তুমি_আমারই পর্ব ১৭+১৮

#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৭
#Sumaia_Jahan

—- দুর বাবা ভালো লাগে না!কিছুতেই এই লোকটার সাথে পারি।আমি একটা কিছু করলে উনি তার পাঁচ গুণ আমাকেই ফিরিয়ে দেয়।আশপিয়া তোর আর কোনো সম্মানই থাকলো না।সবসময় একটা লোকের কাছে হেরে যাচ্ছিস?লজ্জা করে না তোর এভাবে বারবার হারতে! তোর তো এখনি কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দেওয়া উচিৎ। কিন্তু এখানে তুই এখন কচু গাছ পাবি না তাই এখন দিতে হবে না পরে দিস।কিন্তু এভাবে তো আর বেশিদিন চলতে পারে না।সবসময় কি করে হারিস তুই?না না নাহ আমি সবসময় হারবো না আমারও দিন আসবে তখন ওই লোটাকে আমি নাকে দড়ি দিয়ে হাটাবো হুম।

একটু আগে যা হলো তার জন্য নিজের সাথেই নিজে বকবক করে যাচ্ছি। কি আর করবো এছাড়া তো অন্য কিছু করার নেই। তাই নিজের সাথেই নিজে বকবক করছি।

একটু আগে…….

আমি রুহি রাহাত রোদ্দুরের জোকার মুখ নিয়ে হাসাহাসি করছিলাম।এমন সময় রোদ্দুর ছাদে চলে আসে।উনি ছাদে আসার পর রুহি রাহাত তো ভয়ে দাড়িয়ে গেল আর আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসেছিলাম। অবশ্য আমিও একটু ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু তা মুখে প্রকাশ করলাম না।রোদ্দুর আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে রুহি আর রাহাত কে উদ্দেশ্য করে বললো,

—- তোদের কি সবসময় কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার স্বাভাব নাকি!এখান থেকে যা তোদের আদরের ভাবিমনি সাথে আমার একটু প্রাইভেট কাজ আসে।

রোদ্দুরের কথায় রুহি আর রাহাত দুজনেই আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। বেচারারা ভাইকে ভিষন ভয় পায়।আর এদিকে আমাকেও ওই দিন কথা দিয়েছিলো আমাকে বিপদে একা ছেড়ে যাবে না। সব মিলিয়ে বেচারাদের খুব করুন অবস্থা। না দাড়াতে পারছে না যেতে পারছে!ওদের এমন অবস্থা দেখে আমার একটু মায়া হলো।যতোই হোক আমার জন্যই তো এসব।তাই আমি রোদ্দুর কে কড়া মেজাজ দেখি বললাম,

—- ওরা কোথাও যাবে না। এখানেই থাকবে কি করবেন আপনি!

উনি আবারও ওদের কে উদ্দেশ্য করে শান্ত গলায় বললো,

—- বাহ! তোদের তো দেখি আজকাল ডানা গজেছে! তোরা আমার কথার শুনছিস না।তোদের কে কি নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবে আমার কথার অবাধ্য হলে তার ফল কি হবে।

উনার এমন শান্ত গলার হুমকি তে ওরা দুজনই একটা শুকনো ঢোক গিললো।রুহি আমার কাছে এসে আস্তে আস্তে বললো,

—- শোনো না ভাবিমনি আমরা যদি এখন এখান থেকে না যাই তাহলে কিন্তু অনেক খারাপ কিছু করবে। ভাইয়া আজকে কিন্তু প্রচন্ড রেগে আছে।প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো!

রুহি খুব করুন ভাবে কথা গুলো বললো।আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললাম,

—- ঠিক আছে যাও……

আমি যাও এর যা উচ্চারণ করতে দেরি কিন্তু ওদের ভেনিস হতে দেরি নেই।কি ভয়টাই না ভয় এই লোকটাকে! সবাই পুরো জমের মতো ভয় পায়। কি আর করার এই জমের সাথেই আমাকে এখন একা লড়তে হবে।আমার ভাবনার মাঝেই রোদ্দুর বললো,

—- বুদ্ধিহীন মাথা টাকে বেশি খাটিও না। তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না।কি কপাল আমার আমি এতো বুদ্ধিমান হয়েও আমার কপালে এমন বুদ্ধিহীন বউ জুটলো!

