তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -০৫

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৫

ফুলের বাগানে হাটছে আবরার। চারপাশে ফুল আর ফুল। যেনো কোনো ফুলের পৃথিবীতে চলে এসেছে সে। কোথাও নেই কোনো মানুষ। সব টা নিরব। ফুলের মোহনীয় সুবাস ছড়াচ্ছে চারদিকে। ভালোই লাগছে আবরারের। ধীরে ধীরে সামনে এগোতে লাগলো সে। হঠাৎ কোনো রমণীর খিলখিল হাসির শব্দ শুনতে পেলো আবরার। থেমে গেলো তার পা। শব্দ অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই থ*ম*কে গেলো সে। মেরুন রঙের শাড়ি পরিহিতা এক রমণী ফুলের তৈরি দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে। এই হাসির শব্দ তো তার চেনা, হ্যা খুব করে চেনা। সে শুনেছে এই শব্দ, খুব কাছ থেকে অনুভব করেছে।

মেয়েটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না আবরার। কারণ মেয়ে টা উল্টো দিকে মুখ করে আছে। তার দীঘল কালো কেশ দোলনায় বসে থাকার দরুন কখনো মাটিতে লু*টি*য়ে পড়ছে তো কখনো বাতাসে দুলছে। আবরার ম*ন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে, মুগ্ধ হয়ে শুনছে তার প্রানবন্ত হাসির শব্দ। সময় পে*রো*লো, অনেক টা সময়। হঠাৎ এক দ*ম*কা হাওয়া ছুঁয়ে দিলো আবরারের চোখ মুখ। হুঁশ ফিরলো তার। মস্তিষ্কের মধ্যে না*ড়া দিলো মেয়ে টা কে? এতক্ষন সে যার দিকে তাকিয়ে ছিলো? তার তো দেখা উচিত মেয়েটা কে সামনে থেকে। সে পা বাড়ালো মেয়েটার কাছে যাওয়ার জন্য। মেয়ে টা আর হাসছে না, দোলনাও আর আগের মতো দুলছে না। হয়তো সে নেমে যাবে। আবরার দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো এবার। মেয়েটা কে যে তার দেখতেই হবে।

দোলনার কাছাকাছি গিয়ে থেমে গেলো আবরার। দোলনা ততক্ষনে থেমে গিয়েছে। মেয়েটা এবার উঠে দাঁড়ালো। অতি সন্তর্পণে নিজের দীঘল কেশ টেনে সামনের দিকে নিলো। ধীরে ধীরে ঘুরতে লাগলো আবরারের দিকে। হৃদস্পন্দন অ*স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেলো আবরারের। কপালে সূ*ক্ষ্ম ঘা*মে*র রেখা দেখা দিলো। সে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো অচেনা রমণীর দিকে। যেই মাত্র মেয়ে টা আবরারের দিকে ফিরলো বলে অমনি ঘুম ভে*ঙে গেলো আবরারের। লা*ফ দিয়ে উঠে বসলো সে। দ্রুত গতিতে হৃদস্পন্দন চলছে তার। এসির মধ্যে থাকা সত্ত্বেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘা*ম জ*মে*ছে। হাত দিয়ে কপালের ঘা*ম মু*ছে ভাবতে লাগলো আবরার,

— আজ দুই টা বছর পর আবার সেই মেয়ে কে নিয়ে স্বপ্ন দেখলাম আমি। ইশ একটুর জন্য মেয়েটার মুখ টা দেখতে পেলাম না। আরেকটু পর স্বপ্ন টা ভা*ঙ*লে কি হতো উফঃ!

