তুমি_আমারই পর্ব ২১+২২

#তুমি_আমারই
#পর্ব_২১
#Sumaia_Jahan

—– ভাবিমনি ইউ আর গ্রেট! তোমার কোনো তুলনা হয় না।তুমি এই পৃথিবীর সবথেকে ভালো মানুষ। তোমাকে তো নোভেল উচিৎ। আমি বুঝতে পারছি না এখনো তোমায় কেন নোবেল দেওয়া হলো না ? ওরা মনে হয় তোমাকে এখনো দেখেনি তাই নোবেল দিতে এতো দেরি হচ্ছে। সে যাইহোক তোমার নাম কিন্তু ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এটা আমি বলে দিলাম।

সেই সকাল থেকে রাহাত আমার পাশে বসে বসে আমার এমন ফালতু মার্কা প্রশংসা করেই যাচ্ছে। আর আমার কান বেচারা দুটোর অবস্থা বেহাল। তাই সুযোগ বুঝতে কানে তুলো গুঁজে গল্পের বইতে মুখ ডুবিয়ে আছি।কিন্তু রাহাত বুঝতেই পারেনি আমার আমার কানে যে তুলো গুঁজা।ও তো ওর মতো কি আবোল তাবোল বকবক করেই চলেছে।আমি বুঝতে পারছি না ওর আজ হলোটা কি?এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে কেন?কাল রাতেই রুহি আর আকাশ ভাইয়ার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। সামনের সাপ্তাহে ওদের বিয়ে। বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে এতে তো বড়ো ভাই হিসেবে রাহাতের খুশি হওয়ার কথা।ও কি তবে বেশি খুশিতে পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি!তাহলে খুব চিন্তার !তাহলে তো বাড়ির সবাইকে জানাতে হবে।আমি বইয়ে মুখ গুঁজে এসব ভাবছি রাহাতের জোর চিৎকারে আমার হুস আসলো।আসলে কানে তুলো গুঁজে থাকার কারনে ভুলেই গেছিলাম এই রাহাত বাবু আমার পাশেই বসে আছেন।বাধ্য হয়ে কান থেকে তুলো গুলো খুলে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললাম,

—– বলো কি হয়েছে?

রাহাত আমার কান্ডে চোখ বড়ো বড়ো করে অবাক কন্ঠে বললো,

—– তারমানে তুমি এতোক্ষণ কিছুই শোনোনি।আমি সেই সকাল থেকে ইয়া বড়ো বড়ো কতো প্রশংসা করলাম।দেখ আমি কতোটা ক্লান্ত হয়ে গেছি এতো বড়ো বড়ো প্রশংসা করতে করতে।আর তুমি কিছুই৷ শোনোনি।আমার সব পরিশ্রম বৃথা গেলো?

এগুলো নাকি কোনো পরিশ্রম?আল্লাহ আমারে বাঁচাও!আমি এবার একশো তে একশো সিউর এই ছেলে পাগল হয়ে গেছে। একে এভাবে রাখলে নিজে তো পাগল হয়েছেই বাকি দেরও পাগল বানিয়ে ছাড়বে। আমি মুখে জোরপূর্বক হাসি আনার চেষ্টা করে বললাম,

—- রাহাত তোমার মনে হয় শরীরটা একটু খারাপ। তুমি বরং নিজের রুমে গিয়ে রেস্ট নেও।শরীরটা একটু ভালো লাগবো।

রাহাত আমার কথায় ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে বললো,

—- ভাবিমনি আমার শরীরের কিছুই হয়নি।শরীর একদম ফিট আছে।যা হয়েছে তা তো মনের হয়েছে।

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- মনে কিছু হয়েছে মানে?

—- তুমি তো জানো সামনের সাপ্তাহে রুহির বিয়ে ঠিক হয়েছে।

—- হুম এটা তো ভালোই খবর এতে তোমার মনের কি প্রবলেম? তুমি কি রুহির এই বিয়েতে খুশি না?

—- আরে না না আমি ওর বিয়েতে খুশি হবো না কেন?আমি খুব খুশি আমার ছোট্ট বোনটার বিয়ে হবে।

—- তাহলে প্রবলেম কি?

