তোমাতেই পরিপূর্ণ পর্ব -২১+২২

#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২১.
~
সাতদিন পর আজ আবার মাহি আর মিথিকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়া হলো। আজ তাদের ব্যান্ডেজ খোলা হবে। মাহি ভীষণ ভয় পাচ্ছে সাথে মিথিও। আতাউর সাহেব একাই এলেন তাদের নিয়ে। ওয়েটিং রুমে ওয়েট করতেই সেখানে নেহা আর নৈরিথও এল। নৈরিথকে দেখেও মিথি না দেখার ভান করে বসে রইল। নৈরিথও ইগনোর করলো তাকে। নেহা মিথির পাশে বসলো। নেহার হাত চাপড়ে মিথি তখন ফিসফিসিয়ে বললো,

‘দোস্ত, আমার না ভীষণ ভয় করছে।’

নেহা তাকে আশ্বাস দিয়ে বললো,

‘আরে এত ভয় পাস না। দেখবি একটুও ব্যাথা পাবি না।’

মিথি ঠোঁট উল্টে বসে রইল। অপারেশনের দিন ভাইয়ের টেনশনে ডর ভয় কিছুই ফিল করেনি সে। তবে আজ ভয় করছে। ভয়ে রীতিমতো পেট কামড়াচ্ছে তার। নৈরিথ আড় চোখে একবার মিথির চুপসানো মুখখানা দেখল। তখন তার ইচ্ছে করছিল একবার মিথির পাশে বসে তাকে আশ্বস্ত করবে। কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা কোনোভাবেই পসিবল না। তাই সে তার ইচ্ছটাকে নিজের মনের মধ্যেই হজম করে নিল। নৈরিথ এবার মাহির দিকে তাকাল। ছেলেটা খুব মনোযোগ দিয়ে মোবাইলে গেইমস খেলছে। নৈরিথ মুচকি হেসে বললো,

‘মাহি তোমার কি ভয় করছে?’

মাহি নৈরিথের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,

‘কই না তো।’

নৈরিথ হেসে বললো,

‘এই তো, এই না হলো সাহসী ছেলে। কোনো কিছুকে ভয় পায় না। সাচ অ্যা ব্রেইভ বয়।’

কথাটা বলে নৈরিথ আবারও একবার মিথির দিকে তাকাল। মিথি ব্রু কুঁচকে নৈরিথের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।

কিছুক্ষন পর,

একজন নার্স এসে মাহিকে কেবিনে নিয়ে গেল। সাথে আতাউর সাহেবও ভেতরে গেলেন। ওয়েটিং রুমে মিথি, নৈরিথ আর নেহা বসে আছে। মিথির ভয়টা ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে চলছে। চোখ মুখ মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ন্যায় কালো। তার ভয়টা তখন আরো বেড়ে গেল যখন ভেতর থেকে মাহির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল সে। অস্থির হয়ে কেবিনের কাছে গেল সে। পর্দাটা হালকা একটু সরিয়ে দেখল মাহির পেটের সেলাইটা ড্রেসিং করছে কি একটা মেডিসিন দিয়ে। নিশ্চয়ই ও খুব ব্যথা পাচ্ছে। চোখ থেকে অজস্র জল গড়িয়ে পড়ছে মাহির। মিথি অসহায় চোখে কিছুক্ষণ ভাইকে দেখে আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো। মিথির এত অস্থিরতা দেখে নৈরিথ এবার ক্ষীণ সুরে বললো,

‘ভয় পেও না, এত ব্যথা পাওয়া যায় না। মাহি ছোট বলে এত কাঁদছে।’

মিথি কাঁদো কাঁদো মুখে নৈরিথের দিকে তাকায়। নৈরিথ মুচকি হেসে বলে,

‘ইশ রে মুখটা পুরো কিসমিসের মতো চুপসে গেছে। এত ভীতু হলে কি করে হবে?’

