তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব -০৯

#তুমি_নামাক_অক্সিজেন
#পর্ব_৯
Tahrim Muntahana

কি হ্যান্ডসাম লাগছে রে। কে এই ছেলেটা। জীবনে প্রথম কাউকে প্রথম দেখায় মনে ধরেছে। উনি আমার জন্যই ফিক্সড হয়ে গেছে

আহির বোন সামান্তার কথা শুনে উপরে তাকাতেই ঝটকা খেল

আরে উনি তো হৃদান চৌধুরী লন্ডন বিজনেস টাইকুন

ভাইয়া একে আমার চাই চাই। প্লিজ

কি সব বলছিস অন্য কেউ হলে তাও কথা ছিলো হৃদান চৌধুরীর সামনে যাওয়ার সাহস আমার নেই

তুই না গেলি আমিই যাচ্ছি। আমাকে দেখলেই পছন্দ করবে আই এম সিয়র

এতক্ষন দুই ভাইবোনের কথা হৃদিতা শুনছিলো কারণ সে পাশেই ছিলো। কথা গুলো শুনে রাগে ফুসফুস করছে। মন চাচ্ছে মেয়েটার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে। কিছু একটা ভেবে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সব মেয়েই হা করে তাকিয়ে আছে। তা দেখে হৃদিতা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। এতক্ষন রাইসা রোহানী রাহি অরনী পিয়ানি সোহা একটু দূর থেকে হৃদিতাকেই দেখছিলো। হৃদিতা কি করবে সেটা দেখার জন্যই বসে আছে। বড়রাও একপাশে তাদের মতো কথা বলছে।

হঠাৎ হৃদিতা দৌড়ে গিয়ে হৃদানকে জাপটে ধরল। সবাই তো অবাক হয়েছেই হৃদান তো রীতিমতো মতো শকড। কি হলো এইটা। মানুষ চিনতে সমস্যা হয়নি আবার সবার সামনে এইভাবে ধরাতেও সমস্যা হয়নি সমস্যা হলো হৃদিতা যে ওকে নিজ ইচ্ছায় সবার সামনে জড়িয়ে ধরেছে সেটা মানতে পারছে না। আহিরের বোন তো রেগে এগোতে যাবে আহীর হাত ধরে আটকায়

আজকে প্রথম এসেছিস এই বাড়ি সিনক্রিয়েট করিস না আগে দেখ কি হয়

হৃদান এখন স্বাভাবিক হয়ে নিজেও হৃদিতা জড়িয়ে ধরে উপরে তুলে ফেলে। হৃদিতাও খুশিতে খিল খিল করে হেসে উঠে। সব মেয়েকে জব্দ করতে পেরে খুব খুশি লাগছে। এখন হৃদিতা তো রীতিমতো এক্টিং শুরু করেছে

হৃদরাজ দেখোতো আমাকে কেন লাগছে

অপূর্ব অতুলনীয় পরীর চেয়েও বেশী সুন্দর অপ্সরী আমার হৃদপরী

হৃদান ঘোরের মধ্যেই বলে উঠল। হৃদিতা বেশ লজ্জা পাচ্ছে তবুও মেয়েদের দেখাতে হবে না। আর হৃদানের তো চারপাশের খেয়াল ই নেই সে তার হৃদপরীর পাগলামিতে মেতে আছে। ওদের বাড়ির সবাই মিটমিটয়ে হাসছে দেখে। বড়রাও দেখছে। হিয়াও খেয়াল করেছে কিন্তু এখন কিছু করার নেই যা করতে হবে পরে। এখন করলে হীতে বিপরীত হবে তাই চুপ করে আছে। যেচে যেচে অপমান হওয়ার কোনো দরকার নেই।

তোমাকেও একদম রাজপূত্রের মতো লাগছে হিরো একদম গুলুমুলু কিউট পিউট মিউট লাগছে

হৃদান মুচকি হেসে হৃদিতার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। হৃদিতা লাজ লজ্জা ভুলে হৃদানের গালে টুক করে একটা কিস করে বসল। হৃদান তো বিস্ময়ে গালে হাত দিয়ে হা করে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে আছে। The great Ridan chowdhury এর এমন বিস্ময় দশা দেখে ওর বন্ধুরা খুব মজা পাচ্ছে। জীবনে প্রথম ওরা হৃদান কে বেহায়ার মতো একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখছে মেয়ের পাগলামিতে নিজেও পাগলামি করছে এসব দেখে খুব মজা পাচ্ছে। বাড়ির বড় রাও লজ্জা ভুলে ওদের ভালোবাসার মুহূর্ত উপভোগ করছে।