রাহাত আমার প্রশ্নে হতাস হলো আর হতাস কন্ঠে বললো,

—- তুমি বুঝতে পারছো না ভাবিমনি!রুহি আমার ছোট্ট। ওর বিয়ে হয়ে যাবে আর আমি ওর থেকে বড়ো হয়েও আইবুড়ো হয়ে থাকবো!একবার ভাবো আমার কোনো প্রেস্টিজ থাকবে?আমি মেজো দেখে আমার কথা কেউ ভাবেই না।

এইবার বুঝতে পারলাম বাবুর মাথায় বিয়ের ভুত ডুকেছে তাই তিনি এমন অদ্ভুত বিহেভ করছেন।যার চিকিৎসা মেন্টাল হসপিটালে না কাজী অফিসে হয়।
কিন্তু আমি তো এর মজা নিবো।তাই মুখ টা কে গম্ভীর করে বললাম,

—- ভাই আমার তোমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি যখন হবে তোমাকে নিয়েও ভাবা হবে চিন্তা করো না।

রাহাত মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- ভাবিমনি আমি কিন্তু রুহির অনেক বড়ো। রুহির যেহেতু এখন বিয়ে হচ্ছে তো আমার টাও এখনই হতে হবে হুম।

রাহাত কথা গুলো বলেই আমার হাত ধরে করুন শুরে বললো,

—- ভাবিমনি জানো নিহার বাড়ির লোকেরা ওর বিয়ে ঠিক করতেছে।আর তুমি তো জানো আমি নিহাকে কতোটা ভালোবাসি।এখন যদি আমার আর নিহার বিয়ে না হয় তাহলে ওর বাড়ির লোক ওকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।প্লিজ ভাবিমনি কিছু একটা করো।

ওর কথা গুলো আমার বুকে বাঁধলো। আমি তো জানি ভালোবাসা হারানোর কষ্ট কাকে বলে!আমি তো আদি না চিনতে পেরে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।না আমি অন্য কারো ভালোবাসা হারিয়ে যেতে দিবো না।রাহাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ও এখনো মন খারাপ করে আছে।ওর হাতের উপর হাত রেখে বললাম,

—- তোমার ভালোবাসা হারিয়ে যাবে না।আমি তোমাদের ভালোবাসা এক করবো ইনশাআল্লাহ।তোমার এই ভাবিমনির উপর একটু ভরসা করো!

মুহূর্তেই রাহাতে ফেঁকাসে মুখটা খুশির জ্বলক নেমে এলো।ওকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে বড়ো খুশি ও পেয়ে গেছে।খুশিতে গদোগদো হয়ে বললো,

—- ভাবিমনি ইউ আর বেস্ট! তোমার মতো ভাবিমনি যেন ঘরে ঘরে জন্ম হয় উফ সরি তোমার মতো ভাবিমনি যেন প্রত্যেকটা দেবর পায়।

কথা গুলো বলেই দৌড়ে ঘর থেকে চলে গেলো।আমি ওর কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।

রোদ্দুর ঘরে আসতে ছিলো ঘরে ঢোকার আগেই রাহাতের সাথে ধাক্কা লাগলো।রাহাতের সে দিকে খেয়াল নেই। ও তো আজ প্রচুর খুশি। খুশিতে আকাশে উড়তে ইচ্ছে করছে।কিন্তু এখন আকাশে উড়া যাবে না।এখন তো নিহা কে খবরটা দিতে হবে।তাই ওর কোনো দিকেই খেয়াল নেই। কিন্তু এদিকে রোদ্দুর অবাক কারন রাহাত রোদ্দুরকে অনেক মান্য করে চলে।একদম বড়ো ভাইয়ের বাধ্যগত ছোট ভাই। কিন্তু সেই রাহাতই ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো।একবারও দাড়িয়ে সরি টুকুও বললো না।ব্যপার টা রোদ্দুরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ধাক্কা লাগার কারনে হাতে একটু ব্যথা লেগেছে। তাই হাত ডলতে ডলতে ঘরে ঢুকলো।

—- আয়সু রাহাতের কি হয়েছে রে ওভাবে দৌড়াচ্ছে কেন?তুই কিছু জানিস?

