তোমাতে,পর্ব:১৮

0
449

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ১৮/

নেহা আপু গাল ফোলায়, “এসব আজাইরা প্যাচাল বাদ দে। আমার বিয়েতেই তোর যেতে হবে না! এই ঝুম তুমি চলো। এখানে থাকা ওখানে থাকা একই। সেখানে গেলেই বরং ভাল। এখানে থাকলে কাজ করবা ওখানে ফ্রি। নতুন বউ সেজেগুজে টই টই করে ঘুরবা।”

জবাব দেই না। নিরুত্তর ঠোঁট টিপে হাসি। জিসান ত্যক্ত কণ্ঠে বলেন, “আশ্চর্য আমি ছুটি না পেলে কিভাবে যাব? অতদূর থেকে প্রতিদিন যাওয়া আসা সম্ভব?”

আপুর দৃষ্টি সুচালো হয়, “একদম মিথ্যে বলবি না। সেদিন বলেছিলি অন্তত দুদিন ছুটি পাবি!”

“হ্যা আজকের ছুটি তোর বাপ দিল সকালবেলা!”

নেহা আপু ফুসতে শুরু করে। আমি অসহায় কৌতুকে এদের কান্ডকারখানা দেখি। অবস্থা এমন আপুর রাগের এটোমিক বোমা যেকোন মুহূর্তে বিস্ফোরিত হবে! এসময় নিশান ভাইয়ার মৃদু চিৎকার কানে এল। গল্প আড্ডার পৃথক ছেড়া ছেড়া গুঞ্জন নীরব হল। বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম আমার একপাশ খালি। নিসা আর নিশান ভাইয়া আমাদের থেকে ফুটখানেক দূরে। নিসা উনার চুল ধরে টানছে। মৃদুকণ্ঠে কিছু কথোপকথন চলছে হয়ত। এখান থেকে সেটা বোঝা যায় না। ভাইয়া অনবরত নিসার হাতে বারি দিচ্ছেন। নিকিতা আমার কানে কানে ফিসফিসাল, “দোস্ত বুঝেছিস এরা আগামীর সিক্রেট লাভ প্রজেক্ট। গতকাল রাত থেকে এদের লম্ফঝম্প দেখছি!”

ওর দিকে তাকালাম। মেয়েটি রহস্যোদ্ধার করার অভিব্যক্তিতে তাকিয়ে। ওর দিকে হেলে ফিসফিসাই, “কাহিনী কোন পর্যায়ে?”

আমাদের মধ্যে তুই তোকারি সম্পর্কটা ঠিক কখন শুরু হয়েছে জানা নেই। তিনজনই এতে সাচ্ছন্দ্য। তাই আগ বাড়িয়ে ব্যাপারটা কেউ মনে করাইনি। নিকিতার ঠোঁটে এবার ফিচেল হাসি খেলে। চোখ টিপল। রসিয়ে বলল, “দেখছিস না এখন চুল টানাটানি। একটু পর হয়ত কামড়াকামড়িতে রূপ নিবে!”

দুজনে একে অপরের ওপর হেলে সশব্দে হাসতে শুরু করি। নিসার হাত থেমে যায়। এ সুযোগে নিশান ভাইয়া ঝারা মেরে মাথা সরিয়ে নিলেন। এলোমেলো চুলে আঙুল ডুবিয়ে বললেন, “জঙলি!”

