তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব -১১+১২

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

তীব্রের হাতের লেখা এই ৩লাইনের প্রতিটি শব্দ আমার বুকের মধ্যে তো’ল’পা’ড় শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। শেষের “নূর” নামটি বারংবার যেনো আমার কানে বাজছে। তবে কি তীব্রের জীবনে আরো এক নারীর অ’স্বি’ত্ব ছিলো! আর সেই নারীকে ভালোবাসার বিনিময়ে চরম ধো’কা আর বিশ্বাস’ঘা’ত’ক’তা’র শি’কা’র হওয়ায় সকল নারী জাতির প্রতি তীব্রের এতো রা’গ, ঘৃ’ণা!

কে এই নূর! কি কারণে সে তীব্রের ভালোবাসার সাথে ছ’ল’না করেছিলো! তীব্রের বু’কে ছু’রি দ্বারা আ’ঘা’ত করেছিলো কিসের ক্ষো’ভে! আমার মনে হাজার প্রশ্নের ভিড় জমে গিয়েছে যেনো ইতিমধ্যে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ক’ণা জমতে শুরু করেছে। সেদিকে পা’ত্তা না দিয়ে পরবর্তী পৃষ্ঠা উ’ল্টা’লা’ম।

————————-
ডায়েরির পাতার ফ্লাসব্যক~~
————————–
ইসলাম মন্ঞ্জিলে জাবেদ ইসলাম এর মাথায় ব’ন্দু’ক ঠেকিয়ে রেখেছে বিশিষ্ট শিল্পপতী আবরার রহমান তীব্র এর বডিগার্ড। জাবেদ ইসলামের ড্রয়িংরুমের সোফায় আয়েসে পায়ের উপর পা তুলে দৃষ্টি মেঝেতে স্থির রেখে বসে আছে তীব্র। জাবেদ ইসলাম বারকয়েক শুকনো ঢো’ক গি’লে ভী’ত সুরে বলে উঠে…

“” আমাকে মে’রে ফেললেও আমি আপনার দেওয়া কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করবো না মি.রহমান। এই কোম্পানি আমি অনেক পরিশ্রমের পরে সফলতার শীর্ষে আনতে পেরেছি। এই কোম্পানির সাথে আমার অনেক ইমোশন, ভালোবাসা জড়িয়ে আছে যা আমি আপনার ধার্য করা কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবো না। এর থেকে আমার মৃ’ত্যু শ্রেয় “”।

জাবেদ ইসলামের এমন কথায় তীব্র অট্টহাসিতে ফে’টে পড়ে, পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে ঠান্ডা গলায় রাগ মিশ্রিত রেখে বলে উঠে..

“” এই মূহূর্তে তুই আমার লোকের গান পয়েন্টে মাথা রেখে কথা বলছিস, তাই মুখ থেকে বের করা প্রতিটি শব্দ হিসাব করে বলিস। জানিস ই তো ব’ন্দু’কে’র গু’লি আর মুখের কথা একবার বের হলে তা আর রিটার্ন করা সম্ভব হয় না। আমার কাছে তোর মতো ব্যবসায়ীদের প্রা’ণ ভিষণ তু’চ্ছ, তাই তোকে মা’র’তে আমার হাত এতোটুকুও হাত কাঁ’প’বে না “”

“” মা’রু’ণ, মে’রে ফেলুন আমায়। বললাম তো আমি আপনার দেওয়া কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করবো না (জাবেদ)””

তীব্র চো’য়া’ল শক্ত করে নিজের হাতে থাকা গানটি ইসলাম মন্ঞ্জিলের মূল দরজায় দিকে ফা’কা সুট করে। সঙ্গে সঙ্গে একটি মেয়ের আর্তনাদ তীব্র সহ সকলের কর্ণপাত হয়। জাবেদ ইসলাম দরজার দিকে লক্ষ্য করতেই নিজের মেয়েকে পরে যেতে দেখে আঁ’ত’কে উঠেন৷ দিক-বেদিক কোনো চিন্তা না করে মাথায় ঠেকিয়ে রাখা ব’ন্দু’ক’ধা’রী লোকটিকে ধা’ক্কা দিয়ে মূল দরজার নিটক ছুটে এসে মেয়েটির মাথা নিজের কোলের উপর নিয়ে বলে উঠেন…

“” নিরা মামনি আমার, আমার মেয়ে, চোখ খোল মা। দেখ তোর বাবাই তোর কাছে আছে, কিছু হবে না তোর। “”

