তুমি আসবে বলে পর্ব -১৪+১৫+১৬

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-১৪

রুমের ভেতরের একের পর এক সব জিনিস ভাঙ্গছে আদি কিন্তু কিছুতেই রাগ কে শান্ত করতে পারছে না। রাগে তার সারা শরীর দরদর করে কাপছে, নাকটা লাল হয়ে আছে, চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে। এদিকে ভাঙ্গার আওয়াজ শুনে মির্জা বাড়ির সবাই আদির রুমের দরজায় দাড়িয়ে আছে। কেও সাহস করে ভেতরে যাচ্ছে না, কেননা সবাই কম বেশ আদির রাগ সম্পর্কে জানে। আদি খুব শান্ত শিষ্ট, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে, সহজে রেগে যাওয়ার ছেলে আদি না কিন্তু যখন রেগে যায় তখন তাকে সামলানো কঠিন। দিদুন অস্থির হয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে বললে…

দিদুনঃ আদি দাদুভাই কি হয়েছে তোমার এমন করছো কেন তুমি। আমাকে বলো কি হয়েছে তোমার। দাদুভাই দরজাটা খলো।

কিন্তু ভেতর থেকে কনো সাড়াশব্দ নেই। অরনি তার দিদুন কে বললো…

অরনিঃ দিদুন কি হয়েছে দাদাভাইর

দিদুনঃ জানি না দিদিভাই, নিচে বসেছিলাম আমি তখন দাদুভাই হতদন্ত হয়ে কারোর সাথে কথা না বলে রুমে এসে ভাঙ্গাচুরা করছে। দেখে মনে হলো অনেক রেগে আছে, মুখ, চোখ লালা হয়েছিলো দাদুভাইর…[চিন্তাত হয়ে বললো]

অন্তু সব শুনে কিছু বুঝতে পারছে না, হঠাৎ দাদাভাইর কি হলো সকাল তো হাসি খুশি ছিলো তাইলে এমন কি হলো যে এতো পরিমাণ রেগে গেলো৷ অন্তু দরজা ধাক্কিয়ে বলে…

অন্তুঃ দাদাভাই তোর কি হয়েছে আমাকে বল। এতো রাগ করছিস কেনো বল।

ভেতর থেকে ফ্লাওয়ার বাসটা ভেঙ্গ ফেলে আদি, ভাঙ্গার শব্দে সবাই কেপে ওঠে। ভেতর থেকে আদির বজ্র কন্ঠে বলা কথা শুলো শোনা যাচ্ছে… আদি বলছে..

আদিঃ তোমরা সবাই আমাকে একা ছেড়ে দাও প্লিজ। আমি ঠিক আছি, আমি পরে তোমাদের সাথে কথা বলবো যাও

আদির কথা শুনে সবাই হতাশ হয় সবাই। তারা জানে এখানে থেকে আর কিছু হবে না আদি যখন বলেছে পরে বলবে তাই তার চলে যায় যার যার রুমে। এদিকে, আদি হাত দিয়ে টপটপ করে রক্ত পরছে কিন্তু তার সে দিকে খেয়াল নেয়৷ সে রাগে ক্ষপে বলতে লাগলো…

আদিঃ এটা তুমি ঠিক করলে না আদিবা। আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যধ তুমি। এতো বছর পর যখন তোমাকে পেয়েছি এতো সহজে তো তোমাকে আমি ছাড়বো না।

রহস্যময় হাসি দিলো আদি। ড্রায়ার থেকে সিগারেটের পেকেট নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো আদি৷ বাইরের আবহাওয়া টা ঠান্ডা হালকা বাতাস হচ্ছে। আদি সিগারেটা জ্বালিয়ে তার ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরলো। হালকা হালকা টান দিয়ে নাম মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করতে লাগলো। আজ তার বুকের বা পাশটা অসম্ভব জ্বালা করছে, আজ ৪বছর পর আদিবার সামনা সামনি দাঁড়িয়েছে আদি। আদিবাকে দেখে এক মুহূর্ত থমকে গিয়েছিল সে। কিন্তু পরক্ষনে তার কষ্টের দিন গুলো মনে পরতেই রেগে যায় সে। আদি তার প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছে কিন্তু আদিবা তার সব প্রশ্নকে উপেক্ষা করে তাকে এরিয়ে গেছে। আদি সিগারেট শেষ করে ফেলে দিয়ে ভাবতে থাকে বিকেলের ঘটনা কে….

ফ্ল্যাশব্যাক…..

আদি বিকেলর দিকে দরকারি পেপারস নিয়ে রোদের অফিসে যায়। রোদের কেবিনে বসে তারা কথা বলে, আদি পেপারস শুলো রোদের দিকে দিয়ে বলে..

আদিঃ রোদ দেখো তো পেপারস গুলো ঠিক আছে কি না। নতুন প্রজেক্টের কাজ তো ইতি মধ্যে শুরু হয়েছে, তার একটা বাজেট তৈরি করা হয়েছে কিন্তু তুমি একবার দেখে বলো এতে কিছু এড করতে হবে কি না।

রোদ পেপারস শুলো নিয়ে দেখতে লাগলো, রোদ সব চেক করে বললো…

রোদঃ আদি সব ঠিক আছে তারপর ও তুমি যখন বলছো আমি আমার পি.এ কে দিয়ে চেক করিয়ে নিচ্ছি। তুমি একটু বসো

আদিঃ ওকে, ও হ্যাঁ আনভি এখন কেমন আছে মানে সেদিন ওভাবে কান্না করছিল অন্তুর চলে আসায়

রোদ আদির দিকে তাকিয়ে বললো…আনভি ঠিক আছে এখন। আনভি সহজে কারোর সাথে মেশেনা যদি একবার মেশে তাইলে ছাড়তে চায় না। তুমি টেনশন করো না

আদি ইতস্তত করে রোদকে বললে…তুমি কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি

রোদ ভ্রু কুচকে বললে….বললো

আদিঃ আসলে আনভির মা মানে তোমার স্ত্রী কে তো দেখলাম না সেদিন পাটি তে। সে কি থাকে না তোমাদের সাথে।

রোদঃ না সে নেয়

আদিঃ মানে…[বিস্ময় হয়ে বললো]

রোদঃ আনভি জন্ম দিয়ে সে হারিয়ে গেছে। আমাদের জীবন থেকে।

আদিঃ সরি

রোদঃ ইট’স ওকে…

আদি আর কিছু বললো না রোদ তার পি.এ ফোন করে তার কেবিনে ডাকে। কিছুখন পর কেবিনে নক করলো রোদ তাকে আসতে বলে….আদিবা এসে রোদকে বলে…

