তুমি কেন আগে আসোনি পর্ব ১

আজকে ক্লাস শেষ হতে বেশ খানিকটাই দেরি হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি বোরকা পরে ক্লান্ত পায়ে হেটে পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসলো সিনথিয়া। এবার সে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বাসার থেকে কিছুটা অদূরেই একটা গার্লস কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছে। আজ মাথাটা খুব ধরেছে। ক্লান্ত পায়ে কলেজ গেট পার করলো। রিকশার জন্য বেশিদূর হাটতে হলো না। গেইটের কাছেই পেয়ে গেলো। তাতেই চড়ে বসলো সিনথিয়া।

বাসায় ফিরে গোসল সেরে, খেয়ে একটা ঘুম দেবে এটাই ভাবলো সারা রাস্তা। ল্যাবে যাওয়ার আগে যোহরের সালাত আদায় করে নিয়েছিলো কলেজের কমন রুমে।

রিকশা থেকে নেমে বাসায় ঢুকতেই দেখলো ড্রয়িংরুমে মানুষজন ভর্তি। কি হলো কিছুই বুঝলো না সিনথিয়া। সামনে এগুতেই তার মা এসে তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে গেলো। মেয়েকে তাগাদা দিয়ে আসমা বললেন,

— “তাড়াতাড়ি গোসল সেরে এই শাড়িটা পরে নে যা।”
— “কেনো মা? আর ড্রয়িংরুমে উনারা কারা?”
— “তোর ফুপি।”
— “ওহ! আমি শাড়ি পরবো কেনো মা?”
— “আরশি তার একমাত্র ছেলের জন্য তোকে দেখতে এসেছে। যা তাড়াতাড়ি। ওরা অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষা করছিলো।”

সিনথিয়া কানে যেনো ভুল শুনলো। ও এখন একটুও প্রস্তুত না বিয়ের জন্য। তার উপর বলছে শাড়ি পরে ওদের সামনে যেতে। এটা তো আরো অসম্ভব। অসাড় ভঙ্গিতে বললো,

— “শাড়ি পরে গেলে তো পর্দা লঙ্ঘন হবে মা।”
— “আরে আজকে একদিনই তো। ওতে কিছু হবে না। ওরা চলে গেলে আবার পর্দা করিস।”
— “তোমার এই একদিনের নীতি পালন করতে গিয়ে যদি আজই মারা যাই দায়ভার তুমি নেবে মা?”
— “উফ! তোর সবকিছুতেই যত্তসব গোড়ামি। যা বলছি তাই কর।”
— “শাড়ি আমি পরবো না মা। থ্রিপিস পরেই হিজাব চড়াবো।”
— “বেশি কথা বলছিস কিন্তু।”
— “মা প্লিজ..। বুঝার চেষ্টা করো।”
— “কি বুঝবো আমি? একটা দিন একটু সাজলে ওমন কিছু হয়না। এমন তো না যে তোর রুপ বেয়ে পরছে। হয়েছিস তো কাইল্লা। তাতেই এতো অহংকার। তুই কি ভাবিস এমন ভূত সেজে থাকলে তোকে কেউ বিয়ে করবে? ভালোয় ভালোয় বলছি যা বললাম তাই কর।”

ছোটখাটো একটা হুমকি দিয়ে সিনথিয়ার মা বেরিয়ে গেলেন মেয়ের রুম থেকে। সিনথিয়া দুই হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠে। মায়ের কাছ থেকে এমন মন্তব্য সে আসা করেনি। সে তো পর্দা করে কারণ এটা আল্লাহর ফরয বিধান বলে। এখানে তো সুন্দর অসুন্দরের শর্ত নেই। তাহলে কেনো প্রতিবারেই তাকে এভাবে এটাক করা হয়?

ছোট থেকেই সিনছিয়া একটু লাজুক স্বভাবের ছিলো। লজ্জায় কারো সাথে কথা বলতে পারতো না। আর ছেলেদের সামনে তো আসতেই পারতো না। কোনো কাজিন ভাইদের সামনে পরলে লজ্জায় কুকড়ে যেতো। স্কুলে পড়া কালীন সময়ে কিছু বান্ধুবিদের মাধ্যমে দ্বীন সম্পর্কে জানতে পেরেছে। তারপর থেকেই শরিয়াহ মেনে চলার যথাযথ চেষ্টা করে। এতেই বাসায় সবাই ক্ষুদ্ধ সিনথিয়ার উপরে।

তাদের মতে এখনই নিজেকে গড়ার সময়। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সময়। এখনই যদি এমন ঘরকুনো হয়ে থাকে তাহলে তো পিছিয়ে যাবে। সবাই এগিয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। দিন দিন জঙ্গি হলে কিভাবে হবে! এরকম আরো কতশত কথা। সিনথিয়া দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে কারো থেকেই সাহায্য পায়না। নিজেই লড়াই করে দ্বীনের পথে টিকে আছে। প্রতিটা দিন যেনো এক একটা যুদ্ধের সমান মনে হয়।

