তুমি_আমারই পর্ব ১৫+১৬

#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৫
#Sumaia_Jahan

—- আয়সু আমি কিন্তু তোর সাথে রাগ করেছি হুম?

আদি স্কুল থেকে একটু দূরে একটা পুকুর আছে।আদি প্রতিদিন আমার জন্য এই পুকুর পাড়ে বসে থাকে।প্রতিদিনের মতো আজও বসে ছিলো। মাত্র আমি এসে ওর পাশে বসলাম আর তখনি ও আমাকে এই কথাটা বললো।কথাটা শোনার সাথে সাথে আমি অবাক হয়ে আদির দিকে তাকালাম আমি। আমি তো আমি কিছু করিনি তাহলে ও রাগ করবে কেন কোনো কারন ছাড়া?আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- আমি তো কিছু করিনি তাহলে তুমি আমার সাথে রাগ করলে কিভাবে?

আদি পুকুরে ডিল মারতে মারতে গম্ভীর গলায় বললো,

—- তুই অজকে অনেক বড়ো বড়ো দুইটা অপরাধ করেছিস।এখন আবার বলছিস কিছু করিসনি! আইসু তুই তো দিন দিন খুব মিথ্যুক হয়ে যাচ্ছিস!

অামি অবাকের উপর অবাক কি বলছে ও।আমি নাকি দুই দুইটা বড়ো বড়ো অপরাধ করেছি অথচ আমি কিছুই জানি না।পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি?আল্লাই জানে?আমি এবার ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,

—- সেই কখন থেকে কি আজে বাজে বলছো হে।পাগল হয়ে গেলা নাকি?

আদি মুখটাকে গম্ভীর করে বললো,

—- হে এখন তো আমাকে তোর কাছে পাগলই লাগবে!আর আকাশ কে তো পৃথিবীর সবথেকে ভালো মানুষ লাগবে।

এই ছেলে আজকে আমাকে নিশ্চিত পাগল বানিয়ে ছাড়বে।ওর কথার মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি হতাশ কন্ঠে বললাম,

—- আদি তুমি মনে হয় আজকে অসুস্থ তাই আবলতাবল বকছো।আজকে তারাতাড়ি বাড়ি যাও বাড়ি গিয়ে একটু ঘুমাও তাহলে ভালো লাগবে।

আদি মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- হুম এখন আমি বাড়ি চলে যাই আর তুই গিয়ে ওই আকাশের সাথে হেসে কথা বল!এখন তো আমাকে আর ভালো লাগে না এখন তো আকাশই তোর সব ওর সাথেই কথা বলবি!কিন্তু আমি থাকতে না তুই অন্য কারো সাথে কথা বলতে পারি না তুই শুধু আমারই হুম!

শতো বিরক্তর মধ্যেও তুই আমার কথাটা শুনে মনের ভিতর কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করছে।কিন্তু ও আমাকে সেই কখন থেকে আবোল তাবোল কথা বলেই যাচ্ছে তাই ঝাঁঝালো গলায় বললাম,

—- আকাশ আকাশ করছো কেন হে আর আমার আকাশ ভাইয়া কে ভালো লাগবে কেন?আর তখন কি বললে আমি নাকি কি বড়ো বড়ো দুইটা অপরাধ করেছি! বলো সেই বড়ো বড়ো অপরাধ গুলো কি?

আদি এখনো মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- কোন মুখে জিজ্ঞেস করছিস আইসু তোর এই এত্তো বড়ো বড়ো অপরাধের কথা? তাও বলছি প্রথম অপরাধ হলো তুই একটু আগে আকাশের সাথে দুই মিনিট তিন সেকেন্ড হেসে কথা বলেছিস আর দ্বিতীয় অপরাধ হলো তুই ওই দুই মিনিট তিন সেকেন্ড পরে আমার কাছে এসেছিস।তুই কি মনে করেছিস আমি তোর বল তুই এত্তো বড়ো দুইটা অপরাধ করেছিস এখন কি শাস্তি দেবো তোকে?

