তুমি হলেই চলবে পর্ব -১৫

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_15
writer : #Mahira_Megha

আরুহী দৌড়ে গিয়ে একটা মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদছে। মেয়েটা কিছু বুঝতে পারছে না। আরুহীকে দুহাত দিয়ে সরিয়ে মুখের দিকে তাকালো। আরুহীকে দেখে মেয়েটার চোখেও পানি চলে আসলো। মেয়েটা অস্পষ্ট সরে বলে উঠলো,” আরুহী”।
আর্শ আরুহীর সামনে দাড়িয়ে, ” কি হয়েছে রুহি কাঁদছিস কেনো? ”

মেয়েটি আর্শ বলে উঠলো । আর্শ পেছনে তাকিয়ে, ” সিথি তুই। ”

আরুহী ওদের কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে, ” তুই কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি সিথি। তুই তো জানিস আমি পাগল। ভুল করেছি তাই বলে এই ভাবে চলে আসবি? ”

-সেদিন আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো আরুহী। তোরা দুজন ছাড়া তো আমার আর কেউ ছিলো না। বাট তুই,,,

আরুহী সিথির হাত ধরে আমায় ক্ষমা করে দে সিথি। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
আর্শঃ আরুহী সত্যি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে রে । ও অনেক গিল্ট ফিল করছিলো।

সিথি মুখে হাসি এনে, ” ক্ষমা করতে পারি যদি তোদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়াস।”
তিনজন ই হেসে দেয়।
সিথিঃ আরুহীর কাপড়! পুরো মেয়ে লাগছে তোকে আরুহী।
-হুমমম আমি আর সেই আরুহী নেই বুঝলি। সময়ের সাথে আমার লাইফে অনেক কিছু পাল্টে গেছে।

আর্শ রাগি চোখে তাকিয়ে , ” রুহি একদম বাজে কথা বলবি না । তোর মুখে যদি কখনো আর একটাও বাজে কথা শুনি তাহলে,,,,

আরুহী কোমরে হাত দিয়ে বল তাহলে কি?

আর্শঃ আমি আর সিথি তোর সাথে কথা বলবো না যা।

আর্শঃ কিরে যাবি না তুই।
আরুহীঃ তুই আর সিথি যা আমার ভালো লাগছে না। মাথা ব্যাথা করছে।

-তাহলে আমরা ও যাবো না।
-কেউ যদি না যায় ওরা মন খারাপ করবে। আমাদের কেউ ফাস্ট টাইম ইনভাইট করলো যাওয়া উচিৎ। তোরা যা আমি একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবো।

আর্শ প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে গেলো, ” নিজের খেয়াল রাখিস। আর কোনো প্রয়োজন হলে সাথে সাথে ফোন করবি।

-ওকে বাই।

একটু পর

আরুহীঃ ধুর এই মাথা ব্যাথাটাও না। এতখন মাথা তুলতে পারছিলাম না আর এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।
কেনো যে গেলাম না। এখন বোর লাগছে।

আরুহী রুমের মধ্যেই পায়চারি করছে। হাটতে হাটতে আর্শের রুমে গেলো আর্শের টেবিলের একটা কোনায় নীল রংয়ের ডায়রি দেখতে পেলো। ডায়রি টা হাতে নিলো প্রথম পেজে বড় করে রঙ্গিন কালিতে লেখা তুই হলেই চলবে।

আরুহীঃ এটা কি ঠিক হচ্ছে আর্শের হয়তো পার্সোনাল ডায়রি এটা।
আবার একটু ভেবে তাতে কি। আর্শের ডায়রি আমি দেখতেই পারি।
পরের পেজে গেলো খুব সুন্দর করে লেখা

” এ কোন হাওয়া লেগেছে গায়ে
সবটা যেনো রঙ্গিন লাগে।
চারদিকে শুধু প্রজাপতির রং
নেই কোনো কষ্ট নেই কোনো ভয়।
সবটা যেনো স্বপ্নের মতো
জানি না ওই হাসিটা কেনো মিষ্টি এতো।
চাইনা বেশি কিছু এই জীবনে
আমার তো শুধু তুই হলেই চলবে।”

এটুকু পরে হাসছে আরুহী, ” আরে বাহঃ আর্শ যে এত রোমান্টিক আগে তো জানতাম না। আর্শের এই গুনটা আগে কেনো দেখিনি আমি।

পরের পেজ উল্টাতেই
” তোর চুলের গন্ধে মেতেছি আমি
হাসিতে গিয়েছি আটকে।
তোর দুষ্টুমি ভরা মুখটার
মায়ায় গেছি হারিয়ে।”

কেনো তুই আমার সামনে থাকলে আমার এত ভালোলাগে বলতো? তোকে কি আমি ভালোবেসে ফেলেছি?