চোখ মুছে ওয়াশরুমে পা বাড়ালো সিনথিয়া। গোসল সেড়ে শাড়িটা পরে নিলো। ব্লাউজটা একেবারে কোমড় পর্যন্তই হয়েছে। সাথে ফুল হাতা। এতে একটু স্বস্তি পেলো। মাথায় হিজাব চড়ালো। আর কোনোরকমের সাজগোছ নেই মুখে।

সিনথিয়ার মা আসমা ভেতরে ঢুকে মেয়েকে দেখে কটমট করে তাকালেন। সিনথিয়া গোপনে একটা ঢোক গিলে নিজেকে উপরে যথেষ্ট শক্ত রেখে বললো,

— “শর্ত ছিলো শাড়ি পরা। পরেছি। কিভাবে কেমন করে পরবো সেটা শর্তে ছিলো না। তাই ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই।”
আসমা শক্ত কণ্ঠে বললেন,
— “চল আমার সাথে।”

শাড়িটা যতটুকু সম্ভব নিচু করে পরেছে যাতে পা দেখা না যায়। রান্নাঘরের সামনে দাঁড়ালো আসমা। ট্রে মেয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিয়ে গেলেন ড্রয়িংরুমে। সিনথিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে। যথাসম্ভব মাথাটা নিচু করেই রেখেছে। ট্রে ছোট্ট টেবিলের উপরে রেখে সবাইকে সালাম দিলো। সিনথিয়ার বাবা রাজিব বললো,

— “উনি তোমার ফুপি হয়। পা ধরে সালাম করো তাকে।”
সিনথিয়া হোচট খেলো। ছোট্ট করে উত্তর দিলো,
— “পায়ে ধরে সালাম করা শরিয়তে নেই বাবা।”

সায়ান এতোক্ষণ বিরক্ত হয়ে বসে ছিলো। মেয়ে দেখতে এসে এতোক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে জানলে আসতোই না। তার উপর যখন দেখলো মেয়ে নিজেকে বোরকায় ভরে জঙ্গি বানিয়ে রেখেছে তখন আরো বিরক্ত হলো মায়ের উপর। সিনথিয়ার কথা শুনে সায়ান মুখ তুলে তাকালো সিনথিয়ার দিকে।

কেমন যেনো একটা ঘোরে চলে গেলো। সায়ানের মা আরশি সিনথিয়ার দিকে থমথমে মুখ তাকালেন। সিনথিয়ার বাবা আরশ নিজেও কটমট করে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। সিনথিয়ার ইচ্ছে করছে এখান ছুটে পালিয়ে যেতে। কিন্তু চাইলেই সব সম্ভব নয়। মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নিরলস ভঙ্গিতে।

সায়ানের মা আরশি নিজেকে স্বাভাবিক করে করে সিনথিয়াকে বসালেন তাদের সামনের সোফায়। সিনথিয়া শুধু এক নজর তাকিয়েছিলো সায়ানের দিকে। তাতেই ঘৃণা ধরে গেছে লোকটার প্রতি। একেবারে বিদেশি স্টাইলে তার ড্রেসাপ। এসব দেখেই মনটা বিষিয়ে গেলো।

আরশি সিনথিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন,

— “তোমার পুরো নাম কি যেনো? ছোট থাকতে একবার দেখেছিলাম তারপর আর দেখিনি তোমায়। তাই নাম মনে নেই।”
— “সিনথিয়া আরশ রহমান।”
— “নাইস নেম।”

সিনথিয়া বিরক্ত হলো। এদের মধ্যে ইসলামের ছিটেফোঁটা রেশটুকুও নেই। সে কিছুতেই এই পরিবারের সদস্য হতে চায়না। বাবাকে বলে দিবে সে রাজি না। মনে মনে এসব ভাবলো সিনথিয়া। আরশি হাসিমুখেই জানতে চাইলেন,

— “এবার কিসে পড়ছো?”
— “অনার্স প্রথম বর্ষে।”
— “কোন ভার্সিটিতে?”
— “জ্বী, গার্লস কলেজের অনার্সে ভর্তি হয়েছি।”
— “এমা সেকি! ভর্তি পরিক্ষা দিলে না কেন?”
— “ইচ্ছে হয়নি তাই।”
একরোখা উত্তর দিলো সিনথিয়া। আরশি এবার বললেন,
— “আচ্ছা থাক সেসব। আচ্ছা একটু হেটে দেখাও তো। দেখি কেমন হাটতে পারো।”
— “আন্টি আমি আপনাদের সামনে দিয়েই হেটে এসেছি।”
আরশি চুপ মেরে গেলো। আবার বলল,
— “হুম! দেখো এভাবে নিজেকে প্যাকেট করে রাখলে কিভাবে হবে বলো? নিজেকে তো এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তাই না! তাছাড়া এভাবে চললে তো তুমি পিছিয়ে যাবে। আজকাল দেখছো না নারীরা কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে ঘর বন্দী করে রাখলে হবে?”

