তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -০২

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২

ভার্সিটির বাইরের আসতেই ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ছাড়লো মুন। অনেক বাঁচা বেঁচে গেছে। মুন আরশির দিকে তাকাতেই দেখলো ও রা*গী চোখে তাকিয়ে আছে। মুন একটা শুকনো ঢো*ক গি*লে বললো,

— তুই জানোস তুই কার সাথে পা*ঙ্গা নিলি?

আরশি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ব্যাগ থেকে কিছু বের করতে করতে বললো,

— যেই হোক আমার কিছু যায় আসে না। সে ভুল করেছে মা*ফ চাইবে বাস্।

মুন উ*ত্তে*জি*ত হয়ে বললো,

— তুই উনাকে চিনিস না দেখে আমি আশ্চর্য হয়েছি। উনি আমাদের নতুন এমপি। কয়েকদিন আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। সুদর্শন আর সিঙ্গেল হওয়ার কারণে সব মেয়েদের মুখে এখন উনার নাম। আর জানিস উনি কয়েক বছর আগে আমাদের ভার্সিটি থেকেই পড়াশোনা শেষ করে বেরিয়েছে। সব টিচারদের সাথেই হয়তো উনার ভালো পরিচয় আছে। তোর এমন ব্যবহারের কারণে যদি কোনো সমস্যায় পড়িস তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস? যদি উনি কোনো অ্যা*ক*শ*ন নেয়?

আরশি মৃদু হেসে মুনের ছি*লে যাওয়া জায়গায় ওষুধ লাগাতে লাগাতে বললো,

— তুই তো আমাকে ভালো করেই চিনিস। আমাকে এসবের ভ*য় দেখিয়ে লাভ নেই। জীবনে অনেক ক*ঠি*ন সময় পার করেছি আমি। তাই এখন এসবে ভ*য় হয় না। আমার বিশ্বাস আমার কপালে যা আছে তাই হবে। আর যা হবে ভালোর জন্যই হবে।

আরশি একটু থেমে আবার বললো,

— আচ্ছা শোন রাহুল, আবির, মোহনা কই গেলো? ওদের দেখছি না যে?

মুন আশেপাশে তাকিয়ে বললো,

— চলে গেছে মনে হয়। রাহুল কে তো ওর মা ফোন করে কি যেনো বললো। বে*চা*রা শুনেই ট্যাক্সি ধরেছে। আবির আর মোহনা কই কি জানি।

এর মাঝেই আরশি আর মুন শুনতে পেলো দুইটা ছেলে মেয়ে ঝ*গ*ড়া করতে করতে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে। কাছে আসতেই ওরা দেখলো মোহনার চোখ মুখ কাঁ*দো কাঁ*দো হয়ে আছে। যেকোনো সময় কেঁ*দে ফেলবে। মোহনা ওদের কাঁ*দো কাঁ*দো কণ্ঠে বললো,

— জানোস দোস্ত এই খা*চ্চ*র টা আমার বিশ টাকার বেলপুরি খাইয়া ফেলছে। আমি অর্ডার দিসিলাম কিন্তু একটাও খাইতে পারি নাই এই বে*দ্দ*পে*র জন্য। এখন তোরা এর বি*চা*র কর।

মোহনার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো মুন। আর আবির তো আগে থেকেই বিশ্ব জয় করা হাসি দিচ্ছে। ওদের হাসতে দেখে কেঁ*দে*ই ফেললো মোহনা। বেলপুরি মোহনার দু*র্ব*ল*তা। প্রতিদিন খায়, না খেলে যেনো ম*রে*ই যাবে। মোহনা কে কাঁ*দ*তে দেখে এক ধ*ম*ক দিলো আরশি। আরশির ধ*ম*কে দাঁত ভিতরে ঢু*কে গেলো আবিরের। মুন এখনো মিটমিট করে হাসছে। আরশি মোহনা কে জড়িয়ে ধরে বললো,

— হয়েছে হয়েছে কাঁ*দি*স না। ছে*হঃ মানুষ যদি শুনে তুই বেলপুরির জন্য কাঁ*দি*স তাহলে কি বলবে? ওই আবির তুই ওর বেলপুরি খাইসোস কেন? তোর শা*স্তি তুই আগামীকাল আমাদের সবাইরে বেলপুরি ট্রিট দিবি। নাহলে এমন একটা ঘু*ষি দিবো যে দুইটা দাঁ*ত উ*ড়ে যাবে। কি ঠিক আছে তো মহু?

