তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -০৮

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৮

নিজের রুমে একাধারে ঘু*র*পা*ক খাচ্ছে আবরার। মানে পায়চারী করছে আরকি। রাত বারোটা দশ বা*জছে এখন। আবরার এবার পায়চারী থামিয়ে আপন মনে বলতে লাগলো,

— এতো রাতে দেয়াটা কি ঠিক হবে? কিন্তু না দিয়েও যে শান্তি পাচ্ছি না। ধ্যা*ৎ দিয়েই দেখি। না তুললে বারবার দিবো। আমার ফোন তুলতেই হবে হুমম।

বলেই নিজের ফোন হাতে নিলো আবরার আরশি কে ফোন করার জন্য। নাম্বার সে গা*র্ড এর কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু নিয়ে যে এমন অ*শান্তির মধ্যে পড়বে কে জানতো। নাম্বার পেয়ে ফোন দেয়ার জন্য তার মন টা আ*কু*পা*কু করছে।

মনোযোগ সহকারে পড়ছিলো আরশি। এমন সময় হুট করে বে*জে উঠলো তার ফোন টা। আরশি ফোন হাতে নিয়ে দেখলো unknown নাম্বার থেকে কল আসছে। তাই আর রিসিভ না করে রেখে দিলো। কল কে*টে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আবার ফোন টা সশব্দে বে*জে উঠলো। বি*র*ক্ত হলো আরশি। এই রাতেই দুই তিন ঘন্টা সে একটু ভালো করে, মনোযোগ দিয়ে পড়ে। এছাড়া সারাদিন তো তেমন সময় পায় না। আর এই সময় অচেনা নাম্বার থেকে অনবরত ফোন আসায় বি*র*ক্ত হলো সে। কারোর কোনো ই*মা*র্জে*ন্সি পড়লো কিনা ভেবে ফোন রিসিভ করলো আরশি। কিন্তু রিসিভ করে কানে দিতেই একটা ঝা*ড়ি খেলো সে।

— এতক্ষন লাগে ফোন রিসিভ করতে?

সাথে সাথে মুখ টা হা হয়ে গেলো আরশির। ফোন কান থেকে সরে গেলো তার। ত্রিশ সেকেন্ড এর মতো লাগলো নিজেকে স্বাভাবিক করতে। স্বাভাবিক হয়ে ফোন টা আবার কানে দিয়ে অবাক হয়ে বললো আরশি,

— এমপি সাহেব আপনি? আপনি এতো রাতে ফোন কেনো করেছেন?

আরশির প্রশ্নে হাঁ*স*ফাঁ*স করে উঠলো আবরার। কল তো দিয়ে দিয়েছে এখন কি বলবে? বলবে যে তার আরশি কে নিয়ে চি*ন্তা হচ্ছিলো? তার আ*ঘা*ত পাওয়া স্থানের কি অবস্থা এখন তা জানার জন্য মন ছ*ট*ফ*ট করছিলো? এসব বললে মেয়ে টা আবার উ*ল্টা*পা*ল্টা বুঝবে না তো? আচ্ছা সে আবার মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায় নি তো? আবরার নিজের চুলগুলো মু*ঠো করে পিছন দিকে ঠে*লে দিয়ে নিজেই নিজেকে শা*সা*লো,

— কি সব ভাবছি আমি? আমি কেন ওর প্রেমে পড়তে যাবো? আমার তো জাস্ট একটু চি*ন্তা হচ্ছে ওর জন্য। আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে বলে কথা। আর কিছু না। তুই একটু বেশি বেশি ভাবছিস আবরার।

আবরার নিজের গম্ভীরতা ব*জা*য় রেখে বললো,

— ইচ্ছা হয়েছে তাই দিয়েছি কোনো স*ম*স্যা?

আরশি মুখটা কে বি*কৃ*ত করে বললো,

— অ্যা… এই আপনি কেমন এমপি বলেন তো রাত বি*রাতে একটা মেয়ে কে ফোন দিয়ে বলছেন ইচ্ছা হয়েছে তাই দিয়েছি?

