তুমি হলেই চলবে পর্ব -১২

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_12
writer : #Mahira_Megha

আরহানঃ কি বললি আরু!
আরুহীর মুখ চুপসে গেছে। ও আরিয়ানকে ভালোবাসে এটা শোনার পর ওদের রিয়েক্ট কেমন হবে জানে না আরুহী।
আবরারঃ তুই আরিয়ান কে ভালোবাসিস?
মাথা নিচু করে চুপ হয়ে আছে আরুহী। আবরার আবার বললো আমি সত্যিটা জানতে চায় আরু। তুই কি সত্যি আরিয়ানকে ভালোবাসিস?
আরহানঃ চুপ করে কেনো আছিস বল।

আরুহী কাপা কাপা কন্ঠে বলে উঠলো,” হ্যাঁ আরিয়ান ভাইয়াকে ভালোবাসি।

আবরার জোড়ে হেসে দিয়ে, ” আরহান তোর মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে। আমার ছেলেটাকে ভালোবাসে বলছে।”

আরিয়ানকে ডাক দেয় আবরার। দাড়াতে বলে আরুহীর পাশে। আরিয়ানের মাথায় কিছু ঢুকছে না। চুপচাপ আরুহীর পাশে দাড়ায়।

রিহানাঃ বাহঃ ওদের তো খুব মানিয়েছে।কিরে আরু বিয়ে করবি আমার ছেলেকে?
সবাই হাসছে। লাইফে প্রথমবার আরুহী লজ্জা পাচ্ছে। আরিয়ান কি বলবে বুঝতে পারছ না। সবটা যেনো মাথর ওপর দিয়ে যাচ্ছে।

আর্শ নিজের মধ্যে নেই। বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের কানকে। চারদিক যেনো ধোয়াশা। কোনো কথা ওর কানে যাচ্ছে না। বার বার আরুহীর ডাক কানে আসছে, ” এই আর্শ স্কুলে যাবি না। আর্শ খেলার মাঠে চল। তানিয়া মুনিয়া আমার আর্শের দিকে একদম তাকাবি না। ”
হাজারো সৃতি মনে পরছে ওর সবাই ছাদ থেকে নেমে গেলেও আর্শ যায় নি। হাটু গেড়ে বসে কান্না করছে ও। পৃথিবী যেনো থমকে গেছে। কি করে থাকবে রুহিকে ছেড়ে জানে না ও।

সবার ডাকে নিচে আসে। আরুহীর মুখে হাসি দেখে নিজের সব কষ্ট ভুলে যায় ও। এই হাসি টা যে ওর কাছে খুব দামি। আরুহীর খুশির জন্য ও সব করতে পারে।

আরুহী নিজের রুমে স্লো মিউজিক শুনছে। সবটা ফ্যান্টাসি লাগছে ওর কাছে। নানা রকম পাগলামি করছে ও। কখনো হাসছে তো কখনো স্লো মিউজিকে নাচছে। ও কি করছে নিজেই জানে না। মনের মধ্যে গিটার বাজছে।

আরিয়ান বেলকুনিতে দাড়িয়ে চাঁদ দেখছে। চোখে পানি বাট চোখ বেয়ে পড়তে দেয় না একটা ও ফোটা।
আরিয়ান চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলছে, ” কি করবো আমি। আমার কি ঠিক হবে আরুহীকে বিয়ে করা। আমি ওকে ভালোবাসি না। বোন ভেবে এতদিন মিশেছি ওর সাথে। বাট পরিবারের সবার খুশিটা আমার জন্য আবার যদি ভেঙ্গে যায়। না আর না। আমি আর কারো খুশি কারবো না কখনো না।

আর্শ কাঁদছে। কান্না যেনো থামছেই না। ডায়রির পাতা ভিজে যাচ্ছে। শুধু তো একজনকেই চেয়েছিল তাহলে কেনো আল্লাহ দিলো না। কেনো আল্লাহ কেড়ে নিতে যাচ্ছে আরুহীকে। আর 7 দিন তার পর সব শেষ হয়ে যাবে। আরুহী ভাইয়ার হয়ে যাবে। আমি আর ওর মায়া ভরা মুখটার দিকে তাকাতে ও পারবো না। ও যে তখন আমার বড় ভাইয়ের হয়ে যাবে। তখন যে ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড না আমার ভাবি হবে।