মোহনা দাঁ*ত কে*লি*য়ে মাথা ঝা*কা*লো। এবার আবির কাঁ*দো কাঁ*দো মুখ করে বললো,

— তুই কিন্তু অ*ন্যা*য় করতাসোস আরু। শুধু ওরে ট্রিট দিতে কইতি মা*ই*ন্না নিতাম কিন্তু তুই তো আমারে ফ*কি*র বানানোর ধা*ন্দা করতাসোস।

মোহনা মুখ বাঁ*কা করে বললো,

— আমার বেলপুরি খাওয়ার আগে মনে ছিলো না এসব?এটা তোর শা*স্তি আর তোর পূরণ করতেই হইবো। কোনো কথা নাই। আচ্ছা তোরা থাক আমি ওই মামার কাছ থেকে বেলপুরি খাইয়া আসি।

মোহনা কে বেলপুরি খেতে যেতে দেখে মাথায় হাত দিলো তিনজন। মানুষ এতো বেলপুরি পা*গ*ল কেমনে হয় মোহনা কে না দেখলে ওরা জানতেই পারতো না। আরশি, আবির আর মুন কে বললো,

— আমার টিউশনের টাইম হয়ে যাচ্ছে। আমি গেলাম। মুন তুই ও বাসায় যা। আর আবির দোস্ত তুই একটু মোহনা কে রিক্সায় উঠায় দিস। নাহলে ওই মেয়ে আবার কোনো ঝা*মে*লা পা*কা*তে পারে। জানিস ই তো ও কেমন?

আবির মাথা দু*লা*লো। আরশি আর মুন নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেলো।

———-

আরশি। পুরো নাম আরশি রহমান। বাবা মায়ের আদরের একমাত্র সন্তান ছিলো সে। জীবনে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না কিন্তু হঠাৎ এক ঝ*ড় এসে ল*ন্ড*ভ*ন্ড করে দেয় আরশির জীবন। নিজের জীবনের সুখ, ভালোবাসা হারিয়ে নিঃ*স্ব হয়ে যায় সে। বাবা নামক ছায়া উঠে যায় তার মাথার উপর থেকে। এক সময় কিছুটা রে*গে কথা বললে যেই মেয়ে হা*উ*মা*উ করে কেঁ*দে বাড়ি মাথায় তু*লে ফেলতো সেই মেয়ে এখন কাঁ*দ*তে ভুলে গেছে। যেই মেয়ে হেসে, দু*ষ্টু*মি করে সারা বাড়ি মা*তি*য়ে রাখতো, সেই মেয়ের মুখের হাসি হা*রি*য়ে গিয়েছিলো।

বাবা কে হা*রা*নো*র পর সব আত্মীয় স্বজনেরা সম্পর্ক ছি*ন্ন করে আরশিদের সাথে। ভ*য় একটাই ওদের দায়িত্ব নিতে হবে, সাহায্য করতে হবে। আরশিদের বাড়ি দ*খ*ল করে নেন ওর বড় চাচা। অ*সু*স্থ মা কে নিয়ে ছোট্ট আরশির জীবন যু*দ্ধ শুরু হয়। তখন সবেমাত্র এসএসসি দিয়েছিলো আরশি। এই ক*ঠি*ন দুনিয়ার সাথে তার কোনো পরিচয় ছিলো না। কিভাবে থাকবে তার দুনিয়া তো বাবা মায়ের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো। যেই মেয়ে বাবা মায়ের হাত না ধরে এক পা ও চলতে পারতো না সেই মেয়ে বেরিয়ে পড়ে কাজের খোঁজে। এক প্রতিবেশীর সহায়তায় বেশ কয়েকটা টিউশনি পায় আরশি। ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়িয়ে খুব কম ইনকাম হতো তার। শুরু শুরুতে এই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে খুব ক*ষ্ট হতো। প্রতিদিন রাতে বাবার ছবি জড়িয়ে কাঁ*দ*তো আরশি। একদিকে মায়ের অ*ব*হে*লা অন্যদিকে অ*ভা*বে*র সংসার। কতশত মানুষের হাজারো কথা শুনে এই সমাজে টি*কে থাকতে হয়েছে তাকে। ধীরে ধীরে এসবে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে আরশি।

ছোট বেলা থেকেই প্রচন্ড ব্রিলিয়ান্ট ছিলো আরশি। বলা যায় একটু বেশিই মেধাবী। খুব অল্প সময়ে অনেক পড়া ক্যা*চ করে ফেলতে পারতো। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ ছিলো না তার। তাই মোটামোটি রেজাল্ট করতো সে। কিন্তু বাবা হা*রা*নো*র পর পড়াশোনার প্রতি সি*রি*য়া*স হয় আরশি। শিক্ষকদের সহায়তায় আর নিজের চেষ্টায় এইচএসসি তে অনেক ভালো ফলাফল করে সে। আর এখন তো অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। এখন আর আগের মতো অভাব ও নেই। বর্তমানে আরশি চারটা টিউশনি করে আর একটা কোচিং এ সপ্তাহে দুইদিন পড়ায়। এতেই বেশ ভালো অংকের টাকা উঠে যায় যা দিয়ে ভালো মতো মাস চলে যায় আরশির। কিছু ভালো বন্ধু পেয়েছে সে লাইফে যাদের কারণে আবার আগের মতো হাসতে পারে সে। বন্ধুগুলোই তার হাসিখুশি থাকার একমাত্র কারণ।

