তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -১০+১১

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১০

” দুয়া অ্যাই দুয়া! কোথায় তুই? তোর কোনো ধারণা আছে খালামণি কতটা টেনশন করছে? ভার্সিটি শেষে এখনো বাসায় ফিরিসনি কেন? কোথায় তুই? ”

উৎকণ্ঠিত মানব মৃদু ধমকে উঠলো। বিপরীতে থাকা এক মানবী ফোনের ওপাশ হতে কম্পিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

” দুয়া হাসপাতালে। ”

” হাসপাতাল! ”

হতবিহ্বল হয়ে গেল তূর্ণ! সে কি ভুল শুনলো! বক্ষপিঞ্জরের অন্তরালে লুকায়িত হৃদযন্ত্রটি দ্রুতবেগে স্পন্দিত হচ্ছে। অস্থিরতা জড়িয়ে ধরছে আষ্টেপৃষ্ঠে। অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে অন্তঃস্থলে। শুকনো ঢোক গিললো তূর্ণ। কিছু বলবে যে পারছেই না। কণ্ঠনালী যেন অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ওপাশ থেকে পুষ্পি তড়িঘড়ি করে বললো,

” স্ স্যার! আমরা ঢামেকে আছি। আপনি তাড়াতাড়ি আসুন। ”

টুট টুট শব্দে কল কেটে গেল। রয়ে গেল হতবিহ্বল, দিশেহারা এক মানব!

ঢামেকের লোকসমাগম ভর্তি স্থান। ফিনাইলের তীব্র গন্ধ এসে কড়া নাড়ছে নাসারন্ধ্রে। অসুস্থ রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত চিকিৎসকরা। উৎকণ্ঠায় সময় অতিবাহিত করছে রোগীর স্বজনরা। বড় বড় কদম ফেলে হাসপাতালে প্রবেশ করলো তূর্ণ। এতটুকু সময়ের মধ্যেই ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা। বুকের মধ্যিখানে ধক ধক করে চলেছে অবিরাম। মসৃণ চুলগুলো অনেকটা এলোমেলো হয়ে রয়েছে। ঘামে ভেজা শার্ট লেপ্টে বলিষ্ঠ দেহে। তূর্ণ দ্রুত পায়ে ছুটে গেল রিসিপশনে।

” এক্সকিউজ মি! দুয়া! জাহিরাহ্ দুয়া কত নম্বর কেবিন কিংবা ওয়ার্ডে আছে বলতে পারবেন? ”

কেঁপে কেঁপে উঠছে কণ্ঠ। এলোমেলো হয়ে পড়ছে শব্দমালা। রিসিপশনিস্ট ছেলেটা চেক করে দেখতে লাগলো। কিন্তু লাভ হলো না।

” দুঃখিত! এই নামে এখানে কেউ ভর্তি নেই। ”

হতবাক হলো তূর্ণ!

” এসব কি বলছেন? দুয়া! জাহিরাহ্ দুয়া এখানেই আছে। ভালোমতো চেক করে দেখুন না। পেয়ে যাবেন। নামটা ভালোমতো দেখুন। জাহিরাহ্ দুয়া। দেখুন না একটু। ”

কণ্ঠে কেমন আকুতি! যা ছুঁয়ে গেল রিসিপশনিস্ট অবধি। সে আরেকবার চেক করে দেখলো। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

” দুঃখিত। এই নামে কেউ নেই। ”

উদ্ভ্রান্ত মানবটি বাঁ আঁকড়ে ধরলো চুল। ছটফটানি বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। এখন কি করবে সে? দুশ্চিন্তায় মস্তিষ্কে সঠিকভাবে কাজ অবধি করছে না। ঠিক তখনই ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকটায় এলো তিয়াশ। এক পর্যায়ে খেয়াল করলো তূর্ণ’কে।

” স্যার! ”

ফোন কেটে দিয়ে ছুটে এলো তিয়াশ।

” স্যার আপনি এখানে? ”

হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠ কর্ণ কুহরে পৌঁছাতেই পিছু ঘুরে তাকালো তূর্ণ। বহু কষ্টের পর এক চিলতে স্বস্তি মিললো বুঝি। তিয়াশের দু হাত আঁকড়ে ধরলো তূর্ণ। থেমে থেমে আকুতি মাখা স্বরে শুধালো,

” দু য়া! কোথায়? ”

বেশ অবাক হলো তিয়াশ! তবে কিছু বললো না। তূর্ণ’র বেগতিক অবস্থা দেখে বললো,

” চলুন আমার সাথে। ”
___

প্রতিটি কদম অগ্রসর হচ্ছে আর মনে মনে স্রষ্টাকে স্মরণ করে চলেছে তূর্ণ। পা বুঝি চলতে নারাজ। বড় কষ্ট করে হেঁটে চলেছে সে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেল কাঙ্ক্ষিত স্থানে। তিয়াশ হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলো,

