তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -০৬+৭

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৬

সুষ্ঠু রূপে চলমান রিসিপশন পার্টি। আগত অতিথিরা একে অপরের সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন। এসবের ভিড়ে একমাত্র অস্বস্তিতে ভুগছে জাহিরাহ্ দুয়া। মেয়েটা এক কিনারে দাঁড়িয়ে। কেমন উশখুশ করছে। মায়া মায়া চোখ জোড়া সাহায্যের জন্য কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সকলেই কমবেশি ব্যস্ত। কাকে ডাকবে সে!

তূর্ণ, কবির এবং মিহাদ একসাথে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছিল। হঠাৎ তূর্ণ’র দৃষ্টি আবদ্ধ হলো দুয়া’তে। মেয়েটা কেমন উশখুশ করছে। আশপাশে তাকাচ্ছে। মুখখানি মলিন দেখাচ্ছে কেন? কিছু হয়েছে কি? তূর্ণ একবার এগোতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে থেমে গেল। নজর বুলাতে লাগলো আশপাশে। খুঁজে পেল কাঙ্ক্ষিত মানবীকে। অগ্রসর হলো সেদিকে।

” তৃষা! ”

তৃষা রঙঢঙ করে সেলফি তুলছিল একাকী। ভাইয়ের ডাকে পিছু ঘুরে তাকালো।

” ভাইয়া! কিছু বলবে? ”

আশপাশে নজর বুলিয়ে তূর্ণ মৃদু স্বরে বললো,

” হুঁ। দুয়া’র কাছে যা। ওর বোধহয় হেল্প দরকার। ”

” হেল্প! ওর আবার কি হলো? আচ্ছা আমি দেখছি। ”

মোবাইল হাতে নিয়ে দুয়া’র পানে অগ্রসর হতে লাগলো তৃষা। সেদিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস ফেললো তূর্ণ। সরে গেল সেথা হতে।

দুয়া বড় বোনকে দেখে সেদিকে অগ্রসর হতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ওর বাম পাশে এসে দাঁড়ালো তৃষা।

” দুয়া! ”

ডাক শুনে ওর দিকে তাকালো দুয়া। ঝলমল করে উঠলো মুখশ্রী।

” কি রে কি হয়েছে? এভাবে মুখ লটকে আছিস কেন? এনি প্রবলেম? ”

” হুঁ। ”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। তৃষা শুধালো,

” কি হয়েছে? বল। ”

দুয়া ওর কাছে এগিয়ে গেল। ক্ষীণ স্বরে বললো,

” দোস্ত লেহেঙ্গার চেইন! ”

মেয়েটার বাম হাত হিজাবের অন্তরালে পৃষ্ঠদেশে ঠেকে। সমস্যা বুঝতে সক্ষম হলো তৃষা। আশ্বস্ত করে বললো,

” নো টেনশন বেবি। ম্যায় হু না। আমার সাথে চল। ”

ওকে নিয়ে নিরালায় অগ্রসর হলো তৃষা।
___

ভোজন পর্ব শুরু হয়েছে। বড়সড় একটি টেবিল দখল করেছে তরুণ-তরুণীদের দল। পাশাপাশি বসে তূর্ণ ও দুয়া। পোলাও, রোস্ট খাচ্ছে তূর্ণ। পাশে বসে থাকা মেয়েটি পোলাওয়ের সঙ্গে ডিম কোর্মা খাচ্ছে। ওয়েটার টেবিলে থাকা সকলকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছিল। তূর্ণ এর প্লেটে গরুর মাংস সার্ভ করে দুয়া’র পাশে এসে দাঁড়ালো।

” ম্যাম আপনাকে রোস্ট দেই? ”

দুয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। ওয়েটার রোস্ট এর ট্রেতে হাত রাখতেই তূর্ণ আপত্তি জানালো।

” উঁহু। ওকে রোস্ট দিয়েন না। গরুর মাংস দিন। ”

হতবাক হলো দুয়া। তূর্ণ’র পানে মৃদু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো,

” তুমি খাচ্ছো খাও না। আমি সময় হলে নিয়ে নেবো। এখন আমাকে রোস্ট খেতে দাও। ”

” বললাম তো না। ”

” তোমার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই তূর্ণ ভা ই য়া। ”

তূর্ণ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

” রোস্টে বাদাম মিক্স করা। তোর তো আবার অ্যালার্জি। বাদাম মুখে পড়লেই ছোলা মুরগির মতো দাপাদাপি করিস। এখন ভরা আসরে যদি দাপাদাপি করে সবাইকে এন্টারটেইন করতে চাস দেন গো অ্যাহেড। ”

