তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -০৮+৯

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৮

তমসায় আবৃত ধরিত্রী। কক্ষ জুড়ে পায়চারি করছে দুয়া। অস্থিরতা ছড়িয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সে ভাবতেই পারছে না চোখে দেখা দৃশ্য ভুল কি করে হতে পারে? সে স্পষ্ট দেখেছে তূর্ণ ভাইয়া এবং এক কিশোরী কন্যা একসাথে! দু’জনের হাতে হাত। কাছাকাছি দাঁড়িয়ে।

” উফ্! এসব কি হচ্ছে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তূর্ণ ভাইয়া কি করে এক পিচ্চি মেয়ের সাথে? উঁহু। উঁহু। নিশ্চয়ই আমার বুঝতে ভুল হচ্ছে। তূর্ণ ভাইয়া মানুষটা হয়তো ত্যা ড়া তবে চরিত্রহীন নয়। তার চরিত্র যে একদম ঝকঝকে তকতকে তা এলাকার সব্বাই খুব ভালো করেই জানে। আ আমিও জানি। তাহলে ওখানে হচ্ছিলো টা কি? তূর্ণ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো? ”

বিছানায় বসলো দুয়া। নিজের কথায় নিজেই আপত্তি জানালো।

” নো ওয়ে। তূর্ণ ভাইয়া যে ত্যা ড়া লোক! সোজাসাপ্টা উত্তর কোনোকালেই দেবে না। উল্টো তিলকে তাল বানিয়ে ফেলবে। তাহলে এখন উপায় কি? ”

ভাবনায় পড়ে গেল মেয়েটা। ভেবে চলেছে। ভেবে চলেছে। প্রশ্নের উত্তর না পেলে তার যে অস্থিরতা কমবে না। উল্টো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। তাই যে করেই হোক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতেই হবে।

” ইয়েস! পেয়ে গেছি। এত সহজ উপায় আমার মাথায় আগে এলো না কেন? আমি বোধহয় দিন দিন গাধা হয়ে যাচ্ছি। ওপস্! গাধা নয়। গাধি। ওটা তো মেল ভার্সন! ”

একাকী মৃদু হেসে উঠলো মেয়েটা। তখনই বাহির হতে শোনা গেল মায়ের কণ্ঠ।

” দুয়া! ডিনার করতে আসো। ”

” আসছি। ”

সামান্য উঁচু কণ্ঠে মা’কে জানালো মেয়েটা। সমস্ত অস্থিরতা একপাশ করে নিজেকে সামলিয়ে নিলো। অতঃপর ফ্যান অফ করে পা বাড়ালো ডাইনিং রুমের দিকে।

অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষ। বিছানায় শুয়ে এক মধ্যবয়স্ক নারী। চক্ষু বন্ধ করে বিশ্রাম নিচ্ছে। জানালার পর্দা সামান্য সরিয়ে রাখা। চন্দ্রের মৃদু আলো জানালা গলিয়ে কক্ষে প্রবেশ করছে। হঠাৎ ভেজানো দরজা উন্মুক্ত হলো। দ্রুত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো এক মানব। বাঁ হাতে জ্বালিয়ে দিলো কক্ষের আলো। মুহুর্তের মধ্যেই আলোকিত হলো চারিদিক। চোখের ওপর আলো পড়ায় কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো শুয়ে থাকা নারী। চোখমুখ কুঁচকে ফেললো। বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে তার দিকে ছুটে গেল সুদর্শন মানবটি। বসলো শিয়রে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আদুরে কণ্ঠে ডেকে উঠলো,

” মা! তোমার এখন কি অবস্থা? খারাপ লাগছে? ”

মুচকি হাসলেন নারীটি। আস্তে করে চোখ মেলে তাকালেন। ছেলেকে দেখে তৃপ্ত হলো ওনার হৃদয়। ক্ষীণ স্বরে বললেন,

” আমি ঠিক আছি বাবা। অস্থির হোস না। ”

” তুমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে মা। আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ অবধি করোনি! তুমি জানো তানুর মুখে তোমার অসুস্থতার কথা শুনে আমার কি অবস্থা হয়েছিল? আমার শ্বাসরোধ হয়ে আসছিল। ”

নারীটি আশ্বস্ত করতে বললো,

” এখন সব ঠিক আছে। ”

ছেলেটা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

” তুমি সবসময় নিজের অবহেলা করো কেন? তুমি জানো না তুমি ছাড়া আমাদের দুই ভাইবোনের আপন কেউ নেই? ত্ তোমার কিছু হলে আ আমাদের কি হবে?”

