তোকে_দিয়েছি_মন❤
২৯.৩০
পর্ব – ২৯
Writer: Sidratul muntaz
🍂
আমার অস্বস্তি ঠেকাতে দুই সুন্দরীর চোখ সাদা কাপড় দিয়ে বাধাই করে দিলাম। আর যাই হোক গোসলের সময় এরা ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে আর আমিও স্বাচ্ছন্দে গোসল করে মান সম্মান বিসর্জন দিবো সেটা হবে না। ইম্পসিবল! গোসল শেষে নতুন জামা কাপড় পড়ে আমি এখন বিশাল আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি। এই বাড়ির সবকিছুই বিশাল বিশাল। এতো এতো জিনিসের ভীড়ে নিজেকে পিপড়া টাইপ মনে হচ্ছে আমার। আমাকে যে জামাগুলো পড়তে দেওয়া হয়েছে সেগুলো এতোটাই নতুন যে প্রাইস ট্যাগ পর্যন্ত খোলা হয়নি। পাশের মেয়েটিকে জানাতেই সে খুলে দিলো ট্যাগ গুলো। এখন অনেকটাই শান্তি লাগছে। মেয়েগুলো আমার চুলও আছড়ে দিচ্ছে। এইখানে বেশিদিন থাকলে যন্ত্রে পরিণত হবো আমি যা বুঝতে পারছি। নিজ হাতে কোনো কাজই করতে হচ্ছে না। সবকিছুই কেউ না কেউ করে দিচ্ছে। আচ্ছা ঈশান ভাইয়া এসব সহ্য করেন কিভাবে?? ঈশান ভাইয়ার কথা মাথায় আসতেই চোখ বড় হয়ে আসলো আমার। এই মেয়েগুলো আমার গোসলের সময় যেভাবে দাড়িয়ে ছিল….. ঈশানের গোসলের সময়ও কি সেভাবে দাড়িয়ে থাকে। আমি আমার বাম সাইড এবং ডান সাইডে একবার সরু চোখে তাকালাম। দুজনই আমার চুল ঠিক করতে ব্যস্ত। একজন কি একটা মেশিনের সাহায্যে বাতাস দিচ্ছে….. আরেকজন চিড়ুনি দিয়ে আছড়ে দিচ্ছে। উফফ এদের নাম জেনে নেওয়া দরকার। বারবার এইযে এইযে বলে ডাকতে ভালো লাগছে না। নামের কথা মাথায় আসতেই আমি খেয়াল করলাম মেয়েগুলোর বুকের ডান সাইডে নেইম প্লেট লাগানো। এমনটা আমাদের কলেজেও ছিল। আমি এতোক্ষন খেয়াল করিনি। ডান সাইডে থাকা মেয়েটির নামটা একটু পড়ার চেষ্টা করলাম। ঠিক বুঝতে পারছি না। যেটুকু বুঝেছি ওটুকুই উচ্চারণ করলাম—
ডাইনি!
মেয়েটা গোল গোল চোখ করে আমার দিকে তাকালো–
সরি ম্যাম?
আমি নেইম প্লেটের দিকে ইশারা করে বললাম—
আপনার নাম ডাইনি না?? নামের সাথে চেহারার বেশ ভালোই মিল আছে দেখছি।
বলেই মুখ টিপে হেসে দিলাম আমি। মেয়েটা হয়তো কিছুটা বিরক্ত হল। বাম সাইডের মেয়েটিও হালকা করে হেসে হাসল।ডান সাইডের মেয়েটি বলল–
ম্যাম!! আমার নাম ডাইনি না। ডায়না।
কথাটা শুনে আমি ভ্রু কুচকালাম— ডায়না? এটা আবার কেমন নাম? আগের নামটাই তো ভালো ছিল। দেখুন আমি আপনাকে ডাইনি বলেই ডাকবো।
মেয়েটা অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগে ফুসছে। বাম সাইডের মেয়েটি আরেক দফা হাসলো আমার কথায়। আমি এবার হাসিরত মেয়েটার নেইম প্লেটের দিকে তাকালাম–
তোমার নাম কি দেখি?
মেয়েটা হাত দিয়ে নেইম প্লেট ঢেকে ফেলল। আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম– দেখাও বলছি!