মুখখানি চুপসে এতটুকু হয়ে গেল। দমে গেল মেয়েটা। আস্তে করে ওয়েটারকে বললো,

” রোস্ট লাগবে না। গরুর মাংস দিন। ”

ওয়েটার তাই করলো। এটা লক্ষ্য করে ওদের এক দূর সম্পর্কের ছেলে কাজিন শুধালো,

” এটা কি হলো? তূর্ণ ভাইয়া বলতেই দুয়া রোস্ট মানা করে দিলো! রোস্টটা কিন্তু খুব টেস্টি হয়েছে। ”

দুয়া মিনমিন করে বললো,

” রোস্টে বাদাম আছে। বাদামে আমার অ্যালার্জি। তাই ভাইয়া মানা করেছে। ”

কাজিনটা গদগদ হয়ে বললো,

” আরে বাহ্! ভাই হয়ে বোনের কি দারুণ কেয়ার! চমৎকার! ”

সকলের অলক্ষ্যে দুয়া’র মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আসলেই এই মানুষটি ওর সাথে যেমন আচরণ ই করে থাকুক না কেন বেলাশেষে এটাই চরম সত্য! মানুষটি ওর বড্ড কেয়ার করে। আগলে রাখে সর্বক্ষণ!

তমসায় আবৃত ধরিত্রী। মিহি হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে কায়া। বেলকনিতে বেতের তৈরি সোফায় বসে কবির। তখন নিঃশব্দে ডান পাশে এসে দাঁড়ালো সহধর্মিণী সিনথিয়া। ওর উপস্থিতিতে মুচকি হাসলো কবির। ডান হাতটি বাড়িয়ে দিলো কিন্তু দৃষ্টি নিবদ্ধ সম্মুখে। স্বামীর বাড়িয়ে দেয়া হাতটি দেখে লাজে রাঙা হলো সিনথিয়া। কম্পিত হাতটি তুলে দিলো স্বামীর হাতে। কোমল হাতটি আঁকড়ে ধরে ওকে ডান পাশে বসালো সিনথিয়া। পাশাপাশি বসে নবদম্পতি। নীরবে অতিবাহিত হলো কয়েক পল। নীরবতা ছেদ করে কবির শুধালো,

” কখনো কাউকে ভালোবেসেছো সিনু? ”

চমকালো মেয়েটি! এমন সুন্দর-মিষ্টি মুহুর্তে এমন প্রশ্ন সে মোটেও আশা করেনি। বুঝতে পারছে না ঠিক কেমন জবাব দেয়া উচিত। জবাব না পেয়ে কবির পুনরায় প্রশ্ন করলো,

” বললে না তো। কাউকে ভালোবেসেছো কখনো? ”

” না। ”

এক শব্দে জবাব। মৃদু হাসলো কবির।

” আমি কিন্তু ভালোবেসেছি।‌ খুব করে ভালোবেসেছি। তার বিরহে কাতর হয়ে কাটিয়েছি অসংখ্য দিবা রাত্রি।”

হতবিহ্বল হলো সিনথিয়া! এসব কি শুনছে সে! তার স্বামী কাউকে ভালোবাসতো! কিংবা এখনো বাসে! তবে তাকে বিয়ে করলো কেন? হৃদয়ের অন্তঃস্থলে একজনকে রেখে অন্যজনকে জীবনে জড়ানো কি সমীচিন? ভাবনায় ছেদ পড়লো। কবির বাহিরে তাকিয়ে বলে গেল আপনমনে,

” তাকে প্রথমবার দেখেছি দুই মাস পূর্বে। তার পড়নে ছিল নীলাভ একটি শাড়ি। আমার সম্মুখে মাত্র কয়েক হাত দূরত্বে বসে ছিল মেয়েটি। মাথায় বড় করে ঘোমটা টেনে রাখা। অবনত লাজুক মুখশ্রী। তার লাজে রাঙা মুখখানি, অধর কোলে চিকন হাসির রেখা, গাল ছুঁয়ে থাকা ছোট ছোট চুল। সবটাই আমায় বিমোহিত করলো! নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে রইলাম অপলক দৃষ্টিতে। ধুকপুক ধুকপুক করছিল আমার হৃদয়ে। ভয় হচ্ছিল এই ধুকপুকানি অন্য কারোর কানে না পৌঁছে যায়। যেখানে আমি অপলক চাহনিতে তাকিয়ে ছিলাম সেখানে সম্মুখে বসে থাকা রমণী ছিল নি”ষ্ঠুর। তার মায়াবী আঁখি জোড়া একটিবারের জন্যও আমায় দেখলো না। ধন্য করলো না আমায়। এই প্রথমবারের মতন আমার আফসোস হলো। তবে কি আমি যথেষ্ট সুদর্শন নই? ”