আমার মেজাজটা গরম হয়ে গেল আমি নাকি বুদ্ধহীন!এই ভাবে ইনসাল্ট করলো!আমি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

—- আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে ইনসাল্ট করার!আর বুদ্ধিহীন আমি না আপনি বুঝলেন।

উনি হাই তুলতে তুলতে বললেন,

—- বুদ্ধিমান মানুষেরা বেশি কথা বাড়ায় না তাই আর বাড়ালাম না এভার মূল পয়েন্টে আসি আমাকে এখন কি শাস্তি দেই বলতো?

আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। এটা চড়ের প্রতিশোধ যেই লোকটা এমন ভাবে নেই আল্লাই জানে এখন কিরবে!দুর আর অন্য কিছু করার পেলাম না!জোকার কেন সাজাতে গেলাম?এখন যা হবার তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু এখন এর থেকে তো বাঁচতে হবে।আমি গলাটা কে একটু গম্ভীর করে বললাম,

—- শাস্তি মানে কিসের শাস্তি?

—- ওমা সেকি তোমার স্মৃতি শক্তি এতোই দুর্বল! একটু আগের কথাই ভুলে যাও!তবে শোনো একটু আগে একটা পেত্নী আমাকে ঘুমের মধ্যে জোকার সাজিয়েছিলো।

আমি জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম,

—- কিহহহহহ……….আমি পেত্নী! আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে পেত্নী বলার পেত্নী তো আপনি।

—- প্রথমো তো ছেলেরা পেত্নী হয় না ওটা শুধু মেয়েদের জন্যই।আর তুমি যেহেতু নিজের দোষ টা নিজেই শিকার করলে তাই তোমার শাস্তি একটু কমিয়ে দিবো।আমি তো আগেই বলেছিলাম আমি একটু বেশিই দয়ালু।

নিজের মাথায় নিজেই ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।রাগের বসে আমি নিজেই নিজের দোষ টা শিকার করে ফেললাম। সব হইছে এই লোকটার জন্য।কি চালাক রে বাবা আমাকে রাগিয়ে আমার মুখ থেকেই কথা বের করে নিলো।হঠাৎ করে আমি শূন্যে ভাসতে শুরু করলাম।আমি আশ্চর্যের চরম সীমায় পৌঁছে গেছি। আমি আবার কোনো জিনের পাল্লায় পরলাম নাতো?দেখি তো একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখি সয়ং রোদ্দুর খান নামক জীবন্ত মানুষ রুপি জিনটাই আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে।উফ বাঁচলাম! কোনো জিনের খপরে পরিনি।কিন্তু এই ব্যাটা আমাকে কোলে তুললো কেন?সাহস তো কম নয়?আমি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

—- আমাকে নামান বলছি নামান। আমাকে কি আপনার আটা ময়দার বস্তা মনে হয় যখন খুশি তুলে নিবেন?নামান আমাকে নামান!

আমি এরকম একের পর এক বলেই যাচ্ছি আর ছটপট করছি নামার জন্য কিন্তু উনার কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।উনি নিজের মতো করে ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে আসলেন।রুমে এসে আমাকে নামালেন। আমি নেমেই একটা দম নিয়ে বলতে লাগলাম,

—- আমি কি হাটতে পারি না? নাকি আমার পায়ে কিছু হইছে যে আপনি আমাকে কোলে করে রুমে আনলেন?

—- বকবক বন্ধ করো সেই কখন থেকে কান ঝালাপালা করে দিয়েছো। এবার পিছনে ঘুরো ওখানে তোমার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি একবার দেখোতো!

