#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৬
Tahrim Muntahana
ড্রয়িং রুমে সোফার উপর দাড়িয়ে হৃদিতা রাইসা রোহানি রিয়া লুঙ্গি, শার্ট আর মাথায় গামছা পড়ে উরাধুরা ডান্স করছে। হৃদান আর পিয়াস এসব দেখে আর ভেতরে গেলো না। একটু পর পরশ আর নাশিন এসে উপস্থিত হলো ওরা দেখে কিছু বললো না দাড়িয়ে রইলো। হৃদান আসার সময় সাগর সোহান কেউ আসতে বলছে তারাও এসে গেছে। ওরাও অবাক হয়ে গেছে এসব দেখে। এইভাবে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বাঁকা হেসে রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো হৃদান। ওর দেখাদেখি সবাই। নাচের মাঝখানে ওদের দেখে ওরা নাচ বন্ধ করে দিলো। নিজেদের অবস্থা দেখে কারো লজ্জা পাওয়ার কোনো লক্ষণ ই দেখা গেলো না। তা দেখে হৃদান ওরা টাসকি খেলো। ওরা গিয়ে সোফায় বসলো। হৃদিতা গিয়ে নাশিনের টোনায় বসে পড়লো আর রিয়া পরশের টোনায়। হৃদিতা কিছুক্ষণ পর হৃদানের দিকে তাকালো
কি ভেবেছিলে হৃদরাজ তোমাদের দেখে এই অবস্থায় লজ্জা পাবো -হৃদিতা
আমি তো ভুলেই গেছি আমি কার সামনে দাড়িয়ে আসি -হৃদান
কই দাড়িয়ে আছিস আমি তো দেখছি তুই বসে আছিস -সাগর
আব্বে শালা তোরে তো -হৃদান
হাহাহা -সবাই
তোমরা সবাই একসাথে -রাইসা
হুমম দরকার আছে -হৃদান
কি হয়েছে হৃদ ভাইয়া -রোহানি
তোমাদের বাড়ি যাবো চলো -হৃদান
কেন ওদের বাড়ি যাবো কেন এখন -সোহান
সেখানে গেলেই জানতে পারবি চল -হৃদান
দাড়াও আমরা রেড়ি হয়ে আসছি -হৃদিতা
হৃদিতারা রেড়ি হতে যাবে তার আগেই সোহানকে রাহির সামনে বসতে দেখে দাড়িয়ে গেলো। রাহিও চমকে গেছে। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক করে সোহানের দিকে তাকালো
কিছু বলবেন মি সোহান -রাহি
রাহু তুমি আমাকে ভুল.. -সোহান
কি বলতে এসেছেন তাই বলুন -রাহি
রাহু বিশ্বাস করো তুমি আমাকে যার সাথে দেখেছিলে সে আমার ফুফাতো বোন। বায়না ধরেছে শপিং এ যাবে। আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিলো। আর তুমি যখন বললে তখন ভাবলাম যদি ভুল বুঝো আমাকে তাই আমি মিথ্যে বলেছি। প্লিজ ফরগিভ মি -সোহান
আশ্চর্য আপনি নিজেকে এত ইমপরটেন্ট ভাবছেন কেন আমার জিবনে। আর আপনি বোনের সাথে যান বা গার্লফ্রেন্ডের সাথে যান তাতে আমার কি বলুন তো। আর আপনিই বা আমাকে এসব এক্সপ্লেইন করছেন কেন -রাহি
রাহির কথা শুনে সোহানের বুকটা ধক করে উঠলো আর কিছু বললো না উঠে দাড়ালো। রাহিরও কষ্ট হয়েছিলো তখন।
সবাই কে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাহি ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকালো
তোরা দাড়িয়ে আছিস কেন যা রেড়ি হয়ে আয় যেতে হবে তো আমাদের -রাহি