রোদ্দুর কথাটা হাত ডলতে ডলতেই বললো।আর আমি এতোক্ষণ রাহাতের কান্ড নিয়ে হাসতে ছিলাম তাই কিছু খেয়াল করিনি।রোদ্দুর কথায় ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও এক হাত দিয়ে আরেক হাতের কনুই ধরে দাড়িয়ে আছে। ওকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে৷ দেখে ভ্রু কুঁচকে বললাম,

—- তোমার আবার কি হয়েছে? এভাবে হাত ধরে দাড়িয়ে আছো কেনো?

—- আর বলিস না আমার গুনোদ্বর ভাই আমাকে ধাক্কা মেরে চলে গেছে।একবার সরিও বললো না।…..কিন্তু ও তো এমন করে না।ও তো সবসময় আমাকে মান্য করে চলে তবে আজ কি হলো ওর?

আমি হাসতে হাসতে বললাম,

—- বিয়ের খুশিতে এমন করেছে বুজেছো!
তারপর আমি রোদ্দুর কে সব বললাম।

রোদ্দুরও সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ।

—- লাইক সিরিয়াসলি!ও এতো এতো পরিশ্রম করে এতো সুন্দর সুন্দর প্রশংসা করেছে!

কথাটা বলেই রোদ্দুর আবার হাসতে শুরু করলো।এবার আমার রাগ হচ্ছে।

—- হাসো হাসো তোমার তো হাসিই পাবে। আমার তো তখন খুব ভয় লাগছিলো রাহাত আবার পাগল টাগল হয়ে যায়নি তো।কতোটা ভয় পেয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারবো না।

রোদ্দুর হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো,

—- ভয় পাওয়ার কোনো কারন নেই বিকজ ও রোদ্দুর খানের ভাই।

—- তাই তো ভয় টা আরো বেশি পাচ্ছিলাম। বলা তো যায় না তুমি যা মানুষ তোমার ভাই পাগল টাগল হয়ে যেতেই পারে।

রোদ্দুর অপমান টা দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে শান্ত গলায় বললো,

—- তুমি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছো।আমি কিন্তু এখন ঝগড়া করার মডে নেই।

—- তুমি আমায় ঝগড়ুটে বললে?

—- সারাক্ষণ ঝগড়া করতে চাইলে তো সে ঝগড়ুটে হবেই সেটা আবার বলার কি আছে।

বেস হয়ে গেলো আমাদের ঝগড়া শুরু। সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা এখনো সেই সাপে নেউলেই রয়ে গেলো।আমরা একসাথে থাকলেই ঝগড়া করতে শুরু করি।মনে হয় ঝগড়া কাকি আমাদের কে ছাড়তে চাইছে না তাই উনি আমাদের সাথে লেগেই আছেন।

ওইদিকে আকাশ আজকে রুহি কে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।একটা নদীর পারে ওরা দুজন বসে আছে।
জায়গাটা একদম নিরিবিলি আর শান্ত। কোনো লোকজন নেই।চারিদিকে সবুজ গেঁড়া। নদীর কুলকুল ধ্বনি। আর ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে তার শোঁশোঁ শব্দ।এক কথায় অসাধারণ একটা পরিবেশ।

এতো কিছুর মধ্যেও রুহির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।ও তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আকাশ ওর সাথে আছে।ওর মনে হচ্ছে ও কোনো স্বপ্ন দেখছে যে স্বপ্ন ঘুম ভাঙ্গলেই শেষ হয়ে যাবে।আকাশ ওর অবস্থা টা বুঝতে পারছে তাই ওকে এখানে এনেছে স্বাভাবিক করার জন্য। রুহি নিজের হাতে থাকা আংটি বার বার হাত দিয়ে ধরে ধরে দেখতেছে।আর আকাশ ওর পাশে বসে ওকে দেখছে।

—- আকাশ ভাইয়া আমি কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে চাই না চিরকাল এই স্বপ্ন দেখে যেতে চাই।আমাকে কিন্ত একদাম ডাকবেন না।