” দুয়া। ”

ভীতসন্ত্রস্ত মানবটি আস্তে ধীরে সেথায় তাকালো। একপলক তাকিয়ে মৃদু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো। অধর কা’মড়ে নিজেকে সামাল দেয়ার চেষ্টা করে গেল। চক্ষু বন্ধ করে শুকরিয়া আদায় করলো স্রষ্টার। স্টিলের পাশাপাশি লম্বা চেয়ারের সারি। একটিতে বসে দুয়া। পোশাকে লেপ্টে অল্পস্বল্প লাল বর্ণ তরল পদার্থ। মেয়েটি বুঝে ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেল। দুয়া’র পাশের স্থানটি দখল করলো তূর্ণ। বসলো ঠিক বাম পাশেই। হঠাৎ বাম পাশে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে মেয়েটার ঘোর কেটে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখলো তূর্ণ বসে। কিছুটা অবাক হলো বুঝি। তূর্ণ সম্মুখে সমতল দেয়ালে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নরম কণ্ঠে বললো,

” বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এমনটা কেউ করে? ”

প্রশ্নের উত্তর দিলো না দুয়া। আপনমনে বলে উঠলো,

” বৃদ্ধা আন্টির কন্ডিশন ভালো না। সে ব্ বাঁচবে তো? ”

কণ্ঠস্বর কিঞ্চিৎ কম্পিত হলো। ওর দুশ্চিন্তা অনুধাবন করতে পারলো তূর্ণ। দুয়া’র পানে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। চিন্তিত মেয়েটার মায়াভরা মুখখানি কেমন মলিন হয়ে গিয়েছে! কপোলে নোনা জলের অস্তিত্ব বিদ্যমান। পোশাকে র ক্ত লেপ্টে। ওকে আশ্বস্ত করতে মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিলো তূর্ণ।

” চিন্তা করিস না। ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ্ সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

দুয়া কিছু বললো না। চুপটি করে বসে রইল। আলগোছে হাতটি সরিয়ে নিলো তূর্ণ। তখনই কোথা থেকে ছুটে এলো তৃষা। ভাইকে দেখে যথেষ্ট অবাক হলো! পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে বলতে লাগলো,

” দুয়া! আন্টির ফোন থেকে কয়েকবার ট্রাই করেছি। ওনার ছেলে কিংবা ছেলের বউ কল রিসিভ করছে না তো। কেন যেন মনে হচ্ছে নম্বর ব্লক করে রেখেছে। ”

উঠে দাঁড়ালো তূর্ণ। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

” ফোনটা আমাকে দে। ”

তৃষা মাথা নাড়িয়ে মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বের করলো। তুলে দিলো ভাইয়ের হাতে। তূর্ণ মোবাইল হাতে নিয়ে এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালো। ব্যস্ত হয়ে পড়লো মোবাইল নিয়ে। তৃষা সেদিকে একবার তাকিয়ে দুয়ার পাশে বসলো। ওকে স্বাভাবিক করার প্রয়াস চালিয়ে গেল। তিয়াশ এবং পুষ্পি সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে।

অন্ধকারে নিমজ্জিত বসুধা। বেলকনিতে উদাস বদনে দাঁড়িয়ে দুয়া। দৃষ্টি নিবদ্ধ দূরাকাশে। পাশে এসে যে কেউ দাঁড়িয়েছে সে খেয়াল অবধি নেই। তূর্ণ গলা খাঁকারি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো‌। চমকে পাশে তাকালো দুয়া! ডান পাশে তূর্ণ দাঁড়িয়ে। এলো কখন?

” ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে। আন্টি এখন আউট অফ ডেঞ্জার। ওনার ভাই ভাবী সাথেই আছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। ”

মাথা নাড়ালো দুয়া। ওর নীরবতায় ভারাক্রান্ত হলো পুরুষালি চিত্ত! খানিকের নীরবতা ভঙ্গ করে তূর্ণ বলতে লাগলো,

” ছোটবেলা থেকেই তুই নরম কোমল হৃদয়ের। কারোর দুঃখকষ্ট সহ্য করতে পারিস না। আমার এখনো মনে আছে তোর তখন বারো বছর বয়স। প্রতিবেশী আন্টির পোষা বিড়াল অসুস্থ হয়ে মা রা গিয়েছিল। তোর সে কি কান্না! সেই বার এত কষ্ট পেয়েছিলি, কান্না করেছিলি যে পুরো এক সপ্তাহ জ্বর ছিল। বিছানায় পড়ে শুধু কাতরাতে থাকতি। সেই স্মৃতি ভোলার নয়। আজো মনে আছে। তখন প্রতিবেশীর বিড়ালের মৃ”ত্যুতে তোর অবস্থা নাজেহাল ছিল। আর আজ? তোর চোখের সামনে এক অসহায় বৃদ্ধা অ্যাক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়ে ছিল। যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। সেই দৃশ্য চাইলেও ভোলার নয়। বুঝতে পারছি। তাই বলে এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবি? তুই বুঝতে পারছিস না খালামণি, খালু এতে কত কষ্ট পাচ্ছে? ”

ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো দুয়া। মায়াবী নেত্রকোল অশ্রুতে ভরপুর হয়ে যাচ্ছে।

” আ আমার চোখের সামনে আন্টি রাস্তায় র”ক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলো। ওখানে কত লোক ছিল। কেউ কেউ ভিডিও করছিল। কিন্তু সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। তু তুমি জানো? ওনার খুব র”ক্তক্ষরণ হয়েছিল। ওনাকে নিয়ে যখন হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। আমার কাঁধে মাথা রেখে উনি ছটফট করছিলেন। কষ্ট পাচ্ছিলেন। আমি চাইলেও তো সেই মুহুর্তে ভুলতে পারছি না। উনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। আজ যদি ওনার কিছু একটা হয়ে যেতো? ওনার নির্দয় ছেলে, ছেলের বউয়ের হয়তো কিছু হতো না। কিন্তু ওনার পরিবার? ”

ক্রন্দনরত ললনা বসে পড়লো বেতের সোফায়। দু হাতে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। যা দেখে র”ক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে এক কাঠিন্যে মোড়ানো হৃদয়ে! নিভৃতে পাশেই হাঁটু গেড়ে বসলো তূর্ণ। কোনো স্বান্তনা বাণী দিলো না। শুধু আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো কেশের ভাঁজে ভাঁজে। তার র’ক্তিম দৃষ্টি নিবদ্ধ বাহিরের অন্ধকারে। কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো ওভাবে। মেয়েটার ক্রন্দন এখন প্রায় থেমে গেছে। ধীরে ধীরে কম্পিত হচ্ছে কায়া। তূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। হঠাৎই ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে নাক ছিটকে বললো,

” ইয়াক! পুতলা তোর তো নাকের জল চোখের জল এক হয়ে বুড়িগঙ্গা হয়ে গেছে! ”

হতভম্ব হয়ে গেল দুয়া! ক্রন্দন ভুলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল তূর্ণ’র দিকে। তূর্ণ চোখমুখ কুঁচকে বললো,

” দিনকে দিন তুই যেমন ছিঁচকাদুনে হচ্ছিস তোকে বিয়ে দিতে তো বেশ ভোগান্তি পোহাতে হবে। শেষমেষ খালুকে মোটা অংকের যৌতুক দিয়ে কন্যা বিদায় না করতে হয়! ছ্যা ছ্যা ছ্যা! কপাল গুণে আমাদের সেন্টিখোর মেয়েকে বিদায় করতে যৌতুক প্রথা! ও মাই আল্লাহ্! তোর জন্য আমাদের এখন পুলিশি মারপ্যাঁচে পড়তে হবে! ”

তূর্ণ’র অতিরঞ্জিত নাটক দেখে দুয়া ক্ষি প্ত হলো। চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো তড়িৎ।

” একদম বাজে কথা বলবে না তূর্ণ ভাইয়া! কে ছিঁচকাদুনে হুঁ? আমি? মোটেও নয়। স্বাভাবিক একটা মানুষ এতটুকু কান্না করেই থাকে। আর দুঃখ পেলে কাঁদবো না তো কি করবো? হাসবো? ”

” হাসবি! হাহ্! শেষমেষ দেখা যাবে শোকে কাতর লোকজন তোর ভুতুড়ে হাসি শুনে ইন্না লিল্লাহ! বিনা টিকেটে পরকাল। ”

তূর্ণ’র কণ্ঠে বিদ্রুপের আভাস। দুয়া তেড়ে গিয়ে আঙ্গুল তাক করে বললো,

” একদম আমার হাসি নিয়ে উল্টোপাল্টা বলবে না। তুমি জানো সবাই আমার হাসির কত প্রশংসা করে? তৃষা তো বলেছে আমার বর নাকি আমার হাসিতেই ফিদা হবে। ”

” হাঁ। হাঁসি তো ফাঁ*সি। ”

কোমল চিকন আঙ্গুলটি ধরে নামিয়ে দিয়ে বললো,

” পুঁচকে একটা মেয়ে। এখনই বর বর চিন্তা শুরু হয়ে গেছে! কানের নিচে দেবো লাগিয়ে এক‌। তখন দেখবি বর বর কেমনে বর্বর হয়। ”

ভেংচি কাটলো দুয়া। দাঁড়ালো মুখ ঘুরিয়ে। দৃষ্টি পুনরায় নিবদ্ধ হলো চন্দ্রিমায়। মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো চন্দ্র। মুচকি হাসলো তূর্ণ। অবশেষে দুয়ো রানীর দুঃখ ঘুচে গেল!