আমি ওর কথা শুনে বলবো বুঝতে পারছি না। এগুলো নাকি কোনো অপরাধ।এই ছেলে আমাকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেই এমন করে।আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না কেন এমন করে।আকাশ ভাইয়া ওরই বন্ধু। এখানে আসার আগে আকাশ ভাইয়া আমাকে ডেকেছিলো তো বড় ভাই এর মতো একজন মানুষ ডেকেছি তাই না দাড়িয়ে পারলাম না।সেজন্য কিছুক্ষন উনার সাথে কথা বলেছি।আর এই ছেলে সেগুলো দেখে আমি কয়সেকেন্ট উনার সাথে কথা বলেছি তাও হিসাব করে রেখেছে। একে এখন হাজার বার বুঝালেও বুঝবে প্রতিদিনই এমন করে।তাই হতাশ হয়ে বললাম,

—- ঠিক আছে আজকে থেকে আর কোনো ছেলের সাথে আর কথা বলবো না। যদি কোনো বড়ো ভাইয়ের মতো মানুষও ডাকে তাহলেও দাড়াবো এবার খুশি!

আদির আনন্দে চোখ চিকচিক করছে।যেন এর থেকে খুশি এ পৃথিবীতে ওর কাছে আর কিছুই নেই।ও খুশিতে আমার হাতটা ধরে বললো,

—- সত্যি আয়সু!তুই আর কোনো দিন কোনো ছেলের সাথে হেসে কথা বলবি না?

আমি ওর হাতের উপর হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে মাথা নেরে বললাম,

—- হুম সত্যি খুব প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছেলের সাথে আর কখনো কথা বলবো না।

আমার কথা শুনে ওর খুশি আর দেখে কে মনে হয় পৃথিবীর সবথেকে বড়ো সুখ ও পেয়ে গেছে।তারপর বললো,

—- আমি আজকে খুব খুব খুশি।আয়সু দাড়া তোর জন্য একটা উপহার এনেছি?

আমি বললাম,

—- সত্যি!কই দেখি আর এতোক্ষণ দিলে না কেন?

আদি একটু হেসে বললো,

—- এখন তো দিচ্ছি! এই নে।

কথা টা বলেই একটা লকেট বের করে আমাকে লকেট টা পরিয়ে দেয়।লকেটাতে নীল রঙের একটা বড়ো পাথর আছে আর চারিপাশে নানা রকমের কারুকাজ করা।লকেটা অসম্ভব সুন্দর। আমি লকেট টা ধরে ধরে বার বার দেখছি আর লেকটার সৌন্দর্যে বার বার মুগ্ধ হচ্ছি।আদি বললো,

—- এই লকেট টা কিন্তু কোনোদিন গলা থেকে খুলবি না।এটা তোকে আমার কথা সবসময় মনে করিয়ে দিবে।কখনো আমাকে ভুলতে দিবে না।যখন আমি থাকবো তখন আমার জন্য মন খারাপ হলে এই লকেটার সাথে কথা বলবি।তখন মনে হবে আমি তোর সাথেই আছি।

শেষের কথা গুলো শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।কেন থাকবে না? আমার আদি আমার সাথে সবসময় থাকবে কখনো কখনো যাবে না।আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় ঘন্টা বেজে উঠলো।আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখন ক্লাস শুরু হবে।তাই এখন আর কিছু বলা হলো না।আমি উঠে বললাম,

—- আবার পরে কথা হবে এখন যেতে হবে।নাহলে ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে!

আদি মন খারাপ করে বললো,

—- এক্ষুনি যেতে হবে আর একটু থাকা যায় না?

আমি বললাম,

—- এখন যদি না যাই তাহলে ওই পেট মোটা স্যারের কাছে আবার বকা খেতে হবে।

আদি মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- ঠিক আছে যা কিন্তু ওই আকাশের থেকে দুরে থাকবি নাহলে কিন্তু তোর কপালে দুঃখ আছে।

আমি একটু হেসে মাথা নেরে সাই দিয়ে চলে গেলাম পেট মোটা স্যারের ক্লাস করতে।

আদি ওখানেই বসে আশপিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- যেই আমি তোকে ছাড়া একমুহূর্তও থাকতে পারি না সেই আমি তোকে ছাড়া দশটা বছর কি করে থাকবো?