আমাদের হাসি থেমে গেছে অনেকক্ষণ। আড্ডা বৃত্ত ভেঙেছে। গুচ্ছাকারে ইয়াং স্টাররা এদিক ওদিক ছড়িয়ে। রুমের কোণে একটি টি-টেবিল। তার ওপর মাঝারি ধরনের সাউন্ড বক্স। সেখান থেকে মোলায়েম সুরে বিভিন্ন রোমান্টিক গানের সুর আসছে। কখনো ছন্দে পতন ঘটিয়ে ভিটওয়ালা গান আমাদের দুলিয়ে ছাড়ছে। আমরা সেই দুলতে দুলতেই নিসাকে ঝেকে ধরছি। নিকিতা আর আমার জেরার মুখে মেয়েটি গাল ফুলিয়ে। গাল দুটোয় রক্তজমাট বেধেছে। নিকিতা বেশ সিরিয়াস কৌতুকটা মাত্র চালল। এমন সময় কিছুদূরে চোখ যায়। জিসান ইশারায় ডাকছেন। তিনি দলছুট। আশপাশে আপাতত কেউ নেই। কোথা হতে হাতে কোন পিচ্চির একটা ওড়না পেচিয়ে আছেন। ওদের রেখে এগোই।

“কি ডাকছেন কেন?”

“পাত্তাই দিচ্ছিস না! বান্ধবী জুটিয়ে ভুলেটুলে গেলি কিনা দেখছিলাম।”

মৃদু হাসি। তিনি এসময় পেছন ফিরে বলেন, “শিফা তুই কি যেন একটা লোশন শীত গ্রীষ্ণ সব সময়েই ব্যবহার করিস?”

শিফা জিসানের পেছন দিয়ে কোথাও যাচ্ছিল। থেমে গেল। হতবুদ্ধ হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “কই না তো। একেক সময়ে একেকটা ব্যবহার করি। কেন?”

“ঐ একই। নাম যেন কি? তোর ভাবীকে রূপচর্চার জন্য কিনে দিব।”

শিফা ফিচেল হাসে, “কেন ভাবী মহাশয়া নিজে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারে না? নাকি বিয়ের পর ননদ বৌদির দ্বৈরথ শুরু করলে?”

আমি বিস্ময়ে গুটিয়ে বলি, “তা কেন? আমি এসব লোশন টোশনের কিচ্ছু জানি না। তোমার ভাইয়ের মাথা সকাল থেকে গেছে। সব জায়গায় শুধু লোশন দেখছে।”

“বেশি কথা বলিস। যেটা প্রশ্ন করেছি সেটা বল।”

শিফা আড়চোখে ভাইকে দেখল। বলল, “প্যারাসুট। একটা ড্রাই..”

জিসান অধৈর্য হলেন, বললেন, “এত কেচ্ছা শুনতে চাই নাই। যেখানে যাচ্ছিলি যা তো!”

শিফা রাগে মুখ ঝামটা মেরে চলে যায়। আমার দৃষ্টি সুচালো হয়। তিনি এক গাল হাসেন। বলেন, “প্যারাসুট নামটা কিন্তু খারাপ না। তোকে খুব মানাবে!”

ত্যক্ত কণ্ঠে বলি, “আপনি একটা আশ্চর্য! মাথানষ্ট ডাক্তার!”

তিনি ফিচেল হাসেন, “কি প্যারাসুট আরেক প্যারাসুট লাগবে?”

গাল ফোলাই। চোখ রাঙাই। তিনি সশব্দে হাসতে থাকেন। উনাকে দুহাতে মারতে শুরু করি। তিনি হঠাৎ হাত ওপরে তুললেন। কিছু বুঝে উঠার আগেই টান অনুভব করলাম। আছড়ে পরলাম উনার বুকে। উনার এহেন কাজে তাজ্জব বনে যাই। বুঝতে চেষ্টা করি এই মাত্র কি হলো। সরতে যাই কোমড়ে বাধন অনুভূত হয়। তাকিয়ে দেখি উনার হাতের ছোটমোট উড়নায় আবদ্ধ হয়ে আছি। আশপাশে ছোট, বড়, সমবয়সী অনেকে আছে। ওরা দেখছেও! উনার কি লজ্জাবোধ কিছু নেই? চোখ রাঙিয়ে তাকাই। তিনি ঠোঁট প্রসারিত করে আমাকে নিয়ে দুলতে শুরু করলেন। তিয়াস ভাইয়ার জোরালো কণ্ঠ আসল, “ভাই রে, এত রোমান্স তোদের! তোর বউ যে আমার ছোটবোন এইটা অন্তত মাথায় রাখ।”

জিসান ঠোঁট প্রসারিত করে আমাকে নিয়ে দুলতে দুলতে বলেন, “শালার শালা! নাচ করছি রোমান্স না!”

