তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব -০২+৩

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

দায়ান হাসপাতালের ক্যাবিনে ঘুমিয়ে আছে। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। অথচ কিছু সময় আগে ঝড় গেছে রীতিমতো ক্যাবিনে আর পরিবারের লোকের উপর দিয়ে।
কি পা’গলামি যে করেছে সামলাতে সকলে হিমসিম খেয়ে গেছে।

দায়ানকে নিয়ে যখন হাসপাতালে আনা হয়। ডাক্তার তখন তারাতাড়ি করে ওর চিকিৎসা শুরু করে দেয়।কারণ এখানকার কম বেশি সকল ডাক্তারাই চিনে দায়ান কে।একেই এই হাসপাতাল থেকেই ডাক্তারি পাশ করেছে। তারপর এখানেই জয়েন হয়েছিল। দেশে ফিরে এখানেই জয়েন করার কথা।

প্রায় সকল চেক আপ করে ডাক্তার বিরস মুখে বের হয়ে আসে। রুশ আর দায়ানের বাবা তারাতাড়ি ডাক্তারের কাছে যায় দায়ানের পরিস্থিতি জানার জন্য।

দায়ানের বাবা বলে উঠে ডাক্তার আমার ছেলে ঠিক আছেতো?

রুশ ও এবার দায়ানের বাবার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,,,ডাক্তার বলছেন না কেনো কিছু? সব ঠিক আছে? আমার ভাই ঠিক আছে?

দেখুন পেশেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না।নিজের মন মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে চাপ পরেছে। তাও ভাগ্য ভালো পেশেন্ট আরেকটুর জন্য স্টো’ক করেনি। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তীতে করতে বেশি সময় লাগবে না।উনি হয়তো ট্র’মার মধ্যে আছেন।তাই নেক্সট টাইম উনাকে বেশি চিন্তা ভাবনা বা উত্তেজিত হওয়া থেকে বিরত রাখবেন।

ডাক্তার বেরিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর দায়ানের জ্ঞান ফিরে।এবার আগের থেকেও বেশি উত্তেজিত হয়ে যায়। হাতের মধ্যে লাগানো স্যালাইনের সু’চ সব টেনে হিঁ’চ’ড়ে ছিড়ে ফেলে।সবাই এতো করে বলছে শান্ত হতে কারো কথা সে শুনছে না। শুনতে চাইছে ও না। তার একটাই কথা আমার তিশাকে চাই তিশাকে এনে দাও। নয়তো তোমরা সবাই আমার সামনে থেকে সরে যাও আমিও তিশার কাছে যাবো।

দায়ান তিশার কাছে যাবে বলেই আশেপাশে কিছু খুজতে থাকে। এবং পাশে একটা ছুড়ি পেয়ে ও যায়। সবার দিকে তাকিয়ে ছুড়ি টা হাতে তুলে নেয়। কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই হাতের মধ্যে এক টান মারে। হাত দিয়ে গলগলিয়ে র/ক্ত ঝড়তে থাকে। সবাই এবার দেখে চিৎকার করে উঠে দায়ান বলে।

কাঁপা কাঁপা হাতে দায়ান কাজটা করায় এবং তাড়াহুড়ো করায় বেশি কাটতে পারে নি। যতটুকু কেটেছে তা দিয়ে গলগলিয়ে র/ক্তের স্রোত ধারা বয়ে চলেছে।

সবাই যখন এগিয়ে আসে দায়ান কে বাঁধা দেওয়ার জন্য। তখন দায়ান বলে উঠে খবরদার কাছে আসবানা।নয়তো এটা দেখছোনা? ছুড়িটা দেখিয়ে এটা আমার গলায় চালিয়ে দিবো।

তারপর দায়ান নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর একটা শব্দ উচ্চারণ করে। আবার ছুড়ি দিয়ে হাতের সি’রা কাটতে নেয়,,,,,,দায়ান নিজে হাতে ছুড়ি পুনরায় লাগানোর আগেই দায়ানের মা চিৎকার করে উঠে দায়ান বলে।

দায়ানের কাছে এগিয়ে গিয়ে দুই গালে পর পর দুইটা ঠাস করে চ’ড় মে’রে দেয়।

দায়ান অবাক হয়ে ফেল ফেল নয়নে মায়ের পানে তাকিয়ে রয়। এই প্রথম তার মা তার গায়ে হাত তুলেছে।