এইটুকু বলে সে মিথির কিছুটা কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,

‘আমার বাচ্চার মা হওয়ার না খুব শখ। মা হতে গেলে কিন্তু এর থেকেও বেশি ব্যথা সহ্য করতে হয়, জানো নিশ্চয়ই?’

মিথি বড়ো বড়ো চোখে নৈরিথের দিকে তাকাল। নৈরিথ মুচকি হেসে দূরে সরে বসলো। নেহা বললো,

‘এই ভাই, মিথির কানে কানে কি বলেছিস আমাকেও বল?’

নৈরিথ মোবাইলের উপর দৃষ্টি রেখে বললো,

‘মিথিকেই জিগ্যেস কর।’

নেহা মিথির দিকে তাকাতেই মিথি চেতে উঠে বললো,

‘কিচ্ছু বলেনি। একটাও প্রশ্ন করবি না। এমনিতেই আমি ভয়ে শেষ আর এখানে দুই ভাই বোন মিলে ঢং শুরু করে দিয়েছে।’

নেহা ঠোঁট গুঁজ করে বসলো। মিথিও অবচেতন মন নিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। একসময় তার ভাইয়ের কান্না থামল। তাকে নিয়ে আতাউর সাহেব বের হলেন। ছেলেটার চোখ মুখ ভয়ানক লাল হয়ে আছে। মিথি তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে ভাইকে আদর করে বললো,

‘খুব ব্যথা পেয়েছিস?’

‘হুম।’

মিথি মাহির গালে চুমু খেয়ে বললো,

‘থাক বাবু কান্না করে না। একটু পরই সব ব্যথা চলে যাবে।’

এবার তো মিথির পালা। কিন্তু সে তো তার ভাইয়ের সামনে কেবিনে যেতেও পারছে না। এমনিতেই তার ভাই তাকে সন্দেহ করছে। এখন যদি তার সামনে সে কেবিনে ঢোকে তবে নির্ঘাত সে বুঝে ফেলবে। কিছু একটা করতে হবে। মিথি একটা বুদ্ধি কষল। বাবাকে বললো,

‘বাবা, তুমি মাহিকে নিয়ে বাসায় চলে যাও। আমি নেহাকে নিয়ে একটু শপিং এ যাব। কিছু জিনিস কেনার আছে।’

এই বলে সে বাবাকে ইশারা দিল। কিন্ত আতাউর সাহেব উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,

‘কিন্তু মা, তুই একা কি করে..?’

মিথি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,

‘পারবো বাবা। আর আমি একা কোথায়, নেহা আর নৈরিথ স্যার তো আছেই। আমি ঠিক সামলে নিব। তুমি বিলটা পে করে ভাইকে নিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে যাও।’

মিথির সাথে নৈরিথ আর নেহাও সুর মেলাল। আতাউর সাহেবের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ছেলেকে নিয়ে একাই বাড়ি ফিরলেন। মিথির ভয়টা আবারও এক লাফে আকাশ ছুঁল। নেহা তার সাথে কেবিনের ঢুকলো। পেটের উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে ডক্টর প্রথম ব্যান্ডেজটা খুললেন। তারপর একটা তুলোতে কিছু ঔষধ নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগাতেই মিথির মনে হলো সেখানে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। প্রচন্ড জ্বলে উঠে মিথির পেট। সে থাকতে না পেরে এক হাতে নেহার হাত চেপে ধরে অন্য হাতে বেড শিটটা খামছে ধরে। কিন্তু জ্বলা কমছে না। ডক্টর যতই ঔষধ লাগাচ্ছে ততই তার জ্বালা বাড়ছে। এক পর্যায়ে মিথি চিৎকার দিয়ে উঠে। মিথির চিৎকার বাইরে থেকে নৈরিথও শুনে। সে বিচলিত হয়ে পড়ে। মিথি কেঁদে কেঁদে বলে,

‘এটা কি লাগিয়েছেন ডক্টর। খুব জ্বলছে।’

ডক্টর বললো,

‘এখন একটু কষ্ট করে সহ্য করে নিন। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।’