শেষোক্ত কথাটা বলতে গিয়ে কণ্ঠ কিঞ্চিৎ কম্পিত হলো। ছেলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে নারীটি ছেলের বাম গালে হাত রাখলো।

” আল্লাহ্ আছে তো। কিছু হবে না। এখন অনেক হয়েছে। আর মন খারাপ করতে হবে না। অফিস থেকে ক্লান্ত শরীরে ফিরেছিস। যা রুমে যা। ফ্রেশ হয়ে নে। তানুটাও না? আস্ত বোকা। ছেলেটা ফিরতে না ফিরতেই ঘাবড়ে দিলো। ”

মায়ের ললাটে চুমু এঁকে ছেলেটা বললো,

” তানু ভুল কিছু করেনি। একদম ঠিক কাজ ই করেছে। নইলে আমি তো জানতেই পারতাম না তুমি আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে। ”

” তোকে কি এমনি এমনি জানাতে নিষেধ করেছি? জানতে পারলে তো কাজকর্ম ফেলে দিয়ে ছুটে আসতি। ওটা কি ঠিক হতো? ”

” নিশ্চয়ই ঠিক হতো। আমার কাছে সবার আগে আমার জন্মদাত্রী মা। তারপর জাগতিক সবকিছু। ”

তৃপ্তিময় হাসলেন নারীটি।

” তাই? আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। এখন যা তো। রুমে যা। ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। ”

তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানালো ছেলেটা।

” একদম নয়। তুমি এখন চুপচাপ রেস্ট নেবে। আমি তোমার খাবার নিয়ে আসছি। মা ছেলে একসাথে খাবো। ”

” বা রে! আমি বুঝি বানের জলে ভেসে এসেছি? ”

দরজায় তাকালো দু’জনে। তানুকে দেখে মুচকি হাসলো তারা। ছেলেটা বললো,

” হাঁ। তোকে তো বুড়িগঙ্গার তীরে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। ভুলে গেছিস? ”

” ভাইয়া! ”

মেয়েটার মলিন বদন দেখে হেসে উঠলো তারা দু’জনে। ছেলেটা আর দুষ্টুমি না করে ডান হাত বাড়িয়ে দিলো। কাছে আহ্বান করতেই ছুটে এলো তানু। আছড়ে পড়লো ভাইয়ের বুকে। তা দেখে সন্তুষ্ট চিত্তে হাসলেন নারীটি।

অপরাহ্ণের শেষ প্রহর। শুভ্র রঙা সমতল দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দুই বোন। দুয়া’র হাতে বাদামের ছোট্ট ঠোঙা। তা থেকে বাদাম নিয়ে খোসা ছাড়াতে ব্যস্ত তৃষা। মুখে তিনটি বাদাম ঢুকিয়ে শুধালো,

” আর কতক্ষণ দাঁড়াই থাকবো? পায়ের তলা তো ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ”

দুয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,

” মাত্র পাঁচ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছিস। এতেই পায়ের তলা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে? ”

” ইয়াহ বেবি। আমার আবার পেডিকিউর মেনিকিউর করা কোমল কোমল ফর্সা পা। দু মিনিট দাঁড়ালেই ‘ক্ষ’ তে ক্ষয় হতে শুরু করে। ”

ফিক করে হেসে উঠলো দুয়া। তৃষা এবার সামান্য সিরিয়াস হলো। শুধালো,

” কাজটা কি ঠিক হচ্ছে দুয়া? আই মিন ভাইয়া জানলে? আমরা কিন্তু শুধু শুধু জাসুসি করছি। ”

বাদাম মুখে পুরে দুয়া জবাব দিলো,

” শুধু শুধু কোথায়? আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে। তার সমাধান দরকার। আমি আবার অহেতুক সন্দেহ করার লোক নই। জানিস ই তো। ”

” হ তুমি তো লেডি শার্লু থুক্কু শার্লক হোমস। সামান্য খটকা লাগলেই আমারে ওয়াটসন বানাইয়া মাঠে নাইমা পড়ো। ”

” তো কি করবো বল? তুই তো আমার ওয়ান অ্যান্ড অনলি চিরসাথি। ”

” আসতাগফিরুল্লাহ্! শেষমেষ চিরসাথি! ওই মাইয়া তোরে আবার স** ভূতে ধরে নাই তো? ”

এমন বি শ্রী কথা শুনে নাকমুখ কুঁচকে ফেলল দুয়া। বাজে একটা গা লি দিতে গিয়েও দিলো না। কেননা ওদের আকাঙ্ক্ষিত মানুষ চলে এসেছে।

” ওই যে এসে পড়েছে। ”

দুয়ার ইশারা মোতাবেক বাম পাশে তাকালো তৃষা। দেখলো রিয়া আসছে। ষোড়শী কিশোরী কন্যা রিয়া। দেখতে মাশাআল্লাহ্! নজরকাড়া! তাই বলে আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! নো নো নো। ঘাড় থেকে ভূত ছাড়ালো দুয়া। দু’জনে হাসি হাসি মুখ করে এগিয়ে গেল। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কোচিং থেকে ফিরছিল রিয়া। হঠাৎ সম্মুখে দুই পড়শীকে দেখে ঈষৎ চমকালো!