শুক্রবার। ছুটির দিন। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে একটা ইংরেজি উপন্যাস পড়ছিল তূর্ণ। সে মুহূর্তে কক্ষে প্রবেশ করলেন তাসলিমা। হাতে ট্রে। তাতে চা নাস্তা। তূর্ণ’র বিপরীতে বসলেন উনি। মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে মুচকি হাসলো তূর্ণ। মায়ের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে নিজে কাপ হাতে নিলো। কফিতে এক চুমুক দিয়ে বইয়ের পাতায় মনোযোগ দিলো। তাসলিমা উশখুশ করে শেষমেষ বলেই ফেললেন,

” জানিস আমাদের বাড়ি থেকে সাত বাড়ি পরে রাসেল থাকে। ছেলেটা ওয়েল এস্টাবলিসড্। দেখতে শুনতে মোটামুটি। তোর বয়সী হবে। উঁহু। এক বছর ছোট হবে বোধহয়। আগামী শুক্রবার ওর বিয়ে। ভাবি দাওয়াত দিয়ে গেলেন। ”

ভ্রু কুঁচকে তাকালো তূর্ণ।

” তো? দাওয়াত দিয়েছে। আব্বুকে নিয়ে যাও। পেট ভরে খেয়েদেয়ে আসো। ”

তেঁতে উঠলেন তাসলিমা।

” যাবো কোন মুখে হাঁ? যাওয়ার মতো মুখ রেখেছিস? গেলেই সবাই জেঁকে ধরে। তোর বিয়েশাদীর খবরাখবর নেয়। কেউ কেউ সম্বন্ধ নিয়েও হাজির হয়। তখন আমি কি করি! মুখটা এতটুকু করে ফেলি। এছাড়া কি করবো? ছেলে আমার কোনো উপায় রেখেছে? পাড়া পড়শী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন! সবাই বিয়ে করে ফেলছে। কিন্তু ছেলে আমার মহা ব্যস্ত। ওনার বিয়ে করার টাইম আছে নাকি? নেই। উনি তো মাদার তেরেসার মেল ভার্সন। ”

তূর্ণ বড় শ্বাস ফেলে বললো,

” আম্মু! আবার শুরু করে দিলে? ”

” কি শুরু করেছি হাঁ? বাপের মতো বল ঝগড়া করছি। ”

তূর্ণ তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানালো।

” ছিঃ ছিঃ। কি যে বলো না তুমি? আব্বুর ঘাড়ে কয়টা মাথা যে সে তোমাকে ঝগড়ুটে বলবে? আমার আব্বু তো শান্তশিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ভদ্রলোক। ”

ট্রেতে শব্দ করে চায়ের কাপ রাখলেন তাসলিমা।

” কথা ঘুরানোর চেষ্টা করিস না। লাভ নেই। আজ তোকে সত্যিটা বলতেই হবে। কেন তুই বিয়ে বিদ্বেষী? জীবনে মস্ত বড় ছ্যাকট্যাক খেয়ে সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করেছিস? ”

মায়ের কণ্ঠে সন্দেহের ছাপ! হতবিহ্বল হলো তূর্ণ!

” তুমি এসব কি বলছো আম্মু? তোমার পাঁচটা না দশটা না একমাত্র হ্যান্ডসাম বাবুসোনা। তাকে ছ্যাকা দিয়ে বাঁকা করবে কে? এমন কেউ এই তল্লাটে আছে নাকি? ”

তাসলিমা এবার একটু লাই পেলেন। ছেলের কাছ ঘেঁষে মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বললেন,

” আমার সোনা বাবু। বিয়ে করবে না? মায়ের জন্য লাল টুকটুকে বউ আনবে না? ”

না বোধক মাথা নাড়ালো তূর্ণ। তাসলিমা দমে গেলেন। প্রশ্ন করলেন,

” কেন? ”

” আমি তো বাবু। তোমার সোনা বাবু। বাবুরা কি বিয়ে করে? ”

বাচ্চা ফেস করে জবাব দিলো তূর্ণ। ক্ষে পে গেলেন তাসলিমা। ছেলের উরুতে চাপড় মে রে বললেন,

” দুষ্টু ছেলে! মায়ের কথায় মাকেই নাস্তানাবুদ? ”

দাঁত কেলিয়ে হাসলো তূর্ণ। এবার প্রসঙ্গ বদলে ফেললেন তাসলিমা।

” তুই কি সত্যিই কখনো বিয়ে করবি না? ”

” আপাতত না। ”

তাসলিমা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১১

” ভাইয়া তোমার কাছে আমার একটা প্রস্তাব আছে। তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে দুয়া মা’কে আমি আমার জাবির এর জন্য নিতে চাই। ”

ছোটখাটো বি’স্ফোরণ হলো লিভিং রুমে! উপস্থিত বাকি দু’জনে হকচকিয়ে! সাজ্জাদ সাহেব বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,

” তুই এসব কি বলছিস সাজেদা? ”

সাজেদা মুচকি হেসে বললেন,

” খুব কঠিন কিছু বলেছি কি? ”
.