মেয়েটা আরো গুটিয়ে নিল। মানে সে দেখাবে না। আমি এবার ডাইনির দিকে তাকালাম–
ডাইনি ও দেখাচ্ছে না কেনো? ওকে দেখাতে বলো।
ডায়না হেসে হেসে বলল– ম্যাম আমি বলছি ওর নাম কি। ওর নাম রাকেশী।
আমি দুষ্টমী দৃষ্টি নিয়ে রাকেশীর দিকে তাকালাম। রাকেশী হয়তো বুঝতে পারলো যে ওর নামটাকেও এবার বিকৃত করবো আমি। তাইতো মেয়েটার চোখেমুখে আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। আমি হাসতে হাসতে বললাম—
রাকেশী….তোমার নাম এখন থেকে রাক্ষসী।
ডান সাইড থেকে এবার ডায়নার হাসি শোনা গেল। আমার বেশ মজাই লাগছে এদের পেছনে লাগতে পেরে। এরা না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। সেইরকম একটা ফিলিং হচ্ছে আমার।
.
.
ডিনারের জন্য এবার নিচে যাচ্ছি। ডায়না আর রাকেশী আমার পেছনে আসছে। নিজেকে কেমন প্রিন্সেস প্রিন্সেস লাগছে। দু দুটো সুন্দরী মেয়েকে আমি যখন যা ইচ্ছা তাই অর্ডার দিতে পারবো…. কথাটা চিন্তা করতেই আমার। খুশিতে লুঙ্গী ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু লুঙ্গী কোথায় পাবো? ঈশান ভাইয়ার লুঙ্গী আছে তো? উনি লুঙ্গী পড়ে বলে তো মনে হয়না। সে যাই হোক লুঙ্গী লাগবে না….. আমার প্লাজু আছে না! প্লাজু ডান্স দিলেও সেইম ফিলিংস পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার প্লাজু ডান্স দেওয়ার পরিকল্পনাটা যে এতো জলদি সফল হয়ে যাবে সেটা ভাবিনি। সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই উরাধুরা চিৎকার দিয়ে ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে সোফায় উঠে বসে পড়লাম আমি। ভয় থরথর করে কাপছি। ডায়না আর রাকেশী আমার দুই হাতে ধরে রেখেছে। সাথে আরো কয়েকজন জড়ো হয়েছে আমাকে ধরার জন্য। তাদের খেয়াল করছি না আমি। আমার নজর ফ্লোরে ওই দেয়ালের সাথে দাড়িয়ে থাকা ডাইনোসোরের দিকে। টুয়েন্টি ওয়ান সেঞ্চুরি তে এসেও যে জুরাসিক আমলের ডাইনোসোরের সাথে দেখা হবে সেটা আমি কল্পনাতেও কল্পনা করিনি। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে আমার। রাকেশী ঘাম মুছে দিয়ে বলল–
কি হয়েছে ম্যাম? আর ইউ ওকে?
আমি কাপা কাপা হাতে আঙুল ইশারা করলাম–
ওইটা কি?? কি ওটা??
রাকেশী আমার ইশারা বরাবর তাকাল। ডায়না হেসে দিয়ে বলল—
ম্যাম! ওইটা তো থ্রিডি আর্ট।
আমি কটমট চোখে ডাইনির দিকে তাকালাম—
কি বললে?? থ্রিডি আর্ট?
জ্বী ম্যাম!
আমাকে বোকা মনে হয় তোমার? তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো ওইটা একটা আর্ট?? মানে ছবি?? এতোটা বোকা আমি যে তোমার কথা বিশ্বাস করবো??
ডায়না অপ্রস্তুত হয়ে বলল– ম্যাম সত্যিই এটা একটা আর্ট।
আমি উচ্চস্বরে বললাম— আর্ট হোক আর যাই হোক আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় করো এটাকে।
কথাটা আমি যত দেরিতে বললাম তার থেকেও দিগুন দ্রুতগতিতে দেয়ালটাকে সাদা কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হল। এবার যেন আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। উফফ….. এতো ভয়ংকর জিনিস মানুষ কেনো বানায় কে জানে? আর এইটা বাড়িতে এইভাবে সাজিয়ে রাখারই বা কি দরকার বুঝিনা।
.
.