” আ আসসালামু আলাইকুম আপু। তোমরা? ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ইয়েস বেবি আমরা। কেমন আছিস বল? এক সপ্তাহ বাদে দেখা! ”

তৃষার কথা শুনে মেয়েটা মৃদু হাসলো।

” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তোমরা ভালো আছো? ”

দুয়া মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বললো,

” হাঁ আমরাও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। কোচিং থেকে ফিরলে বুঝি? ”

” হাঁ। ”

” পড়াশোনা কেমন চলছে বল? ”

তৃষার প্রশ্ন শুনে দুয়া মনে মনে হাসলো। কার মুখে কেমনতর প্রশ্ন! ভাবা যায়?

” ভালো চলছে। ”

দুয়া এবার আর ইতিউতি না করে সোজাসুজি বললো,

” রিয়া তোর সাথে আমাদের একটু দরকারি কথা ছিল। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলা সম্ভব নয়। চল কোথাও গিয়ে একটু বসি। ”

কথাটা শুনে রিয়া একটু অপ্রস্তুত হলো। তবে প্রতিবেশী বড় আপুদের কথা অমান্য করলো না। ওদের সঙ্গে চললো। মিনিট পাঁচেক দূরত্বে ছোটোখাটো একটা পার্ক। মূলত জগিং এরিয়া হিসেবে পরিচিত এই পার্কটি। বিকেলবেলা কেউ কেউ সময় কাটাতে আসে। এখন অবশ্য লোকসমাগম সামান্য। ওরা ফাঁকা দেখে একটি বেঞ্চে বসলো। রিয়া ওদের দিকে জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে। দুয়া গলা খাঁকারি দিয়ে প্রশ্ন করলো,

” গতকাল দুপুরে কি হয়েছিল রিয়া? ”

প্রশ্নটা শুনেই মেয়েটার মুখখানি কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। যা ওদের দুজনের চক্ষু এড়ালো না।

” কি ব্যাপার রে? কাল দুপুরের কথা শুনে তোর মুখখানি কাগজের মতো ফর্সা হয়ে গেল কেন? এনি প্রবলেম? ”

তৃষা প্রশ্ন করতেই দুয়া এবার নরম কণ্ঠে বললো,

” রিয়া কি হয়েছে আপু? কোনো সমস্যা হলে আমাদের বল। তৃষা, আমি আছি তো। ঠিক সমাধান করে দেবো।বল। ”

রিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

” আ আসলে.. ”

” হুঁ? বল। ” দুয়া জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে।

” কাল দুপুরে.. ”

কিশোরী মেয়েটি ভীত হয়ে পড়ছে। কেমন ঘেমে যাচ্ছে। দুয়া আরো মোলায়েম স্বরে ওর হাতের ওপর হাত রেখে বললো,

” দুপুরে তূর্ণ ভাইয়া তোর সাথে কি করছিল রিয়া? নির্দ্বিধায় আমাদের কাছে বলতে পারিস। মনে কর এই মুহূর্তে আমরা তূর্ণ ভাইয়ার বোন নই। শুধুমাত্র তোর প্রতিবেশী। শুভাকাঙ্ক্ষী। নির্দ্বিধায় আমাদের বলতে পারিস। বল না কি হয়েছিল? ”

” ভাইয়া? ”

তৃষা আর বলতে পারলো না। সম্মুখে থাকা মেয়েটার অক্ষিকোল সিক্ত দেখে দু’জনেই হকচকিয়ে গেল।

” আরে আরে কাঁদছিস কেন? এই রিয়া? ” তৃষা ঘাবড়ে গিয়েছে।

দুয়া আলতো করে মেয়েটার ভেজা দু কপোল মুছে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো কিছুক্ষণ। আস্তে ধীরে স্বাভাবিক হলো রিয়া। নিজেকে ধাতস্থ করে মৃদু স্বরে থেমে থেমে বলতে লাগলো গতকালের সেই অঘটন!
_________

অপরাহ্ন প্রহর। আজ কোচিং একটু তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে। বান্ধবীর সঙ্গে হেঁটে বাড়ির পথে চলছে রিয়া। দু’জনে গল্প করতে করতে অনেকটা পথ পাড়ি দিলো। বান্ধবী তার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে। তাকে বিদায় জানিয়ে একাকী পথ চলতে লাগলো রিয়া। কয়েক কদম এগোতেই মেয়েটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে আড্ডায় মগ্ন তিন চারজন বখাটে টাইপ ছেলেপেলে। এলাকায় তাদের বেশ দুর্নাম রয়েছে। ভালো ঘরের বখে যাওয়া সন্তান ওরা। রাস্তাঘাটে মেয়েদের ইভটিজিং করে বেড়ায়। আজ একাকী এদের সামনে পড়ে ভীত হলো মেয়েলি হৃদয়। রিয়া দ্রুত পায়ে তাদের পাশ কাটিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু আফসোস! ঠিক ওদের নজরে পড়ে গেল।

