তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -০৪+৫

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪

আদিত্যর কিরণে উজ্জ্বল বসুধা। গোটা বাড়ি ব্যস্ত নিজ নিজ কর্মে। হবু বধূ সিনথিয়াকে ইতিমধ্যে পার্লারে পাঠানো হয়েছে। সাথে গিয়েছে দুয়া’র বড় বোন তানজিনা, নিশি এবং মনিকা। মনিকা হলো তূর্ণ’র বন্ধু। পেশায় একজন ডক্টর। এদিকে পুরো বাড়ির সকলে প্রস্তুত হচ্ছে বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য।

সমতল আরশির সম্মুখে দাঁড়িয়ে দুয়া। মায়াবী আঁখি যুগল আইলাইনারের ছোঁয়ায় রাঙালো। ওষ্ঠাধর রাঙা হলো লিপস্টিকের কৃত্রিম রঙে। সাজ সম্পন্ন! মিষ্টি হাসি উপহার দিলো মেয়েটা নিজ প্রতিবিম্ব দেখে। অতঃপর দক্ষ হাতে হিজাবে আবৃত করলো দীঘল কালো কেশ। ঠিক সে মুহূর্তে কক্ষে প্রবেশ করলো তৃষা।

” দুয়া! এই দুয়া! তোর সাজগোজ হলো? ”

বলতে বলতে মেয়েটার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো দুয়া’র পানে। বিমোহিত হলো মেয়েটি! দুয়া’র পড়নে ক্রিম কালার মাল্টি লেয়ার্স লেহেঙ্গা। গুলুমুলু দেহে লেহেঙ্গাটি বড্ড মানিয়েছে। বাঁ কাঁধে ছেড়ে রাখা দোপাট্টা। দীঘল কালো কেশ আবৃত মানানসই হিজাবে। মায়াবী আঁখি যুগলে মোটা করে আইলাইনার এর প্রলেপ। ওষ্ঠাধরে লাইট পিঙ্ক লিপস্টিক। ডান হাতে ব্রেসলেট। বাঁ হাতে লেডিস ওয়াচ। ব্যস সাজ সম্পন্ন!

” মাশাআল্লাহ্! বেবি তোকে কি সুন্দর লাগছে! ”

তৃষা চটাপট ছুটে এলো। নজরটিকা লাগিয়ে দিলো মেয়েটির কানের পেছনে। মৃদু হেসে দুয়া শুধালো,

” আরে এসব আবার কি করছিস? ”

” নজরটিকা লাগাচ্ছি বেবি। নজরটিকা। আজ তোকে যা লাগছে না? কত বেডা যে হুঁশ হারাবে আল্লাহ্ মালুম। তাই আগেভাগেই বলে রাখছি আমার আঁচল ধরে ধরে ঘুরবি। আমি তোকে সেফ করবো। বুঝেছিস? ”

না চাইতেও সশব্দে হাসলো দুয়া। তৃষা মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করলো সে হাসি! তাড়া দেখিয়ে বললো,

” আচ্ছা অনেক হয়েছে। এবার তাড়াতাড়ি চল। ওদিকে সবাই প্রায় রেডি। ”

” হুঁ হুঁ। চল। ”

দুই বোন প্লাস সখি দুরন্ত পায়ে কক্ষ ত্যাগ করলো।

পেলব দু হাতে লেহেঙ্গা সামলিয়ে দুয়া পৌঁছে গেল কাঙ্ক্ষিত কক্ষে। গুটিগুটি পায়ে প্রবেশ করলো। দেখা মিললো প্রিয় মানুষটির। হাসিমুখে এগিয়ে গেল দুয়া। দু হাতে পেছন থেকে আলিঙ্গন করলো। প্রথমে অবাক হলেও নিজেকে সামলিয়ে নিলো সে মানুষটি। মুচকি হেসে পিছু ঘুরে তাকালো। মুখোমুখি দু’জনে দাঁড়িয়ে।

” নানুমনি! ”

বিপরীতে দাঁড়িয়ে আনোয়ারা বেগম। সত্তরোর্ধ্ব মানবীর চামড়ায় ভাঁজ সৃষ্টি হয়েছে। পড়ে গিয়েছে একটি দাঁত। তবুও চেহারায় আকর্ষণীয় রূপের ছটা। গৌর বর্ণের এই নারীকে দেখলেই বোঝা যায় যৌবনে কতটা সুন্দরী ছিলেন। দুয়া আদুরে গলায় বললো,

” আমার সোনা নানুমনি! তুমি রেডি তো? ”

” এই তো নানু। আমি তৈরি। ”

নাতনিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে,

” মাশাআল্লাহ্! আমার নানুকে তো পরীর মতো লাগছে! কারো নজর না লেগে যায়। ”

” তুমিও বলছো নানুমনি? আমার মতো কুমড়োপটাস – কে কিভাবে পরী লাগবে? ”

নাতনির অভিমানী কণ্ঠ শুনে আনোয়ারা বেগম ইষৎ চমকালেন!