আমি এখন দাড়িয়ে আছি একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে। হালকা পাতলা আলো আছে…. কিন্তু বেশিরভাগ টাই অন্ধকার। আমি যতটা কদম এগুচ্ছি পেছন পেছন ডাইনি আর রাক্ষসীও এগুচ্ছে। বিষয়টা এখন আর আমার মজার লাগছে না আমার। কিছুটা বিরক্ত লাগছে। ডিনারটাও ঠিক মতো করা হয়নি। যে কারণে আমার বিরক্তির মাত্রাটা আরো কয়েক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবারের তেমন টেস্টই নেই। সব মিষ্টি মিষ্টি আইটেম। অথচ আমি ঝাল ছাড়া খেতে পারিনা। যে কারণে না খেয়েই চলে এসেছি। ঈশান ভাইয়া না ফেরা পর্যন্ত বাড়িটা একটু ঘুরে দেখব এটাই এখন আমার উদ্দেশ্য। আমার আশেপাশে অসংখ্য কাচের বোতল দেখা যাচ্ছে। রঙ বেরঙের কাচের বোতল। কাচের বোতলে রঙিন পানি। এগুলা কি জিনিস আমার জানা নেই। কৌতুহল মেটাতে একটা বোতল হাতে নিলাম। বেশ ভারি মনে হচ্ছে। বেশিক্ষণ হাতে রাখা যায়না। হঠাৎ দরজা ঠেলে কেউ একজন ভেতরে ঢুকল। শব্দের আওয়াজ শুনে আমার সাথে সাথে ডায়না আর রাকেশীও ঘুরে তাকালো। ওই গুলুমুলু বাবর্চি আঙ্কেল এসেছে। হাতে কাচের প্লেট। উনি আমার সামনে এসে কাচের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে মুখে হাসি টেনে বললেন–
ম্যাম আপনার জন্য পাস্তা বানিয়েছি। স্পাইসি পাস্তা।
আমি বোতল দেখায় মনোযোগ দিয়ে বললাম–
আপনাকে আমি কখন বললাম যে আমি পাস্তা খাবো?
আসলে ম্যাম আপনি তো কিছুই খেলেন না। তাই ভাবলাম এটা যদি পছন্দ হয়।
আমি উনার কথার উত্তর দিলাম না। বোতল গুলোর দিকে ইশারা করে বললাম–
এগুলো কি জিনিস?
ম্যাম এগুলো ড্রিঙ্কস।
ড্রিঙ্কস তো বুঝতে পারলাম। কিন্তু কি ড্রিঙ্কস??
বাজে ড্রিঙ্কস ম্যাম। অ্যালকোহল।
আমি নাকে পেচকি কাটলাম– বাজে ড্রিঙ্কস?? তাহলে এগুলো এখানে কেনো রাখা হয়েছে?? ফেলে দেওয়া হয়নি কেনো?
কারণ ম্যাম এগুলো স্যার খায়।
আমি চোখ বড় করে বললাম– স্যার মানে?? ঈশান?
জ্বী না ম্যাম। ছোট স্যার না। বড় স্যার খায়।
বড় স্যার?? মানে আমার শ্বশুর মশাই?? ( বড় হাসি দিয়ে)
ভদ্রলোক মুচকি হেসে বলল– জ্বী ম্যাম।
তাহলে উনি এখন কই?? মানে ঈশানের মা বাবা??