আদিবাঃ স্যার আমাকে ডেকেছিলেন

হঠাৎ চিরচেনা কন্ঠে স্বর শুনে আদি থমকে যায় একমুহূর্তে জন্য। আদি তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে ঠিক শুনলো না ভুল। আদির বুকের বা পাশটা অসম্ভব জ্বালা করতে লাগলো, সে পিছনে ঘুরতে সাহস পাছে না তার যদি ভুল হয় ভেবে। আদির ভাবনার মাঝে রোদ বললো…

রোদঃ হুমম আদিবা ডেকেছি আসলে একটা ফাইল আছে এখনি চেক করে মিস্টার আদিকে দিতে হবে। তুমি একটু ওনাকে নিয়ে ফাইলটা চেক করে নাও

আদি আদিবা নাম শুনে আরাক দফা চমকে যায়। এদিকে আদিবা রোদর মুখে আদি নাম শুনে চমকে যায় এক মুহূর্ত জন্য পরক্ষণেই ভাবে আদি নামে কি একজন মানুষ আছে হতে পারে ওনো কেও৷ আদিবা বলে..

আদিবাঃ জ্বি স্যার। চলুন মি.আদি

আদি পেছেনে ঘুরতেই আদিবার মুখের মুচকি হাসি নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে আদির দিকে, কতো বছর পর তার ভালোবাসার মানুষটাকে সামনে দেখে আদিবা দুর্বল হয়ে পরে। ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে আদির দিকে, সে ভেবে পাচ্ছে না সে যা করেছে তার সাথে সে কি মুখ নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে আদি আদিবার দিকে নিষ্পাপ নয়নে তাকিয়ে আছে। অনেক চেঞ্জ হয়েগেছে আদিবা আগের সেই আদিবা তার মধ্যে নেয় নেই তার চঞ্চলতা। রোদের কথায় আদিবা স্বাভাবিক হয়ে দাড়ায় চোখ মুছে নেয়, রোদ বলে….

রোদঃ ও তোমারে তো পরিচয় করান হয়নি, আদি ও হলো আমার পি.এ মিস আদিবা ইসলাম। আদিবা উনি হলেন মিস্টার আদি মির্জা আমাদের সাথে নতুন প্রজেক্ট করছে। তুমি অসুস্থ ছিলে বিধায় জানো না।

আদি আদিবার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো.. হ্যালো মিস আদিবা

আদির রাগিত কন্ঠে আদিবার আত্মা কেপে ওঠে, সে আদির রাগ সম্বন্ধে আগেই অবগত তাই এখন আদি কি পরিমাণে রেগে আছে সে জানে। আদিবা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকিয়ে বললো..হ্যালো মি.মির্জা

রোদঃ আদিবা আদিকে তোমার কেবিনে নিয়ে গিয়ে ফাইলটা চেক করে নাও ইট’স ইনপন্টে

আদিবাঃ জ্বি স্যার আমার সাথে আসুন

আদিঃ আজ আসি রোদ পরে কথা হয়ে

আদি রোদর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আদিবার সাথে তার কেবিনে দিকে চলে যায়। আদিবা কেবনে রোদের কেবিন থেকে একটু দূরে, কেবনটা কাচের কিন্তু বাইরে থেকে ভেতরের কিছু দেখা বা শোনা যায় না। আদি কেবিনে ডুকেই ডোর লক করে দেয় আদিবা লক করা দেখে ঘাবড়ে যায়, হালকা ঘামতে থাকে। আদি আদিবার কাছে আসতে লাগলে, আদিবা পিছিয়ে যেতে যেতে বলতে লাগলো..

আদিবাঃ কি কিরছেন আপনি আগাছেন কেন? ডোর লক করলেন কেন? কেও দেখে ফেলে খারাপ ভাবে প্লিজ লক খুলুন। [কাঁপা কাঁপা গলায় বললো]

আদিঃ তুমি বুঝতে পারছো না নাকি না বোঝার ভান করছো৷ আর কে কে ভাবলো সেটাতে আমার যায় আসে না শুধু আমার কয়েকটা প্রশ্নে সঠিক উত্তর পেলে আমি চলে যাব…

বলে আদির কাছে এসে তার বাহু ধরে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আদিবার নিশ্বস বন্ধ হবার অতিক্রম, এই স্পর্শ দীর্ঘ ৫ বছর পর পেলো সে তখন এই স্পর্শে ভালোবাসা ছিলে কিন্তু আজ এতে তার দেয়া প্রতারণা আগুনে জ্বালা অগ্নশীখা এতে নেয় কনো ভালোবাসা আছে শুধু তার জন্য ঘেন্না। আদি আবার বললো…

আদিঃ কেন কেন করলে আমার সাথে তুমি এমনটা আদিবা। কিসে কমতি ছিলো আমার ভালোবাসায়। কেন আমাকে কিছু না বলে চলে গেলে বলো। আমি যদি ভুল কিছু করি তাইলে আমাকে এক্সপ্লেন করার সুযোগ তো দিতে তুমি। কি কারনে তুমি না বলে আমাকে ছেড়ে দিলে এক্সপ্লেন মি..[জোরে ধমক দিয়ে]

আদির ধমক শুনে আদিবা কেঁপে ওঠে, আদিবা আদিকে তার থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে আর বলে…

আদিবাঃ আদি প্লিজ আমার ব্যাথা লাগছে ছাড়ুন

আদিঃ আমার ও ব্যাথা লাগছে (আদিবাকে ছেড়ে দিয়ে আদিবার হাত নিয়ে তার বুকের বা পাশটাতে রেখে বলো) এখানে এখনো ব্যাথা লাগছে আর ৪বছর আগেও লাগেছে না জ্বলছে আগুনের মতো। কিন্তু তুমি

বলে ছেড়ে দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরে। আদিবা নিঃশব্দে কাঁদছে তার বলার কিছু নেয় কি বলবে আদিকে কেন তাকে কিছু না বলে চলে যায় সে। কেন তাকে ৪ টা বছর তার প্রতারণা আগুনে জ্বলতে হয়েছে কেন। আদি আবার ও আদিবার কাছে এসে বলো নরম কন্ঠে বললো…

আদিঃ আদু বলো কেন করলে আমার সাথে এমনটা প্লিজ

আদির এই মিষ্টি ডাকটা আদিবা অনেক মিস করেছে। আদির আদুরে সরে তার নাম ডাকা তার শীতল করে দেয়। আদিবা নরম হতে লাগলো, হঠাৎ কিছু মনে পরতেই কঠিন হতে লাগলো চোখর জল মুছে কাঠ কাঠ গলায় জবাব দিলো…

