর মুখ করে বলে উঠলেন।
-শুধু ভালো লাগলেই চলবে নাহ,এখন তোমরা সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্টস, তোমাদের ও জুনিয়র থাকবে এখন ক্যাম্পাসে। তাই আনন্দের সাথে দ্বায়িত্ব ও বেড়েছে,আর নিউ স্টুডেন্টস দের আগমনের দুমাস অলরেডি পাসড, নবীন বরন করতে হবে,সেখেয়াল আছে
উনার কথার এ পর্যায়ে এসে সবাই বেশ মনোযোগী হলো, এবার পাশ থেকে উনার মতোই আরেকজন সিনিয়র বললেন
-প্রতিবার যেহেতু সিনিয়র রা সব আয়োজনের দ্বায়িত্বে থাকে,তাই স্বাভাবিকভাবেই এবার আমরা এ দ্বায়িত্বে আছি। আর আমরা সিলেক্ট করবো কোন ব্যাচের সাথে আমরা কাজ করতে ইচ্ছুক। তাই আমরা এবার তোমাদের ব্যাচ সিলেক্ট করেছি যারা অনুষ্ঠানের এক একটা দ্বায়িত্বে থাকবে।
উনাদের কথা শুনে সবাই বেশ এক্সাইটেড হয়ে গেলো, ভার্সিটিতে এখন আরাব,তৌফিক আর ফাহিম ভাইকে সবাই এক নামে চেনে। যেমন তাদের রেজাল্ট তেমনি তাদের লুক আর স্টাইল। এক এক জন রায়িজ পরিবারের সন্তান। সব মেয়েরা এই তিনজন বলে পাগল। তিনজনকে গ্যাঙ অফ থ্রি বলেই সম্বোধন করে সকলে।
সকলের মধ্যে একটাই উত্তেজনা, কে বা কারা কাজ করবে তাদের সাথে। মেয়েরা শুধু সুযোগ খোজে তাদের সাথে কথা বলার,আশপাশে অলরেডি শুরু হয়ে গেছে মেয়েদের কানাঘুষা।
এর মাঝে আবারও আরাব ভাইয়া বলে উঠলো
-তোমরা কি দ্বায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক?
সবাই একসাথে হ্যাঁ বললো
-বেশ তবে তোমাদের মাঝ থেকে আমরা সিলেক্ট করবো, ব্রেক টাইমে সবাই হলরুমে উপস্থিত থাকবে,বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেলো একে একে তিনজন
এর মাঝেই পাশ থেকে কয়েকজন বিন্দি উপস আই মিন মেয়েদের কথা কানে আসলো
-ইশ আরাব ভাই কে দেখেছিস,হোয়াইট পরে পুরো মাখন লাগতাছে,মনডা চাইতেছে খেয়েই ফেলি, আমিতো মনে প্রাণে চাচ্ছি উনারা আমাকেই সিলেক্ট করুক
-ফাহিম ভাইয়ের দিকে ভুলেও তাকাইস নাহ,ওই চকলেট টা আমার
-তোরা যদি আরাব আর ফাহিম ভাই কে নিস তাইলে তৌফিক ভাই অবশ্যই আমার,আমি অলরেডি উনার সোয়াগ দেইখা শ্যাসস
মেয়েগুলোকে পারছি না মুখে ঝামা ঘষে দিতে,এহ আইছে এক এক জন চকলেট, বাটার নিয়ে। কনুই দিয়ে আরশি কে এক গুতা দিয়ে বললাম,
-এই বিন্দি গুলারে চুপ করা নাইলে এক একটারে ধইরা বুড়িগঙ্গায় ফালাম।
কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসলো নাহ। টেপ রেকর্ডার টার মুখ বন্ধ দেখে পাশ ফিরে তাকালাম, দেখি একটু আগে বাংলার পাচের মতো মুখ করে রাখা চেহারাটা এখন মানুষ মানুষ লাগছে,হা করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে, ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখে ব্যাপার টা বুঝলাম, গাল টিপে হেসে আবারও দিলাম এক গুতা। এবার বেশ জোরেই দেওয়াই ধ্যান ভাংলো উনার
-ক কে,কি হইছে
-কিছু হয়নি আপাতত, কিন্তু হবে বলে মনে হচ্ছে
-কি হয়নি? আর কি হবে? এভাবে অ মানুষের মতো ধাইক্কাইস ক্যান ছেমড়ি,গাধা দেখছিস নাহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি, বলে আবারো হ্যাবলা মার্কা লুক দিয়ে তাকালো সেদিকেই।
-এই বান্দর এই, এদিক ঘোর বলছি,ওদিক কি দেখিস। চোখ দিয়ে গিলা বন্ধ কর বেয়াদব মহিলা
-উফফ কি সমস্যা তোর,দেখতে দে নাহ,আরাব ভাইরে পুরা হিরো লাগতাসে রে,চোখ ফিরাতে পারছিনাহ। ধ্যাতত চলে গেলো
সেই ভার্সিটির শুরু থেকে উনাকে পছন্দ করি। ভাবছি এবার প্রপোজাল টা দিয়েই দেবো।
ওর কথা শুনে মুখটা ঘুরে তাকালাম,ওর গাল আমার দিকে ঘুরিয়ে বললাম
-আপনা থোবরা দেখা হে? কুত্তি লাগতি হে। এরকম শাকচুন্নি টাইপ বিহেভিয়ার আর চুন্নি টাইপ হাসি নিয়ে তুই আরাব ভাইয়ের সাথে প্রেম করবি?
