তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৮
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পিদের বাড়িতে এ প্রথমবার আসা তটিনির।এর আগে তাকে ধরে বেঁধেও আনা যায়নি।বাপ্পির সাথে ওর বিয়ে ঠিক হবার সপ্তাহখানেক পরেই বাপ্পির বাড়ি থেকে তটিনির পুরো পরিবারকে দাওয়াত করা হয়।সকলে আসলেও আসেনি তটিনি।কেউ তাকে আনতে পারেনি।
আর আজ সে নিজের ইচ্ছেতেই পা রেখেছে এ বাড়িতে। পা রাখছে বলতে এখনও ভেতরে ঢুকেনি।গাড়ী থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাইরেই।বাপ্পির মা ভেতরে গেছেন প্রস্তুতি সব হলো কিনা দেখার জন্য। ওরা দুজন খাম্বার মতন গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।এত রাতে মশার উপদ্রব হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তটিনিকে মশায় ধরেছে।ঠাস ঠাস করে পায়ে থাপ্পড় মারছে সে।বাপ্পি ওকে এমন বিরক্ত হতে দেখে হাঁক ডেকে বললো,’বুনি!এই বুনি!(বুশরার ডাকনাম),,, কোথায় তোরা সব?আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?’
ওমনি ভেতর থেকে বাপ্পির ছোট বোন বুনি আর বড় বোন বকুল আপু বেরিয়ে আসলেন।বকুল আপু হাতের ডালা বুনিকে ধরিয়ে দিয়ে তটিনির কাছে এসে ওর ঘোমটা টেনে পুরো মুখ ঢেকে বললেন,’আমাদের বাড়ির নিয়ম।নতুন বউয়ের মুখ কেউ উপহার দেয়া ছাড়া দেখতে পারবেনা।এই ঘোমটা বাসর ঘর অবধি খুলবেনা।ঠিক আছে?’
তটিনি মাথা নাড়ায়।চোখে তার রাশ ভর্তি ঘুম।মনে হয় এই বুঝি ঢলে পড়ে যাবে।গাড়ীতে কিসের আর ঘুম ঘুমাইছে।আসল ঘুম হবে বিছানায় শুয়ে নরম বালিশে মাথা রাখলে।কবে যে এদের নিয়ম শেষ হবে!!
বুনির ডালায় ছিল চিনির কৌটো আর গোলাপজল।এক চামচ চিনি নিয়ে বকুল আপু বাপ্পিকে বললেন তটিনিকে খাইয়ে দিতে।বাপ্পি আর কি করবে,চামচটা নিয়ে তটিনির ঘোমটার তলা দিয়ে ওকে খাইয়ে দিলো।এরপর গোলাপজলে তটিনির একটা আঙ্গুল চুবিয়ে বকুল আপা বললেন বাড়ির ভেতর ঢুকতে।কি অদ্ভুত নিয়ম এই বাড়ির!!
বাড়ির ভেতর গিয়ে আবারও দাঁড়াতে হলো তাদের।গুরুজনেরা সবাই একজোট হয়েছেন তটিনিকে দেখার জন্য।বাপ্পি সবাইকে দেখে বুঝে গেছে এদের সাথে পাল্লা দিতে গেলে ভোর পাঁচটা বেজে যাবে।কিছু একটা করে কাটাতে হবে।ওমনি বাপ্পি বললো,’মা আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।তোমরা কাল সকালে যা দেখার দেখো?যাই আমি?’