মুচকি হেসে পুনরায় বলতে লাগলো,

” সেদিন মাত্র ক্ষণিকের সাক্ষাত।‌ এরপর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ এনগেজমেন্টের দিন। তিন সপ্তাহ বাদে। এই তিনটি সপ্তাহ আমার জন্য কতটা কষ্টকর, যন্ত্রণাদায়ক ছিল বলে বোঝানো সম্ভব নয়। প্রায় অধিকাংশ রাত্রি আমার নির্ঘুম কেটেছে। ঘুম আসবে কি করে? চক্ষুপাতায় যে এক মায়াপরী এসে এসে দেখা দিতো। আমার মনপ্রাণ ছুঁয়ে চলে যেতো নির্দয়তার সহিত। আমি টেরও পেলাম না কখন এক অনন্যা মায়াপরী আমায় ভালোবাসা নামক মায়াজালে জড়িয়ে নিলো। বানিয়ে দিলো প্রেমিক পুরুষ। শুরু হলো আমার এক নতুন সূচনা। অপ্রেমিক থেকে প্রেমিক হওয়ার যাত্রা। এরপরের সময়গুলো বোধহয় একটু দ্রুত গেল। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। হালাল রূপে আমার মন গহীনে লুকায়িত প্রেমিকা হলো চির সঙ্গিনী। ”

হতবিহ্বল মেয়েটি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে ভুলে গেল। ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো স্বামীর পানে। মুচকি হেসে কবির উঠে দাঁড়ালো। হাঁটু গেড়ে বসলো তার মায়াপরীর সম্মুখে। পুরুষালি দু হাতের আঁজলায় ভরে নিলো কোমল হাত দু’টো। সিক্ত নয়নে নয়ন মিলিয়ে বললো,

” তুমি ছিলে আমার মন গহীনে লুকায়িত প্রেমিকা। এখন হাতে হাত রেখে চলবে কি বাকিটা জীবন? হবে কি আমার চিরসঙ্গিনী? ”

ঘোরে আচ্ছন্ন মেয়েটি হাঁ সূচক মাথা নাড়লো। পুলকিত হলো প্রেমিক পুরুষটির হৃদয়! মেয়েটির বাম কপোলে আলতো করে রাখলো ডান হাতটি। অধর স্পর্শ করলো ললাটের মধ্যিখানে। অবশেষে তার হৃদয়ে লুকানো প্রেম পরিণতি পেল!

স্নিগ্ধ এক সকাল! বিছানায় ঠিক মধ্যিখানে শুয়ে এক ললনা। পাতলা কাঁথা জড়ানো দেহে। দীঘল কালো কেশ এলোমেলো রূপে বালিশের বুকে ছড়িয়ে। মেয়েকে ডাকতে ডাকতে কক্ষে প্রবেশ করলেন তাহমিদা।

” দুয়া! অ্যাই দুয়া! ওঠো। ”

মেয়ের কি কোনো খেয়াল আছে? সে তো গভীর ঘুমে মগ্ন। তাহমিদা গিয়ে বসলেন মেয়ের শিয়রে। কেশে হাত বুলাতে বুলাতে ডাকতে লাগলেন,

” দুয়া ও দুয়া! ওঠো মা। সাড়ে আটটা বাজে। দশটায় না ক্লাস আছে? দুয়া? ”

” উম্! ”

মায়ের স্নেহের পরশ পেয়ে দুয়া মায়ের কোলে মাথা এলিয়ে দিলো। তাহমিদা মুচকি হেসে ডাকতে লাগলেন। হাত বুলিয়ে চলেছেন কেশে। খানিক বাদে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো দুয়া। আদুরে কণ্ঠে ডাকলো,

” মা! ”

মেয়ের আদুরে কণ্ঠে পরাণ জুড়ালো ওনার।

” হাঁ মা! এবার উঠে পড়ো তো। দ্যাখো কয়টা বাজে। ভার্সিটি যেতে হবে না? ”

” হুঁ। উঠছি। তুমি একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। ভালো লাগছে। ”

বিনা বাক্যে তাহমিদা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। মিনিট পাঁচেক বাদে ঘুম কেটে গেল। মাতৃ পরশ ছেড়ে উঠে বসলো মেয়েটি। তাহমিদা মেয়ের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিলেন। বললেন,

” ফ্রেশ হয়ে নাও। ”

” হুম। ”

হাই তুলে বিছানা ত্যাগ করলো দুয়া। পোশাকআশাক ও তোয়ালে নিয়ে পা বাড়ালো ওয়াশরুমের দিকে। তাহমিদা মেয়ের অগোছালো বিছানা গুছাতে লাগলেন।

” আম্মু! ও আম্মু! ”