সিনথিয়ার মা আসমা আরশির সাথে তাল মিলিয়ে বললেন,

— “তুমিই বোঝাও একটু মেয়েটাকে। কিভাবে যে এমন হয়ে গেলো। সারাদিন ঘরবন্ধী হয়ে পরে থাকবে। কারো সামনে যাবে না। সারাদিন কিসব ফিকহ এর বই পত্র নিয়ে পড়ে থাকে। আরে আজকাল এসব চলে নাকি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে না বলো। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সবসময় বলি একটু আপডেট হয়ে চলতে। কিন্তু সেই আবার বোরকা পরে ভূত সেজে চলবে। জামা কাপড় পরবে এতো ঢিলে। মনে হয় আরো একজন ঢুকতে পারবে। এতো ব্যাকডেটেড হলে চলে বলো। ওর দুই ভাবি রিহা আর মিম কত সুন্দর গুছিয়ে চলে। বলি তাদের থেকে কিছু শেখ। না! সে তাদের ধারে কাছেও ঘেষবে না।”

আরশি সিনথিয়ার দিকে তাকালেন। সিনথিয়ার অবস্থা দেখে কেনো যেনো মজা পেলেন। আরশির স্বভাবই এমন। কাউকে অপদস্ত করতে পারলে যেনো মজা পায়। তাদের মতে এটাকে ফান বলে। ওই একটু পচানো আরকি। এতে সবাই বিনোদন পেলো। আরশি মনে পরার ভঙ্গিতে বললো,

— “ওহ হে! তোমার চুলই তো দেখা হলো না। সবকিছু কেমন প্যাকেট করে রেখেছো। আচ্ছা সিনথিয়া তোমার গরম লাগে না? আমার তো তোমাকে দেখেই গরম লাগছে।”

আরশি সিনথিয়ার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “এই ভাবি তোমার মেয়ে কবে থেকে পীরের মুরিদ হলো?”
সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
— “আচ্ছা সিনথিয়া এমন নয়তো তুমি কারো সাথে রিলেশনে ছিলে তারপর তাকে ধোকা দিয়েছো। সেইজন্য মুখ লুকিয়ে চলো!” ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “তোমার মেয়ে আবার ধরা টরা খেলো নাকি? নাকি এস আই-তে যোগ দিয়েছে?”

সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। যেনো মজার কৌতুক বলেছে। অথবা ওদের সামনে কমেডি চলছে। সিনথিয়ার চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে। সবার অগোচরে আঁচলের কোণ দিয়ে চোখ মুছে নিলো। আরশি সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “বাবা তুই কিছু জিজ্ঞেস করবি?”
— “না মা। তোমার পছন্দ হলেই আমার পছন্দ।”

আরশি হাসলো। ছেলেটা একদম তার মতোই হয়েছে। মায়ের কথায় হেরফের করে না। সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

— “কই সিনথু তোমার চুল দেখাও।”

সিনথিয়ার ভাবি রিহা হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে বললো,

— “ফুপি আমাদের সিনথিয়া খুব লজ্জাবতী। নিজে থেকে পারবে না। আমিই হেল্প করছি।”

রিহা এগিয়ে এসে সিনথিয়ার হিজাবে হাত দিতেই সিনথিয়া আর সইতে পারলো না। ভেতরটা বিদ্রোহ করে উঠলো। আর চুপ থাকতে দিলো না। রিহার দিকে কঠিন চাহনি নিক্ষেপ করতেই রিহা থমকে গেলো। রিহার মনে হলো এই চাহনি দিয়েই ঝলসে দেবে সিনথিয়া তাকে। কেমন যেনো একটা বাঘিনী রুপ ফুটে উঠলো। সায়ান নিজেও বুঝলো আরেকটু কিছু বললেই বাঘিনী গর্জে উঠবে। তাই মায়ের হাত চেপে ধরে বললো,

— “থাকুক মা। চুল দেখার দরকার নেই।”

রিহা পিছিয়ে গেলো। সিনথিয়া নিজেকে সামলে নিলো। মাথাটা আবার নিচু করে নিলো। সায়ান যেনো উপভোগ করলো সিনথিয়ার বাঘিনী রুপটা।
সবাই উঠতে নিলেই সিনথিয়া এবার মুখ খুললো। ফুপির দিকে তাকিয়ে বললো,

