#তুমি_বললে_আজ_২
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ১৬.
.
ভালোবাসার মানুষ গুলোর সাথে কা*টানো সময়গুলো খুব তারাতাড়িই যেন চলে যায়। সময়গুলো ঠিক কিভাবে চলে যা, বোঝা যায় না। এখানে এসে দু’টো দিন যে ঠিক কিভাবে চলে গেল বুঝতেই পারলাম না যেন। ফুপির সাথে আড্ডা দেওয়া, তাসফি ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করা, ওনার আনলিমিটেড আমাকে খোঁচা দেওয়া, সাথে ওনার অ*সভ্য মার্কা কথাগুলো শুনেই দিন গুলো কে*টে গেছে। তবে এই দু’টো দিন তাসফি ভাই প্রয়োজন ছাড়া আমার আসে পাশে আসেন নি, তবে যতটুকু সময় ছিলেন তাতেই যেন জ্বালিয়ে মে*রেছেন আমায়। ফুপিও অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। সকাল থেকেই একটু সুস্থ হয়ে, দুপুর থেকে আমাকে সাইডে রেখে নিজেই সব কাজ করে যাচ্ছে। রাতের রান্নার সময় আমি কিছু করার জন্য যেতেই ধমকে উঠে ফুপি। বলে উঠলো,
“দুই দিনে অনেক কাজ করেছিস, আর করতে হবে না। ফুপির বাড়ি আসছিস খাবি -দাবি আর ঘুরবি, কাজ করতে হবে কেন?”
ফুপির কথা শেষ হতে আমি বলে উঠলাম,
“তুমি অসুস্থ না, মাত্র জ্বর ছাড়লো। তোমার এগুলো না করলেই নয়, আমি করছি তুমি যাও এখান থেকে।”
এর মাঝেই তাসফি ভাইয়া রান্না ঘরে চলে আসেন। ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে খেতে লাগলেন। ফুপি কিছু বলার আগেই উনি অকপটে বলে উঠেন,
“উফ্! আম্মু…. তুমি ওকে বাঁধা দিচ্ছে কেন? দেখছো না মেয়ে বড় হয়ে গেছে, বিয়ের বয়সও হয়ে গেছে। সংসারের দ্বায়িত্ব নিয়ে সেটাই তো বোঝাতে চাইছে।”
একটু থেমে আমার দিকে তাকালেন। বললেন,
“তুই তোর কাজ কর রুপু, খুব তারাতাড়ি শ্বশুর বাড়িতে নিজের সংসার সামলাতে হবে তো নাকি? সাথে এটাও শিখে নে, কিভাবে বরকে আদর করে চুমু দিয়ে খাওয়াতে হয়।”
ওনার কথায় রাগ হলো অনেক। চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম,
“আমার বরকে কিভাবে খাওয়াবো, না খাওয়াবো সেটা আমার ব্যাপার, আপনার কেন বলতে হবে? বজ্জাত লোক একটা।”
“গাধী কোথাকার! সেটা তো, তোর এই মস্তিষ্ক বিহীন মোটা মাথায় ঢুকবে না। আমাকেই তো ভাবতে হবে, বেয়াদব! তোর মতো গাধার বর তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, শেষমেষ তো আমার গলায় তোকে ঝুলিয়ে দিবে, তোর বাপ চাচারা।”
“দরকার নাই আপনার মতো বজ্জাত লোকের গলায় ঝোলার। আমি কি লাফাচ্ছি নাকি আপনার গলায় ঝোলার জন্য?”
“লাফাবি কেন? রীতিমতো ঘাড়ে চড়ে আছিস তো।”
“দেখেন তাসফি ভা….”
“থামবি তোরা…. কি বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস তখন থেকে।”
আমার কথা শেষ না হতেই ধমকে উঠলো ফুপি। সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলাম দু’জনে। ফুপি একটু থেমে তাসফি ভাইকে বলে উঠলো,
“তাসফি…. তুই যাবি এখান থেকে? সারাদিন ওর পিছনে না লাগলে তোর হয় না?”
“আমি আবার ওর পিছনে লাগতে গেলাম কখন? দেখছো না ও বড় হয়ে গেছে, সংসারের দ্বায়িত্ব নিচ্ছে, বরের আদর খেতে চাচ্ছে, শুধু তোমরাই বুঝলে না।”
প্রচন্ড রাগে ওনার দিকে তাকালাম আমি। কিছু বলার আগেই ফুপি বলে উঠলো,
“বয়স হয়ছে ওর? যখন বিয়ের বয়স হবে তখন ঠিকই দিবো।”
“ওর হয়নি তো কি হয়েছে? আমার তো হয়েছে, আমাকে বিয়ে দিতে পারছো না? কতদিন আর বউ ছাড়া একা একা ঘুমাবো?”
