তোমাতে,পর্ব:১৪+১৫

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ১৪/

লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে হাঁটতে গিয়ে রাস্তা গুলিয়ে ফেললাম। সিড়ির মাথায় বিভ্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। এখান থেকে দুদিকে রাস্তা গেছে। একটা ডানদিক যেটা দিয়ে মাত্র আসলাম। আরেকটা বাম। ঐদিকে যাব কিনা তা নিয়ে কনফিউশনে ভুগছি। বাম দিকের রাস্তায় শুধু রুম চোখে পরছে। উড়নার কোণ মুঠোয় চেপে ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ ভাবলাম। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে বিভ্রান্ত আমি সেদিকে পা বাড়াই, উপর থেকে কণ্ঠ এল, “কোথায় যাও?”

চমকে উপরে তাকাই। ইফাজ ট্রাউজারের পকেটে হাত রেখে সিড়ির ওপর দাঁড়িয়ে। সিল্কি চুলগুলো এলোমেলোভাবে কপাল ছুয়ে। হাত দিয়ে ডানদিক দেখিয়ে বিভ্রান্ত কণ্ঠে বললাম, “রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছি।”

সে একগাল হাসে। মৃদুতালে সেই অবস্থায় নেমে আসে। আমি বিভ্রান্ত হয়ে তাকিয়ে থাকি। সামনে এসে বলল, “সাহায্য লাগবে?”

বিরক্তি চেপে সম্মতি দিলাম। ইফাজ আগেকার আমলের সেবকের মতো ডানদিক দেখাল। সেদিকে একটু হেলে বলল, “ঐদিকে চলুন রানী সাহেবা।”

নিরুত্তর কথাটি মেনে নেই। অস্বস্থি লাগে খুব। ছেলেটা নিশব্দে হাঁটছে। কখনো চুলে আঙুল বুলিয়ে নিচ্ছে। কখনো আড়চোখে, কখনো সরাসরি তাকাচ্ছে। চোখ চোখ পরলে সরল হাসিতে মুখ ঝলমলিয়ে উঠছে।

“তুমি এখন আর আমার মেসেজের উত্তর দাও না!”

মনে মনে এর ভয়ই পাচ্ছিলাম। সামনে তাকিয়ে গলা খাকারি দিলাম, বললাম, “অনলাইনে ঢু মারা হয় না।”

ইফাজ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। হয়ত আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি অস্বস্তিতে কাটা হয়ে সামনে তাকিয়ে থাকি। যেন সাথে কেউ নেই! থাকলেও অদৃশ্য। যাকে আমি দেখছি না।

“তোমাকে আমি গতকালও একটিভ দেখেছি।”

উনার দিকে তাকালাম। বিরক্তি উপচে পরতে চাইছে। এসময় কিছু সম্মিলিত কণ্ঠের সুর ভেসে আসল। সামনে তাকালাম। ড্রয়িং রুমের আগের রুমটায় তারুণ্যের বিশাল জটলা। তাদের দৃষ্টি আমাদের ওপর। জটলার মধ্যমনি জিসান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে। বিরক্ত কণ্ঠে বলেন, “কই গেছিলি তুই?”

ওদের মুখভঙ্গিতে বিস্মিত হয়ে উত্তর দিতে ভুলে গেলাম। ইফাজ বলল, “ও রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল।”

জিসান ভাই কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। আমি চুপসে যাই। তাকিয়ে থাকি উনার দিকে। ওদের মতো তিনিও কি ভুল ভাবছেন? উনি কিছুক্ষণ নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। রূক্ষ্ম দৃষ্টি ধীরে ধীরে নম্র হল। বললেন, “যা ড্রয়িং রুমে যা।”

নেহা আপুর ছোট বোনটা লাফিয়ে উঠে। জটলা থেকে উঠে আসে। বলে, “না ভাবীর সাথে আমাদের পরিচয় হয়নি।”

জটলায় আবার একই ধরনের শোর উঠল। আমি একবার জিসান ভাই আরেকবার ইফাজের মুখের দিকে তাকাই। জিসান ভাই ত্যক্ত মুখে বসে। ইফাজের মাথা নিচু। মুখভঙ্গি দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটা এগিয়ে এল। আমার একহাত দুহাতে ধরে বলল, “নাম কি ভাবী?”

