তুমি কেন আগে আসোনি পর্ব ২

“তুমি কেন আগে আসোনি?”

২.
বাসায় আসতেই মা এবং বড় ভাবির সামনে পরলো সিনথিয়া। একেবারেই থতমত খেয়ে গেলো ওদের সামনে পরে। বড় ভাবি ওকে দেখেই বললো,

— “এই সিনথু তুমি এই মাত্র গেলে আর এখনই চলে এলে যে? কিছু হয়েছে নাকি?”
আসমা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো,
— “তুই কোনো কোনো গন্ডগোল পাকাস নি তো?”

সিনথিয়া চুপসে গেছে। একবার ভেবেছে সায়ানের করা অসভ্যতা ওর মাকে বলবে। পরে ভাবলো এসব বললে ওকেই কথা শুনতে হবে। ওকেই ব্যাকডেটেড বলে যা নয় তাই বলে বসবে৷ তাছাড়া ওর মায়ের মুখে লাগাম নেই। কোনোরকমে বললো,

— “সায়ানের হয়ত কোনো কাজ পরে গেছিলো…তাই…আমি..তাই…!”

তাড়াতাড়ি রুমে চলে এসেছে সিনথিয়া। আগে কখনো এরকম মিথ্যে বলেনি। আসলে বলার প্রয়োজন পরেনি। এই প্রথম মিথ্যে বলেছে। মনে মনে তওবা করলো আল্লাহর কাছে। বিছানায় বসতেই ঢুকরে কেঁদে উঠলো। গায়ের বোরকাটা ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। বাজে লোকটার কাপড় ওর গায়ে রাখতে চায়না। সিনথিয়া বুঝতে পারছে না সায়ান এতো আপডেট এবং স্মার্ট হয়ে ওর মতো একজনকে কেনো বিয়ে করতে চাইছে? সায়ান চাইলে ওর থেকে স্মার্ট এবং সুন্দর মেয়ে পাবে। তাহলে ওর পিছনেই কেনো পরে আছে। সিনথিয়া কোনোভাবেই সায়ানকে বিয়ে করতে চায়না। যে লোক বিয়ের আগেই এমন করতে পারে না জানি বিয়ের পর কি করবে। খুব অসহায় বোধ করলো সিনথিয়া।

_____________________
পাঁচদিনটা যেনো কিভাবে কিভাবে চলে গেছে। সিনথিয়া অনেক চেয়েছে বিয়ে ভাঙতে। কিন্তু বাড়ি সবাই যেনো পণ করেছে ওকে এখানে বিয়ে দিয়ে তবেই এরা ক্ষান্ত হবে৷

ক্যামেরার ক্লিক শব্দ কানে আসতেই সিনথিয়ার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো অশ্রুকণা। সায়ানক ওকে হালকা ধাক্কা দিলো। সিনথিয়া ওর দিকে হালকা ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো। সায়ানের চোখে রাগ, ক্ষোভ, ভালোলাগা কোনো কিছুই নজরে এলো না। কেবল রহস্যময় মনে হলো। সিনথিয়া ঘাড় ঘুড়িয়ে নিলো। সায়ানকে বিয়ে করাতে যতটা না কষ্ট হচ্ছে। তারচেয়ে বেশি হচ্ছে এতগুলো পরপুরুষের সামনে বসে থাকতে।

বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হলেও সায়ান তার সব বন্ধুকে ইনভাইট করেছে। ওর দুই ভাই তাদের সব বন্ধুকে ইনভাইট করেছে। সিনথিয়ার ইচ্ছে করছে এখান থেকে পালিয়ে যেতে। একটা ভোতা যন্ত্রণা বারংবার ওর ভেতরটা জর্জরিত করে দিচ্ছে। সায়ানের পাশে ওর বন্ধু এসে বসলো। ওকে খোঁচা মেরে প্রায় ফিসফিসিয়ে বললো,

— “দোস্ত তুই কিন্তু জিতেছিস। ভাবি কিন্তু সেই..।”