— “ফুপি আপনি তো আমাকে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলেন, বললেন। আমারও কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলো।”
— “হ্যাঁ বলো।” আরশি একটু থতমত খেলো।
— “আপনাকে না আপনার ছেলেকে।”
— “আচ্ছা তোমরা দুজন একা কথা বলো।”
আসমা বললো,
— “হ্যাঁ ওদের দুজনকে আলাদা কথা বলতে দিলে ভালো হয়। চেনা জানা হবে ভালোই হবে।”
সিনথিয়া সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— “আপনারা সবাই থাকুন। বিশেষ কোনো প্রশ্ন নয়। স্বাভাবিক কিছু প্রশ্ন। ফুপিকেও করবো।”

সিনথিয়া সবগুলো কথা আরশির দিকে তাকিয়েই বললো। সায়ান ভাবছে এমন কি কথা জিজ্ঞেস করবে মেয়েটা? সিনথিয়া সায়ানের দিকে সরাসরি না তাকিয়ে তার বসা সোফার দিকে তাকিয়ে বললো,

— “আপনার নাম?”
— “সায়ান খান।”
— “আপনি মুসলিম?”
— “হ্যাঁ কোনো সন্দেহ আছে নাকি?”
মনে হলো সায়ান কিছুটা রাগলো। সাথে আরশি ফেপে উঠে বললো,
— “তুমি মুসলিম হলে আমরা কি হিন্দু হবো নাকি সিনথিয়া? কিসব বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করছো?”
তাদের কথার মাঝেই সিনথিয়া প্রশ্ন করলো,
— “ওযুর ফরয কয়টি ফুপি?”
— “মা..মানে? এসব কি ধরনের প্রশ্ন?”
— “গোসলের ফরয কয়টি?”
— “(—-)”
— “আমার এবার সত্যিই সন্দেহ হচ্ছে ফুপি।”
— “এসব প্রশ্ন রেখে অন্য প্রশ্ন করো। আমার ছেলে অকপটে উত্তর দিয়ে দেবে।”
— “আপনারাই তো একটু আগে ফেপে উঠেছিলেন আপনাদের মুসলিম হওয়া নিয়ে সন্দেহ করায়। অথচ সামান্য একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না। নিজেকে মুসলিম দাবি করছেন কিসের ভিত্তিতে? শুধু নামটাই মুসলিমদের সাথে মিলে বলে এইজন্য?”

সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “আপনি নামাজ পড়েন?”
— “হ্যাঁ। আমার ছেলে সব ওয়াক্তের নামাজই পড়ে।” সায়ানের উত্তর আরশিই দিলো।
— “ফুপি আপনার ছেলে কি এখনো ফিডার খায়? নিজের উত্তর নিজে দিতে পারে না?
— “সিনথিয়া সম্মান দিয়ে কথা বল।” আসমা রেগে বললেন।
— “মা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পর্দা কালো, ধলা সবার উপরে ফরয করেছেন। কালো বলে তার দিকে কেউ তাকাবে না বলে তার পর্দার দরকার নেই। এটা তোমার কল্পনাতেই সম্ভব। পুরুষের যখন কামভাবের মনোভাব জাগে তখন কালো-ধলা কোনো বিষয় না। তার শুধু একটা মেয়ে হলেই চলে। ফরয বিধান নিয়ে ঠাট্টা করলে। তোমার ঈমান আছে নাকি ভাবো তো।”

সায়ানের দিকে তাকিয়ে আবার আরশির দিকে তাকিয়ে বলল,

— “ফুপি এশার ওয়াক্ত কয় রাকাত সেটা যদি আপনি আপনার ছেলের থেকে জেনে বলে দিতেন ভালো হয়। উনি তো এখনো বাচ্চা। এসব বুঝবে না।”

