তুমি হলেও চলবে পর্ব ১

ঠাসসসসসসস্ করে চেপে ধরাতে প্রচণ্ড ব্যথা লাগছে।আমি শুধু উম্ উম্ সাউন্ড করেই চলেছি।ভার্সিটির প্রথম দিনই সট টাইম কিডন্যাপিং এর মত মারাত্মক ব্যাপার ঘটেছে আমার সাথে।অবাক লাগার ব্যাপার নয় কি??আজ সকাল থেকেই আজগুবি জিনিস হচ্ছে। বুঝে উঠতে পারছি না কি হচ্ছে আমার সাথে আমি আয়ানা হায়াত। একটা রুমের সামনে দিয়ে যেতেই কেউ আমার মুখ চেপে ধরে হাতগুলো নিজের মুঠোয় আবদ্ধ করে ঠাসস করে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে।কি ভয়ংকর ব্যাপার!! ভাবা যায়??ঘুটঘুটে অন্ধকার রুম কেমন যেন গা শিউরে উঠা টাইপ অবস্থা। অন্ধকারে কিডন্যাপারের মুখও দেখা যাচ্ছে না।হায় আল্লাহ আমার এখন কি হবে?মন চাচ্ছে কিডন্যাপারের হাতে কামড় দি কিন্তু তাও দিতে পারছি না।আচ্ছা কিডন্যাপার ছেলে না কি মেয়ে? এই মহান ব্যাপারটা আমার মাথায় এত সময় পরে এল?হাতগুলো যেভাবে ধরে রেখেছে এতে করে সন্দেহ নেই যে এটা একটা ছেলের হাত।কিন্তু আমার সাথে এর কি শত্রুতা থাকতে পারে? আল্লাহ মালুম।এ জীবনে আমার তো একটাই ছেলে শত্রু যে কিনা বিগত ৩ বছর থেকে গায়েব।সো এটা কে হতে পারে।ইশশশশ মাথার ভিতরে সব জগাখিচুড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু একটাও বেস্ট আনছার আসছে না?এখন লোকটা আমাকে কি করবে?বাংলা সিনেমার মত রেপ করবে না তো??আল্লাহ। না কি তুলে নিয়ে বিয়ে করবে?? কিন্তু বিয়ে করার হলে বাপ মারে বল?এভাবে সট টাইম কিডন্যাপিং এর মানে কি??শুধু শুধু বাচ্চা হার্ড টারে কষ্ট দেওয়া।সামনের ব্যক্তির ঘন নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পরছে। কেমন যেন অসস্থি কর ব্যাপার।ছিই.. তার মুখটা একদম আমার মুখের সামনে। কিন্তু আমি একদম চিন্তে পারছি না।
.
.
হঠাৎ কিছুসময় পরে সে আমার দেওয়ালে আটকে থাকা হাত গুলো সামনে এনে একটা হাত ছেড়ে অন্য হাতটা ধরে রাখে। একটা হাত ছাড়া পেতেই আমি প্রানপন চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি মুখের হাতটা সরাতে কিন্তু হাতটা এত শক্ত ভাবে আমার মুখ আকড়ে ধরেছে আমি বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। এখন আমার খুব কান্না পাচ্ছে। একদম হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।সামনের ব্যক্তি আমার মনের কথা বুঝতে পরেই হয় তো আমার ডান হাতটা প্রচণ্ড রুডলি কামড়ে ধরে আছে।আমি প্রাণপণ ইচ্ছা পৌষন করছি চিৎকার করার কিন্তু পারছিনা।আমি চিৎকার করতে না পারলেও আমার চোখগুলো আমার ব্যথার আতর্নাদ পানির মাধ্যমে প্রকাশ করছে।চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে।সামনের হার্ড লেস টাইপের লোকটা এখনও ছাড়ছে না।আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে।বাবা মায়ের একমাএ মেয়ে হিসেবে কেউ কখন আমাকে এভাবে ব্যথা দেয়নি। তাই এই ব্যথাটা প্রচণ্ড তীব্র ভাবে অনুভব হচ্ছে।
.
.
এই হাত দিয়েই ত ফুল ছুঁয়ে ছিলে তাই না??
.
.
আর কিছু বুঝার বাকি নেই আমি মনে মনেই আওড়াতে লাগলাম আযমান ভাই…..