“তুই যাবি এখান থেকে? ফাজিল ছেলে! সারাক্ষণ বউ বউ ছাড়া আর কোন কথা নাই?”
“তোমরা আসলেই মীরজাফরের বংশধর। তোমার দুই ভাই যেমন মীরজাফর, তেমনি তোমরা দুই ফুপি ভাস্তিও মীরজাফর। শুধু নিজেরটা তে ষোলো আনা। আমার কষ্টটা তো তোমাদের চোখে পড়ছে না?”
বলেই একটু থামলেন উনি। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বললেন,
“দিন দিন যে আমার বউটার জন্য হতাশয় শুকিয়ে যাচ্ছি, সেটা তোমার আর তোমার ভাইদের চোখে পড়ছে না? দেখেছো চেহারার কি অবস্থা? মানুষ না খেয়ে থাকলেও তো এতটা শুকিয়ে যায় না।”
ওনার সিরিয়াস ভঙ্গিতে আফসোসের সুরে কথা বলতে দেখে আমি আর ফুপি একে অপরের দিকে তাকালাম। ফুপিকে বলতে চাইলাম, ‘তোমার এই বজ্জাত ছেলেটা এতো অ*সভ্য কেন? এভাবে বলতে পারে? এই বজ্জাতটাকে এক্ষুনি চুপ করতে বলো।’ ফুপিও হয়তো বুঝতে পারলো আমার কথা। হতাশার একটা নিশ্বাস ছেড়ে কিছু বলতে নিতেই তাসফি ভাইয়া বলে উঠলেন,
“শুধু একবার আমার বউকে কাছে আসতে দাও, তারপর দেখো, তোমাদের থেকেও বড়সড় একটা বংশ তৈরি করবো, আমার বাচ্চা-কাচ্চা গুলো দিয়ে। তখন দেখবো কিভাবে আমাকে টেক্কা দেয় তোমার? হু!”
“তাসফি…. যাবি তুই? ফাজিল ছেলে… তো….”
“আচ্ছা…. আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আবার ভালো মানুষ, তাই কিছু মনে করলাম না। যাচ্ছি যাচ্ছি… ”
বলেই আর দাঁড়ালেন না উনি, যেভাবে এসেছিলেন, সেভাবেই বেড়িয়ে গেলেন রান্নাঘর ছেড়ে। উনি যেতেই যেন হাজারো বেগে নিশ্বাস বেড়িয়ে আসলো ভেতর থেকে। একটা মানুষ ঠিক কতটা বজ্জাত আর অ*সভ্য হলে এগুলো কথা করতে পারে? হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে ফুপির দিকে তাকালাম। বিরক্ত গলায় বলে উঠলাম,
“তোমার এই ছেলেকে কি খাইয়ে বড় করছো ফুপি? একটা মানুষ এতটা বজ্জাত কি করে হতে পারে? কিভাবে সহ্য করো ওনাকে?”
“কিভাবে যে করছি, একমাত্র উপর আল্লাহ্-ই জানেন। ত্রিশ বছর ধরে বুড়োটাকে সহ্য করছি, আর আটাশ বছর ধরে এটাকে। বাপের থেকে ছেলেটা আরও একশো তে একশো। সব-ই আমার কপাল।”
বলেই হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো ফুপি। একটু থেমে আবারও বলে উঠলো,
“আমার বাবা বয়স হয়ে যাচ্ছে এত শত আর ভাবতে পারবো না। ছাড়া হাত পায় শুধু দেখে যাবো, নাতি নাতনি নিয়ে খেলবো। আমি তোর ছেলে-মেয়েকে সামলাবো, আর তুই আমার ছেলেকে। ব্যাস! হয়ে গেল।”
ফুপির কথাটা বুঝে উঠতে সেকেন্ডের মতো সময় লাগলো। বিস্মিত হয়ে ফুপির দিকে তাকাতেই ঠোঁট চেপে হেঁসে উঠলো ফুপি। মা ছেলে যে দু’টোই এক, সেটা বোঝার আর বাকি রইলো না আমার। উফ্! ফুপির সামনেও আর থাকা যাবে না।
“অসম্ভব….. পারবো না আমি, তোমার আদরের বজ্জাত ছেলেকে সামলাতে…”
অনেকটা জোরে কথাটা বলেই বেরিয়ে আসলাম রান্নাঘর ছেড়ে। আসার সময় ফুপির উচ্চ স্বরে হাসির আওয়াজ ঠিকই কানে আসলো। রাগের সাথে সাথে লজ্জাটাও এসে ঘিরে ধরলো।
.