সেইমূহূর্তেই জাবেদ ইসলামের দৃষ্টি পরে নিরার পেটের পাশ থেকে র’ক্ত গড়িয়ে মেঝেতে পড়ছে। জাবেদ ইসলামের আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছুসময় পূর্বে তীব্রের গান থেকে সু’ট হওয়া গু’লি’টি তার মেয়ের পে’টে এসে লেগেছে। জাবেদ ইসলাম দ্রুত নিরার পাশ থেকে উঠে তীব্রের নিকট ছুটে এসে ওর পায়ের কাছে বসে মিনতীর সুরে বলে উঠেন…

“” দয়াকরে আমার মেয়েকে নিয়ে আমাকে এইমূহূর্তে হাসপাতালে যেতে দিন নয়তো আমার মেয়েটাকে আমি
বাঁ’চা’তে পারবো না “”

তীব্র ওর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে জাবেদ ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলে…

“” তোর মেয়ে তো দেখছি একদম সঠিক সময়ে এন্ট্রি নিয়েছে, যে কাজ তোকে মা’রা’র হু’ম’কি দিয়ে সম্পন্ন করতে পারছিলাম না এতোসময় ধরে চেষ্টার পরও সেই কাজ তোর মেয়ে এসে এতো সহজেই সম্পন্ন করার রাস্তা বের করে দিবে ভাবতে পারি নি, আই এম ইম্প্রেইসড। “”

জাবেদ ইসলামের বিস্ময়কর দৃষ্টি তীব্রের কঠিন মুখের উপর স্থির রাখা। তীব্র ওর হাতে থাকা গানটি জাবেদ ইসলামের মাথার চারপাশ দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে…

“” মেয়ের জীবনের প্রতি এতো মায়া থাকলে এইমূহূর্তে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে দে, তারপর সসম্মানে আমার লোকেরা তোর মেয়েকে এই শহরের বেস্ট হস্পিটালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিবে। আর যদি এখনও বলিস যে তোর মেয়ের জীবনের চেয়েও মূল্যবান তোর কোম্পানি বড় তাহলে এই ন্য’কা কা’ন্না ব’ন্ধ করে আমার পাশে আয়েসে বসে পড় আর নিজের মেয়েকে য’ন্ত্র’ণা’য় ছ’ট-ফ’ট করতে করতে শে’ষ নিঃশ্বাস ত্য’গ করতে দেখ। “”

তীব্রের মুখে এমন হৃ’দ’য়’হী’না কথা শুনে জাবেদ ইসলামের চোখ নোনাজলে ভ’রে উঠে, ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। কিছুসময় স্ত’ব্ধ থাকার পর জাবেদ ইসলাম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ব’লে উঠে..

“” অ’স’হা’য়’ত্বে’র সুযোগ নিয়ে নিজের কার্য সিদ্ধি করে নিচ্ছেন মি.রহমান! দুনিয়ার ধা’র দুনিয়াতেই শো’ধ হয়ে যায়, আল্লাহ আপনাকেও দেখছেন আর আমাকেও। আমার প্রতি আজ হওয়া এই অ’ন্যা’য়, অ’বি’চা’রে’র শো’ধ আমি নিতে পারলাম না ঠিকই কিন্তু একদিন এমন আসবে যখন আপনি আমার থেকেও চ’র’ম অ’স’হা’য় হয়ে পড়বেন। হ’তা’শা, আর ক’রু’ণ মৃ’ত্যু য’ন্ত্র’ণা ছাড়া কিছু দেখবেন না আপনার চারপাশে। “”

এতোটুকু বলে জাবেদ ইসলাম সোফার পাশে থাকা টি-টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে বসেন, টেবিলের উপর রাখা ছিলো কন্ট্রাক্ট পেপারটি, এই পেপারে সাইন করা যেন তার শরীর থেকে তার আ’ত্না’কে বের করে নেওয়ার সমতুল্য। এতোসময় ধরে চোখে জমে থাকা নোনাজল গুলো গড়িয়ে পড়লো পেপারটির উপর, কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র টেবিলের উপর থেকে পেপারটি নিজের হাতে উঠিয়ে নিয়ে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললেন…

“” দ্রুত এই মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করাও, চিকিৎসার যেনো কোনো ত্রু’টি না হয়। “”

বলেই ইসলাম মন্ঞ্জিল থেকে বেরিয়ে এসে নিজের বি.এম.ডব্লিউ গাড়িতে উঠে স্থান ত্য’গ করে তীব্র।

