তুমি হলেই চলবে পর্ব -০৭

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_7..
writer : #Mahira_Megha

রিহানাঃ ওদিকে আর্শকে দেখলাম খেলা ছেড়ে নিজের রুমে চুপচাপ বসে আছে। আমাকে বললো সব ঠিক আছে। এদিকে তুই ও চুপচাপ বসে আছিস।
নিলিমাঃ তোরা কি আবার ঝগড়া করেছিস নাকি।

রিহানাঃ আরু সত্যি বল আমার ছেলেটার সাথে আবার ঝগড়া করেছিস?

আরুহীঃ না গো আম্মু আমি ঝগড়া করিনি। বড়আম্মু তোমার ছেলের সাথে আমার কোনো ঝগড়া হয়নি। কোথায় ও একা একা বসে থাকা বের করছি আমি।
বলেই হাটা ধরলো আর্শের রুমের দিকে।

আর্শ নিজের ডায়রি টা বের করে লিখছে
” মায়া
মায়া জিনিসটা বড্ড অদ্ভূদ তাইনা
আমরা চাইলেও কারো মায়ায় পড়তে পারি না
আর একবার কারো মায়ায় জড়ালে
হাজার চাইলেও তাকে ভুলতে পারি না।”

আমায় কোন মায়ায় জড়ালি রুহি।
আর কিছু লেখার আগেই আরুহী পেছন থেকে,” আর্শ” বলে উঠে।

আর্শ নিজের ডায়রি টা লুকিয়ে ফেললো।
-হুমমম বল।
-তুই নাকি মন খারাপ করে বসে আছিস?
-কে বললো তোকে?

আরুহী কোমরে হাত গুজে, ” কে আবার বলবে আম্মু আর বড়আম্মু বললো।
-তুই আমার থেকে এত বড় একটা কথা লুকিয়ে রাখতে পারলি রুহি?

-কি লুকিয়েছি আমি! কি আবল তাবল বলছিস?
আর্শঃ তুই আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখিস নি যে তুই আরিয়ান ভাইয়াকে ভালোবাসিস?
-তুই কি ভাবে জানলি আর্শ?
-আমি তোকে শুধু মুখে না রুহি মন থেকে বেষ্ট ফ্রেন্ড ভাবি। আর তুই আমার থেকে লুকিয়ে গেলি?

আরুহী কিছু না বলে আর্শকে জড়িয়ে ধরলো।
আর্শের মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। মনে মধ্যে ঝড় ওঠেছে। হারিয়ে গেছে অনুভূতি শক্তি। ওর রুহি যে এখন অন্য কাউকে ফিল করে।

আরুহী ওকে ছেড়ে, ” তোকে কি ভাবে বলতাম আর্শ? ভাইয়া যে আমায় সহ্য করতে পারে না। বাট আমিও ছাড়ছি না ভাইয়াকে। আমি ও বেহায়া,নির্লজ্জ।

আরুহীর মুখে হাত দিয়ে, ” নিজেকে কেনো ছোট করছিস রুহি। একদম এসব বলবি না। তুই বেহায়া না তুই নির্লজ্জ ও না। তুই মিষ্টি একটা মেয়ে। খুব সহজ, যে সব সময় দুষ্টুমি করে। যার হাসি তে পুরো বাড়ি মেতে থাকে। তোর স্বভাব তো বাচ্চাদের মতো রে রুহি। ”

-ভাইয়া তো তা বলে না। ভাইয়া কেনো আমায় সহ্য করতে পারে না আর্শ।
বাট তুই কিছু ভাবিস না আমি ও আরুহী বুঝলি? এত সহজে হার মানবো না।

-তুই সত্যি কি ভাইয়াকে?

-ওহহো আর্শ ছাড়তো। চল ছাদে যায় বাস্কেট বল খেলবো।
-তুই একা যা আমি খেলবো না।
-হেরে যাওয়ার ভয়ে তাইনা?চল না আর্শ।

দুজন ছদে আসে আরুহী আকাশের দিকে তাকিয়ে,” ওই সন্ধ্যা তারা টা দেখ জ্বলজ্বল করছে।
-সন্ধ্যা তারা সব সময় জ্বলজ্বল ই করে।
আরুহী কোমরে হাত গুজে, ” মুড কিলার একটা।”

সকালে
আরিয়ানঃ আমার দরজার সামনে কি করছো আরুহী।
-তুমি তো সবটায় জানো ভাইয়া তোমাকে দেখতে এসেছি।
-শুধু মাত্র আব্বুর জন্য আমি এতদিন তোমায় সহ্য করছি। বাট তুমি আমার সহ্যর সীমা এবার অতিক্রম করে দিচ্ছো। সব সময় হ্যাংলামো করাটা কি খুব বেশি প্রয়োজন?

-হ্যাংলামো না ভাইয়া ভালোবাসা?
-জাস্ট স্যাড আপ। ভালোবাসা মাই ফুট। আমার সামনে একদম ন্যাকামো করবা না। বাড়ির সবাই তোমায় বাচ্চা ভেবে কিছু বলে না। বাট আমি জানি তুমি কেমন। ফিলিংস নিয়ে খেলতে খুব ভালোলাগে তাইনা?