সবাই বাপ্পির কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয় একত্রে।তটিনি লুকিয়ে নিজের হাত বাপ্পির শেরওয়ানি টেনে মুছতেছিল।গোলাপজল তার জন্মের শত্রু।আর এই আপুটা তার হাত গোলাপজলেই চুবিয়েছে।সকলে হাসছে কারণ বাপ্পি ভোর ছাড়া ঘুমায়না এটা সবারই জানা।আজ ঘুম আসার বাহানা ধরেছে যেটা সকলে বুঝে গেছে।তাই ওর কথায় কেউ পাত্তাই দিলোনা।তটিনিকে নিয়েইই টানা টানি শুরু করে দিলো সবাই।কিন্তু সেই সময় বাপ্পির দাদি এসে বললেন সকালে যা হবার হবে।আজকের জন্য ওদের ঘুমাতে দেয়া উচিত।
দাদির কথা সকলে মেনে গেলো।তটিনিকে তার ননদ বুনি বাপ্পির রুমে নিয়ে গেছে।বাপ্পিও যাচ্ছিল কিন্তু ওকে দাঁড়াতে বললেন বাকিরা।
বিশেষত দাদা,আর বাবা।তাদের চোখের ভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছিল আজ বিয়েটা শুরুতে না হবার কারণ নিয়ে তারা ক্ষেপে আছে।বাপ্পি মাথা ঠাণ্ডা করে সোফায় বসে।ওর সামনে বসেছে বাবা আর দাদা দাদি।শুরুতেই প্রশ্ন করলেন বাপ্পির বাবা জনাব সালাউদ্দিন।তিনি জানতে চাইলেন বিয়েবাড়িতে আজ ঠিক কিসের ঝামেলা হয়েছিল।যেহেতু মা সব জানে সুতরাং এখন তটিনির দোষ ঢাকতে মিথ্যা বলে লাভ নেই।তাই মা যেটা জানে সেটাকেই বাপ্পি আবার সকলের সামনে তুলে ধরেছে।
বাবা প্রচণ্ড রকম ভাবে ক্ষেঁপে আছেন কিন্তু এর মাঝে তটিনির বাবার অসুস্থতার খবর তার রাগটা কিছু হলেও কমিয়েছে।তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাল সবাইকে নিয়ে তটিনির বাবাকে দেখতে যাবেন।মামলা চুকে যাওয়ায় বাপ্পি দম ফেলে উঠে আসে ওখান থেকে।
ওদিকে বুনি তটিনিকে বাপ্পির রুমে নিয়ে এসে লাইট অন করতেই রুমের সাজ দেখে তটিনির মেজাজটা আরও বেশি গরম হয়ে গেলো।পুরো বাসরঘরটাকে গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে।গোলাপকে অপছন্দ করার মানুষ হয়ত তেমন একটা নেই।তটিনিও ছিল না।কিন্তু আজ থেকে তার চোখে শত্রু হয়ে গেছে এই ফুলটি।কারণ এই ফুল দিয়ে সে আসিফকে গুনে গুনে ছাপ্পান্ন বারের মতন প্রোপোজ করেছিল আর তার ফল হিসেবে আজকের এই দিনটা তাকে দেখতে হলো।এখন তাই গোলাপ দেখলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যায় তটিনির।
তটিনিকে রাগে ফুঁসতে দেখে বুনি কোনো কথা বললোনা।সে চাইলো নতুন ভাবীর সাথে ঠাট্টা করবে কিন্তু ভাবীর রণচণ্ডী রুপ তাকে আরও ভীত করে তুললো।কোনোমতে আপন প্রাণ বাঁচিয়ে সে রুম ছেড়ে পালিয়েছে।তটিনি মাথার ঘোমটার সেফটিপিনটা টান দিয়ে খুলে ঘোমটা টা দরজার দিকে ছুঁড়ে মারে।সেটা গিয়ে পড়েছে বাপ্পির মুখে।বাপ্পি মুখ থেকে ঘোমটা সরিয়ে তটিনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।তটিনি ওকে দেখেনি।হনহনিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে এসে বিড়বিড় করতে করতে হাতের মোটা মোটা চুড়ি গুলো খুলছিল।বাপ্পি ডিভানে বসে সামনের সেন্টার টেবিলের উপর থেকে অফিসের একটা ফাইল নিয়ে খুলে ধরে।৩টা বাজা ছাড়া ঘুম আসবেইনা।তাই কাজটা করে ফেলা ভাল বলে মনে করে সে।তটিনি হাতের চুড়ি খুলে পেছনে ফিরতেই বাপ্পিকে দেখে তারপর কি মনে করে আবারও ড্রেসিং টেবিলের দিকে ফিরে কানের ঝুমকা দুলগুলোও খুলে ফেলে বিছানায় গিয়ে বসেছে।এতক্ষণ চোখে ভারী ঘুম থাকলেও এখন সেই ঘুমের ঘ টাও নেই।তটিনির দম বন্ধ লাগছে।বড় বড় করে শ্বাস নিতে নিতে জানালা খুলে দেয় সে।বাহিরের হিম বাতাসে ঠাণ্ডা লাগায় মাথাটা একটু ঠাণ্ডা হয় তার।পুনরায় বিছানায় ফুলের পাপড়ির উপর বসে হাত লাগতেই মনে পড়ে গেলো আজ আসিফ আর রিনি ওদের বাসায় থাকবে।একসাথে একরুমে!!