রুহি আংটি দেখতো দেখতেই কথাটা বললো।আর আকাশের মনটাই ভেঙে গেলো।ও বেচারা ভেবেছিলো রুহি কে এমন একটা পরিবেশে আনলে ও হয়তো স্বাভাবিক হবে।কিন্তু রুহিতো এখনো ভাবছে ও স্বপ্নই দেখছে।কি আর করার! আকাশ রুহির হাত হেঁচকা টান দিয়ে এনে একটা চিমটি কাটলো।একটু জোরেই চিমটি টা কাটলো তাই রুহি “আহ” করে উঠলো।আর চোখ বড়ো বড়ো করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- এবার বলোতো রুহি স্বপ্নের ভিতর কাউকে চিমটি কাটলে কেউ ব্যথা পায়?

রুহি মাথা নেরে বললো “না”।আকাশের মুখে এবার হাসি ফুটলো আবার বললো,

—- তাহলে কি তুমি কিভাবে স্বপ্ন দেখছো?রুহি আমি সত্যি তোমার সামনে বসে আছি। আর কালকে আমাদের এনগেজমেন্টও হয়ে গেছে।আমি যে কাজের জন্য বিদেশ গিয়েছিলাম সেটা শেষ হয়ে গেছে তাই দু বছর আগেই ফিরে আসতে পেরেছি।আর তোমাকে কিছু জানতে দেইনি কারন তোমায় সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। আর তুমি সব কিছুকে স্বপ্ন ভাবছো!
#তুমি_আমারই
#পর্ব_২২
#Sumaia_Jahan

নিজেকে আজ খুব বড়ো বড়ো মনে হচ্ছে। খুব দায়িত্ববানও মনে হচ্ছে। হবেই না কেন?আজ একজন বড়ো ভাবি হয়ে একমাত্র দেওরের হয়ে কথা বলতে এসেছি বলে কথা।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি এতোটাই কনফিডেন্স নিয়ে কথা বলতে এসেছি যে এখন সবই ভুলে গেছি কি বলবো!কথায় আছে না ওভার কনফিডেন্স ভালো না।আমার হয়েছে সেই অবস্থা! ঘরে টানা এক ঘন্টা প্রাকটিস করেছি কিভাবে কি বলতে হবে।কিন্তু এখানে এসে হাওয়া সব ফুস হয়ে গেছে।সব ভুলে খেয়ে ফেলেছি।

ডয়িং রুমে সোফায় মুখে আঙ্গুল দিয়ে নিজের মনে মনে কথা সাজাচ্ছি। কিন্তু কথা গুলো পেট থেকে গলা অবধি এসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে কিছুতে মুখে আনতে পারছি না।আমার পাশেই রোদ্দুর বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।ডান পাশের সোফায় শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ি মা। আর বাম পাশের সোফায় রুহি আর আকাশ ভাইয়ার মাঝখানে রাহাত বসে আছে।
সবাই অতি আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ ওদের সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো বলে আধা ঘণ্টা ধরে বসিয়ে রেখেছি।রাহাত তো একটু পর পরই নিজে নিজেই লাজুক হাসি দিচ্ছে।রুহি আর আকাশ ভাইয়াও ব্যপারটা অনেকটাই বুজতে পেরেছে।তাই ওরাও রাহাতের কান্ড দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে।রোদ্দুর আমার এমন অবস্থা দেখে অতি বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

—- আশপিয়া কথাটা না হয় আমিই বলি!

আমি জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম,

—- না একদম না!রাহাত কে আমি কথা দিয়েছি তাই কথাটা আমিই বলবো।

—- তোমার কথা শোনার জন্যই এই আধ ঘন্টা ধরে বসে আছি।তুমি তো কিছুই বলছো না।আর আমার মনেও হয় না তুমি এ জীবনে আর মুখ খুলতে পারবে।তার থেকে ভালো আমি কথাটা বলি!