ওরা চলে গেলো। আর কেউ কোনো কথা বললো না। হৃদিতিরা রেড়ি হয়ে আসতেই ওরা বেড়িয়ে পড়লো। বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় হেঁটেই গেলো। আজকে রোহানির বাবা অফিসে যায়নি। তাই আজকেই কথা বলা দরকার। কলিং বেল বাজতেই রোহানির বাড়ির কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলো। একসাথে এতগুলা মানুষ দেখে হাকডাক শুরু করে দিলো
আম্মা গো দেহেন দেহেন কারা আইসে। হৃদিতা বুবু রাইসা বুবু রাহি বুবু পরশ ভাইজান নাশিন ভাইজান আরো কারা কারা আইসে তাড়াতাড়ি আহেন গো আম্মা
এই অতি তুই চীৎকার করছিস কেন। দে ভেতরে ঢুকতে দে -হৃদিতা
ওহহ হো আহেন আহেন বুবু
অতি যা নাস্তার ব্যবস্থা কর। আমি আম্মু আব্বুকে ডেকে নিয়ে আসছি -রোহানি
অতি চলে গেলো রান্না ঘরে। রোহানি তার বাবা মাকে ডেকে নিয়ে আসলো। তারা ঘরেই ছিলো। হৃদিতিরা আসছে শুনে তাড়াতাড়ি আসলো।
আরে মামুনিরা আজকে কি মনে করে বুড়ো বাবাটার কথা মনে পড়লো -রোহানির বাবা
তোমার উপর খুব রেগে আছি আমি -হৃদিতা
আমিও খুবববব রেগে আছি তোমার উপর। কথা বলবো না কেউ -রিয়া
শুধু ওরা না সবাই খুব রেগে আছি -রাইসা
এখন কি করলে আমার মায়েদের রাগ ভাঙবে। আর এই অধম সন্তান টা কি দোষ করেছে -রোহানির বাবা
আপনিই তো সব নষ্টের মূলে আছেন -পিয়াস
বিড়বিড় করে বলে উঠলো পিয়াস। সাথে সোহান আর নাশিন ছিলো ওরা ফিক করে হেসে উঠলো। তা দেখে রোহানির বাবা ভ্রু কুচকে তাকালো
হেই আস্তে যে হিটলার শশুড় আমার না জানি শোনার পর আমাকেই উড়িয়ে দেই -পিয়াস
কি হয়েছে। এত হাসাহাসি কেন -রোহানির বাবা
এই তুমি চুপ করো আচ্ছা তোরা হঠাৎ এইভাবে আসলি -রোহানির মা
বারে এখন তোমাদের বলেও আসতে হবে দেখছি -পরশ
আরে ছেলের কথা শুনছো আমি কি সেটা বলেছি। অনেক দিন ধরে তো আসিছ না তাই বললাম -রোহানির মা
তোমার মেয়ে কে দেখতে এসেছি বিয়ের জন্য -হৃদিতা
কিহহহ -রোহানির বাবা
আরে আস্তে আংকেল। এখনি এত গরম হচ্ছো কেন আমাদের কথা আগে শুনো -রাইসা
আংকেল আমি বলছি আপনি যে রোহানিকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেছেন সেটা আপনার একদম উচিত হয়নি। রোহানি আর পিয়াস একে অপরকে ভালোবাসে। এখন আপনি বলুন কি করবেন -হৃদান
আর যা ডিশিসন নিবে আংকেল ভেবে নিবে -নাশিন
ওদের কথা শুনে রোহানির বাবার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। রোহানির বেশ ভয় করছে। রোহানির বাবা কিছুক্ষণ ভেবে থমথমে মুখে রোহানি কে ডাকলো। এরকম আওয়াজ শুনে রোহানি চমকে উঠলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দিলো
জি আব্বু -রোহানি
ওরা যা বলছে তা ঠিক -রোহানির আব্বু
ভুল বললে আমি নিশ্চয় প্রতিবাদ করতাম -রোহানি
মানে তুমি বিয়েটা করছো না -রোহানির আব্বু