তোর মরার খুব শখ না? যা মর আর বাঁধা দিবো না যা। তিশাই যখন তোর কাছে সব তখন যা করতে নিয়েছিলি কর আর কেউ তোকে আটকাবে না কেউ না। আমরা তোর কেউ না।এই মানুষ গুলো তোর কেউ না।আমাদের ভালোবাসা তোর কাছে ফিকে।

তারপর দায়ানের বাবার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,,,,, ঐ মানুষ টার পুরো জীবনের আশা ভরসা তোর পিছনে ব্যয় করা ভু’ল।

দায়ানের বাবা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিচের দিকে দেয়ালে হেলান দিয়ে ।

আমরা তোর কেউ না তাই না রে দায়ান? ঠিক আছে আব্বা যা করতে চাইছিলেন করেন। তিশার কাছে তো আপনাকে যেতে হবে তাই না? তবে যাওয়ার আগে আমাকে আর আপনার বাবা কে দয়া করে মেরে দিন।শেষ করে তবেই আপনিও যান।

নয়তো আপনি না পারলে ছু’ড়িটা আমার কাছে দিন আমিই আমাদের শেষ করে ফেলি।মরে যাই।দুনিয়ায় থেকে তোর আগেই চলে যাই। যে ছেলে তাদের বাবা মায়ের কথা একটি বার ভাবে না।সেই বাবা মায়ের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় না।

দায়ান মায়ের দিকে কিছু সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। তারপর বাবার দিকে।একে একে রুশ ও তার মায়ের দিকে ও তাকায়। সবার চোখে অশ্রু। তারপর কি যেনো ভাবে।পাশ ফিরে বাইরের জানালার দিকে তাকায়। ছু’ড়িটা ছুড়ে বাইরের জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।

সকলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তারপর দায়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো র/ক্ত ঝড়ছে। রুশ দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার কে ডেকে আনে। ডাক্তার এসে হাতে ব্যা’ন’ডে’জ করে দেয়। এবং ঘুমের ইনজেকশন পু’শ করে। এই সবটুকু সময় দায়ান এক দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো। মুখ দিয়ে সে একটা টু শব্দ ও বের করেনি।

তারপর ঘুমের ঔষধের প্রভাবে আস্তে আস্তে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়।

দায়ানের মা আস্তে করে ছেলের পাশে বসে। যে ছেলের চোখে কখনো একটু ব্যাথা পাওয়ার কষ্ট দেখেনি।এমন শক্ত মনের ছেলেটার আজ কি অবস্থা। চোখের কোন ভিজে আছে। নিজের শাড়ির আঁচল টা দিয়ে যত্ন সহকারে দায়ানের চোখ দুটি মুছিয়ে দেয়। তারপর কপালে চুমু একে দেয়। দুই ফোটা পানি বেরিয়ে দায়ানের কপালে গিয়ে স্থান নেয়। তার একমাত্র য’ক্ষে’র ধ’ন এটা।

সেইদিনের পর আরো দুই মাস কেটে গেলো দায়ান কে দুই দিন হাসপাতালে রেখে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো। বাড়িতে এসে দায়ান নিজেকে ঘর বন্দি করে ফেলে একেবারে। দিনে হয়তো একবার খেলে খায় না খেলে নাই।আরো রা’গী গম্ভীর হয়ে উঠেছে। নিজের প্রতি যত্নের ছিটে ফোটাও নাই অনেকখানি শুকিয়ে গেছে।দাড়ি গো’ফ বড় হয়ে আছে।চুল গুলো অনেক বড় হয়ে আছে।

বাড়ির সকলে বুঝিয়ে ও দায়ানকে ঠিক করতে পারে নি।তিশা যেই রুমে থাকতো সেই রুমে তিশার জিনিস পত্রের ছিটে ফোটাও নেই।দায়ান ভালো করেই জানে এটা তার মায়ের আর রুশের কাজ।তাও চুপ আছে কিছু বলছেনা।

————————
দায়ান এভাবে থাকতে থাকতে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। হয়তো পা’গলই হয়ে যাবে।