আরশি মুখ গম্ভীর করে ফেললো। সিনথিয়া উঠে দাড়িয়ে বললো,

— “ফুপি আমি হাটে বিক্রি করা কোনো পশু নই যে একেবারে উল্টেপাল্টে দেখতে হবে। খুব বেশিই দেখে নিতে চাইলে গুরুর হাটে চলে যেতে পারেন। কমদামে নাদুসনুদুস পেয়ে যাবেন। আর আমার কোনো ইচ্ছে নেই অগ্রগতির নামে এগিয়ে যাওয়ার। পুরুষের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে নিজের নারীত্ব বিসর্জন দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। আপনি তো অনেক এগিয়ে গেছেন। তারপর কি পেয়েছেন? অনেক সুনাম পেয়েছেন? দিনশেষে তারা কি আপনাকে নারীর নজরে না তাকিয়ে উচ্চপদস্থ কোনো মানুষের নজরে তাকিয়েছে? আপনি কি বাজে প্রস্তাবের শিকার হননি? নাকি এগুলা আপনার কাছে কমন? জাস্ট ফান? স্বাধীনতা বলে চিল্লিয়ে কি হাসিল করেছেন? নিজের ঘরেই তো সুখ ধরে রাখতে পারলেন না। স্বামীর আদেশ পালনকে বান্দীগিরি মনে হয়। তাই সেখান থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে এলেন। অফিসে বসের মনোরঞ্জন করে কাজ করাকে বান্দীগিরি মনে হয়না? স্বামী বকা দিলে সেটা অমানবিকতা, অত্যাচার। আর অফিসের বস বকা দিলে ‘এরকম একটু আধটু সহ্য’ করতে হয় নীতি লালন করছেন। স্বামীর সাথে কথা বলেন কটমট করে। আর বসের সাথে মধুর স্বরে মিষ্টি আলাপ করেন। স্বামীর সামনে কাজের মহিলা সেজে থাকেন। আর বসের সামনে হুরপরি সেজে যাবেন। এই যদি হয় আপনাদের স্বাধীনতার নমুনা তাহলে আমি সেই স্বাধীনতায় থুথু দিলাম। অর্ধনগ্নকে আপনার কাছে আপডেট মনে হয়? তাহলে তো আপনার চেয়ে আপডেট পশুপাখি। আপনারা তো এখনো ব্যাকডেটেড হয়ে আছেন। তাদের তো জামা কাপড়ই নেই। তখন জাতে লাগে না? সেরকম করে কাপড় খুলে আধুনিক হয়ে যান। অনেক কথা বলেছি মাফ করবেন। আপনার সাথে, আপনাদের সাথে আমার কোনোদিন মিলবে না। তাই এই প্রস্তাব এখানেই শেষ করে দিলাম। আসসালামু আলাইকুম।”

সিনথিয়া কারো দিকে না তাকিয়ে চলে গেলো। উপস্থিত সবাই থমকে গেছে। আরশি নিজেও থমকে গেছে। বেশ সময় লাগলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে। আরশি উঠে দাঁড়িয়ে কর্কশ গলায় বললো,

— “ভাইয়া আমি তোমার একমাত্র বোন। অনেক দিন পর বেড়াতে এসেছি। আর তোমার মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করতে এসেছি। এভাবে মেয়েকে দিয়ে অপমান করাবে জানলে আসতাম না। আমার আসায় তোমরা বিরক্ত বললেই পারতে।”

তারপর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সায়ানকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সিনথিয়ার বাবা, দুই ভাই খুব ক্ষেপেছে। সব রাগ, ক্ষোভ গিয়ে পরলো সিনথিয়ার উপর।

রুমে এসেই শাড়ি খুলে থ্রিপিস পরে নিলো। শাড়িটা ছুড়ে ফেলে দিলো। বিছানায় বসতেই কেঁদে ফেললো। এতোটা অপমানিত আর কোনোদিন হয়নি সে। জানে না কি বলতে কি বলে ফেলেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার উপর দিয়ে বড় একটা ঝড় যাবে আজ রাতেই। সিনথিয়া সেসব ভেবেই ভয়ে কুকড়ে উঠলো। মনে পরলো গত দুই মাস আগের বিভৎস রাতের কথা। বাবা-ভাইকে সেদিন খুব হিংস্র মনে হয়েছিলো তার। কিভাবেই না মারলো ওকে। সিনথিয়ার ইচ্ছে করছে কোথাও লুকিয়ে যেতে। সইতে পারছে না আর।

________________________
কেটে গেছে অনেকদিন। সায়ান তার বেডরুমের বারান্দার ডিডানে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ করতেই বারবার সিনথিয়ার মুখটা ভেসে উঠছে। সিনথিয়াদের বাসা থেকে এসেছে দুই সপ্তাহ হলো। এই দুই সপ্তাহে সে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। চোখ বন্ধ করলেই শুধু সিনথিয়ার মুখটা ভেসে উঠে। সায়ান উঠে বসে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কপালে আঙুল দিয়ে ঘষে বললো,

— “সিনথু বেব ইউ আর সো হট। এতোগুলো দিন হলো অথচ এখনো নজরের সামনে থেকে যাচ্ছো না। বাঘিনী তুমি। তোমার এই বাঘিনী রুপ সত্যিই ইনজয় করেছি। রাগলে তোমাকে আরো বেশি হট লাগে। ইচ্ছে করে তোমার সেই আগুনরুপে ডুব দেয়। তোমার সেই রুপকে দমিয়ে দিয়ে তোমার পরাজয় দেখতে ইচ্ছে করে। তোমাকে আমার চাই-ই চাই। তোমার প্রতিটা কথা এবং কাজে আলাদা নেশা চেপেছে। যেই নেশা কোনো ওয়াইনের বোতলে ডুব দিলেও মিটবে না। নেশা কাটাতে তোমাকেই প্রয়োজন হোক না একদিন বা একরাতের জন্য। সিনথু বেব বি প্রিপেয়ার্ড টু বি মাইন।”