ব্যস্ত জীবন। সময়ের পরিক্রমায় পেরিয়ে গেছে কয়েক মাস। দুয়া’র অনার্স প্রথম বর্ষ শেষের পথে। ছুটির দিন আজ। হঠাৎ করেই কাউকে না জানিয়ে দুপুরবেলা উপস্থিত হলেন সাজেদা। সাথে ছোট মেয়ে তানমি। সাজ্জাদ সাহেব এবং তাহমিদা তো অবাক সাথে বেশ খুশি! কতদিন পর সাজেদা এলেন! খুশি খুশি অতিথি আপ্যায়ন করলেন তাহমিদা। দুপুরটা ভালোই কাটলো। শেষ বিকেলে চা নাস্তা করার ফাঁকে হালকা উশখুশ করছিলেন সাজেদা। তা খেয়াল করে বড় ভাই বললেন,

” কি হয়েছে সাজেদা? এমন উশখুশ করছিস কেন? কিছু বলতে চাস? ”

” হাঁ ভাইয়া। ”

” হুঁ বল। ”

সাজেদা মৃদু স্বরে বললেন,

” আসলে আমি একটা প্রস্তাব দিতে চাই। আশা করি তাতে তুমি আপত্তি করবে না। ”

পাশ থেকে তাহমিদা মুচকি হেসে প্রশ্ন করলেন,

” কি প্রস্তাব আপা? বলো। ”

সাজেদা দম ফেলে বলেই ফেললেন,

” ভাইয়া তোমার কাছে আমার একটা প্রস্তাব আছে। তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে দুয়া মা’কে আমি আমার জাবির এর জন্য নিতে চাই। ”

ছোটখাটো বি’স্ফোরণ হলো লিভিং রুমে! উপস্থিত বাকি দু’জনে হকচকিয়ে! সাজ্জাদ সাহেব বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,

” তুই এসব কি বলছিস সাজেদা? ”

সাজেদা মুচকি হেসে বললেন,

” খুব কঠিন কিছু বলেছি কি? দুয়া মা’কে আমি কতটা ভালোবাসি তোমরা তো জানোই। আমার বহু পুরনো ইচ্ছে। ওকে আমার পুত্রবধূ করে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়া। তোমরা চিন্তা করো না। দুয়া মা আমার কাছে অনেক যত্নে থাকবে। ওকে এতদিন ভাতিজি হিসেবে ভালোবেসেছি। এখন থেকে মেয়ের মতো করে ভালোবাসবো। দুয়া আমার পুত্রবধূ না। মেয়ে হয়েই থাকবে। ”

সাজ্জাদ সাহেব বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে কিছু বলতে উদ্যত হলেন। তখনই ওনার মোবাইলে কল এলো। উনি পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলেন ইম্পর্ট্যান্ট কল।

” ইম্পর্ট্যান্ট কল এসেছে। এ বিষয়ে পড়ে কথা বলছি। ”

সোফা থেকে উঠে পড়লেন সাজ্জাদ সাহেব। কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে সেথা হতে প্রস্থান করলেন। সাজেদা হাসি হাসি মুখ করে ভাবিকে প্রশ্ন করলেন,

” ভাইয়া নিশ্চয়ই আমার প্রস্তাবে সম্মতি জানাবে, তাই না ভাবি? ”

তাহমিদা কি বলবেন ভাষা খুঁজে পেলেন না। নির্বাক তাকিয়ে রইলেন সাজেদার পানে।

ছুটির দিনটা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশ আলাদা। সারাটা দিন বন্ধুবান্ধব কখনোবা পরিবারের সাথে এনজয় করে থাকে জাহিরাহ্ দুয়া। আজকের দিনটা বন্ধুদের তরে! দিনভর এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি। মজাদার খাবার ট্রিট। বেশ ভালো সময় কেটেছে। দুয়া এখনো জানে না ফুপু আর ফুফাতো বোন তানু এসেছে। সাজেদা ই নিষেধ করেছে তাহমিদাকে। সারপ্রাইজ দিতে চায় কিনা! ঘোরাঘুরি শেষে ক্লান্ত দুয়া খালামণির বাসায় এলো। খালামণি খুব করে বলেছে। সে না এসে পারলো না।

তৃষার সাথে সোফায় বসে বেশ কিছুক্ষণ খুনসুটি করলো দুয়া। একপর্যায়ে তৃষা বললো,

” তুই একটু বস। আমি আসছি। ”

” আচ্ছা। ”

সেথা হতে প্রস্থান করলো তৃষা। দুয়া মনোযোগ দিলো হাতে থাকা মোবাইলে। একের পর এক লাইকি ভিডিও দেখছে এবং হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। মোবাইলে মগ্ন মেয়েটা টেরও পায়নি কখন তার ডান পাশের জায়গাটি কেউ দখল করে নিয়েছে। হাসতে হাসতে দুয়া’র পেটে খিল ধরে যাচ্ছে। হঠাৎ কর্ণ কুহরে পৌঁছালো পুরুষালি কণ্ঠস্বর,