শ্বাশুড়ি মাও রোদ্দুরের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,

—- হ্যাঁ মা ওকে কথাটা বলতে দে।দেখ আধ ঘন্টা ধরে বসে আছি। তুই তো কিছু বলছিসই না।সামনেই রুহির বিয়ে অনেক কাজ পড়ে আছে।তুই প্লিজ ওকে বলতে দে। আর না হয় তুই বল।

রাহাতও অতি আগ্রহের শুরে বলে ওঠলো,

—- হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবিমনি ভাইয়াই না হয় বলুক।

আমি সবার কথা শুনে চোখ বন্ধ করে বললাম,

—- কাউকে বলা লাগবে না আমিই বলছি।….আসলে রাহাত নিহা নামে একটা মেয়েকে ভালোবাসে।আর নিহার বাড়ির লোক ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পেশার দিচ্ছে। তাই রাহাতের সাথে এখন বিয়েটা না দিলে ওর বাড়ির লোক হয়তো অন্য কারো সাথে ওর বিয়েটা দিয়ে দিবে।তাই আমি বলছি চাচ্ছি আমারা তো রুহি সাথে রাহাতের বিয়েটা দিয়ে দিতে পারি।

কথা গুলো একনাগারে বলে একটা চোখ আস্তে করে খুলে পরিবেশ টা বোঝার চেষ্টা করছি।রাহাত, রুহি, আকাশ ভাইয়া এমনকি রোদ্দুরের মুখেও টেনশনের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কারন শ্বাশুড়ি মা আমার কথা টা শুনে গম্ভীর ভাবে বসে আছেন।কারো মুখে কোনো কথা নেই পুরো ঘরে জুড়ে নিরবতা বিরাজ করলো। কিছুক্ষন পর নিরবতার চাদর চাদর ভেঙে শ্বাশুড়ি মা মুখ খুললেন গম্ভীর গলায়ই বললেন,

—- রাহাত আমি এটা আশা করিনি।

রাহাতের মুখটা একদম ফ্যকাসে হয়ে গেলো।আমাদের সবার মুখেও ভয়ের ছাপ।আমি ভেবেছিলাম শ্বাশুড়ি মা মেনে নেবেন।কিন্তু উনার ব্যবহারে তো অন্য কিছু মনে হচ্ছে। রাহাত মাথা নিচু করে বললো,

—- মা নিহা খুব ভালো মেয়ে।আর আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। ওকে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি।

শ্বাশুড়ি মা আবারও গম্ভীর গলায় বললেন,

—- আমি সেটা বলিনি।ভালোবাসা অন্যায় না কিন্তু তুমি একটা মেয়েকে ভালোবাসো আর দায়িত্ব নিয়ে সেটা বাবা-মা কে বলতে পারলে না।তোমার হয়ে আশপিয়াকে কেন বলতে হলো।

মুহূর্তেই রাহাতের মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো।আর আমাদের বুকের উপর থেকেও পাথরটা সরলো।সবাই ছোট করে একটা শ্বাস ফেললাম।উফ যা ভয় পাওয়ার পেয়েছিলাম। রাহাত আবার মাথা নিচু করে বললো,

—- আসলে মা আমি অনেক বারই নিহার কথা তোমাদের বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি।তাই……

—- তাই আশপিয়া কে দিয়ে কথাটা বলালে তাই তো।রাহাত আমরা কি বাঘ যে তুই আমাদের কে কথাটা বলতে ভয় পাচ্ছিলি।

শ্বাশুড়ি মায়ের কথার মাঝেই শ্বশুর মশাই বলে ওঠলেন,

—- রাহাত তুই আমার ছেলে হয়ে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে ভয় পাস?

শ্বশুর মশাই এর কথাটা শুনে শ্বাশুড়ি মা মুখ ভেংচি কেটে বললো,

—- তোমার ছেলে হবার কারনেই ও এমন ভিতুরডিম হয়েছে।

—- তুমি আমাকে সবার সামনে এভাবে অপমান করতে পারলে?

