#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১৪
Tahrim Muntahana
আমার তখন এসএসসি পরিক্ষা সামনে কিন্তু আমার পড়ার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো না। শুধু হৃদপরীকে নিয়ে পড়ে থাকতাম। ওকে ঘুম থেকে তোলা খাইয়ে দেওয়া ঘুরতে যাওয়া গোসল করিয়ে দেওয়া ওর সাথে খেলা এইসব নিয়েই বিজি থাকতাম পড়াশুনা একদম করিনি। ক্লাস এইট থেকেই এইরকম। পাপা আমাকে অনেকবার ওয়ার্নিং দিয়েছিলো কিন্তু আমি মানিনি। আমি স্কুলের ফাস্ট বয় ছিলাম কিন্তু নাইনে সেরকম ভালো করতে না পারায় পাপা আমার প্রতি খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন । তারপর পাপা আমাকে বলেছিলো যদি এসএসসি তেও এরকম করে আমাকে বাইরে পাঠিয়ে দিবে। কিছুদিন ভালোভাবে পড়াশুনা করলেও পাপার দেওয়া ওয়ার্নিং ভুলে হৃদপরীকে নিয়েই পড়ে থাকতাম। সবসময় আমার কাছেই রাখতাম ওকে ওর সকল আবদার আমি পূরণ করতাম। পরশ ও থাকতো। এসএসসি পরীক্ষা তেমন ভালো হয়নি। এ প্লাস পেলাম না। পাপা সেদিন খুব রেগে গিয়েছিলো সেদিন ই প্রথম আমার গায়ে হাত উঠিয়েছিলো। তারপরেই শুরু হলো আমাকে বাইরে পাঠানোর তোড়জোড়। আমি যাবো না বলে ঘরে সারাক্ষন বসে থাকতাম দরজা বন্ধ করে। একদিন মম খুব অনুরোধ করে দরজা খোলার জন্য। তাই খুলি
ফ্লাসবেক
বাচ্চা তুমি কি চাও তোমার জন্য আমরা কষ্ট পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি
মম আমি তা কখনোই চাইনা। কিন্তু পাপা কে বলো যেন আমাকে বাইরে না পাঠায়। আমি এখন থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়বো। আই প্রমিস। তবুও আমি আমার হৃদপরীকে ছাড়া কিছুতেই যাবো না
বাচ্চা তোমাকে অনেকদিন ধরে তোমার আব্বু পড়াশুনায় মনোযোগি হতে বলেছে কিন্তু তুমি সতর্ক হওনি এখন তোমার পাপা কে থামানো যাবে না
তাহলে আমি হৃদপরীকে সাথে নিয়ে যাবো। ওকে ছাড়া আমি যাবো না কি থাকবো আমার হৃদপরীকে ছাড়া
ভালোবাসো
জানিনা ভালোবাসি কিনা কিন্তু আমার ওকে ছাড়া কিছু ভালো লাগে না। সবসময় আমার সাথে থাকলে আমার ভালো লাগে। আমি চলে গেলে যদি অন্যকেউ ওর সাথে খেলে
অন্য কেউ খেলবে না আমি কথা দিচ্ছি
না আমি মানতে পারবো না। আমি চলে গেলে যদি ওর জীবনে অন্য কেউ আসে। তাকে যদি ও ওর সাথি বানায় তাহলে আমার কি হবে আমি মানতে পারবো না মম আমি কিছুতেই যাবো না
আমরা সবাই দেখে রাখবো বলছি তো জেদ করো না চলো
মম আমি যাবো এক শর্তে
কি শর্ত বলো
আমার সাথে হৃদপরীর বিয়ে দিতে হবে
রিদিমা চৌধুরী চমকে উঠলো ছেলের কথা শুনে। তিনি বেশ বুঝতে পারছে তার ছেলে ভালোবেসে ফেলেছে তাই হারানোর ভয় পাচ্ছে
হৃদান তুমি পাগল হয়ে গেছো কি বলছো এসব ও এখন কতটা ছোট তোমার থেকে ৭ বছরের ছোট এখন ওইসব কিছুই বুঝে না
না বুঝলো ওর বুঝার দরকার নেই আমি আর আমরা বুঝলেই হবে। কেউ যাতে আমার থেকে আমার হৃদপরীকে কেড়ে নিতে না পারে তার ব্যবস্থা করেই যাবো না হলে না
আচ্ছা দেখছি আমি।