ডাইনিং টেবিলে খাবার গুছিয়ে রাখছিলেন তাসলিমা। তখনই কর্ণ কুহরে পৌঁছালো ছেলের কণ্ঠ। মা মা করে গরুর মতো চেঁচামেচি করছে কেন? বিরক্ত হয়ে ছেলের রুমের দিকে পা বাড়ালেন উনি।

রুমের এলোমেলো দশা। খাটের ওপর পড়ে রয়েছে ভেজা তোয়ালে। কয়েকটা শার্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিছানায়। উদোম দেহে শুধুমাত্র প্যান্ট পড়ে কাবার্ড তছনছ করে চলেছে তূর্ণ। গলায় ঝুলিয়ে রাখা শুকনো একটি তোয়ালে। এমন হযবরল অবস্থা দেখে চোখমুখ কুঁচকে ফেললেন তাসলিমা। বাজখাঁই কণ্ঠে বলে উঠলেন,

” কি হয়েছে এমন ম্যাঁ ম্যাঁ করছিস কেন? ”

মায়ের কণ্ঠ শুনে তূর্ণ পিছু ঘুরে তাকালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

” আমার নেভি ব্লু শার্টটা কোথায়? খুঁজে পাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করে দাও। লেট হয়ে যাচ্ছে। ”

” মা’কে তুমি শাবানা পেয়েছো? যে যেমন খুশি তেমন বানিয়ে খাবে? মোটেও নয়। মায়ের এখন বয়স হয়েছে। সে আর ফ্রিতে কামলা খেটে ম”রবে না। ”

হকচকিয়ে গেল তূর্ণ! কিসের মধ্যে কি?

” তুমি এসব কি বলছো আম্মু? এখানে শাবানা আলমগীর কোথা থেকে এলো? আর কিসের কামলা খাটা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। ”

ভেজা তোয়ালে যথাস্থানে রাখতে রাখতে তাসলিমা বললেন,

” হাঁ। তুমি তো কচি খোকা। কিছুই বোঝো না। সেখানে তোমার বয়সী বুঝদার ছেলেরা বিয়েশাদী করে এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে। ”

” হোয়াট? ”

” ইংরেজি ঝাড়বে না। আটাশ বছরের দা”মড়া ছেলে এখনো কোনো দরকার পড়লেই ম্যাঁ ম্যাঁ করে বেড়াও। বউ বউ করবে কখন? আটচল্লিশে গিয়ে? ”

তূর্ণ বড় করে শ্বাস ফেলে গলা থেকে তোয়ালে খুলে ফেললো। ভেজা চুলে তোয়ালে চালাতে চালাতে বললো,

” আম্মু প্লিজ সকাল সকাল শুরু করো না। ”

অগোছালো বিছানা গোছানোর ফাঁকে ছেলের দিকে তাকালেন তাসলিমা। জিজ্ঞেস করলেন,

” তাহলে কখন করবো? মাঝরাতে? নাকি গোধূলি লগ্নে? ”

” আম্মু! ”

” মু মু করবে না। বয়স হয়েছে। এখন আর ফ্রিতে কামলা খাটতে পারবো না। একটা লাল টুকটুকে বউ নিয়ে এসো। তখন শাশুড়ি বৌমা মিলে জমিয়ে সংসার করবো। ”

তূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাবার্ড থেকে কালো রঙের শার্ট বের নিলো। তা গায়ে জড়াতে জড়াতে বললো,

” সময় হলে আমি নিজেই বিয়ের কথা বলবো আম্মু। তুমি শুধু শুধু চাপ নিয়ো না। বরং ধীরে সুস্থে বৌমাকে বরণ করার আয়োজন করো। ”

ভেংচি কাটলেন তাসলিমা।

” ইহ্! বউয়ের কোনো হদিশ নেই। এখন থেকেই নাকি আয়োজন শুরু করবো। শোনো তূর্ণ! তুমি শুধু আমার জন্য লাল টুকটুকে বৌমা নিয়ে এসো। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বরণ করে নেবো। ”

মুচকি হেসে তূর্ণ বললো,

” আচ্ছা। আজকেই বাজার থেকে তোমার জন্য লাল টুকটুকে পুতুল বৌমা নিয়ে আসবো। তুমি যত্ন সহকারে বরণ করো। ”

এবার মেজাজ খারাপ হলো তাসলিমার।

” হাঁ হাঁ তাই তো করবে। বাপের মতো বুড়ো বয়সে বিয়ে করে কোনো কচি মেয়ের জীবনটা ত্যানাত্যানা করবে। ”

তূর্ণ ভ্রু কুঁচকে শুধালো,

” কচি মেয়ে! লাইক ইউ! ”