-এই চুপ, কিসব বলছিস হ্যাঁ? একটু হাহা করে হাসি বলেই কি চুন্নি হলো নাকি হ্যাঁ। আমি প্রয়োজনে নিজেকে পরিবর্তন করে নেবো
আস্ত আবাল টাইপ চেহারা করে আরশির কথা বলার ভঙ্গি দেখে হাহা করে হেসে উঠলাম, পাশ থেকে নিবিড় বললো
-আবে,একা একাই হাসতাসোস ক্যান, আমাগোও ক,আমরাও হাসি
হাসি থামিয়ে বললাম।
-ভাই শোন আমাগো ল্যাম্পপোস্ট ডায় কি কয়,ওই নাকি আরাব ভাইরে প্রপোজ করবো,
আমার কথা শুনে আরশি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো
-এই তোদের সমস্যা কি হ্যাঁ, নিজের তো প্রেম করার যুক্তা হয়না,আমি একটু চেষ্টা করছি কই উৎসাহ দিবে সাহায্য করবে তা নাহ বত্রিশ পাটি দাত বের করে হাসছে,তোদের উচিত আমাকে মোটিভেট করা
আরশির কথা শুনে কিছুক্ষণ নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকলাম ওর দিকে, তারপর পাচজন মিলে আবারও হাহা করে হেসে উঠলাম।
-তোরা আসলেই এক একটা অজাতের বংশধর, তোদের সাথে কথাই বলা উচিত নাহ
-থাক বান্দরি তুমি মুখটা ফুলিয়ে বাদর টাইপ করিও নাহ,আমি করবো মো-টি-ভে-ট
রাফাতের টেনে টেনে কথা বলা দেখে আবারও সবাই হাহা করে হেসে উঠলো
-কিন্ত আমি একটা কথা বুঝতে পারলাম নাহ
এই বলদটা আবার কি প্রশ্ন করবে
-তুই কি বুঝলি না রে মাতাজি
আদ্রিশ বললো
-ফাস্ট অফ অল,আমি মাতাজি নাহ,আর দ্বিতীয়ত হলো, আরু তুই যে বললি বত্রিশ পাটি দাত বের করে হেসেছি আমরা,কিন্তু মানুষের তো বত্রিশ টা দাত থাকতে পারে,বত্রিশ পাটি নাহ
গালে হাত দিয়ে,শিমুর প্রশ্ন শুনে আমরা আবারও হাসলেও আরশির রাগ যেনো তড়তড় করে বেড়ে গেলো
-ঠাস করে শিমুর পিঠে বসালো এক ঘা
-আউউউচ
বলে কিছু বলতে নিলেই,আগমন ঘটলো গণ্যমান্য মাহফুইজ্জার, পেছন থেকে নিবিড় বললো
-চুপ যা সবগুলা,বিদ্রোহী আইয়া পরছে
নিবিড়ের কথা শুনে দম ফাটা হাসি পাচ্ছে,কিন্তু মাহফুজ স্যারের মুখটা দেখে হাসার সাহস কিছুতেই হচ্ছে নাহ, যিনি ক্লাস শুরুর পাচ মিনিট আগেই এসে হাজির হয় সে তার ক্লাসের আজ দশ মিনিট ওয়েস্ট করা কিছুতেই মানতে পারছেন নাহ যেনো। স্যারের মুখ যেনো বাংলার পাচ থেকে পনেরোর রূপ ধারণ করছে ক্রমাগত। আর আমার হাসি।
এই একটা দোষ আমার, একবার হাসি পেলে কিছুতেই থামাতে পারিনাহ,দুগাল চেপে ধরে আছি তাও হাসি থামছে না, কিছুতেই নাহ। তার উপর পাশ থেকে আদ্রিশ খোচা দিলে তার দিকে তাকাতেই সামনের দিকে ইশারা করলো,সামনে তাকিয়ে দেখি স্যারের চেয়ারে কেউ শুয়তানি করে সাদা চক দিয়ে ভুলভাল আঁকিবুঁকি করে রেখেছিলো, চেয়ারে বসায় স্যারের সাদা প্যান্টে ছোপছোপ দাগ বসে গেছে। ও দেখে আমার আর কিছুতেই হাসি কন্ট্রোল হচ্ছে না,বা হাত দিয়ে শিমুল হাত তা জোরে চেপে ধরলাম ওমনি গদ্ধপটা “আয়ায়াউউচ” বলে বিশ্রী একটা এক্সপ্রেশন দিলো।