” আর কত হি হি করবি? এবার তো থাম। ”

চমকালো দুয়া! ডান পাশে তাকিয়ে দেখলো তূর্ণ বসে। দৃষ্টি নিবদ্ধ মোবাইলে। সেভাবেই বলে উঠলো,

” সোফার ওপর যেভাবে লাফালাফি ফালাফালি করছিস বেচারা সোফা অক্কা পেলো বলে। ”

” ফালাফালি? এটা আবার কোন দেশীয় শব্দ? ”

দুয়া খানিকটা বিস্মিত! তূর্ণ এবার মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওর দিকে তাকালো।

” ছিঃ ছিঃ! বাঙালী হিসেবে তোর তো লজ্জায় ছেঁড়া গামছা দিয়ে মুখ লুকানো উচিত। তোদের মতো নতুন প্রজন্মের জন্য কিনা ভাষা শহীদরা আত্মত্যাগ করলো? তোরা তো উঠতে বসতে তাদের লজ্জিত করছিস। ”

দুয়া সরু চোখে তাকিয়ে বললো,

” আচ্ছা? আর তোমার মতো বুড়ো প্রজন্ম বুঝি দেশের মানসম্মান এভারেস্ট অবধি নিয়ে যাচ্ছে? ”

তূর্ণ এমনভাবে তাকালো যেন তার মাথায় সপ্ত আসমান ভেঙে পড়েছে। চক্ষু বড় বড় করে শুধালো,

” আমি বুড়ো? বুড়ো চিনিস তুই? ”

” আলবাত চিনি। বুড়ো তো তোমার মতোই হয়। মেহেদী রাঙা লালচে চুল। চোখে চশমা। একদম খাঁটি বুড়ো। ”

তূর্ণ সোফায় আয়েশ করে বসলো। ওকে বললো,

” আমাকে যে বুড়ো বলেছিস। তোর কোনো ধারণা আছে আমার লেডিস ফ্যানরা এই খবর জানতে পারলে কি করবে? ”

” কি করবে? ” ভ্রুক্ষেপহীন প্রশ্ন।

” তোর কুদ্দুস বয়াতির মতো স্পেশাল চুলগুলো কেটেকুটে কেজি দরে বিক্রি করে দেবে। ”

হতবিহ্বল মেয়েটা কিছু বলতেই ভুলে গেল। আনমনে হাত পৌঁছে গেল নিজ কেশে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে শুধালো,

” আমার চুল কুদ্দুস বয়াতির মতো? এত বড় কথাটা তুমি বলতে পারলে? ”

” অফকোর্স পারলাম। আর ভুল কিছু বলেছি কি? ”

” তুমি তুমি আস্ত এক খা টা শ! দেখে নিয়ো তোমার বউয়ের চুল হবে সবচেয়ে বি শ্রী। একদম ফুলঝাড়ুর মতো। ”

এবার ক্ষে পে গেল মশাই।

” খবরদার পুতলা। আমার আদুরে পেয়ারি বিবিকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবি না। ”

” বলবো। একশো বার বলবো। হাজার বার বলবো। কি করবে তুমি? ”

তূর্ণ পকেটে মোবাইল রাখতে রাখতে বললো,

” কি করবো দেখতে চাস? ওয়েট। ”

ভাবসাব সুবিধার ঠেকছে না। তূর্ণ উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই উধাও দুয়া। সোফায় মোবাইল রেখে মেয়েটা দিয়েছে উসাইন বোল্ট মার্কা দৌড়। পিছু নিয়েছে তূর্ণ।

” পুতলা আজ তোকে হাতের কাছে পেয়ে নিই।‌ দাঁড়া বলছি। দাঁড়া। ”

” নো নেভার। পারলে ধরে দেখাও। হা হা হা। ”

হাসতে হাসতে লিভিং রুম জুড়ে চক্রাকারে ছুটে বেড়াচ্ছে দুয়া। পিছু পিছু ছুটছে তূর্ণ। দুই দিকে দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ এই দৃশ্য দেখে স্তব্ধ! এসব কি দেখছে তারা? সবুজাভ টি শার্ট এবং থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে তূর্ণ। সামনে দৌড়াচ্ছে দুয়া। পড়নে তার নীল রঙা চুড়িদার জামা। দু হাতে পোশাক সামলিয়ে খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড়ে চলেছে মেয়েটা। তৃষা সিঁড়ির উপরিভাগে দাঁড়িয়ে বড় করে শ্বাস ফেললো। এ আর নতুন কি? পুরনো দৃশ্য। সে ওখান থেকে হাসিমুখে চলে গেল। ওদিকে তূর্ণ’র বন্ধুরা? তারা তো হতবিহ্বল! বন্ধুর নতুন রূপ দেখে কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে বুঝতেই পারছে না।

