তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -২৪

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২৪

কেউ কোমর পেঁ*চি*য়ে নিজের দিকে টে*নে নেয়ায় কেঁ*পে উঠলো আরশি। মাথা গিয়ে ঠে*ক*লো সামনের ব্যক্তির বুঁকে। নাসারন্ধ্রে এসে ঠে*ক*লো পরিচিত ঘ্রাণ। ধীরে ধীরে পি*ট*পি*ট করে চোখ খুললো আরশি। মুখ টা সামান্য উঁচু করে সামনের মানুষটার দিকে তাকালো সে। সামনের মানুষটা কে দেখে মুখ টা হা হয়ে গেলো তার। কারণ সামনের মানুষ টা আর কেউ নয় বরং আবরার। যে এই মুহূর্তে এক দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকটাও পড়ছে না। কেমন নে*শা*লো তার চাহনি। ওই নে*শা*লো চোখের দিকে তাকিয়ে বুঁকের ধু*ক*পু*কা*নি কয়েক গুন বেড়ে গেলো আরশির। সে চেয়েও নিজের চোখ সরাতে পারলো না। তাকিয়ে রইলো আবরারের ওই গভীর কালো চোখের দিকে।

——

আজ আহির গায়ে হলুদ। কিছুক্ষন আগেই আহির পাঠানো গাড়িতে করে তাদের বাসায় এসেছে আরশি। আহি বড়লোক বাড়ির মেয়ে তা আরশি আ*ন্দা*জ করেছিলো কিন্তু এতো বড়লোক বাড়ির মেয়ে তা আজ ওদের বাড়িতে আসার পর বুঝতে পারলো। বিশাল জায়গা নিয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি আহিদের। আরশি যতো ভিতরের দিকে প্রবেশ করেছে ততোই অবাক হয়েছে। প্রায় সব রকমের বিলাসিতা রয়েছে আহিদের বাড়িতে। বাড়ির বাইরে অনেক অনেক গা*র্ড পা*হা*রা দিচ্ছে। আরশির মনে প্রশ্ন জ*মে*ছিলো গা*র্ড দেখে। কিন্তু ভিতরে আসার পর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ ই পেলো না আরশি। সে সবার পরে আসায় আহি তা*ড়া*হু*ড়ো করে তাকে রেডি হতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাও আবার আজ নাকি তাকে শাড়ি পড়তে হবে। আরশি কিছুতেই রাজী হতে চাচ্ছিলো না। সে শাড়ি পড়তেও জানে না আর না সামলাতে জানে। কিন্তু আহির এক কথা আজ তারা সব বান্ধুবী একই গেট আপ নিবে। আরশি কেও পড়তেই হবে। আর শাড়ি পড়া নিয়ে সে যেনো কোনো চি*ন্তা না করে। পার্লারের মহিলারা তাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবে। আরশি মানতে না চাইলেও আহির কাঁ*দো কাঁ*দো ফেস টা দেখে শেষমেষ রাজী হতে হলো। কমলা, হলুদের মি*শে*লে তৈরি শাড়ি। পারে সুন্দর কাজ করা। আরশি কে শাড়ি পড়ানো শেষ হতেই আহি, মোহনা, মুন সবাই হা করে তাকালো তার দিকে। কারণ এই প্রথম আরশি কে তারা শাড়িতে দেখলো।

আহি আরশির কাছে গিয়ে আরশির চারপাশে ঘুরে ঘুরে ওকে দেখতে লাগলো। বললো,

— দোস্ত তোকে তো হে*ব্বি মানিয়েছে রে। ‘শাড়িতেই নারী’ কথাটা আসলেই ঠিক।

কথা বলতে বলতে এক টা*নে আরশির চুলের কাঁ*টা খুলে দিলো আহি। চ*ম*কে উঠলো আরশি। খানিকটা চি*ল্লি*য়েই বললো,

— এইইই কি করলি এটা? চুল খুললি কেনো?

আহি মুখে হাত দিয়ে চোখ গোল গোল করে বললো,

— দোস্ত তোর চুল এতো বড়, ঘন আর এতো সুন্দর!! তাই বুঝি সবসময় খোঁপা করে রাখোস? যাতে আমাদের নজর না লাগে?