” কুমড়োপটাস! এসব কি বলছো নানু? ”

দুয়া জবাব দিলো,

” ঠিকই তো বলছি। তোমার প্রিয় নানাভাই ই তো বলেছে আমি নাকি কুমড়োপটাস! ”

” প্রিয় নানাভাই! কে? ”

সেকেন্ড ভেবে,

” তূর্ণ নানাভাই? ”

মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ালো দুয়া।

” তাছাড়া আর কে হবে? তোমার ওই আদুরে নানাভাই তো চিরকাল ই আমাকে ঈর্ষা করে। দেখলেই উল্টাপাল্টা নামে ডাকবে। ”

নিঃশব্দে হাসলেন আনোয়ারা বেগম। ভারী দেহ নিয়ে বসলেন বিছানায়। হাসি মুখে শুধোলেন,

” সে শুধু ঈর্ষা ই করে? ভালোবাসে না? ”

” ছাই বাসে। ”

আনোয়ারা বেগম হেসে উঠলেন। কিছু বলতে উদ্যত হতেই বাহির থেকে দুয়া’ মা তাহমিদা’র কণ্ঠ শোনা গেল।

” এই রে মা ডাকছে। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ও সোনা নানুমনি! চলো চলো। মা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে। ”

” আচ্ছা চল। ”

দুয়া যত্ন করে নানুমনির হাত ধরে উঠতে সহায়তা করলো। দু’জনে মিলে আস্তে ধীরে বেরিয়ে গেল কক্ষ হতে।

বাড়ির প্রাঙ্গনে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আলো ঝলমলে পরিবেশ। আগত অতিথিদের উপস্থিতিতে মুখরিত চারিপাশ। কনের জন্য নির্ধারিত স্থানে বসে সিনথিয়া। পাশেই রয়েছে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা। দুয়া ছোট ভাই জাহিনের হাত ধরে হাঁটছে। ঘুরে ঘুরে দেখছে আশপাশ। জাহিনের পড়নে কালো ব্লেজার স্যুট। বেশ লাগছে দেখতে।

দুই ভাই-বোন ঘুরে ঘুরে দেখছে ঠিক সেসময় হঠাৎ সম্মুখে এসে হাজির হলো তূর্ণ। আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! হঠাৎ তূর্ণ ভাইয়াকে দেখে হকচকিয়ে গেল দুয়া! কিন্তু স্বাভাবিক জাহিন। তূর্ণ ছোট ছোট চোখ করে দুয়া’র পানে তাকালো। অদ্ভুদ চাহনিতে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলো,

” এসব কি পড়েছিস? পেঁচানো পেঁচানো? কুমড়ো ড্রেস নাকি? ”

অপমানিত বোধ করলো মেয়েটা। যেখানে আজ সবাই কম-বেশি ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সেখানে তূর্ণ ভাইয়া কিনা এমন বাজে কথা বলছে? মেয়েটা কড়া কণ্ঠে জবাব দিলো,

” হাঁ। কুমড়ো ড্রেস। আজ ই বাজারে লঞ্চ হয়েছে। আর ফার্স্ট ক্রেতা আমি। হ্যাপি? ”

নাক ছিটকে তূর্ণ বললো,

” ছিঃ! তোর রুচিবোধ কোথায় নেমে গেছে পুতুল? শেষমেষ কুমড়ো ড্রেস! ”

” শোনো আমার রুচি ঠিকই আছে। মাঝখান থেকে তোমার টেস্ট জঘন্য হয়ে যাচ্ছে। নিজে এসব কি পড়েছো? পেঁয়াজের খোসার মতো লাগছে। ইয়াক! ”

ব্লেজার স্যুটকে এমন অপমান! মানা যায়?

” তোর চোখে বোধহয় ছানি পড়েছে। কাকে পেঁয়াজ বলছিস? জানিস এটা ব্র্যান্ডেড? প্রাইস কত? ”

” এটা ব্র্যান্ডেড! ও মা! আমি তো ভাবলাম কাওরানবাজার এর পাইকারি দোকান থেকে পেঁয়াজের সাথে ফ্রি পেয়েছো। ”

মেয়েটার কণ্ঠে বিস্ময়! তূর্ণ দাঁতে দাঁত চেপে যেই না কিছু বলতে উদ্যত হলো ওমনি তার কান মলে দিলো কেউ। চমকালো তূর্ণ! বাম পাশে তাকিয়ে দেখলো নানুমনি দাঁড়িয়ে। ছেলেটা মিথ্যা মিথ্যা কঁকিয়ে উঠলো।