আমি বিভ্রান্ত হলাম। এ মেয়েটি আমাকে কোন হিসেবে ভাবী ডাকছে? এই মুহূর্তে একটু আগের শোরের ওপর নির্ভর করে? নাকি তখনকার লজ্জাজনক পরিস্থিতিটা মনে রেখে? আমি এখন সাড়া দিব? নাকি দিব না! উঁউঁ মাথার ভেতর এত প্রশ্নের ভিড়ে পাগল লাগছে নিজেকে। আমাকে নিরুত্তর দেখে মেয়েটি একবার ইফাজের দিকে তাকায়। একবার পেছনে। প্রশ্ন করে, “ভাবী কি কথা বলতে পারে না?”

জিসান ভাই নিরুত্তর ফোন ঘাটতে থাকেন। আমি অসহায় মুখে বলি, “এই না আমি কথা বলতে পারি।”

মেয়েটি চোখ বড় বড় করে তাকায়, “তোমার কণ্ঠ এত পিচ্চি পিচ্চি! কিসে পড়ো? আমার থেকে ছোট?” কুটিল হেসে, “ছোট হলে ভাবী ডাকা বাদ। অনলি ফাইফরমাশ চলবে!”

আমি থতমত হলাম। বললাম, “এবার এইচএসসি দিয়েছি।”

মেয়েটা বিস্মিত চোখে তাকায়। জটলায় হাসির রোল পরে। ইফাজ ইতিমধ্যে জিসান ভাইয়ের পাশে জায়গা করে নিয়েছে। একটা কিশোর কণ্ঠ আসে, “ছোট তোর ফাই ফরামাশ গেল!”

আবার হাসি। আমি বড় বড় চোখে শুধু দেখছি। মেয়েটা বলল, “সেমব্যাচ তাহলে? ঝামেলা! কি ডাকব? নাম ধরে?”

সম্মতি দিলাম। মেয়েটা বলল, “নাম কি?”

“ঝুমুর। তোমার?”

একগাল হেসে, “নিকিতা। কই চান্স পেয়েছ?”

“মেডিক্যালে।”

নিকিতার চোখ আবার বড় বড় হয়, “এখন এটা বলো না জিসান ভাইয়ের মেডিক্যালেই চান্স পেয়েছ।”

ফিক করে হেসে ফেলি। নিকিতা বিস্মিত কণ্ঠে বলে, “অর্থাৎ সেইখানেই চান্স হয়েছে?”

“হ্যা। কেন? তুমিও চান্স পেয়েছ?”

মেয়েটা সম্মতি দিল। ওদের সাথে পরিচয় করাল। আমি লুকিয়ে আরেকবার জিসান ভাইয়ের দিকে তাকাই। চোখাচোখি হয়। তিনি ছোট্ট শ্বাস ফেলেন।

বিয়ে ঠিক হলো। সাতদিন পর বিয়ে। আমাদের সবার মধ্যে এখুনি বিয়ে বিয়ে আমেজ এসে গেছে। আপু, মামী কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফিরতি পথে আমি নিসাদের বাসায় নেমে গেলাম। মামী বারণ করল। মানলাম না। নিসাদের বাসার কলিং বেল চাপব। ফোনে কল এল। দেখি জিসান ভাইয়ের কল। কলিংবেলের চেপে ফোন ধরলাম।

“পৌছে গেছিস?”

“না। নিসাদের বাসায় এসেছি।”

“ওখানে কেন আবার!”