তারপরই মোবাইল বের করে সিনথিয়া ছবিটা বের করে গ্যালারি থেকে। এই ছবিটা সেদিন সবার অগোচরেই তুলে নিয়েছিলো। ছবিটা স্লাইড করতেই সিনথিয়ার আরেকটা ছবি ভেসে উঠলো স্ক্রিনে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে সায়ান জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে।

এই ছবিটা সিনথিয়ার অগোচরে তুলেছিলো ওর বড় ভাবি মিম। সিনথিয়া সবে মাত্র গোসল করে বের হয়েছিলো যার কারণে গায়ে ওড়না ছিলো না। চুলের পানিতে সামনের দিকটা অনেকটাই ভিজে গেছিলো। সেসময় মিম চুরি করে ছবিটা তুলে সায়ানকে দেয়।

তাছাড়া সেদিন যখন সিনথিয়া চলে যাচ্ছিলো সায়ান ওর যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। শাড়ি পরার কারণে কোমড়ের ঢেউটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। সায়ান তখনও নেশাময় চোখে সিনথিয়ার কোমড়ের ঢেউটার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। তার কিছুদিন পর মার্কেটে মিমের সাথে দেখা হয়। মিমের কাছ থেকেই শুনেছে সেদিন তারা যাওয়ার পর সিনথিয়ার বাবা এবং ভাই মিলে প্রচুর মেরেছে। সিনথিয়া এখন খুব অসুস্থ। তাকে বলেই ছবি নিয়েছে।

সায়ান তার মাকে অনেক বলে কয়ে রাজি করিয়ে নিলো। আরশি নিজেও মনে মনে ছক কষেছে কিভাবে কি করবে। তাকে অপমান করলো সেদিনের একটা মেয়ে৷ এবার সেও দেখে ছাড়বে। ভাইকে ফোন করে নানা চল-চাতুরী কৌশলে রাজি করিয়ে ফেলেছে। ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে ফিক্সড করেছে তারা। আগামী মাসেই বিয়ে।

সায়ান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব শুনলো। রুমে এসে হাসলো। পৈচাশিক এক হাসি। যেই হাসি একটু আগে তার মাও হেসেছিলো।

.
খুব কষ্টে উঠে বসলো সিনথিয়া। আসমা খাবারের প্লেট রেখে বললো,

— “খেয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নে। আগামী মাসেই তোর বিয়ে।”

সিনথিয়া যেনো আসমান থেকে পরলো। অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

— “বিয়ে মানে? কার সাথে?”
— “কার সাথে আবার সায়ানের সাথে।”
— “মা! আমি ওই লোকটাকে বিয়ে করবো না।”
— “চুপ কর। সেদিন এতো অপমানের পরেও ওরা তোকে নিতে চাইছে মানে তোর রাজ কপাল। সমন্ধ তো আসেই না। অনেক ভাগ্য করে এই প্রস্তাব এসেছে। রাজি না হয়ে পারা যায়? তোর স্বভাব দেখলে তো মনে হয় নবাবের বেটি তুই। তোর জন্য ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার আসবে। যত্তসব। খেয়ে নে তাড়াতাড়ি।”

সিনথিয়া কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে। শরীরের ব্যাথার সাথে সাথে মন এবং মস্তিষ্কের ব্যাথাটার বাড়ছে। চোখ দুটো জ্বালা করে উঠেছে। সিনথিয়া ভালোই বুঝেছে ওরা ওকে কোনো উদ্দেশ্যের জন্য নিতে চায়। সিনথিয়া চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলো। কি করবে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর মনে পরলো কিছুদিন আগে একটা প্রপোজাল এসেছিলো। ছেলেটা নিম্নবিত্ত কিন্তু খুব প্র‍্যাকটিসিং মুসলিম সে। ছেলেটার ব্যবহার খুব ভালো লেগেছিলো সিনথিয়ার। কিন্তু তার পরিবারের কেউ রাজি হয়নি কারণ সে নিম্নবিত্ত।

সিনথিয়া আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। ড্রয়িংরুমে যেতেই দেখলো বাবা ভাই সবাই বসে আছে। সিনথিয়া গিয়ে দাড়াতেই তার বাবা বললো,

— “সিনথি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি সায়ানের সাথে। তোমার কিছু বলার আছে?