মম চলে যাওয়ার পর টেনশনে ঘর থেকে আর বের হইনি সেটাকেই মম পাপার কাছে তুলে ধরে পাপা কে ম্যানেজ করে। পাপা মামুনি আর বাবাইকে বলে অনেক কষ্টে রাজি করায়। তার পরেই আমাদের বিয়ে হয় সেদিন হয়তো হৃদপরী কিছু না বুঝেই কবুল বলেছিলো। আমার সকল অনুভূতি নিয়েই আমি কবুল বলেছিলাম। সেদিন প্রাণ খুলে হেসেছিলাম তৃপ্তির হাসি। সেদিনই রাত ৯ টার ফ্লাইটে এব্রুড চলে আসি। বাবার শর্ত ছিলো হৃদপরীর সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে পারবো না। তাই করেছিলাম হৃদপরীর সব খবর রাখতাম আমি। হৃদপরী তোমার কাছে যেমন আমার ছবি আছে তেমনি আমার কাছেও এর দ্বিগুন ছবি আছে সেগুলো গুপ্ত করে রেখেছি এতদিন কিন্তু এখন আর গোপন করে রাখার দরকার নেই। তোরা বলতে পারিস এখন যে পড়াশুনা করেই চলে আসতে পারতাম আমি চেয়েছি নিজের চেষ্টায় নিজের একটা আইডেনটিটি করার হ্যাঁ আমি পেরেছি হৃদান চৌধুরী লন্ডনের টপ বিজনেসম্যান। সেদিনের পর থেকে পাপার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করিনি। আমি মনে করতাম তার জন্যই আমাকে আমার হৃদপরীর থেকে দূরে থাকতে হয়েছে তার জন্যই আমার হৃদপরীর জিবনে আমার কোনো জায়গা নেই। কিন্তু আজ বুঝতে পারলাম যে পাপা সেদিন ওইকাজটা না করলে আজ এই সুখটা পেতাম না। নিজের ভবিষ্যত এতটা উজ্জ্বল হতো না।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো হৃদান। সবাই কাঁদছে হৃদিতা তো হেঁচকি তুলে কাঁদছে। হৃদান পরম যত্নে হৃদিতাকে আগলে নিলো। একটু শান্ত হয়ে দাড়ালো হৃদিতা
আমাকে ক্ষমা করো হৃদরাজ আমি তোমাকে এতদিন ভুল বুঝে এসেছি। মনে করেছি তুমি ক্যারিয়ারের জন্য আমার থেকে দূরে চলে গেছো কিন্তু এখানে যে কারণ টা আমি তা জানতাম না
হৃদিতা মাথা নিচু করে কথাগুলো বলল। হৃদান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।পরিবেশটা স্বাভাবিক করতে আনহা কেশে উঠে এমন মুখ বানালো সবাই একসাথে হেসে দিলো।
চলো বাড়ি যাওয়া যাক। সেই কখন এসেছি -আলো
হ্যাঁ নতুন শশুড় বাড়ি এসেছি এখন পযর্ন্ত জামাই আদর টাই পেলাম না -নিয়ন
আজকে তোমাকে জামাই আদর ই করবো জিজু চলো -রাইসা
হৃদরাজ বাড়ি গিয়ে বাবাইয়ের সাথে কথা বলবে না -হৃদিতা
হ্যাঁ বলবো আজকে পাপার কাছে ক্ষমা চাইবো কতটা কষ্ট দিয়েছি -হৃদান
এখন মন খারাপ না করে চলতো -পরশ
সবাই বাড়ির দিকে রওনা হলো। এখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এসবের চক্করে পরশ আজ অফিসে যায়নি। বাসায় পৌঁছে যে যার রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। সবাই একটু রেস্ট নিয়ে নিলো। রাত নয়টার দিকে সবাই নিচে নেমে এলো। হৃদান এসে দেখলো আহনাফ চৌধুরী সোফায় বিষন্ন মন নিয়ে বসে আছে। হৃদানের মনটা খারাপ হয়ে গেল। হৃদিতা হৃদানকে ইশারা করলো হৃদান মুচকি হেসে এগিয়ে গেল। পাপা বলে ডাকতেই আহনাফ চৌধুরী চমকে উঠলেন। কত বছর পর ছেলে বাবাকে ডাকছে। এর থেকে শান্তি আর কি হতে পারে। আহনাফ চৌধুরীর চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো তা দেখে হৃদান এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আহনাফ চৌধুরী সেখানেই জমে আছে। তার বিশ্বাস ই হচ্ছে না। রিদিমা একটা দরকারে ড্রয়িং রুমে আসতেই এমন দৃশ্য দেখে নিজেও চমকে গেলো। ইশশ কি সুন্দর দৃশ্য। চোখ জুড়িয়ে গেল।