” আহ্! নানুমনি? কি করছো? লাগছে তো। ”

” লাগুক। তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার নানুভাইকে কুমড়োপটাস বলো! ”

কান ছাড়িয়ে তূর্ণ বললো,

” ভুল কিছু বলেছি কি? ”

” ভুল মানে মস্ত বড় ভুল বলেছো। ”

নানুমনিকে পেয়ে মেয়েটা আহ্লাদী হলো। গিয়ে দাঁড়ালো নানুমনির পাশ ঘেঁষে। আনোয়ারা বেগম পুনরায় বললেন,

” আমার পরীর মতো দেখতে নানুভাই! তুমি তাকে নিয়ে মজা করছো? খুব খারাপ। ”

তূর্ণ বক্র হেসে বললো,

” পরীর মতো নানুভাই! তা ওনার রাজ মশাই কোথায়?”

চরম আশ্চর্যান্বিত হলো দুয়া! চোখমুখ কুঁচকে কিছু বলতে উদ্যত হতেই আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ গায়েব! ফটাফট কেটে পড়েছে। দুয়া অভিযোগের গলায় বললো,

” নানুমনি তুমি! তুমি শুনলে? আমাকে পরিমনির সাথে তুলনা করলো? আমি পরিমনি? ”

নানুমনি কিছু বলার পূর্বেই দুয়া বিড়বিড় করে আওড়ালো,

” আস্ত এক খ|বিশ। ”

অতঃপর চোখের সামনে থেকে সরে গেল দুয়া। নানুমনি একাকী নিঃশব্দে হেসে উঠলেন। হঠাৎ উনি লক্ষ্য করলেন জাহিন এখানে নেই! সে আবার গেল কোথায়?

” ওহ্ হো! শান্তিপ্রিয় নানাভাই আমার অশান্তি দেখে সরে পড়েছে। ”

দুয়া, তৃষা এবং নিশি প্রাঙ্গনের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে খুনসুটিতে মেতে উঠেছে। এদিকে লোকজনের কম আনাগোনা বলা চলে। তৃষা লজ্জা মিশ্রিত মুখে বললো,

” তোমরা জানো আজ কি হয়েছে? ”

নিশি জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে শুধালো,

” কি হয়েছে? এত ব্লাশিং ব্লাশিং! কেস কি? ”

দুয়াও সাথ দিলো।

” হাঁ। ব্যাপার কি রে তৃষা? লজ্জায় টমেটো লাল হয়ে যাচ্ছিস কেন? বল। ”

তৃষা লজ্জায় মুখ লুকালো লেহেঙ্গার ওড়নায়। মৃদু স্বরে থেমে থেমে বললো,

” আমি না ক্রাশ খেয়েছি। ”

ব্যস! বলতে না বলতেই পিঠের উপর দুম করে এক ঘু”ষি। মে|রেছে জাহিরাহ্ দুয়া! দাঁতে দাঁত চেপে দুয়া বললো,

” ফা জি ল মাইয়া! তোর কেরোসিনের কেস এমন ঝাকানাকা মশলা মাখিয়ে বললি মনে হচ্ছিল তোর বিয়েটাই হয়ে গেছে। ”

তৃষা ছোট ছোট চোখ করে বললো,

” বিয়া ক্যামনে হইতো? আগে তো তোর সিরিয়াল। দুই মাসের বড় কিনা। ”

” আচ্ছা? আমি সিরিয়ালে আগে না থাকলে তুই করে নিতি? ”

তৎক্ষণাৎ তৃষার জবাব।

” অফকোর্স করতাম।‌ বিবাহ অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে জানিস না? ”

দুয়া ব্যাঙ্গ করে বললো,

” ইহ্! নামাজ কালামের ঠিক নেই। উনি নাকি আবার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করবে! ”

হেসে উঠলো নিশি। বললো,

” তৃষা বোন আমার! বিবাহ করিতে বেশ উদগ্রীব হয়ে গেছিস মনে হয়? ”

” হাঁ। অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করতে হবে না? আমি তো সিরিয়ালে পড়েছি এই মাইয়ার জন্য। এটাকে বিদায় করতে পারলেই আমার রাস্তা ঝকঝকে তকতকে পরিষ্কার। ”

দুয়া শুধালো,

” আচ্ছা? সিরিয়ালে শুধু আমিই আছি? আর নিশিপু? সে বুঝি অলরেডি ম্যারিড? ”

আঁতকে উঠলো তৃষা।

” ইন্না লিল্লাহ! এখনো দুইজন। তারপর আমি! আয় হায় রে? তোমরা একটু প্রেম ট্রেম করতে পারো না? তাইলে তো হয়ে যেতো। সোজা কাজি অফিসে গিয়ে বিনে পয়সায় বিবাহ খতম। আর এদিকে আমার রাস্তাও ঝকঝকে তকতকে পরিষ্কার! ”