আদিবাঃ আমি আপনাকে জবাব দিতে ব্যধ নই। আপনি প্লিজ যেতে পারেন আমি ফাইলটা দেখে পরে আপনাকে পাঠিয়ে দেবো৷ লিভ নাও

আদি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্রুদ্ধ গলায় বললো…তুমি তো বলতে বাধ্য, কি করে তোমার পেট থেকে কথা বার করতে হয় এই আদি মির্জা খুব ভালো ভাবে যানে। আজ ছেড়ে দিচ্ছি বলে মনে করে নিও না আমি সব ভুলে যাবো, ৪বছরের হিসাব আমি করায় গন্ডায় উসুল করে নেব। তৈরি থেকেও এতোদিন আদির ভালো মানুষি দেখে এসেছিস এখন খাপর দিকে দেখবি।

বলে কেবিন থেকে চলে আসে সোজা বাড়ি। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রুমে সব জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলে। এদিকে আদি বের হইতে আদিবা নিচে বসে শব্দ করে কান্না করে দেয় সে বলে…

আদিবাঃ সরি আদি আমি এমনটা করতে চাই নি আপনার সাথে, আমি ব্যধ হয়ে এটা করেছি৷ আপনার দোষ ছিলো না সব দোষ আমার ছিলো, আপনার আর পরিবারের মধ্যে কেওকে আমার চুজ করতে হয়তো আমি আমার পরিবারে কে চুজ করি আদি। আমার হাতে কিছু ছিলো না। আপনি যখন সত্যি জানতে পারবে তখন আমাকে বুঝবেন কেন আমি এটা করেছি। সরি

বলে কান্না কতে লাগলো…

ফ্ল্যাশব্যাক এ্যান্ড…..

আদি তার ভাবনা থেকে বের হয়, আদি মনে মনে বলে…আদু আজ যতটুকু তোমার চোখে দেখেছি আমি এতে আমার জন্য ঘেন্না দেখিনিই দেখেছি অসীম ভালোবাসা। তেমার মধ্যে এমন কনো রহস্য গোপন আছে যেটা তুমি ছাড়া কেও জানে না। সেটা কি আমি জেনেই ছাড়বো। তারপর হবে তোমার শান্তি।

বলে আদি রুমে গিয়ে হাতে বেন্ডেজ করে নেয়। রাতে খেতে যায় না এমনকি ভেয়ে কেও ডাকতে আসেনি। রাতটা নিঝুম কাটে আদির, আদিবার সাথে তার কাটান স্মৃতি তারা করে তাকে। দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পরে সে খেয়াল নেয়……
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-১৫

সকালে অধফুটন্ত সূর্যের আলোতে ঘুম ভাঙ্গে আদিবার। কাল সারাটা রাত নিঝুম কাটিয়ে রাতে শেষ প্রহরে ঘুমিয়েছে সে। কাল অফিস থেকে এসে রুম বন্দি করেছে সে তার মা অনেক বার ডেকেছে সে বলেছে তার মাথা ব্যাথা সে ঘুমাবে তাই আর কেও ডাকেনি। সারারাত কান্না করার ফলে চোখ ফুলে আছে সাথে মাথা ব্যাথা। আদিবা উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে একবারে বাইরে বের হয়। এই বাড়িটা রোদ তাদের থাকতে দিয়েছে, ৩টা রুম একটা কিচেন, ড্রাইনিংরুম, ড্রইংরুমে আছে৷ রুম থেকে বের হয়ে দেখে তার মা (সালেহা) খাবার নিয়ে বসে আছে তার জনে সাথে নুপুর ও (নুপুর ক্লাস নাইনে পড়ে)। সে মুচকি হেসে খেতে বসলে তার মা বলে…

সালেহাঃ আদু আজ ও একই অবস্থা। আর কতো কষ্ট পাবি বলতো সব বলে কেন দিচ্ছি না আদি কে, তাইলে তোর মনের ভেতরে অপরাধ বোধ কমবে। সেই ছেলেটা বিদেশে পরে আছে আর ভাবছে তুই তার সাথে প্রতারণা করেছি। কিন্তু সত্যি তো অন্য ট তাই না। [ আঁচল মুখে ডেকে কান্না করে বলো]

মেয়ের এভাবে তিল তিল করে কষ্ট পেতে দেখছে সাহেলা। আজ ৪ বছর ধরে মেয়েটা শুধু নিজেকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে যে অপরাধ সে করেনিই। আগে তো নিজের খতি করতো কিন্তু এখন তার আর বোনের কথা ভেবে আর করে না কিন্তু কষ্ট পায়। আদিবা মায়ের দিকে তাকেয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো…

আদিবাঃ মা এমন কিছু না আসলে কাল মাথা ধরেছিলো তাই। আর অফিসে কাজ জমে আছে সেটা নিয়ে চিন্তা আছি এর বেশি কিছু না

আদিবা আদির কথা তার মাকে বলো না। খাওয়া শেষে নুপুর কে নিয়ে চলে গেলো৷ আগে নুপুর কে স্কুলে দিয়ে তারপর অফিসে যাবে৷ আদিবা মনে মনে শুধু এটাই চায় আদি কাল স্পষ্ট বলছে যে কথা তা যেন না হয় কিছুতেই সত্যি প্রকাশ করতে পারনে না সে। তাই সে আদির থেকে দূরে থাকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেখা যাক কি হয়…
_____________________________

সকাল- ৯ঃ০০টা

মির্জা বাড়ির সবাই এক সাথে বসে খেতে বসেছে। আদি এক মনে খেয়েই যাচ্ছে, অন্তু তার দাদাভাই কে পর্যবেক্ষণ করছে। আদিকে দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না, কাল সে রাগের বসে রুমের সব জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলেছে। আদি বলতে লাগলো….