উনারা ম্যাম ট্রিপে গেছেন। অস্ট্রেলিয়াতে। কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবে।
আমি বড় করে উচ্চারণ করলাম— ওওও……..।
একটা বোতল তুলে নিয়ে ভদ্রলোক কে বললাম —
আমার জন্য এক গ্লাস ঢালুন তো। আমি টেস্ট করে দেখতে চাই।
ভদ্রলোক অবাক হয়ে বলল– কি বলেন ম্যাম আপনি কেনো এসব খাবেন?? এসব খুব খারাপ জিনিস ম্যাম….( আমি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই) ঠিকাছে ম্যাম দিচ্ছি। (পেছনে তাকিয়ে) এই ডায়না ম্যামের জন্য গ্লাস আনো।
ডায়না পেছনের শেলফে সাজিয়ে রাখা বাহারি ডিজাইনের গ্লাস গুলো থেকে একটা তুলে নিল। গ্লাস গুলো দেখতেও সেইরকম হিট। এইরকম গ্লাসে আমাকে করল্লার জুস দিলেও অনায়াসে খেতে নিতে পারি।
এক গ্লাস এক গ্লাস করতে করতে কয় গ্লাস খেয়ে নিয়েছি তার হিসেব নেই। আশেপাশের সবকিছু ঘুরছে আমার। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। বাবর্চি আঙ্কেল ডায়না আর রাকেশী গোল গোল চোখে আমাকে দেখছে। ওদের চেখেমুখে বিস্ময় আর আতঙ্ক। আমি চোখ খুলে রাখতে পারছি না। ঘুম আসছে প্রচুর। হঠাৎ ঈশান ভাইয়ার গলার আওয়াজ শোনা গেল। উনি কি এসে গিয়েছেন তাহলে?? আমার মুখে বিরাট হাসির রেখা দেখা দিলেও ডায়না রাকেশী আর বাবর্চি আঙ্কেলের মুখে যেন অমাবস্যা নেমে এসেছে। মনে হচ্ছে ওরা বড়সড় কোনো ঘুর্ণিঝড়ের আশংকায় আতঙ্কিত এবং হতাশাগ্রস্ত। আমি ওদের এমন শোকাহত টাইপ রিয়েকশনকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে উঠে দাড়ালাম। টলতে টলতে ঈশান ভাইয়ার কাছে যেতে লাগলাম। পেছন থেকে তুমুল গতিতে আমার নাম ধরে ডাকাডাকি চলছে। কিন্তু আমি কি আর ওসব শুনছি?? ঈশান ভাইয়ার সামনে গিয়েই দাত বের করে একটা হাসি দিলাম আমি। আমায় দেখে উনার কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠল। আমার কাধে হাত রেখে বলল–
তারা! আর ইউ ওকে!
আমি হিহিহি করে কয়েকবার হেসে দিয়ে ফট করে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। গালে একটা টাইট কিস দিয়ে বললাম–
ওকে বেবি!!
পেছন থেকে ডায়না রাকেশী আর বাবর্চি আঙ্কেলের আফসোসের আর্তনাদ শোনা গেল।
🍂
তোকে_দিয়েছি_মন❤
পর্ব – ৩০
Writer : Sidratul muntaz
🍂
আমার আচরণে ঈশান ভাইয়া চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে। লজ্জামাখা মুখে রাকেশী ডায়না আর বাবর্চি আঙ্কেলের দিকে তাকাচ্ছেন উনি। উনারা মাথা নিচু করে আছে। তবে আগেও বলেছিলাম,,, ঈশান ভাইয়াকে লজ্জা পেলে ব্যাপক কিউট লাগে। আমার এখন ইচ্ছে করছে উনার পুরো মুখটাই চুমু দিতে দিতে লাল করে ফেলতে। কিন্তু চুমু দেওয়ার মতোও এনার্জি পাচ্ছিনা। উনার মুখ পর্যন্ত পৌছানোও ব্যাপক পরিশ্রমের ব্যাপার। এতোটা লম্বা না হলেও পারতেন। অনেকটা বাশের মতো লাগে উনাকে। আমি উনার গলা ধরে ঝুলে আছি। উনি লজ্জা কাটিয়ে উঠে গলা খাকারি দিয়ে বাবর্চি আঙ্কেল কে উদ্দেশ্য করে বললেন—
কি হয়েছে ওর?? ও এমন করছে কেনো?
বাবর্চি আঙ্কেল নিচুস্বরে উত্তর দিল– স্যার উনি অ্যালকোহল খেয়েছে।
হোয়াট?? এসব ও পেলো কোথায়?
ডায়না বলল– স্যার,,, বড় স্যারের বারে ঢুকেছিলেন ম্যাম। সবকিছু ঘুরে দেখতে চাচ্ছিলেন । তারপর হঠাৎই জেদ করলেন…..
আজব! জেদ করলেই কি দিতে হবে নাকি? কমন সেন্স নেই?? এসবে কি ও অভ্যস্ত? আমি নিজেই তো সহ্য করতে পারিনা ও কি করে সহ্য করবে? এই ধরনের মারাত্মক জিনিস বাড়িতে রাখাই উচিৎ হয়নি। সবকয়টা বোতল ডাস্টবিনে ফেলে দিন। এখনি!!