কথাটা ফিসফিসিয়ে বললেও সিনথিয়ার কানে এলো। সাথে সাথেই ওর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো। গাল বেয়ে আবারো নেমে এলো নোনাজল। একজন পুরুষ কোন নজরে একটা মেয়ের দিকে তাকালে এমন একটা মন্তব্য করতে পারে এটা সিনথিয়ার ভালো করেই জানা আছে। কিন্তু কিছুই ওর হাতে নেই। ও সবার হাতের পুতুল মাত্র। যে যেভাবে পারছে নাচাচ্ছে। সিনথিয়া চোখ বন্ধ করে মনে মনে দুয়া করলো তাদের এসব তামাশা যেনো তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।

বিদায়ের বেলায় সিনথিয়া পাথর হয়েই দাঁড়িয়ে রইলো। ওর মা, ভাবিরা ওকে জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছে কিন্তু সিনথিয়া কিছুই কানে নেয়নি৷ ওর ভাইরা এনে ওকে গাড়িতে তুলে দিয়েছে। সিনথিয়ার বাবা সায়ানের হাত ধরে বললো,

— “বাবা আমার মেয়েটাকে সুখে রেখো।”

সিনথিয়ার ভিষণ হাসি পেলো কথাটা শুনে। জেনেশুনে জাহান্নাম পাঠিয়ে এখন বলছে সুখে রাখতে। ওর বাবা এবং ভাইদের চোখে পানি দেখে মনে হলো এরা সবাই নাট্যমঞ্চে অংশগ্রহণ করেছে। যা একটু পরে সমাপ্ত হবে। সিনথিয়ার মা এগিয়ে এলেন মেয়ের সাথে কথা বলতে৷ সিনথিয়া মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছে। দ্বীনে ফেরার পর যার থেকে সবচেয়ে বেশি অবহেলা, অপমান, তিরস্কার পেয়েছে সেই ব্যক্তি হলো ওর মা। ভরা মজলিশে ওকে হাসির পাত্র বানিয়েছে, অপমান করেছে। আজ অভিমানের পাল্লা বেড়ে যেনো পাহাড় ছুই-ছুই।

.
সায়ানদের বাড়ি পৌছানোর পর আরেক তোপের মুখে পরলো সিনথিয়া। এরা সবাই গেইট ধরেছে টাকার জন্য। সবাই বলতে সায়ানের কাজিন বোন এবং ভাবিরা। আর কিসব কথা বলছে। এদের একেক কথায় সিনথিয়ার কান গরম হয়ে এলো। এসবকে এরা কৌতুকের নাম দিয়েছে৷ এমন অশ্লীল, অশালীন কথাবার্তা কিভাবে কৌতুকের পর্যায়ে পরে সিনথিয়ার জানা নেই।

এরা কি জানে না রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেবরকে মৃত্যু সমতুল্য বলেছেন? আগুন থেকে যেভাবে পালিয়ে বাঁচে মানুষ সেভাবেই দেবর থেকে পালিয়ে বাঁচতে বলেছে৷ অথচ সমাজে দেবর-ভাবির কৌতুকের নামে কিসব নোংরা ট্রেন্ড চালু হয়েছে।

গেইট পেরিয়ে বাড়ির দরজার সামনে আসতেই আরেক ঝামেলায় পরলো সিনথিয়া। এখানের রাসাম নাকি এটা। সিনথিয়ার মাথাটা ঘুড়ে উঠলো। কিসব অশ্লীল রাসাম এগুলো। বাড়িতে ঢুকতে হলে দেবর ভাবিকে কোলে করে ঢুকাবে। তা নাহলে বাড়ির অকল্যাণ হয়। এরপরের রাসাম হলো ভাবি-দেবরের মশকরার একটু আলাদা সুযোগ। তখন দেবররা ভাবির হাত ধুয়ে দেবে এবং ভাবি সবাইকে টাকা দিবে। সিনথিয়ার কান দিয়ে ধোয়া বেরুতে লাগলো।

সিনথিয়াকে কোলে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে সায়ানের এক কাজিন এগিয়ে এলো। সিনথিয়া সায়ানের দিকে তাকালো। ওর কোনো হেলদুল নেই এতে। কাজিন বোন এবং ভাবিদের সাথে ওর কৌতুক চালিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা সিনথিয়ার কাছে আসলে সিনথিয়া কিছুটা কঠিন স্বরে মিনমিন করে বললো,

— “এটা করার দুঃসাহস করবেন না। আমার পা আছে। আমি হেটেই ভেতরে যেতে পারবো।”