শ্বশুর মশাই ইনোসেন্ট ফেইস করে কথা বললেন। পাশ থেকে রাহাত বলে ওঠলো,

—- মা তুমি কিন্তু বাবার সাথে সাথে আমাকেও ইনসাল্ট করছো।

—- আরে রাখ তোর ইনসাল্ট। তোরা দুইজনেই একই কোয়ালিটির ভিতুরডিম।তোদের তো এর থেকেও বেশি ইনসাল্ট করা উচিৎ ছিলো আমার। জানিস তোদের বাবাও আমাকে ভালোবাসতো।কিন্তু বাবা-মায়ের কাছে কিছুতেই আমার কথা বলতে পারতো না।বলতে গেলেই উনার ভূমিকম্পনের মতো হাটু কাঁপা শুরু হয়ে যেতো।তারপর বাধ্য হয়ে উনার বন্ধু কে দিয়ে আমাদের কথা বলিয়েছিলাম আমি।

আমরা সবাই একসাথে হেসে দিলাম।আর শ্বশুর মশাইয়ের অবস্থা দেখার মতো হয়ে গোলো।শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখ ছোট করে বললেন,

—- এভাবে ছেলে মেয়েদের সামনে আমার মানসম্মান ধুলো মিশিয়ে দিলে?

—- থামো তো তুমি…. আশপিয়া তুই কি যেনো বলছিলি রুহি আর রাহাতের বিয়েটা একসাথেই দিয়ে দেওয়ার কথা তাই না!এটা কিন্তু খুব ভালো একটা ব্যপার হবে।দু ভাই বোনের একসাথেই বিয়ে হবে।

আমি মাথা নেরে বললাম,

—- হুম মা একদম জোড়া বিয়ে।

এমন সময় রাজিব ভাইয়া আর দিয়া আসলো।দিয়া আসতে আসতেই বললো,

—- আমি মনে হয় ঠিক সময়ই এসেছি। তোমরা কি রাহাতের বিয়ে বিয়েও ঠিক করছো?

দিয়া কে দেখে ওঠে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে বললাম,

—- তুই এই সময় এই বাড়িতে?

দিয়া মুখ ফুলিয়ে বললো,

—- তোকে দেখতে মন চাইলো তাই চলে আসলাম।কেন আসতে পারি না?

—- আসতে পারবি না কেন হাজার বার আসতে পারবি।আর তুই ঠিক ধরেছিস রাহাতেরই বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাও আবার রুহি আর রাহাতের একই দিনে।

আমি কথাটা বলেই থেমে গেলাম।তারপর কিছু একটা ভেবে শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

—- মা আমার একটা ইচ্ছা আছে।

—- হ্যাঁ বল।তোর ইচ্ছা অবশ্যই পুরোন করবো।তুই শুধু একবার বলে দেখ!

—- দিয়ার বিয়ের সময় তো আমি ছিলাম না।আর আমার অনেক অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো ওর বিয়ে দেখার।তাই আমারা রুহি আর রাহাতের বিয়ের সাথে দিয়ার আবার বিয়ে দিতে পারি!

—- অবশ্যই! তবে শুধু দিয়ার না তোর আর রোদ্দুরেরও আবার বিয়ে হবে।এক সাথে চার চারটে বিয়ে!

—- মা তোমাকে বললাম দিয়ার বিয়ের কথা আর তুমি আমার বিয়ে নিয়ে বলছো!

—- কেন রে এখন গাঁয়ে লাগছে?যদি আমার বিয়ে হয় আবার তাহলে তোরও আবার বিয়ে হতে হবে হুম। তোর বিয়েও তো আমি দেখিনি।

কথাটা পাশ থেকে দিয়া বললো।দিয়ার কথার সাথে তাল মিলিয়ে শ্বাশুড়ি মা বললেন,

—- হুম একদম ঠিক কথা বলেছে দিয়া।তোর বিয়ে টাও তো ও দেখেনি।আমি আর কিছু শুনতে চাই না ওই দিনে চারটে বিয়েই হবে। আর না হলে একটাও হবে না।

চলবে,,,,,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। চার চারটে বিয়ের দাওয়াত দিলাম।সবাই কিন্তু চলে আসবেন।
আর গল্প কিন্তু শেষের দিকে।আর দু-এক পর্ব আছে।]
চলবে,,,,,,

[জানি সবাই আমার উপর রাগ করে আছেন।তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি অসুস্থ ছিলাম প্লাস আইডিতেও প্রবলেম ছিলো।এছাড়াও আরো অনেক প্রবলেম এর ভিতর ছিলাম তাই এতোদিন গল্প দিতে দিতে দিতে পারিনি। 😔]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here