তুমি_আমারই পর্ব ১৩+১৪

#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৩
#Sumaia_Jahan

আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেছে। যাকে বিশ্বাস করি সেই আমাকে ঠকাচ্ছে। যার জন্য আমি আমার জীবনে সবচাইতে কঠিন সিদ্ধান্ত টা নিলাম নিজের জীবনের থেকে তার জীবনের কথা আগে ভাবলাম সেই কিনা আমাকে ঠকালো।আজ ভার্সিটি এসে ইশার কাছে জানতে পারলাম সেদিন আমার আর রোদ্দুরের বিয়ের আমরা যখন দিয়ার বাড়ি থেকে চলে আসলাম তারপরেই দিয়ার সাথে রাজিব ভাইয়ার ধুমধাম ভাবে বিয়ে হয়েছে। ওইদিন যে দুইটা বিয়ে হবে তা নাকি আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো। ইভেন সবাই জানতো ওই দিন দুইটা বিয়ে হবে শুধু মাত্র আমিই জানতাম না।এমনকি দিয়াও নাকি জানতো।আমি ইশা থেকে কথা গুলো শুনে প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু তারপর ইশা আমাকে দিয়ার বিয়ের একটা ভিডিও দেখালো।ভিডিও টা ছিলো দিয়ার বিয়ের। ওখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দিয়ার আর রাজিব ভাইয়ার পরিবারের সবাই একসাথে হাসি খুশিতে ওদের বিয়ে দিচ্ছে। ওদের দেখে বোঝাই যাচ্ছে অনেক দিনের ইচ্ছা পুরণ হলো সবার।

তারমানে ওই দিন আমার সাথে যা যা হয়েছিলো তার সবই সাজানো নাটক ছিলো।এ কারণেই ওইদিন সবাই এতো স্বাভাবিক ছিলো।আর দিয়ার মা কেন বারবার আমাকে সবকিছু মেনে নিতে বলেছিলো।আর আমি বোকার মতো ওদের নাটককে বিশ্বাস করে নিজের জীবনের এতো বড়ো একটা ক্ষতি করে ফেললাম। দিয়া ওর প্রতি আমার ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে আমার এতো বড়ো একটা ক্ষতি করলো।আর আমি কিনা ওরই ভালোবাসা বাঁচানোর জন্য নিজেকে বলি দিলাম।এ পৃথিবীর মানুষ গুলো বড়োই অদ্ভুত সবাই মুখোশ ধারি।

আমি আর একমুহূর্তও সেখানে দাড়ালাম না সাথে সাথেই বাড়ি চলে এলে এলাম। আমার জবাব চাই কেন আমার কেন এতো নাটক করে আমাকে রোদ্দুর খান বিয়ে করলো।কি উদ্দেশ্য রোদ্দুর খানের আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আজ এই রোদ্দর খানকে।রাগে আমার গাঁ ফেটে যাচ্ছে। তারপর বাড়ি এসে আমি খুজতে লাগলাম রোদ্দুর কে নিজের ঘরে গিয়ে দেখলাম ওখানে নেই। মনে হয় ছাদে আছে তাই ছাদে চলে এলাম।ছাদে এসে দেখি রোদ্দুর ছাদে দোলনায় আরাম করে বসে চোখ বন্ধ করে দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতেছে।বাহ!আমার জীবন তছনছ করে এখন আরাম করে বসে গান শুনতেছে।আমি রোদ্দুরের সামনে গিয়ে রেগে জোরে বললাম,

—- কেন করলেন আমার সাথে এই নাটক?

উনি আমার কথা শুনে চোখ খুলে কান থেকে হেডফোন খুলে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

—- এতো দেরি লাগে আসতে? আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি তোমার জন্য?

উনার কথা শুনে আমি কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে রইলাম।আমি কি প্রশ্ন করলাম আর উনি আমাকে কি বলছেন।ওহো আমি তো ভুলেই গেছি উনি তো দি গ্রেট রোদ্দুর খান উনি পারেন না এমন কিছু তো হতেই পারে না।হয়তো আমি যে সব কিছু জেনে গেছি এটাও উনি জানেন।আমি রেগে বললাম,

—- সো মিস্টার রোদ্দুর খান আপনি তো সবই জানেন আমি এখন আপনাকে কি প্রশ্ন করতে এসেছি।

রোদ্দুর আবারও শান্ত গলায় বললো,

—- হুম জানি তো কি প্রশ্ন করতে এসেছো।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

—- তো আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।কেন এতো নাটক করে বিয়ে করলেন আমাকে?কেন আমার জীবন টাকে ছারখার করে দিলেন?কেন?