পাপা আই এম সরি পাপা প্লিজ ফরগিভ মি। আমি খুব সরি পাপা। তোমাকে ভুল বুঝে এতদিন কষ্ট দিয়েছি। আর কখনো এমন ভুল হবে না। আই প্রমিস পাপা প্লিজ ফরগিভ মি আই এম সরি পাপা
আহনাফ চৌধুরী কাঁদছেন খুব করে কাঁদছেন আজ যে কলিজাটা শিতল হয়ে গেল। কত বছর পর নিজের ছেলে নিজের বুকে ভাবতেই মনের মধ্যে একঝাঁক খুশি এসে ভর করলো।
আমিও সরি বাচ্চা আর বলতে পারলেন না। কথায় বলতে পারছেন না আনন্দের জন্য। সবাই এই দৃশ্য দেখে আরেকটু কেঁদে নিলো। মোলাড্রামা শেষ ই হচ্ছে না দেখে হৃদিতা শয়তানি হেসে এগিয়ে গেল
এই ইংরেজের বাচ্চা হয়ছেন নি আই এম সরি পাপা প্লিজ ফরগিভ মি। আহাহা আবার বাবাই ও বলে আমিও সরি বাচ্চা। এইসব মোলাড্রামা বন্ধ করো তো ভালো লাগছে না। এবার একটু হাসো।
হৃদিতার কথায় সবাই হেসে দিলো একটু পর হৃদয় চৌধুরী আর রিয়ান চৌধুরীও এসে আড্ডায় যোগ দিলো। ডিনার করে সবাই ঘুমাতে চলে গেল। হৃদিতা রিয়ার মুখপানে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে ছলছল চোখে হাসি দিলো। আর মনে মনে বললো, তোমার সুখের দিন শুরু রিয়ু। এখন থেকে তুমি খুব সুখে থাকবে। কিছুক্ষন বসে থেকে ঘুমিয়ে গেল আজকে পড়ার মোড নেই।
সকালে হৃদিতারা উঠেই নাশিনের ডিরেকশনে এক্সারসাইজ করছে। আজ সবাই যার যার বাড়ি চলে যাবে। আলো নিয়ন ও চলে যাবে। সকালে ব্রেকফাস্টের আগে সবাই নিয়নকে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডা দিচ্ছে বলতে বড়রাই কথা বলছে। হিয়া সিয়া আর তাদের মম কালকেই চলে গেছে। সবার ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাক পড়েছে উঠতে যাবে এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। সাগর দৌড়ে চলে গেল দরজা খুলতে তা দেখে সবাই অবাক হলেও হৃদিতা একটু ও অবাক হয়নি। সাগরের পেছনে দুইজন লোক এসে দাড়ালো। সাগরের বন্ধুরা তো অবাক হয়ে দৌড়ে চলে গেল
আরে আন্টি আঙ্কেল তোমরা এখানে কিভাবে কি -অরনি
তোমরা যে আসবে বললে না কেন -সোহা
আন্টি আঙ্কেল বলছো না কেন -পিয়ানি
তোরা বকবক বন্ধ করবি তবেই তো বলবে -সোহান
তোমরা সব পরে শুনবে আগে বসতে দাও ওনাদের। আন্টি আঙ্কেল আসুন বসুন -হৃদিতা
তুমি জানো হৃদপরী আন্টিরা আসবে -হৃদান
তুমিই তাহলে হৃদের হৃদপরী। মাশাআল্লাহ ঠিকি বলে একদম পরীই -সাগরের মা
হৃদয় চৌধুরী আর আহনাফ চৌধুরী কথা বলা শুরু করলো হৃদিতা রাইসা দের রান্না ঘরে পাঠালো নাস্তা ঠিক করা জন্য।
ভাইসাহেব আমি একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছি -সাগরের বাবা
সব কথা পরে হবে আগে নাস্তা করে নিন আঙ্কেল আমরা কেউ নাস্তা করিনি -হৃদিতা
তারা নাস্তা করেই এসেছি কিন্তু হৃদিতার কথা শুনে ওরা হেসে ফেলল। মেয়ে এমন ভাবেই বলেছে যে না করতে পারবে না। অগত্যা ব্রেকফাস্ট করতে বসলো। রিয়া এতক্ষন রুমেই ছিলো। হৃদিতা রোহানি কে পাঠিয়েছে রিয়াকে আনতে।
ভাইসাহেব আমি একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। না বলতে পারবেনা না। সেই লন্ডন থেকে কাল এসে আজকেই এখানে চলে এসেছি -সাগরের মা
কি আপা বলেন শুনি -হৃদয় চোধুরী