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই চিন্তা করলাম এই বজ্জাত মা ছেলের সাথে আর থাকবো না, আজকেই বাসায় চলে যাবো। মনে মনে কথাটা ভেবে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে আসলাম ফুপিকে বলার জন্য। কিন্তু আমার ভাবনার মাঝে এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে ফুপি বলে উঠলো,
“আসার পর দু’টো দিন তো শুধু কাজ করেই কাটিয়ে দিলি, আরও দু’টো দিন থেকে ফুপির হাতের ভালোমন্দ রান্না খেয়ে তবেই তোর যাওয়া।”
কিছু বললেও ধমকে ধামকে একেবারে চুপ করে দিলো ফুপি। শেষমেশ কোন উপায় না পেয়ে ফুপির কথাতেই রাজি হতে হলো।
এবার ভাবলাম থাকতেই যখন হবে, তাহলে এখান থেকে কলেজে গিয়ে ঘুরে আসায় যায়। এমনিতেও এই দু’টো দিন কলেজে যেতে পারি নি। ফুপিকে বলতেই বাঁধা দিলো না আমায়। খাওয়া দাওয়া করে রেডি হয়ে যেতে বললো কলেজে। আমি যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। বাসায় থেকে মি. বজ্জাত তাসফির বজ্জাত মার্কা কথা না শুনে কলেজে গিয়ে কিছুটা সময় কটিয়ে দেওয়ায় ভালো হবে।
.
ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে এসে বসে পড়লাম। ডিপার্টমেন্টে আলাদা হওয়ায় ফ্রেন্ডদের এখন ক্লাস আছে, তাদের জন্যই ক্যাম্পাসে বসে বসে ওয়েট করা। না জানি তাদের ক্লাস ঠিক কতটা সময় পর শেষ হবে।
মিনিট পাঁচেক সময় কাটতেই হঠাৎ কেউ একজন পাশে এসে বসলো। পাশে তাকাতেই চোখ মুখে বিরক্তিতে ছুয়ে গেল আমার। পাশের এই মানুষটাকে যেমন ভালো লাগে ঠিক তেমনি বিরক্তিটাও লাগে। পাশে বসেই বলে উঠলো,
“এখানে একা একা বসে আছো যে, বাসায় যাবা না?”
“সুপ্তিদের জন্য ওয়েট করছি।”
বলতে না চাইলেও বাধ্য হয়েই বলতে হলো। জয়, আমার ক্লাস ফ্রেন্ড। সেই কলেজ থেকেই একসাথে আছি। প্রথম প্রথম ওকে, ওর সাথে কথা বলতে ভালো লাগলেও ইদানীং খুব বিরক্ত লাগে। আমাকে যে পছন্দ করে, রিলেশনে যেতে চায়, ওর কথার মাঝেই সেটা বুঝতে পারি। যদিও মুখ ফুটে কখনো কিছু বলে নি।
প্রায় পনের মিনিট ধরে জয় আমার সাথে কথা বললেও শুধু হুম, হ্যাঁ তেই জবাব দিয়ে যাচ্ছি। তবুও কেন জানি প্রচুর বিরক্ত লাগছে ওকে। এর চেয়ে তাসফি ভাইয়ের বজ্জাত মার্কা কথাগুলো বেশ ভালো ছিলো। মনে মনে ভেবে নিলাম জয়ের কথা শোনার চেয়ে বাসায় চলে যাওয়াটাই ভালো। ওদের বরং মেসেজ করে জানিয়ে দিবো, আমি বাসায় চলে আসছি। ভেবেই উঠে দাঁড়িয়ে জয়কে বললাম,
“ওদের ক্লাস অনেক দেরিতে শেষ হবে জয়। আমি বরং চলে যাই, তুমি থাকো।”
দুই পা এগিয়ে আসতে জয় ও উঠে দৌড়ে আসলো আমার কাছে। বলে উঠলো,
“চলো একসাথে যাই, আমিও তোমার বাসার ওইদিকে যাবো।”
“না… আসলে আমি তো ফুপির বাসায় যাবো।”
আমার কথা শুনে মনে হয় একটু মন খারাপ হয়ে গেল জয়ের। হোক, তাতে আমার কি? আপতত একে পিছন ছাড়তে পারলেই আমার জন্য ভালো। কথাটা বলেই, চলে আসতে নিতেই হঠাৎ আমার হাত ধরে ফেললো জয়। চমকে উঠলাম আমি। চোখে মুখে হাজারো বিষ্ময় নিয়ে পিছন ফিরে তাকালাম ওর দিকে। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু শক্ত করে চেপে ধরায় ছাড়িয়েও নিতে পারলাম না। হালকা রাগ দেখিয়ে বলে উঠলাম,
“কি করছো জয়? এভাবে হাত ধরেছো কেন?”