আরুহী মুখে একটা দুষ্টু হাসি এনে, ” ভালোবাসা”। তারমানে আর্শ কাউকে ভালোবাসে।
পরের পেজ উল্টালো এক এক করে সব গুলো পেজ দেখছে মুহূর্তেই আরুহীর চোখে পানি চলে এলো।

আরুহী আর আরিয়ানের বিয়ের আগে কেনো আর্শ এমন বিহেভ করছিল আরুহীর বুঝতে আর বাকি নেই।

-তুই আমায় এতটা ভালোবাসিস আর্শ। তাহলে কেনো বলিস নি আমায়। আমি ও কতটা পাগল না তোকে বুঝতেই পারিনি। বাট আমি যে আরিয়ান ভাইয়াকে,,,
আমি কিছু বুঝতে পারছি না আমি কি করবো। কি করা উচিৎ আমার। একদিকে তুই আর এক দিকে আমার ভালোবাসা।

4 বছর পর
দেশে ফেরে আরুহী। আর্শ এক মাস পর বাড়ি ফিরবে।

বাড়ি ফিরে সবাইকে দেখে আরুহী ভীষন হ্যাপি। বাট ওর চোখ এখনো আরিয়ান কেই খুজছে। আরিয়ান সামনে আসতেই বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠলো। এই একটা মুখ আরুহীকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। এই একটা মুখের মায়া আজ ও কাটাতে পারেনি আরুহী।

আরিয়ানের সামনে গিয়ে, ” কেমন আছো ভাইয়া।”

আরিয়ান ওর দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে ভালো আছি তুমি কেমন আছো?
-যেমন থাকার কথা।

সেদিন আর কোনো কথা হয়নি ওদের।

আরুহী নিজের রুমে এসে পুরোনো সৃতি গুলো ভাবছে,” কতটা পাগলামি করেছি ভাইয়ার জন্য। এত কিছু না করলেও পারতাম। আমি কি ভাইয়ার থেকে শুনবো সেই মেয়েটা কে ছিলো। ঠিক হবে আমার বলা টা।”

সেদিন যখন জানলাম আর্শ আমায় ভালোবাসে। কি করবো কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। সময়ের হাতে সবটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আর সময় আমাদের গুছিয়ে দিয়েছে। আমি আজ ও আর্শের সেই বেষ্ট ফ্রেন্ড।ওকে আমি এখনো বুঝতে দেয় নি যে আমি সবটা জেনে গেছি। ”

কয়েক দিন পর

নিলিমাঃ এসে থেকে দেখছি মুখে হাসি নেই। কি হয়েছে তোর বলতো?
আরুহী নিজের মনেই হারিয়ে গেছে, ” আমি ও তো বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে আমার। আমি কি আর্শকে মিস করছি নাকি? ভাইয়ার থেকে দূরে ছিলাম তখন আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। বাট সব কিছুর মাঝে আর্শ আমাকে হাসাতো ওর সাথে থাকলে আমি সব কষ্ট ভুলে যেতাম। বাট আজ যখন কিছু সময়ের জন্য আর্শ আমার সাথে নেই আমার এমন কেনো লাগছে? মনে হচ্ছে সবটা যেনো ফাকা। ভাইয়ারা সবাই কত মজা করছে ভাবি রা ও তো এসেছে এতদিন আম্মু বড়আম্মুদের কত মিস করতাম। বাট আজ ওরা সবাই আছে। শুধু আর্শ নেই তাতেই আমার এতটা কষ্ট লাগছে।
তাহলে কি আর্শ আমার অভ্যাস এ পরিনত হয়েছে? কোনোদিন ওকে ছাড়া থাকিনি বলে কি আজ আমার এমন ফিল হচ্ছে ? নাকি আমি আর্শকে ভালোবেসে ফেলেছি।

রিহানাঃ আবার কোথায় হারালি বলতো? এই আরু।
– না না কিছু না। আমি ওপরে যাচ্ছি।

রুমে এসে আর্শকে ফোন করলো বাট আর্শের ফোন অফ। সিথিকে কল করলো সিথি বললো আর্শ ওর সাথে নেই।

আরুহীর মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। বেলকুনিতে এসে আরিয়ানকে দেখতে পেলো।
মন দিয়ে খুটিয়ে দেখছে আরিয়ানকে। বাট অদ্ভুদ ভাবে আজ ওর জন্য কোনো ফিলিংস কাজ করছে না। শুধু আর্শের কথা মনে পরছে।

আরহানঃ আরু মা তোমায় দেখতে আসবে আমার বন্ধুর ছেলে। খুব ভালো ছেলে। আমার আর আবরার ভাইয়ার খুব পছন্দ হয়েছে।

– বাট আব্বু,,,

– দেখো তুমি আরিয়ানকে ভালোবাসো এটা জানার পর তোমাদের বিয়ে ঠিক করেছিলাম বাট তুমি বিয়ে ভেঙ্গে চলে গিয়েছিলে কারন টা কি আমরা কেউ জানি না।
তাহলে আমাদের কথায় তুমি ওদের সামনে যেতে পারবে না?

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here