সশব্দে হেসে উঠলো দুয়া এবং নিশি। সঙ্গী হলো তৃষা নিজেও।

সদ্য বিবাহ সম্পন্ন হলো সিনথিয়া এবং কবির এর। বোনের থেকে মাত্র কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে মিহাদ। অনার্স শেষ বর্ষে পড়ুয়া ছেলেটা আজ বোনের স্মরণীয় দিনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছে। পুরুষ মানুষের নাকি কাঁদতে নেই। কিন্তু স্নেহের ছোট বোনের বিবাহে কে না আবেগপ্রবণ হয়ে উঠবে? দু’জনের বয়সের পার্থক্য মাত্র দেড় বছর। পিঠাপিঠি ভাই-বোন ছিল দুজনে। অন্য সবার মতো ছিল খুনসুটি, দুষ্টুমি, ভালোবাসা। আজ সেই আদরের বোনের বিয়ে হয়ে গেল। জীবন জুড়ে গেল অন্যের সনে। একপ্রকার পর হয়ে গেল বোনটা। আগের মতো সেই সুসম্পর্ক আর রইবে কি? উঁহু! এখন আর যখন তখন দু’জনের মা*রামারি হবে না, চুল টানাটানি হবে না। বোনটা যখন তখন এটাসেটা বায়না করবে না। ছোট হওয়া স্বত্ত্বেও নাম ধরে ডাকবে না। অনেক কিছুই যে বদলে যাবে। ভাবতেই ছলছল করে উঠলো আঁখি জোড়া। সবার অলক্ষ্যে ছেলেটা সেথা হতে সরে গেল।

আঁধার রাত্রি। বিবাহ অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিদায় বেলা। মায়ের কাঁধে মুখ লুকিয়ে হুঁ হুঁ করে কেঁদে চলেছে সিনথিয়া। সাথি মেয়েকে জড়িয়ে নিজেও কেঁদে চলেছেন। আবেগঘন এক মুহুর্ত। স্ত্রী কন্যার ক্রন্দনে দিশেহারা বোধ করছেন মাহফুজ সাহেব। ওনার নিজেরও যে খুব কষ্ট হচ্ছে। জ্বলন অনুভূত হচ্ছে হৃদয়ে। তবুও শক্ত থাকতে হবে। উনি ভেঙ্গে পড়লে চলবে কি করে? নিজেকে সামলিয়ে মাহফুজ সাহেব এগিয়ে গেলেন। ক্রন্দনরত কন্যার হাত দু’টো সমর্পণ করলেন নতুন জামাই কবিরের হাতে। কবির মোলায়েম কণ্ঠে শ্বশুরকে আশ্বস্ত করলো। অশ্রুসজল নয়নে সিনথিয়া এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বড় ভাইকে খুঁজছে। কিন্তু ভাইকে আজ কোথাও দেখতে পেল না। বুঝতে বাকি নেই তার ভাইটা এখানে কেন অনুপস্থিত! বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে।

কবির যতন করে নববধূকে গাড়িতে বসালো। আটকে দিলো ডোর। অশ্রুসিক্ত নয়নে সিনথিয়া তাকিয়ে রইলো পরিবারের পানে। হাত নেড়ে বিদায় জানালো। দাদী আনোয়ারা বেগমও বিপরীতে হাত নেড়ে নাতনিকে বিদায় জানালেন। দোয়া করলেন হৃদয়ের অন্তঃস্থল হতে। অতঃপর বিদায় নিলো সিনথিয়া। অগ্রসর হতে লাগলো গাড়িটি। একসময় চলে গেল দৃষ্টি সীমার বাহিরে। তূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিহাদ’কে খুঁজতে লেগে পড়লো। এসবের ভিড়ে অনুপস্থিত দুয়া। মেয়েটা আবার গেল কোথায়?

ব্যস্ত সড়ক ধরে এগিয়ে চলেছে গাড়িটি। ক্রন্দনে লিপ্ত মেয়েটির কায়া ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হচ্ছে। ডান পাশে বসে নতুন বর কবির।‌ অর্ধাঙ্গিনীর ক্রন্দনে দিশেহারা বোধ করছে মানুষটা। কি করে সে কান্না বন্ধ করবে? মেয়েটা কি বুঝতে পারছে না তার কান্নায় পাশে বসে থাকা মানবের হৃদয়ে ঝড় উঠছে! আস্তে করে মেয়েটার দিকে ধাবিত হলো কবির। বসলো অতি সন্নিকটে। কাঁপা কাঁপা হাতটি রাখলো স্ত্রীর ডান কাঁধে। হঠাৎ কাঁধে হাত রাখায় চমকে উঠলো সিনথিয়া! তাকালো স্বামীর পানে। নয়নে মিলিত হলো নয়ন। মেয়েটির কর্ণ কুহরে পৌঁছালো পুরুষালি কণ্ঠস্বর,