কিন্তু বললেই কি আর সব সহ্য করা যায়? মিথিও এবার তার ভাইয়ের মতো কান্না আরাম্ভ করে। নৈরিথ বাইরে আর ওয়েট করতে পারে না। মিথির কান্নার শব্দগুলো বুকে গিয়ে বিঁধছে তার। সে হুট করেই কেবিনে ঢুকে পড়ে। প্রথমেই মিথির উন্মুক্ত উধর দেখে ইতস্তত বোধ করলেও পরক্ষণেই মিথির মুখ দেখে সে ডক্টরকে বলে উঠে,

‘ডক্টর কি হয়েছে? সামান্য ড্রেসিং এ পেশেন্ট এইভাবে কাঁদছে কেন?’

নৈরিথের কন্ঠস্বর পেতেই মিথি ফট করে চোখ মেলে তাকায়। কিছুক্ষণের জন্য ব্যথা ভুলে তার মনে পড়ে তার কামিজের কথা। যেটা উপরে উঠানো আর যার ফলে তার সমস্ত পেট দৃশ্যমান। সঙ্গে সঙ্গে একটানে কামিজ নামিয়ে ফেলে সে।

ডক্টর তখন ব্রু কুঁচকে মিথির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘কি হলো? ড্রেসিং করবেন না?’

মিথি কিছু জবাব না দিলেও নৈরিথ বুঝলো মিথি যে তাকে দেখে আনকমফোরটেবল ফিল করছে। তাই সে আর কিছু না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। নৈরিথ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মিথি ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে কামিজটা আবার উপরে তুললো। তারপর বললো,

‘নিন ড্রেসিং করুন।’

পরেরবার মিথি ব্যথা পেলেও আর কান্নাকাটি করলো না। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিল সবটা।

ড্রেসিং কমপ্লিট। মিথিকে নিয়ে আস্তে আস্তে নেহা বেরিয়ে এল। নৈরিথ তার কাছে গিয়ে বললো,

‘ঠিক আছো?’

মিথি মাথা নাড়াল। নৈরিথ বললো,

‘ঠিক আছে। চল তবে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেই।’

মিথিকে নিয়ে নৈরিথ আর নেহা তার বাড়িতে গেল। মাহি আর মিথি দুজনের শরীরই দুর্বল হয়ে পড়েছে। মাহি এসেই ঘুম। মিথিও ধীরে ধীরে নিজের রুমে গেল। আমিরা বেগম মিথির হাত মুখ মুছিয়ে দিলেন। তারপর ড্রেসটা চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বললেন,

‘কিছুক্ষণ রেস্ট নে। দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

মিথি বাধ্য মেয়ের মতো বিছানায় শুয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দিল তার চোখে।
.
.
আতাউর সাহেব বললেন,

‘তা বাবা, কথা হয়েছে তোমার বাবা মার সঙ্গে।’

নৈরিথ বিরস মুখে বললো,

‘মা আগে থেকেই জানে। আর যেহেতু বিয়েতে একজন গার্জিয়ানের প্রয়োজন সেহেতু আমার মনে হয় আমার মা’ই আমার গার্জিয়ান হিসেবে যথেষ্ট। কিন্তু আমি কোনোভাবেই ঐ বাবা নামক সিল মারা পুরুষটাকে আমি এই ব্যাপারে ইনভলভ করতে চাই না।’

আতাউর সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন,

‘ঠিক আছে। তবে তোমার মাকে নিয়েই আমাদের বাড়িতে এসো। আর তোমার মায়ের সাথে আজ আমরাও কথা বলবো। শুভ কাজ যত শীঘ্র সম্পন্ন করা যায় ততই ভালো।’

নৈরিথ তৃপ্তির নিশ্বাস ছেড়ে বললো,

‘ঠিক আছে আংকেল, এখন তাহলে আমরা আসি?’