আমি আর কিছুতেই আটকাতে পারলাম নাহ হাসি,ভরা ক্লাসে হাহা করে হেসে দেওয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজটা করেই ফেললাম।
কথায় আছে নাহ, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই, ঠিক এমনটাই হলো, এতোক্ষন বিন্দির মতো মুখ করে রাখা আরশি ও আমার হাসি দেখে হাহা করে হেসে উঠলো। আমাদের খেয়াল ই নেই,একজোড়া শকুনি চোখ আমাদের দিকে ভীষণ রুষ্ট ভাবে চেয়ে আছে
-হোয়াট রাবিশ!
স্যারের প্রচন্ড জোরে ধমকে হাসি থামিয়ে সামনে তাকালাম
-এটা কি সার্কাস পেয়েছো তোমরা, এতো বড়ো বেয়াদবি করার সাহস কি করে হয়।
স্যারের কথায় মিনমিনিয়ে বললাম
-সরি স্যার
-সাট আপ, যাস্ট গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস।
-স্যার আর এমন হবে নাহ
-আই সেইড গেট আউট!!
স্যারের ধমকে কেপে উঠলাম,এই ব’জ্জাতটারে বইলা কোনো লাভ নেই,তাই চুপচাপ সুরসুর করে আমি আর আরশি ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম বেঞ্চ থেকে,আমাদের দেখাদেখি শিমুও ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরোতে যাবে তখন স্যার বলে উঠলো
-তোমাকে তো বেরোতে বলিনি,তুমি কেনো যাচ্ছো
শিমু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো
-স্যার না মানে,ওরা চলে যাচ্ছে তো তাই
-সব গুলোই এক দলের, তোমাকে ভালো ভেবেছিলাম, নাউ গেট আউট ইউ থ্রি
এবার পেছন থেকে রাফাত নিবিড় আদ্রিশ ও ব্যাগ হাতে নিয়ে আমাদের পিছুপিছু বেরিয়ে বললো,
-ওকে স্যার, বাট এ লিটিল বিট মিস্টেইক, নট থ্রি,আমরা ছয়জন
বলেই স্যারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে এলাম। বাইরে এসেই দুম করে এক কিল বসিয়ে দিলাম আরশির পিঠে
-এই অকম্মা, ছিলি তো পেত্নির মতো মুখ করে, ওমন হাহা করে উঠলি ক্যান
হাত দিয়ে পিঠ ডলতে ডলতে বলে
-হ্যাঁ তাই তো! আসলে আমি ভুলে গেছিলাম যে রাগ করেছি
-তো ওমন হিহি করলি ক্যান
-তুই হাহা করলি তাই,তুই ক্যান হাসলি
তাইতো, আমি কেনো হেসেছিলাম,
-ও হ্যাঁ মনে পরেছে এই বলদ শিমু আআ করেছিলো তাই।।
এবার আরশি ধপ করে এক ঘা বসিয়ে শিমুকে বলে
-তুই ভরা ক্লাসে ওমন আআ করে জাতীয় সংগীত কেনো গাইছিলি বলদ।
-আ আমিকি ইচ্ছে করে করেছি নাকি,পালক আমায় খামচি দিয়েছে
-উফফ তোরা মারামারি বন্ধ করবি? ওই বজ্জাইতার ক্লাস থেকে বেরাতে পারছি এটাই অনেক, এখন এই খুশিতে আমি সবাইকে কফি খাওয়াবো চল।
আদ্রশের কথায় আমি বললাম
-সব দোষ তো তোর,তুই কেনো আমাকে স্যারের পশ্চাৎ দেশের কারুকার্য দেখাতে গেলি বেয়াদব।
-কারণ আমারও দেখে হাসি পাচ্ছিলো তাই
আদ্রিশের কথায়,নিবিড় চশমাটা নাক থেকে ঠেলে চোখে দিয়ে শয়তানি লুক দিয়ে বললো