” তা নয়তো কি? তেত্রিশ বছরে বিয়ে করতে গেছিল আপনার বাপজান। আমার মতো বিশ বছরের পুঁচকে মেয়েকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিলো। আর কপালটা পুড়লো।”

” সত্যিই কপাল পুড়েছে? তাহলে কি ডিভোর্সের জন্য ফাইল করবো? ”

তেঁতে উঠলেন তাসলিমা। ছেলের বাহুতে আলতো চ ড় মে*রে বললেন,

” ফাজিল ছেলে! মা-বাবার সংসারে আগুন লাগানো হচ্ছে? ”

দাঁত কেলিয়ে হাসলো তূর্ণ। মা’কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পরিপাটি হতে হতে বললো,

” মা খাবার রেডি করো। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। ভার্সিটি যেতে হবে। ”

ছেলের অগোছালো কামরা ফিটফাট করে সেথা হতে প্রস্থান করলেন তাসলিমা। মৃদু হেসে উঠলো তূর্ণ।
#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৭

ইউনিভার্সিটি চত্বর! বৃক্ষতলে বসে রয়েছে বন্ধুরা। সূর্য্যি মামার সংস্পর্শে স্বেদজল উপস্থিত মুখশ্রীতে। সকলে অপেক্ষায় দুই মানবীর। কিন্তু তাদের দেখা ই নেই। আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে? পুষ্পি হাত দিয়ে বাতাস করতে করতে শুধালো,

” ওই দুই মাইয়া গেছেডা কই? বাড়িত থে আসতে এতক্ষণ লাগে? মনে হইতাছে মঙ্গল থে রওনা দিছে। ”

বিশাল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

” একদম ঠিক কইছোছ। অগো বাড়ি তো মঙ্গলের এক চিপায়। জানোছ না? ”

” আস্ত অলস। ”

পুষ্পি কথাটা বলতে না বলতেই মৃদু চিৎকার করে উঠলো। ওর চিৎকারে হতবিহ্বল হয়ে গেল বাকিরা! বিন্দু বুকে হাত রেখে ভীত স্বরে শুধালো,

” ক্ কি হইছে? চিৎকার করোছ ক্যান? দিনদুপুরে ভূত দেখছোছ নি? ”

” ইয়েস বেবি। ওই যে দুই মামদো ভূত আইতাছে। ”

পুষ্পি’র ইশারা মোতাবেক ওরা তাকালো পেছনে। স্বস্তির নিঃশ্বাস নির্গত হলো। দুয়া এবং তৃষা হেলেদুলে আসছে। দুয়া এসে ধপ করে বসলো বিন্দুর পাশে। তৃষা বসলো পুষ্পির পাশে। দু’জনেই হাঁপিয়ে গেছে। দুয়া ব্যাগ থেকে ওয়াটার বোতল বের করে ঢকঢক করে তিন ঢোকে পানি পান করলো।

” পানি দে দোস্ত। ”

তৃষা হাত বাড়িয়ে। দুয়া ওর হাতে বোতল ধরিয়ে টিস্যু দিয়ে মুখশ্রী হতে স্বেদজল মুছে নিলো। পানি পান করা শেষে বোতল ফিরিয়ে দিলো তৃষা। এতক্ষণে ওরা দু’জন লক্ষ্য করলো বাকিরা ওদের দিকে কেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

” কি হয়েছে? এমন পুলিশি নজরে তাকিয়ে আছিস কেন? ” প্রশ্ন করলো দুয়া।

” আমরা চোর না ডাকাত? নজর ঠিক কর। ”

তৃষা বলতে না বলতেই খ্যাঁক করে উঠলো বিশাল।

” ফা’জিল মাইয়া! মডেলিং কইরা হেলতে দুলতে দুলতে আইছে! আইয়া আবার ভাব নেয়। আমরা বুঝি অদৃশ্য?”

পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দুয়া মেকি হাসলো। থেমে থেমে বললো,

” অদৃশ্য হতে যাবি কেন? দেখেছি তো। বুঝতেই পারছিস কি গরম। ”

বিন্দু ভেংচি কেটে বললো,

” হ তোদেরই খালি গরম লাগে। আমরা তো এসির তলে বসে বসে হাওয়া খাইতাছি! ”

তৃষা অবাক হওয়ার ভান করে বললো,

” এসি! ওহ্ মাই আল্লাহ্! ওই টাকলু অধ্যক্ষ এসি লাগাইলো কবে? ”

দুম করে ওর পিঠে এক ঘু ষি মে|রে দিলো পুষ্পি। ক্ষ্যা”পা ষাঁড়ের মত গর্জন করে উঠলো তৃষা।