কথাটা বলেই আদি মন খারাপ করে কিছুক্ষন ওখানে বসে থেকে পরে উঠে নিজের ক্লাসে চলে গেল।
হাসি খুশিতে একটা বছর কেটে গেলো।দুইমাস আগে আদির এসএসসি পরীক্ষা হয়েছে আজ ওর রেজাল্ট বের হয়েছে।আদি খুব ভালো রেজাল্ট করেছে কিন্তু ওর মনে একটু খুশি নেই ওর যে ওর প্রিয়তমাকে ছেড়ে দশটা বছর থাকতে হবে।এটা যে আদির কাছে কতটা যন্ত্রণার তা বলে বোঝানো যাবে না।ও বসে অপেক্ষা করছে ওর প্রিয়তার থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য। কিছুক্ষন পর আশপিয়া এসে আদির পাশে বসে।

আজকে আদি কে খুব মন মরা লাগছে।কিন্তু আমি তো আজকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলি নি তাহলে?আমি আদির কাঁধে হাত দিয়ে বললাম,

—- আদি কি হয়েছে? দেখ আজকে কিন্তু আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলিনি! তাও কেন মন খারাপ করে আছো প্লিজ বলো!দেখ তুমি এবাবে তাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না।

আদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

—- আয়সু তুই আমাকে কখনো ভুলবি নাতো আমাকে কথা দে আমার জন্য অপেক্ষা করবি।

আমি হতবাক কি বলছে ও এসব?আমি অবাক কন্ঠে বললাম,

—- তোমাকে কেন ভুলবো আর অপেক্ষা করতে হবে কেন এগুলো কি বলছো?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

আদি সামনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

—- আমাকে দশবছরের জন্য বিদেশে যেতে হবে পড়াশোনার জন্য। আমার বাবার অনেক দিনের ইচ্ছা আমাকে বিদেশে পড়াশোনা করানোর।তাই বাবার ইচ্ছা পুরণ করার জন্য আমাকে বিদেশে যেতে হবে।আর আজই আমার ফ্লাইট আজ রাতেই আমাকে প্লেনে উঠতে হবে। আর দশ বছর পরে পড়াশোনা কমপ্লিট করে দেশে ফিরতে পারবো। আমাকে এই দশ বছরে কিন্তু ভুলে যাবি না।আর আমাকে তুই এখুনি কথা দে আমার জন্য তুই অপেক্ষা করবি!

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ছলছল চোখে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।আমি ওর কথা শুনে কেঁদে দিলাম। আমার ভিষন কষ্ট হচ্ছে আমিও যে আদি কে একদিনও না দেখে থাকতে পারি না। কি করে থাকবো দশ দশটা বছর।আমার কান্না করা দেখে আদি আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,

—- কাঁদছিস কেন আমার আয়সু না খুব স্টং।শোন আয়সু আমাদের বিয়েটা কিন্তু একদম ইউনিক ভাবে হবে সবার থেকে আলাদা ভাবে হুম।আর এই দশ বছর আমি দুরে থাকছি বলে এই ভাবিস না তুই যা খুশি তাই করবি। আমি কিন্তু তোর উপর নজর রাখবো যদি দেখি কোনো ছেলের সাথে হেসে কথা বলেছিস তাহলে কিন্তু তোর কাঁপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।আর আমি কখন থেকে হাত বাড়িয়ে রেখেছি এবার তো আমার হাত ব্যথা হয়ে যাবে এবার তো কথা দে!

আমি চোখ মুছে হাসি মুখে বললাম,

—- কথা দিচ্ছি দশ বছর কেন হাজার বছরও যদি অপেক্ষা করতে হয় তাহলেও আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো কথা দিলাম।
#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৬
#Sumaia_Jahan

স্মৃতির পাতায় থেকে বেরিয়ে এলাম এতো কিছুর মধ্যেও আদির সাথে কাটানো দিন গুলোর কথা মনে পরতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো।আদি তো আমাকে বলেছিলো দশ বছর পর ফিরবে তবে এখনো কেন ফিরলো না?ফিরলেও কেন আমার সামনে আসছে না?কি দোষ করেছি আমি?কথা গুলো ভেবেই আবারও কান্না করতে শুরু করলাম।আর আমার গলায় থাকা আদির দেওয়া লকেট টা স্পর্শ করে বলতে লাগলাম,

—- কেন ফিরছো না তোমার আয়সুর কাছে? তোমার আয়সু যে বড্ড কষ্টে আছে।দেখ তোমার আয়সু খুব কন্না করছে!তুমি তোমার আয়সুর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলবে না? ” কাঁদছিস কেন আয়সু এই দেখ আমি ফিরে এসছি তোর কাছে “।কেন বলছো এগুলো কেন? কেন?