“ওর খবর নিতে এলাম। কতদিন দেখা হয় না। ভাইয়ার বিয়ের কথা বলব না?”

“আজকেই কিন্তু বাসায় ফিরবি!”

মৃদু হাসি। এসময় সামনের দরজাটা খুলে যায়। নিসা আমায় দেখে মৃদু চেঁচিয়ে উঠল। জড়িয়ে ধরল। ফোনটা মুখের সামনে এনে বললাম,“পরে কল করছি।”

ওপাশ থেকে তিনি কিছু বলছিলেন। কল কেটে দেই। নিসা বাইরে রেখেই আমার হাত ধরে ঘুরতে থাকে খুশিতে। বললাম, “ভেতরে তো বসা।”

“ও হ্যা।”

আন্টি খোজ-খবর নিলেন। নিসা ডিরেক্ট ওর রুমে এনে বসাল। দুজনে কথার ঝুলি মেলে বসি। নিসা একসময় ঠোঁট ফুলিয়ে অভিযোগ করে, “রিলেশনে গিয়ে বদলে গেছিস ঝুম! এখন আর আমাকে পাত্তা দিস না।”

“মিথ্যে বলবি না। আমি গতকালও ফোন দিয়েছি তোকে পাইনি!”

নিসা গাল ফুলিয়ে রণচন্ডী রূপ ধারন করে। গল্প করতে করতে সময় গড়াল। আন্টি ছাড়লেন না। এতদিন পর আসায় বেশ কয়েকদিন রেখে তারপর ছাড়বেন। আমি থাকতে পারব। কিন্তু উনি? বাসায় ফোন করে জানালাম। সকালে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিতে বললাম।

তখন মধ্যরাত। বিছানার দুপাশে আমি আর নিসা ফোন ঘাটছি। মেসেঞ্জার আর মেসেজ টোন দুটাই একসাথে বেজে উঠল। নিসা নিজের ফোন থেকে মুখ তুলে তাকায়। আবার নিজেরটায় ধ্যান দেয়। নোটিফিকেশন বারে উঁকি দেই। ভ্রু কুচকে আসে। একটা ইফাজের আইডির। স্তুতি বাক্য লেখা! মুখটা আপনাই ভেটকে গেল। সেটাকে দ্রুত নোটিফিকেশন বার থেকে সরাই। আরেকটা জিসান ভাইয়ের। উনার মেসেজে কথার থেকে বকাঝকা বেশি। রাগ লাগল, লিখলাম, “এত বকছেন কেন? আজকে আপনার বাসায় আসার কথা? গতকালই বাসায় এসেছেন। আজকে দেখা হলো। এত হাইপার হওয়ার কি আছে? তাছাড়া কয়েকটা দিনই তো।”

মেসেজ সেন্ড করেছি অনেকক্ষণ। তিনি উত্তর দিচ্ছেন না। ফোনটা রেখে দিব এমন সময়ে উত্তত আসে, “কথা না কথার ব্যাপার না। ইচ্ছে হবে দেখা করব। তোর আমার জন্য সময় বের করতে হবে। না থাকলে খুচিয়ে খুচিয়ে বের করবি! এখুনি বাসায় আয়! তিনদিন কি একরাতও থাকতে হবে না!”

“পাগল হলেন? আন্টি সন্ধ্যে হয়েছে বলেই ছাড়ল না এখন ছাড়বে? তিনদিন মাত্র। মানিয়ে নেন।”

“অসম্ভব! গেলি কেন আজ?”

“আজব মানুষ আপনি! একবারও বলেছেন আজকে রাতে দেখা করবেন?”

“তুই বুঝে নিবি! ভদ্র মেয়েরা এতরাতে বাড়ির বাইরে থাকে?”

বিরক্ত হয়ে ফোনস্ক্রিনে তাকিয়ে থাকি, “কোথাকার ডায়লগ কোথায় আনছেন!”