আমি উনার কথা মতো পিছনে ঘুরলাম। যা দেখলাম আমার তাতে আমার চোখ কপালে উঠেছে কারন আমার সামনে দুই টা দুধের গ্লাস যা আমার চিরশত্রু আমি সেই ছোটবেলা থেকেই এই জিনিস টাকে বড্ড ঘৃণা করি।আজ পর্যন্ত আমাকে এই জগ্ন জিনিস টা আমাকে খাওয়াতে পারেনি।আর শুধু এই দুই টা গ্লাস সাথে আরো দুইটা করলার জুসেরও গ্লাস আছে।আমি চোখ বড়ো বড়ো করে গ্লাস গুলোর দিকে তাকিয়ে আছি আর রোদ্দুর আমার পাশ থেকে বললো,

—- দেখছো আমি কতোটা দয়ালু তুমি আমার সাথে কতোটা খারাপ কাজ করলে আর আমি তোমার জন্য এই সামান্য কিছু শাস্তির ব্যবস্থা করলাম।একবার ভাবো তুমি কতোটা ভাগ্যবতি এমন জামাই তোমার কপালে জুটলো।

আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।আমি মাথায় দুহাত চেপে ধরে পরে গেলাম।রোদ্দুর আমাকে সাথে সাথেই ধরে ফেললো।আমাকে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দিলো।

—- আশপিয়া কি হয়েছে তোমার কি হয়েছে?

আমাকে ডাকতে ডাকতেই মুখে পানির ঝাপটা দিলো কিন্তু আমি কিছুতেই চোখ খুললাম না।কারন আমার আসলে কিছুই হয়নি। আমি তো ওগুলো খাওয়ার হাত থেকে বাচার জন্য এমনটা করেছি।যার কিছুই হয়নি তাকে হাজার পানির ঝাপটা দিলেও কি সে চোখ খুলবে?রোদ্দুরের কি
যেন হলো এতোক্ষণ তো আমাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো এখন হঠাৎ উঠে গেলো কেন?আমি আস্তে একটা চোখ একটু খানি খুলে দেখার চেষ্টা করলা উনি করছেটা কি?একটা বক্স থেকে কি যেন নিলো।নিয়ে এদিকেই আসছে। আমি তারাতাড়ি চোখ বন্ধ করে নিলাম।

রোদ্দুর আশপিয়ার কাছে এসে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো,

—- আমি জানি তোমার কি হয়েছে। এই ইনজেকশন টা দিলেই তুমি ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করো না আমি তোমাকে ঠিক সুস্থ করে তুলবো।আফটার ওল তুমি আমার একমাত্র বউ!

কথাটা বলেই আমার দিকে এগিয়ে আসছে ইনজেকশন দেওয়ার জন্য। আমি লাফ দিয়ে উঠে খাট থেকে নেমে গিয়ে বললাম,

—- আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি আমার কোনো ইনজেকশন লাগবে না।

আমার ভয়ে বুক কাপছে। আমি ইনজেকশন কে খুব ভয় পাই।আর একটু হলেই আমার হাতে ইনজেকশন ডুকিয়ে দিতো।এ ব্যাটা ঠিক বুঝে গেছে আমার কিছুই হয়নি আমি ওইগুলো খাওয়ার জন্য এই নাটক টা করেছি।তাই তো এভাবে ইনজেকশনের ভয় দেখালো।

ওদিকে রোদ্দুর একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বললো,

—- এখন যখন সম্পূর্ণ সুস্থ তাহলে পটাপট এই গ্লাস গুলো খালি করে দেও তো!

আমি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

—- আমি কিছুতেই এগুলো খাবো না।

—- খাবে না তো! ঠিক আছে তাহলে এই ইনজেকশন টা নিতে হবে।তোমার হাতে দুই টা অবশন এক ইনজেকশন আরেক হলো ওগুলো খাওয়া।তুমি মনে হয় ইনজেকশন নিতে চাচ্ছো।ওকে আমি নাহয় ইনজেকশন টাই দেই।

কথা গুলো বলে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন রোদ্দুর।আমি তারাতাড়ি বললাম,

—- খবরদার আর এগোবেন ইনজেকশন নিয়ে ওই খানেই থাকুন। আমি এগুলোই খাচ্ছি।

কথা গুলো বলেই আস্তে আস্তে ওই ভয়ংকর গ্লাস গুলোর কাছে গিয়ে চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে নাক টিপে ধরে একের পর এক খেতে লাগলাম।এগুলো খাওয়ার সাথে সাথেই আমার মুখ ভরে বমি আসলো দৌড়ে ওয়াস রুমে ডুকে বমি করে দিলাম।