আবরার এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢ*ক*ঢ*ক করে খেয়ে ফেললো। তারপর আস্তে আস্তে বিছানায় শুয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগলো।

——–

ভার্সিটি তে প্রবেশ করেই আরশি দেখলো ভার্সিটি সাজানো হচ্ছে। সে কিছু টা অবাক হলো। কোনো প্রোগ্রাম আছে কি? তাহলে তাকে কেউ বললো না যে? আরশি সোজা ক্যান্টিন এ চলে গেলো। সবাই ক্যান্টিনেই আছে। সে ধ*প করে একটা চেয়ারে বসে বললো,

— ভার্সিটি সাজাচ্ছে দেখলাম। কোনো প্রোগ্রাম আছে কি?

মুন বললো,

— হ্যা রে ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্টদের বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। আজকে নাকি ক্লাস ও হবে না। আমরা কিছুক্ষন আগেই জানতে পারলাম।

রাহুল নাক মুখ কুঁ*চ*কে বললো,

— ধু*র আগে যদি জানতাম ক্লাস হবে না তাহলে তুলি রে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাইতাম।

মোহনা রাহুল কে ভে*ঙি*য়ে বললো,

— তুলি কে নিয়ে ঘুরতে যাইতাম। আইছে আমার নি*ব্বা মহাশয়। হেহ!

আরশি হুট করে দাঁ*ত কে*লি*য়ে তাকালো রাহুলের দিকে। রাহুল চোখ মুখ অ*ন্ধ*কা*র করে বললো,

— কিরে কি সমস্যা এমনে তাকাস কেন? তোর নিয়ত আমার ঠিক লাগতেসে না। কি শ*য়*তা*নি বুদ্ধি আ*ট*তে*সোস?

আরশি আরও বড় হাসি দিয়ে বললো,

— চল আজকে আমাদের ট্রিট দিবি আর তুলির সাথেও মিট করাবি। আজকে যেহেতু কোনো ক্লাস নাই তাহলে শুভ কাজে দেরি কিসের?

আরশির কথা শেষ হতেই বন্ধু মহলের সবাই লা*ফি*য়ে উঠলো। আজ তারা ট্রিট নিয়েই ছাড়বে। রাহুল বে*চারার মুখ টা কাঁ*দো কাঁ*দো হয়ে গেলো। আজ যে এরা তাকে ফ*কি*র বানিয়েই ছাড়বে বুঝতে পারছে সে। সবার জ*ড়া*জ*ড়ি*তে তুলি কে ফোন দিয়ে রেস্টুরেন্ট এর ঠিকানা দিয়ে আসতে বললো রাহুল। তারপর দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ফ*কি*র হওয়ার উদ্দেশ্যে।

———

বেশ বড় নামিদামি রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে আরশি আর বন্ধুরা। রাহুল তাদের এখানেই নিয়ে এসেছে। তুলিকা এখনো আসে নি। তাই সব বন্ধুবান্ধব রা আলোচনা করছে কিভাবে আজকে রাহুলের পকেট খালি করা যায়। আর রাহুল মুখ গো*ম*ড়া করে ওদের দেখছে। অবশ্য এতে রাহুলের তেমন কোনো স*ম*স্যা হবে না। বেশ বড়লোক বাড়ির একমাত্র সন্তান সে। বাবা ব্যবসা করেন। ঢাকা শহরে নিজেদের দুইটা বাড়ি আছে। এছাড়া গ্রামেও অনেক সম্পত্তি রয়েছে রাহুলের বাবা মায়ের।

দশ মিনিট পরে ওদের টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালো একটা মেয়ে। গোলগাল, কিউট চেহারা। ভী*ত ভী*ত মুখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। আরশি তো আগেই দেখেছিলো তুলি কে। সে দেখেই চিনে ফেললো তুলি কে। কিন্তু ওর মুখ দেখে বুঝলো হয়তো ভ*য় পাচ্ছে বা অ*স্বস্তি বোধ করছে। তাই আরশি তুলি কে স্বাভাবিক করার জন্য ওকে নিজের পাশে বসিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞাসা করতে লাগলো। বন্ধুমহলের সবাই বুঝতে পেরে তারাও স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে লাগলো তুলির সাথে। যেনো অনেকদিনের চেনা।