আচ্ছা হৃদরাজ তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাইনা

তোমার সন্দেহ আছে হৃদপরী। খুব ভালোবাসি তোমায়

সন্দেহ আছে তো কারণ তুমি আমাকে প্রপোজ ও করলে না তাহলে বুঝবো কেমনে তুমি আমাকে সত্যিই সত্যিই ভালোবাসো

প্রপোজ করলেই ভালোবাসা প্রমাণ হয় নাকি

তা না কিন্তু তুমি এখন আমাকে প্রপোজ করবে নাহলে আমি খুব রাগ করবো

বাচ্চাদের মতো করে বলল হৃদিতার। হৃদিতার বাচ্চামো দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো হৃদান তারপর হঠাৎ করেই হৃদান হৃদিতার সামনে হাটু গেরে বসে পড়ল। হৃদিতা শুধু চেয়েই আছে তার হৃদরাজের দিকে। ও আসলেই বুঝতে পারেনি হৃদান তাই করবে। মেয়েগুলোকে জব্দ করার জন্য ও চুপটি করে রইল। দুই হাতে লেহেঙ্গার দুই সাইড উঁচু করে ধরে আছে।

প্রপোজ কিভাবে করতে হয় আমি জানি না হৃদপরী। তুমি সামনে থাকলে আমার খুব ইচ্ছে করে মনের মধ্যে তোমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন গুলো সাজিয়েছি সব বলতে কিন্তু তোমাকে দেখলেই না সব আওল ঝাওল হয়ে যায়। সাজাতে পারি না কথাগুলো শুধু তোমাকেই দেখতে ইচ্ছে করে। The great business men ridan chowdhury শুধু তার হৃদপরীর সামনে গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। আমি তোমার এই মায়াবী বাচ্চা বাচ্চা মুখের মায়ায় অনেক আগেই পড়ে গেছি। তোমার ওই হাসিতে ডুবে যাই আমি। তোমার ওই মিষ্টি কন্ঠে যখন হৃদরাজ বলে ডাকো তখন শুধু মনে হয় এই নামটাই শুধু শুনি। তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি সেটা বলতে পারবো না। আমার ভালোবাসার গভীরতা মাপা যাবে না। তোমাকে শুধু ভালোবাসতেই ইচ্ছে করে। সারাক্ষন তোমাকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে যেন কেউ না নিয়ে যায়। অবশ্যই কেউ তা পারবেও না। হৃদরাজের থেকে তার হৃদপরীকে আলাদা করা এত সহজ না। আমি তুমি নামক অক্সিজেন এ অনেক আগে থেকেই বাঁচতে শিখেছি হৃদপরী। যার জন্য এখন তুমি নামক অক্সিজেন ছাড়া নিশ্বাস নেওয়াটাই মৃত্যর সমান। সারাজীবন থাকবে তো আমার #তুমি_নামক_অক্সিজেন হয়ে।

হৃদান এক দৃষ্টিতে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে হাত এগিয়ে দিল। হৃদিতাও সেইম। খুশিতে কান্না করে দিয়েছে।সবাই চেয়ে আছে। বাড়ির বড়দের মুখেও হাসি চোখ ছলছল করছে। তৃপ্তি ভরে দেখছে সবাই। মেয়েগুলো তো হাসফাস করছে ইশশ হৃদান চৌধুরী যে কাউকে এত ভালোবাসে জানা থাকলে ক্রাশ খেত না। আহির আর সামান্তাও চেয়ে আছে। এক মুহূর্তের জন্য ভালোলাগা সব ভ্যালুলেস হয়ে গেছে। ওদের ভালোবাসার কাছে ওদের ভালোলাগা কিছুই না। হৃদিতা নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে হৃদানের হাতের উপর রাখলো। হৃদান উঠে দাড়ালো। হৃদিতা ঝাপটে ধরল হৃদানকে। হৃদানের মুখে তৃপ্তির হাসি লেগেই আছে। ও আজ সফল ওর হৃদপরীও ওকে ভালোবাসে এখন শুধু ফরমালিটি করে নিজের কাছে আনা বাকি।