তাই বাড়ির সকলে ডিসিশন নিয়েছে হাওয়া বদলের দরকার। রুশের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তার মামাতো বোনের সাথে। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ছিলো দায়ান আসলে বিয়ের আয়োজন করা হবে।

রুশের মামা যেহেতু গ্রামের বাড়িতে থাকে।তাই সবাই মিলে ডিসিশন নিয়েছে গ্রামে যাবে।ঐখানেই বিয়ের আয়োজন করবে।কয়েকদিন সকলে মিলে থাকবে।এতে করে রুশের বিয়েও হয়ে যাবে। আর দায়ানের ও মনটা হয়তো কিছু টা ভালো হবে।

সকলে মিলে ঠিক করলো দুই এক দিনের ভিতর ই রওনা দিবে সেখানে।

দায়ানকে এবিষয়ে কেউ কিছুই বলেনি জানা আছে বললেও মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ ও করবে না।

ছেলেটা দিনকে দিন নিশ্চুপ হয়ে চলেছে। সারাদিনে মুখ দিয়ে দুইটা শব্দ বলে কি না সন্দেহ।

বিদেশ থেকে রিসার্চ করে ফিরে হাসপাতালে জয়েন করার কথা এক মাস রেস্ট নিয়ে।অথচ আজ দুই মাস হতে চললো। দায়ানের নিজের মনেই অসুখ মানুষকে কি সুস্থ করবে সে? দায়ান কে কাজের বিষয়ে কেউই কোনো জোর করেনি।সবাই দায়ানের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রহর গুনছে।

—————————————–

একটা বে’ঞ্চে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে দুই বান্ধবী সোহা আর তমা।

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে বর্তমানে দুই বান্ধবী রিলেক্স মোডে আছে। চড়কির মতো এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেনো মুক্ত পাখি।

জীবনডা বে’দনার! বলেই সোহা তমার দিকে তাকায়।

— তমা ব্রু কোচকে ফেলে সোহার কথায়। জীবনডা বে’দনার কেনো হতে যাবে রে। তোর জীবন তোর হবে বে’দনার না।

— চুপ যা তা/মাক পাতা।একদম আমার কথায় ভুল ধরতে আসবিনা।

— হুহ্।

— এতো কষ্ট আমি কই রাখমু?

— তমা আবার ব’লে উঠে,,, আমাদের বাড়িতে একটা ড্রাম আছে এনে দেই? ঐখানে যত্ন সহকারে রেখে দে।

আমার সাথে মজা নিতে খুব ভালো লাগছে তাইনা রে?

— একদম না। আমিতো তোর সমস্যার সমাধান দিচ্ছি। ভালো লাগছে না তোর?

— তোর সমাধানের ক্ষে’তায় আগুন।

— এজন্য কারো উপকার করতে নেই।

— বহুত উপকার করলি তুই আমায় বোন আমার।তোরে তো একটা উপহার দিতে হয় এর জন্য।

— তমা খুশি হয়ে বলে,, কি দিবি দে।তবে ভালো কিছুই দিবি।

ওয়েট তোকে একটা গান শুনাই।

গানের কথা শুনেই তমার মুখটা চুপসে যায়। এই দিকে সোহা গান গাওয়া শুরু ও করে দিয়েছে।

“তমা কই? তমা নাই,আমি তমাকে চাই।
বারে বার শত বার আমি তমাকে চাই।”

সোহা গান টা গেয়েই এক দৌড় কারণ সে জানে এখন এখানে থাকলে তার পিঠে কয়েকটা পরবে।

#চলবে,,,,,,,,,,#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam

দায়ান,,,
এই দায়ান,,,,,,

দায়ান বলেই রুশ দরজাতে টোকা দেয়। অপর পাশ থেকে কোনো সারা শব্দ নেই। রুশের সাথেও এখন দুইটা কথা বলে না দায়ান মন খুলে।অথচ দিনের মধ্যে অর্ধেক সময় তাদের মধ্যে কতো শতো গল্প চলতো তার কোনো ই’য়’ত্তা নেই।ওদের বন্ডিং টা কতো ভালো,,সব সময় একে অপরের পাশে ছায়ার মতো থাকতো।কারো জীবনে এমন কোনো সিক্রেট নেই যে একজন আরেক জনের টা জানে না।