” কেঁদো না সিনু। তোমার প্রতি বিন্দু অশ্রু যে আমার হৃদয়ে ঝড় সৃষ্টি করছে। ”

চমকিত মেয়েটি টেরও পেলো না কিচ্ছুটি। সম্মোহিত এর মতন স্বামীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলো। মাথা রাখলো কাঁধে। চলতে লাগলো গাড়িটি।
#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৫

নিস্তব্ধ যামিনী। খোলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দুয়া। মায়াবী আঁখি যুগল নোনা জলে সিক্ত। গড়িয়ে পড়ছে কপোল ছুঁয়ে ছুঁয়ে। ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হচ্ছে কায়া। র’ক্তিম আভা ফুটে উঠেছে মুখশ্রীতে। ঠিক তখনই ডান কাঁধে কারোর হাতের ছোঁয়া পেয়ে মেয়েটি থমকে গেল। তড়িৎ বাঁ হাতের উল্টো পিঠে অশ্রু কণা মুছে নিলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো বাবা দাঁড়িয়ে। চিন্তিত মুখে সাজ্জাদ সাহেব মেয়ের পানে তাকিয়ে রয়েছেন। শুধোলেন,

” কি হয়েছে মা? কাঁদছিলে কেন? আপুর জন্য খারাপ লাগছে? ”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো দুয়া। সাজ্জাদ সাহেব মলিন হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন,

” কাঁদে না মা। সব মেয়েদের জীবনে এই দিনটি একদিন না একদিন আসবেই। এটা যে আল্লাহ্’র নির্দেশ। আপন গৃহ, মা-বাবা পরিবারকে ছেড়ে পরের ঘরে যেতে হবে। ”

আবেগআপ্লুত হয়ে দুয়া বাবার কাঁধে মাথা রাখলো। ভেজা কণ্ঠে বললো,

” আপনজনদের ছেড়ে যেতে কতটাই না কষ্ট হয়! কেউ কি করে এই কষ্টটা সহ্য করে আব্বু? আপুর খুব খারাপ লাগছে তো। বড়াপু! বড়াপুরও তো কষ্ট হয়েছিল। ”

” হাঁ হয়েছিল। তবে এই কষ্টটা সাময়িক। আল্লাহ্ ঠিক এই কষ্টটা ভুলতে সহায়তা করেন। নইলে আপনজন – দের ছেড়ে অন্য পরিবারের অংশ হওয়া দুষ্কর হয়ে উঠতো। কেউ পারতো না। ”

দুয়া বাবার শার্ট খামচে ধরে মৃদু স্বরে বললো,

” আমি কখনো বিয়ে করবো না। তোমাদের ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে স সম্ভব নয়। আমি দূরে য যেতে পারবো না। ও আব্বু? শুনছো? আ আমি বিয়ে করবো না। ”

মেয়ের কথায় নিঃশব্দে হাসলেন সাজ্জাদ সাহেব। কাঁধ থেকে মেয়ের মাথা সরিয়ে নিজের মুখোমুখি আনলেন। আলতো করে মুছে দিলেন অশ্রু বিন্দু। মেয়ের ললাটে চুমু এঁকে বললেন,

” ঠিক আছে। আমার মা’কে দূরে যেতে হবে না। সে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। ”

দুয়া মায়াবী আঁখি পল্লব ঝাপটালো। শুধালো,

” সত্যি? ”

” হুঁ। সত্যি। ”

খুশি হলো মেয়েটা।‌ উৎফুল্ল চিত্তে বাবাকে আলিঙ্গন করলো। মুচকি হাসলেন সাজ্জাদ সাহেব। আদুরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন মেয়ের কেশে। সামান্য কিছুটা দূরে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। অবলোকন করলো পিতা কন্যার মিষ্টি মুহুর্ত। প্রসারিত হলো তার অধর কোল।

ফুলে সজ্জিত কক্ষ। বাহারী ফুলের সুগন্ধে মাতোয়ারা পরিবেশ। বিছানার মধ্যিখানে বসে সিনথিয়া। ঘোমটা আবৃত মুখশ্রী। কক্ষের বাহির থেকে বেশ কয়েকজনের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। যার মধ্যে তার অর্ধাঙ্গ কবিরও অন্তর্ভুক্ত। ধুকপুক ধুকপুক করছে মেয়েটার হৃদযন্ত্রটি।
অবশেষে দরদাম কষে ছাড়া পেল কবির। ভাইবোনদের পাওনা মিটিয়ে বদ্ধ দ্বার উন্মুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করলো। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো স্ত্রীর পানে। মুচকি হাসলো কবির। তৃপ্তিময় সে হাসির রেখা। আস্তে ধীরে সিনথিয়ার পানে অগ্রসর হতে লাগলো কবির। যা অনুভব করে মেয়েটির অন্তঃস্থল কম্পিত হতে লাগলো। দু হাতে আঁকড়ে ধরলো লেহেঙ্গা।