“আমি পাগল হয়ে যাব ঝুম। আজকে থাকছিস থাক। কালকেই বাড়ি আসবি।”

“বাড়ি গেলেও তো দেখা হবে না।”

“তবু মনস্তাত্ত্বিক শান্তি থাকবে!”

মৃদু হাসলাম, “ইদানিং ক্ষেপাটে হয়ে গেছেন!”

তিনি এবার সাথে সাথে উত্তর দেন না। আমি ফোনস্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি। একবার মনে হলো হয়ত ঘুমিয়ে গেছেন। রেখে দেই। তবু উনার মেসেজগুলো বারবার পড়তে থাকি। একসময় ভয়েস মেসেজ আসল, “ভালবাসি ঝুম।”

এই রাতের বেলা আমার ইচ্ছে হলো এখুনি এই ক্ষেপাটে পুরুষকে বিয়ে করি! সারাক্ষণ ঘাপটি মেরে উনার বুকের কাছে লেপ্টে থাকি। হুটহাট ইচ্ছের তাড়নায় বশিভূত হয়ে উনাকে অজস্র উষ্ণ ছোয়ায় রাঙিয়ে দেই। আমাদের অসংখ্য রাত কাটুক গল্পে মজে। স্মৃতির পাতা জুড়ে থাকুক উনার আমার খুনসুটিময় একান্ত এক পৃথিবী। যার গল্পটা ভালবাসার। এবং শুধুই ভালবাসার। এই যে এখন এত ইচ্ছদের মধ্যে সবচেয়ে বাজেভাবে যেটা চাইছি সেটাই এই মুহূর্তে পূরণ হবার নয়। ইচ্ছেটা উনাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরি আর তোতাপাখির সুর অনুকরণ করে বলি, ‘এত পাগল কেন তুই?’

~চলবে❤️

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ১৫/

নিসাদের বাড়িতে তিনদিন থাকা হলো না। সকালে ড্রাইভার কাকা এসে বললেন মামী আমাকে বাসায় যেতে বলেছেন এবং কারনটা বিশেষ। আন্টি তা উড়িয়ে দেন। প্রবল আত্মবিশ্বাসে মামীকে কল করেন। আমার নাছোড়বান্দা মামীর সাথে পেরে উঠলেন না। আমি বিস্মিত হলাম। কি নিয়ে মামীর এত উচাটন? এই জরুরি ভিত্তিটা আমার কাছে ধোয়াশা লাগছে। খুজেও কোন কূল কিনারা পাচ্ছি না। ফোন করলাম জিসান ভাইকে। কলটা ব্যস্ত আসল। ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে বাসায় আসি। দরজা খোলাই ছিল। মুখোমুখী পরলাম মিশেল আপুর। আপু চিন্তিতমুখে বসে। বলল, “শুধু শুধু আসতে গেলি কেন?”

“মামীই তো বলল।”

আপু বিরক্ত দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। ভাবলাম নিত্যকার রুটিন। সেসবকে পাত্তা না দিয়ে মামীকে ডাকতে ডাকতে রান্নাঘরে আসি। মামী আঁচলে হাত মুছে পেছন ফিরেন, একগাল হেসে বলেন, “এলি তাহলে?”

রান্নাঘর জুড়ে এত আয়োজনের আভাস দেখে ভ্রু কুচকে গেল। বললাম, “আজকে কোন অনুষ্ঠান?”

মামী কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার থুতনি ধরে বললেন, “বাপের ধাত পেয়ে ভারী সুন্দর হয়েছিস তুই! বড় হচ্ছিস এখন ভাগ্য খারাপ না হলে সামনে আরও কত আয়োজন হবে!”