মুন হাসলো। সে ছাড়া আর কেউ আরশি কে চুল খোলা অবস্থায় দেখে নি। আরশি সবসময় ই চুল খোঁপা করে রাখে। আহির কথায় বি*র*ক্ত হলো আরশি। বললো,

— আরে আমার চুল সামলাতে স*ম*স্যা হয়। খোলা রাখলে পেঁ*চি*য়ে যায়। পরে আ*চ*ড়াতে অনেক অ*সুবিধা হয়। তাই খোঁপা করে রাখি। এখন আমাকে খোঁপা করতে দে। দেখলি তো আমার চুল।

আহি সাথে সাথে বাঁ*ধা দিয়ে বললো,

— আজ খোঁপা হচ্ছে না। আজ আমরা সবাই এক সাজ দিবো আগেই তো বললাম। তাই আজ চুল খোলা রাখতে হবে তোর। আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।

আরশি কিছু বলতে চাইলেও আহি থামিয়ে দিয়ে পার্লারের মহিলা কে বললো তাদের মতো হেয়ার স্টাইল করে দিতে। শেষে ভা*রী সাজ দেয়ার কথা বলতেই রে*গে যায় আরশি। সে ভা*রী সাজ স*হ্য করতে পারে না। মনে হয় দম ব*ন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই আহি পার্লারের মহিলা কে বললো আরশি কে হালকা করে সাজিয়ে দিতে। সাজানো শেষ হতেই রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে আরশি। ওখানে বসে থাকলে আহি আরও কি কি আবদার জুড়ে বসে সেই ভ*য়ে। আর এমনিতেও সে শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারে না। তাই ভেবেছিলো আস্তে ধীরে নিচে নেমে বসে থাকবে। কিন্তু যেটার ভ*য় ছিলো সেটাই হলো। রুম থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যেতেই শাড়িতে পা বে*জে পড়তে নিয়েছিলো আরশি। এমন সময় কেউ একজন তার কোমর পেঁ*চি*য়ে ধরে।

——

মুন আর মোহনার কথার আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই ধ্যা*ন ভা*ঙে আরশির। এক টা*নে আবরারের হাত কোমর থেকে ছাড়িয়ে পিছিয়ে যায় সে। হাঁ*স*ফাঁ*স করতে থাকে কেউ দেখে ফেললো কিনা। আর মনের মধ্যে ঘুরপা*ক খেতে থাকে আবরার এখানে আসলো কি করে। অন্যদিকে আবরার সে যেনো এখনো ঘো*রে*র মাঝেই ডু*বে আছে। আরশির ভাবনার মাঝেই মুন আর মোহনা আহি কে নিয়ে এসে আরশির পাশে এসে দাঁড়ায়। এর মাঝেই আবির আর রাহুল ও রেডি হয়ে বেরিয়ে এসেছে। তাদের চেহারায় ও স্পষ্ট অবাক ভাব। আহি এগিয়ে গিয়ে আবরারের হাত জড়িয়ে ধরে বললো,

— কি অবাক হয়েছিস তোরা তাই তো? বলেছিলাম না তোদের জন্য surprise আছে? এই হলো surprise। তোদের সবসময় বলতাম না আমার একটা জ*ল্লা*দ ভাই আছে। মিট মাই জ*ল্লা*দ ভাই এমপি আজওয়াদ আবরার।

আহি হাত জড়িয়ে ধরায় ঘো*র ভা*ঙ*লো আবরারের। বোনের কথায় মৃদু হাসে আবরার। অন্যদিকে সবার মুখ টা হা হয়ে গেছে আহির কথায়। আরশি বুঝতে পারে আবরার কেনো আজ অফিসে যায় নি আর তাকেও ছুটি দিয়েছে। রাহুল অবাক ভাব নিয়েই বললো,

— এইগুলা তুই কি বলিস আনা? তুই এতো বড় একটা কথা আমাদের কাছ থেকে লু*কা*ইতে পারলি?

আহি মুখ টা গো*ম*ড়া করে বললো,

— আমি সাধারণ একজন মেয়ে হয়েই তোদের সাথে মিশেছি। আমি চাই নি কেউ আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, টাকা পয়সা দেখে আমার সাথে বন্ধুত্ব করুক। এসব লু*কি*য়েছি বলেই তো প্রকৃত বন্ধুদের খোঁজ পেলাম। তোদের পেলাম যারা আমার ফ্যামিলি, ব্যাকগ্রাউন্ড না দেখেই আমাকে ভালোবেসেছে, আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছে। আমি চাই না কেউ আমাকে এমপির বোন বলে, নামকরা একজন বিজনেস ম্যান এর মেয়ে বলে স্পেশাল ট্রিট করুক। আশা রাখছি সব টা জানার পর কেউ আমার সাথে স্পেশাল ট্রিট করবি না। আমি তোদের কাছে আগে যেমন ছিলাম ঠিক তেমনই থাকবো। আর তোরা কেউ আমার উপর রা*গ করিস নি তো?