আর এদিকে রোদ্দুর হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,

—- আমার সাথে লাগতে আসলে এরকমই হবে।তাই এরপরে একশো কোটি বার ভেবে আমার সাথে লাগতে আসবা ওকে।

সেই থেকেই একা একা বসে বসে নিজে কে নিজেই কথা শোনাচ্ছি।……
#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৮
#Sumaia_Jahan

আজ ছয় ছয় টা মাস হয়ে গেলো আমি এই বাড়িতে আছি।বাড়িতে আছি মানে বাড়িতেই আছি বাড়ির বাহিরে এক পাও দিতে পারিনি। আমি অনেক বার চেষ্টাও করেছি এখান থেকে পালাতে কিন্তু প্রতিবারই ফলাফল এসেছে শূন। কারণ প্রতিবারই রোদ্দুরের হাতে ধরা পরেছি।আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না আমি পালাতে গেলেই উনি কোথাথেকে যেন আমাকে ধরে ফেলেন।অথচ উনি বাড়িতে না থাকাকালীন সময়ই আমি পালানোর চেষ্টা করি!আর প্রত্যেকবার ধরা পরার পর আমাকে উনি নানা রকম শাস্তি দেন।তবে শাস্তি গুলো উনার স্টাইলের কখনো গায়ে তেলাপোকা ছেড়ে দিতেন এরকম আরো কতো কি! তবে যাই করেন না কেন কখনো আমার কোনো ক্ষতি করেন।সবসময় আমাকে আগলে রেখেছেন।উনাকে এটুকু বিশ্বাস করতে পারি উনার থেকে আমার কোনো বিপদ নেই। সব খারাপ গুনের ভিতর এই একটা কারনে হলেও উনাকে এখন একটু ভালো লাগে।

এ কমাসে দিয়া আর আমার বাপি-মা আমার সাথে অনেকবার যোগাযোগ করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি ওদের সাথে যোগাযোগ রাখিনি।ফোন দিলে ধরিনি বা কেটে দিয়েছি।এ বাড়িতেও অনেকবার এসেছে আমার সাথে দেখা করার জন্য কিন্তু আমি ওদের সাথে কোনো কথা বলিনি।কেনইবা বলবো কথা ওরা তো আদির ব্যবপারে সবই জানতো তারপরও আমার সাথে কি করে এমন টা করলো?ওদের কথা ভাবতেও আমার এখন ইচ্ছা করছে না এতোটাই ঘৃণা জমে আসে ওদের জন্য আমার মনে।

আজ সারাদিনে একবারের জন্যও রোদ্দুর এর দেখা পেলাম না।সারাদিনে রোদ্দুর কে বাড়িতে দেখিনি। শুধু রোদ্দুর কেন আজ আমার সাথে কারোই দেখা হয়নি।কি আশ্চর্যের বিষয়! এতো মাস হয়ে গেলো আমি এ বাড়িতে আছি কখনো এমনটা হয়নি।সবসময় কেউ না কেউ আমার সাথে থাকতো। কখনো আমাকে একা একা থাকতে হয়নি।কিন্তু আজ সেই সকাল থেকে এখন বিকেল গড়িয়ে গেলো অথচ কেউ আমার খোঁজ নিতেও আসেনি।শুধু খাওয়ার টেবিলে সবার সাথে একবার দেখা হয়ে ছিলো। সবাই একদম চুপ চাপ খেয়ে যে যার কাজে চলে যায়।কিন্তু সেখানেও রোদ্দুর ছিলো না।বুঝতে পারছি না এই বজ্জাৎ ব্যাটা গেল কই!সারাক্ষণ তো আমাকে কোনো না কোনো ভাবে জ্বালাতে থাকে। মনে হয় আমাকে না জ্বালালে এই ব্যাটার পেটের ভাত হজম হয় না।কিন্তু আজ গেলো কই?এখন তো আমারই মনে হচ্ছে এই ব্যাটার জ্বালানো গুলো খুব মিস করছি।কিন্তু আমি ওই ব্যাটাকে মিস করছি কেন? সব সময় তো উনার থেকে পালাতেই চেয়েছি!তবে এখন কেন উনাকে মিস করছি?আমি আবার উনাক…. না না আমি শুধু আদিকেই ভালোবেসেছি আর আদি কেই ভালোবাসবো।আর কেউ আমার মনে জায়গা পাবে না।আমি কি করে এই কথাটা মনে আনতে পারলাম?আমার নিজের উপরই নিজের এখন ঘৃণা হচ্ছে। আমি কি করে এতো টা নিচে নেমে গেলাম?খারাপ আশপিয়া আমার কানে বলছে,