কথা গুলো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম।কান্না করতে করতেই ঘুমের দেশে কখন যে তলিয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না।

অন্য দিকে আদিও বেজা চোখে আশপিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,

—- আয়সু তুই মিথ্যুক বড়ো মিথ্যুক।তুই কখনো আমাকে ভালোবাসিস নি।তুই যদি আমাকে সত্যিই ভালোবাসতিস তাহলে তুই আমার সাথে এমন টা করতে পারতিস না।তোকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে।কঠিন শাস্তি! তুই আমাকে যতোটা পুরিয়েসিস আমিও তোকে ঠিক ততোটাই পুরিয়ে ছাড়বো হুম!

সকাল বেলা আমার ঘুম ভাঙ্গতেই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে আমি মাথায় দুই হাত চেপে ধরে বসলাম।আমি বসে চারিদিকটা ভালো ভাবে তাকিয়ে পুরো অবাক।কারন আমি বিছানায়!আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি কালকে রাতে ফ্লোরে বসে কান্না করতে করতে ওখানেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।কিন্তু বিছানায় কি করে আসলাম।এসব ভাবতে ভাবতেই সোফার দিকে তাকিয়ে দেখি রোদ্দুর সোফায় ঘুমিয়ে আছে। সবসময় তো আমিই সোফায় আর উনি খাটে ঘুমান।আজ হঠাৎ উনি সোফায় কেন ঘুমাচ্ছেন? মনে হয় রাতে আমাকে ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে করুনা হয়েছে তাই হয়তো আমাকে এখানে খাটে রেখে উনি সোফায় ঘুমিয়েছেন।এখন উনার এই ঘুমন্ত মুখ টা দেখে কতোটা নিষ্পাপ লাগছে।কে বলবে এই নিষ্পাপ মুখটার আরালে কতোটা খারাপ মানুষ লিকয়ে আছে।

মাঝে মাঝে কয়েকটা জিনিস আমি লক্ষ করেছি আদির মতো।আচ্ছা উনার সাথে কি আমার আদির কোনো সম্পর্ক আছে? কিন্তু রোদ্দুর তো একটা সম্পুর্ন আলাদা মানুষ না না উনার সাথে আদির কোনো সম্পর্ক নেই সবই আমার মনের ভুল। যাকগে এসব আমি এখন ভাবতে পারছি। আমার এখন খুব মাথা ব্যথা করছে আগে মাথা ব্যাথা ঠিক করি তারপর এই ব্যাটাকে শায়েস্তা করা যাবে।

তারপর আমি উঠে নিচে নেমে কিচেনের দিকে যাওয়ার আগেই শ্বাশুড়ি মা কফি হাতে নিয়ে বোরোলেন। উনি বেরিয়ে আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,

—- উঠে গেছিস আশপিয়া!আমি তো তোর কাছেই যাচ্ছিলাম। যাক ভালোই হয়েছে তোকে পেয়ে গেছি।

আমি বুঝিয়ে উনি সবসময় এতো হাসি মুখে থাকেন কি করে? কি সবসময় কথা বলার আগে একটা মিষ্টি হাসি দিবেনই দিবেন!আর উনার হাসিটাও মারাত্মক সুন্দর। যাইহোক উনি আমাকে কেন খোঁজছিলেন?আমি প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—- মা তুমি আমাকে কেন খুঁজছো? কোনো কি প্রয়োজন?

উনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে কফির মগ টা এগিয়ে দিয়ে বললো,

—- তোর এখন নিশ্চয়ই মাথা ব্যাথা করছে! তাই তোকে কফি দেওয়ার জন্য খুঁজতেছিলাম।এই নে ধর মগটা।

উনাকে দেখে মনে হয় না আমি উনার ছেলের বউ।আমাকে কখনো বুঝতেই দেয়না আমি আমার মা-বাপি থেকে দূরে আছি।সবসময় আমাকে আগলে রাখে নিজের মেয়ের থেকেও মনে হয় আমাকে বেশি ভালোবাসে।আমারও এখন উনাকে নিজের মায়ের মতোই লাগে।আমার কখন কি লাগবে তা আমার আগেই উনি জেনে যান।পৃথিবীর সব বউ-শ্বাশুরীর সম্পর্ক টা যদি এমন তো তাহলে পৃথিবীতে কোনো অশান্তিই থাকতো না।কিন্তু আফসোস পৃথিবীতে সব বউ-শ্বাশুরীর সম্পর্ক গুলো এমন হয় না।একজন ভালো হলে তো আরেকজন খারাপ হয়।খুব অল্প মানুষের ভাগ্যেই এমন সুখ লেখা থাকে। আমি তাদের মধ্যে একজন কিন্তু উনি যদি রোদ্দুর এর মা না হয়ে আমার আদির মা হতেন তাহলে কতোই না ভালো হতো।কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়।তাই সেটা ভেবেও লাভ নেই। জানি না এমন মা আমার কপালে কদিন থাকবে।আমি শ্বাশুড়ি মায়ের হাত থেকে কফিটা নিয়ে বললাম,

—- মা তুমি কি করে বুঝে যাও আমার কখন কি লাগবে? তোমার কাছে কি যাদু আছে?

উনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার মুখে হাত রেখে বললো,

—- দূর পাগলি!মায়েরা মেয়েদের কখন কি লাগে সব জানে।তাছাড়া কাল রোদ্দুর বললো তুই নাকি রাতে অনেক কান্না করেছিস।এতো কান্না করলে তো মাথা ব্যাথা করবেই তাই তো এই সকাল সকাল তোর জন্য কফি বানালাম।এখন যা ঘরে গিয়ে কফিটা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে তাহলে ব্যাথা অনেক টা সেরে যাবে।

আমি উনার কথায় সাই দিয়ে মাথা নেয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে দেখি রোদ্দুর এখনো বেগুরে ঘুমোচ্ছে। আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমের বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে কফি খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম।তারপর কফি খাওয়া শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম এখন অনেক টা মাথা ব্যাথা সেরে গেছে।শরীরের ক্লান্ত ভাবটাও আর নেই বেশ ফুরফুরে লাগছে এখন।

রোদ্দুর এর দিকে তাকিয়ে দেখি উনি এখনো এই ভাবে ঘুমিয়ে আছেন।মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এসেছে।ব্যাটা আমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছিস না? আবার আমকে বলেসিস আমাকে আমার আদির থেকে সারাজীবন আলাদা রেখে আমাকে তোর স্টাইলে শাস্তি দিবি তাই না দাড়া এবার তোর কি অবস্থা করি আমি। এই আশপিয়া কে তো চিনিস না! তারপর আমি আমার সব সাজার সিনিস নি এসে রোদ্দুরের পাশে আরাম করে বসে পরলাম।এবার একে একে সাজাতে লাগলাম ঠোঁটের একপাশে লাল আর অন্য পাশে গোলাপি লিপস্টিক। চোখের দুই পাশে কাজল, আইলেনার,মেকাপ দিয়ে দুই রকম ভাবে সাজিয়েছি।কপালে ইয়া বড়ো করে একটা লিপস্টিক দিয়ে টিপ।আর পুরো মুখে মেকাপ দিয়ে ভরিয়ে দিলাম মুখের দুই সাইডে দুই রঙের মেকাপ লগালম।মুখের দুই সাইড দুই রকম জোকারের মতো লাগছে।পুরো সাজ কমপ্লিট করে একটা পিক তুলে রাখলাম পরে কাজে লাগানো যাবে।এই সাজ দেখে আমার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এখানে তো হাসা যাবে না হাসলেই তো ধরা পরে যাবো।কিন্তু এই হাসি কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছি না।তাই তারাতাড়ি দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম।