আমি স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করি আমার ছেলেটাও হয়েছে ঠিক তেমন। আমার ছেলেটা আপনাদের মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে। আপনাদের মেয়েকে স্পষ্ট বলেছে কিন্তু সে মানতে নারাজ তাই আমাদের জানিয়েছে। কোনো দিন আমার ছেলের মুখে কোনো মেয়ের কথা শুনিনি শুধু পিয়ানি সোহা অরনী ছাড়া সেই ছেলে একজনকে ভালোবাসে বিয়ে করবে বলছে আমি তো শোনেই এসে পড়েছি। মেয়েটাকে দেখার জন্য -সাগরের মা
আহ তুমি মেইন কথাটাই বলছো না। ভাইজান আমি এসেছি আমার ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে -সাগরের বাবা
মেয়েটা কে -আহনাফ চৌধুরী
রিয়া -সাগরের মা
রিয়ার কথা শুনেই সবাই চমকে গেল কি বলে এসব। এটা হওয়ার না। রিয়া তো থমকে দাড়িয়ে গেছে।
আপনি ভুল করছেন ভাবি সাহেবা আমার মেয়ের বিয়ে এখন সম্ভব না -রিয়ান চৌধুরী
কেন সম্ভব না। ওহ বুঝেছি আপনারা ভাবছেন আমরা কিছু না শুনেই এসে গেছি। তাহলে আপনারা ভুল। আমাদের ছেলে আমাদের সব জানিয়েছে। তাই ওইসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। আর এটাও ভাববেন না যে ছেলের জোড়াজোড়িতে আমরা এসেছে। আমরা এসেছি নিজ ইচ্ছায়। মানুষের জিবনে ভালো মন্দ থাকবেই। কেউ পারফেক্ট হয় না। আর রিয়া মার দেখতে না পারাটা কখনো তার দুর্বলতা হতে পারে না -সাগরের মা
সাগরের মার কথা শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল। সাগরের খুব গর্ব হচ্ছে এমন বাবা মা পেয়ে।
#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_১৫
Tahrim Muntahana
আমার ছেলে যখন বলল আমরা মেয়েকে দেখেছি আগে তখন ভাবলাম কিভাবে। এখানে এসে তো সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম। আমার প্রিয় খেলা বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন আমার ঘরের বউ হবে ভাবতেই কেমন শান্তি লাগে। এখন আপনারা যদি চান তাহলে এগোবে -সাগরের বাবা
আমার মেয়েটা দেখতে পারেনা জেনেও আপনারা এই প্রস্তাব টা রাখলেন। কিন্তু সমাজের মানুষ কি বলবে আপনাদের। তখন তো মানুষ অনেক কথা শুনাবে যখন দেখবে আপনাদের বউমা দেখতে পারে না -নিশি চৌধুরী
আন্টি আমি একটা কথা বলি আমি রিয়াকে ভালোবেসেছি। সুতরাং শুধু রুপ দেখে নয় আচার ব্যবহার গুন এসব দেখেও আর সব থেকে বড় কথা ওর মনটা দেখে আমি ভালোবেসেছি। আর প্রতেবেশী কে কি বললো তাতে কিছু যায় আসে না আমার। এই কথা দিতে পারি যে আবাদত আমাদের সামনে কেউ ওকে ঠেস দিয়ে কথা বলতে পারবে না। আগলে রাখবো সবসময়। আমি আপনাদের সাথেই কথা বললাম কারণ আমি চাই না কারো থেকে শুনে সবাই আমাকে ভুল বুঝুক। এখন সব আপনাদের ইচ্ছে -সাগর
আমাদের একটু সময় দিন -হৃদয় চৌধুরী
রিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই হৃদিতা ওকে থামায়।
পাপা ছোট আব্বু বাবাই ছোট আম্মু মম আমাকে বিশ্বাস করোতো -হৃদিতা
আম্মু তোমাকে তো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি -রিয়ান চৌধুরী
ওনারা যে আজকে আসবে আমি আগে থেকেই জানি। আর হৃদরাজকে তো তোমরা ভালো করেই জানো তার বন্ধু কখনো খারাপ হতে পারে বলো। সাগর ভাইয়া নিজেদের বিজনেস সামলাই ভালো ফ্যামেলি ভালো ছেলে বিশেষ করে ভালো শশুড় শাশুড়ি আর কি চাই বলো। আমি যতদূর জানি রিয়ুর মনেও সাগর ভাইয়ার প্রতি সফট কর্নার আছে। সেটা রিয়ু স্বীকার করুক বা না করুক। আমি একান্তই চাই এই বিয়েটা হোক। এখন তোমাদের ইচ্ছে -হৃদিতা