তো তুমি কি বলতে চাইছো একজন কে ভালোবেসে আরেকজন কে বিয়ে করে সংসার করবো যেখানে না আমি নিজে কোনো দিন সুখি হতে পারবো, না অন্যকে সুখি করতে পারবো -রোহানি
তা সে কে? কি তার পরিচয়? কি করে? -রোহানির আব্বু
ছেলের নাম পিয়াস আনাফ। বাবা কাওসার আনাফ মা পিয়ালি শেখ। নিজ ব্যবসায় আছে। আলহামদুলিল্লাহ ব্যবসায়টা অনেক ভালো চলে। আর বাবা আর ছেলের যে টাকা আছে আপনার মেয়ে কোনো পরবর্তী অনেক প্রজন্ম বসে খেতে পারবে-পিয়াস
তুমি বলছো কেন -রোহানির আম্মু
কারণ শাশুড়ি আম্মু ছেলেটা আমিই। তাই নিজের পরিচয় নিজেই দিলাম -পিয়াস
এখন যদি আমার মেয়ের বিয়ে তোমার সাথে না দেই তাহলে কি করবে -রোহানির আব্বু
বেশী কিছু করবো না শশুড় আব্বু প্রথমে আপনার মেয়ের হাত টা ধরবো, তারপর কিছুক্ষণ হাঁটবো যখন দেখবো আপনি একেবারেই মেনে নিচ্ছেন না তখন আর কি করার দিবো দৌড়। দুজন যাবো ছয় সাত জন হয়ে ফিরবো তখন আপনি এমনিই মেনে নিবেন -পিয়াস
পিয়াসের কথা শুনে রোহানি আর ওর আব্বু চোখ বড় বড় করে তাকালো কি বলে এই ছেলে । আর সবাই বেশ মজা নিচ্ছে। রোহানি তো বিড়বিড় করে গালিও দিয়ে ফেলছে অনেক গুলো। রোহানির আব্বু থম মেরে বসে থেকে উঠে চলে গেলো। রোহানির আম্মু তো খুব খুশি। উনি পিয়াসের কাছে এগিয়ে গেলেন
আমার মেয়েকে ভালো রাখবে তো বাবা -রোহানির আম্মু
কিযে বলেন না শাশুড়ি আম্মু আপনার মেয়ে ভালো না থাকলে তো আমিও ভালো থাকবো না আর আমার হিটলার শশুড় আব্বু তো আছেই যদি শুনে ওনার মেয়ে ভালো নেই তাহলে আমাকে আর আস্ত রাখবে না হাহাহা -পিয়াস
হাহাহা পাজি ছেলে -রোহানির আম্মু
এতক্ষণ এসব কথা রোহানির আব্বু আড়াল থেকে শুনছিলো। আর রেগে ফেটে পড়ছিলো। ঘর থেকে বের হয়ে একপলক ওদের দিকে তাকিয়ে হনহন করে বাইরে চলে গেলো। ওরাও হেসে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। এখন যাবে আহিল খানের বাড়ি। আজকেই এই ব্যাপারটা ডিসমিস করে তারপর খান্ত হবে। আহিল খানের বাড়ি আসতেই দেখলো আহিল বাইরে দাড়িয়ে আছে। ওরা কুশল বিনিময় করে ভেতরে গেলো। বাড়িতে আগেই বলে রেখেছিলো ওর কিছু গেস্ট আসবে আর আজকে আহিলের খালার পরিবার এসেছে তাই আগেই ব্যবস্থা করে রেখেছে আহিলের মা। ওরা গিয়ে সোফায় বসলো। এখানে রোহানি আসে নি। রোহানি আসলে ব্যাপারটা অন্যরকম লাগে। আহিল গিয়ে ওর বাবা চাচা মা চাচী আর বড় ভাই ভাবী কে ডেকে আনলো। জয়েন ফ্যামেলী। আহিলের বড় ভাবী তো বাস্কেট বল খেলোয়াড় দেখে খুশি তে গদগদ হয়ে কথা বলতে শুরু করলো। হৃদান চৌধুরী কে নিজেদের বাড়িতে দেখে আহিলের বাবা চাচা ভাই তো টাসকি খাইছে। কেমনে কি ভাই। হৃদানের এসব ভালো লাগে না। আরে ও এতবড় বিজনেস ম্যান হইছে বলে কি আকাশে উড়তে হবে।