মানুষের নাকি চাচাতো ভাইদের সাথে হিংসা বি’দ্বে’ষ লেগেই থাকে। আর এই দিকে দায়ান আর রুশ একে অপরের প্রাণের বন্ধু। সব সময় সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে ছায়ার মতো থাকে।

এখন আনুমানিক রাত আটটা হয়তো বা’জে বা তার কম বেশি। দায়ানের তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।সে চুপচাপ অন্ধকার পরিবেশের দিকে তাকিয়ে আছে।

রুশ যে তাকে ডাকছে শুনেও সারা দিতে ইচ্ছে করছে না।কথা বলতেও ইচ্ছে করে না এখন।কোনো অনুভূতি কাজ করে না নিজের মধ্যে।

রুশ এতো ডাকার পরেও যখন কোনো সারা পেলো না তখন বোঝে গেলো সে আর সারা পাবেও না। তাই দায়ানের রুমে ঢুকে গেলো।রুমে দায়ান নেই।বারান্দায় গিয়ে রুশ উঁকি দেয়। দায়ান কে বাইরে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

— তুই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিলি না?

,,,,,,,,,,,,,,,,,

— কিরে ডাক্তার সাহেব তোর কানে আবার প্রবলেম হলো নাতো? তাহলেতো সমস্যা মানুষ তাহলে আমায় বলবে কানে কালা ডাক্তারের ভাই আমি।

দায়ান তবুও নিশ্চুপ।

রুশ দায়ানের দিকে তাকিয়ে ফোঁ’স করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো।এই ছেলেটাকে স্বাভাবিক করার জন্য কতো কি করে।কতো কিছু বলে।হাসানোর জন্য আজে বাজে জো’ক্স ও বলে কিন্তু কিসের কি।এই ডাক্তার মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

ভিতরে চল বলেই রুশ দায়ানের হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে। তারপর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে দায়ানের আলমিরার উপর থেকে লাগেজ নামায়।

তারপর দায়ানের জামা কাপড় লাগেজে একে একে সব ভরতে থাকে।

দায়ান রুশের দিকে একবার লাগেজের দিকে একবার ব্রু কোচকে তাকিয়ে রয়। অনেক টা সময় চুপ থাকে। তারপর বলে উঠে,,,,, ” এসব কি করছিস?

–দেখতে পাচ্ছিস না জামা কাপড় লাগেজে ঢুকাচিছ। কানের সাথে সাথে দেখছি চোখ টা ও গেলো।

— ফাজ/লামো করবিনা একদম। এসব গুছাচিছস কেনো?

— তোকে বনবাস করতে পাঠাবো তাই জন্য।

রুশের কথায় দায়ান রুশের দিকে রে’গে তাকায়।রুশ ভ’য় পাওয়ার ভা’ন করে বলে,, এভাবে তাকিয়ে এই দূর্বল মানুষ টাকে কেনো ভ’য় দেখাচ্ছিস। বলছি ভাই আমার।

আমরা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। তারপর একটু লাজুক হওয়ার ভা’ন করে ইয়ে মানে,,, মামার বাড়ি,, আর তোর ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি। ঐখানে গিয়ে আমাকে মানে তোর প্রাণ প্রিয় ভাইকে সারাজীবনের জন্য প’রা’ধীন করে দেওয়া হবে। বলেই চেহারাটাকে দুঃখী দুঃখী ভাব করলো রুশ।

“আমি কোথাও যাবো না। তোরা যা।”

মানে! পা’গল হয়ে গেছিস? আমরা কতো প্ল্যা’ন করে রেখেছিলাম ভুলে গেছিস?

প্লিজ ইয়ার আমার এসব লোক সমাগম ভালো লাগে না। আর ঐখানে তো অনেক দিন থাকতে হবে।আমার ভালো লাগছে না।

তুই না গেলে আমি বিয়ে করবো ভেবেছিস?

ঠিক আছে তোরা যা আমি বিয়ের দিন ঐখানে উপস্থিত হতে পারলেই হলো।

ওকে আমি বিয়ে ক্যা’ন’সেল করে দিচ্ছি এখনই। করবো না আমি বিয়ে। তোর ও কোথাও যাওয়া লাগবে না।মুখ লোকিয়ে ঘরের কোণে বসে থাক। আমি তোর কে?