উনি আরাম করে বসে চোখ বন্ধ করে বললেন,

—- কেন আবার প্রতিশোধ নিতে!

আমি অবাক হয়ে বললাম,

—- প্রতিশোধ! কিসের প্রতিশোধ?

উনি চোখ বন্ধ করে অবস্থায়ই বললেন,

—- সেকি তোমার স্মৃতি শক্তি এতোই দুর্বল! আমি তো শুনেছি তুমি লেখাপড়ায় খুব ভালো ইভেন প্রতিটা ক্লাসেই টপ করো।ঠিক আছে আমিই মনে করিয়ে দিচ্ছি তোমার আর আমার প্রথম দেখা যেন কিভাবে হয়েছিলো?

আমার এভার মনে পরলো,

সেই দিন আমাদের ভার্সিটি একটা অনুষ্ঠান চলছিলো।সব মেয়েরা শাড়ি পরেছে তো আমিও সেই দিন শাড়ি পরেছি।জর্জেট শাড়ি পরার কারনে শাড়ি টা সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।তাই আমি শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে যাচ্ছিলাম হাঠাৎ করে একজনের সাথে ধাক্কা লেগে যায়। আর ধাক্কা লেগে সামনে থাকা লোকটা আমার উপর পরে যায়।আমি তারাতাড়ি লোকটাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে আমি ওঠে পরি এতোক্ষণে লোকটিও ওঠে যায়।লোকটি ওঠেই আমার দিকে কেমন যেনভাবে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ পর আমার দিকে লোকটার হাত বাড়িয়ে দেয় আমাকে ছোঁয়ার জন্য ঠিক তখনি আমি লোকটার মুখে একটা চড় বসিয়ে দেই। আর রেগে জোরে চিৎকার দিয়ে বলি,

—- মেয়ে দেখলেই ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়ে পড়ে যেতে ইচ্ছা করে আবার তাকে ছুঁয়েও দেখতে হয় তাই না।অসভ্য অভদ্রো লোক একটা ভার্সিটিতে দাড়িয়ে এসব অসভ্যতামি করছেন!

আমার চিৎকারে পুরো ভার্সিটির সবাই এসে গোল হয়ে দাড়িয়ে আমাদের কে দেখছে।লোকটা কিছু বলতে যয়াবে তার আগেই আমি আবারও বললান,

—- কি বলবেন সরি তো সরি বললেই কি আপনার সব দোষ শেষ হয়ে যাবে? শুনুন মিস্টার এরপর থেকে মেয়েদের সাথে অসভতামি করতে যাপয়ার আগে আজকের চড়টা মনে রাখবেন।

কথা গুলো বলেই আমি সেখান থেকে চলে আসলাম।পরদিন হঠাৎ করেেই দিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। জামাই বড়ো বিজনেস ম্যান নাম রোদ্দুর খান।দিয়াকে ওর হবু বরের সাথে দেখা করার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলো আমাকেও ওর সাথে নিয়েছিয়েছে আমি ওর হবু বরকে দেখে মারাত্মক রকমের শকট খেলাম।কারন কারন দিয়ার হবু বরই কালকের সেই লোকটা।উনি আমাকে দেখেই বললেন,

—- আ’ম ভেরি সরি কালকে যা হলো আমি সত্যি ইচ্ছা করে করিনি আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিবেন।

আমি একটু হেসে বললাম,

—- আরে না না আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে না আমি আসলে কালকে খুব রেগে ছিলাম তো তাই রাগের বসে ওসব বলে ফেলেছিলাম।প্লিজ ক্ষমা চেয়ে আমাকে লজ্জা দিবেন না।বরং আমি খুবই লজ্জিত কালকের ব্যবহারের জন্য। প্লিজ আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিবেন।

উনিও হেসে বললেন,

—- আপনার জায়গায় যে-কেউ থাকলে ঠিক এই কাজটাই করতো।আপনি লজ্জিত হবেন প্লিজ! আর আমি কিন্তু আপনার ব্যবহারে খুবই ইমপ্রেস মেয়েরা নিজেদের আত্মরক্ষা নিজেরা করুক এটা তো খুবই ভালো ব্যপার!

আমিও হেসে বললাম,

—- ধন্যবাদ ভাইয়া।

আমাদের কথাবার্তা নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো দিয়া।এবার মুখ খুলে বললো,

—- তোরা একে অপরকে চিনিস?

আমি মাথা নেরে হ্যাঁ বললাম। আর সাথে কালকে ঘটনাটা বললাম। দিয়া শুনে তো হাসতে হাসতে শেষ। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- এখানে হাসির কি হলো?