অর্ধাঙ্গিনীর মুখোমুখি বসলো কবির। অপলক চাহনিতে তাকিয়ে রইলো খানিকটা সময় ধরে। অতঃপর দু হাত বাড়িয়ে দিলো। আলতো করে ঘোমটা তুলে উন্মুক্ত করলো কাঙ্ক্ষিত মুখশ্রী। মুখ ফুটে অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,

” মাশাআল্লাহ্! ”

লাজে রাঙা মেয়েটি আরো জড়োসড়ো হয়ে বসলো। তা লক্ষ্য করে মুচকি হাসলো কবির। শুধালো,

” আমি কি আমার অর্ধাঙ্গিনীকে আলতো করে ছুঁতে পারি? ”

না চাইতেও ভীত হলো সিনথিয়া। কিছু বলবে বলবে করেও বলতে ব্যর্থ হলো। যেন অবরোধ হয়ে গিয়েছে কণ্ঠনালী। সিনথিয়ার সাড়া না পেয়ে কবির নিজে থেকেই অগ্রসর হলো। স্ত্রীর কপালে হাত ছুঁয়ে রেখে পড়লো দোয়া। অতঃপর চুম্বন করলো ললাটের মধ্যিখানে। আঁখি পল্লব বন্ধ করে স্বামীর প্রথম স্পর্শ অনুভব করলো নববধূ। ঘোর কেটে গেল কবিরের কণ্ঠ শুনে।

” এত ভারী পোশাক পড়ে নিশ্চয়ই অস্বস্তি হচ্ছে? কাবার্ডে তোমার জন্য ড্রেস রাখা আছে। ফ্রেশ হয়ে এই ভারী পোশাক বদলে নাও। ”

তৃপ্তিময় হাসলো সিনথিয়া। হাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে দু হাতে ভারী লেহেঙ্গা সামলিয়ে বিছানা ত্যাগ করলো। কবির হাতের ইশারায় কাবার্ড দেখিয়ে দিলো। সিনথিয়া প্রথমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। একে একে খুলে ফেললো সকল গহনা। অতঃপর চুল ছাড়াতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হলো। যা লক্ষ্য করে বিছানা থেকে নেমে এলো কবির। নীরবে এগিয়ে গেল। সহায়তা করতে লাগলো সঙ্গিনীকে। না বলতেই অর্ধাঙ্গ এগিয়ে এলো! এতে পুলকিত হলো সিনথিয়ার হৃদয়। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলো স্রষ্টার।

দিবাকরের আলোয় আলোকিত ধরিত্রী। নতুন এক দিনের সূচনা। দুয়া হাই তুলতে তুলতে ডাইনিং রুমে এলো। চেয়ার ইতোমধ্যে প্রায় পূর্ণ। দুয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো পাশাপাশি দু’টো চেয়ার খালি। মৃদু হেসে দুয়া একটি চেয়ার টেনে বসে পড়লো। হঠাৎই ধপ করে পাশের চেয়ার দখল করলো একজন।‌ বরাবরের মতই মেয়েটা আঁতকে উঠলো। ভীতসন্ত্রস্ত নয়নে তাকালো ডান পাশে। আর হতাশ হলো! পাশে কে বসেছে? ওয়ান অ্যান্ড অনলি আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ! উফ্! এই লোকটা পিছু ছাড়বে না কি? তূর্ণ প্লেট সোজা করে বাম পাশে তাকাতেই হকচকিয়ে গেল!

” এ কি! সূর্য আজ কোনদিকে উঠেছে? সকাল সকাল দুয়া ম্যাডামের দর্শন! এ যে অবিশ্বাস্য! অভাবনীয়! ”

হেসে উঠলো উপস্থিত সকলে। একমাত্র দুয়া ব্যতীত। সে বাঁকা জবাব দিলো।

” সূর্য মামা তার হিসেবমতো পূর্ব দিকেই উঠেছে। এখন তুমি যদি উত্তর কিংবা দক্ষিণে ভুলভাল দেখো তাহলে কি করার? হয়তো তোমার চশমার পাওয়ার চেঞ্জ হয়েছে। ”

বক্র হাসলো তূর্ণ।

” নাউ আ’ম শিওর। এটা আমাদের পুতলা ই। ও ছাড়া এতো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা অন্য কেউ বলেই না। ”