বাবর্চি আঙ্কেল বলল– স্যার, বড় স্যার জানলে রাগ করবেন।
সেটা আমি বুঝবো। আপনাকে যা বলছি তাই করেন।
এই ধরনের কথোপকথন শুনতে ভালো লাগছে না আমার। ঈশান ভাইয়ার ধমকাধমকির আওয়াজটাও খুব তীক্ষ্ণ মনে হচ্ছে। কানের সাথে বারি খাচ্ছে প্রতিটা শব্দ । আমি উনার গাল স্পর্শ করে বললাম–
আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো? আমার খুব ভয় লাগছে।
উনি আমার কথার উত্তর দিলেন না। বাবর্চি আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললেন–
সায়েদ আঙ্কেল! ও কি ডিনার করেছিল?
জ্বী না স্যার। ম্যামের খাবার পছন্দ হয়নি। উনি স্পাইসি কিছু খেতে চেয়েছিলেন। আমি সেটাও বানিয়েছি। তবুও খাচ্ছেন না।
আচ্ছা যেটা বানিয়েছেন ওটা মিস ডায়নাকে দিয়ে আমার রুমে পাঠিয়ে দিবেন।
আচ্ছা স্যার।
ঈশান ভাইয়া এবার আমায় কোলে তুলে নিয়ে হাটতে লাগলেন। আমার খুব আরাম লাগছে এবার। ইচ্ছে করছে ঘুমের সাগরে ডুব দিতে। ঠিক এই মুহুর্তে সব থেকে সুখকর জিনিস হল আমার জন্য ঘুম। আর কিচ্ছু না। ঈশান ভাইয়া আমাকে বিছানায় ফেললেন। হয়তো খুব জোরেই ফেললেন। অনেকটা আছাড়ের মতো। পিঠে ব্যথা লাগছে আমার। চোখ পিটপিট করে আশেপাশে তাকিয়ে উনাকে খুজতে লাগলাম। কোথায় উনি?? ওয়াশরুমে ঢুকে গেছেন। বেশ কিছুক্ষণ আমি চোখ বন্ধ করে ঝিমুলাম। হঠাৎ ঈশান ভাইয়ার ধাক্কায় ঘোর কাটল আমার। উনি খুব উচ্চশব্দে কথা বলছে। উফফ এতো জোরে কেউ চেচায়?? আমার কানের পর্দা ফেটে গেলে উনার নামে মামলা করবো আমি। চোখ খুলতেই দেখলাম ব্লু কালার একটা টি শার্ট আর সাদা ফুল প্যান্ট পড়ে আমার রাজপুত্র দাড়িয়ে আছে। চোখেমুখে তার ক্লান্তি প্লাস বিরক্তি দুইটাই ভেসে উঠেছে । আমি হিহি করে একটা হাসি দিলাম। এতো কিউট উনি ইচ্ছে করছে টেনে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে। কিন্তু সেটা হল না….. আমি উনাকে টানার আগেই উনি আমাকে টেনে তুললেন। ধমকের সুরে বললেন–
তারা তুমি মেডিসিন নাও নি কেনো?
আমি টলতে টলতে অস্পষ্ট ভাবে বললাম– কিসের মেডিসিন।
ডায়না তোমাকে মেডিসিন দিতে আসেনি??
না তো! ( অসহায়ের মতো মাথা নেড়ে)
ঈশান ভাইয়া আরো একটু রেগে বললেন– ডিনার করোনি কেনো??
আমি চোখ ডলতে ডলতে বললাম— ডিনার করতে ইচ্ছে করছে না।
তাহলে তোমার কি করতে ইচ্ছে করছে শুনি?
আমি দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বললাম– কিতকিত খেলতে। আসুন না খেলি??
হোয়াটটট?
খেলবেন না? সেটা বললেই হয়। এতো চিৎকার করার কি আছে?
তারা তুমি সোজা হয়ে বসো।
আমি তো সোজা হয়েই বসে আছি। আপনিসেন বাকা হয়ে আছেন। ইনফেক্ট এই ঘরের সবকিছুই বাকা হয়ে আছে। আকাবাকা…. আকাবাকা…!