“তোমার সাথে আমার কথা আছে রামিয়াত।”
“কথা বলবা ভালো কথা, এভাবে হাত ধরেছো কেন? হাত ছাড়ো জয়।”
একটু জোরে করে বলতেই হাতটা ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে আসলো আমার দিকে। রাগের মাত্রাটা যেন আরও বেরেই গেল আমার। নিজেকে কোন রকম নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। জয় বলে উঠলো,
“সরি, কিছু মনে করো না।”
“কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো, আমি বাসায় যাবো।”
“একটু ওদিকে চলো প্লিজ। এখানে এভাবে…. ”
“যা বলার এখানেই বলো, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে আমার।”
আমার কথা শুনে এদিক ওদিক একবার তাকালো জয়। বেশ কিছু সময় নিয়ে আরও একটু এগিয়ে এলো আমার দিকে। আস্তে করে বলে উঠলো,
“কথাটা আমি অনেক দিন থেকেই তোমাকে বলতে চাচ্ছি রামিয়াত, কিন্তু কেন জানি সাহস করে উঠতে পারি নি। এখন না বলেও থাকতে পারছি না।”
বলেই থামলো। আমার বুঝতে বাকি রইলো না ঠিক কি বলতে চায় জয়। তবুও শোনার অপেক্ষায় রইলাম। ওর কথার জবাবটাও মনে মনে ভেবে নিলাম। কয়েক সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আস্তে করে বলে উঠলো,
“এতদিন বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে বলে তোমাকে বলার সাহস পাই নি, কিন্তু ইদানীং কেন জানি মনে হয়ে তোমাকে হারিয়ে ফেলবো আমি। তোমাকে সেই কলেজ থেকেই ভালোবেসে ফেলেছি রামিয়াত। অনেক চেষ্টা করেও তোমার কথা মাথা থেকে ফেলতে পারি নি।”
জোরে একটা নিশ্বাস ছাড়লাম আমি। জয়ের থেকে যে এই কথাটা শুনতে হবে সেই অনেক আগে থেকেই জানি। জয় আবারও বলে উঠলো,
“আমি জানি, তোমার ফ্যামেলি তোমার পড়াশোনা শেষ না হলে কখনো বিয়ে দিবে না। আমিও খুব তারাতাড়ি নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করবো। ততদিন আমরা এভাবেই থাকবো।”
“দেখো জয়, তুমি যেটা বলছে সেটা কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি না তোমার সাথে রিলেশনে জড়াতে পারবো, আর না তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবো। আমার মাঝে শুধু ফ্রেন্ডশীপের সম্পর্ক থাকাটায় বেটার।”
“কেন সম্ভব নয়? আমি তো বললাম, খুব তারাতাড়ি তোমার যোগ্য করে নিবো। এখনো তো তোমার কাছে তিন চার বছর সময় আছে।”
“বললাম তো সম্ভব নয়, আর তোমার জন্য অপেক্ষা করতেও পারবো না।”
“প্লিজ! রামিয়াত এভাবে বলো না। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। প্রয়োজনে চার বছর আগেই তোমার বাসায়….”
বলতে বলতে আবারও হাত টেনে ধরলো আমার। সাথে সাথে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলাম। এবার যেন নিজের রাগটাকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না। বেশ জোরেই বলে উঠলাম,
“কেন বোঝার চেষ্টা করছো না জয়? বললাম তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও কেন বারবার অ*সভ্যের মতো হাত ধরে টানাটানি করছো।”
একটু থেমে বার কয়েক শ্বাস টেনে নিলাম। মিনিট দুয়েকের মতো সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলাম। আস্তে করে বললাম,
“দেখো জয়, তুমি যেটা বলছো সেটা এখন বা চার বছর পরেও সম্ভব নয়। আমার অনেক আগে থেকেই বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, সেটাও আমার ফ্যামেলির মধ্যে, ফ্যামেলির মতামতে। এবার হয়তো বুঝতে পারছে তোমার সাথে কোন সম্পর্কে জড়ানো কেন সময় নয়?”
