তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -১৪

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৫

বড়, নামকরা একটা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরশি। বিশাল বড় দালান। আরশি আন্দাজ করে ধরে নিলো বিশ পঁচিশ তলা হবে। সম্পূর্ণ বিল্ডিং এর সামনের সাইড কা*চ দ্বারা তৈরি। বিল্ডিং এর ডিজাইন দেখে স্পষ্ট বুঝা যায় এটা তৈরি করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। বিশাল দালানের মাঝামাঝি অংশে বড় করে লেখা ‘এবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’।

আজ না চাইতেও প্রচুর না*র্ভা*স আরশি। ভিতরে যেতেও তার হাত পা কাঁ*প*ছে। এই প্রতিষ্ঠানের খোঁজ সে আহিয়ানার কাছ থেকে পেয়েছে। সে চাকরি খুঁজছে এটা বলে আসার পরের দিন ভার্সিটি তে গেলে আহি তাকে নিউজ পেপারের একটা কাঁ*টা অংশ দেয় যেখানে এই কোম্পানির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিলো। তারা বেশ কয়েকজন নিবে নিজেদের কোম্পানি তে। আহি আরও জানায় এটা অনেক বড় আর জনপ্রিয় শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর যেভাবে দিন কে দিন উন্নতি করছে তাতে দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের জায়গা নিতে বেশি সময় লাগবে না হয়তো। এই প্রতিষ্ঠান নাকি এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন এর থেকে বেশি পরিশ্রম, মেধা আর ধৈর্য্য কে গুরুত্ব দেয়। তারচেয়ে বড় কথা এখানে জব পেলে আরশি চাকরির পাশাপাশি ভার্সিটির ক্লাসগুলোও করতে পারবে। তাদের দুটো শিফট আছে। একটা সকাল দশটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত আরেকটা দুপুর দুটো থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। আরশি দ্বিতীয় শিফটে করলে ভার্সিটির ক্লাস করে ওখানে যেতে পারবে।

দুইদিন আগে একটা রিটেন পরীক্ষাও দিয়েছে আরশি। তাতে পাশ করে যাওয়ায় আজ ইন্টারভিউ র জন্য ডাকা হয়েছে তাকে।

আরশি একটা শু*ক*নো ঢো*ক গি*লে ভিতরে প্রবেশ করলো। ভিতর টা দেখেই মন জুড়িয়ে গেলো আরশির। এমন একটা জায়গায় ই তো সবাই জব করতে চায়। সবকিছু অত্যান্ত সুন্দর। রিসেপশন থেকে আরশি কে জানিয়ে দেয়া হলো ইন্টারভিউ পঞ্চম তলায় হচ্ছে। আরশি লিফটে চ*ড়ে পঞ্চম তলায় আসলো। এসে দেখলো আরও অনেক প্রার্থী অপেক্ষা করছে। সবাই তারচেয়ে বড় আর অভিজ্ঞ হবে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। একটা চেয়ারে চু*প*টি করে বসলো সে। ভ*য়ে বুঁকের মাঝে ঢি*প*ঢি*প করছে তার। ইন্টারভিউ এর প্রিপারেশন নেয়ার জন্য বেশি সময় পায় নি সে। আরশির মনে হচ্ছে অতিরিক্ত না*র্ভা*সনেস এর কারণে সে ভিতরে গিয়ে কোনো প্রশ্নের ই উত্তর দিতে পারবে না। এক নাগাড়ে হাতে হাত ঘ*ষ*ছে আরশি আর নিজে কে বুঝাচ্ছে তাকে পারতেই হবে।

প্রায় আধা ঘন্টা পর আরশির সিরিয়াল আসলো। ধীর পায়ে অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো সে। কিন্তু চেয়ারে বসে থাকা লোকটা কে দেখে ভীষণ অবাক হলো আরশি। কারণ লোক টা আর কেউ নয় স্বয়ং আবরারের বাবা আব্বাস আহমেদ।

আরশি কে ভী*তু মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমৎকার একটা হাসি উপহার দিলেন আব্বাস আহমেদ। আদুরে কণ্ঠে বললেন,

— না*র্ভা*স হওয়ার কিছু নেই। তুমি চেয়ারে বসো মামুনি।

আব্বাস আহমেদের মুখে মামুনি ডাক শুনে হালকা কেঁ*পে উঠলো আরশি। কতো বছর পর কেউ তাকে আদর করে মামুনি বলে ডাকলো। তার আব্বু ও তো তাকে মামুনি বলতো। চোখে পানি আসতে চাইলেও নিজেকে কন্ট্রোল করলো আরশি। মৃদু হাসি দিয়ে চেয়ার টে*নে বসে পড়লো। আব্বাস আহমেদ হাসি হাসি মুখে বললেন,