তীব্রের চলে যাওয়ার পরপরই ওর লোকেরা জাবেদ ইসলামের মেয়েকে নিয়ে সিটি হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়ে দেন। জাবেদ ইসলাম ও সঙ্গে এসেছেন, অপারেশন থিয়েটরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাকে। অ.টি এর বাহিরে থাকা চেয়ারে বসে মাথার দুপাশে দুহাত রেখে নিরব ভাবে চোখের পানি ফেলছেন জাবেদ ইসলাম।

————————-
বড় বড় ম’ন্ত্রী-মি’নি’স্টা’র’রা নিজেদের পাওয়ার খা’টি’য়ে যখন কার্য হা’সি’ল করতে সক্ষম হন না। তখন তীব্রের সাথে তারা যোগাযোগ করেন, মো’টা অং’কে’র টাকার বিনিময়ে তীব্রের সাথে ডি’ল করেন৷ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির লি’ডা’র’শি’প এ থাকা ব্যক্তিটিকে মৃ’ত্যু ভ’য় দেখিয়ে যেনো সেই কোম্পানি তাদের হাতে তুলে দেয় তীব্র। মা’ফি’য়া কিং হওয়ায় তীব্রকে শহরের আনাচে-কানাচেতে থাকা সকল মানুষই এক নামে চিনতো।

তাদের সকলের মুখে মুখে ছিলো তীব্রের তীক্ষ্ণ নজর যে কোম্পানি বা যার উপর পড়বে তার ধ্বং’স কেও আটকাতে সক্ষম হবে না। বেঁচে থাকার ভ’য়ে আ’প’শে নিজের কোম্পানি যদি তীব্রের হাতে তুলে না দেয় তাহলে ক’রু’ণ মৃ’ত্যু দিয়ে হলেও সেই কাজ তীব্র হা’সি’ল করেই ছাড়ে। ভালো-খা’রা’প বিবেচনা করে না কখনও, শুধু টাকা দ্বারা সবকিছু বিচার করে। যে কাজের জন্য যতো বেশি মোটা অং’কে’র টাকা তীব্রকে দেওয়া হবে সে কাজ ততো দ্রুত শে’ষ করবে তীব্র।

জাবেদ ইসলাম খুব দ্রুতই সৎ ভাবে পরিশ্রম করে, বুদ্ধি খা’টি’য়ে শহরের না’মি-দা’মি লোকেদের টে’ক্কা মে’রে ট’পে নিজের কোম্পানিকে দা’ড় করিয়েছিলেন। এ নিয়ে জাবেদ ইসলামের প্রতি ঈ’র্ষা’ন্বি’ত ছিলেন শহরের বাকি কোম্পানির CEO রা, ধাপে ধাপে জাবেদ ইসলাম তার কোম্পানিকে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিকল্পনা করতে শুরু করলে বাকিরা তার চ’র’ম শ’ত্রু’তে পরিণত হয়ে যায়। পরিস্থিতি দিন’কে দিন হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে দেখে বাকি কোম্পানির CEO এর মাঝে একজন যিনি ছিলেন জাবেদ ইসলাম এর কোম্পানির পরের স্থানে তিনি টপ ১ এ আসার লো’ভে তীব্রের সাথে চু’ক্তি ব’দ্ধ হন।

তীব্র যদি জাবেদ ইসলামের কোম্পানিকে তার নামে করে দিতে পারে তাহলে তিনি তীব্রকে নিজের কোম্পানি থেকে ৭০% শে’য়া’র প্রতিমাসে দিয়ে দিবেন। তীব্র ও রাজি হয়ে যায় চু’ক্তি’তে, পরবর্তীতে পরিকল্পনা করে জাবেদ ইসলামের বাড়িতে এ’ট্যা’ক করবে নিজের লোকদের সাথে নিয়ে। তীব্র খো’জ নিয়ে জেনেছে জাবেদ ইসলাম ভিষণ সৎ স্বভাবের লোক, তাই তীব্র এতোটুকু বুঝতে পেরেছে জাবেদ ইসলাম আ’প’শে তার কোম্পানি তীব্রের হাতে তু’লে দিবেন না। কিন্তু তীব্র যেহেতু একবার চু’ক্তি ব’দ্ধ হয়েছে সেহেতু যে-কোনো মূ’ল্যে সে এই কোম্পানি হা’তি’য়ে নিবেই নিবে। আর ঠিক তেমনটাই হলো, তীব্র ওর হা’র্ট’লে’স স্বভাব দেখিয়ে জাবেদ ইসলামের থেকে তার কোম্পানি হা’তি’য়ে নিয়ে চু’ক্তি সম্পন্ন করলো।
#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