-আসলে কারুকার্য টা আমিই করেছি
নিবিড়ের কথায় সকলে তাজ্জব বনে গেলাম।
-হোয়াট? ইউ ভেজা বেড়াল।।তুই কখন করলি এসব
-সকালে আমি এসে দেখি তোরা কেও এখনো আসিস নি,তাই ফাকা টাইম টাকে কাজে লাগিয়েছি।
নিবিড়ের কথায় আবারও হাহা করে হেসে উঠে সবাই ক্যান্টিনের দিকে হাটা ধরলাম
__________________
দুপুর ঠিক বারোটা, সূর্যটা একেবারে মাথার উপরে, এমন ভর দুপুরের গরমে আমি শিমু আর আরশি রাস্তা দিয়ে হেটে ফিরছি। আরশি থেকে ট্রান্সফার হয়ে শিমুর মুখটা এখন পেচাঁর মতো, আর তার বদলে আরশির মুখ জুড়ে তৃপ্তির হাসি,ও তো পারেনা রাস্তার মধ্যে নাচ শুরু করতে একটু পরপর উদ্ভট কথা বলে বিরক্ত করছে
-এই দোস্ত! আমারতো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে নাহ রে। মন চাইতেছে রাস্তার মধ্যেই ডান্স শুরু করি “আজ আমার মনটা যে আর পেখম তুইলা নাচে রে”
-চুপ কর,পড়াশোনা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই,এসেছে পেখম তুইলা নাচতে। এসব ঝামেলা করতে গিয়ে যে অ্যাসাইনমেন্টের জন্য লেইট হবে তা একবারও চিন্তা হচ্ছে না তোর
শিমুর ধমক শুনে আরশি ওর বিশ্রি গান থামিয়ে বললো
-তোর সমস্যা কিরে,সবসময় এতো পড়া পড়া করিস ক্যান,দ্বায়িত্ব বলে কিছু আছে তোহ
-এহ আইছে দ্বায়িত্ববান, তুই যে আরাব ভাইয়া সাথে কাজ করতে পারবি বলে লাফাচ্ছিস তা কি বুঝিনা
তখন ক্যান্টিনে বসে দু ঘন্টা আড্ডা দেওয়ার পর,ব্রেক টাইমে হলরুমে গেলে ব’লির পা’ঠা হই আমরা ছয়জন। আগামি সপ্তাহে হওয়া নবীন বরন অনুষ্ঠানের ডেকোরেশনের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় আমাদের ছয়জনের উপর। আদ্রি,নিবি আর রাফাইত্তা তো এই কথা শোনার পর ভার্সিটি থেকে বেরিয়েই খেলতে গেছে,এসব কাজ করতে গেলে নাকি ওদের ফুটবল খেলা হবে নাহ। সারা দুনিয়া একদিকে আর এই তিনটার খেলা একদিকে। যাই হোক
আমার সাথে দুজন ম’রছে আরেক চিন্তায়। একজনের অ্যাসাইনমেন্টের চিন্তায় মাথা খাচ্ছে,আরেকজন খুশির ঠেলায়। বুঝিনা সবসময় এমন এক এক দুনিয়ায় এক এক বৈশিষ্টের প্রাণিরাই কি বেস্ট ফ্রেন্ডস হয়?
-এই যাহ,আমার বাড়ির গলি এসে গেলো,কই ভাবলাম আরও কিছুক্ষণ গল্প করবো,ধ্যাত ভাল্লাগেনা
আরশির কথায় শিমু উত্তরে বলে
-যা তো যা,যতোক্ষণ থাকবি তোর আজাইরা পেচাল শুনে মাথা খারাপ হয়ে যাবে
-তোকে কাল দেখে নেবো ভুটকি
বলেই আরেক থাবা দিয়ে আরশি হাটা ধরে।
এখন শুধু আমি আর শিমু ফিরছি। নানা রকম গল্পে হাটতে হাটতেই হঠাৎ কারো ডাকে ফিরে তাকালাম
-আফু? আফু দারা
পেছনে ফিরে দেখি রুচি আপু।
-আপু? তুমি এসময় এখানে?
-আরে কাল শুনলি নাহ বাবা আর মামু দুদিন বাদেই পার্টি থ্রো করেছে,তাই এসেছিলাম শপিং করতে
-মিষ্টি কে বাড়িতেই রেখে এসেছো?