আদিঃ আমাকে না দেখে খাবার দেখে খাও অন্তুপাখি

আদির কথায় অন্তু হচকে যায়, আমাতা আমাতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগে তার বাবা গম্ভীর কন্ঠে বললো…

আজাদঃ আদি কাল যেটা করলে সেটা কি তুমি ঠিক করেছো বলে তোমার মনে হয়৷ এতো রাগে কি বিষয় ছিলো আমাদের কে বলো। কেন করলে এমনটা

আদি মাথা নিচু করে নিচুস্বরে বলো…সরি আব্বু আর এমন হবে না, আপনি জানেন আমি সহজে রাগি না কিন্তু কালকের বিষয়টা আলাদা ছিলো তাই রাগ কন্টল করতে পারিনিই সরি

আজাদঃ কি এমন বিষয় ছিলো যে এতো রাগ হলে সেটাই জানতে চাই তোমার কাছে।

আদিঃ সরি আব্বু ওটা বলতে পারবো না

আজাদ রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগে দিদুন বললো….দাদুভাই এমনটা যেন দ্বিতীয় বার না হয়। কাল অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম সবাই

আদি মাথা উঁচু করে মুচকি হাসি দিয়ে বলো…আর এমন হবে না দিদুন

আকাশঃ আদি চলো অফিসে যেতে লেট হচ্ছে

আদি মাথা নাড়িয়ে সবাইকে বাই বলে চলে যায়। একে একে সবাই উঠে যায়। টেবিলে শুধু অরনি, অন্তু, আয়রা, আজাদ আর আয়ান বসে আছে৷ আয়ান উঠতে নিলে আজাদ বলে…

আজাদঃ আয়ান কাল পার্টি অফিসে থেকে কিছু ইম্পর্টেন্ট পেপার চুরি হয়েছে এই বিষয়ে তুমি কিছু জানো কার হাত আছে।

আজাদের কথা শুনে আয়রা ঘাবড়ে যায় কিন্তু আয়ান আশ্বাস দেয়াতে তাই প্রকাশ করে না। অন্তু কথাটা শুনে ভ্রু কুচকায় কেননা এটা প্রথম না আরো অনেক বার এমন হয়েছে তাদের পার্টি অফিসে থেকে। আয়ান বললে…

আয়ানঃ বড় আব্বু আমি শুনেছি বিষয়টা কাল রাতে। সবার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে কেও কিছু জানে না। আপনি যদি অনুমতি দেন তাইলে পুলিস কেস করি

আজাদ মির্জা পুলিশের কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় কিন্তু প্রকাশ করে না। কেননা পুলিস কেস হলে অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে আসবে যা সে চান না। তাই সে বললো..

আজাদঃ তার দরকার নেই তুমি অফিসে সিকিউরিটি বাড়িয়ে দাও তাই হবে

আয়ানঃ ওকে বড় আব্বু

আয়ান আয়ারাকে নিয়ে উপরে উঠতে নিলো আয়রা আস্তে আস্তে বলে…আয়ান যা করছো ভেবে করছো তো। এতো রিক্স নিয়ে কাজ টা করছো যদি ধরা পরে যাও তালে এর ফল খারাপ হবে। তুমি একবার দেখেছো তিনি নিজের স্বার্থে তার আপন জনকে ছাড়ে না তোমাকে যদি কিছু করে তাইলে

আয়ানঃ আমার কিছু হবে না তুমি টেনশন করো না। আর তিনি কি করতে পারে আর না পারে আমি সব জানি। তাইতো একটু একটু করে এগোছি যাতে সন্দেহ না করে। চলে তোমাকে রুমে দিয়ে আমি এক জায়গা যাবো।

আয়ান আয়রা কে রুমে দিয়ে তাকে আদর করে চলে যায় সে। আয়রা ভাবে.. আমি জানি তুমি যা করছো সব সত্যি সবার সামনে আনার জন্য করছো কিন্তু তোমাক নিয়ে ভয় হয় একবার সে তোমার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তোমাকে ব্যবহার করে অনেক ভুল কাজ করিয়েছে এবার যদি জানে তুমি তার বিরুদ্ধে কাজ করছো তাইলে সে কি করবে আমি জানি না। বলে শুয়ে থাকলো…
_____________________________

দিদিয়া কথায় তুমি দিদিয়া করে বলতে বলতে অরনি অন্তুর রুমে এসে দেখে অন্তু নেই। ভালো ভাবে দেখে বুঝতে পারে অন্তু ওয়াশরুম, একটু পর অন্তু বেড়িয়ে আসে। অরনিকে এই সময় দেখে অবাক হয় কেননা অরনি এখন ভার্সিটিতে থাকে আজ তাহলে যায়নি সে। অন্তু এগিয়ে গিয়ে বলে..

অন্তুঃ কি হয়েছে তুই আজ ভার্সিটিতে যাসনি।

অরনিঃ ভালো লাগলো না তাই যাই নি। চলো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো আমার বাইরে যাবো

বলে তার দিতে লাগে অন্তু কিছু বুঝছে না সে রেডি যে কথায় যাবে। অরনি একটা ড্রেস এনে অন্তুকে দিয়ে রেডি হতে বলে। অন্তু ড্রেস নিয়ে বলে…

অন্তুঃ আগে বল কোথায় যাবো তা না হলে যাবো না

অরনিঃ এতো কিছু বলব না চলো রেডি হয়ে আসো

অন্তু বুঝে গেছে সে না গেলে অরনি তাকে ছাড়বে না তাই কথা না বাড়িয়ে রেডি হতে গেলো। ৫মিনিট পর অন্তু বেরিয়ে আসে। অন্তু রেডি হলে অরনি তাকে নিয়ে চলে যায় তার গন্তব্য….
__________________________

অরনি আর কতখন এখানে বসে থাকবি বল তো। সেই কখন থেকে ক্যাফেতে বসে আছি না কিছু বলছি না কিছু করছিস। আমি বাড়ি যাবো। অন্তুর কথা শুনে অরনি তার ফোনের স্ক্রিনে থেকে মাথা তুলা বিরক্ত নিয়ে বললো…

অরনিঃ উুফ দিদিয়া এমন করছিস কেন, দেখছি না লিমার জন্য ওয়েট করছি। ওই ফালতু মেয়ে আসার নাম নেয় তার ওপর তুমি একটু পর পর কথা বলে বিরক্ত করছো। তুমি ক্যাফি খাও তো বাড়ি যাবা দেড়ি আছে। অনেক দিন পর তোমার সাথে বের হয়েছি তাই মজা করো চুপচাপ

আসলে অরনি তার ফ্রেন্ড লিমার সাথে দেখা করতে এসেছে। অন্তু বাড়িতে থাকে তাই তাকেও নিয়ে এসেছে কিন্তু এই লিনা আসার নাম নেয় তাই অন্তু বার বার বাড়ি যাবে বলে বিরক্ত করছে অরনিকে। হঠাৎ কোথা থেকে আনভি এসে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে আদুরি সুরে বললো….