আরুহীঃ আমি কেনো তোমার ফিলিংস নিয়ে খেলবো? আমি তো তোমায় ভালোবাসি।

আরিয়ানঃ আমি তো তোমায় ভালোবাসি না। তাহলে কেনো আমায় বিরক্ত করো।

– আচ্ছা বাদ দেও এসব। বলোতো আমায় এই ব্লাক শার্টে কেমন লাগছে?

আরিয়ানের প্রচন্ড রাগ লাগছে যদি ও এতখন ওকে ভালোভাবে বোঝাতে চায়ছিলো বাট এখন রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।

আরিয়ান যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো আরুহী ওর হাত ধরে ফেললো।
আরিয়ানের সহ্যর সব সিমা শেষ নিজের রাগকে কোনো ভাবেই আটকাতে পারছে না।দাতে দাত চেপে বললো,” আমার হাত ছাড়ো।”
আরুহী দুষ্টু হেসে,” ছাড়বো না। ”

কথাটা কানে আসতেই আরিয়ান আরুহীর গালে সজোড়ে থাপ্পড় দিলো। আরুহী তাল সামলাতে না পেরে পরে গেলো ফ্লোরে।
মাথা তুলে সামনে তাকাতেই কানে আসলো থাপ্পড়ের শব্দ।
আবরার থাপ্পড় মেরেছে আরিয়ানকে। আরিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিজের বাবার দিকে।
রাগান্বিত গলায় আবরার বলে উঠলো,” তুমি ঠিক আগের মতোই আছো অসভ্য ছেলে। এতদিন বিদেশে ছিলে ভেবে ছিলাম পালটে গিয়েছো। যদিও আমি মানতে চায় নি রিহানা বারবার বলাতে মেনে নিয়ে ছিলাম। বাট আমি ঠিক ছিলাম। তুমি একটু ও পালটাও নি।

আরিয়ান মাথা নিচু করে সবটা শুনছে ওর কি বলা উচিৎ তা ও জানে না। আবরার ওকে পছন্দ করে না ও জানে। বাট আজ আরুহীর জন্য ওর জন্য যেটুকু ভালোবাসা ছিলো তাও শেষ হয়ে গেলো।

আরুহীঃ বড়আব্বু ভাইয়ার কোনো দোষ নেই আমি ওকে বিরক্ত করছিলাম। সব দোষ আমার।

-তুমি তো আর্শকেও বিরক্ত করো। বাট কই ও তো তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করে না।

আরুহী কান্না করে বড়আব্বু প্লিজ ভাইয়াকে কিছু বলো না। সব দোষ আমার। আরিয়ান আরুহীর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো। নিলিমা খেতে ডাকলেও না খেয়ে চলে গেলো।

আরুহী নিজের রুমে এসে কাঁদছে। ওর পাগলামির জন্য আজ আরিয়ান কষ্ট পাচ্ছে।

গাড়িতে বসে কাঁদছে আরিয়ান লাইফে 2nd টাইম কাঁদছে।

আরুহীঃ সরি ভাইয়া আর কখনো তোমায় ডিস্টার্ব করবো না। আমার একটা ভুলে তোমাকে বড়আব্বু আবার দূরে ঠেলে দিলো। কথাটা বলেই কান্না করে যাচ্ছে আরুহী।
কলেজ এসেও অন্য মনস্কো হয়ে আছে আরুহী। কানে বাজছে একটাই কথা, ” তুই মেয়ে না আরুহী তুই পাথর। মেয়ে দের নরম একটা মন থাকে যা তোর মাঝে নেয়। তোর এই ছেলে ছেলে ড্রেস আর বিহেভ তোকে মেয়ে হওয়া শর্তেও পাথরে পরিনত করেছে।

চলবে…..

( বড় লোক বাবার বখাটে ছেলে যখন কোনো মেয়ের পেছনে পাগলের মতো ঘোরে তখন কারো কোনো প্রোবলেম হয় না। বাট আরুহী মেয়ে হওয়ায় সবার খারাপ লাগছে। একটা মেয়ে হয়ে এতো নির্লজ্জ হওয়া ঠিক না।

আরুহী ওর ফ্যামিলির কাছে স্পেশাল। ওকে কেউ কখনো শাসন করে নি। ইভেন একটা মেয়ে সব সময় ছেলেদের পোষাক পরে থাকে,পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলে, রাস্তায় গুন্ডামি করে তারপর ও ওকে কেউ কিছু বলেনি।এ রকম একটা মেয়ের কাছে কি আশা করা যায়। ছেলেমানুষি, বেহায়াপনা এসবই তাই তো? পরিস্থিতি, সময় মানুষকে পাল্টে দেয়।

আর যদি ভালোবাসার কথা বলি তাহলে ভালোবাসা অন্ধ হয়। আর ভালোবাসায় যদি পাগলামো না থাকে, তাকে দেখে যদি মনের মাঝে মুগ্ধতা না জাগে, তাহলে কিসের ভালোবাসা?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here