সায়ানের কাজিনটা একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তারপর সরে গেলো। সিনথিয়া হেটেই বাড়িতে ঢুকলো। পরের রাসামের জন্য সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সিনথিয়া এবারও কঠিন কিছু বলার জন্য মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছিলো কথা। কিন্তু এবার সায়ান নিজেই ওদের মানা করে দিলো। সিনথিয়া একটু স্বস্তি পেলো। সায়ানের ভাবিরা সিনথিয়াকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেলো। সেখানে ওর শ্বাশুড়ি আরশি সেজেগুজে সবার মধ্যমণি হয়ে বসে আছে। আরো অনেক বয়স্ক, মধ্যবয়স্ক মহিলারা আছেন। একজন বয়স্ক মহিলা কিছুটা রূঢ় কণ্ঠে বললো,

— “সায়ান এডা কি হইলো? বউ দেহি হাইটাই বাড়িত ঢুকছে। তুই কিছু কইলি না কেন? তুই জানোস না আমগো এনে নিয়ম নতুন বউগোরে দেবর কোলে করে ঢুকাইবো। নাইলে বাড়ির অকল্যাণ হইবো?”
অন্য একজন বললো,
— “আরে বউয়েই তো ধমক দিছে। আইসাই ধমক দেওন শুরু করছে। না জানি পরে কি করবো। ও আরশি তোর কপালে দুঃখ আছে কইলাম।”

ওদেরকে থামিয়ে দিয়ে আরেকজন বললো,
— “আচ্ছা বউ এহনো খাড়াইয়া আছো কিল্লিগা? সালাম করো সবাইরে।”

সিনথিয়া ওদের বিনয়ের সাথে জানালো ইসলামে পায়ে ধরে সালাম করা জায়েজ নেই। আমাদের মাথা শুধু এক আল্লাহর সামনেই ঝুকাতে বলা হয়েছে। প্রায় সবাই ওর দিকে বাঁকা নজরে তাকালো। একজন বললো,

— “আইচ্ছা আমাগোরে করবা না ঠিকাছে। তোমার শ্বাশুড়ি পাও ধইরা সালাম করো। শ্বাশুড়ি হইলো গিয়া মায়ের মতন। মায়েরে সালাম করা যায়।”

সিনথিয়া এবারও বিনয়ের সাথে বললো পায়ে ধরে সালাম করার বিধান ইসলামে নেই। এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন সবার ক্ষেত্রেই একই বিধান। সিনথিয়া আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উপস্থিত মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা বললেন,

— “হো হাদিস খালি তুমিই জানো। আমরা জানি না নাকি? নাকি কইতে চাও আমাগো বাপ, দাদায় আমাগোরে ভুল শিখাইছে। তুমি এহন আমাগোরে আবার নতুন কইরা ধর্ম শিখাইবা।”
অন্য একজন ওই মহিলার সাথে গলার স্বর মিলিয়ে বললো,
— “আরে আফা বুঝেন না, নতুন নতুন হুজুরনি বাইর হইছে। ওগোও নতুন নতুন ফতোয়া বাইর হইছে। ওরা নিজেগোরে সব জান্তা মনে করে। আমাগোরে মূর্খ মনে করে। সব বুঝি আমরা।”
— “আরে আমাগো নবী কইছিলো না, শেষ জামানায় দজ্জাল বাইর অইবো। নমুনা দেখলা? ঈমাণ কাইরা নিবার লাইগা নতুন নতুন হাদিস, নতুন নতুন ফতোয়া দিবো হেরা।”
অন্য একজন বললো,
— “তুমি মাইয়া আইজ আইলা আর আইজ থিক্কা মুখে মুখে তর্ক শুরু করলা। আমার তো এহন আরশির লাইগা মায়া হইতাছে, না জানি কি আছে ওর কপালে।”
আরশির দিকে তাকিয়ে একজন বললো,
— “আরশি এই মাইয়ারে চোখে চোখে রাখবি। কখন তোর পোলারে হাত কইরা তোরে বাড়িত থিক্কা বাইর কইরা দেয় কহন যায়না। দেহস না আইয়াই শুরু করছো দাদাগিরি।”
অন্য একজন বললো,
— “শুন সব কাজকাম বউরে দিয়া করাবি। নয়তো পরে সব কাম তোরে দিয়া করাইবো। নিজের ঘরেই বান্দির লাহান থাকোন লাগবো।”
— “হো আপা একদম ঠিক কইছেন। শুন খাওন দিবি মাইপা মাইপা। নায়তো তোর ঘরের খাওন দেখবি দিনে দিনেই শেষ হইয়া যাইবো। এসব মাইয়াগো ভালা কইরাই চিনি। হারাদিন বইয়া থাইকা খাইবো আর শ্বাশুড়িরে দিয়া কাম করাইবো। প্রতি বেলায় খাওন মাপবি। নাইলে একদিন তোরেও খাইবো।”
— “হুন পোলারে তোর কাছে বেশি রাখবি। নায়তো পোলারে হাত কইরা লাইবো। তোরে যা কইবো তুই সব পোলারে কইয়া দিবি নায়তো তোর এই ঘরে জাগা হইবো না।”