কেটে গেছে প্রায় ৩মাস
———————-
তীব্র তার নিজের রুটিন মতোই প্রতিটি দিন পার করছে। টাকার লো’ভ একবার কোনো মানুষকে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেললে সেই মানুষটি যেনো অ’ন্ধ হয়ে যায়, টাকার পি’ছ’নে ছুটতে ছুটতে সে কোন পথে দৌড়াচ্ছে তা একটাবার খেয়াল করে দেখে না, যেকোনো কিছুর বিনিময়ে টাকা আত্ন’সা’ৎ করতে পারলেই হলো।

এতে যতো নিম্নে নামতে হোক, যতো খা’রা’প কাজই করতে হোক না কেন সেই হিতাহিতজ্ঞান বো’ধ নিজের মাঝে কাজ করে না। কথায় আছে লো’ভে পা’প আর পা’পে মৃ’ত্যু। পা’প কখনও তার বা’প’কেও ছা’ড়ে না, যে যেমন পা’প কাজ করবে তার শা’স্তি ততো বেশি ভ’য়া’ব’হ আর ক’রু’ণ হবে। তীব্রের পা’পে’র কলসী দিনকে দিন ভ’র’তে শুরু করেছে যেনো, শতশত অ’স’হা’য় মানুষের অ’ভি’শা’পে ভরপুর ওর ২৮ বছরের জীবন।

একজন মন্ত্রীর সাথে মিটিং শেষ করে তীব্র বাসার উদ্দেশ্য গাড়ি করে ফিরছিলো, এর মাঝে ট্রাফিক সিগন্যল পড়ে যাওয়ায় কিছুটা বি’র’ক্তি’তে ওর চোখ-মুখ কু’চ’কে আসে। গাড়ির জানালা খুলে মাথা পুরো বের করে সামনে আর পিছনে একপলক দেখছিলো তীব্র এর মাঝে ওর নজর আটকে যায় রাস্তার ডান পার্শে ফু’ট’পা’তের উপর, প্রায় ১০-১২ জন ছোট ছোট বাচ্চা হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে একজন ১৯-২০ বছর বয়সী মেয়েকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

মেয়েটির মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে, গাড় কাজল দেয়া ঘন পাপড়ি বিশিষ্ট টানা টানা একজোড়া চোখের একটা চোখ দেখা যাচ্ছে, গোলাপ রা’ঙা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসছে আর নিজের চারপাশে থাকা ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর মাঝে খাবার বিতরণ করছে। মেয়েটির পরনে সাদা-কালো মিশ্রিত সালোয়ার কামিজ আর মাথায় হিজাব দেওয়া। ভিষণ মোহনীয় লাগছে মেয়েটির সৌন্দর্য তীব্রের নিকট।

কি মনে করে বসার সিটের পাশ থেকে ফোন বের করে মেয়েটির বেশ কয়েকটা ছবি উঠিয়ে নেয়। কিছুতেই মেয়েটির সম্পূর্ণ মুখ তীব্রের চোখে পড়ছে না৷ এর মাঝেই ট্রাফিক সিগন্যালে সবুজ বাতি জ্বলে উঠে। তীব্রের পিছনে অবস্থান করা গাড়িটি হর্ণ বাজাতে শুরু করলে তীব্রের ধ্য’ন ভাঙে। আরো একবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময়ী হাসি ঠোঁটে বজায় রেখে তীব্র গাড়ি স্টার্ট করে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়।

বাসায় ফিরে মন্ত্রীর সাথে করে আসা ডি’ল’টি কবে কিভাবে সম্পন্ন করবে তা নিয়ে চি’ন্তা করে আর সব ঠিকঠাক করে ফে’লে। পরমুহূর্তে তীব্রের রুমের বাহিরে থাকা গার্ডকে ডেকে বলে এক কাপ ব্লা’ক কফি যেনো এই মূহূর্তে ওর রুমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। গার্ডটি তীব্রের কথানুযায়ী কাজ করতে আবারও বাহিরে চলে যায়। তীব্র সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকোনিতে চলে যায়।