” চ্যাটাং চ্যাটাং কথা! এ আবার কি? ”

তৃষার প্রশ্নের জবাবে তূর্ণ বললো,

” এ এক ধরনের স্পেশাল কথা। ত্যাড়া বাঁকা।‌ সবাই পারে না। ও তুই বুঝবি না। ”

” হুঁ। আমি তো কচি খুকি! ”

ভেংচি কাটলো তৃষা।

” এক্সাক্টলি। তুই কচি খুকি। আর এইজন ফটরফটর করতে ওস্তাদ। ”

তূর্ণের অহেতুক কথায় দুয়া প্রতিবাদ জানালো।

” তূর্ণ ভাইয়া! সকাল সকাল আমার পিছু না নিলে তোমার পেটের ভাত হজম হয় না? ”

” ভাত! আমি তো রুটি খাবো। ভাত হজম হবে কি করে? কি যে ভুলভাল বলিস না! ”

দুয়া কিছু বলবার পূর্বেই বড় মামী সাথি বলে উঠলেন,

” তূর্ণ! এসব কি হচ্ছে বাবা? সকাল সকাল মেয়েটার পেছনে পড়েছো! ”

তূর্ণ ফটাফট জবাব দিলো,

” পেছনে কোথায় পড়লাম মামী? আমি তো ওর ডান পাশে। ”

ভাইবোনরা ফিক করে হেসে উঠলো। দুয়া অসহ্য হয়ে ডেকে উঠলো,

” তূর্ণ ভাইয়া! ”

মেয়েটার ফুলো গাল দেখে তূর্ণ আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ রুটি ছিড়ে সবজি দিয়ে খেতে লাগলো। এতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দুয়া। সাথি ওকে খাবার সার্ভ করে দিলেন। দুয়া এক নলা মুখে নিয়ে খেতে লাগলো। খাওয়ার এক পর্যায়ে পানির গ্লাসের দিকে হাত বাড়াতেই তূর্ণ গ্লাস হাতে নিলো। অর্ধ পূর্ণ গ্লাস পানিতে পরিপূর্ণ করে ওর হাতে দিলো। বিপরীতে সন্তুষ্ট চিত্তে হাসলো মেয়েটি।

নির্ধারিত কক্ষে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে তূর্ণ। কোলে ল্যাপটপ। তাতে কর্ম মগ্ন সে। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। কিবোর্ডে অবলীলায় চলছে আঙ্গুল। তখনই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। অনুমতি সূচক কণ্ঠে শুধালো,

” ভাইয়া আসবো? ”

মিহাদ এর কণ্ঠ শুনে তূর্ণ চোখ তুলে তাকালো। বললো,

” হাঁ। ভেতরে আয়। ”

অনুমতি পেয়ে মিহাদ ভেতরে প্রবেশ করলো। তূর্ণ’র ইশারা পেয়ে বসলো বিপরীত দিকে।

” হাঁ বল। ”

” ভাইয়া কাল তো সিনুর রিশিপশন পার্টি। কিছু গিফটস্ কেনার ছিল। আম্মু বললো তুমি নাকি সাথে যাবে। ”

কিবোর্ডে আঙ্গুল চালাতে চালাতে তূর্ণ জবাব দিলো,

” হাঁ। তোরা রেডি হয়ে নে। আমি হাতের কাজটা সেরেই আসছি। ”

” আচ্ছা। ”

মিহাদ উঠতে গিয়েও উঠলো না। উশখুশ করতে লাগলো। তা লক্ষ্য করে তূর্ণ শুধালো,

” কিছু বলবি? ”

” হুঁ। ব বলছি সিনুর সাথে কথা হয়েছে? ”

তূর্ণ মৃদু হাসলো। তাকালো চোখ তুলে।

” ভাই রে বোনের শোকে এতটাই কাতর যে বোনের সাথে কথা অবধি বলতে দ্বিধাবোধ হচ্ছে? ”

” ন না মানে। ”

তূর্ণ ভাইয়ের পিঠ চাপড়ে দিলো। বললো,

” যা গিয়ে কল কর। বোনের সাথে কথা বল। দেখবি ভালো লাগছে। ”

” বলবো? ”

কেমন দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠ। তূর্ণ মুচকি হেসে চোখের ইশারায় সম্মতি জানালো। মাথা চুলকে উঠে পড়লো মিহাদ।

” ঠিক আছে। আমি তাহলে কথা বলে রেডি হচ্ছি।‌ ”

বলেই দ্রুত পায়ে মিহাদ কক্ষ ত্যাগ করলো। বোনের সাথে কথা বলতে তর সইছে না বুঝি। নিঃশব্দে হাসলো তূর্ণ।