আরশি রা কফি অর্ডার দিয়েছিলো। প্ল্যান হলো কফি খেতে খেতে গল্প করবে। তারপর লাঞ্চ করে বের হবে। কফি আসতেই ওয়েটার একে একে সবাই কে দিতে লাগলো। আরশি কে দিতে গিয়ে হুট করে ব্যা*লে*ন্স হা*রি*য়ে ফেললো ওয়েটার। ফলস্বরূপ কিছু টা কফি পড়লো আরশির গলায় ঝু*লা*নো স্কার্ফ এ। ওয়েটার ভী*ত হয়ে বললো,

— ম্যাম আমি দুঃ*খি*ত। কিভাবে যেনো পা ম*চ*কে গেলো। আপনি প্লিজ ম্যানেজার স্যার কে কিছু বলবেন না। নাহলে আমার চাকরি চলে যাবে।

আরশি মৃদু হেসে বললো,

— আরে ভাইয়া ভ*য় পাবেন না। সমস্যা নেই। মাঝেমাঝে এমন টা হতেই পারে। আমি ম্যানেজার কে কিছু বলবো না। আপনি কি আমাকে একটু ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দিবেন? স্কার্ফ টা ক্লি*ন করতাম।

ওয়েটার লোকটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো,

— ধন্যবাদ ম্যাম। আপনি আসুন, আমি আপনাকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিচ্ছি।

মোহনা বললো,

— আমরা কেউ সাথে আসবো দোস্ত?

আরশি বললো,

— আরে না তোরা আ*ড্ডা দে, আমি যাবো আর আসবো।

ওয়েটার লোক টা আরশি কে ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দিলো। আরশি ভেতরে গিয়ে স্কার্ফ টা ধুয়ে নিলো। হাত মু*ছ*তে মু*ছ*তে বের হলো সে। কিছু টা এগোতেই কারোর সাথে জো*রে*শো*রে একটা ধা*ক্কা খেলো আরশি। মাথায় বেশ ব্য*থা পেয়েছে সে। মাথা ড*ল*তে ড*ল*তে না তাকিয়েই বললো,

— মাগো মাথা মনে হয় ভে*ঙেই গেলো। কোন ব্রান্ডের পি*লা*র এর লগে বা*রি খাইলাম? উ*হঃ! এখন থেকে সবাই কে সাজেস্ট করবো এই পি*লা*র দিয়ে বাড়ি বানাতে।

কথা টা বলতে বলতে সামনে তাকালো আরশি। একজোড়া গভীর কালো চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু টা কুঁ*চ*কে আছে সামনের মানুষটার। হুডির ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢাকা, মুখে মাস্ক। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। তবুও আরশি এক সেকেন্ড সময় ব্য*য় না করেই কিছু টা উ*চ্চ স্বরে বললো,

— আরে এমপি সাহেব যে?

থ*ত*ম*ত খেয়ে গেলো আবরার। দ্রুত নিজের মুখের হাত দিয়ে দেখলো মাস্ক ঠিক আছে কিনা। নাহ মাস্ক তো ঠিক আছে, তবুও এই মেয়ে তাকে চিনলো কিভাবে ভাবতে লাগলো আবরার। আরশির কথা শুনে অলরেডি তার মে*জা*জ হ*ট হয়ে আছে তাও চুপ ছিলো যাতে আরশি তাকে না চেনে। নাহলে আ*জা*ই*রা কথা বলার জন্য এতক্ষনে আরশি দুই চার টা ধ*ম*ক অবশ্যই খেতো। আরশি আবরার কে কোনো কথা না বলতে দেখে দাঁ*ত কে*লি*য়ে বললো,

— আরে আর মুখ বন্ধ রেখে লাভ নেই। আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি এমপি সাহেব।

আবরার আরশির দিকে কিছু টা চে*পে ফিসফিস করে বললো,

— আস্তে কথা বলো মিস আরশি। দেখতেই পাচ্ছ কেউ যাতে না চিনে তাই এভাবে এসেছি। কিন্তু তুমি আমাকে চিনলে কি করে?