বেশ কিছুসময় ওভাবেই থাকতে থাকতে সা’র্ভে’ন্ট এসে তীব্রকে কফি দিয়ে স্থান ত্য’গ করে। তীব্র কফিতে একবার চুমুক দিয়ে ফোনের ল’ক খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। কিছুসময় ফোন স্ক্রলিং করতে করতেই তীব্র ওর গ্যলারিতে রাস্তায় উঠানো মেয়েটির ছবিগুলো দেখতে পায়। তীব্রের দৃষ্টি আবারও ফোনের উপর আটকে যায়, যেনো অদৃশ্য কোনো মায়া বিরাজ করছে এই ছবিতে থাকা মেয়েটিকে ঘিরে যার টা’নে বারংবার তীব্রের দৃষ্টি এই মেয়েটির উপর আটকে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

তীব্র আরেকবার কফিতে চুমুক দিয়ে গ্লাসটি রেলিং এর উপর রেখে দেয়, তারপর ফোনে থাকা মেয়েটির প্রতিটি ছবি জু’ম করে করে দেখতে শুরু করে। নিজেকে ইতিমধ্যে বড্ড বে’হা’য়া পুরুষ মনে হচ্ছে তীব্রের। কখনও কোনো নারীর দিকে ভু’লে দু’বার না তাকানো ছেলেটি এখন একজন মেয়ের ছবি উঠিয়ে নিয়েছেন মেয়েটির পারমিশন ছা’ড়া, এখন আবার জু’ম করে করে মেয়েটিকে দেখছে আর নানান ধরনের চি’ন্তা ভাবনা করতেছে।

আরো বেশ কিছু সময় পা’র হয়ে গেলে তীব্র হু’ট করেই বেলকোনি থেকে সরে রুমে চলে আসে। তারপর নিজের অন্য আরেকটি ফোন দিয়ে নিজের পারসোনাল বিশেষ সেক্রেটারি শফিককে কল করে দ্রুত নিজের বাসায় আসতে বলে। মিনেট ২০ এক পর শফিক তীব্রের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে…

“আসতে পারি বস!”

তীব্র মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক সম্মতি জানায়, তীব্রের সম্মতি পেয়ে শফিক শুকনো একটা ঢো’ক গি’লে রুমের ভিতর প্রবেশ করে তীব্রের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে পরে। তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শফিকের উপর তারপর শান্ত কন্ঠে বলে…

“ফোন চেক করো একটা ছবি পাঠিয়েছি, ছবিতে থাকা মেয়েটির এ-জেড সম্পূর্ণ ডিটেইলস আমার চাই আজকের মধ্যেই”

শফিক চ’ট করে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তীব্রের দিকে আর তীব্রের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সাথে ওর চো’খা-চো’খি হয়ে যাওয়ায় দ্রুত নিজের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে পকেট থেকে ফোন বের করে জিমেইল এ প্রবেশ করে মেয়েটির ছবি দেখে শফিকের ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে আসে। ধীর কন্ঠে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..

“বস মেয়েটির তো সম্পূর্ণ মুখ দেখা যাচ্ছে না”

তীব্র সোফার পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলের উপর থেকে একটা গা’ন হাতে উঠিয়ে নিয়ে নিজের মুখের সম্মুখে এনে গানটির উপর দৃষ্টি স্থির রেখে স্বাভাবিক ভাবে বলে..

“কোনো অ’ঙ্গা’ত ক’ঙ্কা’লের একটুকরো হা’ড্ডি দ্বারা একজন মানুষের সম্পূর্ণ অ’স্তি’ত্ব বের করা যায় আর তুমি একটা মেয়ের চেহারার একপাশ দেখে তার খোজ এনে দিতে পারবে না বলছো!”

তীব্রের শীতল কন্ঠে ধ’ম’কে’র সুর স্পষ্ট বুঝতে পেরে শফিক ওর জি’হ্বা’র অ’গ্র’ভাগ দিয়ে শুকনো ঠোঁট দ্বয় ভিজিয়ে নিয়ে বলে…

“প পা পারবো বস, আমি আজই মেয়েটির….