” এ কেমন ভালোবাসা
যা শুধু কষ্টই দেয়।
দূর থেকে ও তো ভালোবাসা যায়
তাহলে আমার ক্ষেত্রে এমন কেনো?
দূর থেকে ভালোবাসা টাও যে পাপ আমার জন্য।
আমি তো শুধু তোকেই চাইতাম
আমার তো শুধু তুই হলেই চলবে।
তাহলে কেনো তুই আমার হলি না।”

বাদ দে সব
আমি সারাজীবন তোকে হ্যাপি দেখতে চেয়েছিলাম।
আজ দেখেছি তুই কতটা হ্যাপি। আমি আমার ভলোবাসা না পেলাম তুই তো পেয়েছিস এটাই অনেক।
তোর সুখের জন্য আমি তোকেই ছেড়ে দিলাম রুহি।

তুই আমার সবেতেই আছিস
শুধু ভাগ্যে নেয়।

পুরো বাড়ি ঝলমল করছে সবাই মুখে খুশির ঝলক।
আরুহী আর্শের মামা মামি সবাই এসেছে। সব কাজিন রা এসেছে। বাট সবাই ছেলে কারন ওদের ফ্যামিলিতে একটা মাত্র মেয়ে আরুহী।
সবাই মিলে শপিং করছে শুধু আর্শ নেই। আর্শ আরুহীর আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিলো স্টাডির জন্য বাট আরুহীর বিয়ে ঠিক হওয়ায় ও যাবে না।
আর্শ ওদের গায়ে হলুদের দিন রাতে চলে যাবে আমেরিকা। ডেট এগিয়ে নিয়েছে ও কারন ওর ক্ষমতা নেই আরুহীর বিয়ে নিজের চোখে দেখার।

আরুহী মুখে একরাশ হাসি নিয়ে, ” সারাদিন কোথায় থাকিস বলতো? ” কথাটা বলে আর্শের দিকে তাকালো কেমন যেনো অগোছালো হয়ে গেছে আর্শ। চোখ ছোট করে আবার বলে উঠলো,” হারিয়ে গেছিস কোথায়? ইগনোর করছিস আমাকে? পালাতে চায়ছিস?”

আর্শ একটা ফেক হাসি এনে, ” কি পাগলের মতো বলছিস? আবল তাবল। তোর থেকে পালাবো কেনো? আর আমি তোকে ইগনোর করছি তাই না! তুই তো সময় ই পাস না। ভাইয়াদের সাথে তো জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিস। সবার চোখের মনি তো তুই। ইয়োগ ভাইয়া ইথেন ভাইয়া,,,,
আর কিছু বলতে না দিয়ে আরুহী বলে উঠলো,” তাহলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল। চোখ মেলাচ্ছিস না কেনো। আমি তোকে খুব ভালো করে চিনি। কিছু তো একটা হয়েছে তোর আমি ধরতে পারছি না।”

আর্শঃ এসব রোমান্টিক কথা আমাকে না ভাইয়াকে গিয়ে বল। আমি নাকি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবো।

আরুহীঃ কথা এড়াচ্ছিস?
আর্শের কাছে কোনো উত্তর নেয়।
আরুহী ওকে আর কিছু বলবে তার আগে টেনে নিয়ে গেলো ইয়োগ। নাবিদ ওদের সাথে দেখা করতে এসেছে।

আরুহী নাবিদকে দেখে, ” কেমন আছো ভাইয়া। ”
নাবিদ হেসে,” আমার জীবন ধন্য হয়ে গেছে, আরুহী আমায় ভাইয়া ডেকেছে।
কথাটা কানে আসতেই, ওহহো চুপ করো তো।
ইয়োগঃ আমাদের আরু তো এখন লজ্জা ও পাই।
ইথেন ইয়োগ হাইফাই দিলো।
নাবিদ আরুহীর কানের কাছে এসে, ” এই জন্য তুৃই আমার কাছে আরিয়ানের অতীত জানতে চেয়েছিলি তাই না? মনে মনে খিচুড়ি পাকাচ্ছিলি।