আরশির কথায় থ*ত*ম*ত খেয়ে গেলো আবরার। সে বুঝে না এই মেয়ে সব কথায় তার এমপি হওয়ার বিষয় টা টে*নে আনে কেনো। আবরার এবার টি*ট*কা*রি মে*রে বললো,

— তোমার সাথে প্রেম করতে কল দেই নি মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। সো এতো রিএক্ট করার কিছু নেই।

আরশি মুখ বা*কি*য়ে বললো,

— আপনার সাথে প্রেম করতে আমার ব*য়ে*ই গেছে হাহ।

আবরার ও আরশির মতো করেই বললো,

— তোমার সাথে প্রেম করতে আমার ব*য়ে*ই গেছে হাহ।

আরশি আবরার কে ওর মতো কপি করে বলতে শুনে নাক মুখ কুঁ*চ*কা*লো। বললো,

— কি জন্য ফোন করেছেন তাই বলুন।

আবরার গলা ঝে*ড়ে বললো,

— তোমার হাত পায়ের ক্ষ*ত এর অবস্থা জানার জন্য ফোন করেছি।

আরশি ভ্রু উঁচু করে বললো,

— এতো চি*ন্তা যে ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছেন?

আবরার চোখ ছোট ছোট করে বললো,

— যতোই হোক আমাকে বাঁচাতে গিয়েই আ*ঘা*ত পেয়েছো তাই জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না। তো বলো কি অবস্থা?

আরশি নিজের হাত পা প*র*খ করে বললো,

— ঠিকঠাক। এই সামান্য আ*ঘা*তে আমার কিছু হবে না। সো এতো চি*ন্তা করার দরকার নেই।

আবরার চি*ন্তি*ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

— ক্লিন করে আবার অয়েন্টমেন্ট লাগিয়েছিলে?

কিছুক্ষন চুপ থাকলো আরশি। কারণ সে এসে শাওয়ার নিয়ে আর কিছুই লাগায় নি। আ*ল*সা*মি লাগে তার এসব করতে। আরশি কে চুপ থাকতে দেখে আবরার আবার জিজ্ঞাসা করলো,

— লাগাও নি তার মানে?

আরশি নি*ভে যাওয়া গলায় বললো,

— না।

আবরারের কেনো যেনো রা*গ লাগলো। ভাবতে লাগলো এতো কে*য়া*র*লে*স কেনো এই মেয়ে? আবরার ক*ড়া গলায় বললো,

— লাগাও নি কেনো?

আরশি এবার গলায় জো*র বা*ড়িয়ে বললো,

— আমার ইচ্ছা তাই লাগাই নি। আপনার এতো না ভাবলেও চলবে।

চুপ হয়ে গেলো আবরার। আরশি কে কিছু নিয়ে জো*র করার অধিকার তো তার নেই। আবরার কে চুপ হয়ে যেতে দেখে খা*রা*প লাগলো আরশির। হয়তো তার কথায় আবরারের খা*রা*প লেগেছে। কতগুলো বছর পর একজন তার এতো কেয়ার করছে। কিন্তু সে কেমন ব্যবহার করলো? আরশি দেখলো আবরার কথাও বলছে না আর কল ও কা*ট*ছে না। তাই আরশি নরম গলায় বললো,