আনভিঃ ভালো আন্টি

হঠাৎ জড়িয়ে ধরাতে অন্তু হচকে যায় কিন্তু আনভির আদুরি কথা শুনে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। অন্তু আনভিকে নিজের কলে বসিয়ে তার গালে চুমু দিয়ে বলে…

অন্তুঃ ভালো, তুমি কেমন আছো? আর তুমি এখানে একা কি করছো মামনি। কেও এসেছে তোমার সাথে।

আনভিঃ হুম ভালো। পাপা সাথে এসেছি

আনভির কথা শুনে অন্তু সামনে তাকায় দেখে রোদ তাদের দিকে আসছে। অন্তু কে যেন মনে হচ্ছে সে সেদিনের আগেও তাকে দেখেছে কোথাও। রোদ এসে আনভিকে চিন্তা সুরে বললো…

রোদঃ আম্মু এভাবে আমাকে না বলে আসলে কেন, জানো কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।

আনভিঃ উফ ও পাপা আমি তো ভালো আন্টি কে দেখে এখানে চলে আসলাম

আনভির কথা শুনে রোদ অন্তুকে দেখে সে এতখন খেয়ালি করেনি আনভি কারোর কোলে আছে। রোদকে দেখে অরনি বললো…

অরনিঃ ভাইয়া কেমন আছেন

রোদঃ ভালো তুমি। [মুচকি হাসি দিয়ে]

অরনিঃ ভালো। ভাইয়া বসুনা দাড়িয়ে আছেন কেনো

রোদঃ তোমাদের অসুবিধা হবে আমরা অন্য টেবিলে বসি। চলো আম্মু

অন্তুঃ আমাদের অসুবিধা হবে না আপনি এখানেই বসুন।

অন্তুর কথা শুনে রোদ তাদের টেবিলে বসলো। এদিকে আনভি অন্তুকে এক প্রকার জেরা করছে, তুমি কেন সেদিন চলে গেলে? আমাকে দেখতে আর আসো না কেন? তোমার সাথে আরি। এমন অনেক জেরা করছে, অন্তু আনভিকে তার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো আর এদিকে রোদ তাদের কে দেখছে কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যার জন্য আনভি এতো পাগলামি করে অন্তুর জন্য। সেদিন অন্তু চলে আসর পরে আনভি শুধু অন্তুর কথায় বলে সে কেন, তাকে ভালোবাসে, খাইয়ে দেওয়া সব বলে। অরনির কথায় ধ্যন ভাঙ্গে রোদরে। অরনি বললে…

অরনিঃ ভাইয়া আপনার এখানে এই সময় মানে আপনার তো এখন অফিসে থাকর কথা।

রোদঃ আসলে আজ আনভি ন্যানি ছুটিতে আর বাবাই আনভিকে একা সামলাতে পারবে না। তাই আমি ওকে নিয়ে অফিসে আসি, আনভির ক্ষুধা পেয়েছে তাই তাকে এখানে নিয়ে আসে। আমাদের অফিস এখান থেকে কাছে তাই।

অরনিঃ ওও তাই

রোদঃ হুমম তোমার এখানে কেন

অরনিঃ আর বলবে না ভাইয়া ফ্রেন্ডর সাথে দেখা করতে এসে ফেসে গেছে সে কখন আসবে কথা হবে তারপর যাওয়া হবে

রোদ ও বলে থামলো এদিকে অন্তু আর আনভি এক মনে কথা বলছে। তাদের আসেপাশে কি হচ্ছে তার কনো হুশ নেয়। তাদের কথার মাঝে অরনির ফোন আসলে সে সেখান থেকে চলে যায় কথা বলতে। রোদ ইতস্তত করে অন্তুকে বললো…

রোদঃ কেমন আছেন মিস অন্তু

রোদের কথায় অন্তু তার দিকে তকায় হালকা হেসে বলে…ভালো আপনি

রোদঃ ভালো

রোদ কথা শুনে আবার সে আনভিকে নিয়ে ব্যস্ত হলো। রোদ একটা ওয়েটার কে ডাকতে ওয়েটার আসে। রোদ আনভিকে বলে…

রোদঃ আম্মু কি খাবে বলো

আনভিঃ তুমি যা বলবে

রোদঃ ওকে আর আপনি মিস অন্তু

অন্তুঃ ক্যাফি

রোদ ওয়েটার কে ২টা ক্যাফি আর ১টা স্যান্ডউইচ অর্ডার করে। অরনি হবতম্ভ হয়ে তাদের কাছে আসে, তাকে এমন করে আসতে দেখে অন্তু বলে…

অন্তুঃ কি হয়েছে এমন করছিস কেন

অরনিঃ সর্বনাশ হয়েছে আমার

অন্তুঃ মানে

অরনিঃ মানে আমার এক্সামের ডেট দিচ্ছে আর স্যার শয়তান আমাকে ক্লাসে না দেখে বাড়িতে ফোন দিচ্ছে। ভাগিস দিদুন ধরেছে তাই এই যাত্রায় বেচে গেছি৷ কিন্তু এখনি আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে লিমা আসবে না স্যারের সাথে দেখা করতে হবে। বাই

বলে ব্যাগ নিতে লাগলো। অন্তু অরনির চলে যাবে শুনে বলে উঠলো…

অন্তুঃ চলে যাবি মানে আর আমি আমি কার সাথে যাবো বাড়িতে

অন্তুর কথা শুনে অরনি চিন্তায় পরে যায়। এতখন রোদ শুধু নিরব দর্শনের মতে দেখতে থাকলো। এখন সে বলো….

রোদঃ আপনি যদি কিছু না মনে করেন তাইলে আমি আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দেবো।

রোদর কথা অরনি যেন আকাশের তারা পেলো সে ফটফট করে বলে দিল…থেঙ্কংইউ ভাইয়া দিদিয়া তুই রোদ ভাইয়ার সাথে যাস।

বলে কাওকে কিছু না বলগে দিয়ে সে চলে গেলো। অন্তু অসহায় মুখ অরিনর যাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ওয়েটার এসে তাদের খাবার দিয়ে গেলে রোদ বলে….আপনি চিন্তা করবে না আমি আপনাকে পৌঁছে দেবো। এখন ক্যাফিটা খান না হলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। অন্তু আনভিকে স্যান্ডউইচটা খাইয়ে দিয়ে ক্যাফি খেতে লাগলো। রোদ আড়চোখে একবার অন্তুকে দেখে খেতে লাগলো। অন্তু একবার রোদকে বলতে চায় তাদের কি আগেও দেখা হয়েছে আবার কি মনে করবে ভেব বলে না। অন্তু কৌতুহল দামিয়ে রাখতে না পেরে সে বললো…