নেহা, নৈরিথ মিথির বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ল। নেহার খুশি দেখে কে? সে তো আগে থেকেই সবকিছু জানে। কিন্তু ভাই না করাতে মিথিকে কিচ্ছু বলেনি সে। মিথির জন্য একটা বিগ সারপ্রাইজ থাকবে। মিথি যখন শুনবে ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে, তখন সে কি খুশিটাই না হবে। নেহার তো ভাবতেই আনন্দ লাগছে। সে অস্থির হয়ে নৈরিথকে বললো,

‘ভাই, সবই তো ঠিক আছে। তবে তুই ওকে প্রপোজ করবি কবে বলতো? একেবারে বিয়ের পর?’

নৈরিথ বাঁকা হেসে বললো,

‘সময় হোক তারপর।’

নেহা ভেংচি কেটে বললো,

‘এ তোমার সময় হতে হতে তুমি বুড়োই হয়ে যাবা।’

নৈরিথ হেসে বলে,

‘সমস্যা নেই। তখন না হয় বুড়ি বুড়োর প্রেম দেখবি।’
#তোমাতেই_পরিপূর্ণ
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
২২.
~
আমিরা বেগম সকাল থেকে বেজার হয়ে বসে আছেন। বাড়ির সকলের সাথে সাথে মিথিও ব্যাপারটা খেয়াল করলো। কিছু একটা নিয়ে তার মার মন খারাপ। কিন্তু সেটা কি এটাই কেউ বুঝতে পারছে না। আর আমিরা বেগমও কিছু বলছেন না।

দুপুরের রান্না চলছে। মিথি রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। অনেকক্ষণ ধরে মাকে খেয়াল করছে। কিছু জিগ্যেস করতে গিয়েও করছে না। মা যদি আবার রেগে যায়! আমিরা বেগম ভাতের মার গাললেন। একটা চুলায় ডাল আর অন্যটাতে তরকারি বসালেন। মিথি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। ভীষণ বিরক্ত হয়ে আমিরা বেগম এবার মেয়ের দিকে তাকালেন। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন,

‘কি হয়েছে তোর? এখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’

মিথি শুকনো ঠোঁটে হাসল। বললো,

‘মা, একটা কথা জিগ্যেস করবো?’

আমিরা বেগমের তেল চকচকে কপালের উপর সমান্তরাল ভাজ পড়ল। সেই ভাজটাকে আরো গভীর করে তিনি বললেন,

‘কি কথা?’

মিথি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ছোট্ট একটা ঢোক গিলে বললো,

‘মা, তোমার কি হয়েছে? সকাল থেকেই এমন মন মরা হয়ে আছো কেন? কোনো সমস্যা?’

আমিরা বেগম তিক্ত সুরে বললেন,

‘না কোনো সমস্যা না। আর আমি ঠিক আছি। তুই তোর রুমে যা।’

মিথি সহজে মেনে নিতে পারল না। সে তার মায়ের কাছে এসে দাঁড়াল। ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো বললো,

‘বল না মা কি হয়েছে?’

আমিরা বেগম কাঠকাঠ গলায় জবাব দিলেন,

‘বললাম তো কিছু হয়নি। যা তো এখান থেকে, একদম আমাকে বিরক্ত করবি না।’

মিথি জায়গা থেকে নড়ল না। উল্টো মাকে জড়িয়ে ধরলো। মায়ের ঘাড়ে তার থুতনি ঠেকিয়ে বললো,

‘উঁহু, না বললে এক পাও নড়বো না। আগে বলো কি হয়েছে তোমার? বাবাও সকালে জিগ্যেস করেছিল কিন্তু তুমি বাবার কথাও ইগনোর করেছো। এখন তোমাকে বলতেই হবে। না বলা পর্যন্ত আমি তোমাকে ছাড়ব না।’

আমিরা বেগম চোখ বুজে জোরে একটা নিশ্বাস নিলেন। বললেন,

‘আজ সকালে নৈরিথের মার সাথে আমার কথা হয়েছিল।’

মিথি কিছুটা অবাক হয়ে মার দিকে ঘুরে তাকাল। বললো,

‘কি কথা?’