রাগের বশে পাপড়িগুলোকে হাত দিয়ে ঝেড়ে নিচে ফেলে দেয় তটিনি।খুব রাগ হচ্ছে।পরের বাড়ি নাহলে এতক্ষণে সব ভেঙ্গে চুরমার করে তারপর শান্ত হতো সে।
বাপ্পি তটিনিকে রাগে ফুলতে দেখে ফাইলের পাতা উল্টে বললো,’আমার রুমে কাঁচের জিনিস-পাতির অভাব নেই।ভাঙ্গতে পারো।রুমের দরজাটা সাউন্ডপ্রুপ।তোমার ভাঙ্গচুর কারোর কানে যাবেনা’
তটিনির প্রচুর রাগ হলে সে ভাঙ্গচুর করে,আজ ও প্রচুর রাগ হলো কিন্তু অনুমতি পেয়েও সে কিছু ভাঙ্গেনি,বরং কেঁদে ফেললো,চিৎকার করে!
বাপ্পির হাতের ফাইলটার পৃষ্ঠা উল্টে যেতে গিয়েও উল্টালোনা।চোখের সামনে নিজের স্ত্রীকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখে কাজে মন বসার কথা না।তটিনির এভাবে কাঁদার মানেটা হয়ত বাপ্পি জানে! সাধারাণ একজন স্বামী যখন জানবে তার স্ত্রী বাসর ঘরে বসে প্রাক্তনের জন্য কাঁদছে তখন তার রাগ হবার কথা,অথচ বাপ্পির ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে তটিনিকে এভাবে কাঁদতে দেখে।মেয়েটা আসলে এসবের যোগ্য ছিল না!তার চোখে এভাবে পানি আসা উচিত ছিল না!সে তো ভালবেসেছিল!এভাবে ঠকে যাবে জানলে তো বাসতোনা!
তটিনি মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে কেঁদেই চলেছে।বাপ্পির হাত কাঁপছে,একবার গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে কি বলবে,”তটিনি তুমি কেঁদোনা।আমি পৃথিবীর সুব সুখ একসাথ করে তোমার সামনে নিয়ে আসবো তাও কেঁদোনা তটিনি!আমি তোমায় কাঁদাতে আনিনি!’
বাপ্পি জানে সে এখন তটিনিকে সান্ত্বনা দিতে গেলে পাল্টা ঝাড়ি খাবে তাও সে পা চালিয়ে তটিনির কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।সাহস নিয়ে তটিনিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তটিনি চোখ মুছতে মুছতে দরজা খুলে চলে গেলো ওর চোখের সামনে দিয়ে।
ওর বেরিয়ে যাওয়া কেউ হয়ত দেখবেনা,কারণ সকলে যার যার রুমে চলল গেছে এতক্ষণে।কিন্তু ওকে দেখা জরুরি।একা একা কোথায় চলে যায়!নতুন জায়গা, কতটুক বা চিনে!
তটিনি বাপ্পিদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সামনের ফাঁকা রোডটাতে নেমে পড়েছে।ঐ রুমটাতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল ফুলের গন্ধে।ফুলগুলো তাকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে আসিফ অন্য কারোর।অন্য কারোর রুমে থাকবে আজ থেকে।হয়ত এর আগেও থেকেছে।কে জানে!!