” ও রিয়া! ও রিয়া! ”

গানের সুরে পেছন হতে ডেকে উঠলো একজন। রিয়া থমকে গেল। এক পল দাঁড়িয়ে দোয়া পড়তে পড়তে পুনরায় পা চালালো। অবশ্য লাভ হলো না। দ্রুত গতিতে ওর সম্মুখে এসে দাঁড়ালো চারজন।

” ও রিয়া! ডাক দিয়েছি তোমায়। ও রিয়া! তুমি শুনতে কি পাও না? ”

পুনরায় সুরে সুরে বললো। রিয়া ভেজা কণ্ঠে বললো,

” আ আমাকে যেতে দিন। আম্মু অ অপেক্ষা করছে। ”

” যাবে তো সোনা। আগে একটু ভাইয়াদের সাথে কথা বলো। আলাপ করো। ভাল্লাগবে। ”

নরম হৃদয়ের অধিকারিণী মেয়েটি প্রচুর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। তার সুযোগ নিলো ওরা। ইচ্ছেমতো বাজে কথা, বি শ্রী ইশারা করতে লাগলো। ঠিক সে মুহূর্তে বাম পাশে এসে দাঁড়ালো একটি শুভ্র রঙা গাড়ি। হঠাৎ গাড়ি দেখে ওরা কিছুটা হকচকিয়ে গেল। রিয়া বিপদের মূহুর্তে গাড়ি দেখে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে কয়েক কদম সরে গেল। মনে মনে স্রষ্টার নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করতে লাগলো। প্রার্থনা বুঝি কাজে দিলো। খুলে গেল গাড়ির দ্বার। বেরিয়ে এলো ফর্মাল পোশাকধারী সুদর্শন আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! ছেলেগুলো তূর্ণকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

” এ! হাহ্! ভাবলাম কে না কে? ”

একজন বিদ্রুপের স্বরে বলে উঠলো। শৌর্যের সহিত জমিনের বুকে কদম ফেলে ওদের ঠিক মুখোমুখি হলো তূর্ণ। শীতল কণ্ঠে শুধালো,

” এখানে কি হচ্ছে? ”

একটা ছেলে কিছু বলবার পূর্বেই রিয়া ভেজা কণ্ঠে ডেকে উঠলো,

” ভাইয়া! ”

ওকে লক্ষ্য করতেই সবটা স্পষ্ট হলো। তূর্ণ রাগান্বিত চাহনিতে তাকালো চারজনের দিকে। একজন সালাম দিলো।

” আসসালামু আলাইকুম ভাই। ভার্সিটি থেকে আসছেন নাকি? কেমন আছেন বলেন? ভালো তো? ”

” মেয়েটাকে সসম্মানে যেতে দে। ” শীতলতা বিরাজমান কণ্ঠে।

” হাঁ ভাই যাবে তো। ও-ই টুকটাক আলাপচারিতা করছিলাম। পাড়াতো ভাই কিনা। দায়িত্ব আছে তো। ” বললো আরেকজন।

” হাঁ ভাই। আপনি যান। আমরা নিজ দায়িত্বে ওরে পৌঁছে দিয়ে আসবো। ”

তূর্ণ গম্ভীর স্বরে বললো,

” দায়িত্ববান হওয়া ভালো। তবে চরিত্রহীন নয়। ”

এতেই তেঁতে উঠলো একজন।

” চরিত্রহীন? কারে চরিত্রহীন বললেন? নিজের চরিত্রের নাই ঠিক। খালাতো বোনের সাথে অনবরত রাসলী* ”

আর বলা হলো না। শক্তপোক্ত এক থা|প্পড়ে মাটিতে ছিটকে পড়লো ছেলেটা। হকচকিয়ে গেল বাকিরা। তূর্ণ নিজস্ব ভাবমূর্তি বজায় রেখে আঙুল তাক করে অত্যন্ত গাম্ভীর্যের সহিত শাসনের স্বরে বললো,

” সবাইকে নিজেদের মতো চরিত্রহীন ভাববি না। এখনো সময় আছে। শুধরে যা। নারীরা মায়ের জাত। সম্মান দিতে শেখ। নইলে একসময় তোদের পাপের ফল তোদের ঘরের মা-বোনদের না পেতে হয়। ”