দিয়া হাসি থামিয়ে বললো,

—- কালকে যেই মুখে গালাগালি দিয়েছিস আজ সেই মুখে সরি বলছিস?জীবনে প্রথমবার তুই কাউকে সরি বললি।

আমি আবারও ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- এখানে হাসির কি আছে আমি কখনো কাউকে সরি না বললেও কোনোদিন যে বলবো না এটা বলেছি কখনো?

দিয়া বললো,

—- তা বলিস নি কিন্তু আমার খুব হাসি পাচ্ছে তাই আমি হাসবো হুম।

তারপর আমরা তিনজনে মিলেই জমিয়ে আড্ডা দিলাম সেইদিন।

আমি ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে বললাম,

—- সেদিন তো আপনি বলেছেন আপনি সব কিছু মিটমাট করে নিয়েছিলেন।তাহলে কিসের প্রতিশোধ?

রোদ্দুর এবার চোখ খুললে আমার কাছে এসে গম্ভীর গলায় বললো,

—- তুমি কি করে ভাবলে আমি সেই চড়ের কথা সেই অপমানের কথা ভুলে যাবো।তুমি আমাকে পুরো ভার্সিটির সামনে অপমান করেছো এতো সহজে কি করে ছেড়ে দিতাম আমি তোমায়।

আমি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—- একটা চড়ের জন্য আপনি আমার জীবনটা তচনচ করে দিবেন?

উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ছাদ থেকে চলে গেলেন।আর আমি ছাদেই দাড়িয়ে ছিলাম।একটা চড়ের জন্য আমার জীবনের মোড় এভাবে গুড়ে যাবে আমি কখনো ভাবিনি।
#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৪
#Sumaia_Jahan

ছাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অনবরত কেঁদেই চলেছি।আমার দিকবিদিক শুন্য হয়ে গেছে। আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।পর পর এতো গুলো ধাক্কা আমি নিতে পারছি না।হঠাৎ করে কিছু একটা মনে করে চোখ মুছে দৌড়ে রোদ্দুরের কাছে গেলাম। উনি নিজের রুমেই ছিলেন।তাই খোঁজে পেতে আমাকে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি।গিয়ে দেখি উনি ইজিচেয়ারে চোখ বন্ধ করে আছেন।আমি দৌড়ে উনার কাছে গেলাম আর উনাকে প্রশ্ন করলাম,

—- দিয়া আর ওর পরিবার আপনার প্ল্যানে সাই দিলো কেন?

রোদ্দুর চোখ বন্ধ করেই বললো,

—- কারণ ওদের সবার ভালো করে ব্রেনওয়াশ করেছি যে তুমি আর আমি দুজন দুজনকে প্রচন্ড ভালোবাসি কিন্তু তুমি তোমার বাপি আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নিবেন না তাই এবাবে বিয়ে করলে উনি কিছু বলতে পারবেন না।আর তোমাকেও বলেতে বারন করে দিয়েছিলাম। সেজন্য তোমাকেও কিছু বলেনি ওরা।

আমি আবারও কিছু একটা ভেবে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—- কিন্তু এতো কাঠখড় পুড়িয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন তো প্রতিশোধ নিতে কই আপনি এখনো তো আমার উপর কোনো টর্চার করেন নি তাহলে আপনার প্রতিশোধ নেওয়া হলো কি করে?

উনি আমার কথায় বসা থেকে উঠে ভাব নিয়ে বললেন,

—- রোদ্দুর খানকে সবার সাথে ঘুলিয়ে ফেলো না মিসেস আশপিয়া খান। রোদ্দুর খানের স্টাইল সবার থেকে আলাদা।শারীরিক টর্চার করলে করলে যতোটা কষ্টের তার থেকে হাজার গুণ বেশি কষ্ট হলো একটা মনুষকে তার আপন জন আর তার ভালোবাসার মানুষ থেকে আলাদা করা।তুমি আমাকে হাজার মানুষের সামনে অপমান করেছো আর আমি তোমাকে তোমার ভালোবাসার মানুষ টার থেকে সারাজীবনের জন্য আলাদা করে দিলাম।

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- আ প নি ক কি বলতে চাইছেন হে?