এই ভাবনা তার গলাচেপে রেখেছিল।এখন বাহিরে আসায় কিছুটা শান্তি লাগলো।চোখ মুছে বাপ্পিদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তটিনি।নিজেকে অসহায় নারী মনে হলো।যার কেউ নেই আপন বলতে!যার অনুভূতির দাম নেই।এত খারাপ ভাবে ঠকেও আরেকজনের সংসার করতে দিব্যি চলে এসেছে এই ম্যানসনে!কাউকে জেদ দেখিয়ে হারাতে সে আরেকজনের হয়ে চলে এসেছে!
লাভটা কোনদিক দিয়ে হলো!
বাপ্পি ছুটে চলে এসেছে বাহিরে।তটিনিকে মূর্তির মতন ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সে।তারপর ধীরে ধীরে ওর দিকে এগোলো।তটিনি তখনও হা করে বাপ্পিদের বাড়িটা দেখছিল আর বলছিল”””পরের বাড়ি!
পর মানুষ!
পরের সংসার
পরের জীবন’
বাপ্পি এসে তার নিজের খয়েরী চাদরটা তটিনির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলে,’আপন বাড়ি
আপন মানুষ
আপন সংসার
আপন জীবন’
বাপ্পির এ কথায় তটিনির হুশ ফেরে।নিজের গায়ে চাদরটা দেখে চেয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।বাপ্পি তখন তটিনির কাঁধে হাত রেখে ওকে ঘুরিয়ে রাস্তার সামনের দিকে হাঁটা ধরে বলে,’চলো আজ তোমায় আরেক কাপ চা খাওয়াবো। এই রাতের শেষ চা।এখানে আমার এক পুরান চাচার দোকান আছে।উনি হয়ত দোকান বন্ধ করে ঘুমাতে গেছেন।ওনাকে তুলে চা বানাবো।আমি এমন করি প্রায় সময়।আমার তো রাতে ঘুম হয়না তাই’
চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৯
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফকে খুঁজতে খুঁজতে রিনির সবগুলো রুম দেখা শেষ হয়ে গেছে।সবার শেষে বাসার শেষকোণায় যে রুমটা পেলো সেটাতে আসিফকে পেলো।সে কম্বলের ভেতরে ঢুকে শুয়ে আছে।রিনি ওর কাছে এসে পা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করলো আসিফ জেগে আছে নাকি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেছে।
সে পা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করছিল।টাইলসে পা রেখে চলার অভ্যাস তার ছিল না।কারণ ওদের বাড়িতে নিচে পাকা করা মেঝে।
টাইলসে তাই পা পিছলে সে আসিফের গায়ের উপর গিয়ে ধুরুম করে পড়লো।
আসিফ ঘুমাচ্ছিল না,জেগেই ছিল।রিনি ওর গায়ে পড়ায় সে ব্যাথা পায়নি তবে ভয় পেয়ে গেছে।মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে দেখে রিনি চিটপটাং হয়ে ওর গায়ের উপর শুয়ে থেকে এখন ওঠার চেষ্টা করছে।
‘তুই এখানে কেন!’
রিনি উঠতে উঠতে বললো,’ভাইয়া বিশ্বাস করেন আঁই জানিবুঝি এইন্না করি “”ন””।এতাগো টাইলসে হিচলা খাই দুরুম করি হড়ি গেছি’
‘বুঝছি।’
আসিফ উঠে রিনিকে ধরে উঠতে সাহায্য করলো।রিনি পিঠে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে আগেরমতন।আসিফ আবারও কম্বল টান দিয়ে শুয়ে পড়লো কোনো কথা না বলে।রিনি এবার আসিফের পাশে বসে গেছে।
আসিফ সেসময় আবারও মুখের সামনে থেকে কম্বল সরালো।রিনির দিকে চেয়ে থেকে বললো,’তুই আমায় এটা বল,একা একা এতদূর থেকে ঢাকায় আসার সাহস তোকে কে দিলো?’