ছেলেটা এখনো হতবিহ্বল! ভাবতেই পারছে না সদা সর্বদা শান্তশিষ্ট, ঠাণ্ডা মেজাজের আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ কিনা তাকে চ ড় মা”রলো! তা-ও আবার এক চ’ড়েই দাঁত নড়ে উঠেছে! অবিশ্বাস্য! ছেলেটার ধ্যান ভঙ্গ হলো তূর্ণ’র শীতলতম হুমকিতে। আঙ্গুল নাড়িয়ে ওদের প্রস্থান করার আদেশ করছে তূর্ণ! হতবিহ্বল ছেলেটাকে ওর বন্ধুরা জাপটে ধরে দ্রুত পায়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো। ওরা এখনো ঘোরের মধ্যে। তূর্ণ’র এই নতুন অবতার বিশ্বাস ই করতে পারছে না।

তূর্ণ এবার পাশ ফিরে তাকালো। রিয়া মাথা নিচু করে কেঁদে চলেছে।
#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৯

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তূর্ণ এবং রিয়া। মেয়েটার চোখে নোনাজল। ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হচ্ছে কায়া। তূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোলায়েম কণ্ঠে বললো,

” কাঁদছো কেন? ওদের সামনে কান্না করে নিজেকে আরও অবলা প্রমাণ করতে চাইছিলে? বৈশিষ্ট্যগত ভাবেই মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় দুর্বল। উইক। তাই বলে বিপদের মুখে পড়েও অবলা নারী হয়ে থাকতে হবে তা তো হতে পারে না। তুমি কি জানো না আমাদের ইসলাম ধর্মে নিজেকে বাঁচাতে আত্মরক্ষা করার আদেশ দেয়া আছে? জীবন বাঁচানো ফরজ। তাহলে তুমি বিপদের মুখে পড়েও কেন কাঁদবে? সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে নিজেকে রক্ষা করার। প্রথমে মুখে প্রতিবাদ করবে। মুখে কাজ না হলে হাতে। যদিওবা তুমি ছোট মানুষ। তোমার হাত চালানোর দরকার নেই। হিতে বিপরীত হতে পারে। তুমি মুখেই প্রতিবাদ করবে। কণ্ঠে এতটা তেজ ঢেলে বলবে যে, বিপরীতে থাকা মানুষটা দমে যেতে বাধ্য হবে। বুঝতে পেরেছো? ”

ক্রন্দনে দিশেহারা হয়ে পড়লো রিয়া। বড় ভাইয়ের মতো মানুষটার উপদেশমূলক কথাগুলো ওকে বড্ড অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সে বুঝতে পারছে তার দ্বারা ভুল হয়েছে। প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। তূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো। ওর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

” মন খারাপ করো না। আজ যা হওয়ার হয়ে গেছে। এরপর থেকে ইনশাআল্লাহ্ তোমার মধ্যে পরিবর্তন আসবে। ভীত মেয়েটা তেজস্বীনি হয়ে উঠবে। কি? পারবে না? ”

মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে তূর্ণ’র ডান হাত আঁকড়ে ধরলো। আবেগঘন কণ্ঠে বলতে লাগলো,

” ভাইয়া! তোমাকে অ অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ তুমি আমাকে যেভাবে বোঝালে আ আমার সবসময় মনে থাকবে। রিয়া আর ভয় পাবে না। ভয়কে জয় করার চেষ্টা করবে। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। ”

মুচকি হাসলো তূর্ণ।

” দ্যাটস্ লাইক অ্যা গুড গার্ল! ”

তূর্ণ’র অধরকোণে হাসির রেখা। ওর ডান হাতটি আঁকড়ে ধরে রয়েছে রিয়া। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে চলন্ত রিকশায় বসে এই দৃশ্য দেখতে পেলো দুয়া। হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো! বোধগম্য হলো না কিছুই। ইচ্ছে সত্ত্বেও রিকশা থামিয়ে আর সবটা বোঝা হলো না। মুহুর্তের মধ্যেই দৃষ্টিসীমার বাহিরে চলে গেল ওরা।
_________

রিয়ার মুখে সবটা শুনে দুয়া এবং তৃষা অবাক! তৃষা উৎফুল্ল হয়ে বললো,

” ইয়েস! এই না হলে আমার ভাইয়া! জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছে। ”

দুয়া মুচকি হাসলো।

‘ এবার আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। তূর্ণ ভাইয়া যেমন মানুষ এমন আচরণ ওনার দ্বারাই সম্ভব। উনি তো বরাবরই অন্যের বিপদের সময় ঝাঁপিয়ে পড়তে সদা প্রস্তুত। আসলেই দুর্দান্ত! ‘

মনে মনে ওসব ভাবলেও মুখে বললো,

” তৃষা শুনলি তো? তূর্ণ ভাইয়া কিন্তু কোনো মা*রামারি ফাটাফাটি করেনি। স্রেফ এক চ”ড়েই দাঁত নড়িয়ে দিয়েছে। ”