আরশি সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে এবং আড়চোখে সিনথিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। ওর অবস্থা দেখে আরশির মনে ভিষণ ভালো লাগা কাজ করছে। সিনথিয়া খুব অসহায় বোধ করলো। এরা ওর সামনেই এতো কিছু বলছে। ওদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে সিনথিয়ার উপস্থিতি ওদের কাছে কিছুই না। ওর খুব কষ্ট হতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত এই রকম একটা জায়গায় এসে পরলো ও।

সায়ান এতক্ষণ ওর কাজিন বোন এবং ভাবিদের সাথে দুষ্টামি করছিলো। এখন মায়ের কাছে এসে পা ধরে সালাম করলো। আরশি সায়ানকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলো। সায়ান মায়ের পাশে বসে সিনথিয়ার দিকে ইশারা করে বললো,

— “আজ থেকে তোমার ছুটি। এবার থেকে এ বাড়ির সমস্ত কাজের জন্য একজনকে নিয়ে এসেছি।”

সিনথিয়ার মনে হলো ওর পায়ের নিচের জমিনটা নড়ে উঠেছে। সায়ান ওকে ইনডাইরেকলি কাজের বুয়া বলতে চাইছে? কিন্তু কেনো? ওরাই তো ওকে নিয়ে এসেছিলো। সিনথিয়া তো চায়নি। তাহলে এসবের মানে? সিনথিয়ার অজান্তেই ওর চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পরলো। আরশি সিনথিয়াকে দেখে মুচকি হাসলো। সিনথিয়া মাথা নিচু করে ছিলো বিধায় দেখতে পায়নি সেই হাসি। যদি দেখতো তাহলে বুঝতো মুচকি হাসির আড়ালে ছিলো পৈচাশিক হাসি।

.
সায়ানের ভাবিরা একটু আগেই সিনথিয়াকে সায়ানের রুমে নিয়ে এসেছে। সিনথিয়ার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। এরা খুব অশ্লীল কথাবার্তা বলছে। ওদের মাইন্ডে পজিটিভ কোনো চিন্তা কি কখনোই আসে না সিনথিয়া ভেবে পেলো না। ওরা চলে যেতেই হাফ ছেড়ে বাচলো। একটা বড় নিঃশ্বাস নিলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার। পুরো রুমে আভিজাত্যের ছোয়া। সিনথিয়া আনমনেই নিজস্ব কল্পনায় হারিয়ে গেলো। ওর সবসময় ইচ্ছে ছিলো একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের বউ হবে। একটা মাঝারি সাইজের ঘর হবে। কিছু ভালোবাসার মানুষ থাকবে। দ্বীন থাকবে। তাদের সাথে জীবনটা হেসে খেলে পার করে দিবে। কিন্তু কোনোকিছুই ওর ভাবনার মতো করে হয়নি। সিনথিয়া মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হয়ত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা অন্যকিছু পরিকল্পনা করে রেখেছেন।

দরজা লাগানোর আওয়াজে সিনথিয়া বাস্তবে ফিরে এলো। সায়ানের দিকে এবার পূর্ণ নজরে তাকালো। ওকে দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেছে। গালে দাড়ি নেই। মেয়েদের মতো লাল-নীল চকচকে গাল। প্যান্ট টাখনুর নিচে। ওকে দেখে একদম বিদেশিদের মতো লাগে। যেকোনো মেয়ে ওকে দেখে পাগল হবে। কিন্তু সিনথিয়ার একটুও ভালোলাগেনি।