‘কেউ দেয় “””ন””।
আঁর মোনো কইছে এলদরি আঁর জামাইর কাছে থাইক্কাম, হেয়াল্লাই চলি আইছি'[কেউ দেয়নি,আমার মন বলছে এখন থেকে আমার জামাইর কাছে থাকবো তাই চলে আসছি]
‘এতদিন সেই ইচ্ছা কই ছিল?আর তুই আমার পাশে বসেছিস কেন?তোর লজ্জা লাগছেনা একটুও?’
রিনি মিটমিট করে হেসে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।রিনি ছোটকাল থেকেই অনেক বড় ড্রামাবাজ।ওর এমন রিয়েকশান দেখে আসিফ আবারও কম্বল টান দিয়ে শুয়ে পড়েছে।রিনি আসিফের দিকে ফিরে বললো,’তো আঁই কোনাই ঘুম যাইতাম?বেকে কইছে আন্নের লগে ঘুম যাইতো।আমরা তো জামাই বউ হেয়াল্লাই😌’
আসিফ কম্বলের ভেতরে থেকে বললো,’তোর যা খুশি কর।শুধু রাতের মধ্যে আমার গায়ের সাথে লাগবিনা। নাহলে সেই সময় ঘুম থেকে তুলে এমন পিডা দিমু!!বাপ বাপ বলে আমার নোয়াখালী চলে যাবি’
‘আঁর ইচ্ছাও নাই আন্নের গার লগে লাগি হোতার।মামি কইছে আন্নের এইন্না অভ্যাস আছে রাত অইলে এমন করার’
[আমার ইচ্ছাও নাই আপনার গায়ের সাথে লেগে শোয়ার।মামি বলেছে আপনার অভ্যাস আছে রাত হলে এমন করার’
আসিফ আবার মাথা বের করে বললো,’আর কি বলছে আম্মা?’
রিনি গাল দুটো লাল করে ফেললো আসিফের কথা শুনে তারপর গোল হয়ে বসে বললো,’কইছে আন্নে বলে ঘুমে থাই ধরি চুম্মাও দিছিলেন রাকিব ভাইয়ারে একদিন রাইত🙈’
————-
তটিনি সেই চাচার দোকানের সামনের টুলটায় বসে পা দোলাচ্ছে।বাপ্পি সেই চাচার সাথে কথা বলতে মত্ত।চাচা তটিনির ব্যাপারে সব জানতে চাইছেন বাপ্পির কাছে।বিয়েতে বাপ্পি এই চাচাকে দাওয়াত দিছিলো কিন্তু উনি যান নাই কারণ ওনার দোকান দেখার কেউ নাই।আর দোকান একদিন বন্ধ থাকলে তার অনেক লস হবে।এইসব ভেবে আর যাননি।তাই এখন সব গল্প শুনছেন বাপ্পির কাছে।
তটিনি ডানে বামে দেখতে দেখতে বাপ্পির উপর চোখ গেলো তার।এই একটা মাসে সে একবারও বাপ্পির মুখের দিকে ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখেনি। আজ ভাল করে নজরটা পড়ায় দেখছে।
দেখতে শুনতে ভালই,খারাপ না।বাবার পছন্দ বলে কথা, হ্যান্ডসাম উইথ ব্যাংকব্যালেন্স।গালটা লম্বা,চওড়া।বাপ্পির চুল অনেক ঘন।দুটো জুটি করলে সেই লাগবে।তেমন বড় না চুল।টেনেটুনে যে জুটিটা করা যাবে তাতেই সেই লাগবে!