শফিক সম্পূর্ণ কথা শে’ষ করার পূর্বেই তীব্র শফিকের দিকে গা’ন তা’ক করে বলে…

“ভাবী বলবি, ভা বী… আর একবার যদি তোর মুখ থেকে ওকে উদ্দেশ্য করে মেয়েটি শব্দ শুনেছি তখন তুই আর ক্ষ’মা চাওয়ার জন্যও বে’চে থাকবি না এই গা’নে’র একটা বু’লে’ট তোর মাথার এপাশ থেকে ঢু’কে ওপাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে তোকে চি’র নিদ্রায় আচ্ছন্ন করে দিবে”

শফিক নিজেকে ধা’ত’স্ত করে বলে…
“ভাবীর সম্পূর্ণ খো’জ খুব দ্রুতই বের করে আনবো বস”

তীব্র হাত উঠিয়ে ইশারায় শফিককে যেতে বললে শফিক দ্রুত পায়ে স্থান ত্য’গ করে। সোফার সাথে মাথা এলিয়ে দিয়ে কপালের উপর ডান হাত ভা’জ করে রেখে চোখ জোরা বু’ঝে ফে’লে।
——————-
সন্ধ্যার একটু পর…
তীব্র কিছুসময় পূর্বেই সকালে মন্ত্রীর সাথে করে আসা ডি’ল এর কাজটি শে’ষ করে বাসায় ফিরেছে। প্রায় ১৫ বি’ঘা জমির কাগজ হা’সি’ল করে এনেছে সে, কাগজের মূল কপি নিজের কাছে রেখে সেইম ভাবে আরেক কপি বের করে জিমেইল এর মাধ্যমে মন্ত্রীর নিকট পাঠিয়ে দেয় তীব্র। সম্পূর্ণ টাকা পেমেন্ট না করা পর্যন্ত তীব্র মূল কপি কাওকে দেয় না। আপাতত ডি’ল’টি যে তীব্র সম্পন্ন করতে পেরেছে সেটা বুঝাতেই ক’পি কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছে মন্ত্রীর নিকট।

সেইমূহূর্তে শফিক রহমান মন্ঞ্জিল এর মূল দরজা পেরিয়ে ড্রয়িং প্রবেশ করে, তীব্রকে শোফার উপর বসে কাজে ম’গ্ন থাকতে দেখে। ধীরপায়ে তীব্রের হাতে ডান পার্শে এসে দাঁড়িয়ে পরে। শফিককের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তীব্র একপলক শফিকের দিকে তাকিয়ে পরপরই দৃষ্টি ল্যপটপের উপর রেখে বলে….

“কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছো?”

শফিক “হ্যা” সূচক জবাব দেয়। তীব্র ল্যপটপ বন্ধ করে বুকের সাথে দু’হাত ভা’জ করে শফিকের দিকে আবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, আর বলে…

“বলো তাহলে”

“ভাবীর নামঃ- নামিয়া ইসলাম নূরা।
ধানমন্ডির একটা ক্যফেতে ও’য়ে’টা’র এর কাজ করছে ২মাস হলো। বাবা-মা, পরিবার-পরিজন বলতে কেও নেই। ধানমন্ডিতে একটা লেডিস হোস্টেলে থাকে। প্রতি সোমবার করে আমাদের এদিকে অর্থাৎ উত্তরাতে আসে, রাস্তায় থাকা অ’স’হা’য় বাচ্চাদের একত্র করে তাদের মাঝে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার, পোশাক বিতরণ করে।”

এতোটুকু বলে শফিক থেমে যায়, তীব্র ওর কপালে একটা আঙুল ঠেকিয়ে হালকা ঘ’ষা দিতে থাকে। তারপর কিছু একটা ভেবে শফিককে উদ্দেশ্য করে বলে…

“উত্তরা শহর থেকে কিছুটা দূরে দক্ষিণ পার্শে অনেক আগে একটা পুরোনো একতলার বাড়ি কিনে নিয়েছিলাম আমি। আমি তোকে লোকেশন পাঠিয়ে দিবো, দুদিনের মধ্যে উত্তরার অ’লি-গ’লি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকা সকল অ’স’হা’য় অ’না’থ বাচ্চাদের একত্র করে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে। আমার অফিসে কর্মরত সিনিয়র বয়সের ২জনকে বাচ্চাদের দায়িত্ব বুঝে দিবে। এখানে যেমন বেতন পেতো ওরা তার থেকে এক গুণ বাড়িয়ে বেতন দেওয়া হবে সেটাও বলে দিবে। ৬-৭জন মহিলা আর ২-৩ জন প্রাপ্ত বয়সের পুরুষ রাখবে বাচ্চাদের খেয়াল রাখার জন্য, দুজন সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থাও করবে।”

তীব্রের এমন উদার মানসিকতা দেখে শফিকের কপালে কয়েকটা ভা’জ স্পষ্ট হয়। পরমুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে…

“ঠিক আছে বস”

“হুম, এখন যে’তে পারো তুমি”

শফিক স্থান ত্য’গ করে।

#চলবে….
#চলবে…..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here