তূর্ণ প্রায় খপ করে মেয়েটাকে ধরে ফেলবে ঠিক তখনই দৃষ্টি পড়লো বন্ধুদের দেখে। মুহুর্তের মধ্যেই দাঁড়িয়ে পড়লো সে। টি শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বেশ ভাব নিয়ে সোফায় বসলো। পেছনে কারোর উপস্থিতি টের না পেয়ে দুয়া থেমে গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে পিছু ঘুরে অবাক হলো! তূর্ণ ভাইয়া কোথায়? পাশে দৃষ্টি ফেরাতে লক্ষ্য করলো মশাই সোফায় বসে মোবাইল টিপছে।

” আশ্চর্য! আমাকে ইচ্ছামত দৌড়ানি দিয়ে সে এখন রেস্ট করছে! দেখাচ্ছি মজা। ”

দুয়া বেশ প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল হঠাৎ থমকে গেল। তূর্ণ ভাইয়ার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে! থতমত খেলো মেয়েটা। মেকি হেসে হাত নেড়ে হাই জানালো। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুরা এতক্ষণে হুঁশ এ ফিরলো। পাতলা দেহের অধিকারী লম্বা চওড়া টগর! সে-ও হাত নেড়ে হাই জানালো।

” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আপুরা। কেমন আছেন সবাই? ”

দুয়া’র প্রশ্নে মিষ্টি হেসে উঠলো দিবা এবং মনিকা।

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমরা আলহামদুলিল্লাহ্ আছি। বিজি লাইফ। বুঝতেই পারছো। ”

মনিকার কথার রেশ ধরে দিবা প্রশ্ন করলো,

” তুমি কেমন আছো দুয়া? ”

দুয়া মিষ্টি হেসে বললো, ” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। ”

” গুড! ”

তূর্ণ এবার দুয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো,

” তুই ভেতরে যা। আম্মুকে বল ওরা এসেছে। ”

মাথা নাড়িয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো দুয়া। তৎক্ষণাৎ বন্ধুরা বাজ পাখির নজরে তাকালো আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ’র দিকে।

” কি? এভাবে কি দেখছিস? প্রথমবার দেখছিস মনে হয়? ”

নিশাদ সোফায় দেহ এলিয়ে দিলো। বললো,

” প্রথমবার তো বটেই। আমাদের গম্ভীর ভাবওয়ালা দোস্ত দাঁত কেলিয়ে হাসছে। কাজিনের পেছনে ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি করছে। প্রথমবার ই তো দেখছি। ”

তূর্ণ মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে গম্ভীর স্বরে বললো,

” যা দেখেছিস ভুলে যা। ওটা জাস্ট ফান ছিল। ”

রাজীব আপত্তি জানিয়ে বললো,

” উঁহু উঁহু। সবসময় সবকিছু চাইলেও ভোলা যায় না। বিশেষ করে এমন মিষ্টি মিষ্টি খুনসুটি তো আরো নয়। ”

মনিকা দুষ্টু হেসে বললো,

” দোস্ত কি চলছে? হুঁ হুঁ? কুচ কুচ হোতা হ্যায় কেয়া? ”

” দানিশ তোর বউ আজকাল পরপুরুষে বেশি ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে। সময় থাকতে সামলা। নইলে পেয়ারি বিবি হাতছাড়া। ”

দানিশ কিছু বলবার পূর্বেই মনিকা বললো,

” এহ্! এখন কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে। ”

টগর হাসি হাসি মুখ করে শুধালো,

” দোস্ত! ছোট বোনটাকে ভাবি ডাকা প্রাকটিস শুরু করবো কি? ”

তূর্ণ এমন চাহনিতে তাকালো যে টগর দাঁত কেলিয়ে হাসলো। ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো,

” ডাকবো? ”

তূর্ণ হাঁ বা না কিছুই বললো না। এতে লাই পেয়ে দানিশ স্ত্রীকে বললো,

” মনি! বিয়ের শপিং শুরু করে দাও। অবশেষে দোস্তের ব্যাচেলর লাইফের দ্যা এন্ড হতে চলেছে। ”

তূর্ণ ওদের সবার খুশি খুশি ভাব দেখে এক বালতি পানি ঢেলে দিলো।

” ইয়াহ। তোর দ্বিতীয় বিয়ের জন্য পাত্রীর খোঁজ চলছে। শীঘ্রই পেয়ে যাবো। ”

হতবিহ্বল হলো দানিশ! মনিকা গাল ফুলিয়ে বললো,

” নিজে তো চিরকুমার। এখন আমার বরের দিকে কুনজর দিচ্ছিস? ”

টগর পাশ থেকে বলে উঠলো,

” আহা গো! টুরু লাভ! এই আনন্দে ট্রিট চাই। ”