বাবা চাচা উনাকে তো চিনই হৃদান চৌধুরী । ওরা আমার নতুন ফ্রেন্ড -আহিল
আই সি কেমন আছো তোমরা -আহিলের বাবা
সবাই একে একে পরিচিত হয়ে নিলো। তার হালকা নাস্তা দিলো কিন্তু ওরা কেউ খেলো না। মনের মধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে কিভাবে কি শুরু করবে তারমধ্যেই
বাবা মা তোমরা চিনতে পারছো না ওদের ও হৃদিতা রাইসা রাহি রিয়া ওরা বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন। আমি তো ভাবতেই পারছি না ওরা আমার সামনে -আহিলের ভাবী
আমরা তেমন কোনো সেলিব্রেটি নয় যে আমাদের দেখলে এমন করতে হবে মিসেস খান -হৃদিতা
আমরা যে কারণে এসেছি সেই দিকেই এগোয় -সাগর
হুমম বলুন -আহিলের চাচা
আহিলের বিয়ে ঠিক করেছেন আপনার বন্ধুর মেয়ের সাথে মি খান -হৃদান
হুমম আপনি জানলেন কেমন করে মি চৌধুরী -আহিলের বাবা
মি খান আমি আপনার থেকে ছোট তাই তুমি আর নাম ধরে ডাকলেই খুশি হবো। আমি বড় বিজনেস ম্যান হয়েছি বলে নিজের মনুষত্য ভুলি নি তাই প্লিজ কল মি -হৃদান
হৃদানের ব্যবহার দেখে সবাই মুগ্ধ হলো। কে বলবে এই রাগি গম্ভীর মানুষ টা এইভাবে কথা বলতে পারে। এত উচু মানের ভাবতে পারে। হৃদিতাও মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দেখলো। হৃদান দুষ্ট হেসে দুই ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। হৃদিতা মুচকি হেসে অন্যদিকে তাকালো।
আচ্ছা আচ্ছা তাই ডাকবো এখন বলো -আহিলের চাচা
আমরা আপনার ছেলের মানে আহিলের বিয়ের কথা বলতে এসেছি -পরশ
আমার ছেলের বিয়ে তো ঠিক হয়ে আছে -আহিলের আম্মু
কিন্তু ওই বিয়ে হচ্ছে না কারণ মেয়ে রাজী না বিয়েতে আর আপনার ছেলেও -রাইসা
তোমাদের কে বললো এসব -আহিলের বাবা
মেয়ের কথা বললে বলবো আপনি যে মেয়ের সাথে আপনার ছেলের বিয়ে ঠিক করেছেন সে আমাদের কলিজার বান্ধুবী। আর ওই যে হৃদরাজের পাশে বসে আছে পিয়াস আমার মামাতো ভাই। আর পরশ চৌধুরী আর নাশিন চৌধুরী কে তো চিনেনই আমার ভাইয়া। কথা হচ্ছে আমার মামাতো ভাই পিয়াস আর রোহানি একে অপরকে ভালোবাসে। সেই চারবছর ধরে। যেখানে আপনি বিয়ে ঠিক করেছেন তিন বছর আগে। তাই এই বিয়ে বন্ধ করুন -হৃদিতা
আর এই ব্যাপার টা আমরা আংকেল মানে রোহানির আব্বুকে জানিয়েছি। কিছু বললো তার মুখ দেখে মনে হলো মেনে নিবে শুধু আপনাকে কথা দিয়েছে বলে চুপ করে আছে -রিয়া
আর আপনার ছেলে আহিল একজন কে ভালোবাসে জানেন আপনারা -পরশ
পরশের কথা শুনে আহিলের পরিবারের সবাই বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। ওরা বিশ্বাস ই করতে পারছে না।
কি বলো তাই নাকি দেবরজি তলে তলে এত দূর -আহিলের ভাবী
আহ তুমি চুপ করে শেলী আমাকে কথা বলতে দাও। আহিল ওরা যা বলছে সত্য? -আহিলের ভাই