আরুহী কিছু বলার আগেই আরিয়ান এলো।নাবিদ কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।

নাবিদঃ কিরে এভাবে টেনে নিয়ে আসলি কেনো? আরুহীকে বিয়ে করছিস তুই। বাচ্চা মেয়েটা কত বড় হয়ে গেলো তাই না। কয়দিন আগেই আমাকে তুই করে বলতো, গায়ে কালি ছুড়ে পালিয়ে যেতো আর 3 দিন পর তোদের বিয়ে ভাবা যায়।
নাবিদ আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখটা মলিন হয়ে আছে আরিয়ানের।
-কি হয়েছে তোর এরকম মুখ করে কেনো আছিস। ঠিক আছিস তুই?
-নাবিদ আমি আরুহীকে আমার বোন ভাবি। ওকে কখনো আমি অন্য কোনো ভাবে দেখিনি।
নাবিদ হেসে, ” তাতে কি হয়েছে। বিয়ের পরে ঠিক ভালোবাসা হয়ে যাবে।
আরিয়ান মাথা নিচু করে, ” হবে না নাবিদ। আমি যে এখনো 10 বছর আগেই আটকে আছি। আমি সবাইকে দেখিয়েছি মুভ অন করেছি। বাট সত্যি তো এটাই আই এম স্টিল দেয়ার। আমার ফিলিংস টা এখনো একটু ও পাল্টায় নি। আমি জানি না আমি কি করবো। আরুহী আমার আর আব্বুর মাঝের সব দূরত্ব কাটিয়ে দিয়েছিলো। আমি থ্যাংকফুল ছিলাম তাই ওর সাথে মিশতাম। কেয়ার করতাম। এর থেকে বেশি কিছু না। আই স্টিল লাভ আদ্রিতা।

আদ্রিতা নামটা উচ্চারন করার সময় আরিয়ানের মাঝে নাবিদ সেই ফিলিংস সেই পাগলামি টা দেখতে পেলো যা আগে পেতো।
নাবিদ রাগি গলায় বলে উঠলো,” আদ্রিতা! আরিয়ান ও তোকে ঠকিয়েছে। তোর ফিলিংস নিয়ে খেলেছে। ওর কাছে তুই টাইম পাস ছিলি। তাই ছেড়ে দিয়েছে তোকে। সেই মেয়েটাকে তুই ভালোবাসিস যার জন্য তুই নেশার পথ বেছে নিয়েছিলি। সেই মেয়েটার কথা এখনো ভাবছিস যার জন্য তোর ফ্যামিলি তোকে দূরে রেখে ছিলো। তোর সাথে আংকেল দশ বছর কোনো কথা বলে নি আরিয়ান। তাকেই তুই ভালোবাসিস বলছিস।

আর আরুহী যে তোকে সব ফিরিয়ে দিলো। যে মেয়েটা তোকে ভালোবেসে এতটা পাল্টে গেলো। শুধু নিজের ড্রেসআপ না আরুহী নিজেকে ও পাল্টে নিয়েছে শুধু তোর জন্য। তোর হাজার অপমান সহ্য করে তোর দরজার সামনে দাড়াতো তোকে একবার দেখবে বলে। তুই তার কথা একবার ও ভাববি না আরিয়ান।

আরিয়ানঃ আমি আরুহীর কথা ভাবছি বলেই এসব বলছি। যে আমায় এতটা ভালোবাসে তাকে আমি কোনো দিন ভালোই বাসতে পারবো না। আরুহী কষ্ট পাবে আমার সাথে থাকলে। কোনো দিন হ্যাপি হতে পারবে না। আমার মনে যে শুধু

আর কিছু বলতে না দিয়ে নাবিদ বলে ওঠে,” না আর একবার ও ওই বেইমান স্বার্থপর মেয়েটার নাম নিবি না। তোকে পারতেই হবে। ওকে ভুলে আরুহীকে ভালোবাসতেই হবে। তোর নিজের জন্য না হলেও আরুহীর জন্য তোর ফ্যামিলির জন্য তোকে পারতেই হবে।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here