অন্তুঃ কিছু না মনে করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি

অন্তুর কথা শুনে রোদ ভ্রু সুরু করে বলে… বলুন

অন্তুঃ আমাদের কি সেদিনে আগেও দেখা হয়েছে। কেন জানিনা আমার মনে হচ্ছে আমি আগেও আপনাকে দেখেছি কোথাও

রোদ আনমনে বলো…অনেক গভীর থেকে দেখে তো এতো সহজে তো ভোলা যায় না

অন্তু রোদের কথা বুঝতে না পেরে বলো…মানে

রোদ নিজেকে সামলে নেয় সে কি বলছে সে নিজেও যানে না। সে বললো….হ্যাঁ দেখা হয়েছিলো। আমার গাড়ির সাথে আপনার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। আপনি অজ্ঞান হবার আগে আমাকে দেখেছেন তাই মনে নে ভালো করে

রোদর কথা শুনে অন্তুর সেদিনের কথা মনে করতে চেষ্টা করে সে সেদিন তো ওনাকেই দিখেছি। অন্তু বলো…সেদিনের জন্য থেঙ্কংইউ

রোদঃ ইট’স ওকে, চলুন আপনাকে দিয়ে আসি

অন্তু ও আর কথা না বাড়িয়ে আনভিকে কোলে নিয়ে যেতে লাগলো। বাইরে এসে রোদ গাড়ি দরজা খুলে দিলো অন্তু সামনে বসে পরে, তারপর রোদ গাড়িতে বসে স্টার্ট দেয়……….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-১৬

আজ আকাশটা অকারণেয় গর্জে গর্জে উঠছে। একটু পর মনে হয়ে মুষলধারে বৃষ্টি হবে, হবেই না কেন আষাঢ় মাসের শুরু তো। অন্তু তার রুমে সব পুরাতন কাগজ পত্র ঘাটা ঘাটি করছে। তার আজ ছবি আঁকতে মন চাচ্ছে খুব, মেঘলা আকাশ দেখে তার এই সখের উদয় হলো। অন্তু প্রফেশনালি আঁকতে না পারলেও সে সুন্দর আকঁতে পারে, তার দাদাভাই তাকে আঁকতে শিখিয়েছে, আদি অনেক ভালো ছবি আঁকে ছবি। অন্তুকেও আর্ট ক্লাসে ভর্তি করতে চায় কিন্তু কিছু কারন বসত হয় না, তাই আদি নিজের হাতে তাকে শিখিয়েছে। আজ শুক্রবার বলে সবাই সকালে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে, অন্তু তার রুমে এসে মেঘলা আকাশ দেখে তার মনের রং তুলিতে ছবি আঁকতে চায়। তাই তার সব কাগজপত্র বের করে রং তুলি খুজতে লাগলো, অনেক খোঁজা খুঁজি র পর তার কাবাডের নিচে তার রং তুলি পেলো যেটা আদি তাকে দেয়েছিলো। সব কিছু নিয়ে রুমে ফেন ওফ করে দিয়ে ফ্লোরে বসে সাদা ক্যামভাসটাতে পেনসিল দিয়ে আকতে থাকে। আস্তে আস্তে ফুটিয়ে তোলে বৃষ্টিতে ভেজে একজোরা তরুন তরুণি কে মনের রং দিয়ে তাদের ফুটাতে থাকে মনের মতো করে। ছরি আঁকতে আঁকতে হালকা রং তার গালে লাগতে তার মনে পরে যায় অর্ণবের করা রং দিয়ে তার ছেলেমানুষী..ঠোঁটের কোণে সরু রেখা দেখা যায়…ভাবতে লাগে সেই দিনটাকে..

অর্ণবঃ অন্তু তুমি তো অনেক ভালো ছবি আঁকতে পারো। কোথা থেকে শিখেছো…[ অন্তুর রং নিয়ে বলতে বলতে]

অন্তুর হাতের কাগজ অর্ণবের বেডের ওপর রেখে অর্ণের হাতের উপর মাথাটা দেখে বললো…

অন্তুঃ আমি কোথাও শিখিনিই দাদাভাই শিখিয়েছে, দাদাভাই আর্ট শিখতো কিন্তু আম্মু মারা যাবার পরে আমাকে সামলাতে গিয়ে তার আর শেখে হয়ে ওঠেনি কিন্তু অনেক ভালো আঁকতে পারে।

অর্ণবঃ তাইলে একটা কাজ করি তোমার এক্সামের পর আমি তোমাকে আর্ট ক্লাসে ভর্তি করে দিয় কি বলো…[বলে অন্তুকে তার বুকের কাছে নিয়ে আসে]

অন্তু অর্ণবের দিকে মুচকি হেসে বললো…ওকে দিও। তার আগে এটা নাও

বলে অন্তু তার হাতে রং নিয়ে অর্ণবের মুখে লাগিয়ে দেয়। আকস্মিক ঘটনায় অর্ণব বুঝতে পারে না যখন বঝে ততক্ষণে অন্তু পলাতে নেয়। অর্ণব অন্তুর হাত ধরে তার বুকে ফেলে বলে…

অর্ণবঃ ওরে জান কোথায় পালাও তুমি। দুষ্টুমি যখন করছো তাকে শাস্তি তো পেতে হবে তাই না।

শাস্তি কথা শুনে অন্তু করুনার চোখে তাকায় অর্ণবের দিকে কিন্তু অর্ণব তা উপেক্ষা করে তার হাত রং নিয়ে অন্তুর গালে, গলায় লাগিয়ে অন্তুর ঠোঁটের কাছে স্লাইড করতে লাগলো। এদিকে অর্ণবের প্রতিটা স্পর্শে অন্তু কেঁপে কেঁপে উঠে, নিজের অজান্তেই চোখ বন্ধ করে নেয় তা দেখে অর্ণব বাকা হেসে অন্তুকে তার কাছে টেনে নেয়। দুজনের ঠোঁটের ঠোঁট স্পর্শ করার বাদে অর্ণব অন্তুর ঘাড়ে কামর দেয়, অন্তু ঘাড়ে ব্যাথায় মৃদু চিতকার করে, তার বুঝতে বাকি নেয় অর্ণব তাকে কামর দিয়েছে অন্তু চোখ খুলে দেখে অর্ণবের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি। এতে অন্তু রেগে গিয়ে সব রং অর্ণবে উপর দিয়ে দেয় এতে অর্ণব বিস্মিত হয়। সে ভাবতে পারে নি এমন হবে তাই অর্ণব অন্তুকে ও তার রঙে রাঙাতে লাগলো….