জি ভাইয়া আমি একজন কে ভালোবাসি। এমনকি তার সাথে আমার আজকেই দেখা। কিন্তু ওকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে পারবো না -আহিল
আর আংকেল যেহেতু মেয়ে ছেলে কেউ রাজী নয় সেহেতু আপনাদের না আগানোই ভালো হবে -রাহি
এখন আপনি যদি জেদ ধরে বসে থাকেন তাহলে কেউ সুখি হতে পারবে না একজন কে ভালোবেসে অন্য জনের সাথে সুখে সংসার করা যায় না -নাশিন
তাহলে দেখবেন ওরা নিজেরা কখনো সুখি হতে পারবে না, না আপনারা ভালো থাকবেন -সোহান
মেয়েটা কে আহিল -আহিলের আব্বু
আব্বু ওর নাম অরনি রহমান। বাবা আকাশ রহমান। তুমি যদি সোসাইটির কথা বলো তাহলে আগে বলবো আমার কাছে সোসাইটি প্রাধান্য পায় না তারপর বলবো ওরা আমাদের মতোই হাই সোসাইটি -আহিল
মেয়েটা গরিব হলেও আমার কিছু যায় আসেনা আহিল তুমি সেটা জানোই। কিন্তু মেয়ে ভালো হতে হবে -আহিলের বাবা
রান্না বান্নার কথা যদি বলো না জানলেও চলবে আমি আমার বউমাকে শিখিয়ে নিবো কিন্তু আমার কথা হলো চারিত্রিক গুনাবলি আর ব্যবহার ভালো হতে হবে -আহিলের আম্মু
চিন্তা করার কিছু নেই আন্টি অরনি বিদেশে বড় হলেও বাঙালিদের মতো আচার আচরণ ওর। রান্নাও পারে কিছুটা। আর চারিত্রিক দিক দিয়ে খুব ভালো। আমরা কিছু ছেলে বেস্টফ্রেন্ড ছাড়া কোনো ছেলের সাথে চলাফেরা নেই। ডিস্কেও যায় না। চরিত্রে কোনো গাপলা নেই আর ব্যবহারো অমায়িক -পিয়াস
এখন আপনারা বলতে পারেন যে আমাদের বন্ধু ভেবে আমরা বেশি বেশি বলছি। না বেশি বলছি না আমরা। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আর আহিলের খোঁজ নেওয়া শেষ -হৃদান
বুঝলাম আমার রোহানির আব্বুর সাথে কথা বলতে হবে -আহিলের বাবা
বাবা চাচা ভাইয়া তোমরা কি রাগ করেছো -আহিল
আরে পাগল ছেলে বলে কি? আমরা রাগ করবো কেন ভাই। তুই যাকে নিয়ে সুখে থাকবি আমরা তাকেই মেনে নিবো। আমাদের কাছে তোর সুখ টাই বড় -আহিলের ভাই
হ্যাঁ ভাইয়া আমি সবসময় বোকা বোকা কথা বলি বলে ভেবোনা আমি ওতটা বোকা। আর আমরা তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমরা চাই তুমি সবসময় ভালো থাকো। আর আমার তো কোনো ভাই নেই তোমাকেই ভাই মানি তাই আমার ভাই যেটাতে খুশি সেটাতে আমরাও খুশি -আহিলের ভাবি শেলী
ওহ হাউ সুইট ভাবী। লাভ ইউ -আহিল
তাহলে এখনতো রোহানির আব্বুর সাথে কথা বলতে হবে -আহিলের চাচা
এখনি ফোন করেন -রাহি
এখন? -আহিলের ভাই
হুমম দেখি আমার হিটলার শশুড় মশাই কি বলে -পিয়াস
হাহাহা আচ্ছা করি -আহিলের আব্বু
আহিলের বাবা রোহানির আব্বু কে ফোন দিলো। অন্যদিকে রোহানির আব্বু অনেকক্ষণ ধরে আহিলের বাবাকে ফোন দিবে দিবে করে দিচ্ছে না। যদি রিয়েক্ট করে তার জন্য । অনেকক্ষণ ভেবে যখনি ফোন দিতে যাবে তখনি ফোনটা বেজে উঠলো। স্কিনে নামটা দেখে বিষ্ময়ে মুখ হা হয়ে গেলো।