হৃদান ও চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো সবাইকে। আর কেউ না বলার কিছু পেলো না। নিশি আর পরশির খুব পছন্দ হয়েছে মুখ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে কিন্তু চৌধুরী বংশের ছেলেদের টলানো খুব কঠিন মুখটা গম্ভীর করে বসে আছে।
পাপা আমারো মনে হয় হৃদিপাখি যা বলছে ঠিক। তুই কি বলিস নাশু -পরশ
আমি কি বলবো ভাইয়া তোমরা যা করো তাই হবে -নাশিন
সাগর শুকনো ঢোক গিললো। খুব ভয় করছে কারণ তিন চৌধুরী বংশের বর্তমান মাথাদের মুখটা এখনো আগের ন্যায় গম্ভীর। এমন সাগর একটা বাচ্চাদের মতো কাজ করে বসলো
আই প্রমিস শশুড় আব্বু, শশুড় বাবাই, বড় শশুড় আব্বু আপনাদের মেয়েকে কোনোদিন কষ্ট দিবো না। খুব খুব খুব ভালোবাসবো। ঝড়ের রাতেও যদি বলে ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে আমি যেভাবেই হোক খাওয়াবো। কনকনে শীতেও যদি বলে তার জন্য পুকুরে নেমে শাপলা ফুল আনতে তাও আনবো। মাঝরাতেও যদি বলে আপনাদের সাথে দেখা করবে তখনি ছুটে চলে আসবো। যখন বাচ্চা হবে তখন একটুও কাছ থেকে সরবো না। সব আবদার পুরণ করবো। তার হাতে মার খেতেও রাজি, শীতে বাইরে ঘুমাতেও রাজি, গরমে রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থাকতেও রাজি এখন শুধু আপনাদের রাজি হওয়া বাকি
সাগর একনাগাড়ে কথা গুলো বলে সোফায় বসে পড়লো। ওর দিকে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আহনাফ রিয়ান হৃদয় চৌধুরী ওর দিকে ভ্রু কুচকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে তা দেখে সাগর একটা মেকি হাসি দিয়ে কাচুমাচু করা শুরু করলো। ওর অবস্থা দেখে ওরা তিনজনই এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হঠাৎ উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। সাথে সাথে সবাই হেসে উঠলো রিয়া এক জায়গায় দাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। এদের হাসি দেখে সাগর বেক্কল বনে গেল। শেষ মেষ নিজেও হাসতে শুরু করলো তা দেখে ওরা পারে না হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।
সবাই বিয়েতে মত দিয়েছে। হৃদিতার ইচ্ছে এখন শুধু আকদ করে রাখবে সময় হলে বড় করে অনুষ্ঠান করবে। সবাই তাতে সায় দিয়েছে। আজকে আংটিও পড়িয়ে গেছে। কাল আকদ খুব সিম্পল ভাবে। বাইরের কোনো মানুষ থাকবে না। তাই আলো আর নিয়নের আর যাওয়া হলো না হৃদিতাদের সাথেই সবাই ওদের বাড়ি রওনা হলো। ছোট করে হলেও কিছু মেহমান তো হবেই। সবাই বাড়িতে গিয়ে কাজে লেগে পড়েছে। আলোর শশুড় বাড়ির কিছু অথিতি আসবে রাইসা রাহি রোহানি আধির সাহিলের অল ফ্যামিলি আসবে। সাগরের কাকারা আসবে। পিয়াসের ফ্যামিলি আসবে। হৃদিতা তো খুব খুশি রিয়ুর জন্য। হৃদান বাংলাদেশের বিজনসটা ভালোকরে বুঝে নিয়েছে আজকে। পাপা কে আর কষ্ট দিবে না। পরশ নাশিন কেউ অফিসে নিয়ে গিয়েছে। নাশিনের ও তো ভবিষ্যত আছে।