রোদ্দুর বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

—- তুমি কি ভেবেছো আমি জানতে পারবো না আদির কথা। তুমি যে আদি নামের একজন সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসো তা আমি জানতে পারবো না।আমি তোমার সব কিছুই জানি।তাই তো তোমার এমন শাস্তির ব্যবস্থা করলাম।

তারমানে উনি আগে থেকে সবই জানতেন।আর আমি কি-না উনার থেকে আদির ব্যপারটা লোকানোর জন্য কতো কিছুই না করলাম।সত্যি উনি আমাকে অনেক বড়ো একটা শাস্তি দিলেন।তবে আমি কিছুতেই মেনে নিবো না আমাকে যে করেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে। আমি আদিকে ছাড়া বাঁচবো না।আচ্ছা আমি তো ইশার সাহায্য নিয়ে ভার্সিটি থেকে কোনো একভাবে পালাতে পারি। ওখানে বেশি গার্ড থাকে না। হে এইটাই এখন একমাত্র পালানোর পথ।আমি কালই পালাবো।আমার ভাবনার মাঝে রোদ্দুর আমার সমনে হাত নেরে বললো,

—- কোথায় হারিয়ে গেলে? শোনো আজ থেকে আর ভার্সিটি যাওয়া লাগবে না ঘরে পড়বে শুধু পরীক্ষার সময় গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসবে।

আমি মাথায় বাজ পড়লো।আমার শেষ আশাটাও কি শেষ হয়ে যাবে।ভার্সিটি না যেতে পারলে তো এখান থেকে কোনোদিনও পালাতে পারবো না আর আদির খোঁজও আর কোনোদিন পাবো না। না আমাকে যে করেই হোক ভার্সিটি যেতেই হবে।আচ্ছা উনি বুঝে ফেললো না আমি পালানোর মতলব করছি।আমি বললাম,

—- ভার্সিটি না গেলে আমার পড়াশোনা তো সব লাটে উঠবে।আমাকে ভার্সিটি যেতেই হবে….অন্তত পক্ষে কাল তো যেতে হবে সবার সাথে শেষ বারের মতো দেখা করতে হবে তো!

রোদ্দুর একটু হেসে বললো,

—- তুমি কি আমাকে বুদ্দু মনে করো?কাল তোমাকে যেতে দেই আর তুমি পালিয়ে যাও।বাহ!তোমার বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়!আমি বলেছি যখন আজ থেকে তোমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ তারমানে বন্ধই। এর অন্যথা হবে না।

শেষের কথা গুলো ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে রোদ্দুর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।আর আমি সোফার উপর ধপ করে বসে পরি।আমি কি সত্যিই আদির থেকে সারাজীবনের জন্য আলাদা হয়ে যাবো।কোনোদিনকি খুজে পাবো আদিকে।তাহলে তো আমি মরে যাবো কারন আদিই যে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র কারন।ওকে ছাড়া যে বাচতে পারবো না। আমার হাতটা আপনাআপনি আমার গলায় থাকা একটা লকেটের উপর চলে যায়।এই লোকেটা যে আদি আমাকে দিয়েছিলো এটাই যে আদির দেওয়া শেষ উপহার। আজ আদির কথা মনে পরছে খুব বেশিই মনে পরছে।….

দশ বছর আগে…..

আমি সবে মাত্র মাধ্যমিকে ক্লাস সিক্স এ উঠেছি।এখনো কোনো বন্ধু হয়ে ওঠে নি।তেমন কাউকেই চিনিনা সবসময় একা একাই থাকি।স্কুলের মধ্যেই একটা আইসক্রিমের দোকান ছিলো।আমি প্রতিদিন ওই দোকান থেকে আইসক্রিম খেতাম।তো একদিন আমি আইসক্রিম দোকান থেকে কিনে হাতে নিয়ে কিছুদুর যেতেই আমার হাত থেকে আইসক্রিম টা পরে গেলো আমি এখনো একটুও খেয়ে দেখেনি তাই আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।এমন সময় আমার ক্লাসের কয়েকটা ছেলে আমার এমন অবস্থা দেখে হাসাহাসি করতে শুরু করলো।আর আমার চারপাশে ঘুরে ঘুরে আমার অবস্থা নিয়ে মজা করছিলো আর হাসাহাসি করছিলো।একে তো আমার আইসক্রিম টা পড়ে গেলো তারপর ওরা আমাকে নিয়ে এমন করতে ছিলো আমার অনেক খারাপ লাগলো সাথে সাথে আমি ফুপিয়ে কেঁদে দিলাম।পেছন থেকে কেউ একজন জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,

—– এখানে এসব কি হচ্ছে?