নেহা আপুর কণ্ঠ আসে, “এইটা আবার কোন জাতের নাচ? আরেকটু পর দেখা যাবে গালে, ঠোঁটে ঠুসঠাস চুমু খেয়ে বলছিস এইটা নাচের ভিট ভাইব!”

আশপাশে হাসির রোল পরল। আমি মাথা নিচু করে উড়নার বন্ধন থেকে বেরতে চাই। তিনি উড়নার টান আরও বাড়ান। রেগে বুকে চিমটি দেই। তিনি ফিচেল হাসলেন। নেহা আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “পূর্ণ করে ফেলি তোর ইচ্ছে কি বলিস?”

এবার সর্বশক্তিতে জোরাজোরি শুরু করলাম। তিনি একসময় বাধন আলগা করে দেন। ছিটকে দূরে সরে দাঁড়াই। অকর্মা নিসা এগিয়ে এসে দাঁত কেলায়, “দারূণ আসছে ছবিটা! দুলাভাই। আপনাদের এক একটা বেখেয়ালি পোজ কি দারূণ হয়!”

জিসান হেসে বাউ করল। রেগে কিছু বলতে চাইছিলাম। কাজটা সহজ করলেন নিশান ভাইয়া। ফোড়ন কেটে বললেন, “কেন হে চশমা? আমার বন্ধুর রোমান্স টাইমেই তোমার কেন এত ছবি তোলার ঝোক?” হাতের এক আঙুল নাড়তে থাকেন। একই সাথে সাধুদের মতো মাথা দুদিকে নেড়ে বলেন, “এসব ক্রাইম করা ঘোর অনুচিত। তোমার ভবিতব্য ভবিষ্যৎ জনের ভবিষ্যৎ দেখি অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। অন্যের সময়েই এত ক্যামেরা ক্লিক। নিজের সময়গুলোয় হয়ত দেখব ভিডিও বানিয়ে রাখছ!”

চারদিকে হাসির রোল পরল। নিসা ক্যামেরাটাই ছুড়ে মারছিল, নিশান ভাইয়া হাহাকার করে উঠেন, “আঙ্কেলের অতি কষ্টে কেনা ডিএসএলআর..” নিসার হাত থেমে যায়। একবার ক্যামেরা একবার নিশান ভাইয়ার দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকায়, “আপনার সমস্যাটা কি বলবেন? আমার রোমান্স টাইমে আমি চাইলে ছবি তুলব, ভিডিও করব। আপনার এত কেন মাথাব্যাথা? আর আপনার সামনেই বা কোন গর্দভ স্বামীর সাথে রোমান্স করবে! মাথা থেকে অকাল কুষ্মাণ্ড চিন্তাভাবনা ঝেরে ফেলুন!”

মেকি লাজুক ভাব নিয়ে, “কি যে বলো! সুদর্শন একটা ওয়েল এডুকেডেট ছেলে নিদারূণ যন্ত্রণায় মরবে আমি চেয়ে চেয়ে দেখব? ছেলেটাকে জন্ম থেকে দেখে আসছি কি অমায়িক চরিত্র! কি নম্র তার ব্যবহার, ভদ্রতা জ্ঞান!”

বাকি দৃশ্য আর কৌতুক নিয়ে দেখতে পেলাম না। জিসান আমাকে সরিয়ে আনলেন। ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছি। তিনি কিছুদূরে। নিমগ্নচিত্তে ফোন চালাচ্ছেন। এভাবে রুমবদ্ধ করার কারন খুজে পাই না। উত্তরও দিচ্ছেন না। রুম থেকে বেরোনোও যাচ্ছে না। দরজার ওপরের ছিটকিনি বেশ ওপরে। আমি নাগাল পাই না। রুমের দুটো চেয়ারেই তিনি আরাম করে বসে। তিনি একসময় কাঁপা হাতে ফোন পাশে রাখেন। বুক চেপে আর্তকণ্ঠে উঠলেন, “ঝুম আমার হার্টবিট দ্রুত হচ্ছে। মনে হয় এখুনি মিনি নয় মেজর হার্টএটাকটা করে ফেলব!”