বিস্মিত হলাম, “কি বললে বুঝিনি।”

মামী ফিরে দাঁড়ান। মাছ ভাজায় মন দেন। আমি উৎসুক চোখে রেনু খালার দিকে তাকাই। ভ্রু উঁচিয়ে কারন জিজ্ঞেস করি। খালা মাথা নিচু করে নেন। আশ্চর্য হলাম। মামী আমার দিকে পিছু ফিরে থেকেই বলেন, “আজকে তোকে ইফাজের পরিবার দেখতে আসবে। বিছানার ওপর তোর পছন্দের শাড়ি রেখেছি। একা শাড়ি পড়তে পারিস না? নইলে মিশেলকে বলবি ও পড়িয়ে দিবে!”

বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। জবাব না পেয়ে মামী পিছু ফিরেন। বললাম, “মামী আমার আগে মিশেল আপু আছে! এত তাড়াহুড়ো কিসের? গতকালই না ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হলো? ভাইয়ার বিয়ে শেষ হলো না, আপুর বিয়ের নামধাম নেই কোথা থেকে আমার বিয়ে নিয়ে এসব উটকো ঝামেলা!?”

“উটকো বলছিস কেন? দেখতে আসা অর্থই কি বিয়ে? ওদের পছন্দ হলে খুব বেশি বাগদান হবে। নইলে মিশেলের আগে তোর বিয়ে হচ্ছে না। এমনি পছন্দ করে রাখা। দোষ কি?”

ত্যক্ত কণ্ঠে বলি, “তোমরাই না বলেছিলে পড়াশোনা শেষ করার আগে কোন বিয়ে নয়?”

“আরে বোকা, ওরা শুধু তোকে দেখে যাবে। পছন্দ হলে হয়ত আংটি পরাবে। ব্যাস এটুকুই। মিশেলের বিয়ের পরই তোর পালা…”

তীব্র রাগে আমার কান্না পেল। সে রাগ প্রকাশ করতে না পারায় সারা শরীর ছটফটিয়ে উঠল। মামীর দিকে একপলক তাকাই। মামীর হাসি দ্রুত মিলিয়ে যায়। হতভম্ব কণ্ঠে বলেন, “ওমা কাঁদছিস কেন? আমরা ভাবলাম ছেলে তোর পছন্দ। ওরা যখন রাতে বলল দেখতে আসবে তোর মামা তাই মানা করেনি!”

আমার সারা শরীর রাগে কাঁপছে। চোখের কোল থেকে এসময় বড় বিন্দুফোটা গাল গড়ায়। দুচোখ থেকেই পরতে থাকে। রোধ হয়ে আসা কণ্ঠে বললাম, “আমি একবারও বলেছি আমি ইফাজকে পছন্দ করি?”

মামী কথা গুলিয়ে ফেললেন। রেনু খালা নিশ্চুপ তাকিয়ে আছেন। মামী বিভ্রান্ত কণ্ঠে বললেন, “গতকাল ইফাজের মা..”

“উনার কথাটাই বড়? আমাকে প্রশ্ন করবে না? ওদের মানা করে দাও! আমার যাকে পছন্দ তার বাগদত্তাই হব। আমার অন্যের বাগ দত্তা হওয়ার বিন্দুমাত্র রুচি নেই!”

বিস্মিত কণ্ঠে, “সে কি! আসতে বলে এমন মুখের ওপর মানা করা যায়? দেখে যাক। পছন্দ হবে না মানা করে দিব।”

চেয়ার ছেড়ে উঠে পরি, “আমি আবারো বলছি অন্যের বাগদত্তা হতে পারব না। একেবারেই না।”

মামীকে বিস্মিত রেখে দ্রুত পায়ে রুমে আসলাম। রাগে খাটের এক কোণে গাট হয়ে বসে রইলাম। বিছানার ওপর রাখা প্রিয় শাড়িটাও কুৎসিত কদাকার ঠেকছে। এমন তিতকুটে বিচ্ছিরি অনুভূতি আমার আজ পর্যন্ত হয়নি। কিছুক্ষণ লম্বা দম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম। জিসান ভাইয়ের সাথে কথা বলব। উনি হয়ত কোন পথ বাতলে দিবেন। কল লাগালাম। ফোন বরাবরের মতো ব্যস্ত এল। রাগ কয়েক ধাপ বাড়ল। ঘন্টা পেরনোর পর হয়ত কল ব্যাক করলেন। আবেশি কণ্ঠটা কানে এলে রাগ দমাই। বলি, “আপনি আপনার পরিবারকে বলেননি আমাদের সম্পর্কের কথা?”