—- ওই পাগল এতে খারাপ কি হে?রোদ্দুর ব্যাটা তোর বিয়ে করা বরই!ওই আদি ব্যাটা এতো বছর হলো তোর কোনো খোঁজ নিছে?তুই এবার ওই আদিকে লাথি মাইরা তোর মন থেইকা বাইর করতো।আর ওইখানে এই রোদ্দুর রে ডুকা।এতে কিন্তু তোর ভালাই হইবো কইলাম।

আর ভালো আশপিয়া আরেক কানে বললো,

—- না আশপিয়া এমনটা করো না তুমি কিন্তু আদিকে কথা দিয়েছো তুমি ওর জন্য অপেক্ষা করবা।তাই তুমি অন্য কাউকে তোমার মনে জায়গা দিও না।এতে কিন্তু আদি কষ্ট পাবে।

আমি খারাপ আশপিয়া কে ঝাড়ু দিয়ে বিদায় করে ভালো আশপিয়ার সাথে একমত হয়ে ওর সাথে হাত মিলালাম।ভালো আশপিয়া তো খুশিতে গদগদ হয়ে গেছে ওর কথা শুনার জন্য। আর ওইদিকে খারাপ আশপিয়া তো রেগে মেগে আগুন। ও রেগে বললো,

—- ওই রোদ্দুর ব্যাটা তোর লগে যা করছে এক্কারে ভালাই করছে।তুই এইডারই যোগ্য।দেখবি তোর কপালে ওই রোদ্দুর ব্যাটাই জুটবো।আমার কথা তো এহন শুনলি না তোর কপালেই দুঃখ আছে দুঃখ বুজলি!

বিকেল প্রায় শেষ শেষ এমন সময় রোদ্দুর কোথা থেকে যেন খুব ক্লান্ত হয়ে ঘরে ডুকলো।ঘরে ডুকেই কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে ডুকে গেলো।ঘটনা টা এতো তারাতাড়ি ঘটলো যে আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না।শুধু নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকলাম।এ ঘরে যে আমি নামক কোনো প্রাণী আছে তা বোধহয় উনার মনেই নেই।মেজাজ টা পুরো গরম হয়ে গেলো।

ওদিকে রোদ্দুর ওয়াস রুমের দরজা বন্ধ করে আস্তে আস্তে বললো,

—- আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমার সাথে এমন ব্যবহার করার জন্য।আজকের পর তোমাকে আর রোদ্দুর খানের কোনো জ্বালা সহ্য করতে হবে না।সে আসছে!আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা!

কথাগুলো বলে রোদ্দুর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শাওয়ার নিতে গেলো।আর এদিকে আশপিয়া রোদ্দুর এর জন্য ওয়াস রুমের দরজার সামনে থেকে লক করে দরজার সামনেই পায়চারি করছে যাতে এবার আর রোদ্দুর পালাতে না পারে।

আমাকে উত্তর না দিয়ে আজকে এখান থেকে যেতে পারবেন না।সেই সকাল থেকে আমার সবাই এমন আজব ব্যবহার কেন করছে?আর উনি এতোক্ষণ কোথায় ছিলো?সব কেমন রহস্য ময় আমার কাছে সব কিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে।আমি সব কিছুর উত্তর চাই তাও আবার এখুনি!
রোদ্দুর শাওয়ার নিয়ে দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা বাইরে থেকে দরজা লক করা।ও বুঝতে পরছে আশপিয়াই লক করে রেখেছে আর কেন করেছে তাও ও জানে।কিন্তু এখন সব উত্তর তো দিতে পারবে না।এখন যে তাকে আনতে যেতে হবে।

—- আশপিয়া দরজা টা খোলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে!