আমিরা বেগম তাচ্ছিল্যের সুরে হাসলেন। তারপর বললেন,

‘এতদিন ও পাগল ছিল তোকে নাকি তার ছেলের বউ বানাবে। কিন্তু আজ ফোন দিয়ে বলেছে ও নাকি নৈরিথকে এখনই বিয়ে দিবে না। ওকে নাকি দেশের বাইরে পাঠাবে।(খানিক চুপ থেকে) আমি জানি ও এখন কেন এসব বলছে। তোর অপারেশনের কথা শুনেই ও পিছিয়ে যায়। এখন তো আর সরাসরি বলতে পারছে না তাই হয়তো বাহানা দিচ্ছে।’

আমিরা বেগম ঠোঁট গুঁজ করলেন। চোখ মুখ বিষন্ন তার। মিথি হাসল। বললো,

‘মা, কষ্ট পাচ্ছো কেন? এটা তো হওয়ারই ছিল। শুধু আন্টি কেন, ইনফেক্ট এখন কোনো মানুষই আমার মতো অসুস্থ মেয়েকে তার বাড়ির বউ বানাতে চাইবে না। কে যেচে পড়ে একটা অসুস্থ মেয়ের দায় ভার নিতে চাইবে বলতো? আর তুমি তো জানোই রাদিত স্যারকে আমিও মেনে নিতে পারছিলাম না। এখন যখন ওদের তরফ থেকেই না হয়েছে তখন তো ভালোই হয়েছে। আমি খুশি হয়েছি, খুব খুশি হয়েছি।’

আমিরা বেগম মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘বিয়ে হবে তোর। নৈরিথ তোকে বিয়ে করবে।’

মিথি হাসে। বলে,

‘উনি তো আমাকে আগেই পছন্দ করতেন না। এখন আবার আমি অসুস্থ। আমাকে বিয়ে করা মানে তো মাথায় ইয়া বড় এক বোঝা তুলে নেওয়া। কোনো দরকার আছে বলো অযথা এক বোঝা নিয়ে সারাজীবন পাড় করা।’

আমিরা বেগম মুচকি হাসলেন। এখনই কিছু তিনি মিথিকে বলবেন না। তাই তিনি প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন,

‘সকালের ঔষধ খেয়েছিস?’

‘হুম খেয়েছি।’

‘ঠিক আছে তাহলে এখন গিয়ে গোসলটা সেরে নে।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’

দুপুরের তিক্ত রোদ সবেই তার উত্তাপের পাট চুকিয়েছে। ধীরে ধীরে হলুদ রোদ কমলা রোদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। চারদিকে এখন ভ্যাপসা গরম। তার সাথে উষ্ণ বাতাস। মিথি ঘুমাচ্ছে। ঘুমের মাঝে হয়তো কিছু স্বপ্নও দেখছে। বারবার অযথায় ব্রু কুঁচকাচ্ছে। বালিশের নিচে পড়ে থাকা যন্ত্রটা হঠাৎ তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। মুঠোফোনটা ভো ভো করে বাজতে থাকে। মিথির মাথাটাও সাথে সাথে ভো ভো করতে থাকে। মেজাজ বিগড়ে যায় তার। কোন ভীন গ্রহের প্রাণীটা এসময় তাকে কল দিচ্ছে কে জানে। বিরক্ত আর রাগে উঠে বসল মিথি। ফোনটা বালিশের নিচ থেকে বের করে দেখল সেই ভীন গ্রহের প্রাণীটা আর কেউ না তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী নেহা। মিথি প্রচন্ড রাগ নিয়ে কলটা রিসিভ করে। কিছু বলার আগেই নেহার অস্থির কন্ঠখানা শুনতে পায়,

‘দোস্ত, জানিস কি হয়েছে?’

মিথি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘না বললে জানব কিভাবে?’

‘ভাইয়ের তো বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।’

মিথি যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে চেঁচিয়ে উঠে বললো,

‘কিহহহ?’