ভাবনারা চমকে উঠে। অস্থির আমি দ্রুত এগিয়ে যাই। উনার বুকে হাত রেখে বলি, “নিশান ভাইয়াকে ডাকব? খুব কষ্ট হচ্ছে?”

হুট করে যেমন রোগ উপসর্গ দেখা দিয়েছিল তেমনি হুট করেই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। আমায় দুপায়ের মধ্যে আটকে নিলেন। দুহাতে কোমড় জড়িয়ে বললেন, “না হার্টবিট এখন দ্রুত হচ্ছে না। একটা দুটা মিস করছে মাত্র!”

কাহিনী বুঝতে সময় লাগল কয়েক সেকেন্ড। রেগে বললাম, “অভিনয় জিনিসটা কেউ শিখুক আপনার থেকে!”

“তোর প্রেমে না পরলে আরও অনেক কিছু হয়ে যেতাম। যে মেধা অকাজে খরচ করলাম তাতে একাধারে ইঞ্জিনিয়ার, অভিনেতা, গোয়েন্দা, আর্টিস্ট, কবি, ভবঘুরে, বেগাবন্ড সব হয়ে যেতাম।”

কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে থাকি। ঠোঁট টিপে হাসি আটকানোর চেষ্টায় বলি, “ঢপ দেয়ারও একটা লিমিট আছে! সরুন অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। পা ব্যাথা করছে!”

“ও তাই তো!”

তিনি আমাকে কাঠের টেবিলটায় বসিয়ে দেন। নিজে আমার দুপাশে হাত রেখে ঝুকে দাঁড়ান। হাসোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে আছি। বলি, “কি দেখছেন এমন করে?”

“তোর ঠোঁট দুটি খুব সুন্দর।”

অন্যদিকে ফিরে, “চিন্তা সেসব ঝেরে ফেলুন। সেদিন ঠোঁট ছিবড়ে করে দিয়েছিলেন!”

তিনি হাসেন। গালে উনার দাড়ি-মোছ ঘষতে শুরু করেন। সুরসুরি লাগে। খিলখিলিয়ে হাসতে থাকি। তিনি অপলক তাকিয়ে থাকেন। বলেন, “হাসলে তোর ঠোঁট এমনিতেই চেপ্টা হয়ে যায়। মনে হয় পাতলা একটা আস্তরণ মাত্র।”

উনার কথানুযায়ী ভ্রু কুচকানো বিশেষ মুখভঙ্গি করলাম। তিনি ফিচেল হাসেন। মুখ এগিয়ে আনেন। আমি দুহাতে ঠোঁট চেপে ধরি। অসন্তোষ নিয়ে বলেন, “ঠোঁট থেকে হাত সরা ঝুম!”

দুদিকে মাথা নাড়ি। তিনি একবার চেষ্টা করলেন সরানোর। আবার চেপে ধরলাম। তিনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন গরম চোখে।

“সরা বলছি!”

“না।”

“খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু!”

সাহসী আমি সগৌরবে বলি, “হোক।”

“ঠিক তো?”