.
.
হুম ঠিক ধরেছ।আমিই।তুমি কি মনে করেছ তিন বছর ছাড় দিয়েছি মানে সব সময় দিব নাকি?অনেক হয়েছে।আর না। শুধু ফুল ছুঁয়েছ বলেই হাতের এই অবস্থা যদি নিতে তবে কি হত? আসা করি বুঝে গেছ।
.
.
কথাগুলো বলেই গটগট করে আমার সামনে থেকে চলে গেলেন। আর আমি নিচে বসে হাতের ব্যথায় কান্না করেই চলেছি।আজ সকালটাই খারাপ ছিল।ভার্সিটির প্রথম দিন তাই আমি আর দিল মানে আমার বেস্টু একসাথে ভার্সিটিতে ডুকেছি।হঠাৎ একটা ছেলের সাথে বেসামাল ভাবে ধাক্কা লেগে যায়।আমি সরি বলেই সরে আসতে যাবো তার আগেই ওই পোলা আমার দিকে হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠে পাচঁ মিনিট দাঁড়াবে প্লিজ। কেমন লাগে তখন?মেজাজটাই বিগড়ে গেল।কেনো গো আমাকে কি এানের বস্তা দিবেন।একবার চেয়েছি বলতে কিন্তু তা আর বলা হয়ে উঠে নি তার আগেই সেই ব্যক্তি বেক করে এসে আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে প্রপোজ করে দিল।হায় আল্লাহ..মন তো চাই ছিল ঠাটাইয়া একটা দিয়ে কানের বাশি পাটায় দিতে কিন্তু তাও করলাম না।হাতে একগুচ্ছ গোলাপ দেখে একটু গোলাপ গুলো ছুঁয়ে দিয়ে ছিলাম।ছোটো থেকেই ফুলের প্রতি এক প্রকার মাদকতা বিরাজ করে আমার মনে কেমন যেন টানে আমাকে ফুলেরা আর তাই ফুলগুলো ছুঁয়ে দিয়ে ছিলাম।আমি কি জানতাম এটা আমার কাল হবে।যাই হোক ওনাকে আম জাম বুঝিয়েই দিলের হাত ধরে নাচতে নাচতে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। প্রথম দিন ভার্সিটি সেই একটা ফিলিংস। দিলের এক বড় আপু এই ভার্সিটিতেই পরে তার ডাক পড়ায় সে আমাকে একটা রুমের সামনে দাড়া করিয়ে চলে যায়।আমি কি জানতাম নাকি ওনি এখানে আছে তবে তো জীবনেও দাড়াতাম না।বাকিটা সবারই জানা।
.
.
.
আযমান ভাই যাকে বলে আমার জম।শালা সেই ছোট থেকে জীবনটা কয়লা কয়লা করে ফেলেছে।কিন্তু ভাগ্য ক্রমে তিনি বিগত তিন বছর গায়েব ছিল।এবার সে জমের পরিচয় তো দি।আযমান ভাই বাবার ওয়ান এন্ড অনলি জানের জিগারের পোলা। মানে বাবার বন্ধুর ছেলে।বাবার বন্ধু একজন সচিব সাথে দেশের নাম করা বিজনেসম্যান। কবে থেকে তাদের বন্ধুত্ব আমার জানা নেই তবে জন্ম থেকেই তাদের একমাএ কলিজার টুকটা পোলা আমার জীবন টুকরা টুকরা করে দিয়েছে।সে এক ভয়ঙ্কর ইতিহাস।কিন্তু আমার মাথায় এটা আসছে না।ওনি বুয়েটের স্টুডেন্ট হয়ে আইবিএতে কি করে।আমার মাথা নষ্ট করাই ওনার কাজ।
.
.
.