—- জি না এখন দরজা খোলা যাবে না।আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন তারপর খুলবো তখন যেখানে খুশি সেখানে যাবেন।আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।

—- আমি জানি তোমার কি প্রশ্ন কিন্তু তার উত্তর আমি এখন দিতে পারবো না। তার জন্য তোমাকে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।এখন দরজা খোলো আমাকে যেতে হবে।

আমি অবাক কি বলছে এসব উনি?উনি আমার সাথে এইভাবে কেন কথা বলছে।আর আমার প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে কেন?যাইহোক যখন অপেক্ষা করতে বলেছে না-হয় কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করি।আমি বললাম,

—- ঠিক আছে তা না হয় অপেক্ষা করবো কিন্তু এখন আমাকে বলতে হবে আপনি কোথায় যাবেন?

রোদ্দুর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গম্ভীর গলায় বললো,

—- একজন বিশেষ মানুষ কে আনতে এয়ারপোর্টে যেতে হবে।দেরি হয়ে যাচ্ছে এখন প্লিজ তারাতারি দরজাটা খোলা না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

আমি আর কথা বাড়ালাম না দরজাটা খুলে দিলাম।উনি বেরিয়ে তারাতাড়ি রেডি হয়ে চলে গেলেন।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনার প্রিয় কোনো জিনিস হারিয়ে ফেলার কষ্টে আছেন।উনাকে দেখে আজকে কেন যেন ভিষণ মায়া হচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছে উনার কষ্ট টা ভাগ করে নেওয়ার।কিন্তু আফসোস তা কখনো সম্ভব নয়।কথাগুলো ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।

ওদিকে রোদ্দুর ফুল স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে। আজ তার মনে অনেক বড়ো ঝড় উঠছে।আজ যে তার সবথেকে প্রিয় মানুষ কে হারিয়ে ফেলার ভয়। প্রিয় মানুষ টার কথা ভাবতে ভাবতে এয়ারপোর্টে চলে এসে পরেছে।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নেমে এয়ারপোর্টে ভিতরে চলে যায়।এখানে এসেই সেই ব্যক্তি দেখা পেয়ে গেলো।সেই ব্যক্তিকে দেখে রোদ্দুর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে এক কানে হাত রেখে বললো,

—- সরি সরি বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে দেরি করিনি!

—- আমি এতো বছর পর ফিরলাম কোথায় আমার জন্য এক ঘন্টা আগে এসে বসে থাকবি তা না বিশ মিনিট লেট করে এসেছিস আর এখন আমার কাছে ক্ষমা চাইবি আর আমি তোকে ক্ষমা করে দেবো?

—- ঠিক আছে তুই যা শাস্তি দিবি আমি মাথা পেতে নিবো তাও আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দে!

—- ওকে এবারের মতো ক্ষমা করলাম কিন্তু এটাই লাস্ট বলে দিলাম।

—- ওক্কে!

কথাগুলো বলেই দুজন হেঁসে দিলো।এবার ওই লোকটা হাসি থামিয়ে রোদ্দুর কে বললো,

—- সব কিছু প্লান মাফিক আছে তো?আর ও কিছু বুঝতে পারেনি তো?

রোদ্দুরও হাসি থামিয়ে বললো,

—- হুম একদম সব কিছু প্লান মাফিক হয়েছে আরও কিছু বুঝতে পারেনি। রোদ্দুর খান কোনো কাজে হাত দিয়েছে আর সে কাজ সাকসেসফুলি হয়নি এমন কোনো দিন হয়েছে!

ওই লোকটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে রোদ্দুর কে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।

চলবে,,,,,

[প্রথমেই বলি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কালকে আপনাদের জন্য ধামাকা আছে।সবার সব কিছু কালকের পার্টেই ক্লিয়ার হবে ইনশাআল্লাহ। আর আজকে গল্প ভালো ভাবে সাজাতে পারিনি তাই বড়ো করতে পারিনি।কালকে ইনশাআল্লাহ ধামাক বড়ো পার্ট দিবো 😅 ]
চলবে,,,,,,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কালকে সবাইকে রোদ্দুর সম্পর্কে বলতে বলেছিলাম।আমি ভেবেছি সবাই রোদ্দুর কে গালি দিবে আমার ভাবনা উল্টো করে সবাই রোদ্দুর কে পছন্দ করে ফেললেন!😅]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here