অবশেষে রিয়ুর জীবনে কাঙ্খিয় সময় টা আসলো। লাল বেনারসি শাড়ি তে অপ্সরির থেকে কম মনে হচ্ছিলো না। সাগর সেই কখন থেকে দেখেই যাচ্ছে এখানে যে বড়রাও আছে তার খেয়ালি নেই। ওর অবস্থা দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে। ভালো ভাবেই আকদটা হয়ে গেলো। এখন রিয়া আর সাগরকে আলাদা কথা বলতে পাঠিয়েছে। বউয়ের সাথে সময় কাটাক একটু। কিন্তু সাগর একটা কথাও বলছে না বড্ড অভিমান হয়েছে তার।
কি হলো কথা বলবেন না
চুপ
রাগ করেছেন বুঝি। আচ্ছা আই এম সরি
চুপ
একটা মানুষকে কিছু বলতে চাইছিলাম না মানে মনের কথা সে যেহেতু কথা বলবেই না তাহলে চলে যাই
রিয়ার কথা শুনে সাগর ফট করে রিয়ার দিকে তাকায়। মুখে হাসি ফুটেছে। অবাক ও হয়েছে রিয়া কে এর আগে এইভাবে কথা বলতে দেখে নি। রিয়াও আজকে বেশ অবাক কাল থেকে ও ঠিক একবছর আগে যেমন স্বাভাবিক ছিলো সারাদিন দুষ্টুমি করতো কাল থেকে তাই করছে।
কি বলবে বলো
আমি এক বছর আগে কারো থেকে কিছু লুকাতাম না। কিন্তু এই এক বছরে অনেক নতুন অভ্যেস হয়েছে কাউকে মনের কথা বলি না। যে আমি একটু ব্যাথা পেলেই বাড়ি মাথায় তুলতাম সে আমি হাজার কষ্টেও এখন কাউকে বলি না। কিন্তু কেমন করে জানি বুঝে যায় ভাইয়ারা আর হৃদি চাইলেও লুকাতে পারি না। কিন্তু এখন যেহেতু স্বামী শাশুড়ি দুজন ই স্পষ্টভাষী তাই ভাবছি আগের ফর্মে ফিরে যাবো
তারপর
ধরেন আমি এখন আগের ফর্মে ফিরে এসেছি তাই বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি, বেশি ভালোবাসি আপনার কথাকে কারণ দেখতে তো পারি না কথার প্রেমেই পড়ে গেছি
সাগর তো অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। কি বলবে কিছুই বুঝতেছে না। রিয়া দেখতে না পারলেও বেশ বুঝতে পারছে সাগরের মনোভাব তাই মুচকি মুচকি হাসছে। সাগরের যখন বোধ তখন দৌড়ে গিয়ে রিয়াকে জাড়িয়ে ধরলো।
আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো রিয়ুপাখি আজকে আমি কত খুশি। আজকে তুমি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে গেলে। আজ থেকে আমিও তুমি নামক অক্সিজেন নিয়ে বাঁচবো। থাকবে তো তুমি নামক অক্সিজেন হয়ে?
থাকবো তো সারাজিবন আপনার হয়েই থাকবো কথা দিলাম। আমিও যে আপনি নামক অক্সিজেনে বাঁচতে চাই
নো আপনি না তুমি
না আমার লজ্জা করে
উমমহু তুমি
আচ্ছা তুমি
দেটস লাইক মাই অক্সিজেন
এইভাবে কিছুক্ষন দুইজনে খুনসুটি করে বের হয়ে আসলো ঘর থেকে। সাগর রা আজকে হৃদিতাদের বাড়িতেই থাকবে।
_______________________
কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। সবার জিবন চলছে যার যার মতো। নিয়ম করে প্রত্যেকদিন পড়াশুনা এক্সারসাইজ প্রেকটিস ভালোবাসার মানুষের সাথে সময় কাটানো সব হয়। হৃদিতা বাড়ির ছাদে বসে আছে হৃদান ফোন দিয়ে জানিয়েছে সে আসবে।
হৃদপরী
হুমম
আজকে এখন তোমাকে আমি যে কথা বলবো সে কথা শুনে তুমি এখনি আমাকে চুমু খাবে
মুটেও না একদম লুচুগিরি করবে না
আমি সত্যি বলছি
আচ্ছা বলো কি কথা
তারপর হৃদান যা বললো তাতে হৃদিতা কিছুক্ষনের জন্য থমকে যায়। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে…
চলবে….?
চলবে…?
(সবাই একটু গঠনমূলক কমেন্ট করুন প্লিজ)