#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_২৭
Tahrim Muntahana
কি রশিদ তোর তো খবরই নেই -আহিলের আব্বু
কবির ! তোর ও তো খবর নেই -রোহানির আব্বু
তা ছেলে তো বুডো হয়ে যাচ্ছে পাকা কথা বলতে কবে আসবো -আহিলের আব্বু
কবির খানের কথা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠলো। কথা কি হলো আর সে কি বলছে। পরক্ষণেই ঠোঁটে দুষ্টু হাসি দেখে সবাই বুঝলো মজা করছে বন্ধুর সাথে। কিন্তু অপর প্রান্তের মানুষটা তো চুপসে গেছে সেটা আর কেউ না বুঝলেও হৃদান ওরা ঠিক বুঝতে পেরেছে। পরশের মুখে তো শয়তানি হাসি। হবু শশুড় কে জব্দ হতে দেখে বেশ মজা পাচ্ছে।
কিরে রশিদ কথা বলছিস না কেন? আচ্ছা তুই কি কোনো ভাবে মত পাল্টেছিস। দেখ তোকে আগেই বলে রাখছি আমার ছেলে কিন্তু তোর মেয়েকে পছন্দ করে ফেলেছে এখন পিছিয়ে গেলে চলবে না। কবে আসবো তাই বল -আহিলের আব্বু
আসলে -রোহানির আব্বু
কি আসলে আসলে করছিস অন্যসব কথা পরে হবে আগে বল আমার বউমা কে কবে নিয়ে আসবো -আহিলের আব্বু
রোহানির আব্বু পড়ে গেল ফ্যাসাদে। পাশে বসে আছে রোহানির আম্মু। সব কথায় শুনতে পারছে সে। রোহানির আব্বুর এভাবে চুপসে যাওয়া মুখ দেখে সে মুখ টিপে হাসছে। রোহানির আব্বুকে আর কিছু বলতে না দিয়েই নিজে ফোনটা নিয়ে কানে ধরলো
আসসালামু আলাইকুম ভাইসাহেব
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ভাবি। কেমন আছেন বলুন
আলহামদুলিল্লাহ ভাইসাহেব আপনি কেমন আছে। আপা কেমন আছে
সবাই ভালো আছে ভাবি। আমার মা টা কেমন আছে
ভালো আছে। ভাই সাহেব আপনাকে আহিল কিছু বলে নি
না তো কি বলবে
আসলে হয়েছে কি আমরা তো নিজেরা বিয়ে ঠিক করে রেখেছি এখন মেয়ে অন্য একজন কে ভালোবাসে। শুনলাম আহিল বাবাও অন্য কাউকে ভালোবাসে। এখন কি করে বিয়ে হবে বলুন। জোর করে দিলেও তো সুখি হবে না। তাই বলছিলাম কি
কথা শেষ হওয়ার আগেই পিয়াস কবির খানের পাশে গিয়ে বসলো।
শাশুড়ি আম্মু আপনার হিটলার বর কে ফোন টা দিন তো
পরশের কথা শুনে রোহানির আম্মু সহ উপস্থিত সবাই ফিক করে হেসে দিলো আর রোহানির আব্বু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
এই এই বেয়াদপ ছেলে তোমার সাহস তো কম না
শশুড় আব্বু এভাবে বলবেন না দিনশেষে আপনার মেয়েই কষ্ট পাবে
তোমার কাছে আমার মেয়েই বিয়ে দিবো না। দেখি কি হয়
আচ্ছা শশুড় আব্বু আমি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু কাল খবরের কাগজের ফন্ট পেইজে একটাই খবর দেখতে পারবেন
কি