তিনি হয়ত প্রশ্নটায় ভড়কালেন। সেই ভড়কানোর ছাপ পরল কণ্ঠে, “হ্যা বলেছি। কেন?”

দাঁতে দাঁত চেপে, “তাহলে কোন সাহসে ওরা আমাকে দেখতে আসবে?”

বিস্মিত কণ্ঠে, “কে দেখতে আসছে? মা তো কিছু বলেনি!”

গর্জে উঠলাম, “আপনার মা এলে আমার কোন সমস্যা ছিল না। আমাদের সম্পর্কের কথা জেনেও আপনার চাচাতো না ফুপাতো কি ভাই হয় সে কেন আসছে আমাকে দেখতে? ওর সেল্ফরেস্পেক্ট নেই? নিজের ভাইয়ের প্রেমিকাকে দেখতে আসে ছিঃ!”

“শান্ত হ। ধীরে বল কার কথা বলছিস।”

“আপনার ভাই একটা..”

বিরক্তি সূচক শব্দে, “মূল কথাটা বল!”

“ইফাজের পরিবার আমাকে দেখতে আসছে! আমার অবাক লাগছে মানুষ এত নিচে কিভাবে নামতে পারে! আমাদের সম্পর্ক জেনেও কেন..”

তিনি ধমকে উঠেন, “ঝুম! না জেনে কথা বলবি না। ইফাজের পরিবার জানে না তোর আমার সম্পর্ক! জানলে হয়ত যেত না!”

“আপনি তাহলে কোন পরিবারকে বললেন?”

“ভালভাবে কথা বল! আমার বাবা-মা জানে। পুরো গুষ্টিকে বলে বেড়ানোর এখনো সময় হয়নি।”

চোখের পানি মুছে কিছুক্ষণ চুপ রইলাম। ধাতস্থ হয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম, “ফাইন আপনার সঠিক সময় আসুক। অপেক্ষা করুন। সঠিক সময় এলে বউয়ের জায়গায় ভাবী ডাকবেন। মন্দ কি?”

“ঝুম!”

“চেঁচাবেন না একদম। এখনো পরিবারকে জানাননি কোন প্রজাতির মানুষ আপনি!”

ক্ষুব্ধ কণ্ঠ এল, “থাপ্পড় চিনিস বেয়াদব? বেশি বড় হয়ে গেছিস, না? চেঁচিয়ে কথা বলা হচ্ছে! তোর আমার রিলেশন কতদিনের? সবোর্চ্চ এক বছর। তবু নিজের বাবা-মা’কে বলেছি! তুই সবে ভার্সিটিতে উঠেছিস। তুই না বলেছিলি তোর পরিবার এখুনি বিয়ে দিবে না! বিয়ে দেবার এত তাড়া আগে বলেনি কেন? মিশেলকে টপকেই বিয়ে দিচ্ছে! আজাইরা পরিবার! কথার কোন ঠিক ঠিকানা নাই! আমার সময়েই যত আপত্তি অন্যের বেলায় ঢেই ঢেই করে রাজি হচ্ছে! তোর বিয়ে অন্যের সাথে ঠিক করলে খুন করে আসব পুরো পরিবারকে!”

বিস্ময়ে বললাম, “আপনি এসব বলছেন? কবে থেকে এমন বেয়াদব হলেন আপনি? বড়দের টেনে..”