আরশিও আবরারের মতো ফিসফিস করে বললো,

— ওই যে আপনার চোখ দেখা যাচ্ছে না? ঐটাই এনাফ আপনাকে চেনার জন্য।

অবাক হলো আবরার। কই এতজনের সামনে দিয়ে আসলো। কেউ তো চিনলো না। আবরারের চি*ন্তা*র মাঝে আরশি আবার ফিসফিস করে বললো,

— আচ্ছা এমপি সাহেব আপনি এমন চো*র ডা*কা*তের মতো রূপ নিয়ে ঘুরছেন কেনো? কিছু ডা*কা*তি করতে এসেছেন বুঝি?

আবরার ক*ট*ম*ট করে তাকালো আরশির দিকে। আরশি বুঝলো আবরার রে*গে যাচ্ছে। তবে তার ও তো ভালো লাগছে আবরার কে চে*তি*য়ে দিতে। আবরার দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— একটু একাকী সময় কা*টা*তে এসেছিলাম। গা*র্ড, সেলফি, অটোগ্রাফ, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর এসব দিতে দিতে হাঁ*পি*য়ে উঠি মাঝে মাঝে। তখন এভাবেই মুখ ঢে*কে বের হতে হয় একা একা। যাতে কেউ না চিনে। চিনলেই এখন সবাই হু*ম*ড়ি খেয়ে পড়বে। আর আমার শ*ত্রু*রাও বুঝোই তো?

আরশি বুঝলো আবরারের ব্যাপার টা। দিনশেষে সেও তো একজন মানুষ। তারও হয়তো ইচ্ছা করে স্বাধীন ভাবে হাঁটা চলা করতে। সারাক্ষণ গা*র্ড সাথে নিয়ে থাকা আসলেই কেমন যেনো। লাইক ব*ন্দী জীবন, তাদের ছাড়া এক পা ও ন*ড়া যায় না। আবরার আরশি কে গভীর ভাবে কিছু ভাবতে দেখে ওর চোখের সামনে তু*ড়ি দিলো। জিজ্ঞাসা করলো,

— কি এতো ভাবেন মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আরশি এমন অদ্ভুত নামে ডাকতে শুনে ভে*বা*চে*কা খেলো। কিন্তু পরক্ষনেই মুখে লম্বা হাসি টে*নে বললো,

— আপনি কেমন এমপি বলেন তো? সাধারণ জনগণকেও ভ*য় পান। এটাই ভাবছিলাম।

আবরার নাক, মুখ কুঁ*চ*কে ফেললো। শ*ক্ত দৃষ্টি তা*ক করলো আরশির দিকে। আরশি দ্রুত বললো,

— আপনি থাকুন ভী*তু এমপি সাহেব। আমি গেলাম। আমার ফ্রেন্ডরা অপেক্ষা করছে।

আর দাঁড়ালো না আরশি। দ্রুত হেটে চলে গেলো আবরারের সামনে থেকে। আবরার তাকিয়ে রইলো আরশির যাওয়ার পানে। সে বুঝতে পেরেছে আরশি তাকে ইচ্ছা করে রা*গা*চ্ছি*লো। হয়তো মেয়েটার তাকে রা*গা*তে ভালো লাগে ভেবে মৃদু হাসলো আবরার। তারপর চলে গেলো নিজের কাজে।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। আমি দুঃ*খি*ত অ*নিয়মিত গল্প দেয়ার জন্য। আমার প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা চলছে। ভোর সকালে যেতে হয়, এতো এতো ঘন্টা ওখানে প্রাকটিক্যাল লিখতে হয়। তারপর বাসায় এসে আর গল্প লেখার এ*না*র্জি থাকে না। জানিনা আজকের পর্ব কেমন কি হয়েছে। অনেক চা*পে*র মধ্যে আছি। লেখার মধ্যে ভু*ল-ত্রু*টি পেলে ক্ষ*মা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here