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রশিদ হাসানের একমাত্র মেয়ে রোহানি হাসান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাওসার আনাফের একমাত্র ছেলে পিয়াস আনাফের সাথে পালিয়ে গেছে। জানা গেছে চার বছরের ভালোবাসার সম্পর্কে একমাত্র ভিলেন হয়ে দাড়িয়েছে মেয়ের বাবা স্বয়ং রশিদ হাসান। তার ভিলেন হওয়ার একমাত্র কারণ হলো ছেলের মানে পিয়াস আনাফের সততা। সততার কারণে পিয়াস আনাফ তার একমাত্র হবু শশুড় কে হিটলার বলায় রশিদ হাসান ক্ষেপে গিয়ে মেয়েকে রুমে আটকে রেখে টর্চার করছে।
হোয়াটটটটটটটট। আমি আমার মেয়েকে টর্চার করি
আরে শশুড় আব্বু এত হাইপার হচ্ছেন কেন। টর্চার বলতে কি শুধু শারীরিক আঘাত ই? আপনি যে আপনার মেয়েকে রুমে আটকে রাখবেন আমার কাছে আসতে দিবেন না এর থেকে মানসিক টর্চার আর কি আছে শশুড় আব্বুউউউউউ
তুমি আমার পিছে লাগছো? তোমার সাহস আছে বলতে গেলে। আমি তোমাকে মেনে নিলেও শুধু মেয়ের জন্য নিবো কারণ আমার মেয়ে আমার কলিজা। ওর কষ্ট আমি দেখতে পারি না তাই তোমাকে মেনে নিচ্ছি। আমার তোমাকে একদম পছন্দ না তাই শশুড় আব্বু শশুড় আব্বু বলবে না একদম
তাহলে কি বলে ডাকবো? নাম ধরে তো ডাকতে পারবো না তাহলে আব্বু বলে ডাকি শশুড় বাদ। ওকে আব্বুউউউউ
তোমাকে তো আমি…. আমার মেয়ের যদি কোনো কষ্ট হয় সেদিন আমার আসল রূপ দেখবে মনে রেখো
আপনার হিটলার রূপ তো আগেই দেখেছি, আব্বুউউ আর কোন রূপ দেখাবেন
তোমার সাথে কথা বলায় বেকার। কাল তোমার আব্বু আম্মু কে আসতে বলবে। এখন কবির কে ফোন দাও
ধমকে বলে উঠলো রশিদ হাসান। উপস্থিত সবাই বহুত কষ্টে হাসি আটকে রেখেছে। রাইসা মুখে কুশন দিয়ে রেখেছে। আর পারছে না হাসি আটকাতে। ওর অবস্থা দেখে সবার আরো হাসি পাচ্ছে।
আব্বুউউউ আমার মতো মাছুম ভোলা ভালা জামাই পাচ্ছেন সেটা আপনার দাদুর সৌভাগ্য তাও আমাকে বকছেন হুমম ভালো হবে না
বলেই কবির খান কে ফোন দিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। ওর ও খুব হাসি পাচ্ছে। কবির খান হাসি হাসি মুখ থেকে মুখটা স্বাভাবিক করে গলা পরিষ্কার করে ফোন নিলো
হ্যাঁ বল
তুই ও এতক্ষণ আমার সাথে মজা নিলি তাই। ওই বেয়াদপ টা তোকে শিখিয়ে দিয়েছে আমি বুঝতে পারছি। যাই হোক শুনলিই তো তোর ভাবি কি বললো। আর আগাতে পারবো না তাই আগেই বলে দিলাম।
আচ্ছা আচ্ছা এত রাগ করছিস কেন সরি যা। শুন বিয়ে তাহলে একসাথেই হবে। আহিলের বিয়েটাও ঠিক করে রাখবো কাল পরশুর মধ্যে।
আচ্ছা এখন রাখছি ভালো থাকিস। বেয়াদপটা মুড ই নষ্ট করে দিয়েছে
আর যাই বলিস সোনার টুকরা জামাই পাচ্ছিস। বেয়াদপ বেয়াদপ করছিস কেন
ওই কবির শোন না ওরা কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে
সবাই এবার একটু নড়েচড়ে বসলো। হৃদান ইশারা করে বললো যাতে স্বীকার না করে। কবির খান তাই করলো
না না কেউ শুনতে পাচ্ছে না তুই বলনা কি বলবি