তটিনির গায়ের চাদরটা বাপ্পির।ভারতে ঘুরতে গিয়ে কাশ্মীর থেকে শালটা সে নিয়েছিল।মনে হয় বহুবার পরেছে।তীব্র ঘ্রাণ আসতেছে ওর গায়ের পারফিউমের।
তটিনি চাদরটা ধরে দেখছিল ওমনি বাপ্পি চায়ের কাপ এগিয়ে ধরে ওর সামনে।চাদর থেকে হাত উঠিয়ে তটিনি চায়ের কাপটা নিলো ওর হাত থেকে।বাপ্পি আবার চলে গেছে চাচার কাছে।
তটিনি বাপ্পির কথা ভাবছে।ছেলেটা মোটেও সুবিধার লাগেনা তার কাছে।শুরু থেকে আসিফের কথা বলতে বলতে তটিনির মুখে ফ্যানা ধরে গেছিলো তাও বাপ্পির উপর কোনো রিয়েকশান হচ্ছিলনা।সে একটা কথাতেই অটল ছিল সেটা হলো সে তটিনিকেই বিয়ে করবে।মানে কোন ছেলেটা বউয়ের এই টাইপের কথা শুনে বিয়ে করতে রাজি হবে?ছেলের তো ভেগে যাবার কথা।তা না করে বিয়েটা শেষমেশ হয়েই গেলো।
“হ্যাঁ এটা মানছি যে আমার সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে কিন্তু হবার কথা তো ছিল না!যদি এক মাস আগে এই ছেলেটা আমার কথা মেনে বিয়েতে না বলে দিতো তাহলে আজ এই দিনটা আসতোই না।সব দোষ এই লোকটার!!’
বাপ্পি চা শেষ করে তটিনির দিকে তাকাতেই দেখে গাল ফুলিয়ে সে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।বাপ্পি এর মানে না বুঝে চায়ের দামটা দিয়ে হাতের ঘড়ি চেক করে বললো,’চলো ঘুমের সময় হয়ে গেছে,এখন ঘুমাতে হবে’
এই বলে বাপ্পি সোজা হাঁটা ধরে।তটিনিও চুপচাপ ওর পিছু পিছু চলছে।দোকানটা বেশি দূরেনা।টুলে বসে বাপ্পিদের ছাদের উপরের রঙ বেরঙের বড় ছাতাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল ছাদের উপরের লাইটটার আলোতে।
তটিনি যেতে যেতে বললো,’আচ্ছা আপনার কোনো ভাই বাই?’
‘তুমি হয়ত একমাত্র মেয়ে যে বিয়ে হবার পর ভাসুর দেবর আছে কিনা সেই খবর নিচ্ছে।যাই হোক তারা কেউ নেই।আমি একমাত্র ছেলে’
‘এই জন্যই আদরের দুলাল!’
‘অনেক!আমাকে যে কি পরিমাণ ধুইতেছো সেটা যদি আমার পরিবারের কেউ জানতো, তোমায় আজ রাতে বাইরে ঘুমাতে দিতো’
‘নতুন বউ হিসেবে কি কোনো দাম নাই আমার?’
‘না নাই।আমার বাড়ির সকলের কাছে আমি সবচাইতে বেশি ইম্পরট্যান্ট।এরপর আমার ওয়াইফ যদি আমাকে সমপরিমাণ গুরুত্ব দেয় তবে তাকে মাথায় করে রাখবে সকলে।বুঝছো??’
তটিনি দাঁত কেলিয়ে বললো,’তার মানে আমি যদি আপনার সাথে বাজে ব্যবহার করি তবে আমায় বাসা থেকে বের করে দিবে সকলে?’
বাপ্পি থেমে গেলো হঠাৎ এ কথা শুনে।তারপর তটিনির দিকে চেয়ে বললো,’খুশি হচ্ছো?এই বাড়ি ছেড়ে যখন বাপের বাড়ি যাবে, সেখানে আসিফকে ওর বউয়ের সাথে দেখে ভাল লাগবে তোমার??’