আলো ঝলমলে কনভেনশন সেন্টার। কৃত্রিম আলোয় উজ্জ্বল চারিদিক। অতিথি সমারোহে জাঁকজমক অবস্থা। আকর্ষণীয় সজ্জিত স্টেজে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নবদম্পতি কবির এবং সিনথিয়া। তারা আগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছে। ঠিক সে মুহূর্তে স্টেজে উঠলো দুয়া, তৃষা, তূর্ণ এবং মিহাদ।

” আপু! ”

ছুটে গিয়ে সিনথিয়াকে জড়িয়ে ধরলো দুয়া। হঠাৎ বোনের সান্নিধ্য পেয়ে হকচকিয়ে গেল সিনথিয়া। পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে নিলো। প্রসারিত হলো অধর কোণ। আবেগাপ্লুত হয়ে বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সিক্ত হলো অক্ষিকোল। দুয়াও দু হাতে বোনকে জাপ্টে ধরলো। সঙ্গী হলো তৃষা। মিহাদ মাত্র কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে। মাত্র দু’টো দিনের মতো দূরত্ব। তাতেই মনে হচ্ছে বোনকে কতদিন বাদে দেখছে! দু নয়ন জুড়িয়ে বোনকে দেখতে লাগলো সে। ততক্ষণে তূর্ণ কবিরের সঙ্গে ফর্মাল হাগ করে নিয়েছে। কুশল বিনিময় করছে।

” আপু কেমন আছো তুমি? মাশাআল্লাহ্! কি সুন্দর লাগছে তোমাকে! ”

সিনথিয়া মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,

” থ্যাংকস বোন। আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস বল? আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? ”

” আমরা আলহামদুলিল্লাহ্ জোশ আছি। আর হ্যাঁ আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ”

সিনথিয়া মিষ্টি করে হাসলো। তখন দৃষ্টিগোচর হলো বড় ভাই মিহাদ! ছলছল করে উঠলো আঁখি জোড়া।

” ভাইয়া! ”

সকলকে অবজ্ঞা করে মেয়েটা দু হাতে লেহেঙ্গা সামলিয়ে ছুটে গেল। আলিঙ্গন করলো ভাইকে। মিহাদ সযত্নে বোনকে আগলে নিলো। তৃপ্তিময় হাসির রেখা ফুটে উঠলো অধর কোণে। ভাইবোনের মিষ্টি মুহুর্তের সাক্ষী রইলো ওরা। স্টেজের নিচে দাঁড়িয়ে এই মুহুর্ত অবলোকন করলেন মাহফুজ সাহেব এবং সাথি। সন্তানদের সুন্দর আবেগঘন মুহূর্ত দেখে ওনারাও আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন। মিষ্টি করে হাসলো দুয়া এবং তূর্ণ।
___

দুয়া, তৃষা, নিশি এবং তানজিনা একসাথে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সকলেই পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে। চটাপট সুন্দর করে সেলফি তুললো সম্মুখে দন্ডায়মান তৃষা। নিশি তড়িৎ বললো,

” দেখি দেখি কেমন হয়েছে। ”

মোবাইল হাতে নিয়ে ফটোটা দেখতে লাগলো নিশি। মুহুর্তের মধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ পেল মুখশ্রীতে।

” এটা কি করেছিস? ”

” কি করেছি? ”

মোবাইল এগিয়ে দিয়ে,

” কি করেছিস নিজেই দেখ। সবাই কি সুন্দর পোজ দিয়েছে! আর আমি? যেই চোখের পলক ঝাপটেছি ঠিক সেই মুহূর্তে ফটোটা তুলেছিস। কি বাজে লাগছে আমাকে! ”

তৃষা মোবাইলে ভালোমতো দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দেখলো কথা সত্য। ফিক করে হেসে উঠলো সে। এ দেখে ক্ষি প্ত হলো নিশি।

” দাঁত কেলাবি না একদম। সর। এবার আমি সেলফি তুলবো। ঠিকমতো তুলতেই জানে না। ”

” হুঁ। এখন যত দোষ তৃষা ঘোষ। ”

” অফকোর্স। এখন সর তো। ”

তৃষাকে ঠেলে সরিয়ে দিলো নিশি। নিজে মোবাইল হাতে দাঁড়ালো। দুয়া ও তানজিনা একে অপরের দিকে তাকিয়ে সশব্দে হাসলো। এতে নিশি ক্ষে’পে গিয়ে যেই না কিছু বলতে উদ্যত হলো অমনি সকলে রেডি। ফটো তুলতে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশি পোজ দিয়ে দাঁড়ালো। ক্যামেরা বন্দি হলো চার ললনা। কিঞ্চিৎ দূরে দাঁড়িয়ে এই মুহুর্তটুকু মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করলো একজন।

চলবে.

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here