আহির কথা শেষ হতেই সবাই আহি কে জড়িয়ে ধরলো। একত্রে বললো,

— নাআআআ। আমরা মোটেও রা*গ করি নি।

সবাই ছাড়তেই আবির আহির মাথায় গা*ট্টা মে*রে বললো,

— আর কিসের স্পেশাল ট্রিট রে? তুই আগেও ফ*কি*ন্নি আহি ছিলি আর ভবিষ্যতেও ফ*কি*ন্নি আহি ই থাকবি।

আহি মাথায় হাত বু*লি*য়ে হাসলো। আজ আর রা*গ করলো না। এমনটাই তো সে চায়। আরশি আহির গালে হাত রেখে বললো,

— রা*গ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। বর্তমান যুগে এমন কয় জন আছে বল যারা পা*ও*য়ার থাকা সত্ত্বেও সেটা দেখায় না, প্রয়োগ করে না? কয়জন আছে যাদের এতো এতো পাওয়ার, অর্থ থাকার পরও তারা অ*হং*কার করে না? বিশ্বাস কর আজ তোর সম্পর্কে সব টা জানার পর তোর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছে।

সবাই হেসে মাথা ঝা*কা*লো। নিচ থেকে ডাক পড়ায় মুন আর মোহনা আহি কে ধরে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। মোহনা আরশি কে বললো,

— কিরে দোস্ত তুই আসোস না কেন? তুই ও এই বেডি রে ধর।

আরশি দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— মজা নিচ্ছিস? দেখতেই তো পারতেসোস যে আমি নিজেই হাঁটতে পারতেসি না। আবার বলোস ওরে ধরতে। পারলে তোদের মধ্যে কেউ একজন আমারে ধর।

আরশির অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দিলো মোহনা। বললো,

— তুই ও বিয়া কর। তাইলে তোরেও এইভাবে ধরে নিয়ে যামু।

আরশি নাক ফু*লি*য়ে বললো,

— শ*য়*তা*নের দল যা তো এখান থেকে…

মোহনা আর মুন হাসতে হাসতে আহি কে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। আরশি অ*স*হায় চোখে ওদের যাওয়া দেখলো। কি সুন্দর শাড়ি পড়ে হাটছে ওরা আর তার অবস্থা? আবির আর রাহুল আগেই দৌড় দিয়েছে। আবির দ্রুত গিয়েছে মেয়ে প*টা*নোর জন্য। এবার নাকি সে মিঙ্গেল হবেই। আর রাহুল আবিরের পিছে পিছে গিয়েছে তাকে হেল্প করবে বলে।

আরশি আস্তে আস্তে পা টি*পে টি*পে আগাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে তার পা দুটো শাড়ির মধ্যে আ*ট*কে গেছে। না*ড়া*তে পারছে না সে। কখন জানি ধু*ম করে পড়ে সে। বিয়ে বাড়িতে সবার সামনে পড়লে মান ই*জ্জ*ত আর থাকবে না তার। কোনোরকমে টে*নে*টু*নে বাড়ির বাইরে আসলো আরশি। বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় স্টেজ তৈরি করা হয়েছে। আহি কে স্টেজে বসানো হয়েছে। সেও ধীর পায়ে স্টেজে গেলো। একে একে সবাই হলুদ ছোঁয়ালো আহি কে। হলুদ ছোঁয়ানো শেষে আহি নিজের সব ফ্রেন্ডদের নিয়ে গ্রুপ ফটো তু*ল*লো।

পুরো সময় টা জু*ড়ে ছেলে পক্ষ থেকে আসা একটা ছেলে খুব বি*র*ক্ত করেছে আরশি কে। ছেলেটার নাম আসিফ। আসিফ একবার তার চোখের প্রশংসা করছে তো একবার তার চুলের। ছেলে পক্ষের সবাই হলুদ দিয়ে চলে গেলেও এই ছেলে যায় নি। আরশির আগে পিছে ঘুরছে। আহির শ্বশুর বাড়ির লোক বলে আরশি ও কিছু বলতে পারে নি। তবে যতটুকু পারছে এ*ড়ি*য়ে চলছে আসিফ কে। আসিফের এসব কর্মকা*ন্ড নজর এ*ড়া*য় নি আবরারের। সে তী*ক্ষ্ণ চোখে সব টা লক্ষ্য করেছে।

একে তো শাড়ি, খোলা চুল তার উপর আরও বড় আ*প*দ হলো আসিফ নামের ছেলে টা। ফটো তো*লা শেষ হতেই স্টেজ থেকে নেমে বাগানের দিকে চলে আসলো আরশি। এখনো অনেক সময় বাকি অনুষ্ঠান শেষ হতে। আর তার অবস্থা না*জে*হাল। তাই বাগানে এসে বড় একটা শ্বাস টা*ন*লো সে। মুক্ত বাতাসের সাথে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এসে ঠে*ক*লো। এমন সময় চুলে টা*ন পড়লো আরশির।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here