” পুষ্পা রে! হাত সামলা। নইলে তোরে পিডাইয়া কিন্তু বিল্লু অর্জুন বানাই দিমু। ”

তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানালো পুষ্পি। শীতল কণ্ঠে বললো,

” তৃষ! ভালো হইয়া যা। ভালো হইতে পয়সা লাগে না। তোর কত বড় সাহস! আমার আল্লু বেবিরে বিল্লু ডাকোছ! ”

” ডাকছি তো কি হইছে? আল্লু না বিল্লু না ঘিল্লু! নামে কি আসে যায়? ”

” অফকোর্স আসে যায়। তোরে যদি এহন তৃষ্ণা ডাকি? ভালো লাগবে? ”

” নিশ্চয়ই লাগবে। ”

গদগদ কন্ঠে বললো তৃষা। ওদের দু’জনের কাণ্ড দেখে দুয়া’র কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে হলো। ও কিছুটা তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে ওদের দুজনকে বললো,

” আল্লু হেটার্স আর ডাই হার্ট ফ্যান! তোরা থামবি? গরমের মধ্যে কি শুরু করছোছ? ”

” ক্যাচাল শুরু করছে। ”

ফোঁড়ন কেটে বললো ওদের বন্ধুমহলের রত্ন! সবচেয়ে পড়ুয়া ছেলেটা। তিয়াশ! চোখে স্বল্প পাওয়ার চশমা। শ্যামবর্ণ মুখ গরমে রক্তিম হয়ে উঠেছে। পুষ্পি দাঁতে দাঁত চিবিয়ে যেই না কিছু বলতে উদ্যত হলো অমনি উঠে দাঁড়ালো তিয়াশ। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাতঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে বললো,

” ক্লাস শুরু হতে পাঁচ মিনিট বাকি। তোদের ক্লাসে যাওয়ার ইচ্ছা আছে কি নেই? ”

তড়িৎ উঠে পড়লো দুয়া। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বললো,

” অফকোর্স আছে। ”

দুয়া’র দেখাদেখি বাকিরাও উঠে পড়লো। বিশাল অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো,

” শুরুতেই ওই ব্যা টা টাকলার ক্লাস। ধুৎ! ভাল্লাগে না। ”

সবাই মিলে পা বাড়ালো নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টের দিকে। তৃষা ও পুষ্পি বায়োলজি ডিপার্টমেন্ট। বাকিরা অ্যাকাউন্টিং এ।

বহু কষ্টে প্রথম ক্লাস শেষ করলো তৃষা, পুষ্পি। কাঁদো কাঁদো মুখ করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে।

” দোস্ত রেডি থাক। সুনামি আসছে। আজকের পড়া রেডি করছোছ তো? ”

পুষ্পি উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো,

” আজ আর ভুল করিনি। ঊনসত্তর থেকে ঊনআশি পৃষ্ঠা পুরো ঠূটস্ত করে আসছি। পড়া ধরলেই ফরফর করে বলে দেবো। ”

তৃষা ওর মাথায় গাট্টা মে রে বললো,

” গা’ধির গা’ধি। পড়া দিছে ছিয়ানব্বই পৃষ্ঠা থেকে। আর উনি পড়ে আসছে কি! ”

আহাজারি করে উঠলো পুষ্পি।

” ইন্না লিল্লাহ। শেষমেষ নয়ছয় আমারে এমনে শেষ কইরা দিলো? ও আল্লাহ্ গো! এহন কি হবে? রাক্ষস যে আমারে জীবন্ত অপমান করবে! ”

তৃষা ক্ষি প্ত হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু থেমে গেল আগন্তুককে দেখে। তৎক্ষণাৎ উঠে পড়লো ওরা সকলে।

” আসসালামু আলাইকুম স্যার। ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”

উপস্থিত অজস্র ছাত্রীর ক্রাশ। তাদের হার্টথ্রোব ইয়াং লেকচারার। পড়নে ফর্মাল গেটআপ। শুভ্র রঙা শার্ট কালো বেল্টের অন্তরালে ইন করে রাখা। পায়ে কালো ব্র্যান্ডেড শু। শার্টের দু স্লিভ গুটিয়ে কনুইয়ে তুলে রাখা। বাঁ হাতে দৃশ্যমান সিলভার ডায়াল ওয়াচ। বিদেশিদের মতন লালচে চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। চোখে চিকন ব্রাউন ফ্রেমের চশমা। গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। গৌর বর্ণের মুখশ্রী অত্যাধিক আকর্ষণীয় লাগছে! লাইক অ্যা ফরেনার! ছাত্রীরা বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে ছিল তাদের ক্রাশের পানে। আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! নামটা যেন ওদের হৃদয়ের অলিগলিতে পোস্টার ছাপিয়ে রাখা। তূর্ণ খেয়াল করলো অধিকাংশ ছাত্রীরা ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ও যে সবাইকে বসতে ইশারা করেছে তা অবধি খেয়াল করেনি। শুধুমাত্র ছেলেরা এবং অল্প কিছু মেয়ে বসেছে। বাকিরা দাঁড়িয়ে। তূর্ণ এবার একটু উঁচু আওয়াজে বললো,