সিনথিয়ার কাছে হাস্যকর লাগলো ব্যাপারটা। যেখানে তার মতের দাম নেই সেখানে আবার জিজ্ঞেস করছে কিছু বলার আছে কিনা। সে গিয়ে তার বাবার কাছে দাঁড়ালো। নিচে বসে আরশের হাতদুটে ধরে বললো,

— “বাবা কিছুদিন আগে সাদাফ নামের একটা ছেলের প্রস্তাব এসেছিলো মনে আছে তোমার?”
— “হ্যাঁ। কেনো কি হয়েছে?”
— “বাবাই আমি তোমার কাছে কিছুই চাইনা। শুধু এতোটুকু চাওয়া আমাকে যদি বিয়ে দেয়ার খুব ইচ্ছে হয় তাহলে সাদাফের সাথেই দাও।”
— “ওর সাথে বিয়ে দেবো মানে? কি আছে ওর যার জন্য ওই ফকিন্নিকে বিয়ে করতে চাইছো?”
— “আমার যেইদিকটা দরকার তার সেইদিকটা খুব সুন্দর করেই আছে। বাবা আমি সায়ানকে বিয়ে করতে চাইনা। তাদের সাথে আমার একদমই মিলে না। বিয়ে দিলে অশান্তি ছাড়া কিছুই হবে না। বুঝার চেষ্টা করো।”

সিনথিয়ার বড় ভাই ক্ষেপে উঠে বললো,

— “ওই মোল্লাকে যে বিয়ে করতে চাইছিস যদি কখনো বিপদে পড়িস তখন তো এসে আমাদের কাছেই হাত পাতবি। সায়ানের সাথে বিয়ে হলে ওরা তোকে রাজরানী করে রাখবে। নিজের পায়ে ঠেলে দিচ্ছিস ওমন সমন্ধ।”
— “ভাইয়া আমরা যদি না খেয়েও থাকি তবুও তোমাদের দ্বারে আসবো না। তাও সায়ানের সাথে বিয়ে দিও না। আমার বিলাসিতা লাগবে না। দ্বীন নিয়ে একটু বাঁচতে পারলেই হবে।”

দ্বীনের কথা শুনতেই ক্ষেপে উঠলো সবাই। সিনথিয়ার ছোট ভাই ক্ষোভ নিয়ে বললো,

— “আবার তোর সেই মোল্লাভাব। শুন এভাবে চলা যায়না। একটু আপডেট হয়ে চলতে হয়। আর সায়ানই বেস্ট তোর জন্য। আমরা যা বলেছি তাই হবে। এখন ঘরে যা। আগামী মাসেই বিয়ে। খেয়ে রেস্ট নে। যা..!”
— “ভাইয়া আমার কথাটা শু…….।”

সিনথিয়াকে থামিয়ে দিয়ে তার বাবা বললো,

— “অনেক হয়েছে। যাও এবার ঘরে যাও। আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।”

সিনথিয়া ব্যথিত মন নিয়ে ফিরে এলো রুমে। চোখ থেকে অনবরত পানি গড়িয়ে পরছে৷ খুব কষ্ট লাগছে। কেউ নেই যার কাছে একটু সাহায্য চাইবে। তখনই আসরের আযান পরলো। সিনথিয়া ওযু করে সালাতে দাঁড়িয়ে গেলো। সিজদায় যেতেই মুষরে পরলো একেবারে। নিজের সব আকুতি মিনতি অভিযোগ সব জানালো।

.
বিয়ের আর পাঁচদিন বাকি আছে। সিনথিয়া এখনো চেষ্টায় আছে বিয়ে ভাঙার। সায়ানকে যা নয় তাই বলে অপমান করে কিন্তু বেয়াদবটা যেনো পণ করেছে ওকে বিয়ে করবেই। আজ আবার বাবার কাছে বায়না করেছে ওকে ওদের নতুন ফ্ল্যাট দেখিয়ে আনবে। কথাটা শুনতেই গা জ্বলে উঠলো সিনথিয়ার। ইচ্ছে করছিলো থাপড়ে সব দাঁত ফেলে দিতে। বাবাকে হাজার বলেও নাকচ করাতে পারেনি সায়ানের প্রস্তাব।

একরাশ বিরক্তি আর ভয় নিয়েই রেডি হয়েছে। গা টা ঘিনঘিন করছে। কারণ গায়ে সায়ানের দেয়া বোরকা পরে আছে। তার মা জোর করে পরিয়ে দিয়ে গেছে। ঘরের সবার আদিখ্যেতা দেখলে আরো রাগ উঠে। কিন্তু তার হয়ে কিছু বলার কেউ নেই। একা লড়াই করে এদের সাথে পেরে উঠছে না।

গেইট থেকে বের হতেই দেখলো সায়ান তার গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাগটা চেপে উঠে বসলো গাড়িতে। সায়ান বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। সিনথিয়া বেশ অস্বস্তিতে পরে গেলো। নেকাবটা আরেকটু টেনে দিলো। সিনথিয়ার কান্ড দেখে সায়ান বাঁকা হাসে। গাড়িটা এসে থামলো বিশাল উঁচু এক বিল্ডিংয়ের সামনে। গাড়ি থামতেই সিনথিয়ার বুকটা দুরুদুরু করতে শুরু করেছে। না জানি আজ কি আছে কপালে। সায়ানকে মোটেও সুবিধের মনে হয়না। যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে। সিনথিয়া ভয়ে কুকড়ে উঠে। মনেমনে দোয়া পরে গাড়ি থেকে নামলো।