-না ওকে রেখে আসার সাহস আছে নাকি? ওইতো মলের ভেতরে ও,তুই চল শিগগির,শিমু আই
বলেই আমার হাত ধরে টেনে আনলো। সাথে শিমুকেও আনলো। মলের ভেতর গিয়েই দেখি মিষ্টি কিডস জোনের দিকে নানান রকম খেলনা নিয়ে খেলছে,আর তার পাশেই দুটো বেলুন আর একটা টেডি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন মেঘ।
কালো রঙের ব্লেজার টা খুলে হাতে ঝুলিয়ে রেখেছে,কালো প্যান্টের সাথে কালো জুতো জোড়া চকচক করছে,আইভরি রঙের শার্ট টা যেনো গায়ের সাথে মিশে আছে। আচ্ছা লোকটা কি ছোট থেকেই এতো সুন্দর নাকি বিদেশে থাকার জন্য এমন হয়েছে? এমন নীল চোখ,ফর্সা গায়ের আবরণ, আর কালো বাদামি মিশ্রনের চুল গুলো দেখে তাকে বিদেশি বললেও খুব একটা ভুল হবে না। ঘামে শরীরের সাথে শার্ট লেপ্টে থাকায় তার সুগঠিত শরীরের আকৃতি স্পষ্ট। লোকটা ভীষণ হ্যান্ডসাম,চোখ ফেরানো দায়। আশে পাশের মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে লোকটাকে।
মেঘালয় চৌধুরী কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করা অবস্থায় ই হঠাৎ সে আমার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায়,ফট করে চোখ নামিয়ে নেই।
-আফু এদিকিটাই চল,মামনী সবার জন্যই শাড়ি নিতে বলেছে,তোর পছন্দ ভীষণ সুন্দর। আজ সব তুই পছন্দ করে দিবি।
বলেই আমার হাত ধরে নিয়ে গেলো শাড়ির দোকানে। একে একে নানান রকমের শাড়ি বের করতে লাগলাম, আপু অনেক গুলো শাড়ি একটা একটা করে দেখছে আর রাখছে,কোনোটাই তেমন ভাল্লাগছে না
“সবুজ রঙের টা”
ধপ করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম,দুজনের আবারও চোখাচোখি হলো, দুজন একসাথেই বলেছি একই কথা। ঘার নামিয়ে চুপ করে গেলাম। উনার সামনে এতটা অপ্রস্তুত কেনো লাগে বুঝিনা,আর লোকটারও কি একই সময় একই শাড়ির কথা বলতে হলো,আপু শাড়িটা গায়ে ধরে বললো
-বাহহ,ভীষণ সুন্দর তোহ,আমার চোখেই পরেনি এতোক্ষন,তোদের পছন্দ বেশ,বলতেই হয়।
তারপর থেকে আর একটা কথাও বলিনি,আপু একে একে সবার জন্য শাড়ি নিলো। হাজার বার বারন করা সত্তেও আমার আর শিমু জন্যেও নিলেন,বললো না নিলে নাকি সে আন্টি মামনী সবাই খুব কষ্ট পাবে।
কেনাকাটা শেষ করে বেরোচ্ছি, অফিসওয়ালার অফিস থেকে জরুরি ফোন আসার কারনে সে সাইডে গিয়ে কথা বলছে, আপু আর শিমু ব্যাগ গুলো ঠিকঠাক করছে। হটাৎ খেয়াল হলো মিষ্টি নেই? এইতো আপুর কোলে ছিলো
-আপু? আপু মিষ্টি কোথায়?
আমার কথায় আপুরও হুস এলো
-আমার কোলেই তো ছিলো,নেমে কোথায় গেলো?
এদিক ওদিক চোখ দিতেই,বাইরের দিকে চোখ আটকে গেলো।
-মিষ্টি??
বলেই চিৎকার করে এক ছুটে বেরিয়ে গেলাম,কোনো দিকে খেয়াল নেই,দৌড়ে যাচ্ছি রাস্তার মাঝখানের দিকে, মিষ্টি সকলের চোখের অগচরে কখন রাস্তায় চলে এসেছে কারোই খেয়াল হয়নি, অদূরেই একটা সিএনজি তেড়ে আসছে।
আমি ছুটে গিয়ে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলাম,সরে যেতে নিলেই গাড়িটার সাথে ভীষণ জোরে ধাক্কা লেগে পরে গেলাম,চোখ দুটো অন্ধকার হয়ে আসলো, কানে শুধু চিৎকারের শব্দ আসলো
-পালকক!!
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
হীডিংঃ আজকের পর্ব লিখতে অনেক সময় লেগেছে। শব্দসংখ্যা ২১০০+ , সকলের অভিব্যক্তি প্রত্যাশিত। মতামত জানতে চাই সকলের
হ্যাপি রিডিং