দায়ান রুশের দিকে কিছু সময় অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। তারপর বলে উঠে,,, ওকে ফাইন যাবো।

রুশ খুশি হয়ে দায়ান কে ঝাপটে ধরে। এর মধ্যেই রুশের ফোন বেজে উঠে। তার প্রিয়তমা হবু বউটা ফোন দিয়েছে। রুশ দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে দায়ান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রুশ একটু হাসার চেষ্টা করে মাথা চুলকায়।

আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।আমি ঘুমোবো মাথাটা ধরেছে।

রুশ দায়ানের লাগেজের চেইন টা লাগিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ওকে ঘুমা আমি গেলাম।কাল সকাল সকাল বের হতে হবে।
বলেই রুশ রুম থেকে বের হয়ে যায়।
————————————

সেই সকাল ৬ টায় সকলে গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে।

গ্রামে ওদের পৌঁছাতে প্রায় অনেকটা সময় লাগবে। সকলে নানান ধরনের কথা বার্তা বলছে।মূলত রুশের বিয়ের বিষয় নিয়েই। এখানে ওরা পারিবারিক ভাবেই বিয়ে টা সম্পন্ন করবে।অতি কাছের আত্নীয় স্বজন দের শুধু বলা হবে।ওরা বিয়ের আগের দিন এখানে এসে উপস্থিত হবে।

ঢাকা শহর ফিরে গিয়ে বড় করে রিসেশনের আয়োজন করা হবে।

অবশ্য রুশের মামার তরফ থেকে বড় আয়োজনই করা হবে। গ্রামের একজন স্বনাম ধন্য ব্যক্তি রুশের মামা।আর্থিক অবস্থা ও বেশ ভালো।তার উপর ওদের বাড়ির প্রথম মেয়ের বিয়ে এটা।

রুশ গাড়ি ড্রাইভিং করছে।দায়ানের বাবা মি. আমান শেখ রুশের পাশে বসে আছে।

গাড়ির পিছনে দায়ান, দায়ানের মা এবং রুশের মা বসেছে। সব কিছু যদি স্বাভাবিক থাকতো তাহলে এতোক্ষনে গাড়ির ভিতরে হইহট্টগোল বেঁধে যেতো।দুই ভাই মিলে মাতিয়ে রাখতো।কতো হাসির কান্ড যে ঘটাতো।রুশ কে নিয়ে মজা নিতো।

গাড়ি দায়ান নিজেই ড্রাইভ করতো।রুশকে পাশে বসিয়ে। অথচ আজ সে পিছনে সিটে নিরব নির্বিকার হয়ে বসে আছে।

দায়ানের মায়ের নিজের ছেলের এমন অবস্থা দেখে বুক ফেটে কান্না আসে।ছেলে কে কিছু বলতে ও পারে না।কিইবা বলবে? সকলের ইতো জানা দায়ান তিশাকে কতোটা ভালোবাসতো। সবাই মিলে ঠিক করে রেখেছিলো দায়ান দেশে আসলে রুশ আর দায়ানের বিয়ে এক সাথেই দিবে।

কি থেকে কি হয়ে গেলো। একটা ঝড় এসে সব ল’ন্ড ভ’ন্ড করে দিয়েছে। দায়ানের জীবন টা এলোমেলো করে দিয়েছে।ওনার হাসি খুশি আনন্দে মেতে থাকা ছেলেটাকে একদম নি’র্জী’ব বানিয়ে দিয়ে গেছে।দায়ানের মায়ের এসব ভাবনার মাঝেই কোলে কারো অস্তিত্ব টের পায়।

ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে কোলের দিকে তাকায়। দায়ান মায়ের কোলে মাথা রেখেছে। মায়ের মন বোঝে গেছে ছেলের হয়তো মাথা ব্যাথা করছে।

ছেলেটা হয়তো রাতে হাতে গোনা কয়েক ঘন্টা ও ঘুমোয় নি।উনি খুব আদর স্নেহ মমতা মিশিয়ে ছেলের মাথায় হাত বোলাতে থাকে।