আমাকে নিয়ে মজা করা ছেলে গুলা ওই ছেলেটার কথায় ভয় পেয়ে গেলো আর আমতা আমতা বললো,

—- আদি ভাই কিছু হয়নি এখানে আসলে ও আমাদের সাথেই পড়ে তাই ওর সাথে একটু মজা করছিলাম এইটুকুই।

কথাটা বলেই ওরা দৌড়া চলে গেলো।আর আমি বোকার মতো ওখানেই দাড়িয়ে ছিলাম আমি কিছুই বুঝতে পারছি না এখানে কি হচ্ছে? ওই আদি নামের ছেলেটা আমার কাছে আসলো আর আমার কাছে এসে বললো,

—- বোকার মতো এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদছিলে কেন? ওরা তোমার সাথে এমন করলো তুমি ওদের নামে স্যার ম্যাম এর কাছে কমপ্লেন করতে পারলে না?

আমি চোখ মুছে বললাম,

—- আমার আইসক্রিম টা পড়ে গিয়েছিলো আর ওরা আমাকে নিয়ে বাজে বাজে কথা বলছিলো আমি খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাই তো কেঁদেছি।আর তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ওদের কে তাড়ানোর জন্য। আচ্ছা ওরা তোমাকে দেখে এবাবে পালালো কেন? তুমি বাঘ নাকি?

কথাটা বলেই হেসে দিলাম। আর আদি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আদিও একটু হেসে বললো,

—- না আমি বাঘ না কিন্তু ওদের অনেক বড়ো আর ওরা আমাকে ভয় পায় তাই ওভাবে পালিয়েছে।

আমি একটু ভাবার চেষ্টা করে বললাম,

—- ওহ্ তুমি অনেক বড়ো তাই তোমাকে ওরা ভয় পায় কিন্তু আমার তো তোমাকে একটুও ভয় লাগছে না।

আদি হেসে বললো,

—- কারন তুমি তো কোনো খারাপ কাজ করো নি তাই আর যারা খারাপ কাজ করে তারা সবসময় ভয় পায়। তোমার তো এখনো নামটাই জানলাম না তোমার নাম কি?

আমি বললাম,

—- ওহ্ হে তোমাকে তো আমার নামটাই বলিনি আমার নাম আশপিয়া।সুন্দর না নামটা?

আদি বললো,

—- হুম নামটা খুব সুন্দর কিন্তু নামটা একটু বেশি বড়ো তাই আমি তোমাকে……..হে আইশু বলে ডাকবো। তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?

আমি হেসে বললাম,

—- হে হে তুমি এত্তো বড়ো হয়েও আমার নামটা বলতে পরো না আর কিন্তু তোমার অনেক ছোটো হয়েও বলতে পারি।ঠিক আছে তোমার কষ্ট হলে তোমার এই ছোট্ট নামেই ডাইকো।

আদি মাথা চুলকে বললো,

—- হুম আমি বড়ো হয়েও পাড়ি না….. আচ্ছা তোমার তো আইসক্রিম টা পড়ে গেছে তো চলো অরেকটা আইসক্রিম খাবে।

আমি মন খারাপ করে বললাম,

—- আমার কাছে আর আইসক্রিম কেনার টাকা নেই তাই আর আজকে আর আইসক্রিম খাবো না কালকে খাবো।

আদি আমার হাত ধরে যেতে যেতে বললো,

—- তোমাকে টাকার কথা বলেছি?শুধু বলেছি আইসক্রিম খেতে।

আমি বললাম,

—- কিন্তু টাকা দেবে কে?

আদি বলললো,

—- তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না তুমি শুধু আইসক্রিম খাবে।

আমি খুশিতে লাফিয়ে ওঠে বললাম, ” ইয়ে ” আসলে আমি আইসক্রিম খেতে খুব ভালোবাসি। তারপর আদি আমাকে দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে দেয়। ও আর আমি আইসক্রিম খেতে খেতে অনেক গল্প করলাম।আমাদের মধ্যে অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।আদি আমার স্কুলেই ক্লাস টেইনে পড়ে।তাই আমাদের প্রতিদিন স্কুলে আসলেই আমরা গল্প করতাম।আর ও আমাকে অনেক সাহায্য করতো।আমার খুব কেয়ার করতো। ওর ভয়ে আমাকে কেউ কিছু বলতো পারতো না।আমার থেকে আদি অনেক বড়ো হলেও ওকে আমি ভাইয়া বলে ডাকতাম না ওকে আদি বলেই ডাকতাম

চলবে,,,,,,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। আমার আম্মা জননী আমার হাতে ফোন দেখলেই বকাঝকা দেওয়া শুরু করে ।তাই লুকিয়ে লুকিয়ে গল্প লিখতে হচ্ছে সেজন্য আমি গল্প বড়ো করতে পারছিনা।তবে চেষ্টা করছি বড়ে করে দেওয়ার]
চলবে,,,,,

[ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। আজকে এরথেকে আর বড়ো করতে পারলাম না সরি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here