তৃষা দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

” ইয়াহ। ভাইয়া এমনি এমনি জিম করে বুঝি? বুঝতে হবে বেবি। ওটা জিম করা শক্তপোক্ত হাত। গণ্ডারের মতো। দেখ ওই লু”চ্চাটার দাঁত আছে নাকি পড়ে গেছে! থাকলেও ওই দাঁত দিয়ে ইহজীবনে বুঝি কিছু চিবোতে আর পারবে না। ”

সশব্দে হেসে উঠলো দুয়া এবং রিয়া। সঙ্গ দিলো তৃষা নিজেও। দুয়া’র অধর কোণে লেপ্টে তৃপ্তিকর হাসির রেখা। তৃষাকে বললো,

” আমি বরাবরের মতই আবারো বোকামি করতে যাচ্ছিলাম। তূর্ণ ভাইয়া যে কোনো অকাজ করবে না এ তো বোঝা উচিত ছিল। ভাগ্যিস সরাসরি ওনাকে জিজ্ঞেস করিনি। নইলে মশাই এত সুন্দর একটা বিষয়কে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কি করে ফেলতো‌। নিজের প্রশংসা শুনতে ওনার আবার অ্যালার্জি আছে কিনা! হুহ্! বাইরের মানুষের জন্য উনি শান্তশিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ভদ্রলোক। শুধু আমার সাথেই কূচুটিপানা করে। ”

” কূচুটিপানা! হা হা হা! ভাইয়ার ডিকশনারি থেকে শব্দ চুরি? ” ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো তৃষা।

দুয়া মুখ ফিরিয়ে ভেংচি কাটলো।

” ওটা মোটেও ওনার শব্দ নয়। মাস্টার মানুষ এসব বলে নাকি? ওটা তো বাংলার জনগন্সদের চিরচেনা শব্দ। ”

” আচ্ছা? আজকে ভাইয়া আসুক। জিজ্ঞেস করবো নে। সাবধানে থাকিস বেবি। ভাইয়া তার শব্দ চুরির দায়ে তোর নামে মামলা না ঠুকে দেয়? ”

দুয়া চোখমুখ কুঁচকে তাকাতেই ফিক করে হেসে উঠলো তৃষা।

গোধূলি লগ্ন। মাগরিবের সালাত আদায় করে ব্যস্ত সকলে। তাসলিমা রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে। সোফায় পাশাপাশি বসে মোবাইলে ইনস্টাগ্রাম রিলস্ দেখছে তৃষা এবং নিশি। বাকিরা নিজ নিজ কক্ষে। এসময় কলিংবেল বেজে উঠলো। তাসলিমা রান্নাঘর থেকে উঁচু কণ্ঠে বলে উঠলো,

” তৃষা! দেখ তো কে এসেছে। ”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোবাইল রেখে উঠে দাঁড়ালো তৃষা। পা বাড়ালো দরজার দিকে। দরজা খুলতেই হতবাক হয়ে গেল মেয়েটা। উৎফুল্ল কণ্ঠে ডেকে উঠলো,

” চাচু! ”

চাচুকে আলিঙ্গন করলো তৃষা। নাজমুল সাহেব মুচকি হেসে ভাতিজির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তৃষা দ্রুত পায়ে লিভিং রুমে এসে জোরে জোরে সবাইকে ডাকতে লাগলো।

” আব্বু, আম্মু। ভাইয়া! কে কোথায় আছো? তাড়াতাড়ি এসো। দেখো কে এসেছে! ”

তাসলিমা ঘাবড়ে গিয়ে দ্রুত রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। এসেই মুগ্ধ হলেন। বাবার বুকে লেপ্টে নিশি। কতদিন পর বাবা মেয়ের আলিঙ্গন! তাসলিমা মুচকি হেসে বললো,

” আরে ভাই? কতদিন পর দেখা? কেমন আছো? ”

নাজমুল সাহেব মেয়েকে বুকে আগলে রেখেই বললো,

” আসসালামু আলাইকুম ভাবি। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো? ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমরাও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। ”

তৃষাও পাশ থেকে ফটাফট জবাব দিলো,

” আমিও ভালো আছি চাচু। ”

নাজমুল সাহেব মুচকি হেসে মেয়েকে বাহুবন্ধন হতে মুক্ত করলেন। মেয়ের ললাটে চুমু এঁকে দিলেন। নিশি আবেগতাড়িত হয়ে বাবাকে পুনরায় জড়িয়ে ধরলো। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে এই দৃশ্য দেখতে পেলেন নিজাম সাহেব। পিছু পিছু মোবাইল হাতে নামছে তূর্ণ। বড় ভাইকে দেখে নাজমুল সাহেব সালাম দিলেন।

” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছো? ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। হোয়াট অ্যা প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ! তুমি আসবে আগে বলোনি তো? ” নিজাম সাহেবের কণ্ঠে বিস্ময়!