একটু থেমে জয়ের দিকে তাকালাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যেন আমার কথারা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বললাম,
“তাসফি ভাইয়া কিছুদিন আগেই পিএইচডি শেষ করে দেশে এসেছেন, কিছুদিন পর ভার্সিটিতেও জয়েন করবে। তাহলে বুঝতেই পারছো, কেন বলছি।”
আমার কথা একেবারে চুপ হয়ে গেল জয়। এবার হয়তো কিছুটা হলেও আমার কথাটা বিশ্বাস হয়েছে। একটু চুপ থেকে আস্তে করে বলে উঠলো,
“সকালে যে তোমাকে কলেজে রেখে গেলো, উনি?”
জোরে একটা নিশ্বাস ছাড়লাম আমি। সকালে যে তাসফি ভাইয়া আমাকে কলেজে রেখে গেছেন সেটা জয় দেখেছে তাহলে। সকালে বের হবার সময় ফুপির জোরাজুরিতে তাসফি ভাইয়ার সাথেই আসতে হয়েছিলো আমার। জয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“হ্যাঁ! উনিই তাসফি ভাইয়া। আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্ব রুপেই থাক জয়। ভালো থেকে।”
কথাটা বলেই আর দাঁড়ালাম না। সোজা হেঁটে চলে আসতে লাগলাম। জয়কে যে ভালোভাবে কথাটা বোঝাতে পেরেছি এটাই অনেক।
.
গরমের উত্তাপে ঘেমে একাকার অবস্থা। বগুড়া শহরেও ঢাকার মতোই জ্যাম শুরু হয়েছে। বাইরে বের হলেই জ্যামের কবলে পরতেই হবে। স্কুল, কলেজ ও আফিস টাইমে যেন কথায় নেয়। বিশ মিনিটের রাস্তায় আধা ঘন্টার মতো জ্যামের কবলে আটকে থাকতে হয়েছে আজ। মেজাজ এমনিতেই খিটখিটে হয়ে ছিলো, তার উপর আবার আধা ঘন্টার জ্যাম।
প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে কলিং বেল দিতেই তাসফি ভাইয়া এসে দরজা খুলে দিলেন। ওনার দিকে তাকিয়ে কিছুটা আবাক হয়ে গেলাম। চোখ মুখের অবস্থা এতটা লাল কেন হয়ে আছে? কি হয়েছে ওনার? কিছু বলতে গিয়েও বললাম না। ভেতরে ঢুকে রুমে আসতেই বাঁধা দিলেন উনি। গম্ভীর গলার বলে উঠলেন,
“এত দেরি হলো কেন? কোথায় গেছিলি?”
দাঁড়িয়ে পরলাম ওনার কথায়। কোথায় গেছিলাম মানে? কেথায় গেছিলাম উনি কি জানেন না? অযথা প্রশ্ন করছেন কেন?
“কোথায় গেছিলাম জানেন না? আপনিই তো রেখে এলেন, আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
“কলেজ টাইম তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, তাহলে এত দেরি হলো কেন?”
ওনার কথায় আবারও একরাশ বিরক্তিতে ঘিরে ধরলো। দেরি তো হতেই পারে, এভাবে প্রশ্ন করার কি আছে? আশ্চর্য! বেশ জোরেই বলে উঠলাম,
“দেরি তো হতেই পারে, এভাবে বলার কি আছে?”
“কেন লেট হলো সেটা জানতে চাইছি, কথা কি কানে যাচ্ছে না? বেয়াদব!”
ধমকে উঠলেন উনি। এমনিতেই মেজাজটা খিঁচে ছিলো, তার উপর ওনার এমন ধমক দেওয়াটা যেন সহ্য হলো না আমার। বেশ জোরে করেই বলে উঠলাম,
“আশ্চর্য! এভাবে ধমকাচ্ছেন কেন তাসফি ভাইয়া? দেরি তো হতেই পারে, কাজ থাকতে পারে না আমার?”
“কি কাজ থাকে তোর? বেয়াদব!”
চিৎকার করে কথাটা বলেই ঠাস করে থাপ্পড় দিলেন আমার গালে। চমকে উঠলাম আমি, কেঁপে উঠলো পুরো শরীর। এক মুহুর্তের জন্য যেন এই আমি কেই ভুলে গেছি।
.
.
চলবে…..