ছাদে এসে পেটে চেপে রাখা হাসিটা কে পেট থেকে উপড়ে ফেলে গগন ফাটানো হাসিতে ফেটে পরলাম। অনেকক্ষণ পর্যন্ত হাসতেই আছি কিন্তু এই হাসি কিছুতেই থামছে না।যতবার হাসি থামানোর চেষ্টা করছি ঠিক ততো বারই রোদ্দুরের ওই জোকার মুখ টা মনে পরে যাচ্ছে যার দরুন আবারও দ্বিগুণ হাসিতে ফেটে পরছি।আমার হাসির শব্দে রুহি আর রাহাত দুজনেই ছাদে চলে এলো।আমাকে এভাবে হাসতে দেখে রাহাত বললো,

—- কি ভাবিমনি তুমি একা একাই হাসছো! আমাদেরকেও একটু বলো আমরাও একটু হাসি।

আমি হাসতে হাসতে ওদেরকে ইশারায় আমার কাছে ডাকলাম। ওরা আমার কাছে আসতেই আমি রোদ্দুরের জোকার মুখের পিক দেখালাম।

পিকটা দেখে রুহি মাথা চুলকে বললো,

—- এটাতো একা জোকারের পিক। কিন্তু কেমন যেন একটা চেনা চেনা লাগছে জোকারটাকে!

আমি খুব কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করে বললাম,

—- এটা আর কেউ না এটা তোমাদের প্রানপ্রিয় বড়ো ভাইয়ের।

আমার কথা শুনে রুহি আর রাহাত একবার দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,

—- কি কি কি……..

আমি ওদের চিৎকারে কান চেপে ধরে বললাম,

—- আরে তোমরা কি এখন আমার কান নষ্ট করে ফেলবে নাকি?হ্যা টা রোদ্দুরই!আর ওকে এভাবে আমি একটু আগে সাজিয়ে এসেছি।এবার বলো কেমন হয়েছে সাজটা।

কথাটা বলতে দেরি কিন্তু আমাদের তিন জনের গগন ফাটানো হাসতে দেরি নেই। আমরা হেসেই চলেছি।

আর ওদিকে রোদ্দুর ঘুম থেকে উঠে তোয়ালে হাতে নিয়ে ওয়াস রুমের ডুকলো।ডুকেই ব্রাশ করতে করতে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজে কে নিজে দেখেই একা জোর চিৎকার দিলো।আর ভয়ে ভয়ে বলতে লাগলো,

—- কে আছো এখানে? কে? এখনি বেরিয়ে আসো বলছি নাহলে কিন্তু ভালো হবে না!

কথাগুলো বলতে বলতে চারিদিকে একবার ভালো করে দেখে নিলো।না এখানে তো সে ছাড়া আর কেউ নে।তাহলে একটু আগে কাকে দেখলো ভুত নয় তো!আবার একটু ভয়ে ভয়ে আয়নার দিকে তাকালো।এবার বুঝতে পারলো কোনো ভুত টুত কিছুই না ওর নিজের মুখটাকে কেউ জোকারের মতো করে সাজিয়ে দিয়েছে ওর আর বুঝতে বাকি নেই কে ওকে এইভাবে সাজিয়েছে।রাগে ওর মাথা গরম হয়ে গেছে এখন এইভাবে আশপিয়ার সামনে যাওয়া যাবে না তাই এখন নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে শাওয়ার নিচ্ছে।

রুহি কিছুক্ষণ হাসার পর বললো,

—- ভাইয়া কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দেবে না!

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,

—- বয়েই গেছে! তোমার ভাইয়াকে আমি ভয় পাই নাকি!

তখনি নিচ থেকে একটা চিৎকারের শব্দ এলো।মুখ যতোই সাহস দেখাই না কেন এখন আমারও একটু একটু ভয় লাগছে যা বজ্জাত লোক। একটা চড়ের কারনে এমন অবস্থা করেছে এখনতো পুরো জোকার বানিয়ে দিয়েছে না জানি কি হয়।কিন্তু ওদের সামনে তা বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাই মুখে হাসি ধরে রাখলাম।……

চলবে,,,,,

[ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। আজকে গল্প দিতে দেরি হয়েছে তার জন্য সরি।আপনাদের রোদ্দুর কে কেমন লাগে? সবাই আজকে রোদ্দুর কে নিয়ে কিছু বলবেন 🙃 ]
চলবে,,,,,

[ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। 🙂]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here