— তোমাকে মামুনি বললাম। কিছু মনে করো না। ভুল না হলে তুমি আমার মেয়ের বয়সী হবে। আর তোমার চোখ, মুখের অবস্থা দেখে নিউ ক্যান্ডিডেট মনে হচ্ছে।

আরশি আলতো করে মাথা না*ড়া*লো। লোকটার চমৎকার হাসি দেখে আর এতো সুন্দর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো আরশি। আরশির মনের ভ*য়গুলো যেনো কোথাও উ*বে গেছে আব্বাস আহমেদের ব্যবহারে। আব্বাস আহমেদ আরশির কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো চাইলেন। সব চেক করে বেশ অনেকগুলো প্রশ্ন করলেন আরশি কে। আরশি দুই একটা ছাড়া বাকি সব প্রশ্নের সুন্দর মতো উত্তর করলো। প্রশ্ন পর্ব শেষ হতেই তিনি নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। আরশি কে জিজ্ঞাসা করলেন,

— অনার্স কমপ্লিট না করেই চাকরি করতে চাওয়ার কারণ টা কি জানতে পারি?

আরশি ছোট একটা শ্বাস ফেলে বললো,

— পার্সোনাল প্রব*লেম স্যার। আমি চাই না কেউ আমার স*ম*স্যা শুনে আমাকে ক*রু*না করুক। নিজ যোগ্যতায় চাকরি না পেলেও আমার আ*ফ*সোস নেই। তাই এই ব্যাপার টা খো*লা*সা করতে পারলাম না। দুঃ*খি*ত।

কথা শেষ করে মাথা নিচু করে ফেললো আরশি। তার মনে হচ্ছে সে হয়তো মানুষটার সাথে বে*য়া*দবি করে ফেলেছে।

অন্যদিকে আরশির কথায় আরশির চরিত্র সম্পর্কে আন্দাজ করে ফেললেন আব্বাস আহমেদ। আরশির স্ট্রং পার্সোনালিটি দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। উৎফুল্ল কণ্ঠে বললেন,

— ইউ আর সিলেক্টেড।

কথা টা কানে যেতেই চোখ বড় বড় করে তাকালো আরশি। আব্বাস আহমেদ হেসে দিয়ে বললেন,

— ইয়েস তুমি ঠিক শুনেছো। তুমি এই মাস থেকেই, এই মাস থেকে কি আগামীকাল থেকেই আমাদের কোম্পানি তে জয়েন করবে। আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে নি*রাশ করবে না। কাজের ক্ষেত্রে নিজের বেস্ট টা দিবে। আমি তোমাকে তোমার যোগ্যতা দেখেই চাকরি দিলাম। এবার তোমার দায়িত্ব নিজের কাজের মাধ্যমে এটা প্রমান করা যে আমি তোমাকে চাকরি দিয়ে কোনো ভুল করি নি।

আরশি আনন্দে মাথা ঝা*কা*লো। কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা মিশিয়ে বললো,

— ধন্যবাদ স্যার। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আব্বাস আহমেদ হাসলেন। বললেন,

— আমি ম্যানেজার কে জানিয়ে দিচ্ছি। উনি তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবে।

আরশি আব্বাস আহমেদ কে আরও একবার ধন্যবাদ জানিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো। আরশি বেরিয়ে আসতেই ম্যানেজার আরশি কে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলেন আর বললেন বাকি টা আগামীকাল বুঝাবেন। আরশি খুশি মনে অফিস থেকে বেরিয়ে আসলো। আজ সে অনেক অনেক অনেক খুশি। ম্যানেজার এর কাছে শুনেছে প্রথম বেতন ত্রিশ হাজার। পরবর্তীতে কাজ দেখে এবং এক্সপেরিয়েন্স বাড়ার সাথে সাথে বেতন ও বৃদ্ধি পাবে। এতেই খুশি আরশি। ত্রিশ হাজার কম নয়।

আরশি সোজা ভার্সিটি তে চলে আসলো। আজ ক্লাস মিস দিয়ে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলো সে। এসে দেখলো এখনো ক্লাস চলছে। তাই ক্যান্টিনে বসে ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষা করবে ভাবলো। ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ চা অর্ডার করলো আরশি। গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো,

— আচ্ছা আমার কি আবার এমপি সাহেবের সাথে দেখা হবে? এমপি সাহেব কি আসবেন অফিসে? ধুর কি সব ভাবছি? উনি নিজের রা*জ*নীতি ছেড়ে অফিসে কেনো আসবেন? অফিস টা তো উনার বাবার। উনার বাবাই চালায় হয়তো। তাই তো উনিই ইন্টারভিউ নিলেন।