——

থ*ম*থ*মে মুখে বাড়ি ফিরলো আবরার। আবরারের মা বিষয় টা লক্ষ্য করেও কিছু বললেন না। ফ্রেস হয়ে খেতে বসতেই আবরারের বাবা আব্বাস আহমেদ বললেন,

— কি হয়েছে মাই ডিয়ার সান? রে*গে আছো মনে হচ্ছে? তোমাকে তো আমি সবসময়ই বলি রা*জ*নী*তি*তে মাথা গ*র*ম করার মতো কাহিনী প্রতিনিয়ত হয়। কিন্তু আমাদের মাথা রাখতে হবে একেবারে ঠা*ন্ডা।

আবরার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— আসলে রা*জ*নী*তি নিয়ে কোনো সমস্যা না বাবাই।

আব্বাস আহমেদ বললেন,

— তাহলে কি হয়েছে? বলো আমাকে। বাবাই কে বলবে না?

আবরার ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ফেলে রা*গী কণ্ঠে বললো,

— জানো বাবাই আজ একটা মেয়ে আমার সাথে বে*য়া*দ*বি করেছে। আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে। সে যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতো তাহলে মুখটা ভে*ঙে গু*ড়ি*য়ে দিতাম।

আব্বাস চৌধুরী ছেলের কথা শুনে কিছুক্ষন থ*ম মে*রে রইলেন। তারপর হুট করে হু হা করে হাসা শুরু করলেন। আবরার বি*র*ক্তি নিয়ে চাইলো বাবার দিকে। তার বাবাই কখনো কোনো কিছু নিয়ে সি*রি*য়া*স হোন না। আব্বাস আহমেদ বললেন,

— বাহ্ কোন মেয়ের এতো সা*হ*স হলো আমার ছেলের চোখে চোখ রাখে? আমার তো এখন ওই মেয়ের সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করছে। আহা কি সা*হ*স। কিভাবে দেখা করা যায় বলো তো আবরার?

আবরারের মামা ইরফান চৌধুরী বললেন,

— আহা দুলাভাই দেখছেন ই তো আবরার বাবা রে*গে আছে। তাহলে এসব বলে ওকে আরও রা*গি*য়ে দিচ্ছেন কেনো? আবরার বাবা শোনো তুমি আমাকে ওই মেয়েটার সম্পর্কে বলো তারপর দেখো আমি ওই মেয়ের সাথে কি করি।

আবরার বি*র*ক্ত হয়ে বললো,

— তোমাদের আর কিছু বলবোই না ধ্যা*ৎ। আর মামা তোমার কিছু করতে হবে না। যা করার আমিই করবো।

আবরার ধু*প*ধা*প পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো। ওই মেয়ে কে সে দেখে নিবে ব্যাপার না। কিছু একটা ভেবে বাঁ*কা হাসলো আবরার।

——-

ক্যান্টিনে বসে আছে মুন আর আরশি। কফির অর্ডার দিয়েছে কিন্তু এখনো আসছে না দেখে বি*র*ক্ত হলো আরশি। মুন কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আরে ইয়ার এতো সময় লাগে কেন? চল এখান থেকে কফি খাবো না।

আরশি উঠতে নিলেই মুন আরশির হাত চে*পে ধরে আবার বসিয়ে দিলো। বললো,

— আরে এতো অ*স্থি*র হোস কেন? কই বেশিক্ষন হয়েছে? চল আমরা কিছু গল্প করি। ক্লাস শুরু হতে এখনো সময় আছে। আর রাহুল, মোহনা, আবির, আহি কেউই তো আসে নি এখনো।

আরশি মুন কে জিজ্ঞাসা করলো,

— আচ্ছা আহি কই রে? মেয়েটা দুইদিন ধরে ভার্সিটি আসে না। আমি ফোন দিয়েছিলাম, ফোনটাও ধরলো…

কথা শেষ করতে পারলো না আরশি। তার পূর্বেই কেউ একজন ওদের দুইজনের গলা জ*ড়ি*য়ে ধরলো। চি*ৎ*কা*র করে বললো,

— বন্ধুরা আমি এসে গেছিইই……

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন সবাই। আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here