আমি দ্রুত মাথা উপর নিচ নাড়ি। তিনি হঠাৎ দুহাতে জড়িয়ে গলায় ঘাড়ে এলোপাথারি ঠোঁট ছোয়ানো শুরু করেন। আমার অবস্থা পাগলপ্রায় হয়ে যায়। সুরসুরি আর শিরশিরানো শীতল কাঁপনে চঞ্চল হয়ে উঠি। মুখ থেকে হাত ছুটে যায়। উনাকে থামানোর চেষ্টা যত করি হাতের বন্ধন তত শক্ত হয়। একসময় গালে ঠোঁট ছোয়ানো শুরু করলেন। অবশেষে ঠোঁট দখল করে ক্ষান্ত হন। তিনি যখন সরলেন আমার অবস্থা তখন ভুতগ্রস্ত। রাঙাচোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি ঠোঁট মুছে হাসতে শুরু করেন। টেবিল থেকে লাফিয়ে নামলাম। লিপস্টিক ছড়িয়েছে নিশ্চয়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে এলাম। চমকে গেলাম! টিস্যু দিয়ে নিজের মুখটা মুছে টিস্যুটা উনার দিকে ছুড়ে মারলাম। মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এল, “শালা!” তিনি এখনো হাসছেন সশব্দে। উনার ঠোঁটের আশপাশেও লালচে আভা। গাল ফুলিয়ে বলি, “আপনার এই অপকর্ম আমি করলে আপনার সাদা শার্ট আর চেহেরার কি অবস্থা হত! পাষণ্ড কোথাকার!”

তিনি বুকে হাত রেখে হালকা পেছনে এলান, “তাহলে এই অধম ধন্য হয়ে যেত মিসেস শাফি আহমেদ! পাষণ্ড বলছিস কেন? তোকে সতর্ক করেছি তুই মানিসনি!” চোখ টিপে, “না মেনে ভালই হলো। ডাবল ডোজ!”

“আপনি একটা যাচ্ছে তাই!”

ফিচেল হেসে, “আরো চকলেট খাবি?”

চোখ-মুখ কুচকে বলি, “আপনার ঠোঁট ঠিকমতো মুছেন। লালচে দাগ ভেসে আছে।”

তিনি আয়নার সামনে এগিয়ে এলেন। দেখে টিস্যু দিয়ে দ্রুত হাতে মুছলেন। যেই পালাব অমনি হাতটা ধরে ফেলেন। বলেন, “এত দৌড়াদৌড়ি করিস কেন! বিয়ের আগেই ভাল ছিলি!”

দাঁত কেলাই, “হাত ছাড়ুন। বিয়ের আগের ফর্মে চলে যাই। আপনি এখানে থাকবেন আমি আমার বাসায় মানে নিজ রুমে।”

তিনি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন, ঘাড়ে মুখ রেখে বললেন, “কাল থেকে চারদিন কি করবা বউ?”

“কিছু করার আছে কি?”

উনার উষ্ণ শ্বাস বারি খাচ্ছে গলায়, ঘাড়ে। ঠোঁট বারবার ছুয়ে যাচ্ছে কাধ। আমি গুটিয়ে যাচ্ছি বারবার। তিনি হাতের বন্ধন আরও দৃঢ় করেন, “তোমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ কেউ থাকবে না বাসায়। আজকে নেহা আপুদের সাথে ওরাও চলে যাবে। কই দৌড়াবা তখন?”

বিজ্ঞের হাসিতে বলি, “মশাই আপনিই তো থাকবেন না! আর দৌড়ানো!”

“আমার না থাকার কথা কে বলল তোকে?”

“আপনার না অফিস আছে?”

এবার তিনি হাসলেন, বললেন, “ইয়েস বাসার অফিসটা বন্ধ দেয়নি!”

বিস্মিত হয়ে গেলাম। বললাম, “তাহলে নেহা আপুদের বাসায় আপনারও আজকেই যাওয়া উচিত।”

“অসম্ভব!”

“অসম্ভব কেন? ছুটি পেয়েছেন কাটাবেন না? আপন চাচাতো বোন, আপন বোনই তো। ওর বিয়েতে খাটবেন না এ হয়?”

“অবশ্যই। আমার আস্ত একটা বউ আছে। ওকে ছেড়ে চার চারদিন থাকা অর্থাৎ আমার সেকেন্ডে সেকেন্ডে ছোটখাটো স্ট্রোক বরণ করা। উঠতে বসতে বুক চিনচিন করবে, ‘জিসান তোর একটা নিজস্ব লোশনের কৌটা আছে। তুই তাকে ফেলে এসেছিস! হায়!’ ঐ করুণ অবস্থা ভাবলেই গা শিরশিরায়!”