আমি আর দিল বিখাত বেস্টু… যাকে বলে স্কুল কলেজ কাঁপানো।চার বছরের বন্ধুত্বে আমরা স্কুল কলেজে খুবই জনপ্রিয় ছিলাম।কপাল ভালো একই ভার্সিটিতে চান্স পাইয়া একসাথে পড়ার সুযোগ পেয়ে গেছি।আমি আর দিল ক্লাসের এক কোনে গুটিসুটি মেরে বসে আছি।প্রথম ক্লাসের যে ফিলিংস নিয়ে সকালে ভার্সিটিতে প্রবেশ করেছিলাম তা এখন শূন্যের কোঠায়।একই টেবিলে বসে আছি দুজন তবে এক দম লাস্ট টেবিলে।আমরা বিগত বছর গুলতেও সুপারগ্লুর মত একসাথে লেগেই বসে ছিলাম।দিলকে এখন আমার প্রচণ্ড রাগ লাগছে।কচুর মাইয়া সে কখন থেকে আমার হাত নিয়া নাড়াচাড়া করেই চলেছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সেরা গবেষক। আর সে পৃথিবীর সেরা জিনিস আমার হাত নিয়ে গবেষণা করেই চলেছে।তার কারনও আছে যুক্তি যুক্ত। দিল আমার হাতের রক্ত আর কামড়ের দাগ নিয়ে গবেষনা করছে।তার মনে হাজারো প্রশ্ন। প্রথম প্রশ্নই হল…আমার মত এত বড় মেয়েকে কিভাবে একটা বাচ্চা কামড়ে চলে গেল…আর ২য় প্রশ্ন ভার্সিটিতে বাচ্চা কোথা থেকে এল??কিন্তু তাকে যে কিভাবে বলি বাচ্চা না জম এসেছে জীবন ডারে তেজপাতা বানায়তে।দিল প্রচণ্ড টেনশনও আছে। সাথে আমিও কিন্তু দুজনের টেনশনের কারন ভিন্ন। দিলের টেনশনের কারন হল আমার হাতে না জানি ইনফেকশন হয়ে যায় কি না আর আমার টেনশন হচ্ছে আযমান ভাই যদি কাবির সিং এর মত টেরেরেং রেং রেং করে হঠাৎ ক্লাসে ডুকে পরে।আর তাকে দেখে যদি সবাই দাড়িয়ে যায়। আর ওনি যদি চোখ লাল লাল করে আমার সামনে এসে টেবিলে হাত দিয়ে ডাশ ডাশ করে বারি দিয়ে বলে উঠে…..
.
.
হেই ইউ স্ট্রের্ন্ডাপ
.
আমিও কাচুমাচু করে দাড়িয়ে পড়লে ওনি আবার বলে উঠবে…..
.
আমার পিছনে পিছনে আস..
.
শেষ আমি তো শেষ। কাবির সিং না জানি তার নায়িকা.. কি যেন নাম… দূর কচু প্রয়োজনের সময় সব ভুলে যাই… যাই হুক ওই নায়িকার নাম মনে নেই…নায়িকাকে তার সাথে নিয়ে যেত পড়াতে আর প্রেম টেম করতে।কিন্তু আযমান ভাই তো আমার বারোটা আর তেরোটা ছাড়া কিছুই পারেনা বাজাতে।নিশ্চুই আমাকে শায়েস্তা করতেই নিয়ে যাবে।আল্লাহ আমি তোমার অধম বান্ধা আমাকে বাচাও……………🍁
.
.
.
আল্লাহ সত্যিই এই যাএরায় বাচিয়ে দিয়েছে।আযমান ভাইকে আমি আর দেখলাম না।ক্লাস শেষ।কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য একটা ক্লাসেও আমরা মনযোগ দিতে পারলাম না।যদিও আমরা ফিন্যান্স ক্লাস বাদে অত মনযোগ দিয়ে কোনো ক্লাস এ জীবনে করেছি বলে তেমন মনে হয় না।তবুও আজকে কত শখ ছিল মনযোগ ডেলে দিয়ে ফার্স্ট ক্লাস করব।কিন্তু ফলাফল শূন্যে। যাই হো আল্লাহ ভালোয় ভালোয় বাসায় পৌছে দিলেই বাচি।আমি আর দিল কথা বলতে বলতে গেটের দিকে যাচ্ছিলাম।কিন্তু হঠাৎ মাঠের অপর প্রান্তে একরা বিশাল বটগাছকে ঘিড়ে সবাই দাড়িয়ে আছে।একপ্রকার জটলা পাকিয়ে।কি এমন হচ্ছে যা এত আগ্রহ নিয়ে দেখতে হচ্ছে।আমাদেরও প্রবল আগ্রহ জাগছে।আর তাই এগিয়ে গিয়ে ভিড় ডেলে ভিতরে ডুকতে আমি তো শিহরিত…. আল্লাহ এটা কি দেখছি।মাথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে। একদম ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে।যা আমাকে বার বার ৮ নাম্বার বিপদ সংকেত দিচ্ছে। যে আমি যে কোনো সময় দাপাসসস করে সেন্সলেস হয়ে পরে যেতে পারি।দিল বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে……..