তারা স্টপ!!!! লুক….. আমি খুব টায়ার্ড। সকাল থেকেই খুব জ্বালাচ্ছো আমাকে। আজ সকালে যখন ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলাম তোমাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা…. সিরিয়াসলি আমার মনে হচ্ছিল যেন পুরো পৃথিবী আমার মাথায় ভেঙে পড়ছে। পুরো এলাকা চষে ফেলেছি তোমাকে খুজতে খুজতে। তারপর দেখলাম কোন একটা গলি দিয়ে অস্বাভাবিক ভাবে হেটে আসছো। আমি না ধরলে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে। তখন থেকে শুরু হয়েছে তোমার অত্যাচার। অস্বাভাবিক আচরণ। আচ্ছা সকাল সকাল সাইকেল নিয়ে কোথায় গিয়েছিলে তুমি বলোতো? সাইকেলটাও হারিয়ে ফেলেছো।
কোথায় গিয়েছিলাম আমি? আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না।
আচ্ছা থাক মনে করতে হবে না। সারাটাদিন কম জ্বালাওনি আমাকে। আর এখন এসব কি ফালতু জিনিস খেয়ে আবার শুরু করেছো। রাতটাও মনে হচ্ছে রেহাই পাবো না। সিরিয়াসলি তারা আমি আর টেনশন নিতে পারছি না। এরপর তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে কি হবে বলোতো। সারাদিন কিচ্ছু খাওনি তুমি। এখন একটু তো খেয়ে নাও প্লিজ।
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। শুধু ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। আপনি এবার সবকিছু থামান।
থামাবো মানে? কি থামাবো??
আপনার ঘরের সবকিছু কেমন ঘুরছে। এগুলো থামান না প্লিজ!! আমার ভালো লাগছে না তো।
উফফ!!….. শিট!!…. ( কপালে হাত রেখে) ভালোই তো নেশা হয়েছে দেখছি।
উনি আমার গালে কপালে হাত বুলাতে লাগলেন। আর আমি খিলখিল করে হেসে উঠলাম–
সুরসুরি লাগে তো আমার!
আচ্ছা খুব সুরসুরি লাগে? দেখাচ্ছি সুরসুরি কি জিনিস।
বলেই এবার আমার উপর উঠে পড়লেন উনি। উনার ভারে আমি চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম ।যেন বিছানার ভেতর একদম ঢুকে যাচ্ছি আমি। এতোটা ভার ভার লাগছে । উনি আমার গলায় মুখ রাখলেন। এবার আরো জোরে হাসতে লাগলাম আমি। নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইছি। কিন্তু পারছি না। অনেক বেশি সুরসুরি লাগছে। আমার এই সুরসুরির পরিমাণ শুধু বাড়ছে বই কমছে না। হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি আমি। দম আটকে আসছে প্রায়। পুরো শরীর জুড়ে শীহরণ অনভূত হচ্ছে। হঠাৎই পুরো ঘরের আলো নিভে গেল। অন্ধকারে ছেয়ে গেল সবকিছু। এখন না পারছি কিছু দেখতে না পারছি কিছু বলতে আর না পারছি নড়াচড়া করতে। এইভাবে কতক্ষণ ছিলাম খেয়াল নেই। হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ….নয়তো বেহুশ হয়েছিলাম……. ঠিক মনে নেই।
সকালের মিষ্টি রোদের আলো মুখে এসে পড়তেই জেগে উঠলাম আমি। চোখ মেলে তাকাতে কষ্ট হচ্ছে। কিছুক্ষণ চোখ জোড়ার সাথে লড়াই করার পর অবশেষে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে সক্ষম হলাম আমি। কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছি না। এমনকি হাত পাও নাড়ানো যাচ্ছে না। পেশিতে টনটন ব্যথা হচ্ছে। যেন সারারাত ধরে বক্সিং খেলেছি। অদ্ভুত লাগছে খুব। অনেক কষ্ট নিজের সাথে প্রায় পাচ দশ মিনিটের মতো যুদ্ধ করে উঠে বসলাম। এবার খেয়াল করলাম পেটে ব্যথা হচ্ছে। যেন এখনি বমি চলে আসবে। দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার পরিণাম টের পাচ্ছি। কিন্তু মুখ থেকে অদ্ভুত ঢেকুর আসছে আমার। ঢেকুরের সাথে খাবারের ফ্লেভার পাচ্ছি। ঘুমের