হ্যাঁ আমিও তুমি নামক অক্সিজেন এর সাথে বাঁচতে চাই। ভালোবাসি আমিও খুব ভালোবাসি

সবাই চারপাশ থেকে হাত তালি দিয়ে উঠল সেই হাত তালিতে ওদের ধ্যান ভাঙলো। হৃদান তো এতক্ষনে টের পেল যে সবাই আছে এখানে। হৃদিতাও একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলো। যখন সামনে তাকালো তখন মেয়েগুলোকে দেখে ওর মনে হলো কিসের জন্য এমন করছে। তখন

সবাই দেখতে পাচ্ছো এই মানুষটা একান্তই আমার। তাই একদম কেউ নজর দিবে না। চোখ তুলে ফেলবো যে আমার হৃদরাজের দিকে নজর দিবে। শেওলা গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে ভুতের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো বলে রাখলাম। আমার হৃদরাজ থেকে দূরে থাকবে

হাত উুঁচিয়ে কথা গুলো বলল মেয়েগুলোকে উদ্দেশ্য করে। মেয়েগুলোও হৃদিতার পাগলামি দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। হৃদান এতক্ষনে বুঝতে পারল হঠাৎ করে হৃদিতার এমন করার কারণ।ঠোঁট কামড়ে হাসল। মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলো আজকের দিনটাকে আর মেয়েগুলোকে। ওদের জন্যই আজ হৃদিতা সবার সামনে এমন পাগলামি করেছে না হলে জানতেই পারতো না। হৃদিতার কান্ডে রোহানিরা এবার জোরে হো হো করে হেসে দিল। হঠাৎ রাইসার কি হলো মন খারাপ হয়ে গেল সামনে এগিয়ে গেল

আমাকে কেউ ভালোবাসে না। আল্লাহ গো এমন জীবন রেখে কি করবো কেউ ভালোবাসে না

রাইসার কথা শুনে পরশ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রাইসা যে ড্রামা করছে ঠিক বুঝতে পারছে। হঠাৎ একটি ছেলে এসে বলল

আমি ভালোবাসবো তোমাকে রাজি আছো তুমি

শুনেই পরশের রাগ উঠে গেল তাড়িতাড়ি ছেলের সামনে গিয়ে রাইসার হাত ধরল। ছেলেটির ভ্রু কুচকে ফেলল বুঝে গেছে এও বুকিং

ইটস মাই মাইন ব্রো দূরে থাকো। আমার ফিয়ন্স আমার ভালোবাসা। আমার বউ আমার অক্সিজেন

পরশের কথা শুনে সবাই মুখটিপে হাসছে। হৃদিতারা তো খুব মজা পাচ্ছে। এখন যে রাইসা কি করবে তা ধরতে পেরেই ওরা আরেকদফা হেসে নিলো। পরশের কথা শুনে রাইসা ডুলে পরশের উপর পড়ে গেল। তা দেখে পরশ বিচলিত হয়ে গেল বড়রাও সামনে এগোতে যাবে রোহানি ওরা থামিয়ে আশ্বস্থ করল যে কিছুই হয়নি দেখতে থাকো। পরশ রাইসার গালে হাত দিয়ে ডাকছে। হার্টবিট খুব দ্রুত চলছে মনের মধ্যে ভয় ডুকে গেছে। এখনি কেঁদে দিবে অবস্থা তাই আর টেনসন না বাড়িয়ে রাইসা ফট করে চোখ খুলল। হঠাৎ ই জোরে চিল্লিয়ে উঠল

ইয়েয়েয়েয়েয়েয়েয়ে শাশুড়ি মমের পোলা আমাকে প্রপোজ করেছে আমাকে ভালোবাসে বলছে। হায় আল্লাহ এত সুখ সুখ লাগে কেন, আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে

বলেই লাফাতে শুরু করল। ওর কান্ড দেখে সবাই হেসে কুটিকুটি অবস্থা হৃদিতা হৃদান কে ধরে হেসেই যাচ্ছে। পরশ রাইসার কান্ড দেখে মাথা চুলকে হালকা হাসলো। পাইছে একখান বউ পুরাই ড্রামা কুইন। এইভাবেই হেসে খেলে নাচে গানে মেহেন্দির অনুষ্ঠানটি শেষ হলো। বরের বাড়ি সবাই খুব আনন্দ পেয়েছে এখানে এসে। প্রশংসা করতে করতে হাপিয়ে গেছে। সবাই আর দেরী না করে ডিনার করে ঘুমিয়ে গেল কালকে কত কাজ আছে। কালকেই তো মেইন কাজ বিয়ে।

চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here