.
দোস্ত এটা ওই আহাম্মক না… যে কিনা ভার্সিটির ভিতরে পা রাখতে না রাখতে তোকে প্রপোজ করে দিলল!!কিন্তু এইডারে এভাবে ঝুলিয়ে কে রাখছে…
.
.
আমি শুধু চোখ ফাটা ফাটা করে তাকিয়ে আছি।সত্যিত কে ঝুলালো??তাও এত মর্মান্তিক ভাবে গাছের মধ্যে পা বেধে মাথা সহ শরীর নিচের দিকে ঝুলিয়ে।আল্লাহ। এটা কি দেখলাম।আচ্ছা এটা আযমান ভাইয়ের কৃত্তি নয় ত??হতেই পারে এই লোক পারে না এমন কিছু নেই বললে চলে।ছেলেটা মাথা হাত ঝুলানো অবস্থায় করুন সুরে বলে উঠে…….
.
.
ভাই মাফ করে দেন..আমি জানতাম না ওই মেয়ে আপনার gf.. জানলে জীবনেও ওমন কিছু করতাম না..আমি কসম করে বলছি আর জীবনেও কোনো মেয়েকে প্রপোজ করমু না..আপনি বললে তো আমি বিয়াও করমু না প্লিজ ছেড়ে দেন…
.
.
gf. তার মানে এটা আমাকে নিয়ে হয় নাই।এই পোলা কার না কার প্রেমিকারে প্রপোজ করছে বলেই এমন শাস্তি..ভালোই হইছে মর শালা..মেয়ে দেখলেই হুমরি খাইয়া পরতে হয় বুঝি??কিন্তু কার gf আর কেইবা এমন করে ঝুলালো আল্লাহ যানে।ছেলেটা আবার বলে উঠে…..
.
.
ভাই এইবারের মত মাফ করে দেন। আমি সত্যিই জানতাম না ওই মেয়েটা আপনার gf জানলে কখনো এমটা করতাম না।আর মেয়েটাকে প্রথম দেখায় ভালো লেগেছে। তাই গেটেই প্রপোজাল দিয়েছি কিন্তু সে এক্সেপ্ট করে নাই।মাফ করে দেন আমি যদি আগে জানতাম ওনি আপনার gf
.
তার পাশে দাড়িয়ে থাকা অনেক ছেলেদের মাঝে একজন বলে উঠে…..
.
এই কি কখন থেকে gf gf করছ।ভাই শুনলে এখন তো ঝুলিয়েছে তখন কুচি কুচি করবে।বল ভাবি..কি বলতে বললাম…
.
ভাবি ভাবি প্লিজজজ এবার ছেড়ে দেন..
.
সারফারাজ ভাই আপনিই বলেন কি করা যায়।ভাই তো এখেনে এখনো আসে নাই..
.
আসতে দে..
.
.
আমি তো এবার ভয়ে শেষ।আল্লাহ এই মি. ঝুলন্ত পেঁচা তো আমাকেই গেইটে প্রপোজ করেছে।আল্লাহ আযমান ভাই আসার আগে আগে ভাগি তা না হলে হতে পারে ওই আসাবা আমার বারোটা বাজাবে নিশ্চিত।আসাবার মানে নাহয় আর একদিন বলবো…জীবন বাচাঁনো ফরজ তা না হলে কিন্তু মি.ঝুলন্ত পেঁচাকে আমি বাঁচাতে একটু হলেও কষ্ট করতাম..আমি দিলের হাত ধরে হাটা শুরু করি।আসলে শুধু হাটা না এক কথায় দৌড়…আমি মনে মনে ভাবছি আগের আযমার ভাই ভয়ঙ্কর ছিলল কিন্তু এবার ত মনে হয় ভয়ঙ্করের বাপ………………

#চলবে……….🍁

#তুমি~হলেই~চলবে🍁
#writter~হাফসা আলম…..🍂
১.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here