” আসলে ভাইয়া কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। তাই ভাবলাম বিদেশের মাটিতে পড়ে থেকে আর কি লাভ? তারচেয়ে বরং আপন নীড়ে ফিরে আসি। অবশ্য আমি আসার আগে তূর্ণ’কে জানিয়েছিলাম যে আমি দেশে আসছি। ”

নিজাম সাহেব আড়চোখে তাকিয়ে দেখতে পেলেন তূর্ণ মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে। পড়নে তার ধূসর বর্ণের টি শার্ট এবং ট্রাউজার। তূর্ণ মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বললো,

” ইচ্ছে করেই জানাইনি। আগে থেকে জানালে নিশুর এই ছিঁচকাদুনে রূপটা দেখা হতো না। ”

কথাটা কর্ণ কুহরে পৌঁছাতেই নিশি বাবার বুক থেকে মুখ তুলে তাকালো। ডান হাতের উল্টো পিঠে অশ্রু বিন্দু মুছে বললো,

” ভাইয়া! আমি ছিঁচকাদুনে নই। আমাকে ছিঁচকাদুনে বলবে না। ”

” ছিঁচকাদুনেকে ছিঁচকাদুনে বলবো না তো কি বলবো? সেন্টিখোর? ”

নিশি গাল ফুলিয়ে বাবাকে বললো,

” আব্বু তুমি কিছু বলছো না কেন? ভাইয়া কিন্তু পঁচা বকছে। ”

নাজমুল সাহেব মুচকি হেসে সোফায় বসলেন। পাশে বসলো নিশি।

” তূর্ণ আমার মেয়ে নাহয় একটু ইমোশনাল। তাই বলে এভাবে বলবে? ”

তূর্ণ মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললো,

” চাচু প্লিজ। তুমিও জানো আমিও জানি। তোমার মেয়ে একবার কান্না শুরু করলে অশ্রুর হ্রদ তৈরি হয়ে যায়। শুধু শুধু মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে কি লাভ? ”

ফিক করে হেসে উঠলো তৃষা। ভাইকে সমর্থন জানিয়ে বললো,

” ভাইয়ার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। ”

নিশি একথা শুনে ওকে চোখ রাঙানি দিলো। তা দেখে কপট ভয় পাওয়ার ভঙ্গিমা করলো তৃষা। উপস্থিত বড়রা এ দেখে মৃদু হেসে উঠলো।

দিবাকরের মিঠি রৌদ্র ছুঁয়ে যাচ্ছে ধরনীর বুকে। তূর্ণ দ্রুত পায়ে মোবাইল এবং কার রিং হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। ঠিক তখনই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে একপ্রকার ছুটে এলো ছোট বোন তৃষা।

” ভাইয়া! ভাইয়া দাঁড়াও। ”

দাঁড়ালো তূর্ণ। ওর ঠিক পাশে এসে ব্রেক কষলো তৃষা।

” কি হয়েছে? এভাবে ছোটাছুটি করছিস কেন? ”

হাঁপাতে হাঁপাতে তৃষা বললো,

” ভাইয়া অলরেডি অ অনেক লেট হয়ে গেছে। এখন রিকশা করে ভার্সিটি গেলে ফার্স্ট ক্লাস নির্ঘাত মিস্। তুমি একটু আমাদের ড্রপ করে দাও না। প্লিজ। ”

বোনের অনুনয় শুনে তূর্ণ হাঁটতে হাঁটতে বললো,

” যেই দরকার পড়লো অমনি আমাকে মনে পড়লো? অন্য সময় তো চিনিস ই না। কি স্বার্থপর রে তুই! ”

পেছনে থাকা তৃষা ভেংচি কাটলো। যদিওবা তা তূর্ণ’র অগোচরে রয়ে গেল। তূর্ণ প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কাছে পৌঁছালো। ডান হাতে কার ডোর খুলে দিলো। তৃষা খুশি খুশি ঝটপট বসে পড়লো পেছনের সিটে। তূর্ণ দরজা আটকে মুচকি হাসলো। গিয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে।
.

দুয়া কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো। বাড়ির বাহিরে রাস্তায় আসতেই দেখতে পেলো গাড়ি দাঁড়িয়ে। আর তাতে বসে তূর্ণ মশাই! দুয়া কিছুটা অবাক হলো! তা লক্ষ্য করে তূর্ণ ব্যাঙ্গ করে বললো,

” ম্যাডাম অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। আপনার কৃপা হলে গাড়িতে বসুন। ধন্য করুন আমাদের। ”

ভ্যাবাচ্যাকা খেল দুয়া। এবার ধমক দিয়ে বসলো তূর্ণ।

” গাড়িতে বস বেদ্দপ! ক্লাস শুরু হতে আর কতক্ষণ বাকি জানিস? ”