” সিট ডাউন এভ্রিওয়ান। ”

এবার বোধহয় কাজে দিলো। তড়িৎ বসে পড়লো সকলে। তূর্ণ ফিরলো পরিচিত ফর্মে! হাতে থাকা
‘ ইন্ট্রোডাক্টরি বায়োকেমিস্ট্রি ‘ বইয়ে একপলক তাকিয়ে স্টুডেন্টদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। এতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল সবার।

” সকলে গত দিনের টপিক দেখে এসেছেন তো? ”

স্টুডেন্টরা ভীত নয়নে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। এবার কি হবে? কপালে আছে কি? সসম্মানে বসে থাকা নাকি শীতলতম অপমান?

ক্যান্টিনে বসে রয়েছে বন্ধুরা। পুষ্পির মুড অফ। তা লক্ষ্য করে তিয়াশ শুধালো,

” এর আবার কি হয়েছে? মুখ পেঁচার মতো করে রাখছে কেন? ”

” আর বলিস না ভাইয়া..! ”

তৃষা কথাটা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই ক্ষি প্ত বাঘিনী রূপে আবির্ভূত হলো পুষ্পি।

” খবরদার তৃষা! তোর ওই ব’জ্জাত ভাইয়ের নাম মুখেও নিবি না। আস্ত এক বদ মাস্টার! মাইয়াগো ক্রাশ দেইখা সাপের পাঁচ পা দেখছে নি? ”

বন্ধুরা কেউই কিছু বুঝতে পারলো না। দুয়া ভেজিটেবল রোল এ কা’মড় বসিয়ে শুধালো,

” কি হয়েছে পুষ্পি? তূর্ণ ভাইয়ার উপর এত ক্ষে পে আছিস কেন? সে না তোর একশো উনপঞ্চাশ তম ক্রাশ? ক্রাশের ওপর কেউ এভাবে ক্ষি প্ত হয় নাকি? ”

” আর ক্রাশ! বা* ক্রাশ। আস্ত এক বদ। ”

তিয়াশ শুধরে দিলো,

” মুখ খারাপ করিস না পুষ্পি। মনে রাখিস সে আমাদের লেকচারার। সম্মানীয় লোক। ”

” রাখ তো তোর সম্মান। উনি আমার সম্মান রাখছে যে আমি ওনারে সম্মান দেবো? ”

বিশাল ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,

” মানে? উনি তোর সম্মান বাজারে বিক্রি করে দিছে নাকি? ”

” তার চেয়ে কম কিছু না। পুরো ক্লাসের সামনে আমাকে..! ”

দুয়া এবার একটু সিরিয়াস হলো।

” তোকে কি করছে সেটা খোলাসা করে বলবি তো? তূর্ণ ভাইয়া কিন্তু অহেতুক কিছু করে না। সত্যি করে বল আগে তুই কি কুকর্ম করছিস? ”

” আমি কুকর্ম করছি? ”

তেঁতে উঠলো পুষ্পি। ওকে সামলিয়ে তৃষা মৃদু স্বরে বললো,

” আর বলিস না। এই মাইয়া ভাইয়ের ব্যাক টু ব্যাক তিন ক্লাসে পড়া পারে নাই। তুই তো জানিস ই তূর্ণ ভাইয়া একবার, দুইবার পর্যন্ত ছাড় দেয়। কিন্তু তৃতীয়বার? সোজা শাস্তি। ”

” শাস্তি? চমৎকার তো! তা কি শাস্তি দিছে? ”

বিন্দুর কৌতূহলী মুখ দেখে পুষ্পির মেজাজ খারাপ হলো‌। কেমন শ*তান বন্ধু! তৃষা হাসি চেপে বললো,

” পুরো ক্লাসের সামনে ওকে হোয়াইট বোর্ডে ত্রিশ বার লিখিয়েছে ‘ আমি পড়া চোর। ‘ বুঝতেই পারছিস হোল ক্লাসের সামনে, এর উপর ওর কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং হাতের লেখা‌। সব মিলিয়ে প্রেস্টিজ পুরো পাংচার! ”

হা হা করে হেসে উঠলো ওরা সবাই। তিয়াশ অবধি বাদ গেল না। লজ্জায় পুষ্পির মুখখানি এতটুকু হয়ে গেল।