আরশি মুখ বাঁ*কা করে বি*ড়*বি*ড় করলো,

— আর এমপি সাহেব আসলেও আমার কি হুহ। যদি আসেও উনার সামনে যাবো না। টেবিলের চি*পা*য় লু*কায় থাকমু তাও ওই অ*সভ্য এমপির সামনে যামু না।

আরশির ভাবনার মাঝে কেউ তার মাথায় একটা চা*টি মা*র*লো। আরশি চোখ রা*ঙি*য়ে তাকালো চা*টি মা*রা ব্যক্তির দিকে। কারণ সেই ব্যক্তি আর কেউ নয় আবির। আবির আরশির তাকানো দেখে গা জ্বা*লা*নি একটা হাসি দিলো। তারপর আরশির পাশে বসে পড়লো। বাকিরাও হু*ড়*মু*ড় করে বাকি সিট গুলো দ*খল করে নিলো। আহি চোখ বড় বড় করে আরশি কে জিজ্ঞাসা করলো,

— কিরে দোস্ত তুই না ইন্টারভিউ দিতে গেছিলি? চাকরি হইছে তোর?

বাকিরাও উৎসাহী চোখে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। আরশি মাথা নত করে মুখ টা ল*ট*কে বললো,

— আসলে….

আরশির এক্সপ্রেশন দেখে সবাই ভ*য় পেয়ে গেলো। ভাবলো চাকরি হয় নি হয়তো। সবাই মুখ গো*ম*ড়া করে ফেললো। ওদের এভাবে হ*তা*শ হতে দেখে মিটমিট করে হাসলো আরশি। এবার একটু জো*রে হেসেই বললো,

— আমার চাকরি টা হয়ে গেছে।

আরশির চাকরি হয়ে গেছে শুনে খুশিতে চোখ ঝ*ল*ম*ল করে উঠলো সবার। মোহনা আর আহি তো এক লা*ফে সিট থেকে উঠে এসে আরশি কে দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। আহি খুশিতে গ*দ*গ*দ হয়ে বললো,

— কংগ্রাচুলেশন্স দোস্ত। তুই তো আমাদের ভ*য় ই পাইয়ে দিয়েছিলি।

আবির আরশির মাথায় আরেক টা চা*টি মে*রে বললো,

— ‘আরু শ*লার ঝা*ড়ু’ চাকরি তো পাইয়া গেসোস। এবার ট্রিট দে আমাদের।

আরশি চোখ পা*কি*য়ে তাকালো আবিরের দিকে। ধু*ম*ধা*ম দুইটা কি*ল ও বসিয়ে দিলো ওর পিঠে। রাহুল ও এসে দুইটা কি*ল দিলো। আবির নিজের পিঠ ড*লতে ড*লতে কাঁ*দো কাঁ*দো কণ্ঠে বললো,

— ওই রাহুলের বাচ্চা তুই কি*ল দিলি কেন?

রাহুল গাল ফুলিয়ে বললো,

— তুই আমার দেয়া নাম নিয়ে নিলি কেন? আমি এই নামে ডাকমু তুই ডাকবি না।

মুন ওদের থামিয়ে বললো,

— আরে থাম তোরা ভাই। আরশি এটা বল কোম্পানি কেমন লেগেছে তোর?

আরশি আলতো হেসে বললো,

— অনেক ভালো। বিশেষ করে কোম্পানির মালিক। তার ব্যবহার মুগ্ধ করার মতো। জানিস আমি না*র্ভা*স হচ্ছিলাম দেখে এতো সুন্দর করে কথা বললো যে আমার না*র্ভা*সনেস সব উ*ধা*ও হয়ে গেলো। এতো ভালো মালিক হলে আর কি লাগে?

সবাই খুশি হলো আরশির জন্য। আবির আবার বলে বসলো,

— ট্রিট দে দোস্ত। তোর জন্য অনেক অনেক দোয়া দিমু।

আরশি বাঁ*কা চোখে তাকিয়ে বললো,

— চাকরি পেয়েছি মাত্র এখনো স্যালারি পাই নি।

আবির ৩২ দাঁ*ত বের করে বললো,

— আপাতত চা ট্রিট দে। স্যালারি পাইলে লাঞ্চ ট্রিট নিবো হুহ।

আরশি হেসে সবার জন্য চা অর্ডার করলো। আজ সে অনেক খুশি। চা ট্রিট দেয়াই যায়।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই। আর যারা এমপি সাহেব কে মিস করছেন তারা আর একটু অপেক্ষা করুন। এমপি সাহেব আসিতেসে 🤧। সবাই ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here