সিনথিয়া বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো। সায়ানকে সালাম দিলো কিন্তু ও উত্তর দিলো না। সিনথিয়া হতাশ হলো। সায়ানের চাহনি দেখে একটা ঢোক গিলে বললো,

— “আমাকে কিছ..কিছুটা দিন স..সময় দিন প্লিজ।”

সায়ান কোনো কথাই শুনলো না। ধাক্কা দিলো সিনথিয়াকে। বিছানার সাথে সিনথিয়ার দুই বাহু চেপে ধরে। সিনথিয়া কয়েকবার ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সায়ানের পুরষালি আক্রমণে হাল ছেড়ে দিয়েছে নিজেকে ছাড়ানোর। আস্তে আস্তে সিনথিয়ার ভুবনটা সায়ানময় হয়ে উঠছে। কিন্তু এই ভুবনে কোনো ভালোলাগা, ভালোবাসা নেই। আছে শুধু রাগ, ক্ষোভ আর হিংস্রতা। পুরোটা সময় শুধু চোখের পানি ফেলেছে সিনথিয়া।

.
পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো সিনথিয়া। পুরো শরীরে যেনো বিষব্যাথা। কোনো রকমে উঠে বসেছে। পরনের কাপড় গুছিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। একেবারে গোসল সেরে বেড়িয়েছে। পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনা যাচ্ছে। জলদিই সালাত আদায় করে নিলো। সায়ানকে ডেকেছিলো কিন্তু সায়ান ভিষণ রেগে গেছিলো। সিনথিয়া নিজেও ভয় পেয়ে গেছে। তাই আর সায়ানের দিকে ভিড়লো না। সিনথিয়ার খুব খারাপ লাগছে। সায়ানের কাছ থেকে এমন হিংস্রতা ও একটুও আশা করেনি। সায়ানের কাজ শেষ হয়েছিলো মধ্যরাতে। এরপর পুরোটা সময় সিনথিয়া চোখের পানি ফেলেছে। আযানের একটু আগেই চোখটা লেগে এসেছিলো।

সিনথিয়া সময় দেখলো। এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে। গরমকালে সকাল খুব তাড়াতাড়ি হয়। সায়ানের দিকে একবার তাকিয়ে ব্যথিত মন নিয়ে বারান্দায় এসে দাড়ালো। আকাশের দিকে তাকাতেই চোখ থেকে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পরতে শুরু করে। এরকম একটা মানুষের সাথে কিভাবে থাকবে ও ভেবে পায়না। লোকটা তো ওকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী বলে পরিচয় দিতেও নারাজ। আকাশের দিকে তাকিয়েই নিজের মনের কথাগুলো বলতে লাগলো।

কিছুটা শান্তি লাগছে এখন। তারপরই মনে হলো আল্লাহ ওর পরীক্ষা নিচ্ছেন। সবরের পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষা খুবই সেনসিটিভ। কারণ সবরের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য করে যাওয়া খুবই টাফ ব্যাপার। প্রায় মানুষই হেরে যায়। সিনথিয়া চোখের পানি মুছে নিলো। নিজেই নিজেকে বুঝালো আজ থেকে যাই হয়ে যাক ও সবর করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম কিছু রেখেছেন ওর জন্য। একটা আয়াত মনে পরলো, ‘আর তোমরা ধৈর্য্য ধরো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন।’
‘তুমি সবর করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ইহসানকারীদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।’
‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো যতক্ষণ না আমি প্রকাশ করে দেই তোমাদের মধ্যে কারা ধৈর্য্যশীল এবং আমি তোমাদের কথা-কাজ পরীক্ষা করে নেবো।’

সিনথিয়া এবার নিজের মনকে শক্ত করে নিলো। আর ঠিক করে নিলো ওরা যাই বলুক ও সবর করবে এবং চুপ থাকবে। সায়ান ওর সাথে যতই অন্যায় করুক ও চুপ থাকবে। সবর করবে। এখন অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছে মনে।

~চলবে…..
® ‘নুরুন নাহার’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here