” বদ মাস্টার। এর কোনোদিন ভালো হইতো না। বউ হইবো ফেল্টু। পড়া চোর! দেখে নিস। ”

দুয়া তড়িৎ প্রতিবাদ জানালো।

” ও য়ে! আমার না হওয়া ভাবীর নামে বদ দোয়া দিবি না। মে রে ভূত বানিয়ে দেবো। এমনিতেই তূর্ণ ভাইয়ার বিয়ে খাওয়ার জন্য কত্ত এক্সাইটেড হয়ে আছি। কবে যে ভাই বিয়ে করবে! ”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো দুয়া। বাকিরা মুখ টিপে হাসতে লাগলো। পুষ্পি’র মুখখানি দেখার মতো হয়েছে কিনা!

আঁধার রজনী। কলিংবেলের শব্দ পেয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন তাহমিদা। শাড়ির আঁচলে ভেজা হাত মুছতে মুছতে দরজার দিকে অগ্রসর হলেন। পুনরায় কলিংবেল বাজতে না বাজতেই দরজা খুলে গেল। চক্ষুতারায় দৃশ্যমান হলো বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মানবের ক্লান্ত বদন।

” আসসালামু আলাইকুম। ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”

সালামের জবাব দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন সাজ্জাদ সাহেব। ওনার হাত থেকে অফিসের ব্যাগ এবং পলিথিন এর ব্যাগ দু’টো নিলেন তাহমিদা। সাজ্জাদ সাহেব ক্লান্ত দেহে সোফায় বসে পড়লেন। তাহমিদা দ্রুততার সহিত গোলাকার টি টেবিলের ওপর পলিথিনের ব্যাগটি রেখে সোফায় রাখলেন অফিস ব্যাগ। অতঃপর ফুল স্পিডে ফ্যান চালু করে ডাইনিং টেবিল হতে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলেন। সাজ্জাদ সাহেব ততক্ষণে শার্ট ঢিলে করে আয়েশ করে বসেছেন। স্ত্রীর হাত থেকে পানি নিয়ে উনি তিন ঢোকে পানি পান করলেন। সন্তুষ্ট চিত্তে হাসলেন। তাহমিদা মুচকি হেসে গ্লাস রাখলো টি টেবিলের ওপর। তখনই নিজ বেডরুম থেকে বেরিয়ে এলো দুয়া। পড়নে তার মেরুন কালার লং টপস এবং প্লাজো পাজামা। গলায় ঝুলানো স্কার্ফ। বাবাকে দেখে মেয়েটি খুশি হলো। ছুটে গেল বাবার কাছে। বসলো বাবার বাম পাশে।

” আব্বু! আসসালামু আলাইকুম। আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? ”

সাজ্জাদ সাহেব আদুরে কন্যাকে পেয়ে মুচকি হাসলেন। মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বললেন,

” ওয়া আলাইকুমুস মা। আল্লাহ্’র রহমতে আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ”

” তাহলে দেরি হলো কেন? আমি সেই কখন থেকে ঘড়ি দেখছি। ”

আদুরে কণ্ঠ শুনে সাজ্জাদ সাহেব মুচকি হাসলেন।

” রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম ছিল মা। তাই একটু দেরি হয়েছে। তোমার ভাইয়্যু কোথায়! ওকে দেখছি না যে? ”

” কোথায় আবার? তোমার হাই কোয়ালিটি ব্রিলিয়ান্ট বাবু হোমওয়ার্ক করছে। ”

মা-বাবা দুজনেই নিঃশব্দে হেসে উঠলো। দুয়া খেয়াল করলো টেবিলের ওপর পলিথিনের ব্যাগ রাখা।

” আব্বু ওটাতে কি? ”

বলতে না বলতেই হাঁটু গেড়ে টেবিলের পাশ ঘেঁষে বসলো। পলিথিনের ব্যাগ চেক করে দেখতে লাগলো কি এনেছে। দেখেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল!

” ওয়াও! চকোলেট আইসক্রিম! থ্যাংক ইউ সো মাচ আব্বু। ”

আইসক্রিমের বাটি হাতে উঠে দাঁড়ালো দুয়া। খুশিমনে রুমে যাওয়ার পূর্বে আব্বুর গালে চুমু দিতে ভুললো না। হেসে উঠলেন সাজ্জাদ সাহেব। তাহমিদা পেছন থেকে বলে উঠলেন,

” ভাইকে দিয়ো কিন্তু। নিজেই সব খেয়ো না। ”

রুম থেকে শোনা গেল,

” আচ্ছা।‌ অল্প একটু দেবো নে। ”

” পা’গলী মেয়ে! ”

চলবে.

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here