দুয়া তাড়াতাড়ি পেছনের ডোর খুলে তৃষার পাশে বসে পড়লো। ডোর আটকে কোলের ওপর ব্যাগ রেখে বললো,

” শুধু শুধু বকাঝকা করছো কেন? আমি তো হঠাৎ তোমাকে দেখে অবাক হয়েছি। তাই একটু লেট হয়েছে।”

গাড়ি চালু করে তূর্ণ বললো,

” আচ্ছা? তাই নাকি? আমাকে দেখে এতটাই অবাক হয়েছিস যে সাত মিনিট পেরিয়ে গেল? তোদের মতো দুই দুইটা অলসকে ড্রপ করতে গিয়ে আজ আমার লেট হয়ে গেল। তোরা তো স্টুডেন্ট নামক ক”লঙ্ক। টিচাররা তোদের আগে পৌঁছে যায় আর তোরা? পিপীলিকার মতো গুটিগুটি পায়ে ইচ্ছেমতো গিয়ে হাজির হোস। ”

দুয়া চক্ষু ছোট করে বললো,

” টিচাররা যদি সময়ের আগেই পৌঁছে যায় আমরা কি করবো? ”

তৃষা সঙ্গ দিয়ে বললো,

” এছাড়াও তারা সবাই ভার্সিটির কাছাকাছি থাকে। আসতে সময় লাগে না। এখানে আমাদের দোষ কোথায় বলো তো? ”

তূর্ণ সম্মুখে রাস্তায় দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে বললো,

” তোদের মতো লজিকলেস পাবলিকের জন্য দেশ আজ রসাতলে যাচ্ছে। ”

পেছনে থাকা দুই মানবী ভেংচি কেটে তাদের আপত্তি জানালো। তা দেখে বক্র হেসে গাড়ি চালানোয় মনোনিবেশ করলো তূর্ণ।

সন্ধ্যা প্রহর। জনশূন্য লিভিংরুম। টি টেবিলের ওপর রাখা ক্ষুদ্র যন্ত্রটি বেজে চলেছে কখন থেকে। সালাত সম্পন্ন করে নিজ কক্ষ হতে বেরিয়ে এলেন তাহমিদা। টেবিলের ওপর রাখা মোবাইলটি হাতে নিয়ে কলার আইডি দেখে মুচকি হাসলেন। কল রিসিভ করে সালাম দিলেন,

” আসসালামু আলাইকুম আপা। কেমন আছো? ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি ভাবি। তোমরা সবাই কেমন আছো? ”

সোফায় বসলেন তাহমিদা।

” এই তো আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। এতদিন পর আমাদের কথা মনে পড়লো বুঝি? ”

” না না। কি যে বলো না তুমি? তোমাদের কথা তো সবসময়ই মনে পড়ে। আসলে ব্যস্ত থাকি বুঝোই তো। এর ওপর আবার শরীরটা কয়দিন ভালো ছিল না। ”

উৎকণ্ঠিত হলেন তাহমিদা।

” সে কি? কি হয়েছিল? তুমি এখন ঠিক আছো তো আপা? ”

” ভাবি চিন্তা করো না। আলহামদুলিল্লাহ্ এখন ভালো আছি। ”

” কি হয়েছিল তোমার? ডক্টর দেখিয়েছো? ”

” ও-ই প্রেশার হাই হয়ে গেছিল। ডক্টর আর ডাকিনি। জাবির, তানু ওরা তো পা’গল হয়ে গেছিল প্রায়। ”

বড় শ্বাস ফেলে তাহমিদা বললেন,

” সে তো স্বাভাবিক। মা ছাড়া ওদের কাছে কেইবা আছে? আমরা তো কত দূরে! ”

সাজেদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

” মন খারাপ করো না ভাবি। আমি এখন ঠিক আছি। আর আমার ছেলেমেয়ে একা কোথায়? আল্লাহ্ আছে। তোমরা আছো। ”

” তা তো বটেই। তারপরও। তোমার ভাই কত করে বললো বগুড়া থেকে চলে আসতে। তুমি তো আসতেই চাও না। ”

” নিজের ঘর ছেড়ে অন্য কোথাও ভালো লাগে না ভাবি। এছাড়াও ওই শহর এখন বড্ড অপরিচিত লাগে। ভালো লাগে না। ”

” হুম এই বলেই তো সবসময় পাশ কাটিয়ে যাও। ”

সাজেদা মৃদু হেসে বললো,

” এসব ছাড়ো তো। এবার বলো আমার ভাতিজা, ভাতিজি ওরা কেমন আছে? ”

” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছে। জাবির, তানু ওরা কেমন আছে? ”

” এই তো আলহামদুলিল্লাহ্। তানজিনা কোথায় এখন? শ্বশুরবাড়ি? ”

” হাঁ ওখানে। ”

কথোপকথন চলতে থাকলো ননদ ভাবীর মধ্যে।

চলবে.
চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here