দিদিয়া এ তুমি কি করছো অরনির ডাকে অন্তর ভাবনা ভাঙ্গে। সে পেছনে তাকিয়ে দেখে অরনি দাঁড়িয়ে আছে আর তার চোখ তার আকাঁ ছবি দিকে। অরনি এসে অন্তুর ছবি দেখে অবাক হয়ে বললো…

অরনিঃ দিদিয়া এটা তুমি এঁকেছো

অন্তুঃ হুমম। কেন? ভালো হয় নাই…[মুখটর ছোট করে]

অরনি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো…কে যে বলো দিদিয়া অনেক সুন্দর হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু মিস্টেক হয়েছে। আসলে তুমি অনেক বছর পর করছো তো তাই এমনটা হয়েছে দাড়াও

বলে তার ফোনে কয়েকটা ছবি তুলে কাওকে সেন্ড করে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বলে…দিদিয়া হাত মুখ ধুয়ে আসো নিচে চলো দাদাভাই ডাকছে…

অন্তু মাথা নেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো হাত মুখ ধুতে। আর অরনি অন্তুর রং তুলি সব গুছিয়ে টেবিলে রেখে দিলো। অন্তু আসলে তারা নিচে যায়…..
__________________________

পাপা এটা কেমন করে কাটে বলে আনভি একটা বেগুন হাতে নিয়ে রোদ কে দেখাছে। আনভির কথা শুনে রোদ তার দিকে তাকিয়ে দেখে আনভি কিউটি ফেস করে বেগুন হাতে কিচেনর কাউন্টারে বসে আছে। রোদ হসে বলে…

রোদঃ আম্মু তোমাকে কিছু করতে হবে না পাপা সব করে নেবে। এবার বলো কি খাবে

আনভি মুখে হাত নিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে দেখে রোদ মুচকি হসে বললো…আম্মু পোলাও আর বেগুন ভাজি কেমন হবে বলতো।

আনভিঃ ইয়াম্মি পাপা

রোদ হেসে এপরেল পরে রান্না করতে লাগলো আর আনভি বসে বসে তা দেখছে আর চকোলেট খাচ্ছে। (আসলে প্রতি শুক্রবার রোদ নিজের হাতে রান্না করে সবাই কে খাওয়ায়। তাই আজ ও ব্যতিক্রম হলো না আনভিকে কিচেন কাউন্টারে বসিয়ে রেখে রোদ রান্না করতে লাগলো)

এদিকে প্রাপ্য বাপ মেয়ের ফেসাদে পরে পিঁয়াজ কটতে হচ্ছে। প্রাপ্য নাক টেনে মিনমিন করে বলতে লাগলো..ধুর ভালো লাগে না, সারা সপ্তাহ খেটে মরি না জানি একটা শুক্রবার পায় মন খুলে ঘুমাবো তা না৷ এই বাপ বেটি মিলে কাজ করিয়ে মারছে। ধুর ধুর মিনমিনয়ে বলে আনভি সরু চোখে বলতে লাগলো..

আনভিঃ কি কি বলে চাচ্চু

আনভির কথা শুনে রোদ প্রাপ্য দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। এদিকে আনভির কথা শুনে প্রাপ্য ভয় পেয়ে যায় কিন্তু রোদকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জোরপূর্বক হসার চেষ্টা করে বললো..

প্রাপ্যঃ কই কিছু না তো পরী আমি তো পিয়াজ কাটছি। ভাই তুই অমন করে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে তুই রান্নাতে মন দে না হলে রান্না খারাপ হবে।

রোদঃ তোর দ্বারা কিছু হবে না প্রাপ্য। না জানি অরনি সাথে কি করিস আল্লাহ জানে।

বলে রোদ রান্না করতে লাগলো, এদিকে প্রাপ্য মনে মনে বলো…আর অরুসোনা ভাই সে তো রাগ করে বসে আছে না জানি কি করে রাগ ভাঙ্গাবো আল্লাহ জানে। বলে কাজ করতে লাগলো রোদ….
_______________________________

দিদিয়া বিরানিতে কি কিসমিস দেয় দ্বিধাভোক্ত কন্ঠে বললো অরনি। অরনির কথা শুনে অন্তু মাংস রান্না রেখে অরনির দিকে তর্ক্ষু দৃষ্টি প্রয়োগ করে বলো..

অন্তুঃ সিরিয়াসলি অরু তুই সব রান্না ভুলে গেছি। কি করে ভুলে গেলি সব, আমি না তোকে সব করতে শিখিয়েছি তাই কি করে ভুলি।

অরনি মাথা নিচু করে আছে সে আসলেই ভুলে গেছে। অন্তু ফোস কে নিশ্বাস ফেলে বললো… তুই সালাত কাট আমার প্রায় হয়ে গেছে। তোকে রান্না করতে হবে না যা ভাগ।

বলে রান্না করতে লাগলো। অরনি আর কি করবে সে সালাত কাটতে লাগলো৷ আজ অন্তুর হাতের বিরানি খাবে বলে অবদান করেছে তার দাদাভাই তাই এতো আয়োজন। (তখন অন্তু নিচে আসলে আদি তাকে বলে… অন্তুপাখি তোর হাতের আজ বিরানি খাবো তাই ঝটপট করে নিয়ে আয়। অন্তু ও আর কথা বাড়ায় না সে রান্না করতে চলে যায়) প্রায় ৩০মিনিট বর অন্তু রান্না করে সব ডাইনিং টেবিলে রাখে খাবার। তারপর সে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আয়রা ছাড়া সবাই আছে টেবিলে সে এসে বসে পরে। মিনু খালা সবাইকে বিরানি দিতে লাগলো। বিরানি খেয়ে আদি বললো..