আসলে কি জানিস আমারো না ছেলেটাকে বেশ পছন্দ হয়েছে। আর আমি আমার মেয়ের পছন্দ কে ভরসা করি তার মধ্যে সেখানে হৃদিতা পরশ হৃদান সহ বাকি সবাই আছে। ওদের তো আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি। আর ছেলেটা ভালো আছে। আমি খোঁজ নিয়েছি
তাহলে তুই ওমন ব্যবহার করছিস কেন
আমাকে হিটলার বললো কেন তাই আমিও হিটলার গিরি করছি
হাহাহা তুই আর বদলালি না বন্ধু সেই আগের মতোই আছিস
পিয়াস কিছু বলতে যাবে তার আগেই পরশ ওর হাত চেপে ধরলো তাই আর কিছু বললো না। কানে কানে বলল
সে তোর সামনে এইভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়ছে করতে দে তুই তো জানিস তার মনে কি
কথাটি শুনে পিয়াস মাথা ঝাঁকালো মানে সে বুঝতে পেরেছে। রোহানির আব্বু ফোনটা রাখবে তার আগেই রাইসা আর হাসি আটকাতে পারলো না। আর একটু হলেই দম আটকে যেতো। তাই মুখ থেকে কুশন টা ফেলে দিয়ে হো হো করে জোরে হেসে দিলো ওর হাসি দেখে আর সবাই ও জোরে হেসে দিলো। রোহানির আব্বু ঠিক শুনলো হাসির শব্দ। বুঝতে পেরে বন্ধুকে মনে মনে কয়েকটা গালি দিয়ে তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দিয়ে একটু দম নিয়ে নিজেই হেসে দিলো। সাথে রোহানির আম্মু ও হেসে দিলো। এতক্ষণ দরজার আড়াল থেকে রোহানি এসব শুনছিলো লুকিয়ে। মেনে নিয়েছে শুনে খুশিতে রুমে গিয়ে কতক্ষণ উড়াধুড়া নাচ করে হাক ছেড়ে আম্মুকে বলে বেরিয়ে গেলো। অন্যদিকে সবাই হেসে কুটিকুটি অবস্থা
আর যাই বলো পিয়াস ভাইয়া ফাটিয়ে দিয়েছো। আমার তো বেশ মজা লেগেছে -রাইসা
আরে দেখতে হবে না ভাইটা কার -হৃদিতা
হইছে তোমার একার ভাই না আমারো -রিয়া
বেশ মজা পেয়েছি আমরা। তোমরা আসলেই খুব ভালো। আমার তো আজকের দিনটা সারাজীবন মনে থাকবে -আহিলের ভাবি
চিন্তা করবেন না ভাবি অরনি কে শুধু আসতে দিন এই বাড়িতে। সারাটা দিন সবাই কে মাতিয়ে রাখবে নিজের দুষ্টামি তে -সাগর
সত্যি? তাহলে তো ভালোই হলো আমার বউ একটা বাদরামি করার সঙ্গী পেলো আমাকে আর বলির পাঠা হতে হবে না -আহিলের ভাই
আহিলের ভাইয়ের কথায় সবাই আরেক দফা হেসে নিলো। আহিলের ভাবি তো রেগে বোম হয়ে তাকিয়ে আছে তা দেখে আহিলের ভাই শুকনো ঢোক গিলে মেকি হাসলো কিন্তু বউ য়ের রাগকে টলাতে পারলো না। এইভাবে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো ওরা। নাস্তাও করেছে হালকা সবার জোরাজুরিতে। এর মধ্যে ঠিক করে নিয়েছে কাল পিয়াস রা রোহানিদের বাড়িতে যাবে পাকা কথা বলতে আর তার পরদিন অরনিদের বাড়িতে যাবে আহিল রা। এইভাবে সব ঠিক করে ওরা বেরিয়ে পড়লো বাড়ি থেকে। আহিল আর আহিলের ভাই ওদের একটু এগিয়ে দিলো। মেইন গেইট পেরিয়ে আসতেই সামনে তাকাতেই ওরা অবাক হয়ে এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে…
চলবে…?