মধ্যেই কি কিছু খাওয়ানো হয়েছে আমাকে? এপাশ অপাশ তাকাতেই ঈশান ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। বিছানা থেকে অনেকটা দুরে চেয়ারে বসে টেবিলের উপর পা ঠেকিয়ে একটা ফাইল দেখছেন উনি। কলমটা ঠোটের সাথে আটকে খুব মনোযোগের সাথে ফাইলটা পড়ছেন। উনার পরনে এখন গ্রীন কালার টি শার্ট আর কালো প্যান্ট। মাথার চুলগুলো হালকা ভেজা…… আর খুব স্নিগ্ধ লাগছে দেখতে। বুঝতে পারলাম গোসল করেছে। কিন্তু এই ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে গোসল করতে ইচ্ছে হল উনার? উনাকে দেখে এবার আমারই শীত লাগছে। নিজের দিকে খেয়াল করতেই আরেক দফা চমকে উঠলাম আমি। চোখ দুটো যেন এখনই বেরিয়ে আসবে। এটা কি ধরনের পোশাক পড়ে আছি আমি?? হালকা পাতল ঢোলা ঢালা….. তবে হাতাকাটা। এইটা দেখেই তো অবাক লাগছে আমার। শরীরের অর্ধেক অংশই যেন দেখা যাচ্ছে। উনার সামনে আমি এইভাবে বসে আছি ভাবতেই লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আসছে। সাথে সাথে ল্যাপের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। ঈশান ভাইয়া এবার আমার দিকে দৃষ্টি দিলেন। মৃদু হেসে বললেন—
গুড মর্নিং!!
আমার বলতে ইচ্ছে করছে গুড মর্নিং এর গুষ্টি কিলাই। কিন্তু বলতে পারলাম না। উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার সামনে এসে বসলেন। আলতো করে আমার গালে হাত রাখলেন। উফফ কি ঠান্ডা হাত! আমি ঝড়ের গতিতে উনার হাত সরিয়ে দিলাম। ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করলাম–
আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করেছে?
উনি খুব স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলেন– আমি করেছি।
উনার কথা মাথাটা যেন ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরে গেল আমার। কিছুই মনে পড়ছে না এই ব্যাপারটা সত্যিই খুব অস্বস্তিকর। তার উপর এসব উল্টা পাল্টা কথা শুনে মাথা আমার হ্যাং মারছে। চরম বিরক্ত হয়ে উনাকে আরেকবার জিজ্ঞেস করলাম–
সত্যি?
উনি মোবাইল টা বের করতে করতে বললেন — হ্যা সত্যি।
আমার মুখটা আরেকবার হা হয়ে গেল। কিছু মনে করতে পারছি না বলেই এতোটা অদ্ভুত লাগছে। একটা কিছু মনে পড়লেও মন কে বোঝাতে পারতাম। আমি আবার অসহায় মুখ করে বললাম–
আপনি আমার ড্রেস কেনো চেঞ্জ করেছেন??
উনি ফোনের দিকেই দৃষ্টি রেখে বললেন– কালরাতে বমি করে আমাকেও ভাসিয়েছিলে আর নিজেকেও। চেঞ্জ না করে উপায় ছিল??
ডায়নাকে ডাকতে পারতেন। রাকেশী কে ডাকতে পারতেন।
উনি এবার ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন। যেন আমার বলা কথাটা হজম হলো না উনার।
কেনো ওদের কেনো ডাকবো? আমি থাকতে ওরা কেনো?? তুমি কি ওদের বউ নাকি আমার বউ? আর একটা মেয়ে এসে তোমার ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়ে যাবে সেটাও আমি মেনে নিবো তুমি ভাবলে কি করে??
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম— তাহলে কি কোনো ছেলে করলে মেনে নিবেন??
উনি অগ্নিদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। দাতে দাত চেপে বললেন– না। ছেলেও না মেয়েও না। আমি ছাড়া অন্যকেউ না।
বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন উনি। ফোনের দিকে মনোযোগ দিয়ে হেটে যেতে লাগলেন। আমি মনে মনে উচ্চারণ করলাম— হাউ পজেসিভ! এতোটা পজেসিভ না হলেও চলতো।
🍂
চলবে
[গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন সবাই]