নেহার ঠোঁট চেপে হাসে। কন্ঠস্বর সিরিয়াস করে বলে,

‘হুম। ভাইয়ের অফিসের এক কলিগের সাথে ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।’

মিথি কেঁদে ফেলে। প্রচন্ড কান্না পায় তার। বুক ফেটে যাচ্ছে। কোনো ভাবেই এই কথাটা মেনে নিতে পারছে না সে। সে ফুঁপিয়ে উঠে বলে,

‘এসব কি বলছিস তুই? এইভাবে কিভাবে নৈরিথের বিয়ে ঠিক হয়ে যেতে পারে? তুই কি আমার সাথে মজা করছিস?’

নেহা মেকি কান্নার সুরে বললো,

‘না রে দোস্ত, আমি সিরিয়াস।’

মিথি কিছুক্ষণের জন্য থ মেরে বসে রইল। বুকের ভেতরকার তীব্র ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছে সে। নেহা বুঝল এবার বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। তাই সে মৃদু সুরে বললো,

‘দোস্ত, তুই কি কাঁদছিস?’

মিথির কানে হয়তো কথাটা পৌঁছায়নি। নেহা মিথির কোনো উত্তর না পেয়ে বললো,

‘আরে বান্ধবী তুই এত সিরিয়াস হচ্ছিস কেন? আমি তো তোর সাথে মজা করেছি।’

মিথি কানে কথাটা পৌঁছাতেই সে রাগে চেঁচিয়ে উঠল।

‘কুত্তি, তোকে আমি খুন করবো। জানে মেরে ফেলবো, একবার খালি পায় তোকে।’

রাগে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে মিথি। নেহা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,

‘তোমার হাতে খুন হতেও আমি রাজি মেরি ভাবিজান। আর শুনো তোমার জন্য একটা দারুণ সারপ্রাইজ আছে। জলদি জলদি রেডি হও সেই সারপ্রাইজের জন্য। এখন রাখছি, টা টা।’

কল কেটে দিল নেহা। মিথির তো সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। নেহা কোন সারপ্রাইজের কথা বলছে? এই মেয়ের মাথায় কি চলছে কে জানে? মিথি বুঝে উঠতে পারেনা। তবে মন হালকা হয় তার। আর যায় হোক নৈরিথের বিয়ের কথাটা তো মিথ্যে। এটাতেই শান্তি।
.
.
পরদিন সকালে ঘুম থেকেই উঠে দেখল তার মা খুব ব্যস্ত। অনেক কিছু রান্নার তোড়জোড় করছেন তিনি। কিন্তু কেন?
মিথি রান্নাঘরের সামনে গিয়ে মাকে জিগ্যেস করে,

‘মা, আজ কি কোনো মেহমান আসবে? হঠাৎ এত রান্না-
বান্না?

আমিরা বেগম মুচকি হেসে বললেন,

‘হ্যাঁ, আজ কিছু স্পেশাল মানুষজন আসবেন।’

মিথি অবাক হয়ে বললো,

‘স্পেশাল মানুষ? কারা?’

‘সেটা তো সময় হলে দেখতেই পাবি। এখন শোন তো মা, টেবিলে খাবার দেওয়া আছে আগে গিয়ে খেয়ে নে। তারপর গিয়ে গোসল করবি। আর তারপর আমি আমার মা’টা কে সুন্দর করে সাজিয়ে দেব।’

মিথি আরো এক দফা অবাক হলো। কৌতুহল নিয়ে বললো,

‘মা, তুমি আমাকে সাজিয়ে দেবে? কিন্তু কেন?’

আমিরা বেগম ব্রু কুঁচকে বললেন,

‘এত প্রশ্ন না করে যা যা করতে বলেছি তাই তাই কর।’

মিথি বোকা বোকা চোখে কিছুক্ষণ মায়ের দিকে চেয়ে থেকে খাবার টেবিলে গেল। কিছু একটা চলছে তার অগোচরে। কাল নেহাও কি সারপ্রাইজের কথা বলছিল, আজ মা আবার বলছে স্পেশাল মেহমান আসবে। ব্যাপার কি? কি চলছে ওদের মাথায়?

চলছে..
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here