দায়ান মায়ের দিকে তাকায়। বিনিময়ে তার মা মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,,,, কিছু সময় ঘুমিয়ে নে আরো অনেকটা পথ বাকি আছে। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

দায়ান মাথা নেড়ে সায় জানায়।আসলেেই তার ঘুম পেয়ে গেছে। তাই বাইরের আলোটা আর ভালো লাগছে না। মায়ের আঁচল দিয়ে মুখটা ঢেকে নেয়। আহ্ কি মধুর ঘ্রাণ আসছে আঁচল থেকে। এজন্যই হয়তো বলে,,,,,

“কত শত পারফিউম আসবে যাবে, কিন্তু মায়ের আঁচলের গন্ধ একই থাকবে!”

দায়ান মায়ের আঁচলের নিচে নিশ্চিত মনে ঘুমোচ্ছে। কতোদিন শান্তিতে ঘুমোতে পারতো না। এই শান্তি খুঁজে চলেছে কতো উপায়ে।অথচ তার পাশেই সেই শান্তির সন্ধান ছিলো।সে বুঝতে ও পারে নি।

দায়ান ঘুমোচ্ছে বলে সকলেই চুপ হয়ে গেছে। রুশ ও চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। এর মধ্যে রুশের ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে মাই লাইফ নামটা দেখেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা দেয়।

— হ্যালো!

— কোথায় আছো তোমরা?

— এইতো কাছাকাছি এসে পরেছি। আর হয়তো আধা ঘণ্টা লাগবে।

— আচ্ছা সাবধানে এসো।এখন রাখছি।বাবা বলে ছিলো ফোন করে দেখতে কোথায় আছো। আমি গিয়ে খবরটা দিয়ে আসি।

— ওকে।

— বায় এন্ড লাভ ইউ!

— বিনিময়ে রুশ হুম ব্যতিত কিছুই বলতে পারলো না।বলবেই বা কি করে পাশে সকলে রয়েছে যে।

———————————-

প্রায় আধা ঘণ্টা পর সকলেই গ্রামে এসে পৌছায়। আহ্ গ্রামে আসলেই মনটা ছোট বাচ্চা হয়ে উঠে সকলের।আকা বাকা মেঠো পথে দৌড়ে হারিয়ে যেতে মন চায়।

গ্রামের সতেজ নির্মূল বাতাস এসে শরীরে দোলা দিয়ে যায়। মন মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যায়।

দায়ানের ও কিছু সময় আগেই ঘুম ভেঙে যায়। নিজেকে একটু ফিটফাট করে গাড়ি থেকে নেমে আসে।

গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই একটা বাতাস এসে শরীরে লাগে। কানে কানে যেনো বলে গেলো স্বাগতম!

রুশের মামারা ওদের কে সকলে স্বাদরে সম্ভাষণ জানায়। একেকজন একেক কাজে ছোটে চলেছে।কে কি করে ওদের আপ্যায়ন করবে ভেবে পাচ্ছে না।

সকলেই হাত পা ধুয়ে বসার ঘরে ঢুকে বসে।কোশল বিনিময় করছে।বিভিন্ন ধরনের আলাপ আলোচনা চলছে।।

দায়ান চুপটি করে বসে আছে। হঠাৎ করেই পিছন থেকে দুইটি হাত এসে তার চোখ আঁটকে ধরে।

দুলাভাই বলেন তো আমি কে? আমায় তো ভুলেই গেছেন।থাক জানিতো এখন বোঝে গেছেন আমি কে? বলেই চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। তারপর কিছু বোঝে উঠার আগেই চুল গুলো টেনে ধরে বলে,,,

আহ্ আমার কতোদিনের সখ ছেলেদের মাথায় বিনুনি করে দেওয়ার।আরেকটু বড় করতে পারলেন না? এখন তো ঝুঁটি ছাড়া কিছুই হবে না তাও ছোটো ছোটো ঝুঁটি হবে বলতে বলতেই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে রুশ আহা’ম্ম’কের মতো তাকিয়ে আছে।

বসার ঘরে বসে থাকা সকলেই অবাক বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো সকলেই ভাবছে।

সোহাকে আর পায় কে হাতের বাঁধন আলগা করে,,, ওমাগোওওওও বলে ভো দৌড়।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here