— রাখছি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।

কল কে*টে দিলো আরশি। টেবিলে মাথা রেখে মিনমিনিয়ে বলতে লাগলো,

— আচ্ছা এমপি সাহেব কি আমার প্রতি দু*র্ব*ল হয়ে পড়েছেন? তার আমার প্রতি এতো যত্নশীল হওয়া টা কি স্বাভাবিক? কই মুন তার কারণে আ*ঘা*ত পাওয়ার পর তো উনি মুনের খোঁজ খবর নেন নি? নাম্বার জো*গা*ড় করা তো উনার জন্য তেমন কোনো ব্যাপার না। তাহলে আমার প্রতি এতো যত্নশীল হওয়া টা… না না কি ভাবছিস আরশি? কোথায় উনি আর কোথায় তুই? উনার মতো ধনী, সুদর্শন, যোগ্যতা সম্পন্ন একজন এমপি তোর মতো কা*ই*ল্লা মেয়ের প্রেমে পড়বে? সো ফানি। আজকাল সবাই রূপ, সৌন্দর্য খুঁজে। আমার না আছে যোগ্যতা, না আছে রূপ আর না আছে অর্থ। ধ্যা*ৎ কি সব ভাবছিলাম। উনি হয়তো নরমালি খোঁজ খবর নিয়েছেন আর আমি কতো বেশি ভেবে ফেলেছি ছে*হঃ।

আরশি এসব চি*ন্তা মাথা থেকে ঝে*ড়ে ফে*লে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলো।

অন্যদিকে আবরার এখনো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে মনে মনে বললো,

— কেমন মেয়ে এটা? আমার সাথে কথা বলার জন্য মেয়েরা মু*খি*য়ে থাকে আর এই মেয়ে আমাকে পা*ত্তা দিলো না। কেন দুই চার টা কথা কি নিজে থেকে জিজ্ঞাসা করতে পারতো না? মুখে কি ঠো*সা পড়ে যেতো এক্সট্রা দুই তিনটা কথা নিজে থেকে জিজ্ঞাসা করলে? হুহ!
“ভাবের রাণী, আরশি দি গ্রেট অদ্ভুত চোখওয়ালি।”

আবরারের মাথায় অন্য একটা বিষয় আসতেই রা*গে চোখ লাল হয়ে গেলো তার। সে আবার একজন কে কল করলো। অপর পাশের ব্যক্তি রিসিভ করতেই রা*গী কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— কোনো খোঁজ পেয়েছো?

অপর পাশের ব্যক্তি কিছু একটা বলতেই বাঁ*কা হাসলো আবরার। ধা*রা*লো কণ্ঠে বললো,

— গুড। তাকে আমার প্রিয় জায়গায় নিয়ে এসো। তার কাছ থেকে যে গল্প শুনতে হবে আমাকে। সা*ব*ধা*নে নিয়ে আসবে। তার সামান্যতম ক্ষ*তি যেনো না হয়। নাহলে জানোই তো কি হবে তোমাদের সাথে?

অপর পাশের ব্যক্তি আবার কিছু একটা বলমাত্র কল কে*টে দিলো আবরার। দক্ষ হাতে ফোন ঘু*রাতে ঘু*রাতে বললো,

— তুই কে তা খুব জলদিই আমি জেনে যাবো। তুই এখনো বুঝতে পারছিস না তুই কার সাথে লাগতে এসেছিস। যখন বুঝতে পারবি তখন খুব দেরি হয়ে যাবে। বাঁচার রাস্তা আর খুঁজে পাবি না। আর আমার স*ন্দে*হ যদি সত্যি হয় তাহলে তোর জন্য ভ*য়া*ন*ক মৃ*ত্যু অপেক্ষা করছে। কারণ আমার ডায়েরিতে প্র*তা*র*ক*দের জন্য ক্ষ*মা নামক কোনো শব্দ নেই। কতো গেম খেলতে চাস খেল। আমিও দেখতে চাই তুই কতো খেলতে পারিস।

আরশির কথা আবার মনে পড়তেই ফোন ঘু*রা*নো থামিয়ে দিলো আবরার। মুচকি হেসে বললো,

— থ্যাংকস মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। তুমি হেল্প না করলে এতো দ্রুত কিছু করতে পারতাম না। তোমার জন্য হয়তো তার সন্ধান শীঘ্রই পেতে চলেছি। তবে তোমার জীবন হয়তো আমার জন্য ঝু*কি*র মধ্যে পড়ে গেছে। চি*ন্তা করিও না, আমার দেহে প্রাণ থাকতে তোমার কোনো ক্ষ*তি হতে দেবো না।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here