আদিঃ অন্তুপাখি তোর হাতের রান্না কতো মিস করেছি ওখানে বলে বোঝাতে পারবো না। রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছে।

অরনিঃ হুমম দিদিয়া সত্যি ভালো হয়েছে

আজাদঃ আমার ছোট আম্মাজানের হাতের রান্না কোন তুলনায় হয় না। তাই না আম্মাজান

দিদুনঃ হ্যাঁ

আকাশঃ তা অন্তু মামনি আজ কি চায় তোমার বলো এতো ভালো বিরানি খাওয়ালে বলে কথা।

অরনিঃ হুমম দিদিয়া বল কি লাগবে আজ দাদাভাই আর আব্বু মিলে তোর কথা ১০০% রাখবে

অন্তু কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলো…দাদাভাই চাচ্চু আমি আর্ট ক্লাসে ভর্তি হতে চায় তাও শীগ্রই।

অন্তু এমন কথা শুনে সবাই চমৎকার যায়। কিন্তু সবাই খুশি হয় এটা ভেবে অন্তু নরমাল হচ্ছে। আকাশ বললো…

আকাশঃ তুমি যা চাই বে তাই হবে। আদি

আদিঃ জ্বি চাচ্চু

আকাশঃ কাল অন্তুকে আর্ট ক্লাসে ভর্তি করে দিয়ে এসো।

আদি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে অন্তু খুশি হয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরে বলে…থেঙ্কংইউ দাদাভাই। আদি মুচকি হেয়ে বলে পাগলি। সবাই খাওয়ায় মন দেয়। আয়ান খেয়ে হাত ধুয়ে এসে একটা প্লেটে আয়রা জন্য খাবার বেরে নিয়ে উপরে যাবে তখন আদি বললো…

আদিঃ আয়ান দাড়াও

আয়ান দাড়িয়ে আদির দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে থাকে সেটা দেখে আদি বললো…

আদিঃ তুমি খাবার নিয়ে ওপরে কেন যাচ্ছো। আয়রাকে এখানে সবার সাথে কেন খেতে নিয়ে এলে না। আর আমি আসার পর থেকে দেখছি আয়রা সবসময় তার রুমেই থাকে। আমি মানছি সে প্রেগন্যান্ট ওপর নিচ করতে পারে না কিন্তু এই অবস্থায় তাকে হাঁটা চলা করতে হবে এভাবে রুম বন্দি হয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে তো।

আয়ান একবার তার মা কে দেখে, তার মা এসব কথার তক্কা না কেরে সে খাচ্ছে। আয়ান আদির দিকে তাকিয়ে বললো…

আয়ানঃ দাদাভাই আয়রা নিচে না আসলেই সুস্থ থাকবে। আমি চায় না এমন কোন কথা বা খারাপ পরিস্থিতিতে আয়রা ওপর এফেক্ট করুক। তাই ও রুমেই সেফ আছে। আমি আসছি

দ্বিতীয় কনো কিছু না বলে ওপরে চলে গেলো সে। আয়ানের কথা শুনে সবাই অবাক হলেও নিহিতা মির্জার কিছু যায় আসে না সে একই ভঙ্গিতে খাবার খাচ্ছে যেন কিছুই হয় নিই। আদি আবাক হয়ে তার দিদুনকে বলে…

আদিঃ দিদুন আয়ান এটা বলো কেন আয়রা রুমের বাইরে সেফ না।

দিদুনঃ আসলে দাদুভাই আয়রা যখন ৪মাসের প্রেগন্যান্ট তখন সিঁড়ি থেকে পরে যেতে লাগে সঠিক সময় আয়ান না আসলে অনেক বড় খতি হয়ে যেতো। এই ঘটনায় আয়ান কেমন যেন হয়ে যায় আয়রাকে রুমে থাকে, বলে সব সময় প্রয়োজন ব্যতিত রুমের বাইরে আসতে দেয় না। আমি আর মিনু যায় আয়রা সাথে সময় কাটাতে তার রুমে। আর সবাই যে যায় কাজে ব্যস্ত থাকে ওই মেয়েটা কি করে না কে কারোর কোনো খোজ নেবার প্রয়োজন মনে করে না।

দিদুনে কথা শুনে অরনি আর অন্তু মনে একটু খারাপ লাগলো সাথে অনুতাপ। কেন না আয়ানের সাথে তাদের রাগের কারনে তারা আয়রার সাথে আন্যায় করেছে। তারা কথা বলে, সম্মান ও করে কিন্তু কখনো তার রুমে যায় না কেননা আয়ানের রুম বলে। আদি আর কিছু না বলে উঠে চলে যায়। একে একে সবাই চলে যায়…..
__________________________________

রাত-১ঃ৩০ টা

রাত যত নিঝুম হচ্ছে ততো একাকিত্ব ততো বাড়ছে। সাথে পালা দিয়ে বাড়ছে বুকের ক্ষতবিক্ষত করা স্মৃতি। ঘুমের মধ্যে খারাপ স্বপ্ন দেখে উঠে পরে রোদ। দরদর করে ঘামছে সে হাতের সাইডে টি-টেবিল থেকে পানি নিয়ে খেতে লাগলো সে, নিজেকে শান্ত করে বুঝতে লাগলো কেন সে স্বপ্ন দেখো। কিন্তু নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারলো না সে। সে জানে তার অশান্ত মনকে শান্ত করতে হলে তাকে লাগবে, তাই সে ফোন হাতে নিয়ে কাওকে ফোন দিলো কিছু সময় পরে ফোনটা ধরলে সে অস্থির হয়ে বলো….

রোদঃ দেখো এতো রাতে ফোন দেবার জন্য সরি কিন্তু আমি নিরুপায় হয়ে ফোন দিয়েছি। আমাকে একটা বার তাকে দেখতে দেও প্লিজ আমার মন অশান্ত হয়ে আছে। একটা বার দেখলে শান্ত হবে

ওপাশ থেকে কি বলো জানি না রোদ ফোন দেখে দিলো। ৫ মিনিট পর তার ফোনে ফোন আসে ভিডিও কল। রোদ ঝটফট ফোনটা তুলে তার সামনে থাকা মানুষকে দেখে আস্তে আস্তে শান্ত হতে লাগলো। কয়েক মিনিট চুপ করে বসে শুধু তার চোখের অতৃপ্ত তৃষ্ণা মেটাতে লাগলো। তার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে হাত দিয়ে মুছে নিয়ে স্ক্রিনে তার ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর ফোনটা কেটে দেয়, রোদ আনভির দিকে তাকিয়ে বলে…

রোদঃ আম্মু তোর করা প্রমিজে দ্বিতীয় ধাপ কমপ্লিট। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা আর কিছু ধাপ কমপ্লিট করার।

বলে আনভিকে ভালোভাবে তার বুকে নিয়ে শুয়ে মনে মনে বলে…তোমকে কাছে পাবার জন্য মনটা অনেক ছটফট করছে জান। জানি না কবে তোমাকে কাছে পাবো ভালোবাসবো, তুমি গাল ফুলিয়ে থাকবে আগের মতো। আমি কষ্ট করে তোর রাগ ভাঙ্গার। সব অনেক মিস করছি অনেক। আজ স্বপ্নে যায় দেখলাম তা সত্যি হতে কখনো আমি দেবো না। তোমাকে একবার কাছে পাই তোমাকে আর আনভিকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব। আই লাভ ইউ জান। বলে আস্তে আস্তে ঘুমাতে লাগলো….

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here