কথা শেষ হওয়ার আগেই কল কেটে যায়। স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি। একসময় শব্দ করে কাঁদতে থাকি। পাগলদের মতো কখনো চুল টেনে ধরি। আপু এসে এসময় পাশে বসল। অসহায় মুখে তাকালাম। আপুর চোখে পানি দেখে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। আপু পিঠে হাত বোলায়। বলে, “এমন ভেটকে ভেটকে কাঁদা বন্ধ কর। ওরা শুধু দেখতে আসবে। পছন্দ হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে স্রেফ এড়িয়ে যাবি। সরাসরি তো প্রত্যাখান করতে পারবি না। বাড়ি গেলে পর কল দিয়ে বলে দিবি পছন্দ হয়নি।” কিছুক্ষণ চুপ থেকে, “আরেকটা অপশন আছে। ইফাজের সাথে কথা বলতে দিলে ঐখানেই বলে দিবি তুই শাফিকে ভালবাসিস। ইফাজ নাটকের ভ্যাম্প না যে ভ্যাম্পগিরি করে হলেও তোকে বিয়ে করবে।”

“আমার ভাবতেই অস্বস্তি লাগছে আপু। আমি সং সেজে ওদের সামনে বসব? অসম্ভব! ইফাজ লোকটিকেই আমার বিদঘুটে অসহ্য লাগে!”

আপু এসময় ফিক করে হাসে। বলে, “ওকেই তো জীবনের ফার্স্ট লাভ লেটার দিলি!”

“উঁ আপু!”

“তিয়াসকে বলি বরং। ও কিছু একটা করতে পারবে।”

চোখ মুছে সোজা হয়ে বসি। বলি, “সত্যি?”

“ট্রাই করতে দোষ কি?”

চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে বেরই। নিজেকে স্বাভাবিক করে আপুর সাথে বেরলাম। ভাইয়া রুমে আছে কিনা সেটাও ভাবনার। রুমে উঁকি দেই। ভাইয়া আছে। বলল, “আমি কোন হ্যাল্প করতে পারব না।”

আপুর দিকে তাকাই। আপু বিরক্ত কণ্ঠে বলে, “কথা শুনে নে আগে।”

“বললাম তো পারব না। যা সামনে থেকে যা।”

অসহায় মুখে ভাইয়ার পাশে বসে যাই, “ভাইয়া?”

ভাইয়া কাগজ পত্র ঘাটছিল। মুখ তুলে চায়ল, “আমি কিছু করতে পারব না রে। দুজনই আমার বেস্টফ্রেন্ড!”

নিরুপায় হয়ে গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। বিকেল নাগাদ ওরা সত্যিই এল। চোখ-মুখ শক্ত করে গিয়ে বসলাম। পূর্ণাঙ্গভাবে ওদের কোন প্রশ্নেরই উত্তর দেইনি। ‘হু’, ‘হা’ দিয়ে কাজ চালিয়েছি। নয়ত মাথা নেড়ে। একসময় আমাদের আলাদা কথা বলতে পাঠাল। ইফাজের ঐ পলকহীন দৃষ্টির সামনে অস্বস্তি লাগল। বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে এল।

“চোখ-মুখ এমন শক্ত করে রেখেছ কেন? তোমার আমাকে পছন্দ নয়?”

আমি নিরুত্তর ছেলেটার দিকে তাকাই।

_____

ওরা চলে যাবার পর কোনদিকে না তাকিয়ে নিজের বিছানায় এসে গড়ালাম। মাঝখানে মামী এসে সিদ্ধান্ত নিয়ে গেছে। কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে, “ঠিক তো?” বিরক্ত হয়ে একসময় তাকিয়ে ছিলাম। মামী চলে গেলেন। শান্ত মাথায় ভেবে মনে হলো দোষটা আমারই। এবং আরেকটি ভুল করে বসলাম।

~চলবে

ওকে বাই
আমি নাই🐸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here