লিফট এসে থামলো নয়তালায়। চাবি দিয়ে লক খুলে নব ঘুড়িয়ে ভেতরে যেতেই সিনথিয়া ধাক্কা খেলো। এখানে তো কেউ নেই। সায়ানতো বলেছিলো এখানে ফুপি থাকবে, সাথে আরো আত্মীয়-স্বজন। তাহলে কি মিথ্যে বলে এনেছে ওকে?

সিনথিয়া ঘুরে দাড়াতেই দেখলো সায়ান দরজা লাগিয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে এবার ঘাম ছুটে গেছে। কতবড় বোকামি হয়ে গেলো এটা। এই লম্পটকে বিশ্বাস করা মোটেও ঠিক হয়নি। এখন কি করবে সে? মনে মনে আল্লাহর সাহায্য চাইলো। সায়ান বললো,

— “আসো তোমায় ঘরটা ঘুড়ে দেখাই।”
সিনথিয়া অসার হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অসার ভঙ্গিতেই বললো,
— “আপনি তো বলেছিলেন এখানে ফুপিরা থাকবে। কিন্তু এখন তো কাউকে দেখছি না।”

সায়ান ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সিনথিয়া ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। সায়ান ওর দিকে এগিয়ে এসে বললো,

— “তোমায় এই বোরকায় ভিষণ আবেদনময়ী লাগছে। নিকাবটা সরাও। নিকাবের কারণে ভালো লাগছে না। তোমার উষ্ণ গোলাপি ঠোঁট দুটো দেখতে পাচ্ছি না। আসলে তোমাকে এই বোরকায় একটুও মানায় না। বোরকা ছাড়াই হট লাগে। তোমার রুপের লেলিহান শিখা দেখতে বেশ লাগে।”

সিনথিয়া কি বলবে ভেবে পেলো না। কি বলা উচিত সেটাও বুঝলো না। সায়ান মোবাইল বের করে ওর একটা ছবি দেখিয়ে বললো,

— “see you are looking very sexy..।”

আরো অনেককিছুই বললো। সিনথিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ঢোক গিলে সব গিলে ফেলেছে। এখন একা এখানে সায়ানকে কিছু বলা মানে ওর ভেতরের ক্ষুদার্ত পশুটাকে উস্কে দেয়া। সিনথিয়া যথাসম্ভব সব এড়িয়ে মিনমিনে স্বরে বললো,

— “আমি বাড়ি যাবো। আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন। এখানে ভালো লাগছে না।”
— “ভালো লাগার মতো তো কিছুই হয়নি তাই বোরিং লাগছে। ভালো লাগার মতো কিছু করবো কি?”

সিনথিয়া বেশ বুঝতে পারছে সায়ানের ঈঙ্গিত। তার পাশ কাটিয়ে দরজার সামনে এসে দরজার নবে হাত দিয়ে বললো,

— “আমি বাসায় যাবো। ক্লাসের কিছু পড়া জমেছে। কয়েকদিন পরেই এক্সাম। পড়তে হবে।”

সিনথিয়া অজুহাত দেয়ার জন্য আর কিছু পেলো না। তাই পড়ার কথাই বললো। সায়ান এগিয়ে এসে সিনথিয়ার দুইপাশে দরজায় হাত রেখে সিনথিয়াকে আটকে দিলো। সিনথিয়ার মনে হলো এখনি শ্বাস আটকে আসবে। সায়ান আচমকাই একটানে নিকাব সরিয়ে নিলো। ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো যে সিনথিয়া কিছু বলতে পারলো না। সায়ানকে ওর মুখের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আর চুপ করে রইলো না। ঠাটিয়ে চড় মারলো। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,

— “লুচ্চা লম্পট কোথাকার। এতোই যখন উত্তেজনা জাগে তোর তাহলে চলে যাস না কেনো নিষিদ্ধ পল্লিতে।”

আর কিছু বললো না। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। এমন একটা সময়ে আল্লাহর রহমত ছিলো তার সাথে যার কারণে লিফট খালি পেলো। তাড়াতাড়ি লিফটে উঠে ‘জি’ বাটনে চাপ দিতেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। লিফট থেকে নেমে খুব দ্রুত বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে। রাস্তায় এসে একটু দাড়াতেই দেখলো পেছন থেকে সায়ান ডাকতে ডাকতে একদম এর কাছাকাছি চলে এলো।

চলবে,,,

‘তুমি কেন আগে আসোনি?’
® ‘নুরুন নাহার।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here