দানিশ বললো,

” চিকনা থেকে মোটকা হ। দেবো নে। ”

” হুহ্! লাগবে না তোর ট্রিট। তূর্ণ দেবে নে। ”

রাজীব হেসে বললো,

” হাঁ। তূর্ণ তো তোর জন্য ভার্সিটিতে ক্যান্টিন খুলছে। যখন তখন খাদ্য সাপ্লাই। ”

মৃদু হাসলো তূর্ণ। তখন অতিথিদের জন্য নাস্তা নিয়ে হাজির হলেন তাসলিমা। সাথে হেল্পিং হ্যান্ড। কুশলাদি বিনিময় হলো। কয়েক সপ্তাহ বাদে বন্ধুরা বন্ধুরা দারুণ সময় কাটালো।

তমসায় আবৃত বসুন্ধরা। এতদিন বাদে ফুপুকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা দুয়া। ফুফাতো বোন তানুর সাথে দুর্দান্ত সময় কাটছে। তানজিনা সে-ও শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এলো। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর তিন বোনের মধ্যে কয়েক ঘন্টাব্যাপী আড্ডা চললো। এসবের ভিড়ে সাজেদা আর বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। নির্বিঘ্নে অতিবাহিত হলো রাত্রি। তবে পরেরদিন হলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত কাণ্ড।

দুপুরের ভোজন সম্পন্ন করে লিভিং রুমে সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন সাজ্জাদ সাহেব। তখন সেখানে উপস্থিত হলেন সাজেদা। তাহমিদা এবং তানজিনা টেবিল গুছগাছ করছে। দুয়া ভার্সিটি থেকে এখনো ফেরেনি। জাহিন ও তানু রুমে কম্পিউটারে গেমস খেলছে। সাজেদা উশখুশ করে প্রশ্ন করলো,

” ভাইয়া কিছু তো বললে না। ”

পত্রিকায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই সাজ্জাদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,

” কোন বিষয়ে? ”

” ওই যে। দুয়া মা আর জাবিরের বিষয়ে। ”

তাহমিদা এবং তানজিনা কাজের ফাঁকে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। দু’জনের কান ই সজাগ। সবটা শুনছে। সাজ্জাদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে পত্রিকা ভাঁজ করে টেবিলের ওপর রেখে দিলেন। নরম স্বরে বললেন,

” দেখ সাজেদা। তুই যে প্রস্তাব দিয়েছিস তা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। তবে মেয়ে বড় হলে এমন প্রস্তাব অহরহ আসে। স্বাভাবিক। ”

” হুম। ”

” তবে আমি এই মূহুর্তে দুয়া’র বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছি না। মেয়েটার বয়স কম। পড়ালেখা করছে। করুক। বিয়েশাদী নিয়ে পড়ে ভাবা যাবে। ”

” হাঁ ঠিক আছে। এখুনি বিয়েশাদীর মধ্যে জড়াতে হবে না। আমি চাইছিলাম ওদের সম্পর্কের একটা নিশ্চয়তা। ধরো এনগেজমেন্ট কিংবা আকদ করিয়ে রাখা হলো। সময় হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়েটা হবে। ”

তাহমিদা এবং তানজিনা কাজকর্ম সেরে এখানে উপস্থিত হলো।

” এনগেজমেন্ট কিংবা আকদ! এসব কি বলছিস? ছেলেমেয়ে রাজি কিনা জানি না। অভিভাবকের সম্মতি আছে কি নেই। তুই এতদূর অবধি ভেবে ফেলেছিস! ”

সাজ্জাদ সাহেবের কণ্ঠে বিস্ময়!

” কেন ভাইয়া? ভাবতে কোনো অসুবিধা আছে কি? একদিন না একদিন তো হবেই। ক’দিন আগে হলে কি এমন সমস্যা? ”

সাজ্জাদ সাহেব মৃদু স্বরে বললেন,

” আগেভাগেই এত ভাবিস না বোন। ভাবনা বাস্তবে রূপান্তরিত নাও হতে পারে। তখন খারাপ লাগবে। ”

” ভাইয়া তুমি এসব ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কি বলছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি কি এই প্রস্তাবে রাজি নও? ”

তাহমিদা এবং তানজিনা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সাজ্জাদ সাহেব এর পানে। সাজ্জাদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

” তোর প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বোন। মন খারাপ করিস না। ”

হতভম্ব হলেন সাজেদা!

” কেন? ”

” কারণ আমি ইতিমধ্যে কারো কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ”

চরম আশ্চর্যান্বিত হলেন সাজেদা এবং তানজিনা! সাজেদা বুঝতেই পারছেন না ওনার কিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা উচিত। তার এতদিনের স্বপ্ন এভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে!

চলবে.
চলবে.

[ আসসালামু আলাইকুম পাঠক বন্ধুরা। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। কেমন লাগছে গল্পটি? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here