আমি বাকাচোখে তাকাই। তিনি হাসেন। উনার হাসি আস্ত একটা ম্যাজিক ভান্ডার। সম্মোহনকারী মায়াজাল। যতবার দেখি শুধু দেখতে মন চায়। সম্মোহীত হই আর ছোটখাটো ভুল করি। এবারও করলাম।

“দিল খুশ হো গায়া!”

“আপনি বহুত ঝানু মাল! জেনেবুঝে টোপ ফেলেন!”

তিনি নিরুত্তর হাসেন, বলি, “আচ্ছা আপনার অস্থির লাগেনি যখন শুনলেন আমাকে ইফাজরা দেখতে এসেছে?”

“তা একটু। কিন্তু বিশ্বাস ছিল।”

“যদি হ্যা করে দিতাম?”

গালে ঐ সুন্দর গর্ত দুটো আবার খেলে গেল। আমি হাত বাড়াই। তিনি দুহাত ধরে ফেলেন। গাল ফোলালাম। তিনি গালে নাক ঘষলেন, “একটা বইয়ে পড়েছিলাম কথাটা। ‘মেয়েরা যখন একবার কাউকে পছন্দ করে বসে তখন তাদের গোঁ হয় সাংঘাতিক।’ আর তুই তো পুরোদস্তুর বাদর কিসিমের!”

পরিশিষ্ট:
কনেপক্ষের সাথে ঝগড়া করে গেট অতিক্রম করেছি। জিসান কোথা থেকে সামনে এলেন। গোল চশমা নাকে ঠেলে আমাকে সম্পূর্ণ একবার দেখে বললেন, “ঘরের শত্রু বিভীষণ!”

নিষ্পাপ হাসলাম। তিনি ম্লানমুখে বললেন, “এই চারদিন কি খাটিয়েছে জানিস? তোরা মেয়েরা সব প্রতারক! বিশ্বাস করে বললাম কথাটা আর তুই ঢেংঢেং করে নেহা আপুকে বলে দিলি!”

“এটা আপনার কর্তব্যই ছিল। না আসলে বরং দৃষ্টিকটু হত ব্যাপারটা!”

“ছাই হতো! তোর জন্য আমার ভালবাসা কমে গিয়েছে! আবার সেই মাথা নষ্ট পোশাক পরেছিস!”

উদাসমুখে বললাম, “এটা লেহেঙ্গা। এর নাম ‘মাথা নষ্ট’ না! ভালবাসা কমে গেলে কি আর করা। যাই অন্য কাউকে খুজি!”

“থাপড়ে দাঁত ফেলে দিব! বেয়াদব!”

তিনি রাগান্বিত চোখে চেয়ে আছেন। মৃদু হাসি। কাছে এগিয়ে উনার পাঞ্জাবির বোতাম নেড়েচেড়ে ফিসফিসিয়ে বলি, “ভালবাসি তোমাতে!”

তিনি ভ্রু কুচকান, “তোমাকে হবে তোমাতে নয়!”

আমি হাসি। মাথা নেড়ে বলি, “না। তোমাকে নয় তোমাতে’ই। আমাদের সাদাসিধে গল্পটা এই তোমাতে এসেই একটু বিশেষ। উদ্ভট জীবনের উদ্ভট নিয়মে ভুলই শুদ্ধ!”

কিছুক্ষণ বিরক্ত দৃষ্টির পর হঠাৎ নম্র হলো উনার চোখ দুটি। ফিসফিসিয়ে বললেন, “আমার ভুলকে পিঞ্চ মারা হচ্ছে? রাত হোক তোর খবর আছে।”

মৃদু হাসিতে সটকে পরি। একবার পিছু তাকাই। তিনি ইশারায় আবার সতর্ক করলেন।

~সমাপ্ত❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here