তটিনির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো কথাটা শুনে।আসলেই তো!!এখন এটাই তার নিজের বাড়ি। বাবার বাড়ি গেলে তো আর শান্তি পাবেনা।আগের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতির অনেক তফাৎ।
বাড়ি ফিরে তটিনি গায়ের চাদরটা গায়ে রেখেই বিছানয শুয়ে পড়ে।মাথার ভেতর ঘুরছে তার বাবার বাড়ি আর তার নিজের নেই।এখন আর সে চাইলেই দিনের পর দিন সেখানে থাকতে পারবেনা।
বাপ্পি রুমের আলো নিভিয়ে ডিভানে শুয়েছিল।জীবনে কখনও এভাবে ডিভানে শোয়া হয়নি তার।অফিসের কাজের ফাঁকে কোনো কোনোদিন দুপুরবেলা শুয়েছিল কিন্তু রাতের সময় এ প্রথম বার শোয়া।
এমনিতেও তার ঘুম সহজে আসেনা তার উপর জায়গাতে যদি এত আনকম্পোর্টেবল ফিল হয় তাহলে তো ঘুম আসারই কথা না।তটিনি কম্বল টেনে গায়ে দিছে কিনা কে জানে!
এই চিন্তা বাপ্পিকে তখনও ঘুমাতে দিচ্ছিলো না।উঠে বসে আলমারি খুলে নিজের জন্য আরেকটা কম্বল বের করে তটিনির কাছে যায় সে ও কম্বল গায়ে দিছে কিনা দেখার জন্য। ড্রিম লাইটের আলোয় বোঝা গেলো সে গায়ে দেয়নি।শাড়ীর পাথরগুলা চিকচিক করছে।কম্বল মুড়ি দিলে তো পাথর চিকচিক করতোনা।বাপ্পি তাই কম্বলটা টেনে ধরে ওর গায়ে জড়িয়ে দেবে বলে ওমনি তটিনি লাফ দিয়ে উঠে বসে বলে,’কি করতে এসেছেন আমার কাছে?’
‘খেয়ে ফেলতে ‘
এ কথা শুনে তটিনি হালকা পিছিয়ে গিয়ে বললো,’এরকম ঠাট্টা আমার পছন্দ না একদম।বিশেষত রাতের এসময়ে এমন ঠাট্টা বিষের মতন লাগলো’
‘তো যখন আমার এ কথা তোমার মজাই লাগলো তবে কি করে ভাবলে আমি উল্টাপাল্টা কিছু করতে এসেছি এখানে?’
‘হতেও পারে।ছেলেদের মন তো!নতুন বউকে ধরাছোঁয়ার বাহিরে কি করে রাখে!’
‘বাপরে!!বয়স কত তোমার?এত বড় কত বলছো!’
‘উনিশ’
বাপ্পি হাসলো তারপর কম্বল টেনে দিয়ে আবার ডিভানে গিয়ে শুয়ে পড়েছে নিজের গায়ে কম্বল টেনে।তটিনি তখনও ওমনি বসেছিল বিছানায়।বাপ্পির হাসির কারণ সে জানলোনা।মনে মনে হিসাব করছিল বাপ্পির বয়স কত।দুহাত মিলিয়ে হিসাব করে বের করার চেষ্টা করলো।
বাপ্পি কম্বলের ভেতর থেকে বললো,’তোমার বয়স উনিশ বলে যে আমার বয়স আটাশ ঊনত্রিশ হবে আর তুমি বুড়া বলে সম্ভোধন করবা এটা সিনেমা চলছেনা।আমার বয়সও কম।পঁচিশ বছর।’
তটিনি হিসাব বন্ধ করে দিলো।তারপর নিজেও শুয়ে পড়েছে এবার।বাপ্পি কেমন করে যেন মনের কথা চট করে বুঝে যায়।মনে হয় কাউকে বেশি পছন্দ করলে তার মনের কথা বুঝে ফেলা যায়।
“আমিও বুঝতাম আসিফ ভাইয়ার মনের কথা,শুধু বুঝলাম না ভাইয়ার বউ ছিল!আছেও!
মনে হয় ঐ মেয়ের কথা বেশি ভাবতেননা উনি।’
চলবে♥
আমার বিয়ের সময় আমার ১৯ আর উনার ২৪ ছিলো!
এখন ২০ আর ২৫।।।
একটুর জন্য মিলে নাই